#হৃদয়ের_কোণে (পর্ব ১৮)
#নাহার
·
·
·
“স্বল্পক্ষণ ব্যবধান সহেনা হৃদয়ে আমার।
তারে ছাড়া দিন কাটে না,
তারে ছাড়া মন হাসে না রে,
দূরে দূরে, বহুদূরে যাবি না তুই মোরে ছেড়ে।”
সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত সাড়ে আটটা। রাফিন এখনো বাসায় ফেরেনি। রাফিনের অপেক্ষা করতে করতেই আনমনে গানের কয়েকটা লাইন বেরিয়ে এলো নিরার। ছাদে দাঁড়িয়ে শীতের হাওয়া গায়ে মাখছে নিরা। শীতের চাদর জড়িয়ে আনমনে ভাবছে রাফিনের কথা।
আচ্ছা ডাক্তার কি আমাকে মেনে নিবে? আমিতো তুহিনের সাথে সম্পর্কে ছিলাম সব জেনে কি মানবে আমায়? ভালোবাসবে? উনি তো অনেক ভালো স্ট্যাটাসে আছে। আর আমার এক বছর গ্যাপ চলে গেছে। আচ্ছা ডাক্তারের জীবনে অন্য কোনো মেয়ে নেই? থাকতেও পারে এতো সুদর্শন একজন ডাক্তার।
এইসব ভাবতে ভাবতেই নিরার একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে। ছাদ থেকে নেমে আসে। সিড়ি দিয়ে নামছে আর এইসবই ভাবছে। নিচতলায় সিড়ির কাছে এসে নিরা থমকে দাঁড়ায়। রাফিন মেইন ডোর অতিক্রম করে ঘরে ঢুকছে। একহাতে এপ্রোন ভাজ করা অন্য হাতে ফোন টিপছে৷ নিরা এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে রাফিনের দিকে। নিরার ঠোঁটে হাসি। কিন্তু সেই হাসি বেশিক্ষণ রইলো না। রাফিন নিরাকে দেখেও না দেখার ভান করে পাশ কাটিয়ে উপরে উঠে গেলো। নিরার জলজল মুখটায় অন্ধকার নেমে এলো। রাফিনের এমন অচেনা ব্যবহার, এতো অবহেলা সহ্য হচ্ছে না নিরার। তুহিনের কাছ থেকে অবহেলা পেয়েও এতোটা কষ্ট লাগেনি। কিন্তু রাফিনের নিরবতা নিরাকে ভেতরে ভেতরে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে।
নিরা রাফিনের চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। রাফিন একবারো পিছন ফিরে তাকায়নি। নিরা মনে মনে ঠিক করে বললো,
— আর জ্বালাবো না আপনাকে। আর যাবো না আপনার কাছে। এতোটা বদলে গেছেন আপনি এখন আমাকে দেখেও না দেখার মতো করে থাকেন। এতোটা অবহেলা করার কি আছে? আমিতো মানুষ। ভুলতো মানুষেরই হয়।
ছলছল চোখে তাকিয়ে আছে এখনো রাফিনের চলে যাওয়ার দিকে। রাফিন অনেক আগেই চলে গেছে। তাও তাকিয়ে আছে নিরা। আর সহ্য করতে পারছে না। তাই সেও নিজের রুমে এসে বসে আছে। খুব কান্না পাচ্ছে। কিন্তু চোখ থেকে পানি নামছেই না। হৃদয়টা ফেটে যাচ্ছে কিন্তু কাউকে মুখ ফুটে বলতেও পারছে না। নিরার ইচ্ছে করছে রাফিনের কাছে ছুটে যেতে। তাকে সব বলতে ইচ্ছে করছে। বারবার বলতে ইচ্ছে করছে ডাক্তার আপনি আমার। আমি আপনাকে ভালোবাসি। আপনি শুধুই আমার। কিন্তু পারছে না। প্রিয় মানুষটা সামনে থেকেও অনুভূতি ব্যক্ত করতে না পারার মতো যন্ত্রণা আর নেই। মেঝেতে বসে বেডে মাথা রেখে নিরবে কান্না করে নিরা। কিছু একটা ভেবে উঠে দাঁড়ায়।
চোখের পানি মুছে নিজেকে শক্ত করে নেয়৷ না এভাবে সে হেরে যেতে পারে না। এতো সহজে সে ছেড়ে দিবে না। শেষ পর্যন্ত চেষ্টা চালিয়ে যাবে। এরপরেও যদি না পায় তাহলে আর আপসোস থাকবে না। এইভেবে শান্তনা দিবে যে “আমি শেষ পর্যন্ত তাকে আমার করে নিতে চেয়েছি।” গায়ের চাদরটা ছুড়ে মারে বেডে। এখন শীত লাগছে না৷ উত্তেজনায় ঘামছে। রাফিনের রুমে যাবে নিরা। হৃদপিন্ড দ্রুত উঠানামা করছে। নিশ্বাস ঘন হয়ে এসেছে। দ্রুত রুম ত্যাগ করে রাফিনের রুমের সামনে এসে দাঁড়ায়। নিজেকে আরেকবারের মতো শক্ত করে নেয়।
নক করা ছাড়াই ভেতরে চলে যায় নিরা। রাফিন বেডে শুয়ে বুকের উপর লেপটপ রেখে কাজ করছে। নিরা রাফিনের পায়ের কাছে এসে দাঁড়ায়। রাফিনকে উদ্দেশ্য করে বলে,
— এই ডাক্তার আপনি এখন এমন করছেন কেনো?
রাফিন লেপটপ সরিয়ে উঠে বসে। নিরার দিকে অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে। যার অর্থ আমার অনুমতি ছাড়া প্রবেশ কেন করলে? নিরা ভয় পায় কিন্তু সেটা প্রকাশ করছে না। নিরা আবার বলে,
— আপনি এখন আমার সাথে কথা বলেন না কেন?
— প্রয়োজন মনে করি না।
নিরা আহত হয়। আহত চোখে রাফিনের দিকে তাকায়। রাফিনও নিরার চোখের দিকে তাকায়। নিরার চোখ দুটো রক্তজবার মতো লাল হয়ে গেছে। নাক লাল হয়ে আছে। রাফিন খুব বুঝতে পেরেছে নিরা কান্না করে এসেছে। নিরা নিজেকে সামলে নিয়ে জিজ্ঞেস করে,
— প্রয়োজন মনে করেন না মানে? মঘের মুল্লক পেয়েছেন হ্যাঁ? এতোদিন তো শাসন করেছেন এখন কেনো এমন করছেন?
— নিরা তুমি এখন বড় হয়ে গেছো। নিজের সিদ্ধান্ত নিজেই নিতে পারো।
— না পারি না।
রাফিন কড়া নজরে তাকায়। নিরা ঢোক গিলে কয়েকবার। আবার নিজেকে সামলে নিয়ে বলে,
— আগেও পারতাম। তখন কেন শাসন করেছেন? হুহ! আর এখন এতো ঢং দেখাচ্ছেন। বুঝি না ভেবেছেন? বেশ বুঝতে পারছি এখন আমাকে ভালো লাগছে না তাই না।
— বের হও রুম থেকে। তোমার সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করছে না।
রাফিন উঠে দাঁড়ালেই নিরা রাফিনের কলার ধরে টেনে বলে,
— এতো সহজে ছাড়ছি না বুঝলেন ডাক্তার সাহেব। আমাকে যে এর আগে শাসন করেছেন, ভালোবাসা দেখিয়েছেন এখনো সব চাই আমার। চাই মানে চাই।
রাফিন নিরার হাত থেকে কলার ছাড়িয়ে নিরাকে রুম থেকে বের করে দেয়। নিরা রাগে ফুসতে থাকে। নিজের ঘরের দিকে এগোতে এগোতে বলে,
— যখন যাই ইচ্ছা তাই করবে নাকি? আমাকে মানুষ মনে হয় না? যত্তসব। একবার ইচ্ছা হয়েছে শাসন করেছে, রসের রসের কথা বলেছে, ভালোবাসা দেখিয়েছে এখন আর এখন আমাকে রুম থেকে বের করে দিচ্ছে। কত্তবড় সাহস। আমিও দেখে নিবো কিভাবে আমাকে নিজের কাছ থেকে সরায়।
আহ্! বলেই নিরা ধপাস করে মেঝেতে পড়ে যায়। রাফিনকে বকতে বকতে রুমে না গিয়ে সিড়ির রেলিং-এর সাথে পা বারি খেয়েছে। নিরা পা ধরে বসে আছে। নিরা এবার নিজেকে বকতে শুরু করলো,
— নিরা তুই দেখে চলতে পারিস না? ডাক্তার সাহেব ঠিক বলেছে তুই একেবারেই অন্যমনস্ক হয়ে থাকিস। দেখ এখন কি হয়েছে পায়ের। উফ! দম যেনো বের হয়ে যাবে। সব আপনার জন্য হয়েছে ডাক্তার সাহেব। এভাবে আমাকে রুম থেকে বের করে না দিলে আমি এখন এখানে এভাবে ব্যাথা পেতাম না। আপনার জন্য ব্যাথা পেয়েছি এখন আপনি চিকিৎসা করবেন।
নিরা আস্তে-ধীরে উঠে দাঁড়ায়। উদ্দেশ্য আবার রাফিনের রুমে যাওয়া। খুড়িয়ে খুড়িয়ে হাটছে। তবে খুব ভালোও লাগছে কারণ আবার রাফিনের কাছাকাছি যাবে তাই। নিরা এবারো নক না করেই রুমে ঢুকে গেলো। রাফিন বেডে বসে আছে উলটো দিক করে। নিরা গিয়ে রাফিনের সামনে দাঁড়ায়। রাফিন আবার রাগি চোখে তাকায় নিরার দিকে। নিরা আমতা আমতা করে বললো,
— শখ করে আসিনি আপনার কাছে।
পা দেখিয়ে বললো,
— দেখুন পায়ে ব্যাথা পেয়েছি তাই এসেছি। আপনার জন্য আমি ব্যাথা পেয়েছি তাই আপনিই চিকিৎসা করবেন আমার। তাড়াতাড়ি ফাস্ট এইড বক্স নিয়ে আসুন। পায়ে ব্যাথা করছে খুব।
রাফিন কিছু বলছে না। নিরার পায়ের দিকে একবার তাকিয়ে আবার নিরার দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকায়। নিরা এবার ভয় পায়। যদি থাপ্পড় মারে। তাই আগে আগেই বললো,
— ঠিক আছে চিকিৎসা করার দরকার নেই। আমি অন্য কারো কাছ থেকে করিয়ে নেবো। এভাবে তাকিয়ে থাকার কি আছে? চলে যাচ্ছি আমি।
কথাটা বলেই নিরা চলে যাওয়ার জন্য দরজার দিকে পা বাড়ায়। নিরার কোমড় অতিক্রম করে নেমে আসা বেণুনি ধরে রাফিন টান দেয়। নিরা বাম পাশ করে ঘাড় ঘুরিয়ে রাফিনের দিকে তাকায়। নিরার কাজল কালো চোখ দুটো আর গোলাপি ঠোট দুটো দেখা যাচ্ছে। যা রাফিনকে খুব খুব বেশিই মুগ্ধ করে। নিরা অবাক হয় আবার ভয় পায় হঠাৎ রাফিন ওর বেণুনি কেনো ধরলো এই ভেবে। রাফিন এবার একটু জোরে টান দেয় বেণুনি ধরে। আর নিরা হুমড়ি খেয়ে পড়ে রাফিনের সামনে বেডে। রাফিন খুব যত্ন সহকারে নিরাকে বেডে উঠিয়ে বসায়। শক্ত করে ধরলে এই বুঝি নিরা খুব ব্যাথা পাবে সেই ভয়ে আলতো হাতে স্পর্শ করে।
নিরা খুব বেশি অবাক হয়েছে। একটু আগেই না ওকে রুম থেকে বের করে দিয়েছে। আর এখন কত সুন্দর করে যত্ন করছে। রাফিন ফাস্ট এইড বক্স এনে নিরার পা উপরে উঠিয়ে সেভলন লাগায়।
ছিড়ে যাওয়া জায়গায় সেভলন লাগানোতে ছ্যাত করেই জ্বলে উঠে। নিরা আহ্ করে শব্দ করে। রাফিন ভয়ার্ত চোখে নিরার দিকে তাকায়। নিরা চোখ খিচে বন্ধ করে বেডের চাদর খামছে ধরে। রাফিন পরম যত্নে ফু দিয়ে সেভলন এবং পরে মলম লাগিয়ে দেয়। নিরা এখনো চোখ খিচে বন্ধ করে বসে আছে। রাফিন নিরা দিকে একটু এগিয়ে বসে। নিরার মুখের উপর থেকে ছোট ছোট চুল সরিয়ে কানের পেছনে গুজে দেয়। নিরা চোখ খুলে দেখে রাফিন ওর খুব কাছে বসে আছে আর হাসছে। নিরা মনে মনে বলে,
— ডাক্তার এভাবে হাসছেন কেনো? আপনি জানেন না আপনার এই অমায়াবিক হাসি আমাকে পাগল করে। আপনার প্রেমে ফেলে বারবার। বুকের মাঝে তোলপাড় শুরু হয় আপনার এই হাসি দেখলে৷ শুনেছি মেয়েদের হাসিতে ছেলেরা পাগল হয় আর আমি আপনার হাসি দেখে পাগল হই ডাক্তার সাহেব।
নিরাকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে রাফিন মুচকি হেসে নিরার মুখের কাছে মুখ নিয়ে বলে,
— এভাবে তাকিয়ে থাকলে আমার যে লজ্জা হয় বুঝোনা তুমি লজ্জাবতী।
রাফিনের এমন কথায় নিরা চমকায়, হৃদপিন্ডে হাতুড়িঘাত শুরু হয়, লজ্জায় মাথা নিচু করে নেয়। নিরার এমন অবস্থা দেখে রাফিন শব্দ ছাড়াই হাসে। নিরার হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বলে,
— লজ্জাবতী! আমার লাজুকলতা! তুমি এতোটা অবুঝ কেনো একটু বলবে। জানো কতটা ভয়ে ছিলাম যখন তুমি তুহিনের সাথে বের হতে। ভয়ে আমার বুক কাঁপতো। এই বুঝি তুহিন তোমার কোনো ক্ষতি করে দিলো। সবসময় নজরে নজরে রেখেছি। তোমার বান্ধুবিদের থেকে খোঁজ নিয়েছি। বাসায় খোঁজ নিয়েছি। রাতদিন কতটা টেনশনে ছিলাম তুমি জানো?
নিরা হালকা স্বরে বললো,
— সরি।
— হুম! সরি বলছো তুমি। আর আমার অবস্থা যে টাইট হয়ে গেছে সেটার কি হবে শুনি?
রাফিনের কথা শুনে নিরা মাথা নিচু করে মুচকি হাসে। সেটা রাফিনের চোখ এরায়নি। রাফিন নিরার থুতনি ধরে মুখটা উঁচু করে একটু কড়া গলায় বললো,
— আমি টেনিশনে ছিলাম আর তুমি হাসছো। কেনো হাসছো? এখানে হাসির কি আছে?
নিরা এবার বেশ ভয় পায়। এই বুঝি আবার আগের রাফিন জেগে উঠেছে। এখন হয়তো তাকে ধাক্কা দিয়ে ঘর থেকে বের করে দিবে। নিরা ভয়ে ভয়ে রাফিনের দিকে তাকায়। নিরার ভয়ার্ত চেহারা দেখে রাফিন ফিক করে হেসে দেয়। কাছে এসে গাল টেনে দেয়। তারপর বলে,
— নিরা তুমি এতো ভীতু কেনো বলো? সামান্য একটা কথায় কতটা ভয় পেয়ে গেছো তুমি। ভীতু রাণী আমার।
আবার গাল টেনে দেয়। রাফিন এবার নিরার কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়ে। নিরা এবার বেশ লজ্জাই পাচ্ছে। রাফিন নিরার হাত টেনে রাফিনের চুলের ভাজে নিয়ে গিয়ে বলে,
— এতোদিন কি জালানোটাই না জালিয়েছো তুমি। সেদিন রুমের ভেতরে বাজিয়ে ফুটিয়ে কতটা ভয় দেখালে আমাকে। এখন আমার চুলে বিলি কেটে দাও। আমার মাথা ব্যাথা না যাওয়া পর্যন্ত ছাড়ছি না তোমাকে।
রাফিন নিরার দিকে তাকিয়ে চোখ মারে। নিরা এই মূহুর্তে লজ্জায় শেষ হয়ে যাচ্ছে। রাফিন শান্ত চাহনিতে কিছুক্ষণ নিরার দিকে তাকিয়ে থেকে চোখ বুজে নেয়। নিরা রাফিনের চুলে বিলি কেটে দেয়। কিছুক্ষণ পর রাফিন শান্ত স্বরে বলে,
— নিরা তোমাকে না বলেছি আমার সামনে ওড়না পড়ে আসবে৷
নিরা চমকে উঠে। নিজের দিকে তাকায় একবার। রাফিন মুচকি হেসে বলে,
— নিরা তোমার দিকে একটু তাকাই? তোমার লজ্জামাখা মুখটা একটু দেখতে চাই।
এই কথা শুনে নিরার লজ্জা আরো বেড়ে যায়। নিরা তাড়াতাড়ি রাফিনের দুচোখে হাত দিয়ে চেপে ধরে। রাফিন শব্দ করে হেসে বলে,
— এভাবে চোখে হাত দিয়ে রেখেছো কেনো?
— যাতে আপনি আমাকে দেখতে না পারেন। মাথা উঠান আমি যাবো রুমে।
— নাহ। যেতে দিবো না। এতোক্ষণ তুমি আসতে চাইছিলে আমার কাছে। আর এখন আমি তোমাকে যেতে দিবো না।
নিরা করুন সুরে বললো,
— প্লিজ ডাক্তার।
রাফিন হাসে। তারপর নিরাকে বললো,
— দুষ্টামি করেছি আমি। নিরা আমি তোমাকে বারবার এই একটা কথা বলি কারণ তোমার লজ্জামাখা চেহারা আমার খুব ভালো লাগে তাই। তোমার দিকে আমি কখনো বাজে নজরে বা কুমতলবে তাকাইনি। তুমি আমার সম্পূর্ণা, আমার প্রেয়সি, আমার প্রিয়তমা। তোমার দিকে আমি ওভাবে তাকাতে পারি বলো? তোমাকে ভয় দেখানোর জন্যই এমন দুষ্টামি করি। বুঝেছো?
— হুম।
— এবার হাত সরাও আমার চোখের উপর থেকে।
— না।
— এখনো না? আচ্ছা আমার চুলে বিলি কাটো। ঘুমাই একটু তোমার কোলে।
নিরা আর কিছু বললো না। রাফিনের চুলে এক হাতে বিলি কেটে দিচ্ছে আরেক হাতে চোখের উপর চেপে ধরেছে যাতে চোখ খুলতে না পারে।
———-
হঠাৎ রাফিনের চোখ ছুটে যায়। চোখ খুলে ভালো করে তাকিয়ে দেখে নিরা ওর মাথার পাশে বসে এখনো চুলে বিলি কেটে দিচ্ছে আর ঘুমে ঢুলছে। রাফিন উঠে বসে। নিরাও সটান হয়ে বসে। রাফিন একটু এগিয়ে এসে নিরার হাত ধরে বলে,
— বাহ্ তোমার হাতে যাদু আছে। আমার চুলে হাত দিতে না দিতেই আমার ঘুম চলে এসেছে।
কথাটা বলেই রাফিন নিরার হাতে চুমু দেয়। নিরা চোখ বড়বড় করে রাফিনের দিকে তাকিয়ে আছে। রাফিন বেড থেকে নেমে মুচকি হেসে নিরাকে কোলে তুলে নেয়। নিরা একটা বড়সড় ধাক্কা খেলো। কথা নেই বার্তা নেই এভাবে হুট করেই রাফিন ওকে তুলে নিলো। নিরা ছুটাছুটি করছে৷ রাফিন ধমক দিয়ে বললো,
— এভাবে ছুটাছুটি করছো কেনো? শান্ত হও নাইলে কোল থেকে ফেলে দিবো।
নিরা চুপ হয়ে যায়। রাফিন ধমক দেয়াতে একটু কষ্ট পেয়েছে। তাই রাফিনের কাধে নিরা একটা চিমটি দেয়। রাফিন আহ্ করে শব্দ করে নিরার দিকে তাকায়৷ নিরা দুইহাতে মুখ ঢেকে নেয়। রাফিন নিরার কপালে তার নাক ঘষে বলে,
— চিমটি দিলে কেনো?
— আমাকে ধমক দিয়েছেন তাই।
— আচ্ছা তাই?
— হুম।
— হাত সরাও মুখের উপর থেকে।
নিরা হাত সরিয়ে রাফিনের দিকে তাকায়। রাফিন হাসছে। নিরা ঠোঁট ফুলিয়ে বলে,
— আপনি আমাকে এতোদিন অবহেলা কেনো করেছেন?
— ইচ্ছে করে।
নিরা চোখ বড়বড় করে রাফিনের দিকে তাকায়। রাফিন নিরাকে নিয়ে নিরার রুমে চলে আসে। নিরাকে বেডে বসিয়ে সেও বসে নিরার সামনে। নিরা এক ঝটকায় কাথা গায়ের উপর টেনে নেয়। রাফিন চোখ ছোট ছোট করে নিরার দিকে তাকায়। নিরা বললো,
— ইচ্ছে করে কেনো অবহেলা করেছেন? আপনি জানেন আমি কত কষ্ট পেয়েছি।
নিরা কাঁদো কাঁদো হয়ে গেলো। রাফিন নিরার গাল টেনে বললো,
— তোমার গাল দুটো টেনে দেয়ার ইচ্ছা অনেকদিন ধরেই ছিলো।
নিরা রাফিনের কলার ধরে টেনে একটু সামনে এসে বলে,
— এই ডাক্তার কথা ঘুরাবেন না। বলুন কেনো এমন করেছেন?
নিরা ছলছল চোখে রাফিনের দিকে তাকায়। রাফিন নিরার চোখের পানি মুছে দিয়ে বলে,
— দেখছিলাম তুমি কি করো। তাই এমন করেছি। আমাকে মিস করো কিনা সেটা দেখছিলাম। তাই এমন নাটক করেছি। সত্যি বলতে খুব মজা পেয়েছি আমি।
নিরা কিছু বললো না। ভেতরে ভেতরে রাগে ফুসছে। রাফিনের কলার ছেড়ে দিয়ে কাথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়লো। রাফিন কাথার উপর নিরার কলাপের সাথে কপাল ঠেকিয়ে বললো,
— শুভ রাত্রি লজ্জাবতী।
রাফিন উঠে চলে আসে। রুমের বাতি নিভিয়ে দরজা আটকে দিয়ে বের হয়ে আসে। মুচকি হেসে নিজের রুমে চলে যায়। নিরা যখন বুঝতে পারলো রাফিন চলে গেছে লাফ দিয়ে উঠে বসে। সামনের দিকে তাকিয়ে চোখ ছোট ছোট করে বললো,
— ইচ্ছে করে আমাকে অবহেলা তাই না। এটার শোধ তো আপনার থেকে আমি নিবোই ডাক্তার সাহেব। শুধু সকালটা হোক। তারপর দেখুন আমি কি করি। ওয়েট এন্ড ওয়াচ। এখন ঘুমি পড়ছি হুহ।
নিরা আবার কাথা মুড়ি দিয়ে সটান হয়ে শুয়ে পড়ে। কাথার ভেতরে ঢুকে মাথায় শয়তানি বুদ্ধির দলা পাকাচ্ছে। হাহা করে হেসে ঘুমিয়ে পড়ে।
·
·
·
চলবে…………………….