হৃৎপিণ্ড_২ (দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ) পর্ব ৬

0
410

#হৃৎপিণ্ড_২
#দ্বিতীয়_পরিচ্ছেদ
#পর্ব_৬
#জান্নাতুল_নাঈমা
_____________________
ইমনের বিক্ষিপ্ত আচরণ দেখে অসুস্থ হয়ে পড়লেন ইরাবতী। অসুস্থতার পরিমাণ এতোটাই তীক্ষ্ণ ছিলো যে নিজের ভারসাম্যটুকুও নিয়ন্ত্রণ করতে পারলেন না৷ জ্ঞান শূন্য হয়ে মেঝেতে ঢলে পড়ার উপক্রম হলেন৷ আল্লাহ সহায় ছিলেন বিধায় পড়ার পূর্বেই দিহান ধরে ফেললো তাকে। তৎক্ষনাৎ থমকে গেলো ইমন৷ ছুটে এসে জাবটে ধরলো ইরাবতীকে। শঙ্কিত গলায় দিহানকে বললো,

“দিহান ডক্টর আংকেলকে ফোন কর কুইক। ”

ইরাবতীকে পাঁজাকোল করে ত্বরান্বিত হয়ে উপরের দিকে ছুটে চললো ইমন পিছন পিছন যায় সায়রীও। দিহান ডক্টরকে ফোন করার পর আকরাম চৌধুরীকেও ফোন করে। মিনিট কয়েকের ব্যবধানে আকরাম চৌধুরী বাড়ি ফিরে আসেন৷ মুরাদ সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো মুসকানকে নিয়ে রাতেই বেরিয়ে যাবে। কিন্তু ইরাবতীর অসুস্থ হয়ে পড়ায় বিবেকে সায় দিলো না৷ মুসকানও পরিস্থিতি বুঝে নিশ্চুপ রইলো। মানসিক দিক থেকে বিধ্বস্ত প্রায় হয়ে গেলো ইমন। ডক্টর এসে চেকআপ করে রোগী সহ সবাইকে বেশ বকাঝকা করলেন। ডক্টর সাহেব ইমনের দিকে তাকিয়ে বললেন,

“কি ব্যাপার ইমন তোমার দেখছি নিজের মায়ের দিকে একদম নজর নেই ব্লাড প্রেশার বেড়ে ১৪০/১০০। ঠিকঠাক প্রেশারের ওষুধটাও দেখছি খাওয়াচ্ছো না মা’কে। ”

আকরাম চৌধুরী ইরাবতীর বাম পাশেই বসা ছিলেন। তিনি উৎকণ্ঠা হয়ে বললেন,

“ইরা প্রতিদিন সকাল ন’টায় প্রেশারের ওষুধ খায় আজো খেয়েছে এ ব্যাপারে তো অনিয়ম হচ্ছে না সাইফুল। ”

ডক্টর সাইফুল চিন্তিত হয়ে ইরাবতীর দিকে তাকালেন । বললেন,

“কি ভাবি এতো কি চিন্তা করেন? কোন কিছুর তো অভাব নেই৷ আমার বন্ধুর মতো খাঁটি জীবনসঙ্গী পাশে আছে একটামাত্র ছেলে সেও স্টাবলিশড আর কি চিন্তা হুম? ”

ইরাবতী দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে আকরাম চৌধুরীর দিকে নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে তাকালেন। বললেন,

“আমি একা থাকতে চাই। ”

আকরাম চৌধুরী বিমূঢ় মুখে সাইফুলের দিকে তাকালো। সাইফুল ইশারায় তাকে চিন্তা করতে নিষেধ করে ইরাবতীর দিকে তাকিয়ে বললো,

“সে আপনি থাকতেই পারেন ভাবি তবে শর্ত একটাই পুরো রিল্যাক্স মুডে থাকতে হবে। আর অবশ্যই অবশ্যই এই ওষুধ গুলো খেয়ে নিতে হবে। ”

সাইফুল সাহেব কিছু ওষুধ লিখে দিলেন। যার দু’টো অলরেডি ইরাবতীর মেডিসিন বক্সে ছিলো। যে একটি ছিলো না সেটার জন্য ইমন দিহানকে পাঠালো ফার্মেসীতে৷ সাইফুল চলে যাওয়ার পূর্বে ইমনকে রুমের বাইরে নিয়ে গিয়ে বললো,

” কি ইয়াং ম্যান জীবন তো স্যাটেল এবার ঘরে বউ আনতে হবে তো। ভাবি যে এমন অসুস্থ সেদিকে এবার নজর দাও৷ ক্যারিয়ার নিয়ে তো অনেক ভাবলে এবার না হয় পরিবার নিয়ে ভাবো? ”

“জি আংকেল ইনশাআল্লাহ আল্লাহ চাইলে অফিস জয়েন করার আগেই মায়ের ইচ্ছে পূরণ করবো। ”

সাইফুল ইমনের কাঁধে মৃদু থাপ্পড় দিয়ে বললো,

“সাব্বাস ব্যাটা তাহলে শিঘ্রই বড়োসড়ো দাওয়াত পাচ্ছি। তোমার ছুটি তো প্রায় শেষের দিকে শুনলাম।”

” হ্যাঁ ঐ আর কি দু’মাস তেরোদিন আছে আর। ”

“ওকে মাই বয় এর মধ্যেই আশা রাখছি তোমার বাবা-মায়ের ইচ্ছে পূরণ হবে। বোঝোইতো একটামাত্র ছেলে তাদের বয়সতো বেশ হলো এবার বিয়েটা করে নেওয়া উচিত। তুমি চাইলে আমি নিজে তোমার জন্য পাত্রীর খোঁজ করবো। বয়স যদিও বেশী তবে চেহেরার চাকচিক্যতে সেটা বোঝার উপায় নেই। তুমি অবশ্যই রূপবতী, গুণবতী মেয়ে ডিজার্ভ করো। ”

কথাগুলো বলেই বিদায় নিয়ে চলে গেলেন ডক্টর সাইফুল। মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো ইমনের। ডক্টর আংকেল তাকে নিয়ে ঠিক প্রশংসা করে গেলো নাকি ইনডিরেক্টলি অপমানও করে গেলো বোধগম্য হলো না। আপাতত মা’কে নিয়ে সে ভীষণ চিন্তিত তাই ঠুনকো এই বিষয়টি নিয়ে মাথা না ঘামিয়ে রুমে চলে গেলো।
.
মায়ের পাশে দীর্ঘ সময় বসে ছিলো ইমন। দিহান ওষুধ নিয়ে আসার পর সায়রী ইরাবতীকে খাওয়িয়ে ওষুধ গুলো খাওয়িয়ে দেয়। মুরাদও তখন ইমনের পাশেই বসা ছিলো৷ মুসকান একবার এসেছিলো ইরাবতীকে দেখতে ইরাবতী তার সঙ্গে সুবোধ্য আচরণ না করায় মাথা নিচু করে রুম ত্যাগ করেছে। বিষয় টা সকলের দৃষ্টিতে পড়লেও এ নিয়ে কেউ টুঁশব্দ করেনি। রাত ন’টার দিকে ঘুমিয়ে যায় ইরাবতী। তার পাশে বসা ছিলো সায়রী আর ইমন৷ মুরাদ আর দিহান তখন ছাদে বসে আলোচনা করছে কিভাবে কি হবে। মুসকানের জায়গায় আজ অন্য কোন মেয়ে থাকলে বিষয় টা অন্য রকম হতো৷ কিন্তু মুসকান মুরাদের কলিজার টুকরা বোন। তার প্রতি বিন্দু পরিমাণ জোর প্রয়োগ করাও বরদাস্ত করবে না মুরাদ৷ এদিকে বন্ধুর বোনের প্রতি মারাত্মক পর্যায়ে দুর্বলতা অনুভব করেও ফেঁসে গেছে ইমন৷ না পারবে জোর প্রয়োগ করে কাছে টানতে আর না পারবে স্বেচ্ছায় দুরে সরিয়ে দিতে৷

আকরাম চৌধুরী সায়রী কে বললো,

” মা তুমি ওদের নিয়ে রাতের খাবার খেয়ে নাও। সত্যি তোমাদের মতো বন্ধু আজকাল খুঁজে পাওয়া যাবেনা৷ সুখে, দুঃখে এভাবেই একে অপরের পাশে থেকো। ”

লজ্জা পেয়ে গেলো সায়রী। ইমনের দিকে আড় চোখে তাকিয়ে আবার আকরাম চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিলো। ইমন নিশ্চুপ হয়ে ওঠে দাঁড়ালো তারপর রুম ছেড়েও বেরিয়ে গেলো। সায়রীও সৌজন্যসূচক হেসে বেরিয়ে গেলো।
.
মুরাদ আর দিহানকে ডাকতে ছাদে গেলো সায়রী। এদিকে ইমনের শরীর ঘেমে টিশার্ট গায়ের সঙ্গে লেপটে রয়েছে। তাই কাপড় পালটানোর তাগিদে নিজের রুমে ঢুকলো। তৎক্ষনাৎ বক্ষস্থল কেঁপে ওঠলো তার৷ মুসকান দু’হাতে মাথা চেপে ধরে তার বিছানার মাঝ বরাবর বসে আছে। কাতর দৃষ্টিতে কয়েক পল মুসকানের দিকে চেয়ে রইলো ইমন। তারপর কি মনে করে যেনো নিজেকে ধাতস্থ করে নিয়ে বড়ো বড়ো পা ফেলে কাবার্ড খুলে নিজের কাপড় নিয়ে রুম ছেড়ে বেরিয়ে গেলো। ইমন বেরিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই মুখ তুলে সম্মুখে তাকালো মুসকান৷ ইমনের উপস্থিতি বুঝতে পেরে বুকের ভিতর ঢিপঢিপ করছে তার। ইরাবতীর অসুস্থতীর কথা শুনে সিচুয়েশন বুঝে রাগ অনেকটাই কমে গেছে তার। অথচ তার রাগের নিয়ন্ত্রণহীনতা এবং মুখে লাগাম না টানায় কারো হৃদয়ে যে তোলপাড় চলছে এ খবরটি সে জানতেও পারলো না।

ডায়নিং টেবিলে সকলেই বসেছে সবার শেষে এলো মুরাদ এবং মুসকান৷ যদিও মুসকান আসতে চায়নি মুরাদ বুঝিয়ে শুনিয়ে পরিস্থিতি বিবেচনা করার কথা বলে জোর পূর্বক নিয়ে এসেছে তাকে। মুরাদের পাশেই বসলো মুসকান তার পাশে দিহান। সম্মুখের চেয়ারে ইমন এবং সায়রী বসেছে৷ ইমন অত্যন্ত নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে নিচের দিকে তাকিয়ে খাবার গিলছে। দিহান আর মুরাদ টুকটাক কথা বললেও আর কারো মুখে কোন শব্দ নেই। পরিস্থিতি কেমন গুমোট ধরে আছে। সকলের ভিতরেই হয়তো চলছে প্রবল উত্তেজনা। শুধু একজনের হৃদয়ই হয়তো ক্ষতবিক্ষত হয়ে আছে। আর সে হলো ইমন চৌধুরী। হবে নাইবা কেন মুসকান তার ভালোবাসার মানুষ। যাকে কিনা নিজের হৃৎপিণ্ড বলে দাবি করে সেই মানুষ টি আজ বলেছে, সে তাকে বিয়ে করতে চায়না। যদি জোর পূর্বক তার সাথে বিয়ে দেওয়া হয় তাহলে সে সুইসাইড করবে! এ পৃথিবীতে অহরহ মানব মানবী নিজেদের ভালোবাসার মানুষকে জীবনসঙ্গী হিসেবে পাওয়ার জন্য অধীর আগ্রহে বসে আছে। চাতক পাখির মতো অপেক্ষা করছে কবে তারা তাদের ভালোবাসার মনুষটিকে নিজের করে, নিজের বউ বা স্বামী রূপে পাবে। অথচ মুসকান কিনা তার ভালোবাসার মানুষ’কে স্বামী রূপে পেতে চায় না।জোর পূর্বক এই প্রাপ্তি কেউ দিলে সে আত্মহত্যার মতো জঘন্য পাপ করবে! মাথা ঘুরে এলো ইমনের। গলায় খাবার আঁটকে কেশেও ওঠলো। সঙ্গে সঙ্গে আঁতকে ওঠলো মুসকান। চোখ তুলে ইমনের দিকে তাকাতেই দেখলো সায়রী ইমনের মাথায় পিঠে মৃদু থাপ্পড় দিচ্ছে। দিহান ওঠে গিয়ে এক গ্লাস পানি ভরেও এগিয়ে দিলো। ইমন পানিটা কোন মতে খেয়ে নিয়ে খাবার ছেড়ে উপরে ওঠে গেলো। একবারের বেশী কেউ ডাকার সাহসও পেলো না। সকলেই নিরব হয়ে বসে নিজেদের খাওয়ায় মনোযোগ দিলো। শুধু মুসকানই টলমল দৃষ্টিতে খাবার নাড়াচাড়া করতে থাকলো। তা দেখে মুরাদ নিচু স্বরে বললো,

“খাচ্ছিস না কেন খেয়ে শুয়ে পড় গিয়ে সকাল সকালই চলে যাবো। রাতটা কষ্ট হলেও থাকতে হবে।”

বুকটা হুহু করে ওঠলো মুসকানের। খাবার ছেড়ে ওঠে পড়লো সেও। বললো,

” আমার বমি পাচ্ছে একটুও খেতে পারবো না। ”

উপর থেকে এ দৃশ্য ইমন দেখে রাগে হনহনিয়ে ছাদে চলে গেলো।
.
পরেরদিন সকাল সকাল বাড়ি ফিরে গোসল সেরে রেডি হয়ে নিলো মুসকান৷ তিন বছর পর দ্বিতীয় বারের মতো শাড়ি পড়লো সে। রিমি যখন তাকে শাড়ি পড়িয়ে দেওয়ায় মগ্ন ছিলো সে তখন অতিতের সেই সব স্মৃতিচারণ করছিলো। সে খুবই ভাগ্যবতী নারী৷ কিশোরী বয়সেই এসেছিলো তার প্রথম প্রেম, প্রথম প্রেম হোক বা ভালোবাসা, বা প্রথম স্পর্শ সবটাই সে পেয়েছে ইমন চৌধুরীর থেকে৷ তবে তাদের ভালোবাসায় সব থেকে স্মরণীয় যেটা ছিলো সেটা হচ্ছে সে বয়সে তার প্রথম শাড়ি পড়া হয়েছিলো ইমন চৌধুরী দ্বারাই৷ ইমন ইউটিউব দেখে শাড়ি পড়ানো শিখেছিলো শুধুমাত্র তাকে পড়িয়ে দেবে বলে। এটা জানার পর নিজে থেকে শাড়ি পড়ার ট্রাই কখনোই করেনি। যেখানে ইমন জানে শাড়ি পড়াতে সেখানে তার শেখার প্রয়োজন কী? কালো রঙের সিম্পল একটি শাড়ি পড়েছে মুসকান। যার পুরো জমিন জুরেই কালো। সোনালী পাড়ের কালো শাড়িতে মুসকানকে দেখতে ভীষণ আবেদনীয় লাগছে। তার উজ্জ্বল শ্যামবর্ণটা যেনো কালো রঙে দ্বিগুণ চড়া হয়ে গেছে। সদ্য আঠারোতে পা দেওয়া তরুণীরা শাড়ি পড়া মানেই তাদের সৌন্দর্য আচমকাই কয়েক ধাপ বেড়ে যাওয়া। রিমি কুঁচি ঠিক করে দিয়ে ওঠে দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ থম মেরে চেয়ে রইলো। তারপর উচ্ছ্বসিত হয়ে বললো,

“বাব্বাহ শাড়িতে তোকে এতো জোশ লাগে মুসু। ইমন ভাইয়া তোকে এইরূপে দেখলে নির্ঘাত হার্ট এট্যাক করবে। ”

লজ্জা এবং রাগ একই সঙ্গে দু’টো অনুভূতি হলো মুসকানের৷ তাই বললো,

“বেশী কথা না বলে চুলগুলো ঠিক করে দাও আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে। ”

এক সাইট সিঁথি করে চুলগুলো খুলে ফেললো রিমি। যত্ন সহকারে আঁচড়ে দিয়ে বললো,

” শোন যতোক্ষণ রাস্তায় থাকবি চুল বেঁধে রাখবি। এতো বড়ো বড়ো চুল খুলে রাস্তায় বের হওয়া ঠিক না এক্সিডেন্ট ঘটার সম্ভাবনা থাকে। ”

মুসকান চোখে মোটা করে কাজল লাগাতে লাগাতে হুম বললো। রিমি চুপচাপ গিয়ে বিছানায় বসে মুসকানের সাজ সজ্জা দেখতে লাগলো। কাজল দেওয়া শেষে মুসকান জিগ্যেস করলো,

“আচ্ছা… গোলাপি রঙের লিপস্টিক দেবো নাকি লাল?”

” একটা দিলেই হলো দু’টোতেই তোকে বেশ ভালো মানায়। ”

“গোলাপিই দেই তাহলে। ”

পড়নে কালো শাড়ি, চোখে গাঢ় কাজল,ঠোঁটে গাঢ় গোলাপি লিপস্টিক, গলায় সাদা স্টোনের নেকলেস, কানে সাদা স্টোনের দুল, দুহাতে কালো সাদা মিশ্রণের ব্রাইডাল চুড়ি পরে সাজের সমাপ্তি ঘটিয়েও আবার আচমকা মনে পড়েছে এমন ভণিতায় ড্রেসিং টেবিলের ড্রয়ার খুলে একজোড়া নুপুর বের করে ধীরপায়ে বিছানার সামনে গিয়ে বিছানার ওপর পা তুলে নুপুর জোড়া পরে নিয়ে রিমিকে বললো,

“ভাবিজান কমপ্লিট এবার আমি যাই। ”

“তোর ভাইয়া কিন্তু স্কুলে যাওয়ার আগে পইপই করে বলে গেছে এভাবে একা একা না বের হতে। ”

” তাহলে এখন দোকা পাবো কোথায় অদ্ভুত! ”

” দিহান ভাইয়া নিতে আসবে তোকে। ”

তাহলে ফোন দাও আমার ফোন তো আমি ভেঙে চূর্ণবিচূর্ণ করে দিয়েছি বলেই কুটিল হাসলো। রিমি সন্দিহান দৃষ্টিতে মুসকানকে আগাগোড়া দেখে নিয়ে দিহান কে ফোন করলো। ঘটে গেলো আরেক বিপত্তি। দিহানের অফিসে কিছুক্ষণের মধ্যেই ইম্পরট্যান্ট মিটিং শুরু হবে। যার দরুণ তাকে সেখানে উপস্থিত থাকতেই হবে। তাই সে ইমনকে ফোন করে দিয়েছে যাতে সে মুসকানকে স্কুলে ড্রপ করে দেয়। এমন কথোপকথন শুনে মুসকানের বুকের ভিতর আচমকাই কিছু একটা কামড়ে ধরলো যেনো। এক ঢোক গিলে দ্রুত নিজের পার্স নিয়ে ছুটে বেরিয়ে যেতে যেতে বললো,

“কাউকে লাগবে না আমাকে পৌঁছে দেওয়ার জন্য আমি একাই যেতে পারবো। ”

রিমি ফোন কেটে এতো পিছন ডাকলো তবুও দাঁড়ালো না মুসকান গেট খুলে গেটের বাইরে দাঁড়িয়ে তবেই থামলো সে৷ সেই সাথে বক্ষঃস্থল থেকে হৃৎপিণ্ডটা বেরিয়ে আসার উপক্রমও হলো। সামনে ইমনের গাড়ি ড্রাইভিং সিটে বসে আছে ইমন। মুসকান হতভম্ব হয়ে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে নিজেকে প্রাণপণে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করে গাড়ি পাস করার জন্য উদ্যত হবে তৎক্ষনাৎ সামনের ডোর খুলে দিলো ইমন। পিছন থেকে রিমি বললো,

“মুসু কথা না বাড়িয়ে ওঠে পড়। এভাবে আজ একা যাস না। ”

এমন ব্রাইডাল লুকে একা একা যেতেও মন সায় দিলো না মুসকানের। তারওপর আজি প্রথম এভাবে সেজেছে সে। এর আগে একবারের জন্যও সাজতে ইচ্ছে করেনি৷ আজ এভাবে সাজগোজ করবে একেবারের জন্যও কখনো ভাবেনি। অনুষ্ঠানের জন্য গাউন কিনে রেখেছিলো। অথচ সকাল সকাল বাড়ি ফিরেই রিমির কাছে শাড়ি চেয়ে বসেছে। হয়তো তার অবচেতন মন সামনের এই সুপুরুষটির জন্য তার দেহকে এভাবে সজ্জিত করেছে। ভাবতেই পুরো শরীর এবং মন জুড়ে শীতল শিহরণ বয়ে গেলো। বাড়তে থাকলো বক্ষঃস্থলে কম্পমান অনুভূতি।
পাশে তাকিয়ে রিমির দিকে একপলক চেয়ে সম্মুখে তাকালো। গম্ভীর মুখে স্থির হয়ে বসে আছে ইমন৷ অতিরিক্ত ফর্সা হওয়ার দরুন গায়ে কালো শার্টটা মারাত্মক আকারে ফুটে ওঠেছে। ব্রাউন কালার কিছু চুল কপালে এলোমেলো ভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। খোঁচা খোঁচা দাঁড়িগুলো এবং ডার্ক পিঙ্ক কালারের ওষ্ঠজোড়ার দিকে তাকিয়ে এক ঢোক গিললো মুসকান। ইমন একবারের জন্যও তাকায়নি মুসকানের দিকে। অথচ মুসকান এ মূহুর্তে তাকে গিলে খাচ্ছে। মুসকান হয়তো কল্পনাও করতে পারছেনা জাষ্ট একটিবার যদি ইমন চৌধুরীর দৃষ্টিতে আজ সে পড়ে ভয়ংকর কিছু ঘটে যাবে। অন্তত একবার হলেও আজ যদি ইমন পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখতো মুসকান কে তাহলে হয়তো রিমির ভাষ্যমতে সত্যি এট্যাক হয়ে যেতো। অথচ ইমন একটিবার ফিরেও তাকালো না। নাকি সে অপেক্ষায় আছে সঠিক কোন সময়ের? ইমনের এটিটিওট খুব একটা পছন্দ হলো না মুসকানের৷ কিঞ্চিৎ অপমানবোধও করলো সে। ধীরে সুস্থে একহাতে আঁচল ধরে গাড়িতে ওঠে বসলো। রিমি ডোর ধাক্কা দিতে দিতে মুচকি হেসে বললো,

” হ্যাপি জার্নি। ”

চলবে…
গল্পটা কি ভালো লাগছে না? যদিও এই গল্পটা আমি রিল্যাক্সভাবে লিখছি মানে তেমন কোন জটিলতা দিব না। গল্পটার ক্যাটাগরিও পুরোটা রোমান্টিক হবে। মোট কথা ইমন, মুসকানকে নিয়ে মুগ্ধ কিছু অনুভূতি দিতে চাই৷ লড়াই গল্পটি ১৪ তারিখ দিব। পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত সময় পাড় করছি সেই ফাঁকে টুকটাক যা পারি লিখছিও। সকলের মন্তব্য চাই। ভালো,মন্দ যাইহোক না কেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here