সে আদরের অন্য নাম পর্ব-১৮

0
388

? #সে_আদরের_অন্য_নাম ?

#পর্ব_১৮

বাড়িতে এসে হিয়া রিপোর্ট গুলো হাতে নিয়ে ওর বিছানায় বসে চুপ করে থাকে,কি করবে এখন হিয়া,আনমনে তাকিয়ে থাকে রিপোর্ট গুলোর দিকে,সময় পেরুতে থাকে হিয়ার শরীর মন দুটোই নিস্তেজ হতে শুরু করে,মনের মধ্যে হাজার ক্ষোভ এসে জোর হতে থাকে প্রতি মুহুর্তে,কিন্তু কার কাছে গিয়েই বা হিয়া ওর এই কষ্ট টার ইতি টানবে,এক সময় ক্লান্ত হয়ে হিয়া বালিশে মাথা না দিয়েই ঘুমিয়ে পড়ে,

দুপুর তখন ২টা হঠাৎই কলিং বেলের লাগাতার শব্দে হিয়ার ঘুম ভেঙে যায়,ঘুম থেকে তড়াৎ করে উঠে হিয়া ভাবতে শুরু করে এসময় আবার কে এলো,টপাটপ হাতে থাকা রিপোর্ট গুলো তোষক টার তোলে গুঁজে দিয়ে পাশে থাকা ওরনা টা গায়ে জড়িয়ে হিয়া গেট খুলতে উঠে যায়,গেট খুলতেই অবন্তী সন্ধিকে নিয়ে হুড়মুড় করে রুমে ঢুকে হিয়াকে জড়িয়ে ধরে

হিয়াঃ তুই!!আসবি আমাকে একবার বলবি না,আমি তো ভয় পেয়ে গেছি এসময় আবার কে,,এরকম করে কে কলিং বেল টিপছে

অবন্তীঃ এ কথা শুনো মেয়ের বললে কি আর সারপ্রাইজ থাকতো বুঝি,,,নে এখন তাড়াতাড়ি ব্যাগ গুছিয়ে নে আমরা একটু পর সবাই মিলে বাড়িতে ফিরবো,,ভাইয়া নিচে গাড়ি পার্ক করছে,আসছে হয়তো

হিয়াঃ বাড়ি ফিরবো মানে,,হঠাৎ বাড়ি কেনো যাবো,তোর ভাইয়া তো আমাকে কিছু বলেনি

সন্ধিঃ আরে সব হঠাৎই প্লান করা হয়েছে,,অনিকের আজ আংটি পড়িয়ে কাল বিয়ে তাই তোমার শ্বাশুড়ি আজই সবাই কে বাড়িতে আসতে বলেছে

হিয়াঃ অনিক ভাইয়ার বিয়ে!!কাল মানে কেনো,না মানে কখন সব কথা হলো আমি তো কিছুই জানি না

সন্ধিঃ আরে আমরাও জানতাম নাকি দুপুরে আন্টি ফোন করে বললো,আমি তুষার তো এমনিতেও কাল ফিরতাম তা ভাবলাম যাবো যখন আজই তোমাদের সাথে ফিরে যাই

অবন্তীঃ এখন যা তো গিয়ে ঝটপট ব্যাগ গুছিয়ে নে

হিয়াঃ হ্যা কিন্তু

অবন্তীঃ কোনো কিন্তু না,চল আমি তোর ব্যাগ গুছিয়ে দিচ্ছি,আয়য় নাআআআআ সময় নেই হাতে বেশি

অবন্তী গিয়ে হিয়ার লাগেজ নিয়ে গোছাতে শুরু করে,অবনতির পেছনে গিয়ে হিয়া দাঁড়িয়ে যায়,যদি কোনোভাবে রিপোর্ট গুলো অবন্তীর হাতে আসে তাহলে সর্বনাশ হয়ে যাবে,বিশ মিনিটের মধ্যে অবন্তী সব গুছিয়ে নেয় হিয়ার,এর মধ্যে উজান এসে বলে রাতের মধ্যে বাড়ি পৌঁছে এনগেজমেন্ট এ্যাটেন্ড করতে চাইলে এখনি বের হও সবাই,তাই জন্য অবন্তী তাড়াহুড়ো করে আধা ঘণ্টার মধ্যে হিয়ার সব নিয়ে তৈরি,,হিয়া এখন কি করবে কিচ্ছু বুঝতে পারে না,সন্ধি রুমে ঠিক ওর তোষকের উপর বসে আছে যার জন্য হিয়া ওগুলো অন্য কোথাও সরিয়ে রাখবে সেটাও পারছে না,হিয়া চাইছিলো রুম টা ফাঁকা হলে কোনোভাবে ওগুলো কিন্তু ফাঁকা আর হবে কি তার আগে উজান গিয়ে সব দরজা জানালা লাগিয়ে সবাইকে বের করে দেয় বাহিরে

উজানঃ সামান্য একটা লাগেজ গোছাতেও তোমার যদি এক ঘন্টা লাগে হিয়া,,পরীক্ষার হলে সব প্রশ্নের উত্তর তাহলে কোন সময় করবে তুমি,,বোঝাও আমাকে

হিয়াঃ না আমি আসলে,অবো তো গুছিয়ে দিলো সব

উজান কিছু না বলে কপট রাগে সবাইকে নিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্য রওনা দেয়,উজান গাড়ি নিজে ড্রাইভ করছে,উজানের সাথে পাশে বসে আছে তুষার,পেছনে হিয়া সন্ধি আর অবো,কথা হয় অর্ধেক রাস্তা উজান ড্রাইভ করবে অর্ধেক তুষার,সে অনুযায়ী চলছে গাড়ি নিজ গন্তব্যে,সন্ধি অবো ব্যস্ত একদিনে কি থেকে কি করবে সেই হিসাব কষতে,,,,,,,অন্য দিকে হিয়া আজ চুপচাপ,কিছুই করার রইলো না তার হাতে,তার মাথায় এখন শুধু একটাই চিন্তা ঘুরছে কি করে উজানকে হিয়া ওর এই অপূর্ণতা থেকে সে মুক্তি দেবে,হিয়া উজানকে ছেড়ে চলে গেলে উজান থাকতে পারবে তো হিয়াকে ছাড়া,যদি অন্য কেউ উজানকে পূর্ণ করে তাহলে ক্ষতি টা কোথায়,রাত আটটার দিকে সবাই বাড়িতে পৌঁছে,এদিকে অনিকের জন্য যে মেয়ে দেখা হয়েছে সবাই এসে হাজির,বিয়ে টা হঠাৎই আয়োজন করা,দাওয়াত খেতে গিয়ে পরিচয় ওখানেই আলাপ ওখানেই পাকা কথা সেরে ফেলা,অনিকের মেয়েটাকে প্রথম দেখায় ভালো লাগায় সেও আর না করে নি

বাড়িতে ফিরে এনগেজমেন্ট এ্যাটেন্ড করতে পেরেছে এতেই সবার শান্তি,মেয়ে টাকেও অবো হিয়া দুজনের পছন্দ হয়েছে,রাতের দিকে বাসবি উজান সবাই দৌড়াদৌড়ি করছে একে ফোন করছে ওকে ফোন করছে কতো আয়োজন বাকি,ওদিকে অবো সন্ধি ব্যস্ত হাতে মেহেদী পড়া নিয়ে,কিন্তু হিয়ার এসবে আর কোনো মন নেই,হিয়া বাসবির ঘরে এক কোণে গিয়ে শুইয়ে আছে,পেটে ভীষণ ব্যাথা করছে তার,উজান এসে হিয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতেই হিয়া উজানের হাত সারিয়ে দেয় এক লহমাতে

উজানঃ কি হয়েছে হিয়া তোমার,গাড়ি থেকেই দেখছিস কি রকম মন খারাপ হয়ে বসে আছো

হিয়াঃ কিছু হয়নি আমার,প্লিজ আমাকে একটু একা থাকতে দিন

উজানঃ তুমি কাঁদছো

হিয়াঃ আপনার কি তাতে,আমি কি আপনাকে বলেছি আমি কাঁদছি বলে কোনো সহানুভূতি দেখাতে

উজানঃ এভাবে বলছো কেনো তুমি,কি হয়েছে বলো আমাকে,শরীর খারাপ লাগছে,মাথা টা টিপে দেবো একটু

হিয়াঃ বললাম তো আপনাকে,আমার ভালো লাগছে না প্লিজ আপনি আমাকে একটু একা থাকতে দিন নাআআআ

উজান আর কিছু বলে না,একটা দীর্ঘ শ্বাস টেনে বেড়িয়ে যায় রুম থেকে,উজান চলে গেলে হিয়া কাঁদতে শুরু করে পাগলের মতো,বালিশ ভিজে একাকার হয়ে যায় হিয়ার চোখের পানিতে
________________________

পরের দিন,,

জমকালো ভাবে না হলেও অনেক সুন্দর ভাবেই অনিকের বিয়ে টা সম্পূর্ণ হয়,কথা হয় বিদায় অনুষ্ঠান টা হবে একদম অন্য রকম ভাবে,সবাই বিয়ে তে ইচ্ছে মতো মজা করলেও হিয়া নিজেকে গুটিয়ে রাখতে চেষ্টা করে যা চোখ এড়ায় না উজানের,উজান ঠিক করে না এভাবে সম্ভব না আজ হিয়াকে বলতেই হবে ওর সমস্যা টা ঠিক কোথায় হচ্ছে,যদি বিয়ে টা মেনে নিতে ওর সমস্যা হয় তাহলে বলে দিক উজান আর হিয়াকে জোর করবে না,এভাবে তো অনিশ্চিত একটা সাংসারিক জীবন উজান ডিজার্ভ করে না,কিছুতে তো ও হিয়ার কমতি রাখছে না তাহলে কেনো হিয়া বারবার ওকে এতো আঘাত দিচ্ছে

রাত এখন এগারোটা,,বাড়ি টা এখন নিতান্তই চুপচাপ,,উজানের ঘরে এক কোণে বসে আছে হিয়া,বিয়ের পর নিজের এই ঘর টায় খুব একটা বেশি আসা হয় নি হিয়ার,আর কখনো এসে এখানে থাকা হবে কি না তাও সংশয়,উজান এসে রুমের গেট লাগিয়ে হিয়ার পাশে গিয়ে বসে হিয়ার হাত টা ধরতেই হিয়া ওর হাত টা ছাড়িয়ে দেয়

উজানঃ হিয়া প্লিজ,,অনেক সহ্য করছি আমি আর না,,আমারো একটা লিমিটেশন আছে

হিয়াঃ কি বলতে চাইছেন কি আপনি

উজানঃ তুমি খুব ভালো করেই জানো আমি কি বলতে চাইছি,,কি সমস্যা হচ্ছে তোমার,,আমি জানি তুমি কিছু লুকাচ্ছ আমার কাছ থেকে,,কি এমন জিনিস যেটা আমি জানলে সমস্যা

হিয়াঃ কি লুকোবো আমি আপনার থেকে আজব,,আমি কিছু লুকোচ্ছি না,,,,,,আপনার কাছে যদি এখন আমার এগুলো বিরক্তিকর হয়ে উঠে তাহলে আপনি আমাকে ডিভোর্স দিয়ে দিন

উজানঃ হিয়া!

হিয়াঃ এতে এতো অবাক হবার কিছু নেই,,আমি আর আপনার সাথে থাকতে চাইছি না প্লিজ আমাকে ডিভোর্স দিয়ে দিন,,আমার এই বন্দি জীবন খুব ভোগাচ্ছে আমাকে,,আমি একটু নিজের মতো স্বাধীন ভাবে বাঁচতে চাই

উজানঃ কিসের বন্দি জীবন হিয়া,আমি তোমাকে কিসে বন্দি করে রেখেছি!!

হিয়াঃ এতো প্রশ্নের উত্তর আমি দিতে পারবো না,আপনি প্লিজ আমাকে এবার একটু মুক্তি দিন

উজানঃ কি হয়েছে তোমার হিয়া,হিয়া তাকাও আমার দিকে,হিয়া আমার দিকে দেখো,হিয়া আমি কি কিছু কমতি রাখছি তোমার,আমি আমি কি কিছু ভুল করেছি,কোনো আঘাত দিছি তোমার মনে,কি দোষ আমার বলো

হিয়াঃ আপনার কোনো দোষ না,আপনার এই অতিরিক্ত ভালোবাসা টাই আমার বিরক্ত লাগছে দিন দিন..!!

উজানঃ হিয়া!!,,,,তুমি কি আমাকে ভালোবাসো না হিয়া

হিয়াঃ না বাসি না,আর কিভাবে বললে আপনি বুঝবেন যে আমি আপনাকে ভালোবাসি না,বাসি না,বাসি না

উজানঃ (কিছুক্ষণ চুপ থেকে) ঠিক আছে,,দিলাম তোমাকে মুক্তি,,অনেক জোর করেছি তোমাকে আমার ভালোবাসা টাকে এভাবে তুমি অসম্মান না করলেও পারতা হিয়া
_________________________

সেদিন উজান আর বাড়তি একটা কথা না বলে বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়,সারারাত আর বাড়ি ফিরে না,এদিকে উজানের চিন্তায় হিয়া না ঠিক করে ঘুমোতে পারছে না পারছে উজানকে গিয়ে ফিরিয়ে আনতে,পরের দিন দুপুর হয়ে আসে উজানের কোনো খোঁজ নেই,ফোন টাও বন্ধ হিয়ার মনে ভয়ের আশংকা বাঁধে উজান কিছু করে বসে নি তো,,হিয়া আর বাড়িতে থাকতে পারে না,কাকে নিয়ে এই গোটা শহরে উজানকে ও খুঁজবে,হিয়া কিছু না ভেবেই একা একা সব জায়গা ঘুরতে শুরু করে,ওদিকে বাসবিরো হালকা চিন্তা শুরু হয় উজান তো এতো মাথা গরম করার ছেলে না,নিশ্চয় বড় কোনো ঝামেলা হয়েছে,,পথে হিয়ার সঙ্গ দেয় রুপম,হিয়া রুপমকে বলে উজান কে একটু খুঁজে দিতে ও গত দু ঘন্টা ধরে উজানকে খুঁজছে কিন্তু কোথাও উজান নেই,রুপম হিয়াকে শান্তনা দিয়ে উজানকে খুঁজতে শুরু করে

সেদিন টা পুরো পাড় হয়ে যায় কিন্তু হিয়া উজানকে খুঁজে পায় না,এদিকে হিয়ার সাথে এবার বাসবির ও চিন্তা শুরু হয়,রাত ১টার দিকে উজান বাসবিকে ফোন দিয়ে বলে মা আমি ঠিক আছি,আমি ঢাকায় ফিরে আসছি,,এটুকু বলেই উজান ফোন টা কেটে দেয়

পরেরদিন,কাল থেকে উজানের রুমে নিজেকে বন্দি করে রেখে এখন হিয়া ক্লান্ত,শরীর মন কিছুই আর কাজ করছে না,,তলপেটে ভীষণ ব্যাথা শুরু হয়েছে আবার,,না পারছে কাউকে বলতে না সইতে,,হঠাৎই অবো হিয়ার গেটে নক করে হিয়ার হাতে একটা নীল রঙের র্যাপিং পেপারে মোড়ানো বক্স ধরিয়ে দেয়,,(১ম পর্ব)
____________________________

বিকেল তখন পাঁচটে
হিয়া ওর ব্যাগ গুছিয়ে বেড় হয়ে আসে রুম থেকে

বাসবিঃ হিয়া,,কোথায় যাচ্ছিস মা,,হাতে ব্যাগ কেনো

হিয়াঃ মা আমি বাড়ি যাচ্ছি,,উনি হয়তো আর আমাকে নিতে আসবে না

বাসবিঃ নিতে আসবে না মানে,নিতে কেনো আসবে না,কি হয়েছে হ্যা তোদের,উজান এরকম করে আবার হঠাৎ চলে গেলো কেনো

হিয়াঃ সব ঠিক আছে মা,আমার বাড়ির কথা খুব মনে পড়ছে তাই আমি

বাসবিঃ বাড়ির কথা মনে পড়লে গিয়ে কটা দিন থাক বাড়িতে,কিন্তু বড় কোনো সমস্যা হলে আমার কাছে লুকাস না মা

হিয়াঃ হুম,আসছি
__________________________

পরের দিন

উজান আজ অফিস যায় নি,অফিস যাবার কোনো ইচ্ছে তার নেই,নিজের রুমে কোনো কারণ ছাড়াই সে চোখ বন্ধ করে শুইয়ে আছে,খুব মনে পড়ছে হিয়ার কথা ওর,কি হয়েছে হিয়ার কেনো এরকম বিহেভ করছে ও,,ওদিকে নূরজা খালা এসে রোজকার মতো নিজের কাজ করছে

নূরজা খালাঃ বাবাজান কি ঘুমাচ্ছ?

উজানঃ না খালা বলো,তোমার রান্না শেষ

নূরজা খালাঃ রান্না তো শেষ,,দেখো না এগুলো কিসের কাগজ,হিয়া মার রুম ঝার দেবার সময় তোষকের নিচে পেলাম

উজানঃ (টপ করে উঠে)কাগজ,,কিসের কাগজ,দেখি

খালা উজানকে হিয়ার রিপোর্ট গুলো তুলে দিয়ে নিজের কাজে চলে যায়,রিপোর্ট গুলো হাতে নিয়েই উজান খুতে খুতে সব দেখতে শুরু করে,কি এসব,কিছুই মাথায় আসছে না উজানের,রিপোর্ট কিছু বুঝতে পারছে আবার পারছে না,,,,এগুলো তো কিছুদিন আগের সব রিপোর্ট,কিন্তু হিয়া কবে একায় গিয়ে এগুলো করে আসলো..!!____যেই ডক্টরের রেফারেন্স এ সব টেস্ট করা একবার কি ওনার সাথে যোগাযোগ করবে উজান,,কিছু মাথায় কাজ করছে না এই মুহুর্তে তার,এক অন্যরকম আশংকা কাজ করতে শুরু করে উজানের মনে,উজান হিয়াকে ফোন করে হিয়ার ফোন সুইস অফ,বাড়িতে ফোন করলে জানতে পারে হিয়া বাড়িতে নেই ওর বাড়িতে চলে গেছে,উজান কি করবে এখন,উজানের হঠাৎ মাথায় আসে সন্ধির কথা,সন্ধির কোন মাসি জানি সিলেট মেডিকেলে আছে,খুব ভালো সম্পর্ক সন্ধিদের সাথে,উজান কোনো বিলম্ব না করে সন্ধিকে ফোন দিয়ে রিপোর্ট গুলোর ছবি মেইল করে বলে এগুলো কিসের রিপোর্ট একটু ওনার কাছে চেক করতে,সন্ধি বলে ঠিক আছে

সন্ধি উজানের কথা অনুযায়ী কিছুক্ষণ পরই ওর খালাকে রিপোর্ট গুলো দেখিয়ে নিজেও অবাক,কি করে বলবে এখন সে এই কথা টা উজানকে,সন্ধি উজানকে ফোন করে বলে তুই সিলেটে ফিরে আয় কথা আছে,উজান সেই রাতেই ফিরে আসে সিলেট

উজানঃ কি হয়েছে সন্ধি,এরকম আর্জেন্টলি ডাকলি,হিয়ার রিপোর্ট গুলো সব ঠিক আছে তো

সন্ধিঃ তুই বস একটু

উজানঃ বসার টাইম নেই সন্ধি,আমি তোর সাথে কথা বলে এখন আবার হিয়াকে আনতে যাবো ওর বাড়ি

সন্ধিঃ বস না একটু,,হিয়া তোকে কিছু শেয়ার করে নি না এসব বিষয়ে

উজানঃ কি শেয়ার করবে বলতে পারিস,নিজে নিজে একা একা ডক্টর দেখালো টেস্ট করালো আমি কিচ্ছু ধরতে পারলাম না,কিচ্ছু না,,আজ একবার সামনে পাই আমি ওকে শুধু ??

সন্ধিঃ হুম,,আন্টি বললো তোদের মাঝে নাকি আবার কোনো সমস্যা হয়েছে তাই তুই একা

উজানঃ হ্যা ঔ হিয়ার যে কি হয়েছে আবার,বলছে ওর নাকি ডিভোর্স চাই,আমার এই সব ভালোবাসা নাকি এখন ওর কাছে অতিরিক্ত লাগছে,আরো হাজার টা কথা,,আচ্ছা ওসব বাদ দে না রিপোর্ট কি বল আমাকে ফাস্ট

সন্ধিঃ(কিছুক্ষণ চুপ থেকে) হিয়ার ইউট্রাসে টিউমার উজান,টিউমার টা খুবই সিরিয়াস,হিয়ার ইমিডিয়েট অপারেশন করা লাগবে

উজানঃ ইউট্রাসে টিউমার!!

সন্ধিঃ হুম রিপোর্ট এ তো তাই আছে,

উজানঃ এতো বড় একটা অসুখের কথা হিয়া আমার থেকে লুকিয়ে গেলো,,কি হতো এই কথা টা আমাকে জানালে হিয়া,এজন্য তুমি আমার সাথে এরকম করে,এটা ঠিক করো নি তুমি হিয়া

সন্ধিঃ কি হলো কি ভাবছিস

উজানঃ কিছু না,,তাহলে অপারেশন করাবো সমস্যা কোথায় এতে,,আমি আজই হিয়াকে নিয়ে আসছি বাড়িতে ওয়েট

সন্ধিঃ ব্যাপারটা এতো ইজিলি হলে তো কথাই ছিলো

উজানঃ মানে

সন্ধিঃ শুধু অপারেশন করাবার ভয়ে নিশ্চয় হিয়া তোকে ছেড়ে যায় নি!!

উজানঃ তাহলে!!

সন্ধিঃ তুই কি এতোই অবুঝ উজান,এটুকু বুঝতে পারছি না অপারেশন টা করা হলে হিয়া আর কখনো মা হতে পারবে না

উজানঃ সন্ধি….!!

সন্ধিঃ এটাই সত্য উজান,ভেবে দেখ হিয়ার ব্যাবহারে তোর খারাপ লাগলেও হিয়ার এই ব্যবহার গুলো করতে কি রকম কষ্ট হচ্ছিলো তাহলে

সন্ধির কথায় উজান কিছুক্ষণ চুপ থেকে সন্ধির রুম থেকে বের হতে ধরে

সন্ধিঃ কোথায় যাচ্ছিস

উজানঃ কোথায় আবার,বললামই তো তোকে হিয়াকে আনতে

সন্ধিঃ তুই আর হিয়া কিন্তু কখনো

উজানঃ বাবা মা হওয়াই কোনো স্বামী স্ত্রীর আলটিমেট গোল না সন্ধি,,আমার শুধু হিয়াকে চাই,,বাচ্চা চাইলে ফিউচারেও এ্যাডপ্ট করা যাবে,,আপাতত আমি এসব ভাবসি না,,হিয়াকে সুস্থ করতে হবে এটাই আমার কাজ এখন

সন্ধিঃ হিয়া যদি না আসতে চায়

উজানঃ তুলে নিয়ে আসবো,এ কদিন সব শুনেছি আমি ওর এখন হিয়ার আমার সব কথা শুনবার সময় এসেছে,,ওর কোনো রাইট নেই আমাকে এভাবে অপমান করার

সন্ধিঃ এটাকে তোর অপমান মনে হচ্ছে,,সত্যি তোরা ছেলেরা কোনোদিনই মেয়েদের ভালোবাসা বুঝবি না,,,,,আমার দিদির না সাত বছর হয়ে যাচ্ছে বিয়ের কিন্তু তাদের সংসারে কোনো বাচ্চা নেই উজান,,,এই নোংরা সমাজ টা দিদি কে কি করে ছিঁড়ে ছিঁড়ে খায় রোজ সেটা শুধু আমি জানিই উজান,,,আর এখন তো জামাইবাবু ও দিদির সাথে

উজানঃ তোর মনে হয় আমি এই সমাজ টার কোনো কেয়ার করি

সন্ধিঃ তুই নাই করতে পারিস কিন্তু এই সমাজ টা যখন তোকে নিয়েও টানাহেঁচড়া করবে শুধু এই কথা টুকু ভেবেই হিয়া তোকে,,,,,তুই আর হিয়া তো এক বাড়িতে থাকতি কখনো বুঝতে পেরেছিস হিয়ার অসুখের কথা টা,,শুনেছি তো ইউট্রাসে টিউমার হলে নাকি তলপেটে প্রচুর ব্যাথা হয় কখনো হিয়া তোকে ওর এই ব্যাথা বুঝতে দিয়েছিলো,,দেয় নি রে একা একা সব সহ্য করে নিছে,,আর তোর যা ফ্যামিলি এমনিতেই মেয়েটাকে দেখলেই যা নয় তাই বলে কথা শুনিয়ে দেয় আর এসব জানার পর তো ওরা আরো বেশি করে

উজানঃ এসব আমাকে বললে কি আমি হিয়াকে,

সন্ধিঃ তুই তো যাচ্ছিস ওর কাছে এই উওর টা না হয় হিয়াই তোকে দেবে এখন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here