পাগলাটে প্রেমিক৷ এ পাগলামি প্রেমিক কথাটা শুনলে আমার তাঁর কথায় মাথায় আসে প্রথমেই৷ যে আমাতে মত্ত্ব হয়ে নিজে পাগল হয়ে আমাকেও ভস্ম করেছে তাঁর ভালোবাসার আগুনে৷ হুম পাগলাটে প্রেমিকই বটে সে আমাকে নতুন নতুন অনুভূতির সাথে পরিচয় করিয়েছে৷ তাঁর মত আমাকেও তাঁর প্রেমে পাগল করেছে৷ তাঁর কাছে আমি পাগলাটে প্রেমিকা হয়েছি কি না জানি না কিন্তু সে যে আমার পাগলাটে প্রেমিক আমি তা সব সময় প্রমান পাই৷ আগে থেকেই প্রেমে তেমন একটা আগ্রহ না থাকলেও সব সময় চাইতাম আমাকে কেউ পাগলের মতো ভালোবাসুক, পাগলের মতো আমাকে চায় যেন৷ তাঁর মনের আঙিনায় যেন আমার বিচরণই থাকে সর্বকাল সর্বসময়৷ আল্লাহ কারোই ইচ্ছা অপূর্ণ রাখে না তাই হয়তো আমারটা ও পূর্ণ করে দিলো? পাগলাটে প্রেমিক মানে আমার কাছে ছিলো যে আমার জন্য পাগলামো করবে, আমাকে পাওয়ার জন্য পাগলামো করবে, আর না চাইলেও আমাকে জোর করে ভালোবাসবে৷ কিন্তু পাগলাটে প্রেমিক এর নতুন বৈশিষ্ট্য আর নতুন কিছুর সাথে পরিচিত হলাম৷ যে পাগলামো তাঁর প্রতি আমাকেও আকৃষ্ট করেছে, যাকে ছাড়া আমার চলবেই না৷ সময়টা ১২ ডিসেম্বর ২০২০ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্কিং এরিয়ার গাছের নিচে উচু ইটের কাউচের উপর গালে হাত দিয়ে বসে ছিলাম৷ মেজাজ বেশ বিগ্রে ছিলো সকাল নয়টা থেকে এগারোটা পর্যন্ত সেখানেই বসে থাকতে হয়েছে শুধু একটা রিপোর্ট এর জন্য৷ দেওয়ার কথা ছিলো নয়টায় কিন্তু দিবে দিবে বলে এগারোটা বেজে গিয়েছে রিপোর্ট দেওয়ার নাম নেই৷ এক ঘন্টা পর দিবে বলতে বলতে নয়টা থেকে এগারোটা অব্দি বসে থাকতে হলো এখানে তবুও এক ঘন্টা হলো না ওনাদের৷ সরকারি হসপিটালের এই একটা দোষ তাঁদের সঠিক সময় হয় না৷ সাথে আমার নানি তাকে রিপোর্ট কাউন্টারেই বসিয়ে রেখে নিচে এসেছি৷ হাত ঘড়িতে তাকিয়ে দেখি সারে এগারোটা বাজে বেশ বিরক্ত নিয়ে পাশে থাকা ব্যাগ টা উঠিয়ে নিয়ে দাঁড়িয়ে পেছনে যাওয়ার জন্য ঘুরে দাঁড়াতেই কালো রঙের গাড়ি একে বারে পাশ ঘেঁষে চলে গেলো যার কারণে গাড়ির মিরর এর সাথে লেগে হাতেও ব্যাথা পেলাম৷ কিছুক্ষণ অতি রাগ নিয়ে ব্যাথা পাওয়া জায়গায় ঘষে রাগ নিয়ে গাড়ির দিকে তাকালাম৷ রাগ হলো বেশ এমনিতে অল্পতে রাগ করি না আমি এমন ঘটনা অনেক ঘটেছে অনেক বার ধাক্কাও খেয়ে অনেক ব্যাথাও পেয়েছি৷ কিন্তু আজ রাগ হচ্ছে বেশ৷ এক তো মেজাজ ৪২০ হয়ে আছে আবার এ কান্ড তাও হসপিটালের ভেতরেই৷ ব্যাগ টা নিয়ে রাগে গজ গজ করতে করতে এগিয়ে গেলাম গাড়িটার দিকে ততক্ষণে গাড়িটা পার্কিং করেছে এক সাইডে৷ আমি এক প্রকার দৌড়ে সে দিকে এগিয়ে গিয়ে গাড়ির একেবারে সামনে গিয়ে দাঁড়াই বাইরে থেকে ভিতরে থাকা মানুষটিকে আবছা দেখা যাচ্ছে৷ ছেলেটা ফোন নিয়ে কাউকে ফোন করে গাড়ির দরজা খুলতে খুলতে অপর পাশের মানুষ টিকে বিচলিত হয়ে বলছে, “আম্মু কোথায় তোমরা? আমি পার্কিং এরিয়ায় এসেছি৷” অপর পাশের মানুষ টি কি বললো জানি না এর মাঝেই কথা বলতে বলতেই যুবকটি আমার দিকে ব্রু কুচকে তাকালো৷ আমি কোমরে হাত দিয়ে রাগ দেখিয়ে বলি, “গাড়ি চালানোর সময় কি চোখ পকেটে নিয়ে ঘুরেন? আশে পাশে তাকান না? কাউকে মেরে দিলেও তো আপনারা মনে হয় ফিরেও তাকান না৷ ” আমার কথা শুনে ছেলেটি আমার দিকে তাকিয়ের ফোনে থাকা ব্যাক্তিকে বলে, ” আম্মু তুমি বসো ওখানেই আমি আসছি৷ ” বলে ফোনটা রেখে বলে, “কি হয়েছে?” আমার এ কথাটা শুনে যেন আরো রাগ উঠে গেলো৷ আমি সহজে রাগি না কিন্তু রাগ উঠলে নিজেকে সামলাতে পারিনা৷ একতো না দেখে ধাক্কা দিয়েছে আবার জিগ্যেস করছে কি হয়েছে? অদ্ভুত লোক তো৷ লোকটার সামনেই লোকটার গাড়ীর চাকায় কয়েকটা লাথি মেরে বলি, ” হ্যাঁ এখন তো জানবেনই না৷ ওখানে যে ধাক্কা দিয়ে এসেছেন সেটা তো আপনি জানেনি না৷ ইচ্ছে তো করছে গাড়ি সহ আপনাকে ফেলে দিয়ে আসি নিয়ে৷ ” বলে সে ব্যাক্তিকে কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়েই প্রস্থান করলাম৷ মানুষের ভির ঠেলে বি ব্লগ নানিকে বসিয়ে রাখা জায়গায় আসলাম৷ এখানে এসে দেখি আমি একা বোর হচ্ছি আর নানি আড্ডা জমাচ্ছে এক মহিলার সাথে৷ তিনটা সিট ছিলো এখানে তিনটাই মানুষ বসা তাই দাঁড়িয়ে থাকতেই হলো৷ দু-তিন মিনিট পর দেখি সেই ছেলেটা ও সিড়ি দিয়ে উঠছে আমি ভাবলাম উপরে যাবে হয়তো৷ কিন্তু না দেখি আমার নানির সাথে যে আড্ডা জমিয়েছে সেই মহিলাটার সামনে দাঁড়িয়ে বলে, ” কি মা তোমাকে না বলেছি আমাকে নিয়ে এসো? আর নিয়ে তো আসলেই না আবার কোন সকালে এসেছো এখনো এখানেই আছো৷ ” ছেলেটির কথায় সে আন্টি বলে, ” আর বলিস না বাবা নয়টায় রিপোর্ট দিবে বলে বারোটা বেজে গেলো এখনো দিচ্ছে না৷ ” ছেলেটি বলে, “আম্মু টেস্ট করার জন্য তুমিও কোনো হসপিটাল পেলে না সরকারি হসপিটালে আসতে হলো৷ তুমিও বাবার মতো কিপটা হয়ে যাচ্ছো৷ ” ছেলের কথায় যে মা অনেক বিরক্ত হয়েছে তা চেহারা দেখেই বুঝা যাচ্ছে ছেলেটি মায়ের দিকে তাকিয়ে “দেখছি” বলে কাউন্টারের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো৷ কি জানি কি কথা হলো ছেলেটি সেখান থেকে এসে ওর মায়ের সামনে এসে দাঁড়িয়ে বলে, “আর বিশ মিনিট দাঁড়াতে হবে মা৷ ” বলে ছেলেটি আমার পাশে বেশ দূরত্ব বজায় রেখে দাঁড়ালো৷ অবশ্য আমার পাশে দাঁড়ানো ছাড়া জায়গাও নেই কারণ সামনেই সিড়ি৷ এতক্ষণ মাথা গরম থাকলেও আস্তে আস্তে মাথা ঠান্ডা হয়ে গেছে আর নিজের ভুল টা ও বুঝলাম যে গাড়িতে লাথি দেওয়া উচিত হয়নি৷ আমি কারো সাথে ভুল করলে ভুল টা বুঝতে পেরে সরি বললেও ওনাকে বলতে কেমন যেন লাগছে৷ এটাকেই হয়তো ইগো বলে? বিশ মিনিটের জায়গায় আধা ঘন্টা হয়ে গেছে তখন ডাক পড়লো কাউন্টার থেকে৷ নানির থেকে রিসিট নিয়ে আমি কাউন্টারের দিকে গেলাম সাথে সেই ছেলেও ওর মায়ের থেকে রিসিট নিয়ে আসলো৷ রিসিট কাউন্টারে দিয়ে আবার কিছুক্ষণ দাঁড়াতে হলো এর মাঝে আমার রিপোর্ট টা এনে দিলো আগে ওই ছেলেদের টা দিয়েছে৷ সেই ছেলে রিপোর্ট নিয়ে সেখানে দাঁড়িয়ে দেখতে দেখতে মিনমিনিয়ে বলে, ” ইসস আজ দিন শুরু ঝগড়া দিয়ে সারাটা দিন নিশ্চয়ই বাজে কাটবে৷ আজকাল দেখছি ঝগড়াটে দিয়ে রাস্তা ভরে গেছে৷ ” বলেই ফাইলটা নিয়ে বেড়িয়ে গেলো৷ যাও ভেবেছিলাম সরি বলবো কিন্তু এমন কথা শুনে শরীরটা তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলো৷ আমি তেড়ে ওদিক গিয়ে দেখি ছেলে মাকে নিয়ে সিড়ি দিয়ে নামছে৷ আমি আর এগোলাম না নানিকে নিয়ে বের হলাম, নিউ মার্কেট এর উদ্দেশ্যে৷ আমি আর নানি কোনো কাজে বের হওয়া মানে সারা দিন ঘুরে বেড়ানো, নানি আমার বেস্ট ফ্রেন্ডের মতো সকল আবদার তাকে ঘিরেই৷ আমরা নিচে নেমে রিক্সা নিয়ে সেখান থেকে নিউ মার্কেট এলাম হাতে সেই রিপোর্ট গুলো৷ একটা থেকে চারটা অবদি নিউ মার্কেট, গাউছিয়া মার্কেট, ধানমণ্ডি হকার্স ঘুরে কিনা কাটা করে বের হলাম৷ সেখান থেকে বেড়িয়ে খেয়ে তারপর সেখান থেকে নানু বাড়িতে এলাম৷ চার দিন নানু বাড়িতেই থাকবো তাই নানির সাথেই হসপিটালে যেতে হবে শুনলাম৷ নানি কে নিয়ে যেতে হয় বারডেম কিডনি বিশেষজ্ঞর কাছে ৷ কিছু টেস্ট করানো হয়েছে পাশে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল থেকে আজ রিপোর্ট দিয়েছে৷ হসপিটালে যাওয়ার কথা শুনতেই সেই ছেলের কথা মনে পরলো হঠাৎ৷ রাগ চড়ে গেলো মাথায় আবার, আমি নাকি ঝগড়াটে? অসভ্য ছেলে একটা৷ পরের দিন একটা বাজে বেড়িয়ে পরলাম আমি নানি আর আম্মু৷ ডক্টর চারটায় আসে এখান থেকে জ্যাম পেরিয়ে জেতেই অনেক্ষণ লেগে যাবে৷রূপগঞ্জ থেকে জ্যাম পেরিয়ে আসতে আসতে সারে তিনটা বেজে গেলো৷ হসপিটালে এসে দুই তালায় বিশেষজ্ঞ চেম্বারের সামনে এসে ওয়েটিং রুম এ চেয়ারে বসলাম৷ পৃথিবীর সব থেকে বিরক্তিকর জায়গা আমার এই হসপিটালই মনে হয় তবুও নানির কথায় আসতেই হলো৷ নানি আর আম্মু আবার আরেকটা টেস্ট করতে গেলো এই টেস্ট টা করা হয়নি তাই, আমি এখানেই বসে রইলাম৷ অতি বিরক্ত নিয়ে মোবাইলে ফেসবুক লগ ইন করলাম ফ্রি ফেসবুক তাই সেভ করে রাখা গল্প গুলোই পড়ছি বসে বসে৷ বেশ কিছুক্ষণ পর আমার বসে থাকা চেয়ারের পিছনের শারির চেয়ারে বসার শব্দে মোবাইল থেকে চোখ সরিয়ে পিছনে তাকালাম৷ পিছনের থাকা মানুষটিকে দেখে অবাক হলাম বেশ৷ এরা এখানে ডাক্তার দেখায়?কালকের সেই আন্টি আর তাঁর সাথে অন্য একটা ছেলে৷ ইচ্ছে না করতেও আশেপাশে চোখ বুলিয়ে দেখলাম সেই ছেলেটা এসেছে নাকি৷ হ্যা এসেছে কি অদ্ভুত আজ ও এই ছেলের সাথে দেখা? আজ ঝগড়া না করলেই হয়৷ আজ আমার মাথা ঠিক রাখতে হবে নয়তো প্রতিদিন ঝগড়া করলে মানুষ খারাপ বলবে৷ আবার পরক্ষণেই ভাবলাম মানুষ প্রতিদিন ঝগড়া করে নাকি কাল আমার ও ভুল ছিলো তার ও ছিলো তাই ঝগড়া হয়েছে৷ আজ তেমন কোনো কথা হয়নি কিন্তু অনেকবার চোখাচোখি হয়েছে৷ কিন্তু বিপত্তি ঘটলো ওয়াশরুমে আসার পর আমি ওয়াশঅরুম থেকে বেরিয়ে দেখি আয়নার সামনে শার্ট ঠিক করছে ওই ছেলে৷ আমি গিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়ালাম আল্লাহ আল্লাহ করছি যেন কিছু না বলে৷ কিন্তু না উনি আয়নায় তাকিয়ে চুল ঠিক করতে করতে বলে, “মিস বোম্বাই মরিচ? বাহহ আজ ও দেখা? আচ্ছা বলুন তো আপনি আমাকে ফলো করছেন নাকি? না কাল ও দেখা হলো আবার আজ ও?” আমি বিরক্ত হলাম তাঁর কথায়৷ কেন ভাই সে কি সেলিব্রিটি নাকি যে তাকে আমি ফলো করবো? আর হসপিটাল যে কেউ আসতে পারে৷ আমি ব্যাগ থেকে টিসু বের করে আয়নায় তাকিয়ে লেপ্টে থাকা লিপস্টিক ঠিক করতে করতে অতি শান্ত কন্ঠে বলি, “হুহহ আজকাল সত্যি রাস্তা ঘাট ঝগড়ুটে দিয়ে ভরে গেছে৷ এটা হসপিটাল আসতেই পারে মানুষ দেখা হয়ে যাওয়া মানে কি ফলো করা নাকি৷ ” ছেলেটি আমার আয়নার দিকে তাকিয়ে বলে, “হ্যাঁ ঠিক বলেছে রাস্তা ঘাট ঝগড়ুটে দিয়েই ভরে গেছে৷” এইটুকু বলে বেসিন থেকে পানি নিয়ে এই শীতের মাঝে হাতের পানির ঝাপটা আমার মুখে মেরে গেলো৷ চলবে, #প্রণয়_ডায়েরি #Tafsia_Meghla #সূচনা_পর্ব (কেমন লাগলো জানাবেন৷ অনেকতো কাল্পনিক প্রেম কাহিনী লিখলাম যা বাস্তবে হয় না হয়তো? এবার ভিন্ন কিছু ট্রাই করলাম৷ যা হয়তো অনেকের বাস্তবতার সাথে মিলে যেতে পারে৷ শুরুটা সাধারণ হয়তো রেসপন্স ও কম হবে৷ তবুও যত জন পড়বে তারাই আমার কাছে অনেক ❤️?ঘটনা মূলক মন্তব্য আশা করছি৷)