#হৃদয়ের_কোণে (পর্ব ৪৩)
#নাহার
·
·
·
বাড়িতে হৈ চৈ কারণ রাফিন এবং নিরা বাড়িতে ফিরে এসেছে। সবাই বেশ খুশি। তূর্য এবং কাশফিও এসেছে। কাশফি নিরাকে হালকা ঢু মেরে ফিসফিস করে বললো,
— তা বনু জামাইয়ের সাথে এইকদিন কেমন কাটালে? আদর সোহাগ কেমন দিলো?
নিরা মুচকি হাসে। কাশফিকে হাতে চিমটি দিয়ে সরে যায়। কাশফিও হাসে। তূর্য, কৌশিক এবং রাফিন তিনজন বসে গল্প করছে। নাঈম, ফায়াজ এবং ফাহিম অনেক খুশি। ফাতেমা নিরাকে জড়িয়ে ধরে বললো,
— আমারো বিয়ে করতে মন চাচ্ছে তোমাদের বিবাহিত দুই আপুকে দেখে।
কাশফি হেসে বললো,
— বিয়ে করে নে। চাচিকে বলি তোর বিয়ের ব্যবস্থা করে দিতে।
ফাতেমা হালকা চেচিয়ে বললো,
— না। এখন না। আরো পরে।
কাশফি হো হো করে হেসে উঠে। নিরা শয়তানি হাসি দিয়ে কাশফিকে বললো,
— তা বনু তোমার গলায় লাল লাল এগুলা কিসের দাগ?
আঁচলটা একটু সরিয়ে বললো,
— এইযে এখানেও আছে। এগুলো কি?
কাশফি নিরাকে হালকা থাপ্পড় দেয় পিঠে। নিরা জোরে হেসে দেয়। কাশফি বললো,
— কালকের প্রোগ্রাম শেষ হলে রাফিন যখন তোমাকে তুলে তার ঘরে নিবে এরপর থেকে তোমারও এমন দাগ থাকবে।
নিরাকে হালকা ধাক্কা দিয়ে বললো,
— তোমার বর যা রোমান্টিক। আমিতো ভাবছি রাতে তোমার কি অবস্থা হয়।
নিরা গোপনে ঢোক গিলে। সরে যায় সেখান থেকে। মায়ের কাছে চলে যায়। নিরার মা নিরাকে জড়িয়ে ধরেন। বড়মা, ছোট চাচি দুইজনই নিরাকে জড়িয়ে ধরে। মিসেস তানজুম বললেন,
— কেমন আছিস?
— ভালো।
— আমাদের সারপ্রাইজ কেমন লাগলো তোর?
নিরা মুচকি হাসে। কিছু বললো না। নিজের রুমে চলে গেলো। দুপুরে খাওয়া দাওয়া করে নেয় সবাই। রাফিনের বাবা, মা দুজনেই আসে। নিরাকে ডাকা হয়। কিন্তু নিরা আসেনি। রাফিন নিরার রুমে যায়। নিরা বেডে গুটিসুটি মেরে বসে ছিলো। মনে হলো কিছু একটা ভাবছে। রাফিন গিয়ে নিরার সামনে বসে। নিরার মুখটা উঁচু করে ধরে বললো,
— নিচে আসছো না কেনো?
— ভয় করছে।
— কেনো?
— আপনার মা যদি আমাকে দেখলে রেগে যায়। উনি হয়ত এখন আমাকে পছন্দ করেন না। তার উপর আপনি আমাকে নিয়ে এই কদিন ঘরের বাইরে ছিলেন তাই হয়ত আরো রেগে আছেন।
রাফিন শব্দ করে হেসে দেয়। নিরা বেকুবের মতো রাফিনের দিকে তাকিয়ে আছে। রাফিন নিরার নাকে নাক ঘষে বললো,
— পাগলি মেয়ে ওই আইডিয়াটা মায়ের ছিলো। মাই আমাকে বলেছে তোমাকে এভাবে করে সবার থেকে দূরে কোথাও নিয়ে যেতে। তোমার বাড়ির সবাইকে মা মেনেজ করে সবাইকে রেজিস্ট্রি করার সেই বুদ্ধিটা দিলো।
নিরা হতবাক। তার শ্বাশুড়ি মা এতো বুদ্ধিমতি ভেবেই নিরা আরো অবাক হলো। দুজনে নিচে গেলো। নিরা তার শ্বাশুড়ি মাকে সালাম করতে গেলে তিনি বাধা দিয়ে পাশে বসিয়ে বলেন,
— পায়ে হাত দিয়ে সালাম করতে নেই। মুখে সালাম দিবে সবসময়। ঠিকাছে?
— জ্বী।
নিরা তার শ্বশুর শ্বাশুড়ি মাকে মুখে সালাম দেয়। তারপর সবাই সবকিছু ঠিক করে নেয়। কালকে কাজি ডেকে আবার বিয়ে পড়ানো হবে দুজনের। তবে অনুষ্ঠান করতে চায়না রাফিনের পরিবার। ঘরের মানুষই থাকবে। তূর্য অভিমানী স্বরে বললো,
— আমরাও থাকতে পারবো না?
সবাই হেসে দেয়। রাফিনের মা বললেন,
— তুমি এই ঘরের জামাই। কেনো থাকতে পারবে না? অবশ্যই থাকবে।
সব ঠিকঠাক। নিরার জন্য বিয়ের কাপড়, গয়না দিয়ে যায়। রাফিন চলে যাওয়ার আগে নিরার কানে কানে বললো,
— কাল বেশি সাজুগুজু করবে না। একদম নরমাল ভাবে বউ সাজবে। তোমাকে ওভাবে বেশি মায়াবী লাগে।
নিরার আরেকটু পাশ ঘেষে দাঁড়িয়ে ফিসফিস করে বললো,
— বি রেডি ফর টুমোর’স নাইট।
নিরা রাফিনের দিকে তাকালেই রাফিন ভ্রু নাচিয়ে ভিলেন মার্কা হাসি দিয়ে চলে যায়। নিরা খুব আতংকে আছে। রাফিন শুধু ভয় লাগাচ্ছে। তার সাথে কাশফি তো আছেই। কাশফিও শুধু ভয় লাগাচ্ছে নিরাকে।
রাতে সব ভাই বোন একসাথে বসে নিরার গায়ে হলুদ লাগায়। তারপর দুই হাতে সিম্পল ডিজাইনের মেহেদী লাগিয়ে দেয়।
——————————
রাফিনরা যথারীতি সময়ে চলে এসেছে। কাজি সাহেব ও এসেছেন। নিরাকেও আনা হলো। ড্রয়িং রুমের সিঙেল দুটো সোফার একটাতে রাফিনকে এবং অন্যটাতে নিরাকে বসানো হলো। নিরা লাল রঙের শাড়ি পরেছে। কাশফি আর ফাতেমা মিলে নিরাকে হালকা সাজিয়েছে। গয়না পরিয়ে মাথায় ঘোমটা দেয়ার পর নিরাকে একদম পুতুল বউ লাগছে। রাফিন নরমাল একটা লাল পাঞ্জাবি পরেছে। পাঞ্জাবির উপরে একটা বিভিন্ন রঙের মিশ্রণের কোটি পরেছে। নিরাকে দেখেই রাফিন মুগ্ধ।
কাজি তাদের বিয়ে পড়ানো শেষ করলেন। দুজনকে একসাথে বসানো হলো। তূর্য ছবি তুলছে তাদের। নিরা মাথা নিচু করে রেখেছে। তূর্য বললো,
— আরে পিচ্চি শালি মাথাটা তুলো।
নিরা হালকা মাথা তুলে। বড়রা সবাই সরে গেছে।রাফিন পেছন থেকে নিরার কোমড় চেপে ধরতেই নিরা মাথা তুলে রাফিনের দিকে তাকায়। ওই অবস্থাতেই একটা ছবি তুলে নেয় তূর্য। সবাই একবার একবার এসে এসে নিরা এবং রাফিনের সাথে ছবি তুললো। তারপর সবাই মিলে একটা গ্রুপ ছবি তুললো। সেটা তুলে দিলো তুহিন। নিরাকে কাশফি ভাত খাইয়ে দিচ্ছে। নাঈম কাশফিকে সরিয়ে দিয়ে নিজে খাওয়াতে শুরু করে। নিরার অগোচোরে নাঈম বারবার চোখ পানি মুছে ফেলছে। ফায়াজ এবং ফাহিম নিরাকে দুইটা ফুচকা খাইয়ে দেয়। নিরা খেয়াল করলো এই তিনভাই লুকিয়ে কাঁদছে। নিরা তিনজনকে ডাকলো। নিরা বললো,
— কাঁদছিস কেনো?
নাঈম ঝাপিয়ে পড়লো নিরার উপর। হাউমাউ করে কেঁদে দিলো। ফায়াজ, ফাহিমও হাউমাউ করে কাঁদছে নিরাকে ধরে। সবাই এসে এদের চাই ভাই বোনকে দেখছে। নাঈম বললো,
— আপু তুই চলে গেলে ঘরটা একদম শূন্য হয়ে যাবে। আমি কিভাবে থাকবো তোকে ছাড়া। আমি কাকে মনের কথা বললো? প্লিজ তুই যাস না। রাফিন ভাইয়াকে বলে তোদের দুইজনকে এখানেই রেখে দিবো।
ফায়াজ ফাহিম কেঁদে কেঁদে বললো,
— আপু তুই চলে গেলে রাত দুপুরে কে বাড়ি মাথায় করে রাখবে বল। আমরা কার জন্য ফুচকা বানাবো? কে আমাদেরকে নিয়ে গভীর রাতে মন ভালো করার জন্য বরফ পানি খেলবে বল।
ফাতেমা, কাশফিও নিরাকে ধরে খুব কেঁদেছে। কৌশিককে পাওয়া যাচ্ছে না। আফিয়াও অনেক কেঁদেছে। কিছুক্ষণ পর কৌশিক এলো। চোখ ফুলে আছে। কৌশিকও এসে নিরাকে ধরে বাচ্চাদের মতো কান্না শুরু করে দেয়। কৌশিকের সাথে খুনশুটি বেশি ছিলো নিরার। কখনো মাইর দেয়া, কিল, ঘুষি দেয়া। শাসন করা। মনের কথা বলা সব ছিলো কৌশিকের সাথে। কখনো বড়ভাই হিসেবে নয়, বন্ধুর মতো পাশে ছিলো কৌশিক। বন্ধুর মতোই আড্ডা দিয়েছে। বন্ধুর মতোই যা ইচ্ছে বলে দিয়েছে। কৌশিক কোনোদিন মন খারাপ করেনি। হেসে উড়িয়ে দিতো। কৌশিক ভাঙা গলায় নিরাকে বললো,
— তুই চলে গেলে আমাকে ধন্যবাদের বদলে চুল ধরে টানা দিবে কে?
নিরাও হাউমাউ করে কান্না শুরু করে। ভাইবোন গুলো নিরাকে এতোটা ভালোবাসে সেটা আজ নিরা বুঝতে পারছে। কৌশিক বললো,
— তুই গেলে বাড়িটা নিশ্চুপ হয়ে যাবে। আমি চা খেয়ে মুখ পুড়ে ফেললে হেসে কুটিকুটি হওয়ার আর কেউ থাকবে না। রাত, দুপুরে জ্বালানোর মানুষটা থাকবে না। গভীর রাতে ঘুম হারাম করার এই তুইটা আর থাকবি না।
নিরাকে বিদায়ের পালা এসেছে। এতো ভালোবাসা এই বাড়িটা তাকে দিয়েছে যে, নিরার কলিজা ছিড়ে যাচ্ছে এখান থেকে যেতে। ফাতেমাকে ফায়াজ, ফাহিম ধরে রেখেছে। যতই তারা ঝগড়া করুক কিন্তু ফাতেমাকে কোনোদিন ফায়াজ, ফাহিম চোখের আড়াল করেনি। চাচা, চাচি, মা, বাবা সবাই কাঁদছে। নিরা গাড়িতে বসার পরেও খুব কেঁদেছে। রাফিন শক্ত করে নিরার মাথাটা বুকের সাথে চেপে ধরে রেখেছিলো।
নিরা চলে যাওয়ায় বাড়িতে একদম শোকের ছায়া এসে নেমেছে। কাশফির শ্বশুর বাড়ি পাশেই তাই এতোটা কষ্ট কেউ পায়নি। কিন্তু নিরার জন্য মনটা পুড়ছে সবার। কাশফি ঘরে বসে কাঁদছিলো। তূর্য কাশফিকে বুকের সাথে আগলে ধরে রেখেছে। আফিয়া কৌশিককে শান্তনা দিচ্ছে।
——————————
নিরাকে রাফিনের ফ্ল্যাটে আনা হয়েছে। এখন থেকে রাফিনের বাবা মাও এখানেই থাকবে। তেমন কোনো মেহমান নেই বাসায়। রাফিনের মা আগে থেকেই সব ঠিকঠাক করে রেখেছেন। রাফিনের চাচি আর চাচতো বোন একজন এবং ভাবি ছিলো। তারা দুইজন নিরাকে রাফিনের রুমে বসিয়ে দিয়ে আসে। কিছুক্ষণ গল্প করলো তারা। তারা নিরাকে পেয়ে খুব খুশি। রাফিন রুমে ঢুকতেই দুইজন বেরিয়ে যায়।
নিরার আজ বেশ লজ্জা লাগছে। রাফিন এসে নিরার সামনে বসে। নিরা মাথা নিচু করে রেখেছে। হাত কাপছে। রাফিনই আগে নিরাকে সালাম দিলো। নিরা সালামের উত্তর নিয়ে আবার রাফিনকে সালাম দেয়। রাফিন নিরার আরেকটু কাছে এসে নিরার কপালে হাত রাখতে গেলে নিরা ভয়ে দাঁড়িয়ে যায়। রাফিন হালকা হাসে। হাত ধরে টেনে পাশে বসিয়ে দেয়। কপালে হাত রেখে একটা দোয়া পড়ে। তারপর নিরাকে সেই শাড়িটা দেয় যেটা নারায়ণগঞ্জ থেকে নিয়েছিলো। শাড়িটা হাতে দিয়ে বললো,
— এটা পরে নাও। অজু করে আসো। নামাজ আছে।
নিরা মাথা নাড়িয়ে ওয়াশরুমের দিকে যায়। শাড়ি পালটে নেয়। অজু করে আসে। রাফিন সাদা শার্ট গায়ে দিয়ে অজু করে আসে। নামাজ পড়ে নেয়।
নিরা লজ্জায় এবং ভয়ে চুপচাপ একপাশে দাঁড়িয়ে আছে। রাফিন নিরার সামনে গিয়ে দাঁড়ালে নিরা এক কদম পিছিয়ে যায়। রাফিন বললো,
— আমাকে ভয় পাবার কিছু নেই। জড়িয়ে ধরো।
নিরার কোনো হেলদোল নেই। রাফিন নিরার কোমড় ধরে টেনে কাছে আনে। রাফিনের ছোয়ায় নিরা লজ্জায় রাফিনের বুকে লুটিয়ে পরে। শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। জানালা দিয়ে চাঁদের সম্পূর্ণ আলো ঘরে প্রবেশ করে। হালকা হালকা বাতাস। নিরা সম্পূর্ণ নতুন ভাবে রাফিনকে স্বামী হিসেবে গ্রহণ করে নেয়।
—————————————-
সকালে হসপিটালে যাওয়ার জন্য রাফিন তৈরি হয়ে নেয়। নিরা হালকা করে চোখ খুলে। রাফিনকে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলো। নড়াচড়া করেই বুঝতে পারলো পুরো শরীরে খুব ব্যাথা। রাফিন এসে নিরার পাশে বসে। নিরার মুখের দিকে ঝুকে নাকে নাক ঘষে বললো,
— বলেছিলাম না তোমার স্বামীর রোমান্টিকতা সামলাতে গিয়ে তুমি কেঁদে দিবে।
নিরা কষ্ট করে উঠে বসে। ঠোঁট ফুলিয়ে বললো,
— আপনি অনেক পচা। সরুন নামতে দিন। ওয়াশরুমে যাবো।
রাফিন সরে দাঁড়ায়। নিরা উঠে কাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়। নিরা বের হওয়ার আগেই বিছানা চাদর পালটে দেয় রাফিন। নিরা ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে রাফিনের হাতে আগের চাদর দেখে বললো,
— চাদর পাল্টালেন যে?
আবার চুপ হয়ে যায়। নিজের কথায় নিজেই লজ্জা পায়। নিরা খুড়িয়ে হেটে এসে রাফিনের বুকে মাথা ঠেকিয়ে দাঁড়ায়। রাফিন ডাকলো,
— নিরা।
নিরা মাথা তুলে তাকায়। রাফিন আদুরে গলায় বললো,
— খুব কষ্ট হয়েছে তোমার?
নিরা রাফিনের বুকে মাথা রাখে। চোখ বন্ধ করে প্রশান্তির নিঃশ্বাস নেয়। তারপর বললো,
— আপনি পাশে থাকলে কোনো কষ্টই বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়না।
নিরার কপালে চুমু দিয়ে নিরাকে বেডে বসায়। খাবার খাইয়ে দিয়ে ওষুধ নিয়ে বললো,
— এটা খাও ব্যাথা কমে যাবে।
নিরা খেয়ে নেয়। নিরাকে ভালো করে শুয়ে দিয়ে বললো,
— মাকে বলে যাবো তুমি একটু অসুস্থ। রেস্ট করো।
নিরা বললো,
— আজ প্রথম দিনেই আমি ঘুমিয়ে থাকবো? বাসায় সবাই কি ভাববে?
— কিছুই ভাববে না। চুপচাপ ঘুমাও। এখানে সবাই তোমার আপন মানুষ। তোমার এ অবস্থা দেখলে মা নিজেই তোমাকে ধমক দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিবেন।
— তাহলে আমি আপনার মায়ের ধমক শুনতে চাই।
— শুধু মা বলবে। ঠিকাছে?
— হুম।
— আজ ধমক খেতে হবে না। ঘুমাও এখন। আমি আজ তাড়াতাড়ি ফিরে আসবো।
কপালে একটা ভালোবাসার পরশ দিয়ে রাফিন বেরিয়ে যায়।
——————————
রাফিন যাওয়ার পর রাফিনের মা তনিমা খানম এলেন রুমে। নিরা তার শ্বাশুড়িকে দেখে উঠে বসতেই চাইলেই তিনি এসে নিরার পাশে বসেন। কপালে হাত দিয়ে বললেন,
— জ্বর নেই। শরীর খারাপ?
— না তেমন না। আসলে..
— চুপ। কোনো কথা না। রাফিন বলেছে ঠিকমতো দাঁড়াতে পারছিস না। রেস্ট নে ভালো হয়ে যাবি।
তিনি উঠে দাঁড়ায় চলে যাওয়ার জন্য। আবার বসেন নিরার পাশে। বললেন,
— তোকে তুই করে বলছি রাগ করেছিস?
— না মা। রাগ করিনি।
— আসলে আমার কোনো মেয়ে নেই। মালিহাকে মেয়ের মতোই ভালোবাসতাম। সেই কিনা..। থাক সেসব কথা। রাফিন হওয়ার পর থেকেই মনে মনে ভেবে নিয়েছি আমার রাফুর বউকে নিজের মেয়ের মতো করে আদর ভালোবাসা দিবো। শুন তোকে আজ থেকে আমি চুমকি বলে ডাকবো।
নিরা হেসে বললো,
— চুমকি?
— হ্যাঁ। চুমকি নামটা খুব ভালো লাগে আমার। আমি মাঝে মাঝে নাম গুলিয়ে রাফুকে চুমকি ডেকে ফেলি।
দুজনেই শব্দ করে হেসে দেয়। তনিমা খানম বললেন,
— তোকে নাস্তা খাইয়ে দিয়েছে রাফু?
— হ্যাঁ মা।
ঠিকাছে রেস্ট নে। দুপুরে আমি তোকে ডেকে দেবো। এখন ঘুমা।
তনিমা খানম চলে যান। নিরা মনে শান্তি পায়। তার ডাক্তার সাহেবের মতোই খুব ভালো তার শ্বাশুড়ি মা।
·
·
·
চলবে……………………….