সুতোয় বাঁধা সংসার পর্ব-১৭

0
484

#সুতোয় বাঁধা সংসার
writer::প্রিয়া
১৭
সালমান একটা কাজে দোকানে যেতে চাইছিলো।কিন্তু রুমা এই মিথ্যার আশ্রয় কেনো নিলো সেইটা জানার জন্য বাসার দিকে রওয়ানা দিলো।
এমনিতে মাথা গরম রাসেলের মতো ট্যালেন্টেট একটা ছেলে চাকরি ছেড়ে দিয়েছে।পুরো অফিস সামলে রাখতো সালমানের কাজ অর্ধেক কমে যেতো।হুট করে কি যে হলো একদম চাকরি ছেড়ে সাহেব হয়ে বসে আছে।
বাসায় ফিরে দেখে রুমা হালুয়া বানাচ্ছে।ব্যাগ রেখে চিৎকার করে উঠে।
-রুমা এদিকে তাড়াতাড়ি আসো?

রুমা হালুয়ার প্লেট নিয়ে সালমানের সামনে গেলো।
-খেয়ে দেখো কেমন হয়েছে?
-আগে আমার প্রশ্নের উত্তর দাও।
-তার আগে শুনো কি হয়ছে।তোমাকে বলা জরুরি।
আজ মা কে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়ার ছিলো। মায়ের বাসায় যাওয়ার আগেই মায়ের ফোন।
-আমি ডাক্তারে যাবো না। এখন শরীর অনেক ভালো সামনের মাসে যাবো।তখন টাকাগুলো লাগলে বলবো।
-মা তাহলে ডাক্তারে যাননি?
-নাহ যাওয়া লাগে নি।তোমার কি টাকার দরকার এনে দিবো?
-নাহ লাগবে না।সামনের মাসে যেহেতু মা ডাক্তারে যাবেন তখন মাকে দিয়ে দিও।

রুমা হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো।মা যদি সে সময় ফোন না দিতেন।তাহলে আজ সালমানের কাছে ধরা পরে যেতাম।সময়মতো মাথায় বুদ্ধি টা আসলো।আর সালমানকে খুশি করার জন্য সুজির হালুয়া বানিয়ে ফেললাম।

-তুমি কি জানি বলবে বলেছিলে?

সালমান একটু সংকোচে পরলো।যা বলতে চেয়েছিলো সেইটা বললে রুমা কষ্ট পাবে।থাক এসব বলার দরকার নেই।
হালুয়া খেয়ে সালমান শাওয়ার করতে যাওয়ার আগে রুমাকে বললো।
-আজ রান্না করো না বাইরে ডিনার করবো।
-সত্যি!
-হুম অনেকদিন হলো বাইরে যাই না।
-আমার ও খুব ইচ্ছে করছিলো কোথাও ঘুরতে যেতে।
-আমি শাওয়ার করে আসছি।

রুমা কমলা রঙের শাড়ি পরে সেজেগুজে বসে আছে। সালমান তৈরী হয়ে দুজনে বেড়িয়ে যায়।তিয়াসকে নিতে রুমার আপত্তি।কাচ্চাবাচ্চা মানে কিছুই এনজয় করা যায় না।চম্পার কাছে তিয়াসকে রেখে গেলো।

দুজন মিলে কিছুক্ষণ গাড়ি করে ঘুরলো।রাস্তার পাশে বসে আইসক্রিম খেলো, ফুসকা খাবার পর দুজনেই গাড়িতে উঠার সময় শফিক সামনে আসলো।
-হায় সালমান কি অবস্থা,তা ভাবি কেমন আছেন?

রুমাকে ভাবি বলে ডাকা আর সালমানের সাথে নিজ ইচ্ছায় কথা বলতে আসা কেমন জানি রহস্য লাগছে সালমানের।
-হ্যাঁ শফিক ভালো।তোর কি অবস্থা?
-এইতো দিব্যি চলছে, বিন্দাস আছি।
-আমরা আসছি।
-আরে চলে যাচ্ছিস নাকি পালিয়ে যাচ্ছিস?
-পালাবো কেনো?
-তোদের দুজনের তো পালানোর স্বভাব।

রুমা,সালমান কথা না বলে এগিয়ে যেতে চাইলো।
-শোন একটা গুড নিউজ আছে।
-বল?
-আমি সামনের মাসে আমেরিকা চলে যাচ্ছি।

রুমা-তোমার আমেরিকার কাজ হয়ে গেছে।গত ৪বছর তো শুধু শুনেছিলাম আমেরিকার কাজ চলছে।
-ভাবিইইই, আসলে আমেরিকার কাজ একটু দেরিতে হয়।সবুরে মেওয়া ফলে।
-ওহ আচ্ছা।
-আমার বউকে একদম সাথে করেই নিয়ে যাচ্ছি।

রুমার মুখটা বিষাদে ঢেকে গেলো।সালমান কথা না বাড়িয়ে রুমাকে গাড়িতে উঠতে বলে।
শফিক রুমার এমন শুকনো মুখ দেখে আনন্দ পায়।মূলত রুমা বিয়ে করার সময় জেনেছিলো শফিক আমেরিকা চলে যাবে কিছুদিন পর।ওইখানে শফিকের ছোট বোন থাকে।ও কাজ করছে পুরো পরিবারকে আমেরিকা নিয়ে যাবার।
শফিক নিজের পরিবার সামলাতে গিয়ে বিয়ে করেনি।তাই বয়স বেশি হয়ে গেছিলো।প্রায় ৩৬বছরে এসে ২৭বছরের রুমাকে পছন্দ করে বিয়ে করে।বিয়েটা প্রেমের ছিলো না তবে শফিকের পছন্দে ছিলো।
রুমার পরিবার বয়সের দিক বিবেচনা করেনি বিয়ে দিয়ে দেয়।৪বছরের সংসার জীবনে দু বছর আনন্দেই কেটেছে।পরে তিক্ততার শুরু শফিক আমেরিকা যাচ্ছে না, রুমাকে কেয়ার করে না,শফিকের মা রুমার সাথে খারাপ ব্যবহার করে।সব মিলিয়ে শফিক হাঁপিয়ে উঠছিলো।
সালমানের সাথে পরকীয়ায় মূলত এই অশান্তির মূল।ওরা পালিয়ে যাবার পর শফিক ওর পরিবার রিয়ালাইজ করে।

**সালমান অভিমানে রুমার কাছে জানতে চায়।
-তোমার কি আফসোস হচ্ছে?
-কেনো?
-শফিক আমেরিকা চলে যাচ্ছে।তুমি থাকলে ওর সাথে যেতে পারতে?
-আমি ও তো বিদেশে চলে যাবো।
-মানে?
-আরে ধূর বললাম আমরা তো চাইলেই বিদেশে যেতে পারি।এতে আফসোসের কি আছে।
-সত্যি তোমার মনে কোনো কষ্ট হচ্ছে না তো?
-ধ্যাত পাগল।

ডিনার শেষ করে ওরা বাসায় ফিরলো।তিয়াস ঘুমিয়ে গিয়েছে চম্পা ঘুম পাড়িয়ে পাশেই শুইয়ে আছে।
রুমা চম্পাকে ডেকে খাবারে প্যাকেট দিলো হাতে।চম্পা উঠে নিজের ঘরে চলে গেলো।
রুমা ফ্রেশ হয়ে রুমে আসতেই রুমার ফোন বেজে উঠলো। উল্লাসের মা ফোন দিয়েছেন।
সালমান তখন শাওয়ার করতে গিয়েছে।
-আপু কি অবস্থা?
-বোন তুই কি তরীর মায়ের সাথে কথা বলেছিস?
-আপু বিশ্বাস কর,আমি এতো করে ওই মহিলাকে বললাম।উল্লাস ছেলে ভালো ওর পরিবার ভালো তরী ভালো থাকবে।কিন্তু তিনি উল্লাসের সাথে তরীর বিয়ে দিবেন না।
-আমার ছেলের দিকে তাকাতে পারছিনা।কেমন হয়ে গেছে তুই তো জানিস আমার ছেলে আমার কলিজা।
-জানি আপু জানি। কি করবো আমি উনাদের পায়ে পর্যন্ত ধরেছি।
-থাক বোন তোর আর কষ্ট করতে হবে না। আর লজ্জা পাস না ওদের কাছে গিয়ে।
-আপু বলছি আমার বড় ভাইয়ের মেয়ে কান্তা আছে না।ওকে তোমার কেমন লাগে?
-মেয়েটা তো ভালো।
-উল্লাসের সাথে বিয়ে দিলে কেমন হবে?
-উল্লাস মানবে না।
-তুমি এক কাজ করো।উল্লাসকে বলে দাও তরীর বিয়ে হয়ে গেছে।
-না না উল্লাস তো জানে না আমি তরীর বিষয়ে কিছু জানি।তরীর বিষয়ে আমি ওর ডায়েরি পড়ে জেনেছি।আগ বাড়িয়ে কিছু বলতে গেলে হীতে বিপরীত হবে।ও নিজে থেকে নিজেকে সামলে নিবে।ও তরীর কাছে এক বছর সময় চেয়েছে।দেখা যাক কি হয়।
আমি উল্লাসকে সারপ্রাইজ দেয়ার জন্য তোকে বলেছিলাম ওদের সাথে কথা বলতে।সামনে উল্লাসের বার্থডে আর এই সময় যদি তরী ওকে ফোন করে উইশ করে তবে ব্যাপারটা বেশ আনন্দের।আমার ছেলেটার ভালো লাগতো।মেয়েটার সাথে তো যোগাযোগ নেই তাই ওর মনটা খারাপ।

রুমা অনেকক্ষণ ফোনে কথা বলে রুমে চলে গেলো।
উল্লাসের মায়ের আধ্যিকেতা দেখে ওর গাঁ জ্বলে যাচ্ছে।
সালমান জিজ্ঞাসা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
-উল্লাসের মা ফোন দিয়েছিলেন।
-তোমাকে চিন্তিত দেখাচ্ছে কেনো?
-বাদ দাও এসব।
-কোনো সমস্যা হলে বলো?
-শুনলে তুমি কষ্ট পাবে।
-কি হয়েছে রুমা টেনশন দিওনা বলো কি হয়েছে?
-সালমান তুমি হয়তো ভাববে তরী আমার সৎ মেয়ে বলে বলছি।তরী আমার নিজের মেয়ের মতোই।
মেয়েটা এভাবে নষ্ট হয়ে যাবে ভাবিনি।
– শাট আপ রুমা কি বলছো?
-আমি জানি তুমি উত্তেজিত হবে তাই বলতে চাইনি।
উল্লাস যখন এই বাড়িতে আসে তখন থেকে নাকি তরী আর উল্লাস সম্পর্কে জড়িয়ে পরে।যতোদিন উল্লাস দেশে ছিলো দুজন মিলে কোথায় কোথায় ঘুরেছে হিসেব নেই।

-রুমা আমার তরী এমন মেয়ে না।
-তুমি বিশ্বাস না করলে আপুকে ফোন দাও।
-আপু কি বলছেন?
-আপু আমার সাথে খুব বিশ্রী করে কথা বলছেন।তরী নাকি উল্লাসের অনেক টাকা খরচা করেছে।উল্লাসের কাছ থেকে দামী দামী গিফট নিয়েছে।আপু তো ওর জন্ম নিয়ে কথা বলছে মেয়েটা নাকি লোভী ওর বাবা-মা লোভী।

আমি বললাম ওরা যদি দুজন দুজনকে ভালোবাসে তবে বিয়েটা দিয়ে দিতে। আপু রেগে আগুন বলেন এমন খারাপ মেয়েকে ছেলের বউ বানাবেন না।
-আমি ও এমন পরিবারে আমার মেয়েকে বিয়ে দিবো না।
কাল সকালে আমি যাবো স্বপ্নার সাথে বুঝাপড়া করতে।আমার শাসন না পেয়ে ওরা কতোটা খারাপ হয়েছে স্বপ্নাকে দেখিয়ে আসবো।

রুমা পৈশাচিক হাসি দিলো স্বপ্নাকে অপমানিত হতে দেখতে ওর ভালো লাগবে।সালমান পুরো রাত ছটফট করলো ছেলেমেয়ের খারাপ কিছু বাবাদের কষ্ট দেয় বেশি।
সকালে অফিসে যাবার আগেই রুমাকে নিয়ে ওই বাসায় গেলো।
রিদ্ধ দরজা খুলে ওদের দেখে দাদীকে ডাক দিলো।এখানে ওর মা আসবে না।
-রিদ্ধ তোমার মাকে ডাক দাও?
-দাদু আসছেন উনার সাথে কথা বলো।

রিদ্ধ রুমে যেতে গেলেই শুনতে পায় রুমা বলছে, দেখছো কত বেয়াদব ছেলে।
রিদ্ধের দাদু এসে সোফায় বসতে বসতে কি হয়েছে জানতে চান।
-স্বপ্নাকে ডাক দাও আমি ওর সাথে কথা বলবো।
-স্বপ্না তোর সামনে আসে না ভুলে যাচ্ছিস।
-বাইরে ঘুরে জগতের সকল পুরুষ দেখতে সমস্যা নেই, আমার সামনে আসতে সমস্যা।
-বাইরের পুরুষদের ও ঘৃণা করে না।তোকে ঘৃণা করে তাই।

জবাবে সালমান একটু জড়োসড়ো হয়ে বসে।
-মা আমাকে ওর সাথে কথা বলতে হবে।কি শুরু করেছে ও আমার ছেলেমেয়েদের খারাপ বানাচ্ছে।

রান্নাঘর থেকে স্পষ্ট কথাটা স্বপ্নার কানে আসে।মুখটা আড়াল করে সালমানের পিছে দাঁড়ায়।
-আমার ছেলেমেয়েরা নষ্ট হচ্ছে না।
-বড় বড় কথা বন্ধ করো।টাকা দিয়ে কি করো তুমি, মেয়েকে অন্য ছেলের টাকায় শপিং করতে হয়,খেতে হয়।
-কি বলছেন আপনি? আমার মেয়ে বাইরের খাবার খায় না,আর ও কখনোই নিজে থেকে শপিং করে না।সেটা আপনি ভুলে গেছেন।
-আগে মেয়েটা আমার শাসনে ছিলো।তুমি ওকে এখন খারাপ দিকে চালাচ্ছো।
-সত্য যাচাই না করে অন্যের কথায় লাফ দিবেন না।এতে পা ভেঙ্গে যেতে পারে।
-মশকরা হচ্ছে,উল্লাসের টাকা খেয়েছে কেনো তরী।
-তরী এমনটা করেনি।
-এখনো গলা উঁচু করে কথা বলছো।আমি তরীর বিয়ে দিবো ঠিক করেছি।
-আমার মেয়ের বিয়ে আমি এখন দিবো না।
-তোমার কথা মেনে চলতে আমি বাধ্য না।
-আমার মেয়ের উপর আপনি জোর কাটাবেন।
-মেয়েটা আমার ও।তুমি যেমন ওর মা আমি ওর বাবা।তুমি কি এবার সন্তান ১৮বছরের সংসার সবকিছু ভুলে গেছো।
-#সুতোয় বাঁধা সংসার কে আর সম্পর্কের দোহায় দিয়ে টিকানো যায় না।সুতো ছিঁড়ে গেছে।
-তোমার সাথে সুতো ছিঁড়তে পারে।কিন্তু সন্তানরা আমার রক্ত এটা ভাগ করা যায় না।
-আফসোস যে তুমি না ভালো স্বামী হতে পারলে, আর না ভালো বাবা।
-আমি তরীর বিয়ে দিচ্ছি ফাইনাল।
-আমি হতে দেবো না।
-ওহ তাহলে আইনের মাধ্যমে যেতে হবে।ছেলে মেয়ে ভাগ করতে হবে।দেখি আইন কি বলে ছেলেমেয়েদের উপর কি মায়ের একাই অধিকার।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here