প্রণয় ডায়েরি পর্ব-২

0
724

#প্রণয়_ডায়েরি
#Tafsia_Meghla
#পর্বঃ০২

আমি সাথে সাথেই পিছনে ছুটলাম কিন্তু কিছু বলার আগে বেরিয়ে গেলো এদিক থেকে৷ আমার রাগে শরীর জ্বলে যাচ্ছে আল্লাহ এই ছেলের সাথেই দেখা করাতে হলো আবার? ইচ্ছে তো করছে মেরে দেই৷ কোনো মত নিজেকে ঠান্ডা রাখলাম এতো তো রাগি না আমি ঝগড়া ও করিনা এই ছেলের সাথে ঝগড়া করছি কেন আমি? আর তাকালাম না এই ছেলের দিকে যতখন ছিলাম৷ কাজ শেষ হওয়ার পর আবার নানু বাড়িতে আসি৷ কাল ও এখানে আসতে হবে সাথে আম্মুও আসবে৷
সকাল হতেই আবার যথারীতি বেরিয়ে পরলাম, এখানে আসার পর দেখি আজ ও সেই আন্টি এসেছে৷ আজ ওই ছেলেটিকে দেখছিনা৷ যাক বাঁচা গেলো ঝগড়ুটে টা আসেনি৷ এই আন্টিও হয়তো এখানেই ডাক্তার দেখাবে আমি আবার মোবাইলে মন দিলাম৷
“এই রিপোর্ট টা একটু পর দিবে ভাইয়া তুই গিয়ে নিয়ে আসিস৷ ”
আমি সেই ছেলের কন্ঠ পেয়ে পিছনে তাকালাম৷ যা ভাবলাম তাই হয়েছে ওই ছেলেও এসেছে উফফ আজ কেন আবার এর সাথে মুখোমুখি হলাম?ওই ছেলেও যেন আমাকে দেখে অবাক হলো চোখ দেখে তো তাই বোঝা যাচ্ছে৷
ছেলেটির মা পাশ থেকে বলে,
“তিশান তুই আসলি কেন আবার? ইশান তো আমার সাথেই ছিলো৷ ”
এই ছেলের মায়ের কথা শুনে বুঝলাম ছেলেটির নাম তিশান৷ পাশ থেকে ইশান নামের ছেলেটি বললো,
“তুমি ডাক্তার দেখাবা আর তোমার ছোট ছেলে আসবে না তা কি হয় নাকি মা? তুমি না বলো ও তোমার পাগল ছেলে৷ ”
তিশান ছেলেটি মা আর ভাইয়ের কথায় হাসলো৷ আমি চোখ ঘুরিয়ে বিরক্ত নিয়ে সামনে তাকালাম তখনই একটা খাম এসে আমার পা ঘেঁষে পড়লো৷ খাম টা কোথা থেকে পরেছে তা দেখার জন্য পিছনে তাকিয়ে দেখি তিশান নামক বিরক্তিকর ছেলেটির হাত থেকে পরেছে৷
পরেছে বললে ভুল হবে আমার মনে হলো ইচ্ছে করেই ফেলেছে ছেলেটির মুখে কিঞ্চিত বাঁকা হাসির রেশ৷ আমি খামটা নেওয়ার জন্য ঝুকতেই৷
ছেলেটি ঘুরে এসে আমার পায়ের সামনে থেকে খামটা তুলতে তুলতে বিরবির করে বলে,
” মিস.বোম্বাই মরিচ বাহ৷ ও আল্লাহ আজকেও মিস বোম্বাই মরিচের সাথে দেখা? এবার মনে হয় ভেতর বাহিরে কিছু একটা ঘটবে৷ ”
ছোট মাথায় অদ্ভুত কথা শুনলে তা কি আর বোধগম্য হয় নাকি? আর অদ্ভুত মানুষের কাছে অদ্ভুত কথা ছাড়া ভালো কথা কি আশা করা যায়? আমি ঠিক করে বসলাম আবার৷ বেশ ক্ষানিক্ষণ পর নানি আর আম্মু এলো নানি৷ আম্মু আর নানি রিপোর্ট নিতে গিয়েছিলো৷ সেই আন্টিকে দেখে কুশল বিনিময় করলো৷
জানতে পারলাম আন্টিও কিডনি বিশেষজ্ঞর কাছেই এসেছে৷
আমি বসে বসে নানির সাথে কথা বলছি নানু আমাকে এই ডাক্তার টা কেমন তা বলছেন৷ আমি না চাইতেও বার বার চোখ পিছনের শাড়ির সিটে চলে যাচ্ছে আর ফল স্বরুপ তিশানের সাথে চোখাচোখি হচ্ছে৷ তার চোখে কোনো পরিবর্তন নেই একই ভঙ্গিতে বসে আছে৷ সে বিব্রত না হলেও আমি বিব্রত হয়ে পরছি৷ একজন মেয়ের দিকে কেও যদি গভীর ভাবে তাকিয়ে থাকে তাহলে সে মেয়ের শরীর মন মস্তিষ্ক জানান দেয় যে তাঁর দিকে কেউ তাকিয়ে আছে৷ তেমন আমার ক্ষেত্রেও হলো৷ ও আমার দিকে এমন তাকাচ্ছে কেন? আর তিশানের কথাই কি বলবো আমি নিজেই তো বার বার তাকাচ্ছি ওর দিকে৷ তিশানের প্রতি রাগটা নেই কারণ ভুল আমারো ছিলো সে ও তারাহুরোতে ছিলো আমিও দেখিনি শুধু রাগ দেখিয়ে কত কথা শুনিয়েছি সাথে গাড়িতে লাথি মেরেছি আর কাল ও যেমন আমায় ঝগড়ুটে বলেছে আমিও বলেছিলাম আগে৷ হয়তো আমাকে অসভ্য মেয়ে ভাবছে? আমার অসস্তি হচ্ছে কিছুক্ষণ পর পর সে আমার দিকে তাকিয়ে থাকায়৷ আমি তাঁর উপর বিরক্ত না হলেও বেশ বিরক্তিকর মুখ নিয়ে একেবারে তাঁর চোখের দিকে তাকালাম৷ এমন ভাবে তাকানোর কারণ সে যেন ওমন করে আমার দিকে না তাকায়, এমন ভাবে তাকিয়ে থাকলে মানুষ কি ভাববে? আর তা ছাড়া আমার বাঘিনী মা পাশে আছে দেখলে নিশ্চিত উলটা পালটা সন্দেহ করে বসবে৷ আমার এমন দৃষ্টি দেখে সে তাঁর হাতের ফোনের স্ক্রিনে তাকিয়ে হাসলো৷ আমিও সামনের দিকে তাকিয়ে হাসলাম মুখ টিপে, কেমন লজ্জা লজ্জা লাগছে৷ এমন লজ্জা লাগছে কেন? আবার নিজের মোবাইলে মন দিলাম কেমন ঘুম ঘুম পাচ্ছে বসে থেকে৷ সব থেকে বিরক্তিকর আর কষ্টের জায়গা মনে হয় হসপিটালই৷ ডাক্তার এসেছে অনেক আগে রোগী দেখা হচ্ছে যে রোগী ভিতরে আছে তারা বের হলেই নানু যাবে৷ সে রোগী বের হওয়ার পর চেম্বারে নানু ঢুকলো সাথে আম্মুও আমি একটু ঠিক করে বসলাম এই বিরক্তিকর জায়গা থেকে যে কিছুক্ষণের মাঝে বের হতে পারবো এই অনেক৷ যাওয়ার কথা মনে পরতেই তিশানের কথা মনে পরলো কেন তা জানি না৷ কি অদ্ভুত কাকতালীয় ভাবে তিন-দিন দেখা হয়ে গেলো৷ কোনো কারণ ছাড়াই কি এমন হয়?আজ গেলে হয়তো আর কখনো দেখা হবে না৷ আচ্ছা আবার দেখা হওয়ার কথা ভাবছি কেন আমি?আড়চোখে তাকালাম পিছনে তিশান ওর মায়ের হাত ধরে বসে আছে আরেক হাত দিয়ে মোবাইল টিপছে৷ কিন্তু এবারো চোখা চোখি হয়ে গেলো এবার সে নয় আমি তাকিয়েছিলাম হঠাৎ আবার চোখা চোখি হওয়ায় আমি অস্বস্তিতে পরে গেলাম৷ এবার তিশান আমার চোখের দিকে তাকিয়েই ঠোঁট মেলে হাসলো৷ আমি চোখ ফিরিয়ে নিলাম৷ পিছন থেকে তিশানের গলা কানে এলো ও ওর মা কে বলছে,
“মা বাড়িতে এতো কাজের কারণে অসুস্থ হয়ে পরছো, ভাবছি এবার তোমার যেন কাজ না করা লাগে এই ব্যাবস্থা করবো৷ বয়স তো হইছে বলো? বিয়ে করে ফেলি তখন আমার বউ তোমার সব কাজ করে দিবে৷ ”
পাশ থেকে ইশান বললো,
“তোরে আমি গাধা শুধু শুধু বলি? আমারে কি তোর চোখে পরে না হাদা রাম?আমি বড় আমারে বিয়ে না দিয়ে মা তো বিয়ে দিবে কোন সুখে?”
আন্টি হাসি হাসি কন্ঠে বলে,
“আমি তোদের বিয়ে এতো জলদি দিচ্ছি না৷ আর তিশান তোর লজ্জা হবে কবেরে? হসপিটালে এসেও বিয়ের কথা বলছে এই ছেলে৷ বিয়ে পাগল ছেলে একটা সারা দিন শুধু বিয়ে বিয়ে৷”
আমি তাকালাম পিছনে তিশান ও আমার দিকে তাকিয়ে ওর মা কে বলে,
“মা তুমি আমার ইজ্জত ফালুদা বানিয়ে দিলে একেবারে৷”
হঠাৎ আমার ফোনে ফোন আসায় মোবাইলের দিকে তাকাই৷ তাকিয়ে দেখি কলেজ থেকে ফোন দিয়েছে রোভার স্কাউটের টিচার৷ অনেক্ষণ বসে আছি তাই ফোন রিসিভ করে ব্যাগ টা সাইডে রেখে উঠে দাঁড়ালাম৷
ওপাশ থেকে স্যার বললো,
“লিডার তোমার তো খবরই নেই৷ কাল কলেজে প্রোগ্রাম আছে স্কাউট ড্রেসে কলেজে থাকতে হবে৷ ”
আমি এ কথা শুনে স্যার কে বললাম,
“স্যার আমি তো বাড়িতে নেই, আমি নানু বাড়িতে৷ ”
স্যার বললেন,
“তোমাকে থাকতে হবে দশটার মধ্যে চলে এসো৷ ”
আমার আর কিছু বলার নেই স্কাউট এর সব মেয়েদের লিডার যেহেতু দায়িত্ব তো আছেই আমার দায়িত্ব পালন না করে তো আর পারবো না তাই বললাম,
“জ্বি স্যার কাল আমি কলেজে থাকবো৷ ”
বলেই রেখে দিলাম৷ আজ পরে গেছি মহা বিপাকে এখন কি করবো? আম্মুকে বললে ক্ষেপে যাবে বুঝিয়ে বলতে হবে৷কাল তাহলে আসতে পারবো না এখানে৷ আচ্ছা কাল আসলে কি তিশানের সাথে দেখা হতো? নিজের ভাবনা দেখে অবাক হলাম কি ভাবছি এসব আমি? এটা একদম ঠিক না৷ এর মধ্যেই মা আর নানু বেড়িয়ে এলো এখনি চলে যাবো কেন যেন পিছনে চোখ চলে গেলো আমার, এখনি চলে যাবো আর কি আমাদের দেখা হবে? কি অদ্ভুত কথা ভাবছি আমি আর কেনই বা ভাবছি? আম্মু ফাইল গুছাচ্ছে আমি নিচু হয়ে আমার হ্যান্ড ব্যাগ টা চেয়ার থেকে নিলাম৷ এবারো চোখাচোখি হলো তিশানের সাথে আমি দৃষ্টি সরিয়ে নিলাম৷ তখনই কানে এলো তিশান ওর ভাইকে বলছে,
“ভাইয়া চাবিটা দে বাইকের৷ তারাতাড়ি দে আর্জেন্ট পরে গেছে৷ ”
ওর ভাই বললো,
“তোর কাছে তো গাড়ির চাবি আছে বাইক দিয়ে করবি? আর কিসের তারা তোর? কিছুই তো করিস না আর্জেন্ট কি পরে গেলো আবার৷ ”
তিশান আবার বলে,
“আরে ভাইয়া দে না কাজ আছে বলছি তোকে আমি পরে৷ আর গাড়ির চাবি নিয়ে যা৷ মা কে সাবধানে বাড়িতে নিয়ে যাস৷ ”
চাবিটা পাওয়ার পর তিশান এক প্রকার দৌড়ে বেরিয়ে গেলো৷ আমি কেন যেন ওর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলাম৷ মন টা কেন যেন বিষন্নতায় ছেয়ে গেলো৷ মন আকাশে হঠাৎ মেঘ জমে উঠলো কেন? কেন মনে হচ্ছে আবার যদি দেখা হতো? কেন? কারণ আমার অজানা?কেন এমন হচ্ছে? সে দিন তো সবে পরিচিত হলাম আমি কি একটু বেশি ভেবে ফেলছি? বারাবাড়ি করে ফেলছি বেশি? মানুষের জীবন কি অদ্ভুত কাকতালীয় ভাবে তিন তিনটা দিন একজন অচেনা মানুষের সাথে দেখ হয়ে যায়? হয়ে যায় হয়তো এ নিয়ে এতো ভাবার তো কিছু নেই আমিও অদ্ভুত চিন্তা করছি৷

চলবে কি?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here