সে আদরের অন্য নাম পর্ব-২০

0
991

? #সে_আদরের_অন্য_নাম ?

#পর্ব_২০ ?#অন্তীম_পর্ব?

উজান হিয়াকে নিয়ে রুমে ঢুকেই গেট লাগিয়ে হিয়াকে টুক করে কোলে তুলে নেয়,,আর এদিকে থাইয়ের পর্দার ফাঁকে ব্যালকুনিতে দাঁড়িয়ে কড়া নজর রাখে সব কটা

হিয়াঃ আরে কি করছেনননন,,এসেই শুরু হয়ে গেলো না আপনার

উজানঃ কি করবো মিসেস শাহরিয়ার এতোদিন তো অপেক্ষা কেও অপেক্ষা করিয়ে ছেড়েছিলেন আপনি,আজকে যখন অপেক্ষা টা পূর্ণ হলো তখন আর কি করে একটা মুহুর্ত নষ্ট করি বলুন

হিয়াঃ ইসস শখ দেখো মশাই এর,চুপচাপ ফ্রেশ হয়ে ঘুমিয়ে পড়ুন কাল বাড়ি ফিরে নিয়ম করে অফিস যেতে হবে কথা টা মাথায় রাখবেন

উজানঃ কাল না পরশু

হিয়াঃ কাল মানে কালই

উজানঃ আচ্ছা কালকে যা হবে দেখা যাবে এখন তো

হিয়াঃ এখন তো কি হুম

উজান হিয়ার কপালে একটা স্নেহের পরশ একে দিয়ে হিয়াকে নিয়ে রুমের মধ্যে ঘুরতে ঘুরতে গলা ছেড়ে গান গাইতে শুরু করে

❤️এখন তো সময় তোমার আমার_এ দুটি হৃদয় কাছে আসার_তুমিও যে একা আমিও যে একা_লাগে যে ভালো_ও প্রিয়❤️

_____________

সন্ধিঃ অবো রেএএএ তোর ভাই গান গাইছে ইসস কি মিষ্টি গলাআ

অবোঃ আস্তে আস্তে ঠেলাঠেলি কম করে করো রে আমি সেন্স হারিয়ে যাবো তো রে

রাসেলঃ ভাই তো আজ হেব্বি মুডে আছে দেখছি

তুষারঃ ধুর যা তো এই বাসরে গান শোনা নিয়া না এখন সন্ধি আবার আমার সাথে চিল্লাচিল্লি শুরু করে,কেনো ওকে বাসরে গান গেয়ে শুনাইনি ধুর
__________

হিয়াঃ উজাননন থামুনন কি করছেনন আপনি__আরে আমি পড়ে যাবো তো

উজানঃ আমি আছি না,আমি তোমাকে পড়তে দিতে পারি

হিয়াঃ হ্যা কিন্তু আস্তে কেউ শুনে ফেললে

উজানঃ উম হুম বাসরে আড়ি পাতার মানুষ গুলো এখন আপাতত এখানে নেই,ভাগ্যিস,না হলে আমার বাসর টা তো পুরো জলে ডুবে অতলে চলে যেতো

হিয়াঃ ইসস কিচ্ছু মুখে আঁটকায় না না আপনার?

উজানঃ খুব ইচ্ছে ছিলো এই বাসরে তোমাকে নিয়ে রাতের আকাশ টা দেখবো কিন্তু গেট টা কি রকম লক হয়ে আছে দেখো

হিয়াঃ রোজই তো আমাকে নিয়ে আকাশ দেখতে পারবেন এ-র পর থেকে,আজকে না হয় আকাশ টা তোলা থাক,,আর আপনি যা শুরু করছেন তাতে আজ আকাশের চাঁদ তারা সব লজ্জায় মেঘের আড়ালে লুকিয়ে থাকবে

উজানঃ আর তুমি,তুমি লজ্জা পাবে না

হিয়াঃ আপনি লজ্জা দিলে লজ্জা পাবো

_________________

সন্ধিঃ আ হা কি লজ্জা,,

অবন্তীঃ লজ্জা না ছাই ওর মনে মনেও ছু কিতকিত হু,,
__________________

উজান হিয়াকে ওর কোল থেকে নামিয়ে দিয়ে সামনে আয়নার কাছে নিয়ে গিয়ে দাঁড় করিয়ে দেয়

উজানঃ এক মিনিট

হিয়াঃ কি

উজান ওর লাগেজ থেকে একটা কোমড় এ পড়া বিছা বের করে আলতো করে হিয়ার শাড়ি টা সরিয়ে ওটা হিয়ার কোমড়ে পড়িয়ে দেয়,তারপর আলতো করে হিয়ার নাভি বরাবর একটা স্নেহের পরশ একে উঠে দাঁড়ায়

উজানঃ শুনেছি বাসরে নাকি নিজের ওয়াইফ কে কিছু গিফট করতে হয়,আমি ভেবেছিলাম তোমাকে ইউনিক কিছু গিফট করবো ঔ রিং,শাড়ি এগুলো তো অনেকেই করে তাই অনেক কিছু খুঁজে শেষমেষ তোমার জন্য এটা পছন্দ করে নিয়ে এসেছি,,পছন্দ হয়েছে তোমার

হিয়াঃ(উজান কে জাপ্টে ধরে) খুববববব পছন্দ হয়েছে কি সুন্দর বাজছে

_______________

অবন্তীঃ কোমড়ের বিছা দিচ্ছে How romantic my vaiya is

রাইসাঃ হ্যা রে সন্ধি তোকে তুষার কি দিয়েছিলো রে বাসরে

সন্ধিঃ ওর কথা বলিস না তো কিপটা টা একটা নাক ফুল ধরিয়ে দিয়েছিল হাতে,তখন তো আমার নাকো ফুটা ছিল না পরে গিয়ে না নাক ফুটিয়ে আসলাম,,

তিশাঃ থাম তো,তোদের ফিসফিসানির চক্করে আজ নির্ঘাত ধরা খাবো

রাসেলঃ হুদায় ভাই কোটিপতি হইছে কি একটা বিছা ধরিয়ে দিলো আমি সিউর ওটা হাজার টাকার উপর যায়া শালা কিনে নাই,,

রুপমঃ তোর কি তাতে,মনে হচ্ছে তোকে গিফট করছে কেউ,এখন চুপ কর তো
_______________

উজানঃ কাল থেকে সব নতুন করে শুরু করবো হিয়া,আই হোপ আমার উপর তোমার আর কোনো অভিযোগ নেই

হিয়াঃ আমার উপর আপনার কোনো অভিযোগ নেই তো

উজানঃ তোমার উপর কখনো আমি কোনো অভিযোগ করেছি কি

হিয়াঃ করতে চাইলেও সেই সুযোগ আপনাকে আমি দেবো না কখনো

উজানঃ তাই,তাহলে আজকের রাতেও নিশ্চয় অভিযোগ এর সুযোগ করতে দিবে না

হিয়াঃ অসভ্য

হিয়া লজ্জা সূচক মাথা নাড়ালে উজান আলতো করে হিয়ার মুখ টা তুলে হিয়ার ঠোঁট গুলো নিয়ে খেলতে শুরু করে

এদিকে সন্ধি টপ করে অবন্তীর চোখ ঢেকে দেয়

সন্ধিঃ বাচ্চা কাচ্চা দের এসব দেখতে নেই সোনা

অবন্তীঃ নাআআ আমি দেখবো এতোক্ষন তো ক্লাইমেক্স ছিলো এবার তো পুরো চুমু,,

রাইসাঃ দেওয়াচ্ছি চুমু তোদের থাম

উজান হিয়ার ঠোঁট দুটো যেই কাছে এনে ঠোঁট ডুবোতে যাবে ওমনি রাইসা উজান কে ফোন করলে ফোনের শব্দে উজান আর হিয়া খানিকটা ভরকে গিয়ে থেমে যায়

উজানঃ হোয়াট দা এতোক্ষণ ফোন করলো না যেই কি না,ধ্যাত,,

হিয়া উজানের রাগি রাগি মুখ দেখে হেঁসে উঠে,উজান রাইসার ফোন টা রিসিভ করতে যাবে ওমনি রাইসা ফোন টা কেটে দেয়,উজান আর ব্যাক করে না,ফোন টা বিছানায় থুয়ে আবার যেই হিয়ার কাছে গিয়ে হিয়াকে জরিয়ে ধরবে ওমনি অবন্তী এবার হিয়ার ফোনে ফোন করলে উজান আবার ক্ষেপে উঠে,হিয়া ফোন রিসিভ করে কিন্তু ওপাশ থেকে চারজন মুখ চেপে ওদের হাসি থামিয়ে রাখে,এরকম তিন চার বার করে চলতে থাকে তো থাকে কখনো রাইসা কখনো অবন্তী তো কখনো তুষার,উজান যখনি হিয়ার ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দিতে যাবে ঠিক তখনি ফাজিল গুলোর ফোন আসে,উজান এবার কিছু একটা সন্দেহ করে একটু থেমে যায় কিছুক্ষণ

হিয়াঃ আমাদের না একবার বাহিরে গিয়ে দেখে আসা উচিৎ,হয়তো রুমে নেট পাচ্ছে না,ওদিকে সব ঠিক আছে তো কে জানে

উজানঃ সব ঠিকি আছে আসলে সমস্যা টা এ ঘরের মধ্যেই

হিয়াঃ হ্যা আমিও তো ওটাই বলছি যে রুমে নেট পাচ্ছে না আপনি একবার বাহিরে গিয়ে কল করে দেখুন না

উজানঃ নেটওয়ার্ক ঠিকি আছে তবে এখন একটু অন্য কিছু ঠিক করতে হবে

হিয়াঃ অন্য কিছু,,কি

উজান ওর চোখের ইশারায় হিয়াকে খাটের তোলের দিকে ইশারা করলে হিয়া বলে কি,উজান হাত দিয়ে চুপ করতে বলে ব লে খাটের নিচেই সব গন্ডগোল,হিয়া প্রথমে কিছু না বুঝলেও পরে ঠিকি ধরতে পারে খাটের তোল থেকেই তাহলে ফোন আসছে হু,তারপর দুজনের মাথায় দুষ্টুমি বুদ্ধি চাপলে দুজনে এবার চিৎকার করে করে বলতে শুরু করে

হিয়াঃ আপনি না কি রকম আন রোমান্টিক,তুষার ভাইয়া টা কতো রোমান্টিক সন্ধি আপুর জন্য কতো কি করে আর আপনি আপনি তো শুধু ঔ কথায় কথায় কাছে আসতে চান আমার হু,যান আপনার সাথে আজ থেকে আড়ি আমার

উজানঃ আরে হিয়া কি সব বলছো তুমি,আমি তোমাকে কতো ভালোবাসি আর তুমি কি না বলছো যে আমি,তুমি জানো তুষার এখন কি করে ও তো ওর ঔ নিউ অফিসে জয়েন করেছে না আর করেই তো ওর অফিসের এক কলিগের সাথে সেদিন

হিয়াঃ সেদিন

উজানঃ পার্কে ঘুরতে গিয়েছিলো(বুম বুম বুম)সন্ধি টাকেও বলি এতো বোকা হলে হয় নাকি কখনো,একটু তুষার কে দেখে দেখে রাখলেই তো হয়

রাসেলঃ তুষার তুই কি না শেষ মেষ,,

তুষারঃ ভাই বিশ্বাস কর আমি কিছু করিনি,,

হিয়াঃ তারমানে তুষার ভাইয়া আমার সন্ধি আপুটাকে ঠকাচ্ছে

উজানঃ শুধু কি তুষার ওদিকে তো রাসেলো তিশাকে লুকিয়ে চুড়িয়ে অন্য প্রেম করছে,ভাবো তো কতোদিনের সম্পর্ক ওদের আর ওদের তো হাসবেন্ড ওয়াইফ রিলেশন কতো কাছাকাছি ছিলো ওরা কতোবার

হিয়াঃ তারপরো রাসেল ভাইয়া কি করে পারছে তিশা আপুর মতো একটা মেয়ে কে ঠকাতে,হাউ

সন্ধিঃ গেলো গেলো সব শেষ হয়ে গেলো আমার রে সব শেষ হয়ে গেলো,,

তিশাঃ আজকে তো এই ব্যাটারে আমি কুপায় কুপায় মাটিতে পুতে ফেলবো বদজ্জাত পোলা একটা আমাকে ঠকানো,,

উজানঃ তাই তো তোমাকে বলি যাকে তাকে ওভাবে বিশ্বাস করো না কিন্তু তুমি তো

হিয়াঃ হায় হায় আমি এক্ষুনি সন্ধি আপুকে তিশা আপু কে ফোন করে সব বলে দিচ্ছি দিচ্ছি দিচ্ছি

হিয়া বিছানা থেকে ফোন টা তুলে কাঁদো কাঁদো মুখে ঢং করে ফোন টা করতে যাবে ওমনি খাটের তল থেকে তুষার বেড়িয়ে উজানের শার্টের কলার ধরে,তুষারের সাথে সাথে টপ করে বেড়িয়ে আসে রাসেল

তুষারঃ এই আমি কোন অফিস কলিগ কে নিয়ে পার্কে ঘুরতে গিয়েছি বল বল আমায় (হাজার টা গালি দিয়ে)

রাসেলঃ আমি আমি তিশা কে ঠকিয়ে কার সাথে প্রেম করছি বল হারামি বল,তুই হিয়াকে খামোখা উল্টোপাল্টা নিউজ কেনো দিচ্ছিস কুত্তা,,

এদিকে এদের মারামারি তে সন্ধি আর তিশা কাঁদতে কাঁদতে গেট খুলে ব্যালকুনি থেকে বেড়িয়ে আসে

সন্ধিঃ তুমি এরকম ভাবে আমাকে ঠকাতে পারলা তুষার এ্যা হ্যা এ্যা,,

তুষারঃ না সোনা আ আ আমি কিছু করিনি বিশ্বাস করো উজান উজান সব মিথ্যা বলছে

তিশাঃ এই এই তুই কাদছিস কেনো,এই সব গুলোর তো মিডিল স্টামে বাড়ি মারা উচিৎ,মিরজাফরের বাচ্চা গুলো,আজকে দেখাচ্ছি তোমাকে আমি রাসেএএলল,,

রাসেলঃ প্লিজ প্লিজ আমাকে মেরো না তিশা,আমার সোনা বেবি আমার ময়নাপাখি,প্লিজ প্লিজ আমার কথা টা শুনো উ উজান ভুল ভুল বলছে,এই উজান বল না

তিশাঃ কি কি বলবে উজান সব তো নিজ কানে শুনলাম,বেয়াদব ছেলের দল সব কটাকে আমি জেলে পাঠাবো,আমার সাথে টোনাটুনির সংসার করে এখন অন্য মেয়ের সাথে ঘুর ঘুর,তবে রে

তিশা রাসেল কে বেদাম মারতে শুরু করলে অবন্তী টুক করে বেরিয়ে এসে চিৎকার করে উঠে

হিয়াঃ অবোওও তুই!

উজানঃ প্রিন্সেস তুই ও এদের সাথে!

অবন্তীঃ কি কি করছো তোমরা,থামোওওওও__এতো এতো বোকা কেনো তোমরাআআআ

তুষারঃ বোকা মানে

অবন্তীঃ ভাইয়া আর এই কুত্তি টা সব বুঝে ফেলে তোমাদের বোকা বানালো আর তোমরা সব গুলো গাধার মতো ডংডং করে বেরিয়ে এলে

রুপম এবার বেড়িয়ে এসে

রুপমঃ যাগ অবো টা আর তোদের মতো গর্ধব না

উজানঃ রুপম তুই ও এদের সাথে

রুপমঃ কি করবো বাধ্য___হ্যা রে তিশা তুই এতো ডেঞ্জারাস আগে তো জানতাম না,মানে বিয়ের আগেই এ-র কম হলে তো বিয়ের পর আমাদের রাসেল ভাই এর হাড় হাড্ডি ছাড়া কিছুই খুঁজে পাওয়া যাবে না

রাসেলঃ হারামি তোকে তো আমি

রাসেল রুপম কে মারতে গিয়েও হেঁসে ফেলে,আর তাদের সাথে হাসতে শুরু করে সবাই,মুহুর্তে ঘরের মধ্যে একটা আনন্দের জোয়ার ভেসে উঠে

রুপমঃ হয়েছে না তোদের বাসর দেখা প্লিজ এবার ওদের একা ছেড়ে দে,এমনতি ওদের হওয়া হওয়া বাসর টা হয়েই হয় নি তোরা আর ওদের জ্বালাস না

সন্ধিঃ হ্যা হ্যা যা মজা করার করেছি,এখন চল সবাই,ওদের একটু নিজেদের মতো থাকতে দে

এমন সময় হুট করে কাবাড থেকে সাব্বির বেড়িয়ে বোকা বোকা মুখ নিয়ে বলে উঠে
সাব্বিরঃ ভাই আমি কি থাকবো না আপনাদের সাথে যাবো(বুম বুম বুম)

হিয়াঃ সাব্বির ভাইয়া আপনিও

তুষার সাব্বিরের কাঁধে হাত রেখে

তুষারঃ মামা সাব্বির তো আরো থাকতে চাইছে মনে হয়,বাসর দেখার খুব শখ না তোর থাম এরপর তোর বিয়ে দিয়ে নিজ চোখে নিজের বাসর দেখাবো___চল

সন্ধি সবাই কে নিয়ে বের হতে হতে সবাই মিলে হাসতে হাসতে গান গেয়ে উঠে(এখন তো সময় তোমার আমার এ দুটি হৃদয় কাছে আসার❤️)

সবাই বের হয়ে গেলে উজান গেট লাগিয়ে দিয়ে ভালো করে রুম আর ব্যালকুনি চেক করে নিয়ে হিয়ার কাছে গিয়ে দাঁড় হয়

হিয়াঃ এরাও পারে সত্যি

উজানঃ হুমম প্রি প্লানেড সব কিছু বাট রুপমো যে কি করে ওদের সাথে সায় দিলো কে জানে

হিয়াঃ হুম কি একটা অবস্থা ভাবুন তো

উজানঃ (হিয়ার হাত দুটো ধরে) হুমম___হিয়া(অস্ফুটে)

হিয়াঃ হুম
উজানঃ আজ এই মুহুর্ত থেকে আমি তোমাকে পরিপূর্ণ ভাবে পেতে চাই হিয়া সেই অধিকার কি তুমি আমাকে দিবে

হিয়াঃ ___

উজানঃ I want you hiya may I?

হিয়া সম্মতিসূচক মাথা নাড়িয়ে উজানের বুকে মুখ লুকিয়ে নেয়,উজান অকপটে হিয়াকে কোলে তুলে এনে বিছানায় শুইয়ে দেয়,দুজনে হারিয়ে যায় ওদের ভালোবাসার রাজ্যে,নতুন জীবনের পথে পা বাড়াতে শুরু হয় ওদের একে অপরের মাঝে মিশে যাবার নেশা,চলতে থাকে পরিপূর্ণ ভাবে নিজেদের আগলে রাখার প্রত্যুশ্রুতি
_____________
চার বছর পরঃ

আজ হিয়ানের বয়স তিন বছর,উজান হিয়ার জীবনের নতুন অধ্যায় শুরু হবার এক বছরের মাথায় উজান হিয়ার ঘর আলো করে এই দিনে বাড়িতে আসে আমাদের এই পুতু পাখি টা,সেদিন টা হিয়ার জন্মদিন ছিলো,হিয়া চেয়ে ছিলো উজান আজকের দিন টা সারাদিন ওর সাথে কাটাক বাট উজানের সেই সময় টা হয় নি,অফিসে মিটিং থাকায় উজান সারাদিন অফিসের চার দেওয়ালে বন্দি ছিল,তাই তো এদিকে আমাদের হিয়া রানীর মেজাজ পুরো বিগড়ে যায় সন্ধ্যা হয়ে আসে কিন্তু উজান এখনো নেই,সে ঠিক করে সে আজকে থেকে আর দু দিন উজানের সাথে কোনো কথা বলবে না এটা উজানের শাস্তি হু

তাই সে গাল মুখ ফুলিয়ে তার বানানো ঔ ফ্লোর বিছানায় গিয়ে শুইয়ে পড়ে আর ঠিক করে আগামী দু দিন উজানের সাথে কথা না বলার পাশাপাশি সে উজানের সাথে ঔ একি রুমে গিয়েও ঘুমোবে না ফাইনাল

হিয়া শুইয়ে শুইয়ে সিলিং এর দিকে তাকিয়ে ফারিহার কথা ভাবতে থাকে,আজকে সারাদিন ফারিহা হিয়ার কাছে ছিলো একটু আগে সে ডক্টর দেখাবে বলে ওর মা এসে ওকে নিয়ে যায়,হিয়ার ভাবনার অজান্তেই হিয়ার চোখ দিয়ে কখন যে অশ্রু গড়িয়ে পড়ে হিয়া নিজেও বুঝতে পারে না

আজকে যদি ওর আর উজানের এরকম একটা বাচ্চা থাকতো তাহলে হয়তো এতো বড় বাড়িতে হিয়াকে একা একা থাকতে হতো না,হিয়া হয়তো উজান কে একটু কম মিস করতো,উজানো হয়তো তাদের বাচ্চার বাহানায় হিয়াকে দিনে দশ বারের জায়গায় বিশ বার কল করতো,এটা হওয়া কি খুব জরুরি ছিলো ওর সাথে,

হিয়া আর ভাবতে পারে না,বিছানা থেকে উঠে ব্যালকুনিতে গিয়ে দাড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে নিজের কষ্ট টা কমাতে চেষ্টা করে,এদিকে কিছুক্ষণ পর উজান আসে,চাবি থাকায় হিয়াকে গিয়ে গেট খুলতে হয় নি,উজান নিজে গেট খুলে আলতো পায়ে হিয়ার রুমে এসে ব্যালকুনির গেটে গিয়ে দাঁড় হয়,হিয়া বুঝে উজান ওর পিছনে গেটের কাছে দাঁড়িয়ে আছে কিন্তু হিয়া কোনো কথা না বলে মুখ ফুলিয়ে উল্টো দিক হয়েই দাঁড়িয়ে থাকে

উজানঃ হিয়া( অস্ফুটে)

হিয়াঃ আমি কোনো কথা বলবো না আপনার সাথে,কি কথা দিয়েছিলেন আমায়, আজ সারাদিন আপনি আমার সাথে কাটাবেন কিন্তু সারাদিন তো থাক একটা বেলাও আমি আপনাকে কাছে পেলাম না___আড়ি আপনার সাথে আড়ি আড়ি আড়ি

হিয়া মুখ ফুলিয়ে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে,হঠাৎ একটা বাচ্চার কান্নার চিৎকারে হিয়া অবাক হয়ে টুক করে পেছনে তাকাতেই থমকে যায়,উজানের কোলে একটা ছোট্ট ফুটফুটে বাচ্চা,বাচ্চা টাকে দেখেই বোঝা যাচ্ছিল বাচ্চা টা হয়তো কয়েকদিন হলো পৃথিবীতে এসেছে

হিয়াঃ উজান( অস্ফুটে)

উজানঃ তোমার জন্মদিনের উপহার হিয়া,কোলে নিবে না

হিয়ার চোখে মুহুর্তে সমুদ্র সমান পানি চলে আসে,হিয়া কি করবে না করবে কিচ্ছু বুঝতে পারে না,হিয়ার হাত পা কাঁপতে থাকে,সত্যি উজান ওকে এরকম একটা উপহার

উজানঃ কি হলো নেও

হিয়া কিছু ভাবতে পারে না কাঁপা কাঁপা হাতে কোলে তুলে নেয় বাচ্চা টাকে,কোলে নিয়েই বাচ্চা টার পুরো মুখে চুমু একে দেয় হিয়া

হিয়াঃ উজা উ উজান এটা আমাদের বাচ্চা,আম আমার আর তোমার বাচ্চা

উজানঃ (হিয়ার চোখ মুছে দিয়ে) হ্যা হিয়া আজ থেকে এই ছোট প্রিন্সেস টা আমাদের বাচ্চা

হিয়াঃ তুমি তুমি একে কোথায় পেলে,কেউ কেউ এসে আবার এঁকে নিয়ে যাবে না তো

উজানঃ না হিয়া কেউ আমাদের হিয়ান কে আমাদের থেকে কেড়ে নিয়ে যাবে না

হিয়াঃ হিয়ান!!

উজানঃ হ্যা হিয়া এই প্রিন্সেস টার নাম হচ্ছে হিয়ান,হিয়া উজানের হিয়ান সুন্দর না

হিয়াঃ (কাঁদতে কাঁদতে) খুব সুন্দর,,খুব

উজানঃ এই দেখো আবার কাঁদে(হিয়ার চোখ মুছে দিয়ে)

হিয়াঃ আমি না একটু আগে আকাশের দিকে তাকিয়ে ভাবছিলাম যদি আজকে আমার আর তোমার ফারিহার মতো একটা বাচ্চা থাকতো তাহলে এ বাড়িতে আমার আর কখনো একা লাগতো না

উজানঃ তোমার এ বাড়িতে একা থাকতে আর কষ্ট হবে না বলো

হিয়াঃ হুম হিয়ান আছে না এখন,আমি আমি ওর কোনো কমতি হতে দেবো না উজান,নিজের মেয়ের মতো ওকে এই কোলে আগলে রাখবো

উজানঃ নিজের মেয়ে কি হিয়া,ও তো আজ থেকে আমাদের ই মেয়ে___পরশু রুপম এর সাথে যখন কথা বলছিলাম তখন ওহ বললো ওর বাড়ির পাশে ওর খালার বানানো যেই অনাথ আশ্রম টা আছে তার সামনে একটা ডোবায় নাকি কে জানি আমাদের হিয়ান কে ফেলে রেখে চলে গিয়েছিলো,ওয়াচ ম্যান টা দেখতে পেয়ে তখন তখনই ওকে আশ্রমে নিয়ে এসে রুপমের খালার হাতে তুলে দেয়,রুপম তখন ওর খালার সাথেই ছিলো___রুপম আমাকে কি বললো জানো যখন ও ওয়াচ ম্যান টার কাছ থেকে বাচ্চা টাকে কোলে নেয় তখন ওর শুধু নাকি আমার আর তোমার কথা মনে আসছিলো,ও ভেবেছিলো আমি যদি এই বাচ্চা টাকে এডপ্ট করে নিয়ে মানুষ করি তাহলে হয়তো তিনটে জীবন সুন্দর করে বড় হয়ে উঠবে,তাই আমি কথাটা শোনা মাএ ই শুধু তোমার কথা ভেবে আজ সকালে ছুটে গিয়েছিলাম সিলেটে,আমাদের হিয়ান কে আনতে,

হিয়াঃ আচ্ছা উজান পৃথিবীতে যাদের বাচ্চা নেই তারা যদি এভাবে একটা করে অনাথ বাচ্চা কে মানুষ করে তাহলে কতো গুলো নিষ্পাপ প্রাণ নতুন করে বাঁচতে শিখবে বলো❤️❤️❤️

উজানঃ আমি ঠিক করেছি কি হিয়া জানো

হিয়াঃ কি

উজানঃ আমার যখন অনেক সেভিংস হবে তখন আর কিছু বাবার কাছে নিয়ে বা লোন করে একটা আশ্রম বানাবো ওখানে সব এরকম ছোট ছোট বাচ্চা গুলো বড় হবে

হিয়াঃ ওরা সব আমাদের বাচ্চা হবে বলো

উজানঃ হুম হিয়া সবাই আমাদের বাচ্চা হবে

হিয়াঃ আমি ভাবছি মানুষ কি করে এরকম একটা বাচ্চা কে একটা ডোবার মধ্যে ফেলে যেতে পারে,কি করে মানুষ এতো পাষাণ হয় উজান কি করে

উজানঃ হয় হিয়া,হতে হয় না হলে যে আমাদের মতো মানুষ গুলো তাদের কোল কি করে ভরাবো বলে

হিয়াঃ আজ আমি খুব খুশি উজান,তুমি আমাকে এতো বড় একটা উপহার দিবে আমি সত্যি এখনো বিশ্বাস করতে পারছি না

উজানঃ (হিয়ার কপালে একটা স্নেহের পরশ একে হিয়ার চোখ মুছে দিয়ে) আর কোনো কষ্ট না হিয়া,আর চোখে পানি না,কাল আগে সকাল সকাল হিয়ান কে ডক্টর দেখাতে হবে ঠিক আছে

হিয়াঃ শুধু ডক্টর ওর জন্য চকলেট গাড়ি নতুন জামা পুতুল এগুলো কিনে আনবো না

উজানঃ আনবো,পাগলি একটা আসো এখন ভেতরে,হিয়ান কে খাওয়াতে হবে তো নাকি

হিয়াঃ হুম হবে তো,চলো চলো,আমার মা টা তো এখন খাবে(হিয়ান কে পুরো আগলে নিয়ে)

সেদিন থেকে শুরু হয় উজান হিয়ার জীবনে নতুন আরেকটা অধ্যায়,হিয়ার কোলের নরমে হিয়ানের মতো একটা নিরপরাধ বাচ্চা বড় হতে থাকে,হিয়া হিয়ান কে শাষন করে বকুনি দেয় আবার নিজে থেকেই প্রাণ উজার করে ভালোবাসে❤️হিয়ান আসার এক বছর পর হিয়ারা শীফট করে সিলেটে,উজান এখন সিলেটর অফিসেই কাজ করে,আর হিয়াকে দেওয়া কথা অনুযায়ী আজ চার বছর পর উজান সক্ষম হয় নিজের টাকায় একটা আশ্রম তৈরি করতে,আজ সেই আশ্রমের চার মাস পূর্ণ হলো প্রতি মাসের এই দিনে পুরো শাহরিয়ার ফ্যামিলি গিয়ে আশ্রমের বাচ্চা দের নতুন জামা,জুতো,খাবার কিনে দেয়,আর সেই প্রস্তুতি মেটাতে আমাদের হিয়া রানী ব্যস্ত সকাল থেকে

উজানঃ হিয়া হিয়া কোথায় তুমি,হিয়া দেখো হিয়ান পানি দিয়ে ঘর বাড়ি কি করছে

হিয়াঃ আসছি আসছি তুমি একটু ওকে কোলে নেও না,আর ওর হাত থেকে পানির মগ টা কেড়ে নিলেই তো হচ্ছে,

উজানঃ কেড়ে নিলেই তো কান্না করছে

হিয়াঃ কান্না করছে তো কি হয়েছে,এখন পানি নিয়ে খেলতে গিয়ে ওর জ্বর আসলে,কাঁদুক গিয়ে তুমি নেও তো ওটা ওর হাত থেকে

উজান ল্যাপটপের সামন থেকে উঠে হিয়ান কে গিয়ে কোলে নেয়

উজানঃ আমার প্রিন্সেস টাকে কি আমি কাঁদতে দিতে পারি,কি বলে বল তো মা টা

হিয়ানঃ হে হে,বাবা বাবা ওতা ওতা

উজানঃ কোনটা মা

হিয়ানঃ পুতু টা পুতু টা গোসল কআবো ওকে

উজানঃ গোসল করালে যে পুতু টার ঠান্ডা লেগে যাবে তখন জ্বর আসলে

হিয়াঃ কই দেখি কোথায় তোমার মেয়ে___এখনো পানি দিয়ে খেলছে,দে দে দে ওটা আমাকে দে বলছি,

হিয়ানঃ আ আ দেবো না আ আ বাবা বাবা

উজানঃ আহ ওকে কাঁদাচ্ছ কেনো,ছাড়ো তো নিতে হবে না,খেলুক ও

হিয়াঃ হ্যা জ্বর আসলে তো ঔ আমাকেই দেখতে হবে আপনার আর সময় কোথায়

উজানঃ বাজে কথা বলো না তো,নিজের সময় নেই আসছে আমাকে কথা শুনাতে

হিয়াঃ আচ্ছা শুনো না আমি ঔ আশ্রমের জন্য সব খাবার প্যাকেটে প্যাকেটে করে সাজিয়ে দিয়ে এসেছি তুমি একটু গিয়ে দেখো না সব গাড়িতে ঠিক মতো উঠছে কি না

উজানঃ আচ্ছা দেখছি

উজান হিয়ানকে নামিয়ে দিয়ে রুম থেকে বের হতে গিয়েও ফিরে আসে

হিয়াঃ কি হলো আবার,কি চাই

উজানঃ তোমাকে চাই

হিয়াঃ হ্যাএএ

উজান হিয়াকে জড়িয়ে ধরে হিয়াকে নিয়ে দেওয়ালে ঠেসে ধরে

হিয়াঃ কি করছো হিয়ান দেখছে

উজানঃ দেখুক,,আজকে যে তোমাকে আমি সারাদিন পাবো না সেটা খুব ভালো করে বুঝে গেছি তাই এখন একটু

হিয়াঃ না উজান দেখো কেউ এসে যাবে

উজানঃ চুপপপ কেউ আসবে না

হিয়াঃ আরে আচ্ছা মুশকিল তো,ছাড়ো নাআআআ

উজানঃ উমহুম

হিয়াঃ প্লিজ ছাড়ো না উজান কেউ এসে যাবে

উজানঃ কেউ আসবে না,,আমার এখন তোমাকে আদর করতে ইচ্ছে করছে আমি এখন তোমায় আদর করবো ব্যাছ

হিয়াঃ আরে পাগল হয়ে গেলে নাকি,সময় নেই এই অসময় তুমি

উজানঃ তুমি এরকম ছটফট করছো কেনো,,ও বুঝেছি এখন আমার আদর নিতে তো আর ভালো লাগে না না তোমার (মুখ ফুলিয়ে)

হিয়াঃ (উজান কে জড়িয়ে ধরে) তোমার এই আদর টাই তো আমার সব এটাকে কি করে ভালো লাগবে না বলো তো

উজানঃ তাই বুঝি

হিয়াঃ জানো তোমার এই আদরের একটা নাম দিয়েছি আমি

উজানঃ আদরের আবার অন্য নাম হয় নাকি!!

হিয়াঃ হয় তো

উজানঃ কি নাম শুনি

হিয়াঃ বলবো

উজানঃ হুম বলো ফাস্ট

হিয়াঃ সে আদরের নাম টা হচ্ছে Destiny

উজানঃ Destiny!!

হিয়াঃ হুম কি রকম ভাগ্য করে আমি তোমাকে পেয়েছি বলো তো,,সেদিন বিয়ের সাজে আমি তো কল্পনাও করতে পারি নি আমার বিয়ে টা ঠিক তোমার সাথেই হচ্ছে

উজানঃ (হিয়ার কপালে ঠোঁট ছুঁইয়ে) দিন টা সত্যি অবাক করার মতো ছিলো

হিয়াঃ আর ভাগ্য করেই তো আমাদের হিয়ানকে তুমি আমার কোলে এনে দিলে,,এটাও তো একটা ডেস্টিনি বলো

উজানঃ হুমমম তবে সেদিন গাড়িতে আমাদের ছবি গুলো যে তুলেছে তাকে আজ খুব করে একটা ধন্যবাদ দিতে ইচ্ছে করছে

হিয়াঃ যাহ অসভ্য তাকে যদি কখনো সামনে পেতাম না তার পা ভেঙে দু টুকরো করে দিতাম

দুজনে নিজেদের মধ্যে হেসে উঠে,,উজান হিয়াকে আগলে নিয়ে আদর করতে শুরু করে,এদিকে আমাদের নয়নের মণি হিয়ান ফ্লোরে বসে তার পুতু কে নিয়ে খেলতে শুরু করে নিজ মনে❤️?

সমাপ্ত

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here