#ইরিনা_ইরিন
পর্ব ঃ- ০২
পটাশিয়াম সায়ানাইড সম্পর্কে পিয়াসার ধারণা আছে কিনা জানার ইচ্ছে হচ্ছে এখনি। কিন্তু এখন অনেক রাত হয়ে গেছে। কাল সকালেই না হয় মি. রিয়াদকে জিজ্ঞেস করা যাবে।
ঘুমাতে এসেও পিয়াসার কথা মাথায় ঘুরছে। এই পদার্থ এতোটাও সহজলভ্য নয় যে কেউ চাইলেই কিনে ফেলতে পারে। সাধারণত মানুষ সহজলভ্য বিষ খেয়েই আত্মহত্যা করার চেষ্টা করে থাকে। আর কেসটা যদি আত্মহত্যা না হয় সেক্ষেত্রে খাবারে যে এটা মিশিয়েছে সে রসানের সাথে খুবই সম্পৃক্ত।
সকালের নাস্তা সেড়েই মি. রিয়াদকে ফোন দিলাম-
“হ্যালো, কেমন আছেন।”
“জ্বি ম্যাডাম এইতো আছি।”
“আমার নাম্বার কী ছিল আপনার কাছে, শুরুতেই চিনে ফেললেন!”
“জ্বি ছিল।”
“আচ্ছা একটু কথা বলার সময় হবে কী?”
“জ্বি বলুন। ”
” পিয়াসাতো কমার্সের ছাত্রী ছিল। নাকি এর আগে সায়েন্স নিয়েও পড়েছে?”
” বুঝেছি ম্যাডাম প্রশ্নটা কেন করছেন। আসলে এটা দেখার পর আমি নিজেই অবাক হয়ে গেছিলাম। পটাশিয়াম সায়ানাইড সম্পর্কে পিয়াসার জানার কথা না। ও শুরু থেকেই কমার্সে লেখাপড়া করেছে। সাইন্স নিয়ে ওর কোনো ইন্টারেস্ট ছিল না। তবে ওর এক কাছের বান্ধবী ছিল যে রসায়নে থিসিস করেছে এবং তখন সে আমাদের বাসায় দুইমাস থেকেছিল।”
“তাহলে তো ওই বান্ধবীর কাছ থেকে পিয়াসা পটাশিয়াম সায়ানাইড সম্পর্কে জানতে পারে।”
” না ম্যাডাম, আমি এটা দেখার সাথে সাথে ওই মেয়েটির সাথে যোগাযোগ করি, সে আমায় জানায় পিয়াসা কখনো ওর কাজ নিয়ে কোনো কথা বলতো না।”
” ঘটনার ঠিক কতোদিন আগে ওই মেয়েটা বাসায় ছিল।”
” ওর নাম ছিল রিয়া। ঘটনার ৬ মাস আগে ও আমাদের বাসা ছেড়ে চলে যায়।”
” এরপরও কী রিয়া আপনাদের বাসায় যাতায়াত করতো?”
” না, কারণ পরের মাসেই ও দেশের বাইরে চলে যায় লেখাপড়ার জন্য। ”
“আচ্ছা, এমনও তো হতে পারে রিয়া ভুলবশত কিছু পটাশিয়াম সায়ানাইড আপনাদের বাসায় রেখে যায়।”
” এরকম হলে তো আমরা তা দেখতে পেতাম। রিয়াকে আমরা একটা ছোট রুম দিয়েছিলাম খালি করে। রিয়া যাবার পর সেই রুম আবার খালি হয়ে যায়। আমরা তা পরিষ্কার করে নতুন আসবাবপত্র রাখি। কিছু ফেলে গেলে তো আমরা পেতাম তখন। তার চেয়ে বড় কথা হলো এটা জানার পর, আমি সারা বাসা কয়েকবার খুঁজেও ওই জাতীয় কোনো পদার্থ পাই নি।”
” বুঝেছি। আমাকে কী আপনি রিয়ার সাথে কথা বলার ব্যবস্থা করে দিতে পারেন?”
” হ্যা, অবশ্যই। আমি আপনাকে জানাচ্ছি ওর সাথে যোগাযোগ করে। আর কিছু জানার আছে?”
“না। আপাতত আর কিছু জানার নেই। আমি একবার আপনার বাসায় যেতে চাই। ”
” আচ্ছা আসুন যখন আপনার ইচ্ছে। ”
“কাল আসবো বিকেলের দিকে।”
” আচ্ছা ম্যাডাম।”
“ওকে রাখি।”
“ওকে।”
রিয়ার সাথে পটাশিয়াম সায়ানাইড এর কোনো না কোনো সম্পর্ক আছে বলে মনে হচ্ছে। যাই হোক এখন আমার কাজ হচ্ছে পিয়াসার সবগুলো রিপোর্ট, ডকুমেন্ট ভালো ভাবে দেখা। পুলিশ, গোয়েন্দা সবাই যখন কেসটা নিয়েছিল তখন তারা একটা ব্যাখা নিশ্চয়ই দিয়েছে।
প্রথমেই পুলিশের ব্যাখ্যা পড়লাম। কতো সাধারণভাবে লিখা মানসিক চাপ অথবা অসুস্থতা থেকে আত্মহত্যা করেছে। ওরা যে ঠিক কতোটুকু পিয়াসার মানসিক অবস্থার খোঁজ নিয়েছিলো, ওরাই ভালো জানে!
গোয়েন্দা বিভাগও একটু ইনিয়ে বিনিয়ে সেই একই কথা লিখেছে- “যেহেতু পিয়াসার হত্যার কোনোপ্রকার সম্ভাবনা পাওয়া যায় নি, সেহেতু এটি আত্মহত্যা বলেই মনে হচ্ছে। তবে ওরা কিছু মানুষের সাথে কথা বলেছে তাদের উত্তর এরুপ ছিল-
পিয়াসার স্বামীঃ- আমাদের কোনো দাম্পত্য কলহ ছিল না। ও আত্মহত্যা করেছে এটা আমি মানি না। আমি এর সঠিক তদন্ত চাই।
পিয়াসার বান্ধবী ঃ- বিদেশে আসার পর ওর সাথে আমার যোগাযোগ কমে গিয়েছিলো। ওকে আমি সুখী দেখেই এসেছি। ওর কোনো গোপন কষ্ট ছিল কিনা আমার জানা নেই।
পিয়াসার শাশুড়ী ঃ- আমি বৌমাকে নিজের মেয়ের মতোই দেখতাম। ওরা খুব সুখে আছে এটাই জানতাম। কী থেকে কী হয়ে গেলো কিছুই বুঝতে পারছি না।
পিয়াসার মাঃ- আমার মেয়েটা কেন এমন করবে আমি ভেবে পাচ্ছি না। তবে আমি মেয়ের জামাইএর নামে কোনো অভিযোগ দিতে চাই না। ও আমাদের নিজের ছেলের মতোই ছিল। আমার মেয়ে কখনো ওর নামে কোনো অভিযোগ করে নি।
সবাই এতো সহজভাবে সবকিছু বলছে তাহলে পিয়াসা আত্মহত্যা কেন করলো!!
পিয়াসার সমস্ত কল রেকর্ডও দেয়া আছে। এখানেও এমন কিছু নেই যার জন্য ও আত্মহত্যা করতে পারে।
আচ্ছা মি. রিয়াদ কী সব সত্যি কথা বলছেন। উনি মুখে যাই বলুক না কেন উনারও কল রেকর্ড দেখার প্রয়োজন ছিল। দুবছর আগের কল রেকর্ড বের করা কিছুটা ঝামেলা হয়ে যাবে তাও চেষ্টা করে দেখি। আমার কাজে সাহায্য করার জন্য একজন ছিল কিন্তু আজকাল সে নিজেকে নিয়ে একটু বেশিই ব্যস্ত! দেখি এটুকু সাহায্য করতে পারে কীনা?
চিরচেনা একটি নাম্বার ফোনের স্ক্রীনে ভাসছে, নিজের অজান্তেই একটা চাপা দীর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে এসলো ভেতর থেকে।
“হ্যালো সুজয়?”
“হুম ইরিন বল, কেমন আছিস?”
“সে খবর কী আর আজকাল তুই রাখিস? ”
” বুঝতেই তো পারছিস রুপকে নিয়ে আমাদের কী অবস্থা। একদিন আয় না বাসায়।”
” আচ্ছা একটা কাজ করতে পারবি?”
” কী? ”
“দুবছর আগের একটা কল রেকর্ড বের করে দিতে পারবি?”
” তুই এখনো এসব ছাড়িস নি? তুই কথা দিয়েছিলি এসব এখন বাদ দিয়ে দিবি। কী দরকার এ বয়সে নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এসব করার?”
” কী করবো? কাজ ছাড়া একা একা সময় কাটে না। তারউপর কেসটা এমন যে না করতে পারি নি।”
” আচ্ছা তবে এটাই কিন্তু শেষ। এরপর আর এসব বিষয়ে আমি কোনো সাহায্য করবো না। ইশান জানতে পারলে খুব রাগ করবে কিন্তু।”
“আচ্ছা দে তুই।”
” আচ্ছা, কিছু সময় লাগবে ব্যবস্থা করতে দেখি পারি কিনা। পারলে দিচ্ছি।”
“ওকে রাখি।”
“ওকে।”
এই মানুষটা আগে একবার কথা শুরু করলে থামতেই চাইতো না! জীবন সবাইকে কতো ব্যাস্ত করে দেয়!
আমার আর কী সেই একই রুটিন আস্তে আস্তে একটু কিছু রান্না করবো। তারপর খাওয়া-দাওয়া করে একটু বিশ্রাম। আর বিকেল বেলা, বারান্দায় বসে পছন্দের বই পড়া নয়তো গান শোনা। সন্ধ্যার পর টিভি ছেড়ে কিছুক্ষ্ণ বসা তারপর কোনো কেস থাকলে তা নিয়ে স্টাডি করা। তারপর রাতের খাওয়া দাওয়া ঘুম। খারাপ না ভালোই কেটে যায় দিন এভাবেই!
রাত ৯ টা,
হঠাৎ সুজয়ের মেইল। যাক কল রেকর্ড পাওয়া গেছে।
কল রেকর্ড গুলোতে চোখ বুলাতেই আমি ভিষণ রকম অবাক হলাম। এতো বড় একটা জিনিস অনায়াসেই মি. রিয়াদ আড়াল করে গেছেন!!