সুতোয় বাঁধা সংসার পর্ব-১৫

0
516

#সুতোয় বাঁধা সংসার
writer::প্রিয়া
১৫
রিদ্ধ স্কুল থেকে ফিরে খেতে বসলো,স্বপ্নার মুখ ভার রিদ্ধ তখন জানতে চাইলো।
-আপুর এক্সাম কেমন হলো?
-জানিনা।
-আপু রুমে আছে,খেয়েছে না কি?
ছেলের প্রশ্ন এড়িয়ে স্বপ্না রুমে চলে গেলো।রিদ্ধ কিছুই বুঝতেছে না,খাবার শেষ করে তরীর রুমে গেলো।লাইট অন করে তরীকে ডাকছে।
-অসময়ে শুইয়ে আছিস কেনো আপু?
তরী কোনো কথা বলছে না।রিদ্ধ, তরীর মাথার কাছে গিয়ে বসলো।আপু কি হয়ছে বলতেই তরীর গাঁয়ে হাত দিয়ে দেখলো তরীর প্রচন্ড জ্বর আসছে।
-তোর এতো জ্বর কি করে হলো?
মা,দাদু তোমরা তাড়াতাড়ি আসো।স্বপ্না ওর শাশুড়ী ছুটে আসলেন।
-আপুর জ্বর আসলো কি করে?

দুজনেই চুপ রিদ্ধ ওর বোনকে প্রচন্ড ভালোবাসে।
-কি হলো দাদু কথা বলছো না কেনো?

ওর দাদু গিয়ে তরীর পাশে বসলেন।তরী জ্বরের ঘোরে তাকাতে পারছেনা।
-এইভাবে মারলি মেয়েটাকে। তুই তো জানিস স্বপ্না, তরী আঘাত সহ্য করতে পারে না।দেখ মেয়েটার কি অবস্থা হয়েছে।
-মা আপুকে মেরেছেন। কেনো মা আপু কি করছে?
-তোর বোন কি করছে ওকে জিজ্ঞাসা কর।

স্বপ্না রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো।রিদ্ধ বোনের মাথায় জলপট্টি দিচ্ছে,দাদু ভাতের প্লেট নিয়ে রুমে আসলেন।
-নে বোন একটু খেয়ে নে।
-খাবো না আমি।
-আপু একটু খেয়ে নে।উঠ আমি ধরে তুলছি।

রিদ্ধ, তরীকে ধরে বসালো।দাদু নিজ হাতে মাখিয়ে দু লোকমা ভাত খাইয়ে দিলেন।রিদ্ধ প্যারাসিটামল খাইয়ে দিলো ওকে।তরী আবার শুইয়ে পরলো।
রিদ্ধ লাইট অফ করে দাদুকে নিয়ে অন্যরুমে গেলো।
-দাদু কি হয়েছে বলতো?
-তরী নাকি উল্লাস নামের কার সাথে প্রেম করে?
-উল্লাস ভাই।
-তুই চিনিস?
-হ্যাঁ। কিন্তু আপুর তো ওর সাথে কোনো সম্পর্ক নেই।
-কিছু নেই?
-না তো।ভাইয়া আপুকে পছন্দ করেছিলো।আপু তো কথা বলতে চায়নি।ছেলেটা ভালো দেখে আমি বলেছিলাম,যদি তোর ভালো লাগে তবে এগিয়ে নিতে পারিস।বিষয়টা আর আগায়নি ভাইয়া আমেরিকা ফিরে যায়।।যাওয়ার পর তো আপুর সাথে যোগাযোগ হয়নি।

-ওই রুমা, তোর মাকে অনেক অপমান করে।তোর মা রেগেমেগে তরীকে অনেক মারধর করে।
-মা ভুলে গেছেন আপু মার একদম সহ্য করতে পারে না।
-তোরা বুঝবি না মায়ের ব্যথা।তোদের মা আর কত সহ্য করবে।
-চলো।মায়ের সাথে কথা বলতে হবে।

রিদ্ধ আর ওর দাদু মিলে স্বপ্নাকে সব খুলে বলে।তবুও স্বপ্না সব শুনে তরীকে দোষারোপ করে।
-তোর বোনের বুঝা উচিত ছিলো ওইটা রুমার বোনের ছেলে।ওর সাথে কথা বলা কেনো তাকানো পাপ।
-আপু কথা বলেনি মা,তেমন কথা হয়নি কিছু।
-সব বুঝলাম, এখন ছেলেটা তোর বোনের জন্য পাগলামি করছে।দেশ ছেড়ে বাংলাদেশে ফিরতে চাইছে।
-এতে আপুর দোষ কোথায়।
-ও ছেলের সাথে দেখা হওয়ায় দোষ।এখন যদি তোর বাবাকে রুমা উল্টো কিছুই বুঝায়।তখন তোর বাবা মনে করবে আমি তোদের দেখাশোনা করতে পারছিনা। তোরা বিগড়ে যাচ্ছিস,নষ্ট হয়ে যাচ্ছিস।
-ওই লোক কি ভাবলো তাতে আমাদের কিচ্ছু আসে যাই না।
-আমার আসে।আমি ওই লোকটাকে দেখিয়ে দিতে চাই আমার ছেলেমেয়েরা বেস্ট। ওকে ছাড়া মানুষ হয়েছে।
-মা তুমি আপুকে ভুল বুঝতেছো।
-ওকে বলিস আর যেনো উল্লাসের নাম মুখে না আসে।
-আবার ও তো উল্লাসের সাথে কথাই বলে না।
-তবুও সর্তক করে দিলাম।
-আপুর কাছে যাও।

স্বপ্না মেয়েটার কাছে আসে।তরী চোখ বন্ধ করে আছে।মেয়ের মাথায় হাত ভুলিয়ে দিতে গিয়ে চোখে জল চলে আসে।
-তুই যখন জন্ম নিলি তখন আমি বুঝলাম মা কি।একটুতেই তোর জ্বর চলে আসতো।তোকে বকা দিলে তুই অসুস্থ হয়ে পড়তি।তুই ছিলি মোমের পুতুল।তোকে আমরা কত আদরে বড় করেছি।তোর জন্য কত রাত জাগতে হয়ছে,হাসপাতালে কাটাতে হয়ছে।তোর জন্য যতো কষ্ট করেছি তার অর্ধেক কষ্ট হয়নি রিদ্ধ আর রিহানের বেলায়।
তুই কষ্ট পেলি আমার কষ্ট হয়।তোকে আঘাত করে আমি নিজেই বেশি কষ্ট পাচ্ছি।

তরী উঠে মাকে ঝাপ্টে ধরে। মায়ের বুকের সাথে মিশে আছে।
-আমি তোমাকে কষ্ট দিতে চায়নি মা।আমি না বুঝেই ভুল করেছি আর কখনোই এমন করবো।
আমাকে মাফ করে দাও মা।আর এমন হবে না।

স্বপ্না মেয়েকে জড়িয়ে ধরে চুমু খায়।

**সালমান রেগেমেগে বাসায় আসলো,রুমা বাসায় নেই।বাচ্চাকে সামলাতে পারছেনা চম্পা মেয়েটা। সালমান ছেলেকে কোলে নেই চম্পা ফিডার বানিয়ে নিয়ে আসে।সালমান ছেলেকে খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে দেয়।সন্ধ্যেয় রুমা বাসায় ফিরে,এতোটা দেরি হবে ভাবতে পারেনি।আজ রাসেলের সাথে নৌকা ভ্রমণে গেছিলো।রাসেল প্রাণোচ্ছল ছেলে,ইশারা বুঝে যায়। রুমার ভালো লাগার সবকিছু করে। মাঝি নৌকা চালাচ্ছে, নদীর বুকে আর কোনো নৌকার অস্তিত্ব নেই।দুজন মানুষ জল খেলা করছে।মাঝেমাঝে রাসেল রুমার অবাধ্য চুল গুছে দিচ্ছে।কখনো জলের মধ্যে হাত ধরে রাখছে।রুমা চাইছেনা রাসেলকে থামাতে।কতদূর চলে আসছে খেয়াল নেই।এতো দূরে চলে যাওয়ায় ফিরতে দেরি হলো।

রুমা কাচুমাচু করে ঘরের ভিতর আসলো।সালমান লাইট বন্ধ করে শুইয়ে আছে।
ভয়ে ভয়ে লাইট অন করে।সালমান ওর দিকে তাকিয়ে আছে।
-আমি এখুনি তোমার জন্য চা করে আনছি।
-কোথায় ছিলে?
-আসলে আসলে জিম থেকে একটু ফুচকা খেতে গেছিলাম।
-তাই নাকি?
-তুমি কি আমায় সন্দেহ করছো?
-তোমাকে প্রশ্ন করেছি তুমি সন্দেহের দিকে যাচ্ছো কেনো?
-না এমনভাবে প্রশ্ন করছো।
-তুমি এতো ঘাবড়ে যাচ্ছো কেনো?
-ক ক কই না তো।আমি চা করে আনছি।
-চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকো।আর যা প্রশ্ন করবো সোজা উওর দিবে।

রুমা এবার বেশি ঘাবড়ে যাচ্ছে।সালমান শুয়া থেকে উঠে দাঁড়ালো।
-আমার একাউন্ট থেকে ৫০হাজার টাকা তুলেছো তুমি?
-হ হ্যা মানে তো কি হয়েছে?
-কি হয়েছে মানে?আমাকে না জানিয়ে কেনো টাকা তুলবে।
-দরকার ছিলো।তোমার টাকায় কি আমার অধিকার নেই?
-অধিকারের কথা আসছে কেনো।কি এমন দরকার তোমার?
-ছিলো তো তাই তুলেছি।
-কি ছিলো?
-বাচ্চার জামাকাপড় আমার কিছু শপিং ছিলো।আর আমি ডাক্তারে গেছিলাম অনেক টেস্ট লাগছে।
-এসব কিছু তো আমি জানিনা।
-জানানো হয়নি।
-প্রতি মাসে ফ্ল্যাট ভাড়ার ৩০হাজার টাকা তোমার হাত খরচের জন্য।তারপর আবার আমার একাউন্ট থেকে টাকা তুলে ডাক্তারে যেতে হবে কেনো।
-ছিঃ সালমান মাত্র ৫০হাজার টাকার জন্য তুমি এতো খারাপ ব্যবহার করছো।
-তুমি কথা ঘুরিয়ে পার পাবে না।
-চলো ডাক্তারে আমি তোমাকে নিয়ে যাবো।সব সত্যি জানবে তুমি।
-কিসের সত্যি?
-তুমি কষ্ট পাবে বলে আমি তোমাকে জানাতে চাইনি।আমার বড় অসুখ হয়েছে।
-কি বলছো তুমি?
-হ্যা গো আমার খুব বড় অসুখ হয়েছে।তিনমাস থেকে নিয়মিত চেকাপ, ডাক্তারের ওষুধ নিয়ম মাফিক খেতে হচ্ছে।
-কিন্তু হয়েছে কি?
-আসলে আমার।তুমি শুনলে কষ্ট পাবে।
-রুমা টেনশন হচ্ছে আমার।
-আমার না ব্রেনে পানি জমে গেছে।দেখছো তো হুটহাট রেগে যাই মাথা ঠিক থাকে না।তাই ডাক্তারে যাওয়ার পর ডাক্তার বললো ব্রেনে পানি জমে গেছে।
আমি তোমাকে বলিনি তুমি ভেঙ্গে পরবে তাই।এখন সেই তুমি আমায় অবিশ্বাস করছো মরে গেলে ভালো হতো।
-রুমা এমন কথা বলো না।চলো আমি আজ নিজে ডাক্তারে গিয়ে কথা বলবো।প্রয়োজন হলে বিদেশে যাবো।

-নাহ এসবের প্রয়োজন নেই।আজ সব নতুন করে টেস্ট করিয়েছি ডাক্তার বলছে কমে যাচ্ছে।আর চিন্তা নেই।
-তোমার হাতে রিপোর্ট কোথায়।
– রিপোর্ট বাসায় আনলে তুমি দেখে ফেলবে।তুমি কষ্ট পাবে, আমি অসুখের কষ্ট সহ্য করতে পারবো।তোমার কষ্ট সহ্য হয়না।
-পাগলি এতো ভালোবাসো আমায়।
-তুমি ছাড়া কে আছে আমার।
-তুমি শুইয়ে থাকো, আমি চা করে আনছি উঠবে না কিন্তু রুমা।
-নাহ আমি এখন তোমার কোলে মাথা রেখে ঘুমাবো।সালমান রুমার চুলগুলো বিলি কেটে দিচ্ছে।রুমা স্বস্তির নিঃশ্বাস নিয়ে মনে মনে বলছে।বুইড়া কথার যাদুতে তোমায় ফাঁসিয়েছি তুমি বুঝতেই পারবে না।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here