হৃদয়ের_কোণে (পর্ব ১৪)
#নাহার
·
·
·
” ১১ ডিসেম্বর,,
আপনাকে খুব মিস করি ডাক্তার। কেনো জানি না তবে আমি খুব করে চাই আপনি ফিরে আসুন।”
নিরা ডায়েরিতে এই কটা লাইন লিখে ডায়েরি বন্ধ করে নেয়। বেলকনিতে বসে ছিলো এতোক্ষণ। এখন ডায়েরিটা নিয়ে রুমে আসলো।
সন্ধ্যার পর পরই তুহিন ফোন করে বলেছে আজকে দেখা করতে পারবে না তার একটা বিশেষ কাজ আছে তাই। কিন্তু কালকে অবশ্যই দেখা করবে। এই বলে কল কেটে দেয়। নিরাও একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে৷ ডায়েরিটা হাত থেকে রাখতেই নিরার রুমের দরজায় নক পড়ে। নিরা তাড়াতাড়ি ডায়েরি লুকিয়ে দরজা খুলে দেয়।
কাশফি এবং ফাতেমা দাঁড়িয়ে আছে। কাশফি হন্তদন্ত করে রুমে ঢুকে নিরাকে বলে,
— তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নে।
— কেনো?
— আমরা একটা জায়গায় ঘুরতে যাচ্ছি। তুইও যাবি চল।
— আমার ইচ্ছে নেই। তোমরা যাও।
ফাতেমা এসে পেছন থেকে নিরার পেট শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। কাশফি বলে,
— না গেলে এখন তোর পেটে চাপ দিয়ে আঁতুড়ি বের করে ফেলবো। গো এন্ড গেট রেডি ফাস্ট।
— প্লিজ আপু আমি না যাই।
ফাতেমা পেছন থেকে বললো,
— তুমিই তো আমাদের স্পেশাল গেসট। তুমি না গেলে কেমনে হবে?
— ফাতেমা প্লিজ আমার ভালো লাগছে না। তোরা যা।
কাশফি ঝাজালো কণ্ঠে বললো,
— কেন ভালো লাগছে না? ঢং করবি না তাড়াতাড়ি কর।
— আপু প্লি….
নিরাকে আর কোনো কথা বলতে না দিয়ে টেনে হিচঁড়ে নিচে নিয়ে আসে। দুইজন দুইদিক থেকে নিরার হাত শক্ত করে ধরে রেখেছে যাতে ছুটতে না পারে। একটু সামনে যেতেই নিরা দেখলো নুপুর, ঝুমুর এবং প্রভা দাঁড়িয়ে আছে। নিরা ওদের দেখে বললো,
— তোরা এখানে কেন?
ঝুমুর ভাব দেখিয়ে বললো,
— দাওয়াতে যাচ্ছি।
— কিসের দাওয়াত?
— গেলেই দেখতে পাবি। চল তাড়াতাড়ি।
— তার মানে তোরাও আমাদের সাথে যাচ্ছিস?.
নুপুর একহাতে চুল উড়িয়ে বলে,
— ইয়েস।
নিরা কিছু বললো না। কারণ সে বুঝতে পারছে না আসলে হচ্ছেটা কি। আরেকটু সামনে যেতেই দেখলো নাঈম, ফাহিম, ফায়াজ এবং কৌশিকের প্রেমিকা আফিয়া দাঁড়িয়ে আছে। নিরা ওদের দেখে আরেক দফা অবাক হলো। ওদের কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
— তোরা এখানে কি করছিস? আর আফিয়া আপু তুমি এখানে সাঙ্গ পাঙ্ক নিয়ে দাঁড়িয়ে আছো কেন?
— তুমি বুঝবে না ননদিনী। চলো।
নিরা এবার আরো বেশ অবাক হলো ওদের এমন অদ্ভুত আচরণে। তবে সবাই মিলে হাটতে ভালোই লাগছে। রাস্তায় তেমন মানুষজন নেই। একসাথে এতজন মানুষ দলবেঁধে হাটছে। আবার হালকা হালকা শীতও পড়ছে। চুল উড়ছে ওড়নাটাও উড়ছে।সব মিলিয়ে দারুণ লাগছে নিরার। তারা সবাই এসে একটা রেস্তোরাঁর সামনে দাঁড়িয়ে যায়। প্রভা বললো,
— এখানে একটু বসি। হাটতে হাটতে পা ব্যাথা হয়ে গেছে।
প্রভার দেখাদেখি সবাই বসে পড়েছে। মেইন রাস্তায় অল্প যানবাহন চলছে। রাস্তার অপরপাশে কৌশিক এবং রাফিন দাঁড়িয়ে আছে। কৌশিক গাড়ির ছাদে শুয়ে শুয়ে মোবাইল টিপছে আর রাফিন ডান হাতের কোনা আঙুলের নখ কামড়াচ্ছে। খুব চিন্তিত সে এই মূহুর্তে।
এদিকে সবাই মিলে গল্প করছে হাসাহাসি করছে। নিরা দাঁড়িয়েই ওদের কথা শুনে হাসছে। তাদের পাশের রেস্তোরাঁর সামনের দিকে সম্পূর্ণ গ্লাস দিয়ে তৈরি। বাহির থেকে দেখা যায় ভেতরে কে কে বসে আছে। এদিকে সবাই খুব উত্তেজিত কিন্তু সেটা নিরার সামনে কেউ প্রকাশ করছে না। প্রভা মনে মনে বলছে,
— প্লিজ নিরা একবার তোর বা পাশের রেস্তোরাঁর ভেতরে তাকা। প্লিজ।
হাসাহাসির এক পর্যায়ে নিরা বা দিকে তাকায়। তখন সেখানে উপস্থিত সবাই চুপ করে নিরার দিকে তাকিয়ে আছে। নিরা হাসতে হাসতে বা দিকে তাকিয়ে আবার সামনের দিকে তাকিয়ে থমকে যায়। হাসি বন্ধ হয়ে যায় নিরার। দ্রুত সে রেস্তোরাঁর ভেতরে তাকায়। ভেতরে তাকিয়ে নিরার চোখে পানি টলমল করতে থাকে৷ না চাইতেই মুখ থেকে বের হয়,
— তুহিন তুমি আমাকে ধোকা দিলে কেন?
ঝুমুর এসে বলে,
— দোস্ত আমার মনে হচ্ছে ওই ছেলেটা তুহিন। দেখ কেমন মেয়েটার সাথে লেগে বসে আছে।
নুপুর এসে বললো,
— আরে ভুল দেখছিস। তুহিনের মতো লাগছে তুহিন না।
কথাটা বলেই নুপুর নিরার দিকে তাকায়। নিরা ঝুমুরকে নিয়ে রেস্তোরাঁর ভেতরে যায়। আজ কিছু একটা হবেই।
এদিকে সবাই দাঁড়িয়ে যায়। ফাহিম এবং নাঈম লাফিয়ে উঠে বলে,
— ইয়েস! এবার এই শয়তান থেকে আপু ছাড়া পাবে।
রাফিন খুব ভয়ে আছে। ভেতরে তুহিন যদি নিরার গায়ে হাত তুলে তাহলে সে তুহিনেকে খুন করে ফেলবে। রাফিন এদিক সেদিক পায়চারি করছে। কৌশিক রাফিনকে বললো,
— এতো টেনশন নিস না চিল কর।
— তুহিন যদি নিরার গায়ে হাত তুলে?
— তুলবে না।
— আচ্ছা যদি নিরাকে ভুল ভাল বুঝিয়ে আবার ওর জালে ফাসিয়ে ফেলে তখন?
— আরে ভাই এতো চিন্তা করিস না। দেখ কি হয়। আমি নিরাকে যতটুকু চিনি আজকে নিরাই থাপ্পড় দিবে তুহিনকে।
রাফিন আর কিছু বললো না। রেস্তোরাঁর ভেতরে কি হচ্ছে সেটা দেখছে। বাহিরে নুপুর মোবাইল ধরে ক্যামেরা জুম করে ভিডিও করছে। আফিয়া, কাশফি, প্রভা এবং ফাতেমা চার জন মিলে ফটোশুট করছে। আর বাকি তিন ভাই নাঈম, ফায়াজ এবং ফাহিম চুপ করে দাঁড়িয়ে মনে মনে আল্লাহ আল্লাহ করছে৷
নিরা ভেতরে যেতেই দেখলো তুহিন মেয়েটার গালে চুমু দিলো। নিরা গিয়ে তুহিন সামনে দাঁড়ায়। তুহিন এই মুহুর্তে এখানে নিরাকে দেখে বেশ চমকে যায়। নিরা কাঁদো কাঁদো কণ্ঠে জিজ্ঞেস করে,
— মেয়েটা কে?
— তুমি এখানে কি করছো?
— আমি এখানে কি করছি সেটা কথা না। কথা হলো মেয়েটা কে?
— আরে ও হচ্ছে তিশা। আমার কাজিন। আজকেই আমেরিকা থেকে এসেছে।
— কাজিন আমারও আছে। কই আমিতো আমার কাজিনদের সাথে এমন ঘেঁষে বসি না। আর আমিতো তোমার মতো ওদের গালে চুমুও দি না।
তুহিন রেগে গিয়ে বলে,
— নিরা। আমার পার্সোনাল কিছু বিষয়ে বেশি কথা বলবে না।
— আমার জীবনে তাহলে কেনো আসলে? আমিতো দূরে চলে গেছিলাম তাহলে কেন আসলে?
তুহিন রেগে দাঁড়িয়ে যায়। ঝাজালো স্বরে বলে,
— তুমি নিজেই নিজেকে সস্তা বানিয়েছো। আমি এসেছি তো তুনি নিজে কেনো আমার কাছে রয়ে গেলে? হুম? সরে যেতে পারোনি।
— তুহিন।
— শুনো আমরা যেভাবে আছি সেভাবেই থাকতে পারি। তাই আমি কি করছি না করছি তা নিয়ে বেশি ঘাটাঘাটি করবে না। যাও বাসায় যাও।
— আমি বাসায় না গেলে তো তোমার এইসব ফালতু কাজ করতে পারবে না তাই না।
তিশা মেয়েটা রেগে যায় নিরার কথায়। নিরাকে বলে,
— এই মেয়ে তোমার নিজের লজ্জা করেনা অন্যের প্রেমিকের সাথে প্রেম করতে। আবার বড়বড় কথা বলছো। থাপড়িয়ে দাত ফেলে দেবো।
নিরা অবাক চোখে তুহিনের দিকে তাকিয়ে আছে। নিরা তুহিনকে বললো,
— তুমি না বলছে এই মেয়েটা তোমার কাজিন। এখন যে বলছে প্রেমিকা।
— এই শুন আমি তোকে কৈফিয়ত দেয়ার প্রয়োজন মনে করি না। বুঝলি যা এখান থেকে।
তিশা এসেই নিরার হাত চেপে ধরে খুব শক্ত করে। নিরা ব্যাথায় কুকিয়ে উঠে। নিরা অনুনয়ের স্বরে বললো,
— প্লিজ আমার হাত ছাড়ো।
— তোদের মতো মেয়েকে কিভাবে শায়েস্তা করতে হয় আমার জানা আছে।
কথাটা বলেই নিরার হাত মচড়ে ধরেছে। এদিকে ঝুমুর ওদের কান্ড দেখে অন্য টেবিলে বসে বসে ঝিমাচ্ছে। নিরা আবারো তিশাকে বললো,
— আমার হাত ছাড়ো।
এবার একটু গম্ভীর ভাবে বললো। কিন্তু তিশা হাত ছাড়ছেই না। এবার নিরা যেনো ক্ষেপে গেলো। মূহুর্তেই রাগ মাথায় উঠে গেছে। রাগে চোখ লাল হয়ে গেছে। দাতে দাত চেপে আবারো বললো,
— হাত ছাড়ো।
তিশা হাত না ছেড়ে বললো,
— তোর হাত আমি ভেঙেই দিবো। আর যেনো অন্যের প্রেমিকের সাথে প্রেম করার স্বাদ না জাগে। প্রস্টিটিউড কোথাকার।
এবার ধৈর্য্যের বাদ ভেঙে গেলো নিরা। মূহুর্তেই রাগে নিরার গাল লাল হয়ে গেছে। নিরা পা দিয়ে তিশার পায়ে স্ব জোরে লাথি মারলো। তিশা সোফায় বসে সামনে ঝুকে পা ঘষছে। নিরা ওর সামনে এসে গায়ের সম্পূর্ণ শক্তি দিয়ে জোরে তিন চারটা থাপ্পড় মারলো।
থাপ্পড়ের আওয়াজে ঝুমুর উঠে দাঁড়িয়ে গেলো সটান হয়ে। তুহিন যেনো নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না। এ আজ কোন নিরাকে দেখছে সে। একটা রাগি, বদমেজাজি, হিংস্র নিরা। হ্যাঁ, আজকে নিরার চোখে মুখে হিংস্রতা।
তুহিন ভাবছে যে নিরাকে সে দিনের পর দিন অপমান করেছে সে তখনো চুপ ছিলো। যখন তখন গায়ে হাত তুলেছে তখনও চুপ ছিলো। তুহিনের পায়ে পড়ে ভালোবাসা ভিক্ষা চেয়েও হাজার অপমান হয়েছে তখনও চুপ ছিলো। তাকে চরিত্রহীন প্রমাণ করেছে তখনও চুপ ছিলো এই মেয়ে৷ আজ হঠাৎ করে এতোটা হিংস্র কিভাবে হয়ে গেলো? এই হিংস্র নিরাকে সে চিনে না। না না এই হিংস্র নিরাকে সে কখনোই দেখেনি।
প্রতিটা মানুষের ধৈর্য্যের একটা সীমা থাকে। কিন্তু সীমা অতিক্রম করলে সেই মানুষটি অচেনা আচরণ শুরু করে। একজন নারী অনেক কিছুই সহ্য করে চুপচাপ পড়ে থাকে। কিন্তু এই নারী যখন রেগে গিয়ে তাণ্ডব শুরু করে প্রথমে পরিবার, তারপর সমাজ এবং পরে একটা দেশও ধ্বংস হতে পারে৷
নিরা তুহিনের সামনে এসে স্ব জোরে থাপ্পড় বসায় তুহিনের গালে। গালে হাত দিয়ে তুহিন বেকুবের মতো নিরার দিকে তাকিয়ে আছে। নিরা তুহিনের কলার টেনে ধরে বলে,
— অবলা নারী ভেবেছিস? যা ইচ্ছা যেভাবে ইচ্ছা করবি আমার জীবনের সাথে। শুন! আমি কিছু বলি না তারমানে এই নয় যে আমি কিছু বলতে পারি না। এতোদিন ভদ্রতা বজায় রেখেছিলাম। কিন্তু তোর মতো ছেলের সামনে ভদ্রতা দেখানো অনুচিত। তোকে তোর ভাষায় বোঝানো উচিত যে মেয়েরা খেলার পুতুল নয়। একটা মেয়ে যখন ইজ্জত বাঁচানো থেকে বিক্রি করতে নেমে যায় তখন সে যেকোনো পুরুষকেই কিনে নিতে পারে। তোর মতো হাজারটা অমানুষকে কিনে নিতে পারে। তোকে ভালোবেসেছি বলেই তোর অপমান তোর সব আবদার আমি মেনে নিয়েছিলাম। কিন্তু আজকে এখানেই সব শেষ। নেক্সট টাইম আমার সামনে আসার আগে এই দিনটার কথা এই থাপ্পড়টার কথা মাথায় রাখবি।
নিরা মেয়েটার দিকে তাকিয়ে বলে,
— পতিতা আমি নই তুই নিজেই।
নিরা ঝুমুরের হাত ধরে বের হয়ে আসে। বাইরে আসতেই সবাই গিয়ে ঝাপটে ধরে নিরাকে। নিরা হেসে দেয় ওদের এমন আচরণ দেখে। আফিয়া বলে,
— ওরে আমার ননদিনী একদম ফাটিয়ে দিয়েছো।
ফাহিম বলে,
— ভাইরে ভাই দূরে দূরে থাক। কখন যে আবার আমাদের গালে থাপ্পড় পড়ে আল্লাহ মালুম।
সবাই হেসে দেয় একসাথে৷ কাশফি বলে চল সামনে হাটতে থাক। আজকে একটা পার্টি হবে। সবাই হাটছে সামনের দিকে। নিরা প্রভা, নুপুর এবং ঝুমুররের দিকে কটমট করে তাকায়। ওরা ভয় পায় নিরার এমন চাহনিতে। নুপুর আমতা আমতা করে বলে,
— আমাদেরকে কি আর দেখোস নাই? এভাবে চাইয়া আছোস কেন?হিহি
নিরা নুপুরের চুল ধরে টান দেয়। নুপুর আর বাকি দুই বান্ধুবি থমকে দাঁড়ায়। তারা চারজন আগে আগে হাটছে। মাঝখানে হাটছে ফাতেমা, কাশফি এবং আফিয়া। ওদের পেছনে হাটছে নাঈম, ফায়াজ এবং ফাহিম।
ফায়াজ এবং ফাহিম জমজ। কিন্তু ওদের আলাদা করার উপায় হলো ফায়াজের গালে টোল পড়ে। কিন্তু ফাহিমের পড়ে না।
নিরা রাগে কটমট করে বলে,
— তোরা আগে থেকেই জানতি তুহিন এইরকম। আমাকে বলিস নি কেন?
প্রভা বলে,
— দেখ নিরা আমরা বললে কিছুটা সন্দেহ থেকে যায়। যেমন ধর, আমরা বললাম তুহিন এমন তুহিন তেমন তুই বিশ্বাস করলি। আবার যখন তুহিনকে জিজ্ঞেস করবি তখন সে অন্যভাবে বুঝিয়ে আমাদেরকে মিথ্যে প্রমাণ করবে। তখন দুইদিকেই ঝামেলা হবে। তাই আমরা চেয়েছিলাম তোকে নিজের চোখে দেখাতে। তাইতো এতো কিছু করলাম।
নিরা কিছুক্ষণ চুপ থেকে। সামনে হাটা ধরলো। নুপুর দৌড়ে গিয়ে নিরাকে পেছন থেকে ধরে কাতুকুতু দেয়ার সাথে সাথে নিরা লাফিয়ে উঠলো। তা দেখে চারজনই হেসে দেয়।
রাস্তার এ পাশে ওরা সবাই গ্রুপ বেধে হাটছে। আর ওপাশে কৌশিক এবং রাফিন পাশাপাশি হাটছে। রাফিনের মনে প্রশান্তি কারণ শেষমেশ তুহিন বিদায় হয়েছে নিরার জীবন থেকে। নিরা এখনো জানে না রাফিন যে আছে তাদের সাথে। কৌশিক হালকা কেশে রাফিনকে বলে,
— আর ছেড়ে যাস না।
রাফিন কৌশিকের দিকে তাকায়। কৌশিক সামনে তাকিয়ে আছে৷ কৌশিক আবার বলতে শুরু করে,
— আফিয়া আমার চার বছরের ছোট। আমাদের সম্পর্কটা নয় বছরের। আমি যখন সেভেনে পড়ি তখন আফিয়া চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্রী ছিলো।
— তারপর?
— আমি বন্ধু হিসেবেই ওর সাথে কথা বলতাম। তখন আমিও ছোট ছিলাম। প্রেম ভালোবাসা বুঝতাম না। তাই বন্ধুত্ব করেছিলাম আফিয়ার সাথে। আফিয়াও বন্ধু ভেবে ওর সব কথা আমার সাথে শেয়ার করতো। এভাবেই চলছিলো সব। হ্যাঁ, ভালোবাসা বুঝতাম না তবে অন্য কোনো মেয়ের প্রতি ভালোলাগাটা আসেনি তেমন একটাম যেমটা আফিয়ার ক্ষেত্রে এসেছে। এভাবে পাঁচ বছর বন্ধুত্ব থাকার পর আমি বুঝেছিলাম আমি আফিয়াকে ভালোবাসি। কিন্তু প্রকাশ করিনি। কারণ আমি চেয়েছি আফিয়াও সেটা বুঝোক। পরে আফিয়াও বুঝতে পারে সেও আমাকে ভালোবাসে তারপর থেকে বন্ধুত্ব থেকে সম্পর্কটা ভালোবাসায় পরিণত হয়েছে।
কৌশিক অপরপাশে রাস্তায় আফিয়ার দিকে তাকিয়ে প্রাণভরে নিশ্বাস নেয়। রাফিন ও হালকা হাসে। কৌশিক বলে,
— বাই দা রাস্তা, নিরা কিন্তু তোকে মিস করে। আমি সিউর নিরা তোকে ভালোবাসে। শুধু সে নিজেই বুঝতে পারছে না কোনটা ভালোবাসা আর কোনটা ভালোলাগা।
রাফিন নিচের দিকে তাকিয়ে চুলে হাত দিয়ে ঝাকিয়ে হাসে। কৌশিক রাফিনের দিকে তাকায়। তারপর বলে,
— আসলে ভালোলাগা আর ভালোবাসার মাঝে একটা লাইন আছে। যার কারণে আমরা গুলিয়ে ফেলি এটা ভালোবাসা নাকি ভালোলাগা। নিরার ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে।
রাফিন প্রশ্নবোধক চাহনি নিয়ে কৌশিকের দিকে তাকায়। কৌশিক হেসে বলে,
— যেমন ধর একটা মোমবাতি। সম্পূর্ণ মোমবাতিটা হচ্ছে ভালোলাগা। আর মোমবাতি গলে যাওয়ার পর যেটা অবশিষ্ট থাকে সেটা হচ্ছে ভালোবাসা। আর গলে যাওয়াটা হচ্ছে ভালোলাগা আর ভালোবাসার মাঝের লাইনটা। ভালোবাসলে একবুক সমপরিমাণ যন্ত্রণা সহ্য করার ক্ষমতা থাকতে হবে। খুব কম মানুষই এই যন্ত্রণা সহ্য করে। এই যন্ত্রণা সহ্য করাটা হচ্ছে মোমবাতি গলে যাওয়ার ব্যাপারটা। আর পৃথিবীতে অল্পকিছু মানুষ গলে যাওয়ার মতো যন্ত্রণা সহ্য করে মোমবাতির অবশিষ্ট অংশটায় মানে ভালোবাসায় পৌছায়। বুঝলি এবার।
রাফিন অদ্ভুতভাবে তাকিয়ে আছে কৌশিকের দিকে। হালকা হেসে বলে,
— হুম বুঝলাম। আর যাই হোক আমার ভালোবাসাকে আর হারাতে দিবো না। আর কোনো তৃতীয় ব্যাক্তি আসবে না আমার আর নিরার মাঝে। আর ছেড়ে যাবো না। এবার যাই হোক নিজের করেই নিবো।
— বাহ বেশ তো।
দুজনেই হেসে দেয়।
·
·
·
চলবে…………………….