হৃদয়ের_কোণে (পর্ব ৩১)

0
1668

#হৃদয়ের_কোণে (পর্ব ৩১)
#নাহার
·
·
·
অনেকদিন পর আজ নিরা কলেজে এসেছে। ক্লাস শেষে সেদিনের ক্লাসমেটদের সাথে দেখা করতে যায় কলেজের মাঠে। সেখানে দিয়া নামের মেয়েটার সাথে নিরা কথা বলে সেদিনের রেস্টুরেন্টের ব্যাপার নিয়ে। নিরা বললো,
— তোমরা সেদিন ওই ছেলেকে কোথায় পেলে? আর এটা তোমাদের সারপ্রাইজ গেইম?

— আরে ছেলেটাকে আমরা পাইনি। সে নিজ থেকেই এসেছে। আর এসেই তোমার সামনে বসে গেছে। প্রথমে আমরা অবাক ছিলাম ওকে দেখে। পরে তুমি যখন চোখ খুলে ওকে দেখে কিছু বলোনি ভাবলাম তোমার বয়ফ্রেন্ড।

নিরা কিছু না বলে সামনের দিকে তাকিয়ে আছে। দিয়া মেয়েটা আবার বললো,
— আমাদের সারপ্রাইজ গেইম সামান্য একটা বিষয়ে। দাড়াও তোমাকে দেখাচ্ছি।

দিয়া ব্যাগ থেকে কিছু প্লাস্টিকের টিকটিকি, তেলোপোকা, কেচো আরো অনেক কিছু বের করে। যা দেখেই নিরার গা গুলাচ্ছে যদিও এগুলো প্লাস্টিকের। দিয়া বললো,
— আমরা এগুলা দিয়ে দুষ্টামি করি। নতুন ক্লাসমেটদের সাথে রেস্টুরেন্টে গিয়ে এমন ফাইজলামি করি আর সেগুলো ভিডিও করি। তবে আজ পর্যন্ত কোনো ভিডিও কোথাও আপলোড দি নি। এগুলা করি শুধু মন খারাপের সময় যাতে হাসতে পারি তাই। আচ্ছা ছেলেটা কে ছিলো?

— আমাদের পাশের বাড়ির।

— ওহ।

নিরা চলে আসে। দিয়াও ওর বান্ধুবিদের সাথে গিয়ে বসে পড়ে। দিয়া আবার উঠে দৌড়ে নিরার কাছে এসে বললো,
— শুনো আরেকটা কথা বলি।

নিরা দাঁড়িয়ে যায়। দিয়ার দিকে তাকিয়ে বললো,
— হ্যাঁ বলো।

— ওই ছেলেটার থেকে দূরে থেকো। একদম সুবিধার মনে হয় না। ওকে এর আগে পার্কে দুই তিনটা মেয়ের সাথে দেখেছি।

দিয়া চলে আসে কথাটা বলে। নিরা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে কারণ সে তুহিনের মতো লম্পটের হাত থেকে বেঁচে গেছে তাই। কিন্তু তুহিন সেদিন রেস্টুরেন্টে কেনো গেছিলো? তাহলে সে কি রাফিন আর নিরার মাঝে ঝগড়া সৃষ্টির জন্য গেছিলো? নিরা এসব ভাবনা সাইডে রেখে দেয়। এখন সব ঠিকঠাক আছে তাই এইসব নিয়ে ভাবার কোনো দরকার নেই। এখন ভাবনা মেহরাবকে নিয়ে। সেদিন সেই নিরাকে রুমে টেনে নিয়ে গেছিলো। একসাথে দুজনকে রুমে পেলে কেলেংকারী হবে আর তাদের বিয়ে দিয়ে দেবে এসব ভেবে। কতটা ফাউল ভাবনা ছিলো তার। তবে সে বলেছে নিরাকে বিয়ে করতে না পারলে অন্য রাস্তা বের করবে। তখন ঝুমুর এসে ঠাটিয়ে চড় মারে মেহরাবকে। ঝুমুর তো একপ্রকার গুন্ডিগিরি শুরু করে দিয়েছিলো নিরাই থামিয়ে ঝুমুরকে নিয়ে আসে। আপাতত মেহরাবও বিদায় হয়েছে বাসা থেকে। নিরা আবার স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বাসায় আসে।

বিয়ের জন্য আর মাত্র একদিন বাকি। মানে কালকেই বিয়ে। তাই সবাই ব্যস্ত। এই কদিন মানুষ কম ছিলো এখন আবার বিয়ে উপলক্ষে মানুষের ভিড় বাড়িতে। নিরা কোনোকিছু না ভেবেই রুমে চলে আসে। ফ্রেস হয়ে বিছানায় বসে ভাবতে থাকে কাশফির কথা। একটা ব্যাপার নিরা কিছুতেই বুঝতে পারছে না দুজন দুজনে এতো ভালোবাসে তাহলে তূর্য কেনো দূরে সরে যাচ্ছে। এইসব ভাবতে ভাবতেই শুয়ে পরে আর তলিয়ে যায় ঘুমের দেশে।

————————————————–
তুহিনকে একটা স্পেশাল কেবিনে রাখা হয়েছে। এই কদিনে অবস্থা ভালো তার। তবে সে হাটতে পারবে না এ কদিন। এরপরের দিনগুলোতেও হাটতে পারবে নাকি সন্দেহ করছে ডাক্তাররা। হুইলচেয়ারে করে আনা নেয়া করা হয় তাকে।

তূর্যকে এর পরদিন থেকেই আর পাওয়া যায়নি। তুহিন তার মাকে জিজ্ঞেস করেছে তিনি বললেন “হয়তো কোথাও গিয়ে নষ্টামি করছে। তুই ওর কথা বাদ দে। বাচুক মরুক তাতে আমাদের কি।” তুহিনের অবস্থা খারাপ বেশি তাই আর এতো কথা বাড়ায়নি। তবে কেনো যেনো মনে মনে সে তার ভাইকে খুজচ্ছে। আর একটা অনুশোচনা কাজ করছে ভেতরে। যদিও সেটা প্রকাশ করছে না।

তার এক মন বলছে সে নিরার সাথে যা করেছে তা খুব খারাপ হয়েছে আবার আরেক মন বলছে যা হয়েছে ঠিক করেছে। এসব ভাবতে গেলেই তুহিনের নিজেকে পাগল মনে হয়। ভেতরে ভেতরে গিলটি ফিল হয় অনেক। তুহিন মনে ননে বললো,
— ভাই তুই থাকলে এমন লাগতো না আমার। তোর প্রতিটা কথা যাদুর মতো কাজ করে। এক মুহুর্তেই মনটা হালকা হয়ে যায়। কোথায় তুই ভাই? অনেক খারাপ করেছি তোর সাথে আমি। একবার বাড়ি ফিরে যাই তোর যোগ্য অধিকার তোকে ফিরিয়ে দেবো।
·
·
·
চলবে……………………….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here