হৃদয়ের_কোণে (পর্ব ৩৫)

0
1721

#হৃদয়ের_কোণে (পর্ব ৩৫)
#নাহার
·
·
·
তুহিন, কৌশিক, রাফিন, নিরা এবং আফিয়া ছাদে চুপচাপ বসে আছে। তুহিন অনেকটা খুশি কিন্তু এখনো প্রকাশ করছে না কারণ সে ব্যাপারটা ক্লিয়ার হতে চায়। তারা সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিচ্ছে কিভাবে মেহরাবের সাথে বিয়ে ভেঙে তূর্যের সাথে ঠিক করা যায় যাতে কোনো ঝামেলা না হয়।

একটু আগে কাশফি সব খুলে বললো। তুহিন নিরার সাথে যা করেছে তার কারণে বাড়িতে কেউ তাদের সম্পর্ক মানবে না। আর তাছাড়া তূর্য তুহিনের দুরসম্পর্কের ফুফাতো ভাই। আপন ভাই নয়। এসব ব্যাপার জানাজানি হলে হয়তো বাড়িতে মানবে না। তাই তূর্য দূরে সরে গেছে। কাশফির কথা শেষ হওয়ার পর সবাই বুঝতে পারলো আসল ব্যাপার। কাশফিকে রুমে পাঠানোর পর অনেক ভেবে তুহিনকে ছাদে ডাকা হয়েছে। সব কিছু খুলে বলার পর তুহিন একদিকে খুশি আরেকদিকে কষ্ট পাচ্ছে কারণ তার কারণেই আজ এই দুর্গতি।

অনেক ভাবাভাবির পর তুহিন বললো,
— সবই তো বুঝলাম। আমি একটু আমার ভাইয়ের মুখ থেকে শুনতে চায়। সে সত্যিই কাশফিকে মানে কাশফি আপুকে চায় কিনা সেটা তো একটু ক্লিয়ার হতে হবে তাইনা? আমার সন্দেহ হচ্ছে না জাস্ট একটু ক্লিয়ার হতে চাই।

রাফিন বললো,
— ঠিকাছে। ক্লিয়ার হয়ে নিন। তারপর আমাদের জানান।

— আমি কালকে বা আজকে রাতের মধ্যেই জানাবো।

তুহিন চলে গেলো। এবার বাকি চারজন খুবই চিন্তিত কিভাবে কি করবে। কিভাবে মিলাবে সবকিছু। তাও সব ভাবনা বাদ দিয়ে সবাই ঘুমাতে গেলো।

——————————
তুহিন বাসায় এসে ভাবছে কিভাবে তূর্যের মুখ থেকে সবকিছু বের করানো যায়। সে সরাসরি গিয়ে তূর্যের সামনে বসলো। তূর্য তখন বই পড়ছিলো। তুহিনকে দেখে মুখ তুলে তাকায়। তুহিনকে বেশ চিন্তিত এবং রাগান্বিত মনে হচ্ছে তাই বইটা পাশে রেখে বললো,
— কিছু বলবি?

তুহিন শক্তভাবেই বললো,
— হ্যাঁ।

— তো বল।

— ভণিতা বাদ দিয়ে সরাসরি বলছি। তুইও সব সরাসরিই বলবি।

— ওকে।

— তুই কাশফিকে ভালোবাসিস?

তূর্য চমকালো। চশমা খুলে চোখ বড়বড় করে তুহিনের দিকে তাকায়। তুহিন ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে। তূর্য আমতা আমতা করে বললো,
— তুই কিভাবে জানিস?

— আমি কিভাবে জানি সেটা বিষয় না কথাটা কি সত্যি নাকি সেটা বলো।

তূর্যও কোনো ভণিতা ছাড়াই সোজাসাপটা উত্তর দিলো,
— হ্যাঁ।

তুহিন উত্তেজিত এবং কিঞ্চিৎ রাগান্বিত হয়ে বললো,
— তো দূরে সরে যাচ্ছিস কেন? ওর বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে। সেটা জানিস?

তূর্য আহত হলো। খুব বেশিই হলো। চোখে পানি টলমল করছে। কিছুক্ষণ একধ্যানে তুহিনের দিকে তাকিয়ে থেকে নিজেকে স্বাভাবিক করে বললো,
— ওর জন্য ভালোই হবে। সুখে থাকবে। যা ঘুমাতে যা।

তুহিন তূর্যের হাত শক্ত করে চেপে ধরে বললো,
— ভাই তুহিও ভালোবাসিস মেয়েটাও ভালোবাসে তাহলে সমস্যাটা কই? পরিবার না মানলে পালিয়ে যা।

— না সম্ভব না। যা ঘরে যা।

— কেনো সম্ভব না?

— এর আগে কোনো কারণ ছাড়াই তুই পুরো এলাকায় নিরাকে বদনাম করেছিস। এখন কাশফি পালালে তাদের বংশ নিয়ে গালাগালি করবে লোকজন। তাদের মেয়েরাই খারাপ সেটাই বললে। আমি চাইনা এতো কিছু হোক।

— শুধু বদনামির কথা ভেবেই ভালোবাসার মানুষকে ত্যাগ করবি তুই?

তুহিনকে ধাক্কা দিয়ে রুম থেকে বের করে দিয়ে দরজা লক করে দেয় তূর্য। তুহিন কিছুটা বিরক্ত হয়। আবার আনন্দিতও হয়। যাক এবার একটা ভাবি আসবে তার। কিন্তু কিভাবে হবে এইটা ভেবে আবার বিরক্তি নিয়ে রুমে প্রবেশ করে মোবাইল তুলে রাফিনকে মেসেজ দিলো। কালকে সকালে আবার গোপন মিটিং হবে।

—————————————-
মালিহা কিছুক্ষণ এদিক সেদিক উঁকিঝুঁকি দিয়ে ফায়াজের রুমে ঢুকলো। ফায়াজ টেবিলে বসে পড়া পড়ছিলো। মালিহাকে দেখে বেশ অবাক হলো। মালিহা ফায়াজের খাটের উপর বসে পড়ে। ফায়াজ বললো,
— কিছু বলবেন?

— না এমনিই গল্প করতে এসেছি।

— ওহ। আমার সাথে কি গল্প করবেন?

— আরে উত্তেজিত হয়ো না। এমনি একটু কথাবার্তা বলবো।

— বলুন।

— আচ্ছা আমি শুনেছি নিরার নাকি একবার বিয়ে ঠিক হয়ে ভেঙে গেছিলো।

ফায়াজ একবার তাকিয়ে আবার মুখ ঘুরিয়ে নেয়। কিছু বললো না। মালিহা আবার বললো,
— কথাটা কি সত্য? না মানে এমনিই জিজ্ঞেস করছিলাম।

— হ্যাঁ সত্যি।

— নিরাতো অনেক সুন্দর একটা মেয়ে। তাও বিয়ে ভাঙলো কেন?

— তুহিন ভাইয়া নিরা আপুকে পছন্দ করতো না তাই। ভালোই হয়েছে ভেঙে গেছে নাহলে আমাদের রাফিন ভাইয়া তো হিরো হিসেবে এন্ট্রি করতে পারতো না। রাফিন ভাইয়া হচ্ছে নিরা আপুর হিরো।

ফায়াজ কিছুটা হাসলো। মালিহা বেশ রাগলো। কিন্তু প্রকাশ করলো না। মালিহা বেশ চালাকির সাথে বললো,
— আচ্ছা বিয়ে ভাঙতে তো কোনো কারণ লাগে। তা কি কারণে বিয়েটা ভেঙে দিয়েছে? না মানে শুধু পছন্দ না এটা তো কোনো কারণ না।

— কিছু ছবি বাজে ভাবে এডিট করেছে।

মালিহা যেনো খুশি হয়ে গেলো। কিন্তু অবাক হওয়ার এক্টিং করে বললো,
— কিহ? এতোবড় ধোকা। আচ্ছা ছবিগুলো দেখতে পারি? আসলে আমি দেখলেই বলে দিতে পারবো কিভাবে এডিট করেছে।

— রাফিন ভাইয়া তো বলে দিয়েছেই।

— না মানে আসলে আমি একটু দেখতে চাচ্ছিলাম। একবার আমার ছবিও আমার এক বন্ধু এডিট করেছিলো তাই আমিও নিরার কষ্টটা বুঝতে পারছি।

ফায়াজ কিছু না বলে সরল মনে মোবাইল থেকে ছবিগুলো দিয়ে বললো,
— ডিলিট করে দিয়েছিলাম তাও কিভাবে যেনো আমার মোবাইলে রয়েই গেলো।

মালিহা ছবিগুলো পেয়ে যেনো চাঁদ হাতে পেলো। খুশিতে তার নাঁচতে ইচ্ছে করছে। ফায়াজের আড়ালে নিজের মোবাইলে নিয়ে নেয়। তারপর নিজের রুমে এসে হাসতে হাসতে বলে,
— এবার আমার রাফিন থেকে তোমাকে সরিয়ে দেবো নিরা।

কথাগুলো বলেই হাসতে শুরু করে মালিহা।

——————————
একটা রেস্টুরেন্টে বসে আছে তিনজন। খুব চিন্তিত মুখ তাদের। রাফিন, কৌশিক এবং তুহিন। কিছুতেই কিছু মেলাতে পারছে না। কিভাবে কি করবে। তুহিন বললো,
— একটু ভাবার সময় দিলে ভালো হয় ভাই। একটা সমাধান বের তো হবেই।

কৌশিক বললো,
— সময় তো বেশি নাই।

— আচ্ছা আমরা রাতে বসে ঠান্ডা মাথায় ভেবে দেখলে ভালো হয়। এখন কাজের চিন্তায় মাথা ভনভন করছে।

তুহিনের কথায় বাকিদুজন সায় দিলো। তারপর বেরিয়ে তিনজন কাজের উদ্দেশ্যে চলে গেলো।

রাতে সবাই ছাদে গোপন মিটিং বসিয়েছে। নিরা কিছু একটা ভেবে বললো,
— আচ্ছা মেহরাবের শয়তানি সব যদি বাড়ির সবার সামনে নিয়ে আসি তাহলে তো বিয়ে বাড়ির বড়রাই ভেঙে দেবে।

কৌশিক বললো,
— হ্যাঁ এটা কিন্তু পয়েন্ট।

রাফিন বললো,
— তারপর তূর্যের সাথে বিয়ে ঠিক করবো কিভাবে?

সবাই আবার চুপসে গেলো। তুহিন কিছুটা বিচলিত হয়ে বললো,
— একটা প্ল্যান মাথায় এসেছে। আই থিং এটা কাজ করবে।

আবাই উত্তেজিত হয়ে বললো,
— কি প্ল্যান?

তুহিন সব বুঝিয়ে বলায় সবাই একজন আরেকজনের দিকে তাকালো। তারপর সবাই একসাথে ইয়েস বলে চিৎকার করলো। কৌশিক বললো,
— তাহলে এবার বিয়েটা হবেই।

তুহিন হেসে নিজের গাল নিজে টেনে ধরে বললো,
— এতোদিন ভাই রান্না করে খাওয়াতো এবার থেকে ভাবি খাওয়াবে। ভাবতেই খুশি লাগছে আমার একটা ভাবি আসবে তারপর একটা কিউট গলুমলু পুতুল আসবে। আমি চাচ্চু হবো।

তুহিনের কথা শুনে সবাই একসাথে হেসে দিলো।
·
·
·
চলবে…………………………

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here