অরণ্যবহ্নি পর্ব-৯

0
869

#অরণ্যবহ্নি
||শেষ পর্ব|| (১)
– ঈপ্সিতা শিকদার
সূর্য উদিত হচ্ছে পূর্ব আকাশে। নামাজ পড়ার পর শুয়েও আজ ঘুম নেই চোখে। উত্তেজনা, উদ্দীপনা, কৌতূহল, বিস্ময় খেলা করছে তার নয়নে। নিজেকে শান্ত করে মিহিরুন্নিসা বানুর কামরার দিকে অগ্রসর হয়। তার আরও কিছু জানার আছে।

দরজায় করাঘাত করতেই দরজা খুলে দেয় আবেগ। তাৎক্ষণাৎ তাকে জড়িয়ে ধরে চুমু খায় কপোলে। শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।

“মায়াবালিকা! মায়াবালিকা! I’m so happy my heart today! এতো বছর গতরাতে আমি নিজের নিয়ন্ত্রণে ছিলাম।”

চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে থাকেখাণিক ক্ষণ সামায়া। লাজ ও অনুভূতির অন্যরকম দহনে তার বক্ষ খানা কাঁপছে। পিটপিট করে চোখ খুলে তাকায়। ততোক্ষণে আবেগও নিজের অনুভূতি নিয়ন্ত্রণে এনে ফেলেছে।

“সামু! আমার বুড়িমা! তোর মাকে আমি সবসময় বলতাম তুই বড়োই সৌভাগ্যবতী। দেখ তুই আমার বাড়ির সৌভাগ্য ফিরিয়ে আনলি বোন। জানিস, কাল প্রথম বারের মতো ঐ অপশক্তি হেরেছে, আবেগের নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ ছিল।”

সকল রোমাঞ্চকর ভাবনার জলাঞ্জলি দিয়ে একঝাঁক সুখানুভূতি জেগে উঠে দিদার কথায়। দিদার হাত চেপে ধরে উৎসুক গলায় জিজ্ঞেস করে,
“তুমি সত্যি বলছো তো দিদা? আবেগ ভাই সুস্থ হয়ে গিয়েছে! কীভাবে?”

চুপ করে যান মিহিরুন্নিসা বানু। ধীরে ধীরে মাথা নাড়েন।

“সমস্যা পুরোপুরি যায়নি হয়তো। আলহামদুলিল্লাহ, তবে একদম গা ঝাড়া দেওয়া যায় না এটুকুতে। তবে এই রাক্বীগুলোর উপায় ভালোই কাজ দিচ্ছে। গতকাল তোকে রেখে আমরা রাক্বীর বলা জায়গায় গিয়েছিলাম, তাঁর কথা মোতাবেক কিছু নিয়ম-কানুন করি।”

“নিয়মকানুন?”

“হুম। আমরা সেখানে গেলে বড়ো রাক্বী সাহেবের সাথে সাক্ষাৎ হয়। বড়োই শান্ত ও স্বল্পভাষী মানুষ তিনি। কুশলবিনিময় করে বিভিন্ন সূরা-কালাম পড়তে শুরু করেন। ঐ দানবীয় শক্তিটি নিজের প্রকৃত রুপে আসে। আল্লাহর প্রতিটি বাণী পাঠের সাথে সাথে আর্তনাদ করতে করতে বের হয়ে আসে আবেগের দেহ হতে। ধীরে ধীরে হাওয়ায় মিলিয়ে যায়।

তবে গায়েব হওয়ার আগে তীব্র আক্রোশ নিয়ে আবেগকে হুমকি দেয়,
“You will never be left alone. We will chase you until you stop breathing. Complete the agreement that was made in the past. Remember, Satan and we are always waiting for the pious soul. (তোকে কখনওই একা ছাড়া হবে না। আমরা তোকে তাড়া করব, যতোক্ষণ তোর শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ হয়। সম্পূর্ণ কর চুক্তি, যা করা হয়েছিল অতীতে। মনে রাখবি শয়তান এবং আমরা সবসময় অপেক্ষা করছি পবিত্র আত্মাটির উদ্দেশ্যে।)

রাক্বী সাহেব এরপর আবেগের গলায় একটি সূতলি বেঁধে দেয়। কিছু পড়ে তার কপালে ফুঁ দেয়। উপদেশ দেন,
” সর্বদা ওজু রাখবে, খুব বেশিক্ষণ ওজু ছাড়া থাকবে না। সবসময় আল্লাহর নামের জিকির করবে। বেশি বেশি নফল ইবাদত করবে, নফল সালাত আদায় করবে। যখনই সময় পাবে তখনই তিন ক্বূল ও আয়াতুল কুরসি পড়ে নিজের দেহে ফুঁ দিবে, বিশেষ করে ঘুমানোর আগে। শায়েখ সুদাইস রুকাইয়া শুনবে। আশা করি, ঐ শয়তানি শক্তি আর কাবু করতে পারবে না তোমাকে। আর বাড়ির প্রতি কোণে আয়াতুল কুরসি ও তিন ক্বূল পড়ে পানিতে ফুঁ দিয়ে সেই পানি ছিটিয়ে দিয়েন। তাহলে বাড়িতেও তাদের অস্তিত্ব থাকবে না আশা করছি।”

আমি স্বস্তির শ্বাস ফেলি। প্রশ্ন করি,
“কিছু মনে না করলে ভাইজান, এবার কি তাহলে এই সমস্যাটা পুরোপুরি সেরে গেছে?”

“সমস্যা যেহেতু গভীর এতো দ্রুতো সমাধান হবে না। আপাতত চিকিৎসা এটাই। আসলে আপনার ছেলে যেই শিরকে শামিল হয়েছিল, সেটি বেশ কিছু জ্বিন ও মানুষের তৈরি একটি সংস্থা, যারা শয়তানের উপাসনার করে। তারা কালো জাদুর সহায়তা নেয়, সিদ্ধই বলা চলে জাদুবিদ্যা। তাই এতোটা ক্ষমতা। যেই জায়গাটায় তাদের আস্তানা সেখানে যাওয়া প্রয়োজন সব বন্ধ করতে। আমাদের বেশ অভিজ্ঞ একজন রাক্বী আমেরিকায় বাস করে। তার সাথে আমরা আলোচনা করবো এ বিষয়ে।”

এটুকুই কথা হয়। তবে আমার দাদুভাইটা যে মুক্তি পেয়েছে তাই-ই বা কম কীসে? আল্লাহর রহমত থাকলে এই সমস্যার সমাধানও হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।”

“ইনশাআল্লাহ দিদা। আবেগ ভাই আবারও আগের মতোন হয়ে যাবে। আমাদের পরিবারের উপর থেকে এই কালরাত্রি কেটে যাবে।”

“আমিন। তোরা কথা বল বুড়িমা, আমি একটু সকালের নাস্তার দিকটা দেখে আসি। এতো আনন্দের দিন, একটু ভালো খাবার-দাবার নাহলে হয়!”

মিহিরুন্নিসা বানু আনন্দে গদগদ হয়ে বের হয়ে যান। থেকে যায় শুধু আবেগ ও সামায়া। পরিবেশের নীরবতা ভাঙে সামায়ার কণ্ঠে।

“আবেগ ভাই, একটা প্রশ্ন করবো। আমাকে বিয়ে কেন করেছেন? সমস্যাটা নাহয় বুঝলাম, তবে তার সাথে আমাকে বিয়ে করার যুক্তি কী? আর তুমি কি সত্যি মানুষ খুন করতে ঐ রকম বিভৎস ভাবে! দিদা যে বলল আমার দেখা ঐ রাত্রির দৃশ্য সত্য।”

প্রশ্নগুলো শুনে আহত দৃষ্টিতে তাকালো আবেগ। তার দু’নয়নে অন্যরকম এক বেদনার ছাপ। তবে কি আঘাত পেল সে এই ছোট্ট দু’খানা প্রশ্নে?

“এক্সরসিজমের জন্য বিখ্যাত ফাদার মাইকেলের সাথে অনেক দিন ধরে এই অপশক্তির সাথে লড়ার জন্য আমাদের সহায়তা করছেন। তিনি কানাডায় আমাদের এপার্টমেন্টের কাছাকাছি একটা চার্চে ফাদার ছিলেন, তাই আমাকে খুব ভালোভাবেই চিনতেন। কয়েক বছর হবে আমেরিকায় শিফট হয়েছেন। আমার এই কেইসটি উনিই হ্যান্ডেল করছিলেন। উনি একটি গোয়েন্দাও রেখেছেন ঐ গ্রুপের আস্তানার খোঁজ করতে। আর উনিই এই আইডিয়াটি বের করেছিলেন শয়তান ও এই গ্রুপ মেম্বারদের ধোঁকা দেওয়ার জন্য। আসলে বাবা তাদের সাথে যে ডিলে গিয়েছিল সেটা ছিল একটি লিখিত কন্ট্রাক্ট পেপার Satanic Culture এ এর নাম Satan’s Contract। সেটায় নির্দিষ্ট ভাবে লিখা ‘প্রথম স্ত্রীর হতে প্রাপ্ত প্রথম সন্তান’। ফাদার মাইকেলের পরিকল্পনা ছিল আমার ধর্মীয় ভাবে বিয়ে না করানো শুধু আইনত বিয়ে করানো একটি মেয়ের, এতে পূর্ণ দৃষ্টিতে তারা আমাদের বিয়েকে বৈধ মানবে, কনফিউশন তৈরি হবে তাদের মধ্যে। ফলে সেই মেয়ের কোনো প্রকার ভীতি বা ঝুঁকি থাকবে না। এরপর সেই মেয়েকে তালাক দিয়ে দিলে হয়তো তারা আমায় তাড়া করা ছেড়ে দিবে যেহেতু প্রথম স্ত্রী থেকে কোনো সন্তান পাইনি। যদিও এটা নিছকই একটা ধারণা ছিল, আদৌ এই পরিকল্পনা কাজে দিত না কি এ নিয়ে ফাদার মাইকেলও নিশ্চিত ছিলেন না। এই জন্যই তোকে জাস্ট কাগজ-কলমে বিয়ে করে কয়েক মাস পর তালাক দেওয়ার চিন্তা-ভাবনা ছিল দিদার। না, জীবিত কেউ আমার দ্বারা খুন হয়নি, শুধু একবার ছাড়া। দিদা লাওয়ারিশ লাশ কিনে রাখতো ঐ ঘরটিতে যাতে কারো ক্ষতি না হয়।”

প্রচণ্ড মেজাজ খারাপ হচ্ছে সামায়ার এখন। বিয়ে করার পরিকল্পনা নাহয় মানা যায়, তবে তালাক! এই মানুষটি কি জানে না একবার তালাক হয়ে গেলে সেই নারীকে আর বিবাহ করা যায় না যতক্ষণ না নারীটি অন্যকারো সাথে প্রকৃতপক্ষে সংসার করে কোনো কারণে আলাদা হয় বা বিধবা হয়? তার কি ইচ্ছে কোনো মূল্য নেই এই পুরুষটির কাছে? বাবা নাহয় নিজের ওয়াদার কাছে বাধ্য ছিল, দিদা নাহয় পৌত্র প্রেমের কাছে, তার তো জানাতে বাধা ছিল না?

রাগে সংকুচিত চোখ খানার ক্ষিপ্ত দৃষ্টি নিক্ষেপ করে ধপাধপ পা ফেলে বেরিয়ে যায় সে। এদিকে আবেগও হীনমন্যতায় ভুগে। মেয়েটিকে বিনা অনুমতিতে এতো জঘন্য পরিকল্পনার অংশ করে পাপ বৈকী কোনো পুণ্যের কাজ তো করেনি সে।

___

কেটে গিয়েছে তিন দিন। সবকিছুই স্বাভাবিক রয়েছে, ঐ অপশক্তির অস্তিত্ব যেন বিলীন হয়ে গিয়েছে তাদের জীবন থেকে। মিহিরুন্নিসা বানুও স্বস্তির শ্বাস ফেলে চিন্তামুক্ত হয়ে বসেছেন, বাকিদের মনের আশাও তা-ই। যদিও সামনে কী করবেন জিজ্ঞেস করতে বড়ো রাক্বী সাহেবকে দু’দিন ধরে কল করছেন, কিন্তু নাম্বার বন্ধ শোনাচ্ছে প্রতিবার।

ভোর নাগাদই রাক্বীদের একজন আজ হুট করেই বাড়ি এসে হাজির। মিহিরুন্নিসা বানু প্রথমে অবাক হলেও পরবর্তীতে স্বাগতম জানান।

“আসেন, বাবাজান। আসেন। ঘরে আসেন। শকুন্তলা, দ্রুতো নাস্তা-পানির ব্যবস্থা করো। বাড়িতে মেহমান এসেছে।”

“না, না, না, আমি কিছু খাবো না। খুব গুরত্বপূর্ণ কথা আছে, একটু যদি একাকী কথা বলতে পারতাম তবে…”

রাক্বীকে অন্যরকম দেখাচ্ছে, যেন প্রচণ্ড ঘাবড়ে আছেন, চিন্তিত। মিহিরুন্নিসা বানুর মন এবার কু ডাকছে। তিনি ইশারায় সায় জানিয়ে রাক্বীকে নিয়ে নিজের কামরার দিকে অগ্রসর হন। আবেগ ও সামায়াকে ডাক দিতেও ভুলেন না।

“জী, বলো বাবাজান। কী বলতে এসেছো?”

“আমি বলছি, তবে আপনারা ঘাবড়াবেন না। বড়ো রাক্বী সাহেব প্রচণ্ড অসুস্থ হয়ে পড়েছেন ঐ শয়তানি শক্তির দরুন। উনি আর তাদের কালো জাদুকে আটকে রাখতে পারছেন না।”

“কী বলছো এসব বাবা! তোমরাই তো ভরসা, তোমরাই যদি হাত ছেড়ে দাও তাহলে…”

“না, না, আমরা আপনাকে একা ছেড়ে দিচ্ছি না। তবে আপনাদের খুব শিঘ্রই সেই দল ও তাদের আস্তানাকে খুঁজে বের করতে হবে, সবকিছু পূর্ণ রূপে শেষ করার জন্য। তা নাহলে ধ্বংস তেড়ে আসছে এদিকে। আমাদের হাতে কিছু করার থাকছে না।”

মিহিরুন্নিসা বানু ব্যথিত মনে নজর ঝুঁকিয়ে বসে থাকে। আবেগ নির্বাক, হতাশ, তার যেন কিছুই বলার নেই। সামায়া ফ্যালফ্যাল দৃষ্টিতে তাকিয়ে।

সোফায় বসে থাকা মানুষটির বুঝতে বাকি রয় না এ পরিবারের মনের দশা। কোনোরকম বিদায় নিয়ে বের হয়ে যান তিনি।

আবেগও বের হয়ে যায় তাঁর সঙ্গে সঙ্গে। সামায়া দেখতে পায় দিদা মেটে রংয়ের আঁচলে চোখের জল মুছছেন। সান্ত্বনা দিতে যেয়েও দিতে পারে না। ধীর পায়ে বের হয়ে যায়।


অদূরে কেচিগেটে গা ঠেকিয়ে সিগরেটে ঠোঁট পুড়াচ্ছে আবেগ। অশ্রু ঝরছে রমণীর এই দৃশ্য দেখে। এই মানুষটিকে এতোটা হতাশ এই প্রথমবারই তার দেখা।

“Satan’s” মনে মনে সে গ্রুপটির নামটি আওড়ায়। হুট করে তার মাথায় অন্যরকম এক চিন্তা তাড়া করলো। ছুটে গেল আবেগের কামরায়।

গভীর মনযোগ সমেত লেপটপ নিয়ে বসলো। অনেকক্ষণ ঘাটাঘাটি করার পরও কিছু পাচ্ছে না। হতাশ হয়ে লেপটপ সরিয়ে ফেলল। পরে নিজেকেই নিজে প্রেরণা দিল মনে মনে।

“সামু, একটা ওয়েবসাইট-ই তো খুঁজতে হবে। এ আর এমন কী! সামান্য একটা ওয়েবসাইট-ই যদি ক্র‍্যাক না করতে পারিস তাহলে কি লাভ কম্পিউটার সাইন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়ে?”

নিজেকে শান্ত করে আবারও কাজে লেগে পড়ে রমণী। অনেক প্রচেষ্টার একটি থার্ড পার্টি ওয়েবসাইট থেকে এই নামে একটি ওয়েবসাইটের লিংক পায় সে, সম্ভবত এই গ্রুপটির ওয়েবসাইট-ই এটি। তবে লগ ইন করতে কোডের প্রয়োজন।

সামায়া ভাবতো লাগলো কী কোড হতে পারে। তার আন্দাজ করা কোনো কোডই কাজ করছে না। আবেগকে কল করে ঘরে আসতে বলল সে।

“তুই ডেকেছিস আমায় মায়াবালিকা?” দরজা খুলতে খুলতে প্রশ্ন করলো আবেগ।

“হুম, আঙ্কেলের সুইসাইড নোট আর কন্ট্রাক্ট পেপার ঐ চুক্তির মানে Satan’s Contract Paper তোমার কাছে? আই নিড দ্যাট, আমাকে দাও।”

উত্তেজিত কণ্ঠ সামায়ার। আবেগকে প্রশ্ন করার সুযোগ না দিয়ে আবারও একই কথা বলে উঠে। যুবকও না ঘাটিয়ে নিজের আলমারির লকার থেকে ফাইলটি বের করে দেয়। চুক্তিপত্রটি ও সুইসাইড নোটটি অনেকটা সময় নিয়ে পড়ে। একটি নোটপ্যাড নিয়ে বসে সে। প্রায় ঘণ্টা চারেক পর্যবেক্ষণ করার পর দু’টি কোড বের করে ফেলে সে।

‘বিসমিল্লাহ্‌!’ উচ্চারণ করে প্রথম কোডটি দেয়। চোখ-মুখ খিঁচে ‘Done’ এ ক্লিক করে। টুং শব্দে নিচে লিখা উঠে ‘incorrect’। চাপা দীর্ঘশ্বাস নির্গত হয় তার দেহ থেকে। পূর্ণ আশা নিয়ে দুরুদুরু মনে দ্বিতীয় কোডটি দেয়, তবে সেটিও ভুল বলে শো করা হয়।

রাগে লেপটপটা ছুড়ে ফেলতে যেয়েও ফেলে না সামায়া। সেই মুহূর্তেই যে তার একটি বিষয় খেয়াল হয়। ফোন থেকে ক্যালকুলেটর বের করে কিছু একটা ক্যালকুশেন করে নতুন একটি কোড বের করে তা লিখে সে শূন্যস্থান। কয়েক সেকেন্ডের মাঝেই লগইন হয়ে যায় সে এই ওয়েবসাইটটি।

“ইয়েহ!” উত্তেজনায় লাফাতে শুরু করে কন্যা। আবেগ চমকিত, হুট করে হলোটা কী মেয়েটার?

“এই তুই এমন করছিস কেন? কী হয়েছে?”

“আরে আবেগ ভাই, আমি ঐ গ্রুপের ওয়েবসাইটে লগইন করে ফেলেছি। এখন কোনো জায়গা থেকে আসলে অপারেট হচ্ছে তা জানতে দেরি হবে না। আপনি একটা পার্সোনাল ডিটেক্টিভ রেখেছিলেন এই গ্রুপের অবস্থান নিশ্চিত করতে পারবে। তারা যেহেতু ডিটেক্টিভ তাদের কাছে নিশ্চয়ই হ্যাকার সহ অন্যান্য দরকারী মানুষ থাকবে।”

আবেগ বিস্মিত, যে কাজটি ডিটেক্টিভরা এতোদিনে করতে পারেনি তা এই মেয়ে করে ফেলল? তার বিস্ময় কাটিয়ে ব্যক্তিগত গোয়েন্দাকে কল করার জন্য তাড়া দেয় সামায়া। সেও যন্ত্রচালিত মানবের ন্যায় আদেশ পালন করে। সামায়া ডিটেক্টিভের সাথে কথা বলে তাকে ওয়েবসাইটটির লিংক এবং কোডটি জানায়।

কল ডিসকানেক্ট হতেই আবেগ তার দিকে এগিয়ে আসে। হুট করে তাকে সামনে দেখে চমকে যায় সামায়া।

“আপনিও না আবেগ ভাই! ভয় পায়িয়ে দিয়েছিলেন!”

“এসব প্যাঁচাল বাদ দিয়ে বল, তুই এই কোড আর ওদের ওয়েবসাইট পাইলি কেমনে? ডিটেক্টিভ তো কতো বছর ধরে রাখলাম, ওরা পারলো না আর তুই…”

“উহু, ওয়েবসাইট তারা খুব আগেই খুঁজে বের করে ফেলেছিল। বাট কোড আর ইউজারন্যাম ক্র‍্যাক করতে পারছিল না। না পারাটাই স্বাভাবিক, এগুলার সিকিউরিটি কোড তো আর যেমন তেমন না। তবে আপনি যদি তাদের এই কন্ট্রাক্ট পেপার আর সুইসাইড নোট দিতেন তাহলে খুব ইজিলি বের করে ফেলতো। নিশ্চয়ই তা দেননি?”

না বোধক মাথা নাড়ায় আবেগ।
“ঐখানে লিখা ছিল? কোথায়? আমি তো দেখলাম না।”

“ডিরেক্ট লিখাছিল না। বাট বোঝা সম্ভব। আঙ্কেলে যে চুক্তিপত্রে সাইন করেছিল তার পেজ নম্বর পাঁচ দেওয়া, অথচ তার আগে কোনো পেজ নেই। এরপর ওই গ্রুপের নাম Satan’s, এই বর্ণগুলোর ক্রমিক নম্বরগুলো যোগ করে পাঁচ দিয়ে গুণ করলে কোড পাওয়া যায়।

অবশ্য যোগ, ভাগ, গুণ, পাশাপাশি রেখে দেখেছি। আর ইউজারন্যাম? এই গ্রুপের মেম্বার নিজেদের Satan’s Advocate বলে পরিচয় দিত বা দেয় বিভিন্ন আর্টিকেল পড়ে দেখলাম। তো কয়েকবার দিয়ে দিয়ে পেলাম ইউজার নেমে Devil@dvocate_5। ইজি। এখন শুধু অবস্থান খুঁজে পেলেই হলো।”

“বাহ্ মায়াবালিকা! তোর তো অনেক বুদ্ধি হয়েছে।” গদগদবচন যুবকের।

“আমি তো সবসময়ই বুদ্ধিমান, আবেগ ভাই। আপনার চোখেই শুধু পড়লো না।”

প্রচণ্ড গর্ব নিয়ে বুক ফুলিয়ে উত্তর দেয় রমণী। অতঃপর চোখে চোখ মিলতে, দম ফাটা হাসি উভয়ের।

___

নাস্তার টেবিলে বসে আছে সবাই। খাওয়ার মতো মন-মানসিকতা নেই কারোরই, ক্ষুধা মেটাতে শুধু বসা। গতকাল রাতে আবেগের শারীরিক অবস্থা খুব খারাপ হয়ে পড়েছিল।
চলবে…
এক পর্বে কভার করতে পারছি না। আগামীকাল পরবর্তী ভাগ আসবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here