হৃদয়হরণী পর্ব ২১+২২

0
589

#হৃদয়হরণী
#কলমে সৌমিতা
#পর্ব- ২১

– সকাল বেলা থেকেই সবার কাজের চাপ বেড়েছে,,একটু পরেই পেখমকে নিয়ে চলে যাবে আবির,,,মনোরমা মেয়ে- জামাইকে আশীর্বাদ করার জন্য সব ব‍্যবস্থা ড্রয়িংরুমে করতে বলেছে তীয়াকে।
আবিরের কথায় ডাক্তার সকালে এসে আর একবার চেকআপ করে গেছে পেখমকে,,,পেখম এখনো ট্রমা থেকে বেরোতে পারিনি,,,, থেকে থেকে কেঁদেই চলেছে,,, হাতে ,ঘাড়ের এবং ঠোঁটের কোনে দাগ গুলো যতবার দেখছে ততবারই ডুকরে কেঁদে উঠছে,,,আর এরমধ্যে এই বিয়ে,লোকজন সব কিছুই যেন ওর কাছে বিরক্ত লাগছে,,,ডাক্তার যাওয়ার সময় বার বার করে বলেছেন যে ওর সাথে যেন সবাই স্বাভাবিক ব‍্যবহার করে,তাহলেই ও এই ট্রমা থেকে সহজ ভাবেই বেরোতে পারবে,,,

– বিদায় পর্ব এই জিনিস টা আবিরের একেবারেই অপছন্দ,,,, আশীর্বাদ পর্ব মিটে যাওয়ার পর ড্রয়িংরুমে কান্নার রোল পড়ে গেছে,,,এই রকম পরিবেশে আবির আর এক মুহূর্ত থাকতে চাই না পেখমকে নিয়ে,,, যেখানে কাল এত বড় একটা দুর্ঘটনা ঘটে গেছে পেখমের সাথে তার উপরে আজকে আবার এই কান্না কাটি,,আবির সবাইকে বোঝাতে অক্ষম যে এতে পাখির মানসিক চাপ পড়বে,,,কিন্তু কে শোনে কার কথা,,,সবার আগে তো পেখমই কেঁদে কেটে একাকার করে ফেলছে,,,ওর কান্না দেখে সবাই মনে মনে ভাবতেই পারে এই মেয়েকে নির্ঘাত জোড় করে বিয়ে দেওয়া হয়েছে,,, এ মেয়ে শ্বশুর বাড়িতে যেতে চাই না,,, অথচ কথাটা সম্পূর্ণ ভুল,,,, যাইহোক বিদায় পর্ব শেষ হলে ওরা রওনা দেয় ও বাড়িতে যাওয়ার জন্য,,, কিন্তু তার আগে পুলক আবিরকে এক প্রকার শাসিয়েছে,,,

– শোন তোর জন্য আমার বোন অনেক চোখের জল ফেলেছে,, মানছি তখন পরিস্থিতি অন‍্যরকম ছিল,,, কিন্তু এরপরে যদি আমি দেখেছি বা শুনেছি তোর জন‍্যেই আমার বোন আবার কেঁদেছে তো ভেবে নিস তোর আর আমার বন্ধুত্বের সম্পর্ক ওখানেই শেষ,,, আর আমি জানি আমার বন্ধু সেটা কখনোই হতে দেবে না। আর আমি এটাও জানি এই পৃথিবীতে পাখিকে কেবল তুই ভালো রাখতে পারবি,,,

-তুই যেই ভাবে থ্রেট করলি এখন আর আমার সত‍্যিই সাহস নেয় ওকে কাঁদানোর,,,( কথা গুলো বলেই একে অপরকে জড়িয়ে ধরলো,,,কিছুক্ষণ পর ছেড়ে দিয়ে পুলক বললো,,)

– পেখুকে সত‍্যিটা বলে দিস,,,বেচারি তোকে ভুল বুঝে রাগ করে আছে,,,

– ওর রাগ আমি ভেঙে দেবো চিন্তা করিস না,,,কিন্তু আমি চাই না কাকুমনিকে ও ভুল বুঝুক,,,আর শোন কিছু কিছু কথা মেয়েদের কে বলতে নেই,,,ওরা এমনিতেই মাথা মোটা হয়,,,( বলেই হাসতে হাসতে দুজনে বাইরের দিকে গেল কারণ সবাই অপেক্ষা করছে)
__________________________________________

– অনুপমা ছেলে বৌমাকে বরণ করে ঘরে তুললেন,,, তারপর বিভিন্ন নিয়ম কানন পালন করে সোফায় বসালেন আবির ও পেখমকে,,, পেখমের অবস্থা ভীষণ খারাপ,,, মাথা যন্ত্রণা করছে,,, খিদেও পেয়েছে,,, সকাল বেলায় ও কিছু খাইনি তারপর আশীর্বাদ এর সময় মিষ্টি খেয়ে গা গুলিয়ে এসেছিল,,, তারপর কান্নাকাটি,,, এখন একটু ফ্রেশ হতে পারলে ভালো লাগতো এইসব কথা মনে মনে চিন্তা করছিল,,,এমন সময় আবির ওর মাকে বলে,,

– মা পাখিকে আমার ঘরে নিয়ে যাও,,ওর শরীরটা এমনিতেই খারাপ,, একটু ফ্রেশ হয়ে ঘুমালে ভালো লাগবে,,,

– হ‍্যাঁ দাঁড়া,,, রেখা পাখিকে একটু আবিরের ঘরে নিয়ে যা,,,,কুশল বাবা পাখির ল‍্যাগেজ টা একটু আবিরের ঘরে রেখে এসো না,,,,রুশা আর প্রিয়া তোরা যাতো পাখির সাথে,,,,পাখি যা মা একটু ফ্রেশ হয়ে আয়,,,আমি একটু পরে উপরে যাচ্ছি,,(পাখিরা চলে যাওয়ার পর),,আবির একটু নীচে যা তো তোর মাসিরা মনে হয় চলে এসেছে,,,আমি কোন দিকে যায়,,, সব লোকজন আজকের মধ্যেই চলে আসবে,,,তোর বাবা ডেকটরের লোকজনের সাথে কথা বলছে,,ওখানে তোকে যেতে বলেছে,,,

– ঠিক আছে মা তুমি চিন্তা করো না আমি যাচ্ছি,,, আর হ‍্যাঁ পুলক আর তীয়া একটু পরেই আসছে,,,কাকিমনি নাকি এখনো কান্নাকাটি করছে তাই দেরি হবে ওদের,,,
___________________________________________

– পেখম ওয়াশরুম থেকে বেরোনোর পর রুশা আর প্রিয়া দুজনে মিলে ওকে লাল রঙের একটা শাড়ি পড়িয়ে দেয়,,,,

– পেখু একটা কথা বলি,,,প্লিজ তুই আর মন খারাপ করিস না,,, দেখ যা হয়েছে সেটা কিন্তু ভালোর জন্যই হয়েছে,,,(রুশা)

– আর দেখ যাকে তুই ভালোবাসিস ,আজকে কিন্তু সেই তোর বর,,,কালো অধ‍্যায়টা ভুলে যা,,,আবিরদা তোকে সত্যিই ভালোবাসে,,,,(প্রিয়া)

– হমম ভালোবাসে,,,উনি আমাকে খুব ভালো বাসে,,,তোরা চিন্তা করিস না,,এখন যা ফ্রেশ হয়ে নে,,,বলছি তোরা কিন্তু এখানেই থাকবি,,,

– সে আর বলতে,,,আবিরদা আমাদের বারবার করে বলেছে আমরা যেন এখানে থাকি,,,বৌমনির পাশের ঘরেই আমাদের থাকার ব‍্যবস্থা করে দিয়েছে,,, আচ্ছা আমরা ফ্রেশ হয়ে আসছি,,,( রুশা প্রিয়া চলে যায়)
__________________________________________

– পেখম মাথা থেকে টাওয়াল টা খুলে সেটা ব‍্যালকনিতে গিয়ে মেলে দিয়ে আসে,,,তারপর ড্রেসিং টেবিলের সামনে গিয়ে ভিজে চুল গুলো আঁচড়িয়ে সিঁথিতে সিঁদুর পড়ে,,,কপালে একটা লাল টিপ পড়ে,,,নিজেকে আয়নার সামনে সময় নিয়ে দেখে তারপর ঘাড়ের দিকে চোখ পড়তেই সেই রাতের মুহুর্ত গুলো চোখের সামনে ভেসে ওঠে,, ওমনি অশ্রুরা ভির করে চোখে এসে,,, এমন সময় দরজা খোলার আওয়াজে পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখে আবির ঘরে ঢুকছে,, পেখম কিছু না বলে ব‍্যালকনির দিকে চলে যায়,,,,

-ঘরে ঢুকেই পেখমের চোখে জল দেখে আবিরের বুক ঢক করে ওঠে,,কিন্তু কিছু বলার আগেই পেখম সেখান থেকে চলে যায়,,, আবিরের মন খারাপ হয়ে যায়,,, কিন্তু পরক্ষণেই সেই চিরপরিচিত প্রেয়সীর শরীরের ঘ্রাণ নাকে যেতেই মন ভালো হয়ে যায়,,, এবার ওর কি হবে,,,এই ঘ্রাণে যে মাদকতা আছে তাতে ও ঘুমাতে পারবে না সারারাত,,, এবার না জানি কত রাত ওর নির্ঘু্মে কাটাতে হবে,,,, এইসব কথা গুলো ভেবেই আনমনে হেসে ওঠে আবির,,

-তারপর ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে নিজের ঘড়ি খুলে রাখতে গিয়ে দেখে তার উপরে পাখির জিনিস ভর্তি,,, ও তো এতদিন এই দিনটার স্বপ্ন দেখেছে,,,যেখানে পাখি থাকবে ওর চোখের সামনে সবসময়,,, এই ঘরটা তখন আর সে নিজের বলবে না,,, বলবে এটা আমাদের ঘর,,ভালোবাসার ঘর,,,যেখানে থাকবে তার শরীরের সেই মিষ্টি ঘ্রাণ,,, সারা ঘরময় সে বয়ে বেড়াবে চুড়ি আর নুপূরের শব্দ নিয়ে,,,খিলখিল করে হেসে উঠবে মাঝেমধ্যে সে,,,,কষ্ট হলে বুকে এসে ঝাপিয়ে পড়বে সে,,কেঁদেকেটে শার্ট ভিজিয়ে ফেলবে সে,,,আদর করলে লজ্জায় মুখ লুকাবে সে এই বুকটাতে,,,রাতের বেলায় ঠিক বাচ্চাদের মতো করেই ওর বুকে মাথা রেখে পরম আবেশে ঘুমাবে সে,,কথাগুলো ভাবতেই আবার হেসে উঠল আবির,,,তারপর একটা গেঞ্জি আর টাউজার নিয়ে ওয়াশরুমে গেল,,,।
__________________________________________

-সত‍্যিটা যদি তোদেরকে বলতে পারতাম তাহলে হয়তো নিজেকে হালকা লাগতো,,কিন্তু আমি চাইনা সেই মানুষটাকে কেউ ঘৃণার চোখে দেখুক,,,আমি নিজেও তো তাকে ঘৃণা করার কত চেষ্টা করেছি কিন্তু দিনশেষে আমি ব‍্যর্থ হয়েছি,,,একবার না বারংবার আমি ব‍্যর্থ হয়েছি,,,হয়তো ঘৃণার কারণ গুলো থেকে আমার ভালোবাসার গভীরতা টা বেশি তাই,,

প্রিয়া ,রুশা তোদেরকে আমি কি করে বলবো যে,সে আমাকে ভালোবাসে না,,আমি তার কাছে মোহ ছিলাম,,শুধুমাত্র আকর্ষণের বস্তু ছিলাম,,সে কি করে ওইদিন বলতে পারলো এই কথা গুলো??,,আমি আগে কেন বুঝলাম না?? ঐদিন রিক আমাকে স্পর্শ করেছে বিশ্বাস কর তারজন্য আমার শরীর এখনো ঘিনঘিন করছে,,মরে যেতে ইচ্ছে করছে,, কারণ ঐ স্পর্শে ভালোবাসা ছিল না, ছিল শুধু লালসা,,,,কিন্তু আবির দা তো আমাকে কোনোদিন ভালোবাসেনি,,,তার কাছে তো আমি ছিলাম মোহ,,,কিন্তু তার স্পর্শে আমার কোনো দিন গা ঘিনঘিন করেনি,,খারাপ লাগেনি,,বরং ভালো লেগেছিল,,, হৃদয়ে ভালোবাসার অনুভূতি এনেছিল,,,কিন্তু এই গুলো যে তার একটা নিঁখুত অভিনয় সেটা আমি বুঝিনি,,, কেন বুঝিনি আমি ভগবান?? কেন?? কেন??কেন??( কথা গুলো নিজের মনকে বলছে আর কাঁদছে হঠাৎ পিছন থেকে অনুপমার গলার আওয়াজ পেয়ে চোখের জল মুছে নেয়)

– পেখম এখানে কি করছিস?? আমি না তোকে রেস্ট করতে বলেছিলাম,,, চল আমার সাথে,,(তারপর ঘরে ঢুকে পেখমকে বিছানায় বসিয়ে দেয় অনুপমা,,,) হঠাৎ পেখমের গলায় একটা সোনার চেন ও দু হাতে দুটো বালা পড়িয়ে দেয় আনুপমা,,,,তারপর পেখমের দিকে তাকিয়ে দেখে ও প্রশ্নবিদ্ধ চোখে তাকিয়ে আছে,,,, তখন অনুপমা হেসে বলে উঠলেন,,

– এই সোনার চেনটা আমার শাশুড়ি মা আমাকে পড়িয়ে আশীর্বাদ করেছিলেন,, আর বলেছিলেন যে,,তোমার যদি ছেলে হয় তার বৌকে এটা দিয়ে আশীর্বাদ করো,,মা দেখো আজকে আপনার চেনটা আপনার নাতবৌমা পড়েছে( চোখের জল মুছে আবার বলে) আর এই বালা দুটো আবির একদিন আমার হাতে দিয়ে বলে ” মা আমার প্রথম প্রজেক্ট টা সফল হয়েছে,, আর তা শুধুমাত্র তোমার হবু বৌমার জ‍ন‍্যে এই নাও আমার তরফ থেকে তার জন্য এই উপহার,,, যখন আমার বৌকে দেখবে পড়িয়ে দিও তার হাতে,,,আর দেখ তোর হাতে কি সুন্দর হয়ে গেল,,,

-পেখম হতভম্ব হয়ে গেছে অনুপমার কথা শুনে,,,ও জানে আবিরদা ওর হাতের মাপ জানে,,তা বলে যে ওকে বৌ বানাবে,,মানে বালা করে এনেছে,,, এইসব কথা ওর বোধগম্য হচ্ছে না,,, যে মানুষ টা ওকে ভালোবাসে না,,, বিয়ে করতে চাইনা আবার সেই মানুষটাই ওর হাতের মাপে বালা করে এনেছে,,,,

– কি রে ওই ভাবে মার দিকে চেয়ে আছিস কেন??( তীয়ার কথায় পেখমের ঘোর ভাঙে,, ও নিজেকে সামলে নিয়ে বলে,,) কাকিমনি তুমি কি আমাকে সত‍্যিই বৌমা বলে মেনে নিয়েছো??

– কেন মানবো না পেখম??( অনুপমা)

– না কাল কে যা,,হ,,( পেখমের কথা সম্পূর্ণ করতে না দিয়ে অনুপমা বলে ওঠে,,)

– আমি জানি আমার পেখম মা পবিত্র,, কে কি বললো তাতে আমার যাই আসে না পেখম,,,,গঙ্গা যেমন পবিত্র তাতে তুমি যতই নোংরা আবর্জনা ফেলো না কেন ,গঙ্গা কি কখনো অপবিত্র হয়?? ঠিক তেমনই তুইও পবিত্র,,, কেউ তোকে কলঙ্কিত করতে চাইলে তা কোনোদিন পারবে না,,,আর তাছাড়া আবির যেখানে তোকে নিজের স্ত্রীর স্বীকৃতি দিয়েছে সেখানে আমি কেন আপত্তি করবো পেখম,,

-কাকিমনি বলে পেখম অনুপমাকে জড়িয়ে ধরে আবার কেঁদে ফেললো,,,তখন অনুপমা ওর চোখের জল মুছিয়ে বললো উমম হু কাকিমনি না বল মামনি,,,তুই তো জানিস আমার খুব ইচ্ছা ছিল যে আমার বৌমা আমাকে মামনি বলে ডাকবে,,,বল মামনি,,,, পেখম তারপর মামনি বলে আবার জড়িয়ে ধরলো,,

– বলছি যে আমি যে একটা মানুষ,,,সেই কখন থেকে ভাতের প্লেট নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি,,তা মা আর বৌমার নজরেই পড়লাম না,,হায়রে দুঃখ,,,(তীয়া)

– দেখতে পারছিস না আমরা এখন ব‍্যস্ত,,,( অনুপমা)

– হ‍্যাঁ সেটাই,,, বৌমাকে পেয়ে এখন নিজের মেয়েকে তো ভুলে যাবে,,,(তীয়া)

– ইশশ বৌমনি তুমি ভীষণ হিংসুটে,,,(পেখম)

– হ‍্যাঁ সেটাই তো,,, অনেক হয়েছে কান্না কাটি,,, এবার খেতে হবে,,,প্রিয়া আর রুশা ডাইনিং রুমে সবার সাথে খেতে বসেছে,,,,by the way দাভাই কোথায়??(তীয়া)

– এই তো আমি এখানে,,,( এতক্ষন আবির ওদের কথা শুনছিলো ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে)

– ও তুই যা খেয়ে নে,,পুলক অপেক্ষা করছে তোর জন্য,,,( তীয়া)

– ঠিক আছে যাচ্ছি,,,মা ক‍্যাবিনেটের মধ্যে পাখির সব ওষুধ আছে,,,ওর খাওয়া শেষ হলে ওষুধ গুলো খাইয়ে দিও,,,তারপর যেন লম্বা একটা ঘুম দেয় নাহলে আবার মাথা ব্যথা করবে ( বলেই আবির চলে যায়)

– আমার ছেলেটা কিন্তু তোকে খুব ভালোবাসে পেখম,,, ওর পাশে সব সময় থাকিস,,,,আমরা যখন থাকবো না আমার ছেলেটাকে তখন আগলে রাখিস,, ও একটু চাপা স্বভাবের কিন্তু ওর মনের কথা তোকেই বুঝে নিতে হবে,,,(অনুপমা)

– অনুপমার কথার পরিপ্রেক্ষিতে পেখম শুধু ম্লান হাসে,,,
_________________________________________

-সন্ধ‍্যেবেলায় আবিরের ঘরে পেখমকে নিয়ে আড্ডার আসর বসিয়েছে সবাই,,, পেখমের সব বন্ধুদের আবির ফোন করে আসতে বলেছে,,যাতে পেখমের মনটা ভালো থাকে।

– আমাদের আবির কিন্তু খুব লাকি যে তীয়া,যে ও পেখমের মতো একটা মিষ্টি মেয়েকে লাইফ পার্টনার হিসেবে পেয়েছে(খুশি)

– হ‍্যাঁ আপু,,আমাদের পেখু খুব ভালো,,(তীয়া)

– by the way পেখম আবির দা কোথায়??( দিপু)

– ও একটু ক‍্যাটারারের সাথে কথা বলছে কালকের অনুষ্ঠানের বিষয় নিয়ে আর এই ঘরে এমনিতেই আজকে আসতে পারবে না কারণ আজ ওদের কালরাত্রি,,, হ‍্যাঁ কালকে থেকে পার্মানেন্টলি এই ঘরে আসতে পারবে(কুশল)

– তুই চুপ কর হা** যত সব উটকো কথা,,আগে ও আমাদের টাকা দেবে তারপর এই ঘরে প্রবেশ করবে ,,আরে আরে সবাই একটু সাহায্য করো,,,এতটা খাবার আমি একা নিয়ে আসতে পারি,,( মৈনাক)

– আরে মৈনাক দা কখন এলেন?? দিন আমাকে দিন খাবারের ট্রে টা (তীয়া)

– এই তো একটু আগে,,আবির ফোন করলো তারপর টিকিট কাটলাম then নেক্সট ফ্লাইটে মুম্বাই টু কলকাতায় চলে আসলাম,,, পেখম বৌদিমনি কেমন আছেন??(মৈনাক)

– ভালো আপনি কেমন আছেন ??( পেখম)

– আমি always ভালো,,, কি বলেন মিস রুশা,(চোখ মেরে মৈনাক বলে)

– অনেক কথা হয়েছে,,এবার সবাই খেয়ে নাও,,,কফিও চলে এসেছে,,(প্রিয়া)

– যে যার মতো খাচ্ছে আর গল্প করছে,,পেখম কফিতে চুমুক দিয়ে যেই বেগুনি নিতে যাবে অমনি তীয়া বলে “এই গুলো একটাও তোর জন্যে না পেখু,,, ভুলে কেন যাস বেগুনে তোর এলার্জি,,, দাদাভাই বারণ করেছে দিতে,,,

– পেখম কথাটা শুনে ছোট করে বলে”ওও আমার খেয়াল ছিল না বৌমনি”।

– তা বলে কি আমার বৌমা না খেয়ে থাকবে,,,(পিছন থেকে খাবারের প্লেট হাতে নিয়ে প্রবেশ করলেন অনুপমা )এই নে পেখম তোর পছন্দের পটেটো ন‍্যাগেট্স,,আবির অর্ডার দিয়ে আনিয়েছে,,আমি যাই আমার অনেক কাজ আছে,,,( বলেই অনুপমা চলে গেল)

– সত‍্যিটা রে পেখু আবির দা তোর ছোট খাটো দিকে খুব নজর দেয়,,এইতো বিকেলে আমাদের সবাইকে ফোন করে বললো আসতে এই বাড়িতে যাতে তোর মনটা ভালো থাকে,,(আকাশ)

– ভাগ্য করে এমন একটা বর পাইছো ম‍্যাইয়া,,, মাথায় করে রাখবা,,বুঝলা (চোখ টিপ দিয়ে অর্নব বলে,,আর সাথে সাথে হাসির রোল পড়ে যায় সারা ঘরময় জুড়ে)

– পেখম সত‍্যিই বুঝতে পারছে না মানুষটি এমন কেন?? কি চাই সে,,,নাকি সব লোক দেখানো,,,,

চলবে,,,,

।#হৃদয়হরণী
#কলমে সৌমিতা
#পর্ব- ২২

– বৌভাতের দিন সবাই ব‍্যস্ত সকাল বেলা,,, এত কম সময়ে সব আয়োজন করা চারটি খানি কথা না,,বাড়িতে লোকজন ভর্তি,,, আবিরদের ব্লিডিং এর টেরিসে সব আয়োজন করা হয়েছে,,, ভাত-কাপড়ের নিয়ম পালনের জন্য অনুপমা ড্রয়িংরুমে আবির ও পেখমকে যেতে বলেছে আধাঘণ্টার মধ্যে,,, একটু আগে এসেই তীয়া সবকিছু দিয়ে গেছে যেই গুলো পেখম পড়বে,,,প্রিয়ার সাহায্যে ও প্রায় রেডি হয়ে গেছে,,,

– পেখু তুই তাহলে সিঁদুর টা পড়ে নে ,আমি বৌমনিকে বলে আসি যে তুই রেডি হয়ে গেছিস,,,(প্রিয়া)

-ঠিক আছে তুই যা,,,প্রিয়া চলে যাওয়ার পর পেখম ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে পড়নের শাড়ি আর গয়না গুলো ঠিক করে। চুলটা ভালো করে খোঁপা করে তারপর সিঁদুর পড়ে,,,আর তখনই দরজা খোলার আওয়াজে আয়না দিয়ে তাকিয়ে দেখে পিছনে আবির দাঁড়িয়ে আছে,,, আর ওর দিকে কেমন ঘোর লাগা চোখে তাকিয়ে আছে,,,,আবিরের এই ভাবে তাকানো দেখে পেখমের কেমন অসস্তি হতে লাগলো,,,

– আবির নিজের ওয়ালেট টা নিতেই ঘরে এসেছিল, কিন্তু সামনে ওর পাখিকে দেখে এক মিনিটের জন‍্যেও থমকে গিয়েছিল ও,,, পেখমকে এই সময় কোনো অপ্সরার থেকে কম সুন্দরী লাগছে না,,,গোলাপি রঙের জামদানি শাড়ি পড়েছে আর তার সাথে হালকা কিছু সোনার গয়না,,, চোখে গাঢ় কাজল,,,কপালে লাল টিপ,,অধরযুগলে বেবি পিঙ্ক লিপস্টিক আর সিঁথিতে চওড়া করে সিঁদুর পড়া,,,আবিরের নিজেকে সামলানো দায় হয়ে পড়েছে,,,,,ও কোনো রকমে নিজেকে সামলে আলমারির সামনে যায়,, তারপর ওয়ালেট টা নিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে যায়,,,পেখম আবিরের যাওয়ার দিকে একটানা তাকিয়ে থাকে। সত‍্যিই ও এই মানুষটাকে ঠিক চিনতে পারে না,,, বিয়ের দিন থেকে আবিরের সাথে পেখমের তেমন কোনো কথাও হয়নি,,,নাহলে ও বুঝতে পারতো যে এই মানুষটা কি চাইছে,,,,
_________________________________________

– আবির এই ভাত-কাপড়ের থালাটা পেখমের হাতে দিয়ে বল আজ থেকে তোমার ভাত কাপড়ের দায়িত্ব আমি নিলাম,,,( অনুপমা)

– কি রে আবির বল( ওর বন্ধুরা সবাই মিলে একসাথে বলে ওঠে)

– আবির অনুপমার হাত থেকে ভাত-কাপড়ের থালাটা নিয়ে পেখমের হাতে দিয়ে বলে,,,

-“আজ থেকে তার শুধু ভাত কাপড় নয়,,তার সারা জীবনের যাবতীয় সব কিছুর দায়িত্ব আমি নিলাম। একফোঁটা কষ্ট যেন তাকে স্পর্শ করতে না পারে তার দায়িত্ব আমি নিলাম। পৃথিবীর সবচেয়ে খুশির মুহুর্ত গুলো আমি তাকে এনে দেবো তার দায়িত্ব আমি নিলাম। তার চোখের জল মোছার দায়িত্ব আমি নিলাম তেমন তার ওই ঠোঁটে হাসি লেগে থাকার দায়িত্বও আমি নিলাম”।

– আবিরের কথা বলা শেষ হলে চারপাশে যেন কেমন স্তব্দ মেরে যায় সবাই। আবিরের সব বন্ধুরা জানতো যে আবির একজনকে ভালোবাসে, সেই কৌশর কাল থেকেই,কিন্তু সেই মেয়েটি কে তারা তা জানতো না এমনকি আবির ওদের সামনে কখনো তার নাম নিতো না,,,শুধু সে ,বা তার ,বা প্রেয়সী ,কখনো কখনো প্রিয়তমা এইসব বলেই সম্বোধন করতো,,,আজ আবিরের বলা কথা গুলো শুনে ওরা একদম নিশ্চিত হয়ে গেল যে সেই মেয়েটা আর কেউ নয় বরং তাদের বন্ধু পুলককের বোন পেখম। মুহূর্তেই সব বন্ধুরা একসাথে চেঁচিয়ে ওঠে,,,আর আবিরকে কোলে তুলে নেয়,,পেখম তো ওদের এমন কান্ডে লজ্জা পেয়ে যায়।আর সবথেকে বেশি অবাক হয়ে যায় আবিরের কথা শুনে,, ওর এখন মনে হচ্ছে এই আবিরকেই ও চিনতো,,,কিন্তু একটা ঝড় এসে সব কিছু উলোট পালট করে দিয়ে গেল,,,,
_______________________________________

– parlour মেয়ে গুলো এসে পেখমকে আজ সাজিয়ে দিয়ে গেছে,,, পেখম বারণ করলে তারা বলে আজকে তারা আবির স‍্যারের interaction অনুযায়ী সাজাবে পেখমকে,,, এবং এটা তার অর্ডার,,, সেই কথা শুনে পেখম আর কিছু বলার সাহস পায়নি,,,

– পেখমকে আজ লাল আর গোল্ডেন কালারের কম্বিনেশনের শাড়ি পড়ানো হয়েছে,তার সাথে হাতা লম্বা নেটের ব্লাউজ,,মাঝ খানে সিঁথি কেটে চওড়া করে সিঁদুর পড়ানো হয়েছে আর তার উপরে সোনার টিকলি পড়ানো হয়েছে। হাতে শাখা পলার সাথে যোগ হয়েছে সোনার কঙ্কোন,বালা,চুড়,চুড়ি,,,পায়ে তাদের সাথে মিলিয়ে গোল্ডেনের উপর স্টোন বসানো নুপূর। চুল গুলো বড়ো করে স্টাইলে খোঁপা করা আর তার উপরে গোলাপ দেওয়া,, আর তাদেরকে ঘিরে আছে বেলী ফুলের শুভ্র মালা। কানে বড়ো বড়ো একজোড়া ঝুমকো,,, পায়ে আলতার সাথে হাতেও আলতা দেওয়া হয়েছে তার সাথে ম‍্যাচিং করে রূপোর আঙোট আর আংটি পড়ানো হয়েছে,,অধরযুগলে লাল লিপস্টিক,,,চোখে গাঢ় করে কাজল দেওয়া আর তার সাথে টেনে আইলাইনার পড়ানো হয়েছে,,কপালে লাল টিপ পড়ানো হয়েছে আর টিপের মাঝখানে একটা স্টোন বসানো,,,এক কথা জমিদার বাড়ির গিন্নী লাগছে,,,,

– আর এইদিকে আবির ঘিয়ে ও লাল রঙের কম্বিনেশনে একটা পাঞ্জাবী পড়েছে,,তার সাথে লাল ধুতি,,,চোখে নিউ স্টাইলের হোয়াইট গ্লাসেস পড়া,,হাতে গোল্ডেন কালারের হ‍্যান্ডওয়াচ পড়েছে,,,তার সাথে ম‍্যাচিং করে জুতো পড়েছে। চুল গুলো জেল দিয়ে স্টাইলে উল্টানো আছে,,,এক কথায় আজকে আবিরকে যে দেখবে সে ক্রাশ খাবে,,
____________________________________________

– রিসেপশনের জায়গায় প্রায় সব গেস্টরা চলে এসেছে,,,সবাই এখন পেখমের জন্যে অপেক্ষা করছে,,,আবিরের অফিসের কলিগ,,,অশোক বাবুর বন্ধুরা সবাই চলে এসেছে,, আবির যখন ওর অফিস কলিগদের সাথে কথা বলায় ব‍্যস্ত ঠিক তখনই কেউ বলে ওঠে ওই তো অশোক বাবুর বৌমাকে অনুপমা বৌদি আনছেন,, তাদের কথা শুনে আবির সামনে তাকাই,,কিছুক্ষণের জন্য ও পুরো ব্ল‍্যাঙ্ক হয়ে গেছে,,, ওর মনে হচ্ছে হৃদয়ে খুবই দ্রুত গতিতে হৃদস্পন্দন হচ্ছে,,ও বুকে হাত দিয়ে বলে,,

” আজ বোধহয় প্রেয়সীর রূপের ছটায় এই প্রেমিক হৃদয়ের হৃদস্পন্দন থেমে যাবে” ।

– ও এতদিন যেভাবে পাখিকে বধূ বেশে কল্পনা করে এসেছে আজ ঠিক সেভাবেই সাজাতে বলেছিল parlour মেয়ে গুলোকে,,,কিন্তু ও যা কল্পনা করেছে তার থেকেও হাজার গুণ বেশি অপরুপ লাগছে ওর প্রেয়সীকে।

– অশোক বাবু, অনুপমা দুজনে মিলে সবার সাথে পেখমের পরিচয় করিয়ে দেয়,,,কিছুক্ষণ পর পেখমের বাড়ির লোকেরাও চলে আসে আর তার সাথেই আবির ও পেখমের বন্ধুদেরো আগমন ঘটে সেখানে,,, সবাই আড্ডা মারছে, কথা বলছে,,কিন্তু এত কিছুর মধ‍্যেও পেখমের অশান্ত চোখজোড়া সেই সুপুরুষ কে দেখার জন্য ছটফট করছে,,, এখানে আসার পর থেকে একবারের জন্যও পেখমের চোখে পড়েনি আবির,,,হঠাৎ সেই চোখজোড়া কে শান্ত করতে আগমন ঘটে আবিরের,,,পেখম দেখে পুলকের সাথে কথা বলতে বলতে আবির ওর দিকেই আসছে,,,পেখমের আজ সত‍্যিই মনে হচ্ছে আবিরই হল ওর স্বপ্নের পুরুষ যা ধরা ছোঁয়ার বাইরে,,,

– সবাই সবার সাথে কথা বলছে,,,গান করছে আড্ডা মারছে,,,কিন্তু এই সবের থেকেও সব থেকে বড়ো বিষয় হল এখানে একজন আরেকজনকে আড়ালে লুকিয়ে দেখে চলেছে,,, আজ দুজন মানব-মানবীর চোখজোড়া বড্ড বেহায়া হয়েছিল,,, তাদের মনের মানুষকে দেখেও যেন তৃপ্তি মিটছে না,,,এমন সময় কুশল বলে ওঠে আবিরকে গান গাইতে,, আর মৈনাক তো গিটার নিয়ে রেডি,,আবির গান গাইতে রাজী হলেই গিটার টা দেবে,,,আবির রাজী হয়ে যায় এবং গিটার হাতে নিয়ে তাতে টুং টাং সুর তুলে গান গেয়ে ওঠে-
Mera Chand Mujhe Aaya Hai Nazar
Mera Chand Mujhe Aaya Hai Nazar
Aye Raat Zara Tham Tham Ke Gujar
Aye Raat Zara Tham Tham Ke Gujar
Chhaya Hai Nasha Meri Aankho Par
Chhaya Hai Nasha Meri Aankho Par
Aye Raat Zara Tham Tham Ke Gujar
Aye Raat Zara Tham Tham Ke Gujar
Mera Chand Mujhe Aaya Hai Nazar

Mere Dil Mein Hai Arma Kai Kai
Meri Chahat Hai Abhi Nayi Nayi
Mere Dil Mein Hai Arma Kai Kai
Meri Chahat Hai Abhi Nayi Nayi
Reh Jaye Na Pyasa Pyar Mera
Meri Baahon Mein Bhar De Yaar Mera
Itana Sa Karam Tu Kar Mujh Par
Itana Sa Karam Tu Kar Mujh Par
Aye Raat Zara Tham Tham Ke Gujar
Aye Raat Zara Tham Tham Ke Gujar
Mera Chand Mujhe Aaya Hai Nazar

Abhi Labo Ko Labo Ne Chhua Nahi
Arma Koi Pura Hua Nahi
Abhi Labo Ko Labo Ne Chhua Nahi
Arma Koi Pura Hua Nahi
Abhi Aash Ka Gulshan Khilana Hai
Abhi Do Jismo Ko Milna Hai
Dekhuga Abhi Main Wo Manjar
Dekhuga Abhi Main Wo Manjar
Aye Raat Zara Tham Tham Ke Gujar
Aye Raat Zara Tham Tham Ke Gujar
Mera Chand Mujhe Aaya Hai Nazar
Mera Chand Mujhe Aaya Hai Nazar
Aye Raat Zara Tham Tham Ke Gujar
Aye Raat Zara Tham Tham Ke Gujar
Mera Chand Mujhe Aaya Hai Nazar
Aaya Hai Nazar, Aaya Hai Nazar,

-পুরো গানটাই আবির পাখির দিকে তাকিয়ে গেয়েছে,, গান শেষ হতেই সবাই একসাথে হাত তালি দিয়ে ওঠে,আর সেই শব্দেই পেখমের ঘোর কাটে,কেননা এতক্ষণ ও নিজেও আবিরের দিকে একটানা তাকিয়ে ছিল।
____________________________________________

– রিসেপশন শেষ হলেই যে যার মতো চলে গেছে,,, তীয়া আর পুলক শুধু থেকে গেছে অনুপমার কথাতে।অনুপমার কথা মতোই পেখমকে ওই ভারী সাজ থেকে মুক্তি দিয়ে একটা হালকা পাতলা নীল রঙের শাড়ি পড়ানো হয়েছে,,, আর তার সাথে হালকা গয়না পড়ানো হয়েছে,,,

– আবিরের পিসি ,মা আর তীয়া এখন আবিরের ঘরে আছে,,,কি নিয়ম আছে সেই গুলো পালন করানোর জন্য,,, প্রিয়া আর রুশা পেখমকে আবিরের ঘরে নিয়ে আসলো,,,পেখম তো ঘরে এসে পুরোই আবাক হয়ে গেছে,, কারণ সারা ঘর বেলী ফুল আর গোলাপ দিয়ে সাজানো,,, আর তার সাথে নীল রঙের মরিচ আলো জ্বলছে,,,সেন্টার টেবিলের উপর একটা কাঁচের ট্রে মতো জলের পাত্র আছে , যেটাতে গোলাপের পাপড়ি ভাসছে আর তার সাথে রয়েছে ছোট ছোট মোমবাতি,,,

– বৌদি পছন্দ হয়েছে ঘর সাজানো?? এইসব কিন্তু আবিরের কথা মতোই সাজানো হয়েছে,,,(মৈনাক)

– পেখম লজ্জায় লাল হয়ে যাচ্ছে,, ও কিছু না বলে শুধু মাথা নেড়ে হ‍্যাঁ বলে।

– কি রে আবিরকে নিয়ে আয় তোরা,,কত রাত হয়েছে দেখেছিস,,,ওরা তো একটু বিশ্রাম নেবে,,(পিসি)

– আরে এই তো এসে গেছি বরকে নিয়ে,,, এতক্ষণ ধরে বলে বলে তাই কুড়ি হাজার টাকা হাতিয়েছি,,নাহলে বেচারাকে আজকে বাইরেই রাত কাটাতে হতো ,,,কথাটা বলেই হেসে ফেলল কুশল আর তার সাথে তাল মেলালো সবাই।।

– আচ্ছা অনেক হয়েছে,,, পেখম ওই পাত্রে নারকেলের জল আছে,,ওতে তোর চুলের শেষ প্রান্ত ভালো করে ডোবা,,তারপর ওটা দিয়ে আবিরের পা মুছিয়ে দে,,তারপর প্রণাম করবি আবিরকে,,(অনুপমা)

– অনুপমার কথা শুনে আবির বলে ওঠে” এই গুলো কি নিয়ম মা?? এই সব নিয়ম ওকে মানতে হবে না”

– আবির চুপ কর,,এই গুলো মানতে হয়,,আমি মেনেছি, এখন পেখম মানছে পরে তোর ছেলের বৌও মানবে,,,পেখম তুই করতো,,,(অনুপমা)

– পেখম অনুপমার কথা মতো সব কিছু করে,,,তারপর তীয়া বলে” পেখু এটাতে উষ্ণ গরম দুধ আছে, আর মিষ্টি আছে,,তোরা দুজন দুজনকে খাইয়ে দিবি,,,তারপর দাভাই কে এই পানটা দিবি,,,”

– এই পান আর দুধ ওরা ঘুমানোর আগে খাবে,,,বৌমা তুমি এখন আবিরকে মিষ্টি খাইয়ে দাও আর আবির তুইও বৌমাকে মিষ্টি খাওয়া। পিসির কথা মতো ওরা একেঅপরকে মিষ্টি খাওয়ালো,,আর তার সাথে ওদের চোখজোড়া আবার এক হলো,,,চাইলেও কেউ নামিয়ে নিতে পারলো না দৃষ্টি,,,,

– ভাই আর কত বার শুভদৃষ্টি করবি??( ইশান কথাটা বলতেই ঘরে হাসির রোল পড়ে গেল,,এদের কথা শুনে অনুপমা ,পিসি ওরা বেরিয়ে গেল লজ্জায়,,, সত‍্যি এখনকার ছেলেদের মুখে কোনো লাগাম নেই,,,গুরুজনের সামনে এমন কথা কেউ বলে,,,পেখমের তো ইচ্ছে করছে মাটির নীচে চলে যেতে,,,

-একে একে সবাই কথা বলে ঘর থেকে চলে গেলে আবির দরজা বন্ধ করে দেয়,, পেখম তখন পিছন দিকে ফিরে ছিল,,, আবিরের দরজা বন্ধ করার শব্দে চমকে ওঠে ও,,, বুকের মধ্যে শুরু হয় তোলপাড়। লজ্জারা ভির করে এসে জমা হয় ওর চোখে মুখে। আজ থেকে ও এই মানুষটার সাথেই একঘরে,এক বিছানায় থাকবে এটা ভাবতেই শরীরটা কেমন শিহরিত হয়ে উঠলো,,,আজ থেকে সামনের মানুষটিকে সে নিজের বলতে পারবে,,,সত‍্যিই কি এই মানুষটি তার নিজের?? একান্তই কি তার?? নাকি সব মিথ্যে সব ছলনা??

চলবে,,,,

()

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here