#হৃদয়হরণী
#কলমে সৌমিতা
#পর্ব- ২৩
– পেখম কোনো দিকে না তাকিয়ে সোজা ড্রেসিং টেবিলের দিকে গেল,,,আপন মনে সব গয়না গুলো খুলতে লাগলো,,এইসব পড়ার অভ্যাস নেই বলে ওর একটু অসস্তি হচ্ছে। হঠাৎ দেখে ঘরের আলো নিভিয়ে দিয়ে আবির ওয়াশরুমে চলে গেছে,,ও গয়না খোলা বাদ দিয়ে ওয়াশরুমের দরজার দিকে খানিকক্ষণ তাকিয়ে থাকলো,,,
– আশ্চর্য, লোক টা কি আমাকে মানুষ বলে মনে করে না, দেখছে যে আমি কাজ করছি,,আর অমনি সে আলো নিভিয়ে দিল,,কথা গুলো বলে পেখম সারা ঘরে চোখ বুলালো,,না একেবারে অন্ধকার হয়ে যায় নি ঘরটা বরং আলো নিভিয়ে দেওয়ার ফলে ঘরটাকে মায়াপুরী লাগছে নীল মরিচ আলোয় আর ছোট ছোট মোমবাতির আলোয়। সারা ঘরময় জুড়ে শুধু গোলাপ আর বেলী ফুলের ঘ্রাণ বিরাজমান,,,
-এমন সময় ওয়াশরুমের দরজা খোলার আওয়াজ শুনে পেখম আবার আয়নার দিকে ঘুরে দাঁড়িয়ে নিজের কাজ গুলো একমনে করতে থাকে। হঠাৎ করেই পিঠের কাছে হাতের ঠান্ডা স্পর্শ পেয়ে আয়নায় তাকালো ,আর দেখলো আবির দাঁড়িয়ে আছে ওর দিকে শীতল চাহনিতে,,,ও সেই দৃষ্টি উপেক্ষা করে চোখ নামিয়ে নিলো,,আয়নার সামনে থেকে সরে যেতে চাইলে পারলো না একজোড়া শক্ত বাহুবন্ধনের থেকে যা তার কোমড়কে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে রেখেছে,,, ও আয়না দিয়ে প্রশ্নবিদ্ধ চোখে আবিরের দিকে তাকালো,আর তখন দেখলো আবির মৃদু হাসি নিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছে,,, তারপর কোমড় থেকে হাত সরিয়ে পিঠে হাত দিলো যেখানে নেকলেসের দড়ি আর ব্লাউজের দড়ি জড়িয়ে আছে,,,, আবিরের এইভাবে হঠাৎ হঠাৎ স্পর্শ পেয়ে পেখমের শিরদাঁড়া দিয়ে রক্তের শীতল স্রোত বেয়ে যায়,,তক্ষনাৎ পেখম হাত দিয়ে শাড়ি খামচে ধরে নিজেকে সামলানোর চেষ্টা করে,,, পেখমের প্রত্যেকটা মুভমেন্ট আবিরের চোখ এড়িয়ে যায় না,,,ও একটু এগিয়ে এলো পেখমের কাছে তারপর নেকলেস টা খুলে নিয়ে ড্রেসিং টেবিলের উপর রেখে দিলো। পেখম এতক্ষণ নিচের দিকেই দৃষ্টি নামিয়ে রেখেছিল হঠাৎ পিঠে কারোর গরম নিশ্বাসের স্পর্শ ও কানে আঙ্গুলের স্পর্শ পেয়ে চোখ তুলে উপরের দিকে তাকিয়ে দেখে আবির ওর দিকে ঝুঁকে ঝুমকো জোড়া আলতো করে খুলছে,,,, বাইরে মৃদুমন্দ বাতাস বইছে আর তার সাথে পাল্লা দিয়ে ব্যালকনির লম্বা সাদা সাদা পর্দা গুলো এলোমেলো হয়ে উড়ছে,,,ঘরের ভেতরে বেলী ফুলের সুবাস ও নীল মরিচ আলোয় নিজের প্রেমিক পুরুষকে আরও আকর্ষণীয় লাগছে পেখমের কাছে,, নিজেকে সামলানো দায় হয়ে পড়েছে ওর কাছে তাই খুবই দ্রুত গতিতে চোখ বন্ধ করে নিলো,,,
-আবির ঝুমকো জোড়া খুলে খুবই সন্তপর্ণে তা রেখে দিলো টেবিলের উপর। এরপর আয়নায় নিজের প্রেয়সীর লজ্জা মিশ্রিত মুখটা দেখে নিজেকে আর ধরে রাখতে পারেনি ও,,,পেখমের চুলে মুখ গুজে দিয়ে কিছুক্ষণ ওইভাবে থেকে ঘ্রাণ নিলো,,তারপর চুলগুলো পরম আবেশে ঘাড়ের একপাশে সরিয়ে দিয়ে ব্লাউজের ফিতেটা টান মেরে খুলে ফেলে,,,পেখম তক্ষনাৎ কেঁপে ওঠে,,, সারা শরীর যেন শিহরিত হয়ে উঠলো,,,,নিজেকে খুব করে চাইলো সামলাতে, কিন্তু পারলো না,,, খামচে ধরলো নিজের হাত,,,,ব্লাউজের ফিতে খুলে ফেলায় উন্মুক্ত হয়ে গেল পেখমের পিঠ,, আর সেই উন্মুক্ত হয়ে যাওয়া পিঠে আবির নিজের অধরযুগল ছোঁয়ালো,,,সেই ছোঁয়া পেয়ে পেখম সাথে সাথেই চোখ খুলে তাকায়,,, নিজেকে এই অনুভূতি থেকে সামলে আবিরের কাছে থেকে সরে আসে ও,,,এমন মুহূর্তে পেখমের এইভাবে সরে যাওয়া আবির ঠিক হজম করতে পারলো না,,, প্রশ্নাত্মক চোখে তাকায় পেখমের দিকে,,,,,
– পেখম সরে এসেও হাঁফাতে থাকে,,,নিজেকে ধাতস্থ করার জন্য সেন্টার টেবিলের উপরে থাকা কাঁচের গ্লাসের জল টা প্রায় এক নিশ্বাসে শেষ করে ফেলল,,তারপর কিছুক্ষণ সময়ের জন্য চোখ বন্ধ করে নিলো,,আর সাথে সাথেই ভেসে উঠলো সেইদিনের সেই দুর্বিসহ কিছু ঘটনা,, কিছু তেঁতো সত্যি,,,, ও চোখ খুলে আবিরের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে দেখে, আবির এখনো ওর দিকেই তাকিয়ে আছে,,,পেখম কিছু না বলে সোফার দিকে যেতে নিলেই পিছন থেকে হেঁচকা টানে ও সোজা গিয়ে পড়ে আবিরের বুকে,,,,আবির পেখমের চুল গুলো কানের লতিতে গুজে দিয়ে জিজ্ঞাসা করে” পাখি কোথায় যাচ্ছিলে”??
-আবিরের প্রশ্নে কোনো উত্তর দেয় না পেখম,,, উল্টে আবিরের কাছে থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে এনে পাল্টা প্রশ্ন করে”কোন অধিকারে আপনি আমাকে স্পর্শ করেছেন?? আপনি জানেন না আপনার স্পর্শকে আমি ঘৃণা করি”??
-আবির জানতো তার প্রেয়সী তার উপরে রেগে আছে,,,আর ও এটাও জানতো ও ঠিক মানিয়ে নেবে তার প্রেয়সীকে,, কিন্তু পেখমের মুখে এমন কথা শুনে ও ব্যথিত হয়,,,নিজেকে সামলে বলে” প্রথমত আমরা স্বামী স্ত্রী পাখি,,,তাই তোমার উপরে যদি কারোর সবথেকে বেশি অধিকার থাকে তো সেটা হলাম আমি,,,তাই বলতেই পারো স্বামীর অধিকারে তোমাকে আমি স্পর্শ করেছি,,, আর তুমি কি বললে?? আবার বলো,,,আমার স্পর্শকে তুমি ঘৃণা করো??
– হ্যাঁ আর কত বার বলবো,,,শুধু আপনার স্পর্শ কেন আমি আপনাকেও ঘৃণা করি,,, আমি চাইনি আপনার এই মুখটা আর দেখতে বিশ্বাস করুন,, কিন্তু ভাগ্যের কি নিয়তি দেখুন সেই আপনি আজ আমার স্বামী,,,
– তার জন্য কি তুমি আফসোস করছো??( গম্ভীর হয়ে)
– আশ্চর্য তো,,,আমি আফসোস করবো কেন?? আফসোস তো করছেন আপনি,,, আপনার আর জীবনটাকে উপভোগ করা হলো না,,, তবে আপনি চিন্তা করবেন না ,আমি আপনার জীবনে বেশি দিনের জন্য থাকবো না,,,, আর হ্যাঁ সত্যি বলতে কি আমাকে বাঁচানোর জন্য ধন্যবাদ আপনাকে,,, তা না হলে হয়তো আমাকে মরতে হতো,,,এতে অবশ্য আপনারই লাভ হতো অযথা সবাইকে দেখানোর জন্য আমাকে তো আর বিয়ে করতে হতো না আপনার,,,
– এবার আর আবির নিজেকে ধরে রাখতে পারেনি খুব জোড়েই পাখি বলে চিৎকার করে উঠলো,,,
– উফ আস্তে চিৎকার করুন বাড়িতে এখনো লোকজন আছে,,,আমি তো ভুল কিছু বলিনি,,,তবে আপনার ক্ষমতা আছে,,কি সুন্দর অভিনয় করেন আপনি,,,বিশ্বাস করুন আমি যদি আপনার আসল সত্যিটা না জানতাম তাহলে হয়তো আমিও ধরতে পারতাম না আর সবার মতো,,, by the way এখন তো এখানে কেউ নেই ,,সুতরাং এখন আর আপনাকে অভিনয় করতে হবে না,,,
– এসব তুমি কি উল্টো পাল্টা বলছো পাখি,,(,নরম স্বরে)
– আমি জানি না আপনার কাছে কোন গুলো উল্টো পাল্টা কথা মনে হচ্ছে,, তবে আমি আপনাকে এটা বলতে পারি যে আমি কারোর কাছে মোহ বা আকর্ষণের বস্তু হিসাবে থাকতে চাই না,,,,
– আবির বুঝতে পারলো সেদিনের কথায় পাখি বেশ গুরুতর ভাবেই আঘাত পেয়েছে তাই ও পাখিকে নিজের কাছে টেনে আনলো,, তারপর নরম স্বরে বলল” ও গুলো সব মিথ্যে পাখি,,,আমি তোমাকে সত্যিই ভা,,,
– আবিরের কথা শেষ করতে না দিয়ে পেখম বলে” দয়া করে আর অভিনয় আমার সামনে অন্তত করবেন না,,, আর এইভাবে আমাকে যখন তখন ছোঁয়ার চেষ্টা করবেন না,,, আজ আমি আপনার ছোঁয়া আর রিকের ছোঁয়ার মধ্যে কোনো তফাৎ পাচ্ছি না,,, দুজনের ছোঁয়ায় কেমন লালশা মিশে আছে,,,
– পাখি তোমার মনে হয় না তুমি এবার একটু বেশি বেশি বলছো,, আমার ছোঁয়ায় লালশা মিশে আছে??( দাঁতে দাঁত চেপে)
– আমার তো তাই মনে হয়,,, অবশ্য আপনার এখন অধিকার আছে আমার উপর,,, কতদিনের মোহের বস্তু আমি আপনার,,, এখন সামনে আছি নিজেকে কিভাবে আর সামলে রাখবেন,,, নিন নিজের কার্যসিদ্ধি করুন এতদিন তো এটার অপেক্ষায় ছিলেন (বলেই পেখম নিজের শাড়ির আঁচল নামিয়ে ফেলে,,উন্মুক্ত করে দেয় নিজের শরীরের স্পর্শকাতর অঙ্গ)
– তাই দেখে আবির পাখি বলে চিৎকার করে হাত তোলে পাখির দিকে,,, মুহূর্তেই রোমাঞ্চকর পরিবেশ পরিণত হয় ক্রোধান্বিত,,,, আবির নিজের রাগকে সামলানোর জন্যে জোড়ে জোড়ে শ্বাস নিতে থাকে,,,তারপর হাত নামিয়ে পেখমের শাড়ির আঁচল যথাস্থানে তুলে দেয়,,,,খুবই শান্ত স্বরে বলে ওঠে” পাখি তুমি আমাকে ভুল ভাবছো,,,তোমাকে আমার অনেক কথা বলার আছে,,,
-পেখমের কানে তখন আবিরের কোনো কথায় যাচ্ছে না,, ওর চোখের সামনে শুধু এইমাত্র ঘটে যাওয়া দৃশ্য টাই ভেসে উঠছে,,,হঠাৎ আবিরের কথার মধ্যে পেখম বলে ওঠে” হাতটা নামিয়ে নিলেন কেন?? মারুন আমায়,,আপনার এই রূপটাও আমার দেখা বাকি ছিল, সেটাও দেখা হয়ে যেত। আর আমি আপনার কোনো কথায় শুনবো না,,আবার কোনো মিথ্যে বলবেন আমাকে,,,আবার হয়তো অভিনয় করবেন আমার সাথে,,,
– পাখি আমি খুব সরি,,তখন তোমার কথা গুলো শুনে নিজের উপর থেকে কন্ট্রোল হারিয়ে ফেলেছিলাম,,, সরি,,প্লিজ আমাকে ভুল বুঝো না,,,আমার কথা গুলো শোনো,,(পাখিকে নিজের কাছে এনে হাত দুটো ধরে আবির কথা গুলো বলে,,)
– আবিরের কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে পেখম বলে “ছোঁবেন না আপনি আমাকে,,, আর কতবার বলবো আমি আপনার কোনো কথা শুনবো না,,প্লিজ আমাকে ছেড়ে দিন,, আমি একটু একা থাকতে চাই,,, আর হয়তো আমি আপনাকে ডিভোর্স দিতে পারবো না বাড়ির লোকদের জন্যে,, কিন্তু আপনি চিন্তা করবেন না আমি এখানেও থাকবো না,,, চলে যাবো,,,কারণ আমি কারোর মোহ বা আকর্ষণের বস্তু হিসেবে থাকতে চাই না,,,,( কথা গুলো বলেই আবিরের থেকে বেশ দূরে চলে এল,,)
-আবির শুধু ফ্যাল ফ্যাল দৃষ্টিতে তার প্রেয়সীকে দেখছে,,,দেখছে তার কাজ কারবার,,,, ও মনে মনে মেনে নেয় এটা হয়তো ওর প্রাপ্য ছিল,,, নিজেকে সামলে গম্ভীর হয়ে অথচ শান্ত স্বরে পেখমের উদ্দেশ্যে বলে ওঠে,,
-” সে যদি আমার কথা শুনতে না চাই ,তাহলে থাক নাই বা বললাম আমার সেই কষ্টকর মুহূর্তের কথা,,কিন্তু তাকে আমি এটা জানিয়ে রাখছি সে নিজে থেকে আমার কাছে না আসলে আমি তার কাছে কোনোদিন যাবো না,,, কিন্তু আমার দৃঢ় বিশ্বাস একদিন সে আসবে ,,নিজের কাছে টেনে নেবে আমাকে,, আর আমি সেই মাহেন্দ্রক্ষণের অপেক্ষা করে থাকবো,,,তবে তাকে শুধু এইটুকুই বলবো সে যেন বেশি দেরি না করে ফেলে”
– কথা গুলো বলেই আবির ব্যালকনির দিকে চলে যায়,,, আর পেখম বসে পড়ে ওখানেই,,
– আমি তো এমন কিছুই চাইনি ,,,আমি তো শুধু মাত্র উনার ভালোবাসা টুকু চেয়েছিলাম তোমার কাছে ভগবান,,, তবে কেন এত কষ্ট সহ্য করতে হচ্ছে আমাকে,,, কেন বিশ্বাস করতে পারছি না আমি তাকে,,,কথা গুলো বলেই ডুকরে কেঁদে উঠলো পেখম,,,,
_______________________________________
– আজ নিকোটিনের ধোঁয়াও আবিরের কষ্টটাকে কমাতে পারছে না,,, হ্যাঁ ও মানছে সেইদিন ও পেখমের সাথে খারাপ ব্যবহার করেছিল,, কিন্তু সেটা তো তখনকার পরিস্থিতির জন্য,,, আর তারও একটা কারণ ছিল,,, কিন্তু পাখি তো এখন কোনো কিছু শুনতেই নারাজ,,,,আর কি করে অতো কঠিন কঠিন কথা গুলো বলতে পারলো আবিরকে ও,,,না আজকে ভীষণ কষ্ট হচ্ছে,,, হয়তো সেদিন এমনই কষ্ট পেয়েছিল পাখি।
-প্রায় ভোররাতে আবির ব্যালকনি থেকে ঘরে আসে,,তারপর ব্যালকনির দরজা বন্ধ করে দিয়ে পর্দা গুলো টেনে দেয়,,,,ওয়াশরুমে গিয়ে ভালো করে চোখে মুখে জলের ঝাপটা দিয়ে, মুখ মুছে বেরিয়ে আসে ও,,,ঘরের পরিবেশ দেখে বুকে চিনচিন ব্যাথা অনুভব করে আবির,,,আজ যদি সব ঠিক থাকতো তবে এই রাতটা অন্যরকম হতো,,,যার সাক্ষী থাকতো আকাশের ঐ অর্ধচাঁদ,,,,কিন্তু না সব মুহুর্তের মধ্যে শেষ হয়ে গেল কিছু ভুলের জন্য,,, এইসব কথা গুলো ভেবে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল আবির। তারপর বিছানার দিকে তাকিয়ে দেখে পেখম ওখানে নেই বরং সোফায় শুয়ে ঘুমাচ্ছে,,,আবির একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে পেখমকে সোফা থেকে তুলে কোলে করে নিয়ে বিছানায় শুইয়ে দেয়,,,তারপর দেখে পেখমের কপালে, ঘাড়ে মৃদু মৃদু ঘাম জমেছে,,, ও এসির রিমোর্ট নিয়ে সেটা অন করে দেয়,তারপর একটা চাদর পেখমের গায়ের উপর দিয়ে দেয়। ঘুমন্ত পেখমকে দেখে আবির বলে,,,
-” একদিন তুমি বুঝবে ঠিক আমায়,,,ভালোবাসবে ঠিক আমায়,,,তোমার ভালোবাসার আদরে ভরিয়ে দেবে ঠিক আমায়,,,আমি অপেক্ষা করবো সেই সময়ের রাত- প্রেয়সী”
– কথা গুলো বলে সোফায় গিয়ে শুয়ে পড়ে,,,আর সাথে সাথেই ঘুমিয়ে পড়ে আবির,,,ক্লান্ত শরীর যখন একটু আরাম পাই তখন তন্দ্রা এমনিতেই ধরা দেয়,,,,
চলবে,,,,
#হৃদয়হরণী
#কলমে সৌমিতা
#পর্ব- ২৪
-মৃদুমন্দ বাতাসের সাথে যখন পাখিরা তাদের বাসা থেকে বেরিয়ে উড়তে থাকে অজানা জায়গার উদ্দেশ্যে তখন তাদের পথ দেখানোর জন্য ভোরের আলো ফুটে ওঠে সর্বদিকে,,,আর সেই সাথে নতুন একটা সকালের উদয় হয়। ভোরের আলো সামান্য জানালা আর ব্যালকনির পর্দার ফাঁক দিয়ে খুবই সন্তপর্ণে প্রবেশ করে ঘরটার অন্ধকার কাটিয়ে আলোকিত করে তোলে।
-অন্ধকার ভাবটা কেটে গিয়ে পেখমের চোখের উপর আলোর আভাস লাগতেই ও বিরক্তিতে চোখ মুখ কুঁচকে নিল। তারপর খানিকক্ষণ চোখ বন্ধ করে শুয়ে থেকে ধীরে সূস্থে পিটপিট করে চোখটি মেললো,,,তারপর নিজেকে বিছানায় দেখে তক্ষনাৎ উঠে বসলো ও,,,
-আমি যতদূর জানি কাল আমি সোফাতেই ঘুমিয়ে পড়ে ছিলাম,, এখানে এলাম কখন?? নিজের মনে কথা গুলো বলে আড়োমোড়া খেয়ে বিছানা ছেড়ে উঠতে গেলেই চোখ যায় সোফায়,,গুটিসুটি হয়ে শুয়ে আছে আবির,,ওর আর বুঝতে বাকি রইলো না বিছানায় কিভাবে এল ও,,,
-পাখি বিছানা ছেড়ে উঠে আলমারি থেকে একটা শাড়ি নিয়ে ওয়াশরুমের দিকে গেল,,,,প্রায় আধা ঘন্টা পর ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে ব্যালকনির পর্দা সরিয়ে, কাঁচের দরজা খুলে ব্যালকনিতে গেল। তারপর ভিজে জামাকাপড় ও মাথা থেকে ভিজে টাওয়াল নিকড়ে সেই গুলো মেলে দিলো,,,ভেজা চুল গুলো কে হাত দিয়ে ঘাড়ের একপাশে আনলো,,,আবিরের ব্যালকনিতে অনেক গুলো গোলাপের চারা আছে,,ও সেই গুলো তে জল দিয়ে ঘরে আসতে যাবে ,হঠাৎ ফ্লোরের দিকে তাকিয়ে দেখে চারপাশে সিগারেটের অবশিষ্ট অংশ পড়ে আছে,,,সেটা দেখে সকাল সকাল ওর মুডটা অফ হয়ে যায়,,,,
– কি পেয়েছেন টা কি উনি?? মানে যা ইচ্ছা তাই করবেন নাকি?? করাচ্ছি,,,এই রকম সিগারেট খেলে তো চেন-স্মোকার হয়ে যাবেন উনি,,,এইসব গুলো বলে রাগে গজগজ করতে করতে ঘরে এল,,,এসে আবিরের মুখের দিকে তাকিয়ে বিরবির করে বলে” হমমম দেখো কি সুন্দর ভাবে বাচ্চাদের মতো মুখটা ইনোসেন্ট করে ঘুমাচ্ছেন,,, আপনার ঘুম আমি বার করছি,,,,
– হঠাৎ কোনো কিছুর শব্দে আবিরের ঘুমটা ভেঙে গেল,,ও চোখ পিটপিট করে খুলে দেখে পেখম ঠুসঠাস করে এদিকের জিনিস অন্যদিকে রাখছে,, তো কখনো বিছানা ঝাড়া ঝাড়ু দিয়ে দুম দুম করে বিছানা ঝাড়ছে তো কখনো ড্রেসিং টেবিলের উপরের জিনিস গুলোর জায়গা পরিবর্তন করে সেই গুলোকে জোড়ে জোড়ে শব্দ করে রাখছে,,,পেখমের এইরূপ কার্যে আবির বিষ্মিত হয়ে চেয়ে থাকে কিছুক্ষণ ওর দিকে,,,তারপর গুরুগম্ভীর হয়ে জিজ্ঞাসা করে “এখানে কি হচ্ছে এসব?? সকাল সকাল শান্ত পরিবেশ টাকে শব্দময় করে তুলছো কেন পাখি”??
– পাখি আবিরের প্রশ্নের কোনো উত্তর না দিয়ে সোজা ওয়াশরুমে চলে যায়,, তারপর হাত ভালো করে ধুয়ে, মুছে আসে ঘরে,,,আবির যে এই ঘরে আছে সেটা না দেখার ভান করে ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে চুল আঁচড়াতে থাকে,,,
– পাখির এইরূপ কারুকার্য বোধগম্য হলো না ঠিক আবিরের,,,ও মনে মনে স্বগোক্তি করে বলে “এ আবার ভিজে বিড়াল থেকে বাঘিনী রূপ কবে থেকে ধারণ করলো?? আবির তোর কপালে ভীষণ দুঃখ আছে,,কোথায় ভাবলি বিয়ের পর চুটিয়ে হানিমুন করবি,,কিন্তু হলো টা কি,,,,এইসব কথা ভাবার মাঝে সামনের দিকে তাকায় আবির,,আর তাকিয়েই ওর যেন হৃদস্পন্দন থেমে যায়,,পেখম কাঁচা হলুদ ও লাল রঙ মিশ্রিত একটা শাড়ি পড়েছে,,,যার আঁচল কোমড়ে গুজে রাখা,,,মায়াবী ওই চোখে হালকা কাজল ও কপালে লাল টিপ আর মাথায় সিঁদুর যা ওর স্বপ্নের প্রেয়সীকে সম্পূর্ণা করে তুলেছে,,,
– ওর সামনে যেন কোনো এক মায়াবী মানবী দাঁড়িয়ে আছে যে তার মায়ার জালে ওকে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে ফেলছে,,,পেখম আয়না দিয়েই দেখতে পারছে আবির ওর দিকে কেমন ভাবে তাকিয়ে আছে,, ও সেইদিকে তেমন পাত্তা না দিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে যায়,,আর আবির বেচারা ওয়াশরুমে চলে যায়,,,
__________________________________________
– মামনি বাড়ি পূরো ফাঁকা কেন??
– ও তুই উঠে গেছিস,, আমরা সবাই ভাবলাম তোরা বুঝি এখনো ঘুমাচ্ছিস,তাই আর ডাকিনি,,,হ্যাঁ সবাই চলে গেছে,,, পুলকের অফিস আছে তাই ওরাও চলে গেছে,, তবে চিন্তা করিস না প্রিয়া, রুশা, মৈনাক, ইশান আর কুশল ওরা আছে,,,
– আমাদের নিয়ে কি কথা হচ্ছিলো?? (কুশল)
– এ মা হাতে ব্যাগ কেন?? চলে যাচ্ছিস নাকি তোরা??
– হ্যাঁ কাকিমা আর্জেন্ট ছুটি নিয়ে এসেছিলাম,, তাই ফিরতে হচ্ছে,,,মৈনাক আর ইশান আমার সাথেই যাচ্ছে,,,(কুশল)
– আবিরের সাথে দেখা করেছিস??
– হ্যাঁ ওর সাথে দেখা করেই আমরা আসছি,,,ঠিক আছে এখন তাহলে আমরা আসি,,,বৌদি বলবো না তোমাকে,,, পেখু বলেই ডাকবো আমরা,,,ভালো থেকো আর আমাদের বন্ধুটাকে ভালো রেখো ( ইশান)
– অবশ্যই দাদা,,আপনারা কিন্তু আবার আসবেন(পেখম)
– হ্যাঁ আসবো,,যদি তোমার বান্ধবীরা মন খারাপ করে,,(মৈনাক)
-মিস্টার মৈনাক আপনি একটু বেশি কথা বলেন,,(রুশা)
– সেটাতো আপনাদের জন্য,,,(মৈনাক)
– কাকিমা আমরাও আসছি,,,নেক্সট মাস থেকে ফাইনাল টেস্ট পড়তে হবে,,, পেখু তুই তাহলে কালকে কলেজে আসিস,,(প্রিয়া)
– হমম ঠিক আছে,, খেয়েছিস তো তোরা??(পেখম)
– হ্যাঁ খেয়েছি,,,কালকে দেখা হচ্ছে তবে,,
-এক এক করে সবাই চলে গেলে বাড়িটা পুরো ফাঁকা হয়ে যায়,, পেখমের খুব ইচ্ছা করছিল ওদের বাড়ি যেতে কিন্তু কি নিয়মের জন্য যেতে পারিনি,,
___________________________________________
– বিয়ের সব রিচুয়াল পালন করা হয়ে গেছে,,, এরই মধ্যে আবির একবার পেখমকে নিয়ে থানায় এসেছিল রিকের বিরুদ্ধে প্রমাণ দেওয়ার জন্য,,, যথা সময়ে রিককে কোর্টে নেওয়া হয়েছিল এবং ওর শাস্তি পাঁচ বছরের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে।
– পেখম ইদানিং পড়াশোনা নিয়েই ব্যস্ত থাকে বেশি,,,আবিরের সাথে দেখা হয় তার রাতে,,কারণ আবির এই দিকের অফিসের সব দায়িত্ব নিজে নিয়েছে,,,আর বাইরের দিকটা অশোক বাবু নিজেই দেখাশোনা করে,,,,পেখমের সাথে আবিরের সম্পর্ক সেই বৌভাতের রাতের মতোই আছে,, আবির নিজে থেকে কথা বলতে চাইলেও পেখম এড়িয়ে যায় ওকে,,পেখমের কাল থেকেই পরীক্ষা, তাই এখন ওর যত মনোযোগ পড়াশোনা তেই এনেছে,,
– রাত আটটা বাজে,,আবির অফিস থেকে বাড়ি এসেছে,,,অনুপমার সাথে কথা বলে নিজের ঘরের দিকে গেল,,এই একমাসে কম চেষ্টা করেনি পাখির মন পাওয়ার বা ওর সাথে খোলামেলা ভাবে কথা বলার,,কিন্তু না পাখি ওকে এড়িয়ে গেছে বারংবার,,,মনে কষ্ট নিয়ে আবির নিজেকে বোঝাই ও যেই ব্যবহার টা করেছিল পাখির সাথে তাতে হয়তো এটা ওর প্রাপ্য। এই একমাসে পাখি ওর অভ্যাসে পরিণত হয়েছে,, পাখির মুখটা না দেখতে পেলে ওর দম বন্ধ হয়ে যায়। পাখির শরীরের মিষ্টি ঘ্রাণ না পেলে ওর শ্বাসকষ্ট হয়,,নিজেকে কেমন পাগল পাগল লাগে,,এতটাই আসক্ত হয়ে পড়েছে ও পাখির প্রতি,,,
– ঘরে এসে পাখির কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে আবির ব্যালকনিতে যায়,, সেখানেও পাখিকে না পেয়ে নীচে চলে আসে,,,অনুপমা আবিরকে নীচে নামতে দেখে জিজ্ঞাসা করে,,
– কি রে তুই ফ্রেশ না হয়ে চলে এলি!!
– ও মা তোমার কাছে আসছিলাম আমি,,,পাখি কোথায়?? ঘরে দেখলাম নেই,,,মহারাণী গেলেন কোথায়??কলেজের পর তো ওর কোনো টিউশনি ছিল না,,,
– উফফ আমার ছেলেটা কত কিছু ভেবে ফেলেছে,,,পেখু ও বাড়িতে গিয়েছে,,, ও তো কিছু দিন মানে পরীক্ষার কদিন ও বাড়িতে থাকবে বললো,,
– আমাকে তো একবার বললো না,,,
– দেখো মেয়ের কান্ড,,আমাকে বললো যে ফোন করে পরে তোকে বলবে,,,দেখ হয়তো ও বাড়িতে গিয়ে ভুলে গেছে,,,
– আচ্ছা মা আমি একটু ও বাড়ি থেকে ঘুরে আসছি,,,
– ফ্রেশ হয়ে যা,,,
– এসে ফ্রেশ হচ্ছি,,, বলেই আবির চলে গেল,,, ছেলে যে বউ পাগল হবে সেটা অনুপমা বিয়ের আগে থেকেই জানতেন তাই মাঝে মধ্যে ছেলের এইসব কাজ দেখলে উনি হেসে ফেলেন,,, আজও তার ব্যতিক্রম হয়নি,,, উনি হাসতে হাসতে দরজা লক করে নিজের ঘরের দিকে গেলেন,,,
_________________________________________
– আচ্ছা দইটা কেমন হয়েছে বললি নাতো?? সেই তখন থেকে ৫০০ দই তুই নিজেই খেয়ে যাচ্ছিস,,,এত পেটুক কেন রে তুই?? আবির কি তোকে খাওয়াই না নাকি??(পুলক)
– মা আমি ভেবেছিলাম থাকবো এখানে,,, কিন্তু তোমার ছেলে যা শুরু করেছে,,, আমি এ দই খাবোও না আর আমি এখানে থাকবোও না,,,চললাম আমি,,,(পেখম)
– পুলক কেন শুধু শুধু মেয়েটার পিছনে লাগছিস??( মনোরমা)
– এই তুমি অফিস থেকে এসে ফ্রেশ না হয়ে এখানে বসে ওর পিছনে লাগছো কেন?? যাও আগে চেঞ্জ করে এসো,,,পেখু তোর দাদার কথায় কিছু মনে করিস না,,চল তুই তোর ঘরে,,,আমি আর একটু দই নিয়ে যাচ্ছি,,, তারপর দুজনে মিলে অনেক গল্প করবো,,,যা তুই,,,( পেখম ওর দাভাইকে মুখ ভেংচি কেটে তীয়ার সাথে চলে যায়,,,)
– পেখু একটা কথা জিজ্ঞাসা করি??
– হমম হু একটা কেন বৌমনি তুমি হাজার টা করতে পারো,,,এত সুন্দর দই বানিয়েছো তার জন্য এটা তোমার জন্য ছাড়,,,বলো বলো,,
– বলছি দাদাভাই এর সাথে তোর সবকিছু ঠিকঠাক তো?? মানে আমি কি বোঝাতে চাইছি বুঝতে পারছিস তো??
-পেখম সবে মুখের মধ্যে এক চামচ দই পুরেছিল , বৌমনির এমন কথায় ও সেটাকে তক্ষনাৎ গিলে,একটু হেসে বলে কেন ঠিক থাকবে না বৌমনি,,, সব ঠিকঠাক,, একদম ফাস্ট ক্লাস,,,
– এই আমি তোর সাথে আড্ডা মারছি?? সিরিয়াস হয়ে উত্তর দে,,,
– হ্যাঁ বৌমনি সব ঠিকঠাক আছে,,,বিগড়ানোর মতো কি কিছু হয়েছিল নাকি?? উনি যথেষ্ট খেয়াল রাখেন আমার,,,,
– আর তোদের মধ্যে মানে স্বামী স্ত্রীর যে সম্পর্ক তৈরি হয় সেটা তৈরি হয়েছে তো পেখু?? দেখ কিছু লুকাবি না আমার থেকে,,, আমি তোকে একটা কথা বলতে চাই যা তোর এই প্রশ্নটার উত্তরের উপর নির্ভর করছে,,,
– পেখম বুঝতে পারছে তার বৌমনি কি বলতে চাইছে,,,কিন্তু ও কোন মুখে বলবে যে ওদের মধ্যে এখনো স্বামী স্ত্রীর কোনো স্বাভাবিক সম্পর্কই তৈরি হয় নি,,,, ও চাইনা ওদের মধ্যেকার কথা তৃতীয় কোনো ব্যক্তি জানুক,,কিন্তু এখন আর কি করার বৌমনি কে ও মিথ্যে বলতে পারবে না আবার সত্যিটাও বলতে পারবে না,,,ও আমতা আমতা করে তীয়াকে কিছু বলতে যাবে তার আগেই একটা গম্ভীর পুরুষালী কন্ঠে নিজের নামের উচ্চারণ শুনে ও চমকে ওঠে,,, দরজার দিকে তাকিয়ে দেখে ,আবির পকেটে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ওর দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে,,,, পেখম একটা ফাঁকা ঢোক গেলে,,,,
-আরে দাদাভাই তুই কখন এলি?? আয় ভেতরে আয়,,আমি তোর জন্য কফি আনছি,,,,(তীয়া)
– তার কোনো দরকার নেই তীয়া,, আমি এখানে থাকতে আসিনি,,, জাস্ট দুটো কথা বলতে এসেছি পাখির সাথে,,,( পাখির দিকে তাকিয়ে গম্ভীর হয়ে বললো)
– তীয়া এতক্ষণে বুঝতে পারলো নিশ্চয় কিছু করেছে পেখম,,, যার জন্য ও দাদাভাই এত রেগে আছে,,,ওদের কথা বলার জন্য স্পেস দেওয়া দরকার,,, এইসব কথা ভেবে তীয়া বলে” ঠিক আছে তোরা কথা বল,,আমি আসছি,,,
– তীয়া চলে যেতেই আবির ভিতর দিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়,,, তাই দেখে পেখম ভয়ে কয়েকটা ঢোক গেলে,,,জিভ দিয়ে ঠোঁট দিয়ে ভিজিয়ে তুতলিয়ে বলে,,
– আপনি দরজা বন্ধ করছেন কেন??
– কারণ এই ঘরে এখন যেটা হবে,,সেটা যেন কেউ দেখতে বা শুনতে না পাই তার জন্য,,,
– মা,,মা,মানে,নে,,,ইআআআপপনি কি বলছেন,,, কি বলছেন এ সব??( দইটা রেখে দাঁড়িয়ে পড়লো বিছানা ছেড়ে)
– কি বলছি,,,যেটা ফ্যাক্ট সেটাই বলছি,,,,(এগিয়ে যেতে যেতে)
– আপনি এএএ এই এইভাবে এগিয়ে আসছেন কেন???
– তুমি পিছিয়ে যাচ্ছো তাই,,,,
– পেখম আর একটু পিছিয়ে বলে,,,ঠিক আছে আমি আর পিছিয়ে যাচ্ছি না ,,আপনি আর এগোবেন না প্লিজ,,,
– কেন এগোলে কি হবে??( পকেটে হাত রেখে একটা ভ্রু উচু করে পাখির দিয়ে তাকিয়ে কথা টা বলল আবির)
– কিছু না,,, তা আপনি এই বাড়িতে??
– পাখির এই প্রশ্নে আবির তার ভ্রু যুগল কুঁচকে তাকালো পাখির দিকে,,,আবিরের এই রকম দৃষ্টি দেখে পাখি বলে,,
– না মানে আপনি আসতেই পারেন এ বাড়িতে,,,, কিন্তু হঠাৎ আমার কাছে কেন?? কি চাই??
– চাইতো আমার অনেক কিছুই,,, কিন্তু সেটা কদিনের জন্যে স্টোর করে রেখেছি, বাচ্চা মানুষ একটু বড়ো হোক,, then এই আবির চৌধুরী তাকে বুঝিয়ে দেবে সে কি জিনিস,,,( কথাটা একটু পাখির দিকে ঝুঁকেই বলল আবির,,,আর পাখি নিজের মুখটা একটু পিছিয়ে নিয়ে বললো)
– মানে?? কি বলছেন,,, আর কে বাচ্চা মানুষ?? আর কি স্টোর করে রেখেছেন??
– প্লিজ পাখি তোমার ওই ছোট মাথায় কিছু ঢুকবে না,,এমনিতে ওই ঘটে কিছু নেই,,, নাহলে এতদিন অনেক কিছুই বুঝে যেতে,,, by the way কার permission নিয়ে তুমি এই বাড়িতে এসেছো??
– আমার নিজের বাড়িতে আসতে গেলে এখন অনুমতি নিয়ে আসতে হবে নাকি,,,
– হ্যাঁ অবশ্যই তোমাকে অনুমতি নিয়েই আসতে হবে,,,
– আমি অত কারোর অনুমতি নিতে পারবো না,,, যদি আপনার এতে সমস্যা হয় তাহলে আমি আর ঐ বাড়িতে যাবো না,,,
– পেখমের এই কথায় আবিরের রাগ হলো,,,ও ধমকের সুরে বলে ওঠে” for your kind information মিস পাখি আপনি এখন লিগ্যালি মিসেস আবির চৌধুরী,, যার অর্থ হলো আপনি আর মিস পাখি সরকার নেই। আপনি এখন আমার ধরম স্ত্রী,,, সুতরাং আপনি যেখানে সেখানে নিজের ইচ্ছা মতো যেতে পারেন না,, আপনাকে আমার কাছে থেকে অনুমতি নিতে হবে এবং সেটা specially আপনার ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলক got it,,
– আবিরের কথায় পেখম রেগে গিয়ে বলে” একদম আমার উপর অধিকার খাটাতে আসবেন না,, আমি এই বিয়ে মানি না,,, আপনার কোনো অধিকার নেই আমার উপর,,,,
– পেখমের কথার পরিপ্রেক্ষিতে আবির এগিয়ে যায় পেখমের কাছে,,,এতটাই এগিয়ে যায় যে একে অপরের নিশ্বাস আঁছরে পড়ে চোখে মুখে,,,পেখু পিছাতে চেয়েও পিছাতে পারছে না কারণ দুটো বলিষ্ট হাত ওর কোমড়কে শক্ত করে ধরে রেখেছে,,,দুজনেই একে অপরের দিকে তাকিয়ে আছে ,,দুজন দুজনের চোখের দিকে তাকিয়ে একটা ঘোরের মধ্যে চলে যায়,,,পরস্পরের অধরযুগল যখন ছুঁইছুঁই ঠিক তখনই আবির পাখিকে ছেড়ে একটু সরে গিয়ে দাঁড়ায়,,,, আবির সরে দাঁড়াতেই পেখম তার সম্বিত ফিরে পাই আর সাথে সাথে নিজের লজ্জা ঢাকতে আশেপাশে তাকায়,,,পেখমের এই রকম অবস্থা দেখে আবির একটু হেসে ওঠে,তারপর নিজেকে সামলে গম্ভীর ও ভারী পুরুষালী কন্ঠে বলে ওঠে,,,
– ” সে কি জানে না এই পৃথিবীতে তার উপর যদি কারোর অধিকার থেকে থাকে তো সেটা হলো এই আবির চৌধুরীর,,, এমনকি তার নিজের থেকেও বেশি এই আবির চৌধুরীর বেশি অধিকার আছে তার উপর”
– আবিরের এই কথায় পেখম ওর দিকে কেমন ফ্যাল ফ্যাল করে চেয়ে থাকে,,,তাই দেখে আবির বলে,,,
– আমি জানি আমি দেখতে হ্যান্ডসাম, তাই বলে এইভাবে তাকিয়ে থাকতে হবে নাকি?? এখন ঝটপট আমার সাথে চলো ও বাড়িতে,,,
– আবিরের প্রথম কথাতে পেখম মিইয়ে গেলে ,শেষের কথা শুনে বলে ওঠে” আমি কোথাও যাবো না এখন,,, আগামী পনেরো দিন আমি এই বাড়িতে থাকবো,,,”
– আচ্ছা তা হঠাৎ থাকার কারণ কি??
– আমার পরীক্ষা আছে,, আমাকে অনেক পড়তে হবে তাই,,,আর ও বাড়িতে আমার পড়ায় ঠিক মন বসে না,,,( পড়ায় মন বসবে কি করে,,সারাদিন আপনাকে দেখতে দেখতে সময় পার হয়ে যায়,,আর আপনি না থাকলে অসস্তিতে মন ভার হয়ে থাকে তখন আর পড়তে ইচ্ছা করে না,কথাটা মনে মনে বলে)
– আচ্ছা পড়ার ব্যাপারটা আমি দেখে নেবো,,,এখন চলো,,,
– যাবো না,,,
– ঠিক আছে, তাহলে আমার আর কিছু করার নেই( কথাটা বলেই পাখিকে কোলে তুলে নিয়ে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে যায়,,,আর পাখি চিৎকার করে বলে” কি করছেন কি আমি যাবো না,,,, আর সবাই আছে সামনে ,কোল থেকে নামান,,কেউ দেখলে কি ভাববে,,,)
– সরি পাখি আমি এখন তোমাকে নামাতে পারবো না,,, একেবারে আমার ঘরে গিয়েই নামবে তুমি,,,
– ওদের দুজনকে এইভাবে দেখে বাড়ির সবাই অবাক হয়ে যায়,,, মনোরমা বলে” কি হয়েছে আবির ওকে নিয়ে কোথায় যাচ্ছিস??
– মামনি বাড়ি যাচ্ছি,,, তোমার মেয়ে আমার উপর রাগ করে চলে এসেছে,,,,তাই জোড় করে কোলে তুলে নিয়ে যাচ্ছি( পেখম তো ওই ভাবেই হাত-পা ছোটাচ্ছে)
– ও মা আমি ও বাড়িতে যাবো না,,, আমি এখানেই থাকবো,,,( পেখম)
– একদম না,,,যদি এমনি আসতিস তাহলে বারণ করতাম না,, কিন্তু তুই আমার ছেলের উপর রাগ করে এই বাড়িতে এসেছিস,,, একদম থাকা হবে না,,, আবির তুই ওকে নিয়ে যা,,,,( মনোরমা)
– thank you মামনি,,,তীয়া তুই একটু পরে ওর সব বই গুলো পাঠিয়ে দিস,,,(আবির)
– ও মা তুমি এটা বলতে পারলে,,,আমি যাবো না ,(বলেই আরো জোড়ে জোড়ে হাত পা ছোটাছুটি করে),(পেখম)
– একদম চুপ,,,,,,মামনি তোমার এই মেয়ে ভীষণ ঘ্যাড়তাড়া,,,,আসছি আমি,,,(আবির)
– মনোরমা ওদের কান্ড দেখে হাসতে হাসতে বলল” সাবধানে যা,,,আর পেখু যদি তোর কথা না শোনে তো ওর বাবাকে ফোন করে দিবি,,,বেয়াদব মেয়ে,,,
চলবে,,,
()