#হৃদয়ের_কোণে (পর্ব ৪২)
#নাহার
·
·
·
সকালে ঘুম থেকে উঠে নিরা নাস্তা খেয়ে বসে রইলো।রাফিন এসে নিরার পাশে বসে। নিরা মুখ গোমরা করে বললো,
— ভোর হওয়া দেখতে পাইনি।
রাফিন নিরার চুল ঠিক করে দিয়ে বলে,
— কাল থেকে একসাথে ভোর হওয়া দেখবো। সারাজীবন তুমি আমি দুজনে একসাথে ভোর দেখবো।
— কিভাবে?
— ফজরের নামাজ পড়ে তারপর রাস্তায় হাটতে বের হবো। আর সেই সুযোগে প্রতিদিন ভোর দেখবো।
নিরা খুশি হয়ে যায়। মাথা ঝাকিয়ে হ্যাঁ সম্মতি জানায়। নিরা আবার বললো,
— আজকে আমরা কোথায় যাবো।
— আগে একটা নতুন লোক ঠিক করতে হবে যে এইখানের সবকিছু চিনে। তারপর বের হবো।
— ও।
— ঘুমাবো আমি।
— তো ঘুমান আপনি।
— তুমিও আসো।
— না। আমার ঘুম আসছে না।
নিরাকে জোর করে শুয়ে দিয়ে নিরার বুকে মাথা রাখে রাফিন। নিরা হতভম্ব হয়ে যায়। রাফিন বললো,
— আমাকে এখানে ঘুমাতে দাও। শান্তি লাগে খুব।
— আর আমি আপনার দেহের ভারে চেপ্টা হয়ে যাচ্ছি।
— হুশ। কোনো কথা না।
—————————————-
দুপুরে খাওয়া দাওয়া শেষে নিরা বোরকা পরে তৈরি হয়ে নেয়। রাফিন কালো পেন্টের সাথে একটা নীল শার্ট পরেছে। চুল ঠিক করে ঘর থেকে বেরিয়ে যায় দুজন। রিকশায় বসে পরে। রাফিন শার্টের হাতা ফোল্ড করে নেয়। নিরা আশেপাশে দেখছে। রাফিনের দিকে তাকিয়ে বললো,
— আমরা কোথায় যাচ্ছি?
— বাংলার তাজমহল দেখতে।
— ওয়াউ। ঠিকাছে।
তারা নিজেদের গন্তব্যে এসে পৌছে যায়। নিরা খুটিতে খুটিয়ে দেখে বললো,
— এটা দেখতে একদম ভারতের সেই তাজমহলটার মতো।
— ওইটার সাথে মিল রেখেই এটা বানানো হয়েছে। চলো ভেতরে।
দুজন ভেতরে যায়। ঘুরে ঘুরে দেখছে জায়গাটা। খুব সুন্দর। একদম ইন্ডিয়ার তাজমহলটার মতো। আশেপাশের সব জায়গায়ও একই।
“পৃথিবীর প্রাচীন সপ্তাচর্যের মধ্যে অন্যতম ভারতের আগ্রার তাজমহলের মতো করে বাংলাদেশের নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁও উপজেলার পেরাব গ্রামে নির্মাণ করা হয়েছে বাংলার তাজমহল বা দ্বিতীয় তাজমহল। নারায়ণগঞ্জ এর শিল্পপতি চলচিত্রকার আহসান উল্লাহ মনি এই তাজমহল তৈরী করেন। বাংলার তাজমহলে আহসান উল্লাহ মনি এবং তাঁর স্ত্রী রাজিয়ার কবরের স্থান করা হয়েছে। আগ্রার তাজমহলের মতো করেই এই তাজমহলের মূল ভবনের চার কোণে চারটি মিনার রয়েছে। আর ভবনের সামনে রয়েছে পানির ফোয়ারা, ফুলের বাগান এবং দর্শনার্থীদের বসার স্থান।”
“বাংলার তাজমহলে আছে রাজমনি ফিল্ম সিটি স্টুডিও এবং রাজমনি ফিল্ম সিটি রেস্তোরাঁ। এখানে যেকোনো দর্শনার্থী চাইলেই ছবি তুলতে পারেন।” নিরা এদিক সেদিক দেখছে। রাফিন নিরাকে হেচকা টানে নিজের কাছে নিয়ে আসে। নিরার মাথা এসে রাফিনের বুকে বারি খায়। এই অবস্থাতেই রাফিন দুই তিনটা সেলফি তুলে নেয়। এরপর নিরার অনেক সিঙেল ছবি তুলে।
“বাংলার তাজমহলের কাছেই তৈরি করা হয়েছে মিসরের পিরামিডের প্রতিরুপ। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি ভাস্কর্য, ইন্দিরা গান্ধী এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতি ভাস্কর্য, ২৫০ আসন বিশিষ্ট সিনেমা হল এবং সেমিনার কক্ষ। এছাড়াও তাজমহলকে ঘিরে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন হস্তশিল্প সামগ্রী, জামদানী শাড়ি, মাটির গয়নাসহ আরো বিভিন্ন পণ্য সামগ্রীর দোকান।”
রাফিন জামদানী শাড়ির দোকানে ঢুকে লাল টকটকে একটা জামদানী শাড়ি কিনে নেয়। নিরা বাহিরে ফুলের বাগানের কাছে দাঁড়িয়ে, বসে বিভিন্ন ভঙ্গিতে ছবি তুলছে। মাটির গয়নার দোকানে গিয়ে শাড়ির সাথে মিলিয়ে কিছু গয়না নেয়। তারপর নিরার কাছে আসে। নিরা প্যাকেট দেখে বললো,
— এসব কি?
— শাড়ি, গয়না।
— এগুলো দিয়ে কি করবেন?
রাফিন নিরার পাশে বসে হালকা ধাক্কা দিয়ে বললো,
— এখান থেকে ফিরে যাওয়ার পর আবার আমাদের বিয়ে হবে। বাসর রাতে তুমি এই শাড়ি গয়না পড়েই আমার সামনে আসবে।
নিরা লজ্জা পেলো। কিছু বললো না। রাফিন হাত টেনে ধরে বললো,
— উঠো। চারিদিকে ঘুরি।
তাজমহলের বাহিরের নকশা আগ্রার তাজমহলের সাথেই মিলিয়ে প্রায় সেভাবে করা হয়েছে। মিনার গুলোও দেখতে বেশ সুন্দর। পানির ফোয়ারের কাছে এসে নিরা পানি ঘাটতে শুরু করে। রাফিনের মানা করার পরেও বারবার পানি ধরছে। নিরা কিছু পানি রাফিনের মুখে ছুড়ে মারে। রাফিন তাকালে নিরা অন্যদিকে চলে যায়। মিনারের সাথে দাঁড়িয়ে কয়েকটা ছবি তুলে। এই তাজমহলের বাহিরের দিকের সৌন্দর্য বর্ণনা করে শেষ করার নয়। বাহিরের চিত্র দেখলে যে কারো মন ছুড়িয়ে যাবে। পড়ন্ত বিকেল। নিরা এবং রাফিন দুজন রেস্তোরাঁ থেকে খাবার কিনে এনে তাজমহলের সামনে পানির ফোয়ারা গুলোর দুপাশে ঘাসের উপর পা ভাজ করে বসে। রাফিন এক কামড় দিয়ে খাচ্ছে আর নিরার দিকে তাকাচ্ছে। নিরা বাচ্চাদের মতো করে চুপটি করে বসে পরম যত্নে খাবার খাচ্ছে। রাফিন ডাকলো,
— নিরা।
নিরা খেতে খেতেই জবাব দিলো,
— হু।
— আমার একটা ছোট্ট নিরা চাই।
নিরা খাওয়া বন্ধ করে রাফিনের দিকে তাকায়। রাফিনের চাহনিতে নিরার হেচকি উঠে। তাড়াতাড়ি করে পানি খাওয়ালো। হেচকি বন্ধ হতেই নিরার লজ্জায় গাল লাল হয়ে আসে। রাফিন সেটা খুব মনোযোগ দিয়ে উপভোগ করলো। আবার বললো,
— ছোট্ট নিরার পর তোমাকে একটা ছোট্ট রাফিন উপহার দেবো।
নিরা লজ্জায় নতজানু হয়ে গেলো। খাবার গিলতে পারছে না। বেশ গরম লাগছে নিরার। পা দুটো কাপছে। লজ্জায় নাকি ভয়ে বুঝতে পারছে না। নিরার ইচ্ছে করছে কোথাও মুখ লুকিয়ে ফেলতে। নিরা মাথা একেবারে নুইয়ে ফেলেছে। মিনমিনিয়ে বললো,
— প্লিজ এসব আর বলবেন না।
— কেনো? তোমার কি আরো বেশি লাগবে? তুমি চাইলে একটা ফুটবল টিম গঠন করতে পারি।
রাফিন মুচকি হাসছে। নিরা তাকাতেই পারছে না রাফিনের দিকে। রাফিন আরো লজ্জা দেয়ার জন্য বললো,
— প্রতি বছর একটা একটা করে বাবু নিলে কেমন হবে?
নিরা দুইহাতে মুখ ঢেকে বললো,
— প্লিজ দোহাই লাগে এসব আর বলবেন না। আমার লজ্জা লাগছে বেশি।
রাফিন একটু এগিয়ে এসে বললো,
— বাসর রাতে আমি কাছে আসলে কি করবে? ধরতে গেলেই চিৎলার দিবে। এখনো তো যখন তখন চিৎকার করো। মানুষ ভাববে আমি বউ পেটাই। কিন্তু তারা কিভাবে বুঝবে আমার বউ তার স্বামীর আদরে গলে যায়।
নিরা চোখ বন্ধ করে রাখে। রাফিন বললো,
— এই লাজুকলতা চেহারা থেকে হাত সরাও। তোমার লাল হওয়া গালটা একটু দেখি।
— আপনি এইসব বলা বন্ধ করুন প্লিজ।
রাফিন সরে আসে। তারপর বললো,
— যাও আর বলবো না। এবার খাও। সন্ধার আগেই ফিরতে হবে।
——————————
আজ আকাশে থালার মতো গোল চাঁদ উঠেছে। দুইজনে পুকুর ঘাটে বসে আছে। পুকুরের পানি যে সিড়ি ছুয়েছে তার দুই সিড়ি উপরে বসে দুজনে আকাশে চাঁদ দেখছে। নিরা বললো,
— আচ্ছা আপনি আমাকে কখন থেকে পছন্দ করেন?
— যেদিন তোমাকে প্রথম দেখি।
— ওহ আচ্ছা।
নিরা আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে। অবাক হয়ে বললো,
— প্রথম দিন মানে? যেদিন প্রথম আমি আপনাদের বাড়িতে বেড়াতে গেছিলাম সেদিন?
রাফিন নিরার দিকে তাকিয়ে বললো,
— উঠানে সবাই মিলে ক্রিকেট খেলছিলাম। তখন ডাক্তারি পড়া শুরু করি মাত্র। মেডিকেলে চান্স পাই। ক্লাস শুরু হওয়ার আরো তিনমাস বাকি ছিলো। যে ব্যাটিং করছিলো সে বলটা জোরে বারি মারে বেট দিয়ে। সেটা সিড়ির কাছে চলে আসে। আমি আনতে যাই। বলটা নিয়ে দাঁড়িয়ে সিড়ির দিকে তাকাতেই মুগ্ধ হই। একটা কালো পরি নামছিলো। কালো ড্রেস পরা। চুলগুলো বেণুনি করা ছিলো। বাচ্চা মেয়েটার কোমড় অবধি চুল দেখে আরো একদফা মুগ্ধ হই। সিড়ি থেকে নেমে আমাকে দেখেই মেয়েটা ভয় পায়। তার ভয় পাওয়া চেহারাটা এতো ভালো লেগেছে সেদিন। এরপর থেকে চোখ বন্ধ করলেই সেই ভয় পাওয়া মায়াবী চেহারা সামনে ভাসতো। কৌশিক থেকে সেই মেয়েটার সব ব্যাপার জানতে পারি। তারপর ভাবলাম আমি মেডিকেলের তৃতীয় বা চতুর্থ বর্ষে উঠলেই তাকে মনের কথা জানাবো। কিন্তু তার আগেই শুনলাম সে তুহিন নামের কাউকে পাগলের মতো চায়। তাই আর বলিনি। মেডিকেল কলেজে কত মেয়ে পাগলামি করেছে। লাভ লেটার দিয়েছে, কেউ কেউ হাত কেটে ছবি পাঠিয়েছে, কত কি করেছে কাউকেই সেভাবে মনে ধরেনি। ডাক্তারি পাশের পর একটা সেমিনারে আবার যাই আমার মেডিকেলে কলেজের। সেদিন একটা মেয়ে ছাদের উপর উঠে লাফ দিবে বলে ভয় দেখিয়েছিলো। সবাই আমাকে বললো হ্যাঁ বলে দিতে। তখন আমার চোখের সামনে ওই বাচ্চা মেয়েটার ভয় পাওয়া মায়াবী চেহারা ভেসে উঠে। নিচে সবকিছু জোগার করে দিয়ে আমি চলে আসি। মেয়েটা লাফ দিলে যেনো সেফ থাকে। পরে কি হয়েছে জানি না। এরপর আর কখনো যাইনি সেখানে। অনেক সুন্দরি মেয়ে পেসেন্ট হুদাই এসেছে আমার কাছে। এরপর যেদিন কৌশিক বললো তোমার বিয়ে ভেঙে গেছে পরের দিনই আমি উপস্থিত হই। একবার যদি সুযোগ পাই তোমাকে নিজের করে নেবো। সেখানে যাওয়ার পর দেখলাম সবাই মোটামুটি আমাকে দেখতে পারে। আমার শ্বাশুড়ি মা তো প্রথম থেকেই রাজি। বিষয়টা আরো সহজ হয়ে গেলো। কৌশিক মনে প্রাণে চাইতো তোমার সাথে আমার বিয়ে হোক। তাই সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছে কৌশিক। ওকে ধন্যবাদ দেয়া বাকি আছে।
নিরা অবাক হয়ে গেছে। সে তখন সবে মাত্র চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী ছিলো। ওই বাচ্চাকাল থেকেই কেউ তাকে মনে প্রাণে চাইতো সেটা ভাবতেই নিরা আরেকদফা অবাক হয়। এতোগুলো বছর না দেখেই নিঃশব্দে চেয়ে গেছে ব্যাপারটা আসলেই অবাক করার মতো। নিরা বললো,
— আমাকে না দেখেই এভাবে চেয়েছেন। যদি আমি কালো হতাম? বা চেহারা কুৎসিত হতো?
— না দেখেই চেয়েছি তোমাকে। কালো বা কুৎসিতে কি যায় আসে? ব্যাপার হচ্ছে মনের। মন যেখানে আটকে যায় সেখানে সুন্দর, অসুন্দর ব্যাপার না। প্রেম করতে চাইলে সুন্দরী মেয়ে খুজতাম। তুমি সুন্দর না এটা দেখেই সরে যেতাম। কিন্তু আমিতো তোমাকে বিয়ে করার নিয়তে চেয়েছি। রুপ ক্ষণিকের মাত্র। যা সহজেই হারিয়ে যায়। গুনটাই প্রধান। যেটা একটা মানুষকে অপর মানুষের সাথে বেঁধে রাখে। বউ রূপবতী না হলে সমস্যা নেই কিন্তু গুণবতী না হলে সেই বউয়ের রুপ কাজে আসে না। মানুষ যদি রুপটাকে পাত্তা দিতো তাহলে একজন রূপবতী নারী মা হওয়ার পর তার রুপ আগের থেকে অনেকটা হারিয়ে যায়। এরকম হলে সম্পর্ক টিকতো না। তোমার চোট চাচা চাচি এ পর্যন্ত একসাথে থাকতো না। বা আমার বাবা মা এতগুলো বছর একসাথে থাকতো না। গুণবতী বলেই একে অপরের সাথে আছেন।
নিরা অন্যদিকে ফিরে বললো,
— আমার মধ্যে কোনো গুণ নেই।
রাফিন হাসে। কিছু বললো না। নিরা বললো,
— আমার যদি তুহিনের সাথে বিয়ে যেতো তখন কি করতেন?
— মায়ের পছন্দের মেয়েকে বিয়ে করে নিতাম।
নিরা ভ্রু কুচকে বললো,
— ওই মালিহাকে?
রাফিন শব্দ করে হেসে দেয়। বললো,
— মা চাইলে করে নিতাম।
কিছুক্ষণ আকাশের দিকে তাকিয়ে থেকে রাফিন বললো,
— আমি যদি মরে যাই তুমি আমাকে ভুলে যাবে?
নিরা আতকে উঠে। রাফিন কেমন করে যেনো তাকিয়ে আছে। নিরার রাগ হয় সাথে অভিমান। নিরা রেগে বললো,
— এতোদিন শাস্তি দিয়ে মন ভরেনি? এখন আবার নতুন চিন্তা করছেন? কিভাবে আমাকে আরো বেশি কষ্ট দেয়া যায় সেটা?
নিরা কেঁদে দিলো। রাফিন বললো,
— আরে আমিতো মজা করছিলাম।
নিরা ঝাপিয়ে পরে রাফিনের বুকে। হাউমাউ করে কেঁদে উঠে। খামছে ধরে রাফিনের শার্ট। রাফিন নিরার মাথাটা বুকের সাথে চেপে ধরে। নিরা কেঁদে কেঁদে বললো,
— আমি কখনো আপনাকে ছেড়ে যাবো না। আপনি যেভাবে বলবেন সেভাবেই চলবো। যেটা বলবেন সেটাই করবো। আপনাকে কখনো অভিযোগের সুযোগ দিবো না। প্লিজ তাও আমাকে ছেড়ে যাবেন না। আমি সইতে পারি না।
— পাগলি মেয়ে কেঁদো না। তোমাকে ছেড়ে কোথাও যাবো না আমি। তোমার কাছেই থাকবো সবসময়।
নিরা একদম লেপ্টে যায় রাফিনের বুকে।
——————————
দুজনে শুয়ে আছে। জানালা খোলা। চাঁদের ফকফকা আলো একদম ঘরে প্রবেশ করেছে। নিরা রাফিন গা ঘেষে শুয়ে আছে। রাফিন নিরার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। নিরা বললো,
— এই ডাক্তার।
— হুম।
— আপনি একটা জিনিস খেয়াল করেছেন?
— কি?
— আমার নামের প্রথম অক্ষর যেটা দিয়ে শুরু আপনার নামের প্রথম অক্ষর সেটা দিয়ে শেষ হয়। নিরার “ন” আর রাফিন এর পেছনের “ন”। এর মানে হচ্ছে আমার ভালোবাসা যেখানে শেষ আপনার ভালোবাসা সেখান থেকে শুরু। আর আপনার ভালোবাসা যেখানে শেষ সেখান থেকে আমার ভালোবাসা শুরু।
রাফিন অবাক হয় নিরার এই ব্যাখ্যা শুনে। হেসে বললো,
— আমার সাথে থেকে গবেট মাথায় বুদ্ধি এসেছে।
নিরা রেগে বললো,
— আমি গবেট?
— না তুমি আমার বউ।
জড়িয়ে ধরতে গেলেই নিরা একটু সরে যায়। অভিমানি সূরে বললো,
— থাক গবেটকে ধরতে হবে না।
রাফিন একেবারে নিরার বুকে মাথা রেখে শুয়ে পরে। মিনমিনে স্বরে বললো,
— খুব ঘুম পাচ্ছে। আমাকে এখানে ঘুমাতে দাও বাবু। অনেক শান্তি পাই।
নিরা আর কিছু বললো না। দুজনেই ঘুমিয়ে যায়।
সকালে আযানের সময় উঠে পরে দুজনে। পুকুর থেকে অযু করে আসে। রাফিন সামনে দাঁড়ায়। নিরা রাফিনের একটু পিছনে দাঁড়িয়ে নামাজ পড়ে নেয়। তারপর হাটতে বের হয় দুজন। হাত ধরে হাটছে দুজন। রাফিন বললো,
— বাসায় ফেরার পর প্রতিদিন সকালে নামাজের পর আমার সাথে বসে তোমাকে কোর’আন পড়তে হবে। কথার খেলাপ হলেই থেরাপি চলবে।
— কিসের থেরাপি?
রাফিন নিরার দিকে তাকিয়ে ভ্রু নাচিয়ে বললো,
— ভালোবাসার থেরাপি।
নিরা অন্যদিকে ফিরে যায়। রাফিন দুষ্টু হাসে। বললো,
— তোমার স্বামী অনেক রোমান্টিক। বুঝলে।
কানে কানে ফিসফিস করে বলল,
— রোমান্টিকতা সামলাতে গিয়ে তুমি কেঁদে দিবে আমি সিউর।
নিরা আতকে উঠে। কয়েকটা ঢোক গিললো। রাফিন থেকে হাত ছাড়িয়ে নেয়। একটু দূরে সরে যায়। আঁচল দিয়ে নিজেকে ভালো করে ঢেকে নেয়। রাফিন বিরক্তি নিয়ে বললো,
— যার তার সামনে ওড়না ছাড়া চলে যাও আর এখন আমার সামনে নিজেকে ঢাকছো। রাবিস। একবার নিজের ঘরে ফিরি তারপর দেখাবো মজা।
গ্রামের মেঠো পথ। সূর্যের আলো এখনো ছড়ায়নি। চারিদিকে হালকা আলো। পাখির কিচিরমিচির ডাক। হীম বাতাস। দুজনে একটা জমির সামনে বসে। নিরার চুল উড়ছে। রাফিন সামনের দিকে তাকিয়ে আছে। নিরা চুরি করে রাফিনের দিকে তাকায়। রাফিনের চুল উড়ে এসে কপালে বারি খাচ্ছে। ঠোঁটে হাসি। নিরা মনে মনে বললো,
— ঠোঁট গুলো আমার থেকে গোলাপি কেনো?
নিরার হিংসে হয়। ইচ্ছে হয় কামড়ে ধরতে। চুলগুলো এলোমেলোকরে দিতে। নিজের ইচ্ছের কথা ভাবতেই নিরা নিজেকে নিজে বকে দেয়। রাফিন সামনের দিকে তাকিয়ে থেকেই বললো,
— নিজের স্বামীকে চুরি করে দেখার কি আছে? সামনে থেকে ভালো করে দেখো। তোমার স্বামী সম্পূর্ণভাবে তোমার।
নিরা চমকায়। চোখ ফিরিয়ে নেয়। সূর্যের সোনালী কিরণ জমির ফসল গুলোর উপর পরায় অদ্ভুত সুন্দর লাগছে। আরো কিছুক্ষণ বসে থেকে রাফিন বললো,
— চলে এবার। মানুষজন আসতে শুরু করবে একটু পর।
আবার হাটা ধরে দুজন। নিরা এটা বেশ বুঝতে পেরেছে রাফিন কিছুটা ধার্মিক। আগে বুঝেনি। কিন্তু এখন ঠিক বুঝতে পারছে। তবে ভালোই লাগছে নিরার।
·
·
·
চলবে………………………..