#সুতোয় বাঁধা সংসার
writer::প্রিয়া
১৬
তরীর জ্বর রাতের দিকে বেড়ে গেলো স্বপ্নার চিন্তা হচ্ছে মেয়েটাকে নিয়ে।আগামীকাল এক্সাম নেই যদি থাকতো তবে কি হতো।রিদ্ধ ডাক্তারে ছুটে গিয়ে ওষুধ আনলো।স্বপ্না মেয়েকে খাইয়ে মাথায় জল দিলো।
পরেরদিন কিছুটা সুস্থ হলো তরী। তবে বইয়ের দিকে তাকাতে পারছেনা। রিদ্ধ ওকে হেল্প করছে, তরী মুখস্থ করা প্রশ্নগুলো পাশে বসে পড়ে শুনাচ্ছে।
এভাবে কেটে গেলো পরেরদিন।একটা রিকশা করে তরীকে নিয়ে এক্সাম হলে গেলো রিদ্ধ।
১ঘন্টা লিখতে পারলে ও পরের সময়টুকু লিখতে পারছেনা তরী। কলম ধরে লেখার শক্তি নেই।পাশ মার্ক তুলতেই হবে অনেক চেষ্টায় আরো কিছুক্ষণ লিখলো।
এক্সাম শেষ করে বাইরে আসলো রিদ্ধ দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে।
-আপু এক্সাম কেমন হয়ছে?
– মোটামুটি, পাশ করবো কি না বুঝতে পারছিনা।
-কি বলছিস? এতো কষ্ট করে সারাবছর পড়লি শেষে কিনা এমন হলো।
-মাকে কিছু বলিস না।আল্লাহ সহায় হলে পাশ করে যাবো।
-তুই কি আর উল্লাস ভাইয়ের সাথে কথা বলেছিস?
-ওর বিষয়ে আর কিছু শুনতে চাই না।
-উল্লাস ভাই এমন পাগলের মতো বিহেভ করবে বুঝতে পারিনি।
-সেদিন নানাবাড়ীতে থাকতে কল দিয়েছিলো।নেটওয়ার্কের সমস্যার জন্য কথা বোঝা যায়নি।এরপর তো ফোন অফ,ফোন চুরি।
-এবার কি করা যায়,রুমা আন্টি শুনে নিয়েছে মানে যে কোনো সময় বাবা জেনে যাবে।
-ভাই আমার দোষ কি?
-তোর দোষ কে বলছে আপু।আমি ভাবছি বাবা জানলে ঝামেলা হবে।
-এসব বাদ দে আবার আমি অসুস্থ হয়ে যাবো।
-চল আজ আমরা রাস্তায় হেঁটে হেঁটে ভাই-বোন বাদাম খেয়ে বাসায় ফিরবো।
রিকশা থেকে নেমে ওরা হাঁটা ধরলো।কিছুদূর গিয়ে বাদাম কিনলো দুজন মিলে বাদাম খেয়ে হাঁটছে।
-আপু যাবি? পাশেয় একটা বিল আছে খুব সুন্দর। বিকেলের স্নিগ্ধ বাতাসে জলের মধ্যে নৌকায় ঘুরতে বেশ ভালো লাগে।
-তুই ক্লাস ফাঁকি দিয়ে এসব করিস?
-না আপু মাঝেমাঝে ফ্রেন্ডদের সাথে আসি।
-আম্মু চিন্তা করবে।
-আমি ফোন করে বলে দিচ্ছি।
-তাহলে চল।
খুব সুন্দর একটা বিল ভাই বোন নৌকায় উঠে বসলো।মূলত রিদ্ধ তরীর মাথা থেকে চিন্তা বের করে দেয়ার চেষ্টা করছে।যদি আবার মাথা ব্যথা শুরু হয় তখন তরীকে বাঁচানো দ্বায়।
সূর্যাস্তের সময়টুকু খুব সুন্দর কাটলো।রিদ্ধ দেখলো এক জোড়া কপোত-কপোতী নৌকায় বেশ কাছাকাছি বসে আছে।মূহুর্তে মেয়েটা মুখ ঢেকে দিলো।
-আপু তুই কিছু খেয়াল করেছিস?
-কি?
-ওই নৌকায় দুজন মানুষ দেখেছিস। দেখে মনে হলো মেয়েটা আমাদের দেখে মুখ ঢেকে দিলো।
-তোর হয়তো ভুল হয়ছে।
-আমি শিউর মেয়েটা আমাদের পরিচিত।
-দূর বাদ দে। বাসায় যাই।
রিদ্ধের মন কেমন করছে মেয়েটা এভাবে মুখ লুকালো কেনো?
ছেলেটা কি রাসেল আংকেল ছিলো।তরী এবার রিদ্ধের উপর রাগ দেখালো।
-তোর মাথায় কিছু ঢুকলে গোয়েন্দার মতো ভাবতেই থাকিস কেনো রে?
-আমি রহস্যের সমাধান না করে শান্তি পাই না।
-তুই সমাধান করতে চাইলে ওই নৌকার সাথে যা।
-যেতাম যদি একা থাকতাম।তোকে নিয়ে গেলে হবে না রাত হয়ে যাচ্ছে।
তরী ভাইয়ের দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকালো।রিদ্ধ আর কিছু না বলে চলে আসলো।
বাসায় ফিরে তরী কত গল্প করছে ভাইকে নিয়ে।আজ মনটা খুব হাল্কা লাগছে।
**আজ ও সালমান বাসায় ফিরে রুমা কে পায়নি।
ফ্রেশ হয়ে নিজেই রান্নাটা বসালো।এক চুলায় ভাত বসিয়ে অন্য চুলায় ডাল বসালো।
সালমান ভালো ডাল রান্না করতে পারে,সাথে আলু ভর্তা।আজ এগুলোই খাবে রাতে।
রুমা বাসায় ফিরে দেখে সালমান রান্না করছে।
-একি তুমি রান্না করছো কেনো?
-আজ তোমার ছুটি।তুমি জানো আমি খুব ভালো ডাল রান্না করতে পারি।
-তাই বুঝি তাহলে আজ জমিয়ে খাওয়া হবে।
-যাও ফ্রেশ হয়ে আসো।আমি দু কাপ কফি বানিয়ে নিয়ে আসছি।
-বাহ বা!স্যারের আজ প্রেম উথলে উঠছে।
-প্রতিদিন তুমি সব করো আজ না হয় আমিই করি।
-ওকে বস।
রুমা ফ্রেস হয়ে রুমে আসতেই দেখলো রাসেল ফোন দিচ্ছে।
-তুমি এসময় ফোন দিচ্ছো কেনো?
-জরুরি কথা আছে।
-বলো, সালমান ঘরে আছে।
-কাল আসবে আমি একটা হোটেল বুকিং করেছি।
-হোটেলে কেনো?
-একান্তে কিছু সময় কাটাতে চাই।
-নাহ না ঠিক হবে না।
-তুমি আমাকে ভালোবাসো না।
-আরে তা না।
-তাহলে কি?
-আসলে আমার মনে হচ্ছে এসব ঠিক না।
-তুমি না আসলে আমি কি করবো আমি জানিনা।
-বুঝার ট্রাই করো।
-যদি না আসো তবে আমার মরা মুখ দেখবে।
-রাসেল বাজে কথা বলো না।
-শুনো না ১০হাজার টাকা ম্যানেজ করতে পারবে।
-আবার টাকা কেনো?
-তুমি টাকা নিয়ে এসো সব বলবো।
সালমানের পায়ের শব্দ শুনে রুমা ফোন কেটে চুল মুছতে শুরু করলো।
-এই নাও কফি খেয়ে দেখো কেমন?
রুমা কফিতে চুমুক দিচ্ছে।
-খুব ভালো হয়ছে।
দুজন মিলে কফি খেয়ে নিলো।রুমা এবার কি করে টাকা চাইবে সালমানের কাছে।
-বলছি যদি রাগ না করো একটা কথা বলবো।
-বলো?
-১০হাজার টাকা দিতে পারবে।মায়ের শরীর খারাপ ডাক্তারে নিয়ে যাবো।
-মায়ের কি হয়ছে?
-মা অসুস্থ, আর বাবার কাছে টাকা নেই।মা ঋণ হিসেবে নিচ্ছেন দিয়ে দিবেন।
-আরে বাদ দাও দিতে হবে না।তুমি নিয়ে যেও সকালে।
রুমা নিশ্চিন্ত হলো,দুপুরে রাসেলের দেয়া ঠিকানা অনুযায়ী গাড়ি নিয়ে চলে গেলো।
সাদা শাড়ির সাথে হাতভরা চুড়ি পরে নিজেকে খুব সুন্দর করে সাজিয়ে রাসেলের মনোরঞ্জন করার জন্য হোটেল রুমে গেলো।
রাসেল এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে রুমার দিকে।
-এভাবে তাকাচ্ছো কেনো?
-আমার মনে হচ্ছে অপ্সরা আমার চোখের সামনে।
-দূর এভাবে বললে লজ্জা লাগে।
-সালমানের মতো লোকের সাথে তোমাকে একদম মানাচ্ছে না।
-তাই বুঝি।তা তোমার সাথে মানাচ্ছে নাকি।
-দাঁড়াও।
রাসেল ফোন বের করে রুমাকে জড়িয়ে ধরে কয়েকটা ছবি তুলে নিলো।
-এবার দেখো কেমন লাগছে একদম পারফেক্ট কাপল।
-ধ্যাত তুমি না।
রাসেল নেশা চোখে তাকিয়ে আছে।
-এভাবে তাকাবে না প্লিজ।
রাসেল, রুমার হাত মুষ্টিবদ্ধ করে ধরলো,চোখের সাথে চোখ রাখলো।
দুজনেই নিজেদের মধ্যে নেই।বিকেল হয়ে গেলো রুমা তড়িঘড়ি করে উঠে বসে।
-যেতে হবে এবার।
-তোমাকে ছাড়া এক মূহুর্ত কাটে না।
-কি করবো এবার।
-চলো আমরা বিদেশে চলে যাই।
-কিভাবে?
-আমি ব্যবস্থা করছি তুমি টাকা ম্যানেজ করতে পারবে?
-কত টাকা।
-আনুমানিক ১২থেকে ১৪লাখ হলে দুজন বিদেশে চলে যেতে পারবো।
-এতো টাকা!!
-তুমি ও আমাকে ছাড়া থাকতে পারবে না।তবে টাকা ম্যানেজ করতে কি সমস্যা।স্যারের অনেক টাকা আছে।
-আচ্ছা দেখছি।
-এইতো মিষ্টি মেয়ে।
সালমান অফিস থেকে বেড়িয়ে দেখে রুমার মা বাজারের ব্যাগ নিয়ে রিকশায় উঠছেন।
-মা আপনার শরীর কেমন?
-ভালো বাবা।
-আজ ডাক্তারে যাননি?
-আমি তো গতমাসে ডাক্তারে গিয়েছি।আর সামনের মাসে যাবো।
-রুমা বললো আপনি অসুস্থ।
-মেয়েটা বেশি চিন্তা করে আমায় নিয়ে।
সালমান কিছুই বুঝলো না। রুমার মিথ্যা বলার কারণ কি?
চলবে
(পার্ট ছোট হওয়ায় দুঃখিত)