? #সে_আদরের_অন্য_নাম ?
পর্ব_১২
সকাল ১১টার দিকে উজানের ঘুম ভাঙ্গলে উজান দেখে হিয়া ওর পাশে নেই,হিয়াকে পাশে না পেয়ে উজান উঠে বসে,আর নিজের দিকে তাকালে খেয়াল করে ওর গায়ে যে রাতে শার্ট টা পড়া ছিলো সেটা ওর গায়ে নেই,বরং বালিশের সাইডে খুলে রাখা,আসলে কাল তো এই গরমেও মাঝেও উজান হিয়ার জন্য কম্বল মুড়িয়ে ঘুমিয়েছিলো তাই উজানের পুরো শরীর এক বারে ঘামে ভিজে পানি পানি হয়ে ছিলো,আর ঘুম থেকে উঠেই উজানের বাহুডোরে নিজেকে দেখতে পেলে হিয়া খেয়াল করে উজান যেনো সবে মাএ গোসল করে এসে তাকে জড়িয়ে ধরে আছে,তাই হিয়া আর কোনো দেড়ী না করে টপাটপ উজানের শার্ট খুলে ওর ওড়না দিয়ে উজানের গা টা মুছে দেয়,তারপর ফ্যান টা বাড়িয়ে দেয় ফুল স্পীডে
উজানঃ আমি এতোটাই ঘুমে বিভোর ছিলাম যে হিয়া কখন আমার থেকে উঠে___যত্ন করে সাথে আবার নিজে থেকে আঘাত দেয় পাগলি একটা
উজান উঠে ওর শার্ট টা পড়ে ডাইনিং এ আসলে দেখে নূরজা খালা এসে রান্নাবান্না করে এখন সব টেবিলের উপর গুছিয়ে রাখছে
নূরজাখালাঃ বাবাজান উঠে গেছো তুমি,আমি তোমাকেই তুলতে যাচ্ছিলাম___আমার সব রান্না শেষ আর তো আজ কোনো কাজ নেই না?
উজানঃ না_____খালা হিয়া কোথায়
নূরজাখালাঃ আপামনি তো আমাকে রান্না করতে দিয়ে বেড়িয়ে গেলো কিছুক্ষণ আগে
উজানঃ বেড়িয়ে গেলো মানে
নূরজাখালাঃ হ্যা কি জানি আপার কোচিং ক্লাস না কি আছে,আমাকে বললো তুমি উঠলে যেনো তোমাকে বলে দেই ওনার ফিরতে ফিরতে ২টা পাড় হবে
উজানঃ কোচিং ক্লাস!!শীট আমি কি করে ভুলে গেলাম হিয়ার আজ থেকে,আমাকে একবার ডাকবে না ও,পাগল নাকি,কিচ্ছু চিনে ও এ রাস্তার,আল্লাহ
নূরজাখালাঃ বাবাজান কোনো সমস্যা
উজানঃ খালা হিয়া কি খেয়েছে সকালে
নূরজাখালাঃ আপামনি তো কিছু খাই নি,আমি এতো করে সাধলাম রুটি করেছি দুটো মুখে দিয়ে যাও কিন্তু উনি তো বললো ওনার নাকি খিদে নেই পরে খাবে
উজানঃ মানে সে কিচ্ছু খায়নি,কালকে রাত থেকে__কি করবো আমি এই মেয়েটাকে নিয়ে আল্লাহ ওকে তুমি ঠিক রাখো প্লিজ
নূরজাখালাঃ বাবাজান আমি তাহলে আসি আজ,তুমি দুপুরে খেয়ে কিন্তু ফ্রীজে রেখে দিও সব__আর হ্যা একটা কথা বউ কিন্তু ভারী মিষ্টি পেয়েছো আমার খুব পছন্দ হয়েছে,একটু ছটফট করে বেশি সাবধানে রাখিও মেয়েটাকে
উজানঃ (হালকা হাসি দিয়ে)ঠিক আছে খালা আপনি এখন আসেন আমি একটু বের হবো
খালা চলে গেলে উজান হিয়াকে ফোন করে কিন্তু হিয়া তখন ক্লাসে থাকায় ফোন রিসিভ করতে পারে না,ফোনটা সাইলেন্ট ছিলো বলে সে শুনতেও পারে নি,হিয়াকে না পেয়ে উজান হিয়ার কোচিং সেন্টারে ফোন করলে জানতে পারে হিয়া ক্লাস করছে,আর ক্লাস শেষ হতে প্রায় ২টার কাছাকাছি হবে,উজান আপাতত হালকা নিশ্চিন্ত হয়ে কোনোরকমে ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নেয়,তারপর চেন্জ করে নিচে নেমে এসেই গাড়ি বের করে হিয়ার কোচিং সেন্টারের সামনে গিয়ে দাঁড় হয়__
আজ প্রথমদিন বলে দেড়টার কিছু পরেই হিয়াদের ক্লাস শেষ হয়,ক্লাস থেকে বের হয়েই হিয়া দেখতে পারে উজানের গাড়ি,আর তার পাশে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে উজান,উজান সেই প্রায় ২ঘন্টা ধরে এভাবে হিয়ার জন্য দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছিলো,হিয়াকে দেখ মাএই উজান তেড়ে এসে হিয়াকে কিছু বলতে যাবে ওমনি কোচিং থেকে বের হয়ে আসে উজানের সেই বন্ধু সিফাত
সিফাতঃ হে উজান
দু-জনে দুজনকে জড়িয়ে ধরে পিট চাপড়ে দেয়
উজানঃ কি অবস্থা
সিফাতঃ এই তো চলছে,তোর কি অবস্থা বিয়ে করলি জানতেও পারলাম না__হিয়া
হিয়াঃ জ্বী ভাইয়া
সিফাতঃ আমার বন্ধু টা যে আমাদের রেখেই বিয়ে করে নিলো আমরা কি কোনো ট্রিট পাবো না
উজানঃ হুমম তোরা যারা ঢাকায় আছিস সবাই এক হয়ে আমাকে ফোন দিস সবাইকে নিয়ে খাইয়ে দেবো
সিফাতঃ না না না তা তো হবে না খাবো তো ভাবীর হাতের রান্না,কি হিয়া রান্না পারো তো
হিয়া কিছু না বলে শুধু বোকার মতো হেসে যায়,
উজানঃ আমার ওয়াইফ সব পারে সো ডোন্ট আডান্টারএসটিমেট হার ওকে
সিফাতঃ হা হা__তারপর কি বাবার অফিসে কাজ করছিস
উজানঃ এভাবে বলিস না প্লিজ,আমি কিন্তু বাকি আর সবার মতোই ওখানে কাজ করি হ্যা ঔ মাঝে মাঝে একটু গিয়ে সব চেক করি বাট ইউ নো
সিফাতঃ জানি তোকে চিনবো না,
উজানঃ তা তুই কি এই কোচিং টোচিং নিয়েই থাকবি না অন্য কিছুও ভাববি
সিফাতঃ আপাতত ভাবছি না,এতেই যা পকেট ভরে ভরে টাকা পড়ে যাচ্ছে
উজানঃ তুই শুধরাবি না
সিফাতঃ আচ্ছা থাক আজ আসি,এরপর আরো ব্যাচ আছে আবার,হিয়া খাওয়া পাচ্ছি তাহলে তোমার হাতে
হিয়া আবার হাসি দিয়ে মাথা নাড়ে,সিফাত চলে গেলে উজান ওর গাড়ির দরজা খুলে হিয়াকে চোখের ইশারায় বলে ভেতরে বসতে,হিয়া প্রথমে বসতে না চেয়ে কিছু বলতে যাবে ওমনি উজান হিয়ার হাত মচকে ধরে হিয়াকে দুম করে গাড়ির ভেতরে বসিয়ে দিয়ে দরজা লক করে দেয়__গাড়ি গিয়ে থামে সোজা বাড়িতে,হিয়া দুমদাম গাড়ি থেকে নেমে লিফটের সামনে গিয়ে দাঁড় হলে উজান গাড়ি পার্ক করে এসে হিয়াকে নিয়ে লিফটে উঠে,লিফটেই উঠে উজান হিয়ার বাহু খামচে ধরে হিয়াকে রাগ করতে শুরু করে
উজানঃ আমাকে একবার ডাকা যেতো না সকালে
হিয়াঃ আমি ভাবলাম আপনার অফিস আছে তাই
উজানঃ কালকে আমি বলি নি আজ আমি আধাবেলা ছুটি নিয়েছি,ওহ তুমি শুনবে কি করে তুমি তো কাল আবার তোমার ভাবনা নিয়ে ব্যাস্ত ছিলে
হিয়াঃ কি করছেন কি,লাগছে আমার হাতে, ছাড়ুন
উজানঃ হাতে কিসের ব্যাগ ওটা
হিয়াঃ কিছু না
উজানঃ কিছু না মানে
হিয়াঃ কিছু না মানে কিছু না,আর একটা কথা আপনি কাল থেকে আমাকে নিতে আসবেন না,এটুকু রাস্তা আমি হেঁটে বা কোনো রিক্সায় করে উঠে আসতে পারবো
উজানঃ হিয়া তুমি কিন্তু আমাকে
উজান আর কিছু বলতে যাবে তার আগেই লিফটের দরজা খুলে যায়,উজান হিয়ার বাহু ছেড়ে হিয়ার হাত ধরে লিফট থেকে নেমে ফ্লাটের দিকে এগুতে ধরলে সামনে দাড়িয়ে পড়ে ফয়সাল,ফয়সাল ক্লাস টু তে পড়ে উজানদের সামনের ফ্লাটে থাকে,এই দু তিনমাসে উজানের সাথে ফয়সালের খুব ভাব হয়ে যায়,ফয়সাল তো তার উজান বন্ধু বলতে পাগল,ফয়সালের আবার একটা দেড় বছরের বোন আছে ফারিহা,ফারিহা গুটি গুটি পায়ে এখন হাঁটতে পারে,ফয়সাল আর ফারিহা এ মুহুর্তে দু ফ্লাইটের দরজার মাঝে যে বড়ো জায়গা টা ফাঁকা আছে ওখানে সাইকেল নিয়ে খেলছিলো
ফয়সালঃ বন্ধুউউউউ!!
উজান ফয়সালকে কোলে নিয়ে
উজানঃ আরে আমার মিকিমাউস যে,ফারিহাও আছে দেখছি,কবে এলি নানু বাড়ি থেকে
ফয়সালঃ কালকে রাতে এসেছি,তুমি ছিলে না তখন___বন্ধু এটা কে
উজানঃ বল তো কে
ফয়সালঃ কে?
উজানঃ ঔ যে বলেছিলাম আমার একটা পরী আছে ভুলে গেলি
ফয়সালঃ হিয়াপরী?এটা?
উজান হাসি দিয়ে মাথা নাড়িয়ে বলে হুম এটা সেই পরী,এদিকে ফারিহা গুটি গুটি পায়ে আগালে হিয়া ঘপ করে ফারিহাকে কোলে তুলে নেয়,ফারিহা প্রথমে ভয় পেয়ে যায় অচেনা মানুষ কে ওকে এরকম করে কোলে নিলো,ফারিহা ভয়ে কান্না শুরু করে দিলে উজান ফয়সালকে নামিয়ে হিয়ার কাছ থেকে ফারিহাকে কোলে নেয়,উজানের কোলে গিয়ে ফারিহার কান্না থেমে যায়,ফারিহার এ কান্ডে হিয়া কপট রেগে গেলে তা দেখে উজান মুচকি হাসি দিয়ে উঠে
উজান ফারিহা কে কোলে নিয়েই গেট খুললে হিয়া ফয়সালকে নিয়ে উজানদের সাথে ওদের ফ্লাটে ঢুকে ওর রুমে চলে যায়,হিয়ার পেছন পেছন রুমে ঢুকে ফয়সাল
ফয়সালঃ তুমি পরী হলে তোমার পরীদের মতো ডানা নেই কেনো?
হিয়াঃ তোমাকে কে বলেছে সব পরীদের ডানা থাকতে হয়(হেঁসে দিয়ে)
ফয়সালঃ কেনো আমি তো কার্টুনে দেখেছি পরীদের দু পাশে দুটো করে ডানা থাকে
হিয়াঃ তাই,তাহলে তো আমি এর উওর দিতে পারবো না,তুমি বরং তোমার বন্ধু কে গিয়ে বলো তোমার পরীর ডানা দুটো কোথায়
ফয়সালঃ বন্ধুউউ,বন্ধুউউ
উজানঃ হ্যা বন্ধু
ফয়সালঃ পরীদের না ডানা থাকে তোমার হিয়াপরীর ডানা কোথায় তাহলে
উজানঃ ডানা?
ফয়সালঃ হুম হুম ডানা ডানা
উজানঃ আমার এই পরীটা না একটু বেশি উড়ে তাই আমি তার ডানা গুলো কেটে দিয়েছি
উজানের কথায় হিয়া ভূ কুঁচকে উজানের দিকে তাকিয়ে একটা ভেংচি কেটে দেয়
ফয়সালঃ তুমি কেনো ডানা কেটে দিয়েছো,প্লিজ ডানা গুলো এনে দেও আমি পরীর ডানা দেখবো
উজানঃ ঠিক আছে আগে পরীটার একটু ছটফটানি টা কমুক তারপর দোকান থেকে না হয় ডানা কিনে আনবো
উজানের কথা শুনে ফয়সাল হো হো করে হেঁসে দেয়,আর তখনি ফয়সালের আম্মু ফয়সাল বলে চিৎকার করলে ফয়সাল ফারিহাকে নিয়ে দৌড়ে ওদের ফ্লাটে চলে যায়,আর উজান দরজা লাগিয়ে ওর রুমে ঢুকে অফিসের এক কলিগকে ফোন দিয়ে বলে সে ঘন্টা খানেকের মধ্যে আসছে
এদিকে হিয়া ওর জামা টা চেন্জ করে এসে,মাথা টা পুরো খোপা করে রান্নাঘরে গিয়ে ওর ঔ ব্যাগ থেকে কিছু বাজার বের করে কি রান্না করবে তাই ভাবতে থাকে,আসলে হিয়া সকালে যখন কোচিং এর জন্য বেড়িয়েছিলো তখন রাস্তার পাশের এক দোকান থেকে কিছু চাল,ডিম আর কিছু আলু সহ টুকটাকি জিনিস কিনে নিয়েছিলো যাতে ওকে আর বাড়িতে ফিরে উজানের কিছু খেতে না হয়
হিয়াঃ ভাত না হয় করলাম,কিন্তু খাবো টা কি দিয়ে,ডিম ভাঁজবো হ্যা ডিম ভেজে গরম ভাতের সাথে খাই না বরং,এটা বেস্ট হবে___কিন্তু পেয়াজ কোথায়,পেঁয়াজ মরিচ কিছু তো কিনি নাই,এখন___এতো দেখছি মহাজালা!!___কি করার আর ডিম টা পোস করে নিয়েই খাবো তাহলে,যাই বরং ভাত টা বসিয়ে দিয়ে গোসল টা করে নেই নামাযের সময়ো তো নেই মনে হয় ধুর
উজান হিয়াকে খুঁজতে রান্নাঘরের দিকে আসলে দেখতে পারে হিয়া ওর মাথায় হাত দিয়ে কিসব জেনো ভাবছে আর মেঝেতে পড়ে আছে কিছু কাঁচাসবজি
উজানঃ what’s this
হিয়াঃ হ্যা(আনমনে)
উজানঃ কি এগুলো
হিয়াঃ এগুলো এগুলো তো বাজার
উজানঃ সেটা তো আমিও দেখতে পারছি হিয়া,কিন্তু কেনো
হিয়াঃ কেনো মানে,বাজার দিয়ে মানুষ কি করে ভাইয়া,নিশ্চয় রান্না করে খায়
উজানঃ আমার বাসায় কি খাবার ছিলো না যে তোমাকে এভাবে বাজার করে এনে
হিয়া একটা পাতিলে মুঠো করে পাঁচ ছ মুঠ চাল নিয়ে সিংকের কাছে গিয়ে দাঁড় হয় ওগুলো ধুবে বলে
হিয়াঃ সে টা আপনার,আর আমি তো আপনার টাকায় কিছু খাবো না
উজানঃ হিয়া(ঝারি দিয়ে)__খাবো না মানে?খাবো না মানে টা কি,
হিয়াঃ ভাইয়া প্লিজ আপনি আমাকে এ ব্যাপারে জোর করবেন না,এমনিতে আপনি আর আপনার আম্মু অনেক করেছেন আমার জন্য আমি আর আপনাদের উপর কিছু চাপিয়ে দিতে চাই না,
উজানঃ হিয়া আমি কালকে রাত থেকে না খেয়ে আছি তুমি প্লিজ তোমার এই ইললোজিকাল কথা গুলো থুয়ে গোসল টা করে এসো আমরা একসাথে খাবো
হিয়াঃ আপনি যান না গিয়ে খেয়ে নিন,খালা তো সব বেড়ে রেখেছে টেবিলে
উজানঃ হিয়া
হিয়াঃ ভাইয়া প্লিজ
উজানঃ তারমানে তুমি ঠিক করেছো যে তুমি আমার টাকায় কিছু খাবে না কিছু পড়বে না তাই তো
হিয়াঃ হ্যা তাই
উজানঃ তারমানে আমরা এ বাড়িতে একসাথে থাকবো কিন্তু তুমি আমার কিচ্ছু নিবে না
হিয়াঃ না
উজানঃ এতে তোমার মন শান্তি পাবে
হিয়াঃ হ্যা পাবে,কেউ এসে তো বলবে না হিয়া ওর সবকিছুতে উজানের কাছে হাত পাতে
হিয়া সিংকে তখন ট্যাপ ছেড়ে দিয়ে চাল ধুতে ধুতে কথা টা বলছিলো,হিয়ার বলা শেষ হলে উজান একটা দীর্ঘ শ্বাস টেনে দুম করে হিয়ার পেছনে গিয়ে হিয়ার ঘাড় বরাবর একটা ইচ্ছে মতো কামড় বসিয়ে দিয়ে বলে উঠে(বেশ এতে যদি তোমার মনে হয় তুমি ভালো থাকবে তাহলে তাই করো তুমি,শুধু আমাকে আঘাত দেওয়া টা একটু কম করে করো,আমারো একটা সহ্যশক্তি আছে)
হিয়াঃ এটা কি ছিলো??
উজানঃ কামড় ছিলো দেবো আর একবার,,আর একটা কথা আজ থেকে তুমি শুধু আমার পরী না আজ থেকে তুমি আমার ক্যাকটার্স পরী কথায় কথায় কাটা দিয়ে আঘাত করো হু,,
কথাটা বলেই উজান হিয়ার বাহুদুটো সামনে ধাক্কা দিয়ে ওর রুমে চলে যায়,এদিকে হিয়া তো পুরো থ!!কামড়ের জ্বালা টা কামড়ানোর সময় টের না পেলেও এবার ঠিক হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে
উজান ওর রুমে গিয়ে অফিসের জন্য তৈরি হয়ে হিয়ার কাছে এসে বলে(সন্ধ্যার আগে আগে সে ফিরে আসতে চেষ্টা করবে,কোনো সমস্যা হলে যেনো সে উজান কে ফোন করে)হিয়া উজানকে জিজ্ঞেস করে (সে না খেয়ে কেনো বেড়িয়ে যাচ্ছে প্রতিউওরে উজান বলে হিয়া খেলেই ওর পেট ভরে যাবে তার পেটে কিছু না পড়লেও তার চলবে)
উজান চলে গেলে হিয়া ঠিক মতো গেট লক করে গোসলে চলে যায়,গোসল সেরে এসে ভাত খেতে খেতে তিনটে বাজে,হিয়া একটু রেস্ট নিয়ে উজানের পাশের রুমে যে তোষক টা বিছানো ছিলো ওটাকে সুন্দর মতো ফ্লোরে বিছিয়ে দিয়ে বিছানার ঝাড়ু দিয়ে ঝেরে ঝুরে ওখানে একটা বাড়ি থেকে আনা কাথা আর চাদর বিছিয়ে সুন্দর মতো করে ফ্লোর বিছানা বানিয়ে নেয়,সাথে উজানের রুমের তিনটে বালিশ আর একটা কোলের বালিশের মধ্যে দুটো বালিশ নিয়ে এসে বিছানাটায় ফেলে দেয়
হিয়াঃ বাহ কি সুন্দর তো!!আমার বিছানা হে হে!!
হিয়া কিছুক্ষণ ওর ফ্লোর বিছানায় গা মেলে দিয়ে এবার উঠে ব্যাগ থেকে সব বই খাতা গুলো বের করে বিছানার পাশে ফ্লোরে বেশ সুন্দর মতো গুছিয়ে নেয়,আর জামা কাপড় গুলো ট্রলিতেই রাখে ওখান থেকে না হয় বের করে করে রোজ পড়বে,সবকিছু গুছিয়ে রাখতে রাখতে আসরের সময় হয়ে আসলে হিয়া নামাজ টা পড়ে নেয়,এই চার ঘন্টায় উজান প্রায় দশ বারের উপর ফোন করেছে কিন্তু হিয়া ফোন রিসিভ করে নি,শুধু শেষে একটা টেক্সট করে জানিয়ে দিয়েছে সে ভালো আছে তাঁকে এভাবে বারবার ফোন না করলেও চলবে
সন্ধ্যার একটু আগে আগে হিয়ার আবার হালকা ঘুম ঘুম আসলে হিয়া একটু উঠে বাড়িটা দেখতে শুরু করে,কাল উজান ঘুরে দেখালেও তো তার দেখা হয়নি,সব ঘুরে ঘুরে দেখতে দেখতে হিয়া উজানের রুমে বড় ব্যালকুনি টায় গিয়ে দাঁড় হয়
হিয়াঃ সকাল থেকে চা খাইনি বলে এতো ঘুম ঘুম পাচ্ছে,চা তো আছে কিন্তু ওনার কিছু যখন আমি খাবো না বলেছি তো আমি ওনার চা টাও খাবো না____ওনার বারান্দা টা কত্তো বড় কি সুন্দর মনে হয় পুরো শহর টা দেখতে পাচ্ছি আর ঔ রুমে দুটো বারান্দা আর দু পাশেই খাম্বার মতো দুটো বিল্ডিং দাঁড়িয়ে কিছুই দেখার নেই_____উনি কি অফিসে দুপুরে কিছু খেয়েছিলেন না ওভাবেই,আমার কি আমি তো বলেছি আমি আর ওনার উপর দূর্বল হবো না কিছুতেই না___আচ্ছা আজ যে এতো খরচ করলাম এগুলো দিয়ে না হয় একটা সপ্তাহ চালাতে পারবো কিন্তু পরে,পরে কি একবার ভাইয়ার কাছে টাকা চাবো___আচ্ছা যাগ গে পড়ের টা পড়ে দেখা যাবে আজকের দিন টা তো মন খুলে বাঁচি একটু!!!!
বারান্দায় দাঁড়িয়ে আপন মনে অনেক কিছু বলতে থাকে হিয়া,কখনো বা গিয়ে উজানের বিছানায় শুইয়ে পড়ে,আবার উঠে বারান্দায় আসে আবার পায়চারি করে কিন্তু কিছুতেই ঘুম চোখ থেকে যায় না,এরকম করতে করতে প্রায় সন্ধ্যা নেমে আসে,হিয়া গিয়ে মাগরিবের নামাজ শেষ করে ডাইনিং এর লাইট টা জ্বালিয়ে দিয়ে ওর রুমে চলে যায়,এসে হিয়া আর চোখ খুলে থাকতে পারে না তারপর এই যে ঘুমে ডুব দেয় সে এখন কেউ ডাকলেও তার পক্ষে ওঠা অসম্ভব
এদিকে হিয়া ঘুমিয়ে যাবার কিছুক্ষন পরেই উজান ওর অফিসের কাজ শেষ করে বাড়িতে ফিরে,উজানের কাছে চাবি থাকায় গেট খুলে ভেতরে ঢুকতে ওর কোনো সমস্যা হয় না,এসে ওর শু গুলো খুলে যেই ওর রুমের দিকে পা বাড়াবে তখনি পাশের রুমে লাইট জ্বলছে দেখে উজান ওখানেই দাঁড়িয়ে যায়,ভূ কুঁচকে পাশের রুমে ঢুকতেই চোখে পড়ে তার ছোট্ট বউ তার এই রুমে আলাদা করে নিজের সংসার বানিয়ে নিয়েছে,উজান পুরো রুম টা ভালো করে পরক্ষ করে হিয়ার পাশে গিয়ে ফ্লোরে বসে পড়ে হিয়ার দিকে তাকিয়ে একটা অমায়িক হাসি দিয়ে উঠে,হিয়া তখন পাশে থাকা বালিশ টা জড়িয়ে একদম ছোট বাচ্চাদের মতো করে ঘুমোচ্ছিলো,উজান হিয়ার মাথায় আলতো করে ওর হাত বুলিয়ে দিতে থাকে যেনো হিয়া টের না পায় কিছুতে
উজানঃ বুঝেছি আমার এই পিচ্চি বউ অনেক ভোগাবে আমাকে যা দেখছি,দেখি আর কতো রকম করে পাগলি টা ওর রাগ দেখাতে পারে আমাকে!!
___________________
হিয়া এমনি ঘুমে ছিলো যে এদিকে কখন সন্ধ্যা পেড়িয়ে রাত দশটা হয়ে আসে তার কোনো হুঁশ নেই,হিয়া ওর গা একটু মেলে দিয়ে ঘুম ঘুম চোখ গুলো খুলে উঠে বসতেই খেয়াল করে উজান ওর পাশে বালিশে হেলান দিয়ে ল্যাপটপ চালাচ্ছে,উজান কে দেখে হিয়া তো রীতিমতো ভূত দেখার মতো ভয় পেয়ে চোখ বড় বড় করে ফেলে,এটা কি সত্যি উজান না কোনো
হিয়াঃ ইনি ইনি কি করে এখানে,গেট তো লাগিয়ে দিয়েছিলাম আমি তাহলে
হিয়া ভয়ে ভয়ে হাত বাড়িয়ে উজানকে হালকা নাড়া দেয় কিন্তু উজান কোনো রেসপন্স করে না__হিয়া মনে আরো বেশি করে সাহস এনে উজান কে আরো নাড়া দেয় উজান তাও কোনো রেসপন্স করে না__এবার হিয়া ক্ষেপে যায়,ক্ষেপে গিয়ে উজানের হাতে ইচ্ছেমতো সবশক্তি এক করে একটা চিমটি কাটে,আর এবার উজান রেসপন্স করতে বাধ্য হয়
উজানঃ What the___কি সমস্যা
হিয়াঃ আপ- আ-পনি সত্যি সত্যি উ-জান উজান ভাইয়া!!(কাঁপা কাঁপা কন্ঠে)
উজানঃ আবার ভাইয়া,আল্লাহ মাথায় একটু বুদ্ধি দেও আমার এই ইডিয়ট টার!!
হিয়াঃ কি,কি হলো চুপ করে আছেন যে
উজানঃ হ্যা হ্যা সত্যি সত্যি তোমার উজান ভাইয়া তোমার সামনে?
হিয়াঃ গেট গেট তো লাগানো ছিলো তাহলে আপনি কি করে
উজানঃ আমার কাছে একস্ট্রা চাবি আছে হিয়া
হিয়াঃ ওহহহ,ভেতরে গেট লাগিয়ে দিলেও বাহির থেকে চাবি দিয়ে খোলা যায়
উজানঃ হ্যা যায়
হিয়াঃ (একটা হাই তুলে)আসলে ওসব ফ্লিমে দেখেছি তো আপনার বাড়িতেও যে এই সিস্টেম তা আসলে জানতাম না___
উজানঃ এখন জানলে তো,এখন উঠে ফ্রেশ হয়ে এসো কুইক
হিয়াঃ না আমি এখন ফ্রেশ হবো না,আমি এখন আরো একটু ঘুমোবো,ঘুম টা এখনো ক্লিয়ার হয়নি(আবার আরো একটা হাই তুলে)
উজানঃ হোয়াট,হোয়াট ডিড ইউ সে,কটা বাজে খেয়াল আছে,আসা অবধি থেকে দেখছি ঘুমোচ্ছ তুমি,এখন আরো___পড়াশোনা করার ইচ্ছে আছে না এমনি শুধু মুখে মুখে
হিয়াঃ আমি কি বলেছি আমি পড়বো না,আর একটু ঘুমিয়ে নেই তারপর না হয়
উজানঃ হিয়া রাত দশ টা পাড় হচ্ছে এখন ঘুমলে রাতে আবার কখন ঘুমোবে তুমি,মানে এটা কি মজা হচ্ছে
হিয়াঃ দশটা বাজে মানে!!আমি তো সবে সবে
উজানঃ সবে সবে না তুমি লাস্ট চার ঘন্টা ধরে ঘুমোচ্ছ
হিয়াঃ সত্যি আমি চার ঘন্টা ধরে!!আল্লাহ,আমার কতো পড়া বাকি,কাল থেকে আবার ক্লাসের আগে নাকি রোজ পরীক্ষা নেবে আমি তো এখন অবধি কিছু খুলেও দেখলাম না ___আপনি আমাকে ডেকে তুলতে পারলেন না
উজানঃ আমি,আমি তোমাকে ডেকে তুলবো মানে সিরিয়াসলি হিয়া,তোমার নিজের কোনো রেসপন্সিবিলিটি নেই,তোমাকে উঠতে হবে পড়তে হবে কোনো কোনো চিন্তা নেই কোনো দায়িত্ব নেই তোমার
হিয়াঃ ধুরো আপনাকে বলা টাই আমার ভুল হয়েছে
হিয়া একটা ভেংচি কেটে উঠে যেতে ধরেও আবার বসে যায়
হিয়াঃএই এক মিনিট এক মিনিট এক মিনিট আপনি আমার বিছানায় কেনো,why
উজানঃ হোয়াট তোমার বিছানা?
হিয়াঃ ইয়েস আমার বিছানা,এটা আমি শুবো বলে বানিয়েছি,আপনি কেনো এখানে হেলান দিয়ে ল্যাপটপ ঘাটছেন,উঠুন উঠুন বলছি,যান আপনার রুমে যান
উজানঃ নো ওয়ে,ফাস্ট ওফ ওল এটা মোটেই তোমার বিছানা না এই তোষক টা আমার আর সেকেন্ডলি আমার কোনো ইচ্ছে নেই তোমার বিছানায় ঘুমোনোর আমি এখানে বসেছি জাস্ট বিকজ তোমাকে নিয়ে পড়তে বসবো বলে,এর চাইতে বেশি কিছু ভেবে নিজেকে এতো ইম্পর্ট্যান্স দেওয়ার কিছু নেই ওকে
হিয়াঃ আমি আমি আবার কেনো অন্য কিছু ভাবতে যাবো,আর এটা আপনার তোশক হলেও বিছানা টা এখন আমার,আর আমাকে নিয়ে আপনাকে পড়তে বসতে হবে না,আপনি কি বোঝেন আমার পড়াশুনোর,সেই কবে এডমিশন দিয়েছেন,আপনার কি আর ওসব মনে আছে,
উজান হিয়ার হাত ধরে হিয়াকে হ্যাচকা ওর বুকের কাছে টেনে আনে
উজানঃ তুমি আমার সম্পর্কে কতো টা জানো,তুমি জানো আমি কতোটা ভালো স্টুডেন্ট,ভার্সিটিতে আমার সিজিপিএ কতো ছিলো জানো তুমি,জানলে না এই উজান শাহরিয়ার কাছেই পড়বার জন্য হাপিত্যেশ করতে হুহ
হিয়াঃ জানি জানি এতো ঘটা করে বলতে হবে না সব জানি আমি
উজানঃ কি জানো,বলো তো আমার এখন অবধি হায়েস্ট সিজিপিএ কতো ছিলো
হিয়াঃ তা বলতে পারবো না তবে লাস্ট সেমিস্টারে ৩.৯৪পেয়েছিলেন এটা খেয়াল আছে
উজানঃ সবই তো খেয়াল রাখো তাহলে আমার দেখছি(মিচকে হাসি দিয়ে)
হিয়াঃ ওমা ভালোবেসেছিলাম খেয়াল তো রাখতেই হতো
উজানঃ তার মানে কি এখন বাসো না(ভূ কুঁচকে)
হিয়াঃ না বাসি না,আর নিজের সিজিপিএ নিয়ে না এতো অহংকার করবেন না,ফাইনালে যে আমি ডাহা ফেল করবেন সে আমি খুব ভালো করেই বুঝেছি
উজানঃ কার জন্য করবো তোমার জন্য করবো,তুমি ওসময় আমার উপর ওরকম মেন্টাল টর্চারিং না করলে হয়তো আমি আমার সব ছেড়ে পড়াশোনায় আরো ভালো করে কনসেন্ট্রেট করতে পারতাম
হিয়াঃ কে বলেছিলো আমার জন্য ওসব করতে আমি বলেছিলাম,ন্যাকা,
উজানঃ চাইলে না আমিও এখন তোমার উপর ঔ মেন্টাল টর্চারিং করে তোমার এডমিশন ভেস্তে দিতে পারি কিন্তু আমি তা কিছুতেই করবো না কারণ আমি আমার হিয়ার ভালো টা চাই
হিয়াঃ আর আমি মনে হয় যেনো আপনার খারাপ টা চাইতাম,ছাড়ুন তো ছাড়ুন লাগছে আমার,একটু আগে কি বললেন তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে নিতে আর এখন নিজে বক বক করে দেড়ি করিয়ে দিচ্ছেন,সত্যি আপনি না
উজান হিয়াকে ছেড়ে দিলে হিয়া উঠে ওর গায়েতে ওড়না ঠিক করতে করতে ওয়াশরুমের দিকে এগুতে ধরে
উজানঃ পাঁচ মিনিটের মধ্যে ফ্রেশ হয়ে নিবা,কুইক
হিয়াঃ আমি একদম নামাজ পড়ে তারপর পড়তে বসবো,আপনি তোতোক্ষন আপনার কাজ সেড়ে নিন(চিৎকার করে)
_______________
হিয়া ফ্রেশ হয়ে এসে নামাজ পড়ে নিয়ে উজানের কাছে গিয়ে বসে পড়ে,তোতোক্ষনে উজান হিয়ার বই খাতা পুরো বিছানা জুড়ে এলোমেলো করে ঘাটতে থাকে,প্রথমে কোচিং এর পড়ানোর নিয়ম গুলো বুঝতে একটু অসুবিধে হলেও পড়ে ওগুলো খুব সহজে আয়তে আসে উজানের,এদিকে উজান হিয়াকে পড়াতে পড়াতে রাত তখন ১টার কাটা ছুঁই ছুঁই হিয়াকে একটা দশ মার্কের পরীক্ষা দিয়ে উজান এখন ল্যাপটপ ঘাটছে
হিয়াঃ আপনি দুপুরে আজ কি দিয়ে ভাত খেয়েছেন
উজানঃ সোজাসুজি জিঙ্গেস করলেই তো পারো দুপুরে খেয়েছি কিনা
হিয়াঃ বুঝতেই যখন পারছেন তখন তো আপনিও সোজাসুজি উত্তর টা নিয়ে দিলেই পারতেন হু?
উজানঃ আর দু মিনিট__ফোকাস
হিয়াঃ আমার আরো পাঁচ মিনিট লাগবে
উজানঃ পরীক্ষার হলে স্যারদের কে গিয়ে বলো স্যার আমার আরো পাঁচ মিনিট লাগবে আপনি পরে খাতা নিতে আসুন ঠিক আছে
হিয়াঃ আপনি না,,
দু মিনিট পর উজান নিজ থেকে সপাটে খাতা টা টান মেরে হিয়ার কাছ থেকে কেড়ে নেয়,দশের মধ্যে হিয়ার আসে মোটে ছয় যেটা কখনোই উজানের কাম্য ছিল না,উজান হিয়াকে ইচ্ছে মতো কথা শুনিয়ে উঠে গিয়ে ওর ভাত বাড়তে শুরু করে,হিয়াও এতোগুলো বকা খেয়ে আবার বেহায়ায় মতো উজানের পিছু পিছু উঠে একটা ডিম পোস করবে বলে কড়াইয়ে তেল ঢালে,এদিকে কালকের রান্না করা রোস্ট গুলো এখনো ভালো আছে দেখে উজান ওগুলো আরো একটু ভেজে নিয়ে খাবে বলে হিয়ার পাশে আর একটা কড়াইয়ে তেল দিয়ে গরম হতে দেয়
হিয়া করবে পোস আর উজান ভাঁজবে রোস্ট,এক কড়াইয়ে ডিম আরেক কড়াইয়ে রোস্ট দেখে উজান হিয়াকে দেখে একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে উঠে,আর উজানের এরকম ত্যাড়ামার্কা হাসি দেখে হিয়ার পুরো গা পিওি জ্বলে উঠে
হিয়াঃ ওভাবে হাসার কিছু নেই হ্যা,আমারো দিন আসবে তখন আমিও আপনাকে দেখিয়ে দেখিয়ে এর চাইতেও বেটার জিনিস খাবো
উজানঃ তুমি চাইলে আমি এখনি তোমার সাথে সব শেয়ার করতে পারি
হিয়াঃ নো থ্যাংকস,আপনি আগে নিজে পেট ভরে খান দেন আমাকে নিয়ে ভাবুন হু
কথা টা বলেই হিয়া ওর পোস টা নিয়ে ডাইনিং এ খেতে চলে যায়,উজান ওর রোস্ট গুলো নিয়ে এসে হিয়ার সামনে বসেই রসিয়ে রসিয়ে খেতে শুরু করে
হিয়াঃ কেমন করে খাচ্ছে দেখো রাক্ষস একটা
উজানঃ আমাকে রাক্ষস বলে সম্বোধন করে কোনো লাভ নেই ম্যাডাম,কাল থেকে না খেয়ে আছি শুধু মাএ আপনার জন্য
হিয়াঃ কে বলেছিলো আপনাকে আমার জন্য না খেয়ে থাকতে
উজানঃ এটা কোনো কথা বললে,আমার বউ খায়নি আমি কি করে খেতাম বলো তো,পাপ লাগতো তো
হিয়াঃ তা এখন খাচ্ছেন কোনো
উজানঃ হ্যা এটা একটা গুড কোয়শ্চন,দেখো তোমার হাবভাব দেখে যা বুঝলাম তুমি এখানে ঔ আমাকে আঘাত দিবে বলেই আসছো তো ঔ আঘাতগুলো সহ্য করবার জন্য হলেও তো ইউ নো আমাকে হেলদি আন্ড ফিট থাকতে হবে তাই ভাবলাম
হিয়াঃ আমি আপনাকে সত্যি খুব আঘাত দেই তাই না
উজানঃ অনেক,এই যে এখন দিচ্ছ আমার সামনে বসে শুধু শুকনো ভাত গিলছো,আর গলায় গিয়ে যখন লাগছে তখন গলা ভর্তি করে পানি খেয়ে নিচ্ছ,কিন্তু কি মনে হচ্ছে জানো তোমার গলায় গিয়ে যে ধাক্কা টা লাগছে ওটা আমি ফিল করছি
হিয়াঃ তাহলে আপনি অন্য দিকে চোখ করে রাখুন আমার দিকে না তাকালেই তো হচ্ছে
উজানঃ তোমার দিকে না তাকিয়ে যে থাকতে পারি না জানপাখি,কষ্ট লাগে
হিয়া একটা ভেংচি কেটে ওর খাওয়া শেষ করে উঠে প্লেট টা নিয়ে গিয়ে ধুয়ে,ওর হাত ধুয়ে ওর রুমে যেতে যেতে বলে উঠে(কষ্ট লাগলেও সহ্য করে নিন কারণ আমি বেশিদিন আর আপনার লাইফে থাকবো না)হিয়ার মুখে কথা টা শুনেই উজান আঁতকে উঠে,কিছুক্ষণ এক দৃষ্টিতে প্লেটের দিকে তাকিয়ে থাকে,তারপর কোনোরকমে বাকি ভাত গুলো শেষ করে হিয়ার কাছে গিয়ে একটা সিগারেট ধরিয়ে হিয়ার পাশে বসে পড়ে,হিয়া তখন একটু আগে পরীক্ষায় কি কি ভুল করেছিলো ওগুলো কারেকশন করতে ব্যস্ত,উজান কিছু প্রশ্ন করলেও হিয়া ওর খাতার দিকে তাকিয়েই ব্যাঙ্গাত্বক ভঙ্গিতে উওর দিতে থাকে
উজানঃ কোথায় যাবা তুমি আমাকে ছেড়ে
হিয়াঃ যেদিকে দু চোখ যাবে ওদিকে যাবো আপনার কি
উজানঃ তোমার দু চোখ কোথায় যায়
হিয়াঃ এখনো দেখিনি,হ্যা তবে
উজানঃ তবে
হিয়াঃ রুপম ভাইয়ায় কাছে যাওয়া টা সহজ বলে মনে হয়,ওখানেই যাবো না হয়
উজানঃ হিয়া(অস্ফুটে)
হিয়াঃ কেনো আপনিও তো একটা সময় তাই চেয়েছিলেন সেটা না হয় ভবিষ্যতে কখনো আমিও চাবো,ক্ষতি কি তাতে
উজানঃ আমি সহ্য করতে পারবো না
হিয়াঃ এজন্য তো বললাম এখন থেকে আমাকে ঘৃনা করতে শুরু করুন যাতে শেষে কখনো আমি না থাকলেও যেনো আপনার কোনোরকম কোনো আপসোস না থাকে
উজানঃ কতো সহজে বলে দিচ্ছ না সবটা
হিয়াঃ আমার কাছে এভাবে বসে না থেকে নিজের রুমে গিয়ে শুইয়ে পড়ুন,আমার পাশে থাকলে আমি এভাবেই সবটা বলে দেবো
উজানঃ ইউ নো তুমি একটা খুব বাজে মেয়ে,একটা কথা মনে রাখবা এই শাহরিয়ার উজান যতোদিন বেঁচে আছে ততোদিনে উনি তোমাকে এই বুকে আগলে রাখবে যতোই তুমি এসব বলে বা এসব করে আমাকে আঘাত দিতে দিতে শেষ করে দেও না কেনো
হিয়াঃ আপনি আবেগ ভাসছেন মিস্টার শাহরিয়ার,আবেগ টা কাটতে দিন এমনি সব ঠিক হয়ে যাবে
একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে হিয়া ঔ কথাটা বলে উঠে,হিয়ার এই কথায় উজান বুকের মধ্যে একটা ভীষণ রকম আঘাত অনুভব করে সাথে চলে আসে চোখ ভর্তি রাগ,কিন্তু সেই রাগ টাকে নিজের মধ্যে পুষে রেখেই উজান ওর হাতের শেষ হয়ে যাওয়া সিগারেট টা বারান্দায় ফেলে এসে আবার হিয়ার পাশে বসে হিয়াকে পড়া ধরতে শুরু করে
হিয়াঃ দেখলেন তো রুম টা সিগারেট এর ধোঁয়া দিয়ে কি করলেন
উজানঃ আমি সিগারেট যখন খাই তখন তুমি মুখে ওড়না টা দিতে পারো না তাহলে তো ধোঁয়া লাগে না
হিয়াঃ খাবেন আপনি নাক ঢাকবো আমি সত্যি__এখন কি পড়বো বলুন তো জলদি
উজানঃ এই 20টা synonym মুখস্থ করো,আর করে তারপরি ঘুমোবা
হিয়াঃ ২০টা না দশ টা
উজানঃ ২০টা
হিয়াঃ ওকে ১৫টা
উজানঃ বিশ টা মানে বিশ টা
হিয়াঃ আআআআ আপনি ঘুমোন তো অসহ্য
উজান হিয়ার হাতে সিনোনেমের চেপ্টার টা তুলে দিয়ে বাকি বই খাতা আবার গুছিয়ে আগের মতো রেখে হিয়ার পাশে একটা বালিশ টেনে শুইয়ে পড়ে
উজানঃ ভেবো না আমি ঘুমিয়ে আছি,তুমি উঠলেই জাগানোর জন্য তৈরি আমি
হিয়া একটা ভেংচি কেটে ওর পড়াতে মন দেয়,কিছুক্ষণ পর হিয়ার খুব বিরক্ত এসে গেলে হিয়া উঠতে যাবে ওমনি উজান বলে উঠে
উজানঃ উঠছেন কেনো,এতে কনসেন্ট্রেশন ব্রেক হয়
হিয়াঃ এতো দেখছি মহাজ্বালা
হিয়া আবার গিয়ে বসে পড়তে শুরু করে,রাত আড়াইটা পার হয়ে তিনটের কাটা ছুবে এরকম, ওসময় হিয়া খেয়াল করে উজান এবার সত্যি সত্যি ঘুমিয়ে গেছে,হিয়া ওর বই টা পাশে রেখে একটা হাসি দিয়ে উজানের দিকে হালকা ঝুকে উজানের চুল গুলো হাত দিয়ে আলতো করে নেড়ে দিয়ে
হিয়াঃ আপনি এরকম কেনো হ্যা,আমি যতো আপনাকে আঘাত করি আপনি তোতো আমাকে ভালোবাসেন,কেনো এতো ভালো আপনি,কে এতো ভালো হতে বলেছিলো আপনাকে__মন তো চাচ্ছে আপনার বুকে লেপ্টে আবার সেদিনের মতো ঘুমিয়ে যাই কিন্তু না যখনি এই মনের কথা শুনে আপনাকে কাছে টানবো ভাবি তখনি আবার একটা ঝড় এসে!!
________________?__________________