হৃদয়হরণী পর্ব ২৫+২৬

0
590

#হৃদয়হরণী
#কলমে সৌমিতা
#পর্ব- ২৫

-সেই কখন থেকে বই মুখের সামনে নিয়ে বসে আছে পেখম,,, আবির ওর সামনে বই গুলো রেখে ফ্রেশ হতে গেছে,,,, প্রায় আধা ঘন্টা পর আবির ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে দেখে পেখম অন্য দিকে তাকিয়ে কি যেন ভাবছে আর ডান হাতের নখ দাঁত দিয়ে কাটছে,,,আবির একটু এগিয়ে এসে পেখমের সামনে দাঁড়ালো,,তাতেও পেখমের কোনো হেলদোল না দেখে গলা খাকাড়ি দিয়ে বলল,,

– হমম হমম তো আজকাল বই এর লেখা বুঝি ব‍্যালকনির পর্দায় থাকে??( টাউজারের পকেটে হাত রেখে র্নিলিপ্ত ভাবে কথা টা বলল)

-পেখম অন‍্যমনস্ক থাকায় হঠাৎ করে আবিরের কন্ঠস্বর শুনে কেঁপে ওঠে,,, তারপর নিজেকে সামলে নিয়ে বলে ” এত বড়ো হয়েছেন,, এত বড়ো একজন business man আর তা ছাড়া business কলেজে নাকি টপ করতেন,,তাহলে এইটুকুও জানেন না যে ব‍্যালকনির পর্দায় কোনো বই এর লেখা থাকে না,,, যদি না সেটা ওখানে টোকা হয়,,,,

– আজকাল বড্ড মুখে মুখে কথা বলো,,যেটা আমি পছন্দ করি না পাখি,,,

– আমিও অনেক কিছু পছন্দ করি না,,,

– কিন্তু আফসোস এটাই যে তোমার পছন্দ হোক বা না হোক সেখানে জিনিস গুলোই তোমাকে মেনে চলতে হবে,,, এখন ঝটপট একবার বই গুলো দেখে নাও,,তোমার হাতে দশ মিনিট সময় আছে ,,তারপর আমি প্রশ্ন করবো আর যদি তুমি সঠিক উত্তর দিতে না পারো তাহলে আমি তোমাকে যে শান্তি দেবো সেটা তোমাকে মানতে হবে,,,

– মানে টা কি?? কাল আমার পরীক্ষা এখন আপনি পড়া ধরবেন?? আপনার কি মনে হয় আমি বাচ্চা??

– আমার মনে হয় না পাখি,,তুমি তো সত‍্যিই বাচ্চা, নাহলে কি আমাকে এত অপেক্ষা করতে হয়???

– মানে কি বলতে চাইছেন একটু স্পষ্ট করে বলুন,,,আর আমি মোটেও বাচ্চা নয়,,,আমি অর্নাস দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী,, কাল থেকে আমার ফাইনাল পরীক্ষা,, তারপরে আমি তৃতীয় বর্ষে উত্তীর্ণ হবো,,তাহলে আমাকে আপনার কোন দিক দিয়ে বাচ্চা মনে হয়??? আর আমি যদি বাচ্চা হই তাহলে আপনি একজন বুড়ো,,,

-পেখমের কথা গুলো শুনে আবির ভ্রুযুগল কুঞ্চিত করে পাখির উদ্দেশ্যে বলে” তুমি বাচ্চা নয় তাই তো ঠিক আছে,,, তাহলে তোমার শাস্তি আমি বড়োদের মতো করেই দেবো,,,তোমার সময় শুরু হচ্ছে এখন থেকে,,,,

– আবির নিজের কথা মতো দশ মিনিট পর পেখমের কাছে থেকে বই নিয়ে নেয়,,,তারপর এক এক করে প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করতে থাকে,,পেখম মোটামুটি সব প্রশ্নের উত্তর দিয়ে দেয়,,, কিন্তু যখন স্ট‍্যাটিসটিক এর উপর আবির প্রশ্ন করতে শুরু করে তখন পেখম সব প্রশ্নের উত্তর গুলিয়ে ফেলে,,,

– কি হল বলো মিডিয়ানের সূত্র কি??আর কতক্ষণ অপেক্ষা করবো simple একটা উত্তরের জন্যে??

– উফফ আপনি একটু চুপ করুন না,,,আমি মনে করার চেষ্টা করছি,,, ওই তো 2min + না – ছিল,,,মনে পড়ছে না(মুখ টা করুণ অবস্থা করে বলে,,,আর যা দেখে আবিরের হাসি পেলেও নিজেকে সামলে গম্ভীর হয়ে বলে,,)

– উত্তরটা যখন মনে নেয় তাহলে শাস্তির জন্য প্রস্তুত হও,,,

– ছেড়ে দিন না,,,আপনি বরং বইটা দিন আমি একবার রিভাইস দি,,

– পড়তে তো তোমাকে হবে যতক্ষণ না আমি উত্তর ঠিক ঠাক পাবো,,,সেটা যত রাতই না হোক,,, কিন্তু এখন শাস্তি তোমাকে পেতে হবে,,,আর যেহেতু তুমি নিজে দাবী করছো যে তুমি বাচ্চা না বড়ো,,সুতরাং শাস্তিও তোমাকে বড়োদের মতো পেতে হবে,,,আর তোমার শাস্তি হলো- ঝটপট আমার কাছে এসে আমার বুকে মাথা রেখে জড়িয়ে ধরে থাকো দশ মিনিট,,,আবিরের এমন কথা শুনে পেখম হতভম্ব হয়ে যায়,,,কতক্ষণ যে ও ফ‍্যাল ফ‍্যাল দৃষ্টিতে ওইভাবে তাকিয়ে ছিল আবিরের দিকে তার ঠিক হিসাব নেই,,,ওর ঘোর কাটে আবিরের ডাকে,,,,

– কি হল পাখি,,,কি বলছি আমি,, যদি তুমি আমার কথা না শোনো তাহলে কিন্তু এর থেকেও বড়ো শাস্তি দেবো,,অযথা দেরি করে আমাকে রাগিয়ে দিও না,, যদি একবার রেগে যায় জানো তো আমি কি করতে পারি,,,(গম্ভীর হয়ে)

– আবিরের এই রকম কথা শুনে পেখমের আর সাহস হল না দিরুক্তি করার,,,ও আস্তে করে করে আবিরের সামনে যায়, তারপর নিজের মাথাটা আবিরের বুকে রেখে কাঁপা কাঁপা হাতে আবিরকে জড়িয়ে ধরে,,,আর আবির মুচকি হেসে পরম আবেশে পেখমকে নিজের বাহুবন্ধনে আবদ্ধ করে,,,,,

– আবিরের বুকে মাথা রাখার সাথে সাথে পেখমের শরীর বেয়ে ঠান্ডা রক্তস্রোত নেমে যায়,,,দুজনের অশান্ত মনটা এক নিমিষেই শান্ত হয়ে যায়,,, পেখম শুনতে পারছে তার স্বামী নামক পুরুষটির হৃদয়ের স্পন্দন যা ক্ষনিকে ক্ষনিকে বলছে এটাই তোর স্বপ্ন পুরুষ,,, এটাই তোর প্রেমিক পুরুষ,,, এটাই তোর একান্ত ব্যক্তিগত পুরুষ,,, এই সেই পুরুষ যার উপরে একমাত্র তোরই অধিকার সম্পূর্ণ তোরই,,,আর কারোর নয়,,,,,

– পেখমকে জড়িয়ে ধরে আবির ভাবছে,,আজ কতদিন পর তোমাকে এইভাবে কাছে পেলাম আমি রাত-প্রেয়সী,,,, তুমি কি আমাকে একটু বুঝবে না,,, ভালোবাসবে না আগের মতো করে???

– তারপর এইভাবেই আবির প্রশ্ন করে আর পাখি উত্তর দেয়,,কখনো কখনো জেনে শুনেই ভুল উত্তর দেয় পাখি আর যার শাস্তি স্বরূপ তাকে কখনো আবিরের গালে চুমু খেতে হয়েছে,,,কখনো মাথায় পাঁচ মিনিট হাত বুলিয়ে দিতে হয়েছে তো কখনো কফি করে আনতে হয়েছে,,,আবার কখনো কখনো আবিরের দুই গালে ও কপালে চুম্বন করতে হয়েছে,,, এমনকি গান শোনাতেও হয়েছে,,,আর এইসব কাজ পাখি ভালোবেসেই করেছে ইচ্ছাকৃত ভাবে ভুল উত্তর দিয়ে,,, আসলে এইরকম ভালোবাসাময় সময়টা ওরা দুজনেই উপভোগ করতে চেয়েছিল যার জন্যে আবিরো কঠিন কঠিন প্রশ্ন ,,ঘুড়িয়ে ফিড়িয়ে প্রশ্ন করছিল পেখমের কাছে আসার জন্য,,,,বেশ অনেক রাত করেই দুজনে ঘুমিয়েছে প্রশ্ন-উত্তরের পালা শেষ করে।

– পরীক্ষা গুলো ভালো ভাবেই দেয় পেখম,, কেননা তাকে এই কদিন আবির পড়িয়েছে,,তবে হ‍্যাঁ পড়ার মধ্যে পাখির শাস্তিও ছিল রোমান্টিকতায় ভরপুর। আবির পরীক্ষার কদিন পেখমকে দিয়ে এসেছে আর নিয়েও এসেছে,,পেখমের কখন কি লাগবে সেদিকেও খেয়াল রেখেছে,, পেখম যতবার দুর্বল হয়ে পড়ে আবিরের প্রতি ঠিক ততবারই ওই তিক্ত সত‍্যিটা চোখে ভেসে উঠেছে,,,,ঠিক তখনই নিজেকে আবার সামলে নিয়েছে,,,
__________________________________________

– সোনালী আলোয় ঝলমলে আকাশ টা হঠাৎ করেই ঘন কালো মেঘে ছেয়ে যায় আর তার সাথে পাল্লা দিয়ে বয়ে যায় বাতাস,,,শরৎকালে শরৎ মেঘের এই হলো সমস্যা,, যখন তখন মেঘ সৃষ্টি হয়ে বৃষ্টি হবে,,,কিন্তু তবুও পেখমের এই ঋতুটাকে খুব ভালো লাগে,,,যখন ও কাশফুল দেখে রাস্তার চারপাশে,, আর যখন শিউলি ফুলের ঘ্রাণে মেতে ওঠে এই শরতের পরিবেশ তখন ওর মন নেচে ওঠে বাঁধন ছাড়া ময়ূরের মতো,,,,

– রাস্তার চারপাশে যখন ধূলোময় পরিবেশ ঠিক তার মাঝেই হেঁটে আসে ওরা ছয়জন,,, হ‍্যাঁ পেখমদের কথা বলা হচ্ছে এখানে,,, পরীক্ষা শেষ হওয়ার একমাসের মাথায় আবির নিজে ওকে নতুন একটা কোচিং সেন্টারে ভর্তি করিয়ে দেয়,,ফাইনাল ইয়ার টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে,,আর দ্বিতীয় বর্ষের রেজাল্ট অবশ্য নেক্সট সপ্তাহে দেবে,,,,

– আর পেখম যেহেতু এই কোচিং সেন্টারে পড়ে সুতরাং পেখমের পিছনে পিছনে ওর পাঁচজন বন্ধুরাও এখানে চলে আসে,,,আজ বিকেলে কোচিং ছিল তাই ওরা একসাথেই এসেছে কিন্তু রাস্তার মাঝেই এই বৃষ্টি শুরু হওয়াতে একটু ভিজে যায় ওরা,,,

– কোচিং ক্লাস শেষ হয়ে যায় রাত আটটার সময়,, বাইরে তখনই গুড়িগুড়ি বৃষ্টি হচ্ছে,,,প্রায় সবাই যে যার মতো বাড়িতেও চলে যায়। পেখম জোড় করে প্রিয়া আর রুশা কে বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়,,অর্নবদের বললে ওরা বলে যতক্ষণ আবিরদা না আসবে ওরা দাঁড়াবে,,,হঠাৎ ঝুমঝুম করে জোড়ে বৃষ্টি পড়া শুরু হয়ে যায়,, পেখম বুঝে উঠতে পারছে না আবিরের কেন এত দেরি হচ্ছে,,এর আগে এমন দেরি কখনো হয়নি,,,

– পেখু তুই একটু দাঁড়া ,, আমরা একটু স‍্যারের সাথে কথা বলে আসছি,,অর্নব তোর ক্রাশ সামনেই দাঁড়িয়ে আছে,, যা একবার তোর ছাতাটা দিয়ে আয়,,(দিপু)

– ফাউল বকিস না,,,যা তোর কাজে,,,( অর্নব)

– এই অর্নব যা তো মনের কথা টা আজকে বলেই দে(পেখম)

– সত্যি যাবো বলছিস?? তা তুই এখানে একা থাকবি ,,তুইও চল আমার সাথে,,(অর্নব)

– আরে আমি একা কোথায়,,, কত মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে এই পাশে,,,আর তোরা তো এখানেই আছিস শুধু একটু দূরে এই যা,,,

– পেখম একটু পর পর ঘড়ি দেখছে আর রাস্তার দিকে তাকাচ্ছে,, এমন সময় পিছন থেকে রাহুল বলে ওঠে,,
( রাহুল পেখমদের সাথে এই কোচিং সেন্টারে পড়ে,,আবার রুশাকেও পছন্দ করে,, সেই সূত্রে ওদের সাথে বেশ ভালোভাবে মিশে গেছে এই এক মাসে)

– পেখম কোনো সমস্যা?? বারবার এইভাবে ঘড়ি দেখছো,,,(রাহুল)

– না না তেমন কোনো সমস্যা না,,আবির দা এখনো আসছে না কেন তাই??

– সিরিয়াসলি পেখম তুমি তোমার হাসবেন্ড কে এখনো দাদা বলছো,,,তাহলে তো তোমাদের বেবি হওয়ার পর তারা আবিরদাকে মামা বলে ডাকবে,,,ব‍্যাপার টা তখন কেমন হবে বলোতো,,(কথাটি বলেই রাহুল হেসে দেয়,,,পেখম প্রথমে ভ্রু কুঁচকালেও পরে এইসব ভেবে রাহুলের হাসিতে যোগ দেয়,,,আর তারপর হাসতে হাসতে বলে,,,

– আমি তো এটা ভেবে দেখিনি,, ভাগ‍্যিস তুমি বললে ,,,,এটা নিয়ে এখন আমাকে গবেষণা করতে হবে,,, কথাটা বলে আর এক দফা দুজন হেসে উঠলো,,, আর এইসব কিছু দূর থেকেই গাড়িতে বসে দেখছিল আবির,,সৃষ্টি হয় মনের মধ্যে দাবানল আর যেটার আভাস চারিদিকে ছড়িয়ে যাওয়ার আগেই নিজেকে সামলে নেয় আবির,,,

-আবির গাড়ি থেকে নেমে ছাতা মাথায় দিয়ে পেখমের কাছে এগিয়ে যায়,,, আর ততক্ষণে অর্নবরাও চলে আসে ওখানে,,, আবিরকে দেখে ওরা সবাই বলে ওঠে,,,, কেমন আছো?? আবির ওদের প্রশ্নের উত্তর দেয় ,,,তারপর ছাতাটা পাখির দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলে গাড়িতে গিয়ে বসতে,,পাখিও আর কথা না বাড়িয়ে রাহুল ও ওর বন্ধুদের কাছে থেকে বিদায় নেয়,,এরপর সবাই এক এক করে আবিরের সাথে কথা বলে বাড়িতে চলে যাও,,আর আবির কোচিং সেন্টারের স‍্যারের সাথে কথা বলে গাড়িতে এসে বসে,,,কোচিং সেন্টার থেকে গাড়ির কাছে আসতে আসতেই আবিরের শার্ট প্রায় ভিজে যায়,,,তাই দেখে পাখি বলে,,,

– আপনি তো প্রায় ভিজে গেছেন দেখছি,,,

– তাতে তোমার কি??( বলেই গাড়িতে স্টার্ট দিলো)

-আবিরের কথার মাঝে রাগের আভাস স্পষ্ট ভাবে পাই পেখম,,, তাই খুব ধিরেই বলে,,আমার কিছু না,, কিন্তু একটু পরেই আপনি হাচ্চি করতে শুরু করবেন,, বলেই আবিরের দিকে একটু এগিয়ে এসে নিজের ওরনা দিয়ে আবিরের মাথাটা মুছে দিতে লাগলো ,,,,

– পেখমের এইরূপ কার্যে আবির হতবাক হয়ে পড়ে,,,ও হঠাৎ উপলব্ধি করতে লাগলো যে ক্রমেই যে রাগটা মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছিল সেটাতে কেউ এক পশলা বৃষ্টি এনে দিয়ে শান্ত করে দিলো,,,,,মনে বিষাদের মেঘটা কাটার সাথে সাথে মেজাজটা ফুরফুরে হয়ে উঠলো,,

– পেখম আবিরের মাথা মুছে দিতে দিতে হঠাৎ খেয়াল করে ও আবিরের খুব কাছে চলে এসেছে,,, এতটাই কাছে চলে এসেছে যে আবিরের গরম নিশ্বাস ওর মুখে এসে বারি খাচ্ছে,,,ও তাড়াতাড়ি করে সরে আসতে নিলেই টের পায় একজোড়া শক্তিশালী বাহু ওর কোমড়কে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে রেখেছে,,,এই স্পর্শ ওকে আলাদা ভাবে শিহরিত করছে ক্ষণে ক্ষণে,,ও সরে আসার জন্য আবিরের দিকে তাকাতেই দেখে একজোড়া মোহনীয় চোখ ওর দিকে আকৃষ্ট হয়ে তাকিয়ে আছে,, যা দেখে পেখমের নিজেকে সামলে রাখতে খুব কষ্ট হয়,,,আর যখন ও অনুভব করে আবির ধিরে ধিরে ওর দিকে অগ্ৰসর হচ্ছে ঠিক তখনই পিছনের গাড়ি গুলো হর্ন দিতে শুরু করে,,আর কেউ কেউ তো বলে ওঠে রাস্তার মাঝে এইভাবে কেউ হুট করে গাড়ি থামিয়ে দেয়,,,এইসব কথা কানে আসতেই আবিরের ঘোর কাটে,,,আর সাথে সাথেই ওর চোয়াল দুটো শক্ত হয়ে ওঠে শেষের কথা টা শুনে,,
এদিকে পেখম তো মনে মনে ওদের ধন্যবাদ দেওয়া শুরু করে দিয়েছে,,,,

– বৃষ্টির জন্যে যখন সবাই দোকান বন্ধ করে বসে আছে,, রাস্তাঘাট প্রায় যখন ফাঁকা ,,,ঠিক তখনই আবির খেয়াল করে রাস্তার একধারে একটি বাচ্চা ছেলে ভিজছে,,হাতে তার একটা ঝুড়ি, আর সেই ঝুড়িতে রয়েছে বেলি ফুলের মালা,,,সদ‍্য ফোঁটা শিউলি ফুল,,,আবির গাড়িটা ছেলেটার সামনে দাঁড় করায়,এতে ছেলেটা একটু ভয় পেলেও পরে মুখে হাসির রেখা ফোঁটে এই ভেবে হয়তো ওর ফুল কিনবে।
আবির ওই ছেলেটাকে বলে,,,

– বৃষ্টিতে ভিজছিস কেন?? জ্বর আসবে তো,,,

– ভিজতাম না,,কিন্তু এই ফুল গুলো,,(বলেই মাথা নিচু করে ফেলে)

– আবির ওর ওয়ালেট থেকে পাঁচশো টাকার একটা নোট ছেলেটার হাতে দিয়ে বলে ” তোর ঝুড়িতে যা আছে সব দে”

– ঝুড়িতে যা আছে সব দিলেও তো এত টাকা হবে না,,,

– না হোক,, ওটা তুই রেখে দে,,,যদি জ্বর আসে ওষুধ আর ফল কিনে নিস,,,

– ঠিক আছে বাবু,,,আপনি তাহলে এই ঝুড়িটা ধরেই নিন,,,বলেই আবিরের হাতে ঝুড়ি ধরিয়ে দিয়ে চলে যায় ছেলেটি,,,আবির ওর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে কিছুক্ষণ,,, তারপরে পেখমের হাতে ঝুড়িটা ধরিয়ে দিয়ে বলে,,,,

– “শুভ্র প্রণয়ের এই বর্ষণে এই শুভ্র ফুলগুলো একমাত্র শুভ্র প্রেয়সীর হাতেই মানায়”। (কথাটা বলে আবার ড্রাইভিং মনোযোগ দেয় আবির)

– পেখম যত এই মানুষ টাকে দেখছে ততই অবাক হচ্ছে,,,পেখম বুঝতে পারে ফুল কেনার কারণ।প্রথমত ,ছেলেটার জন্যে কষ্ট হচ্ছিলো তাই ফুল গুলো নিয়েছে,, কারণ শুধু শুধু টাকা দিলে ছেলেটা হয়তোবা নিতো না,,,,আর দ্বিতীয়ত, একটু আগে ওর সাথে জোড়ে গলায় কথা বলেছে তার জন্যে এই ফুল গুলো দেওয়া যাতে আমি রাগ না করি,,,,,কথা গুলো নিজের মনে মনে বলে হেসে উঠলো পেখম,,,,তারপর ঝুড়ি থেকে ফুল গুলো হাতে তুলে নিয়ে তার ঘ্রাণ নিতে থাকে। ক্রমেই মনে বেড়ে চলেছে আবিরের প্রতি ভালোলাগার একরাশ অনুভূতি,,,,,

-ড্রাইভিং এর ফাঁকে ফাঁকে আড় চোখে আবির বারবার পেখমকে দেখে,, ফুলের ঘ্রাণ নিতে নিতে প্রেয়সীর ঠোঁটের কোণে হাসি দেখে আবিরের বলতে ইচ্ছা হলো ” এই পৃথিবীতে যেন এইরকম প্রেমময় বর্ষণ ক্ষণে ক্ষণেই নামুক,,,আর ধুয়ে দিক মনের সকল বিষাদ। আর সেখানেই জন্ম নিক এক শুভ্র প্রণয়ের অনুভূতি”।

চলবে,,,,,

#হৃদয়হরণী
#কলমে সৌমিতা
#পর্ব- ২৬

– সময় ,স্রোত সর্বদা প্রবাহমান,,,ঠিকই যেমন ঘড়ির কাঁটা আর ক‍্যালেন্ডার জানান দেয় দিন পেরিয়ে রাত,,মাস পেরিয়ে বছর ক্রমাগত ভাবেই পরিবর্তন শীল,,,,দেখতে দেখতে প্রায় মাস তিনেক পার হয়ে গেছে কিন্তু আবির আর পেখমকে দেখলে মনে হবে তারা ঠিক আগের জায়গাতে আছে,,,আসলে সম্পর্কের ভিত যদি হয় নড়বড়ে সেক্ষেত্রে সেটা মজবুত করতে দুজনেরই প্রচেষ্টা দরকার,, কিন্তু এখানে ব‍্যাপার টা সত‍্যিই জটিল ,,,,

– বিশ্রী ফিনাইলের গন্ধে গা গুলিয়ে এলেও নাকে রুমাল দিয়ে হাসপাতালের করিডোরে পাইচারি করছে পেখম,,, অশোক বাবু তো অনুপমা দেবীকে সামলাতে ব‍্যস্ত,, এদিকে পুলক ওর মাকে জড়িয়ে বসে আছে,,,দেবেন্দ্র বাবু তার বাবার সাথে ফোনে কথা বলছে,,,পেখম একটানা অপারেশন থিয়েটারে লাল আলোটার দিকে তাকিয়ে আছে,,, ভিতরে কি হচ্ছে ও কিছু বুঝতেই পারছে না,,, চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে আসতেই সেটাকে হাত দিয়ে মুছে ফেললো,,,কাঙ্খিত নাম্বারটিতে অনেক বার কল করা সত্ত্বেও ওপাশ থেকে কোনো রেসপন্স পেলো না,,,,বার কয়েক সবার দিকে তাকিয়ে আবার পাইচারি দিতে লাগলো,,,হাত ঘেমে যাচ্ছে,,,এই গুমোট পরিবেশের মধ্যে কেমন অসুস্থতা অনুভব করছে পেখম,, হঠাৎ করে ওর ফোন বেজে উঠলো,, হাতে থাকা ফোনের উপর নজর দিয়ে দেখলো কাঙ্খিত সেই নাম্বার থেকে ফোন এসেছে,,,সাথে সাথে রাগে শরীর জ্বলে উঠলো ওর,,ফোন রিসিভ করেই বলতে শুরু করে,,,

– কোনো মানুষের যদি কোনো সমস্যা হয় এবং সেই সমস্যা আপনাকে ফোন করলেই সমাধান হয়ে যাবে তাহলে তো আপনাকে ফোন দিয়ে পাওয়া যাবে না। বিগত এক ঘন্টা ধরে আমি ফোন করেই যাচ্ছি,অথচ আপনি একটা বারের জন্যে ফোনটা রিসিভ করেননি,, মানছি আপনি আমাকে নিজের কেউ মনে করেন না,, তা বলে আমি আপনার কাছে এতটাই গুরুত্ত্বহীন???( এক নিশ্বাসে কথা গুলো বলে দম নিলো পেখম)

– মাথা ঠান্ডা করে কথা বলো,,,তুমি নিজেও জানো না আমাকে কি বলছো,,,আসল কারণ না জেনে অযথা চিৎকার করছো কেন?? একটা important meeting ছিলাম,,তাই ফোন কলস অ্যাটেন্ট করতে পারিনি,,, এখন বলো কি হয়েছে?? এভাবে ফোন করার কারণ কি?? ( শান্ত কন্ঠে গম্ভীর হয়ে বলল আবির)

– আবিরের কথা গুলো কর্ণপাত হতেই পেখমের মনে রাগটা ধুপ করে আরও জ্বলে ওঠে,,,যথা সম্ভব নিজের রাগকে কন্ট্রোল করে আবিরকে বলে হাসপাতালে চলে আসতে,,,,

– হাসপাতালে কেন?? কি হয়েছে?? সবাই ঠিক আছে তো??( চিন্তিত হয়ে)

– বৌমনি মাথা ঘুরে বাথরুমে পড়ে গেছে,,মাথায় আঘাত লেগেছে,,প্রচুর ব্লিডিং হয়েছে,,, আর এখনো জ্ঞান ফেরেনি,,,

– ঠিক আছে তুমি অপেক্ষা করো আমি আধাঘণ্টার মধ্যে যাচ্ছি,,,

___________________________________________

– প্রায় পনেরো মিনিট পর ডাক্তার বেরিয়ে বললেন, পেসেন্টের জ্ঞান ফিরেছে,,দুটো স্টীজ দিতে হয়েছে,,, উনার শরীর খুব দুর্বল,, she needs to rest ,,,আমি মেডিসিন প্রেসক্রাইব করে দিয়েছি,,, but আপনারা এত careless কেন?? পেসেন্টের এই অবস্থায় উনার উপর খেয়াল রাখা উচিত ছিল আপনাদের বিশেষ করে খাওয়ার উপর,,,,

– ডাক্তারের কথা সবাই ঠিক বুঝতে না পেরে প্রশ্ন করে ওঠে,, তীয়ার কি হয়েছে??

– তখন ডাক্তার বললো, পেসেন্ট চার মাসের প্রেগনেন্ট,,, আপনারা একটু পরে উনার সাথে দেখা করতে পারবেন বলেই ডাক্তার চলে গেল,,

-সেই কথা শুনে সবাই অবাকের সাথে সাথে খুশি হয়ে যায়,,এতক্ষণ যে চিন্তা হচ্ছিলো সেখানে এখন চিন্তার বদলে একরাশ ভালোলাগার অনুভূতি জায়গা করে নেয়,, পেখম খুশিতে অনুপমাকে ধরে হেসে ওঠে আর চোখের জল মোছে,,,পুলক ওর মাকে জড়িয়ে ধরে বলে , মা আমি বাবা হবো,,,আমি বাবা হবো মা?? তারপর কেঁদে দেয়,,এ হলো সুখের কান্না,,, এখানে উপস্থিত প্রতিটা মানুষের চোখে জল,,,

– কি রে এখন তো দাদু হয়ে গেলাম দুজনে,,, এবার বুঝতে পারছি ,,বয়স হয়েছে আমাদের কি বলিস??( কথাটা দেবেন্দ্র বাবু অশোক বাবুকে বলে হেসে ওঠে,,আর অশোক বাবু দেবেন্দ্র কে জড়িয়ে ধরে)

– ওদের কথার মাঝেই উপস্থিত হয় আবির আর ওর ক্লাইন্ট,,,আবির সব কথা শুনে পাখিকে বলে,,,

– পাখি আমি মামা হবো?? সত‍্যি আমি মামা হবো,,আর তুমি মামী হবে??( খুশিতে চিৎকার করে বলে)

– পাখি বলতে যাবে মোটেও না মশাই আমি মামীর আগে পিপি হবো আর আপনি হবেন পিসেমশাই,,,কিন্তু বলা হলো না আবিরের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটাকে দেখে,,,ও নিরুত্তর ভাবে দাঁড়িয়ে থাকলো,,,,এই মেয়েটাকে ও এর আগেও অনেকবার দেখেছে আবিরের সাথে,,,,

– পেখমকে চুপ থাকতে দেখে অনুপমা বলে ওঠে”হ‍্যাঁ আবির তুই মামা হবি,,,আর আমি দিদুন হবো,,,,
_________________________________________

– তীয়াকে বিকেলে ডিসচার্জ করে নিয়ে আসা হয়েছে বাড়িতে,,,তীয়ার খবরটা সবাই শুনে খুব খুশী হয়েছে,,,নরেন্দ্র বাবু তো খুশিতে তীয়ার মাথায় হাত রেখে অনেক আশীর্বাদ করলেন,,

– তীয়া এই শরবত টা খেয়ে নাও,,,( পুলক)

– আমার কিছু খেতে ইচ্ছা করছে না,,,

– একদম চুপ ,,ডাক্তার বলেছে তুমি খুব দুর্বল,,,সুতরাং এটা তাড়াতাড়ি শেষ করো,,,

– পুলকের হাত থেকে শরবতের গ্লাস টা নিয়ে এক নিশ্বাসে খেয়ে নিলো তীয়া,, তারপর পুলকের হাতে গ্লাস টা দিয়ে বলল “তুমি খুশি হয়েছো তো”??

– আমি ভীষণ খুশি তীয়া,,, তুমি আজকে আমার জীবনের সবথেকে বড়ো উপহার টা দিলে(মাথায় চুমু খেয়ে),,,আচ্ছা তীয়া ও এখন এখানে বলো( পেটের দিকে ইশারা করে)

– পুলকের কথায় তীয়া মাথা নাড়িয়ে হ‍্যাঁ বলে,,,

– তীয়া আমি এখনো বিশ্বাস করতে পারছি না যে আমি বাবা হবো,,,আমার অংশ তোমার শরীরের ধিরে ধিরে বেড়ে উঠবে,,,,আর কদিন পরে এই দুই হাতে আমি ওকে কোলে তুলে নেবো,,,আমাদের সামনে ছোট্ট ছোট্ট পা ফেলে হেঁটে বেড়াবে,,আর আমাকে বাবা বাবা বলে ডাকবে,,,,তীয়া আমি খুব খুশি,, আমি সত‍্যিই খুব খুশি,,, বাবা হওয়ায় এত আনন্দ আমি বলে বোঝাতে পারব না,,,( বলেই চোখের কোনে থাকা জল মুছলো)

– পুলকের কথায় তীয়াও কেঁদে ফেলল,,,সত‍্যিই তো ও মা হবে,,, এর থেকে প্রাপ্তি জীবনে আর কি আছে?? ও নিজের চোখের জল মুছে পুলকের হাতটা ধরলো,,,

– আচ্ছা তীয়া মা তখন কি বলছিলো??

– তেমন কিছু না,, আমি আগে কেন বলিনি,,,কিন্তু বিশ্বাস করো আমি নিজেও বুঝতে পারিনি,,,তুমি তো জানো আমার রেগুলার হয় না,,তাই সেটা মাকে বললাম,,, আর এখন থেকে আমাকে কি ভাবে চলতে হবে,,,কি কি করবো না এইসব গুলো ভালো করে বুঝিয়ে দিচ্ছিলো,,,,

– ওওও

– আসতে পারি ( দরজায় নক করে পেখম বললো)

– আরে আয়,,,ভিতরে আসবে তা আবার পারমিশন নিচ্ছে,,,( তীয়া)

– বৌমনি তোমাকে একটু ড্রয়িংরুমে যেতে হবে,,,

– কেন??

– কেন গিয়ে দেখবে চলো দাভাই আর তোমার ভাই দুজনে মিলে কি করেছে,,

– পেখম তীয়াকে নিয়ে ড্রয়িংরুমে আসতেই তীয়া অবাক হয়ে দেখে,,ড্রয়িংরুমে চারপাশে বাচ্চাদের খেলনা, টেডিতে ভরে গেছে,,, ডাইনিং টেবিলের উপর মিষ্টির প‍্যাকেট ভর্তি,,, বাবাদের কথা জিজ্ঞাসা করলে মনোরমা জানায় আবিরদের বিল্ডিং আর পুলকদের বিল্ডিংয়ের সব পরিবারকে মিষ্টির প‍্যাকেট বিতরণ করতে গেছে অশোক আর দেবেন্দ্র বাবু,,,বিমলা দেবী নাতবৌমার মা হওয়ার খুশিতে একজোড়া সোনার কানের উপহার করেন তীয়াকে,,,,তীয়া একটু পর দেখে আবির প‍্যাকেট ভর্তি করে তীয়া যা পছন্দ করে সব খাবার এনেছে সাথে দশ কিলো মতো ফল এনেছে ওর বক্তব্য ডাক্তার বলেছে তুই ভীষণ উইক তাই তোকে এইগুলো সব খেতে হবে,,,নাহলে নাকি ওর ভাগ্নে বা ভাগ্নির সাস্থ্য ভালো হবে না,, এদের এসব কান্ড দেখে তীয়া হাসবে না কাঁদবে বুঝতে পারছে না। আজ একটা সংবাদ দুই পরিবারে খুশির জোয়ার এনে দিয়েছে।
___________________________________________

– পেখু এই আচার টা খেয়ে দেখ তো কেমন হয়েছে???(অনুপমা)

– খুব ভালো হয়েছে মা,,( একটু খানি টেস্ট করে),,

– ঠিক আছে কাল তুই কলেজে যাওয়ার সময় ওবাড়িতে দিয়ে আসিস,,,

– ঠিক আছে,,,

– আন্টি আমি আসছি,,,( পিছন থেকে আবিরের সেই ক্লাইন্ট বলে ওঠে)

– সে কি,,,এখন যাবে কেন সোহিনী,,, এখন তোমার যাওয়া চলবে না,,, একেবারে ডিনার করে যাবে,,,(অনুপমা)

– হমম মা ঠিক কথায় বলেছে সোহিনী,,, একেবারে ডিনার করেই তুমি যেও,,,গাড়ি কি এনেছো??( আবির)

– না স‍্যার,,আসলে আমি উবারে এসেছি,,,আর অন্য একদিন ডিনারে আসবো আন্টি,,( সোহিনী)

– না না ,,আজকে যখন এসেছো একেবারে ডিনার করেই যাবে,,(অনুপমা)

– হমম অন্য একদিন আসবো,,,এই তুই কেন আসবি?? আর লোকের বরের দিকে তোর নজর কেন?? এত গাঁ ঘেষাঘেষি করে কেন দাঁড়াবি?? ইচ্ছে তো করছে এই আচার গুলো সব তোর মুখে ছুড়ে মারি,,,( পেখম কথা গুলো মনে মনে বলছে,,,)

– ঠিক আছে সমস্যা নেই,, আমি তোমাকে পৌছে দেব,,,তুমি লাইব্রেরি রুমে গিয়ে বসো,,,আমি ফাইল গুলো নিয়ে আসছি,,,( আবির)

– হ‍্যাঁ তা সমস্যা থাকবে কেন?? আমারই ফুঁটো কপাল ভগবান,,, সত‍্যি বলতে এই লোকটার চরিত্রের দোষ আছে,,,না হলে এত রাতে একা একা ওই মেয়েটাকে নিজে গিয়ে দিয়ে আসবে বলে,,,সেদিন কি বলেছিল যেন,,ও হ‍্যাঁ মনে পড়েছে আমি আমার জীবন টাকে উপভোগ করতে চাই,,,,করাচ্ছি আপনার উপভোগ দাঁড়ান,,,( মনে মনে বলছে আর রেগে ফেটে পড়ছে পেখম এদের কথা শুনে)

– পাখি তুমি একটু দু কাপ কফি করে পাঠিয়ে দিও তো লাইব্রেরি রুমে,,,( আবির)

– হ‍্যাঁ নিয়ে যাচ্ছি আপনারা যান,,,( জন্মের মতো কফি খাওয়াবো)

– প্রায় আধাঘণ্টা পর পেখম ট্রে করে দু কাপ কফি লাইব্রেরি রুমে নিয়ে যায়,,,রুমে ঢুকে ওর চক্ষু চড়কগাছ,,, রাগে সারা শরীর রি রি করে উঠলো,,একের থেকে মেয়েটা ছোট স্কার্ট পড়ে এসেছে তার উপর ,পায়ের উপর পা তুলে বসে আছে যার কারণে হাঁটুর অনেক উপরে স্কার্ট উঠে গেছে,,,আর ওই ভাবে বসে আছে আবিরের সামনে,,আবির একটু ওর দিকে তাকালেই নজরে আসবে ,,, পেখম নিজের চোখ দুটো বন্ধ করে গাল ফুলিয়ে লম্বা একটা শ্বাস ছাড়লো,,তারপর একটা টেডি স্মাইল দিয়ে ওদের সামনে গেল,,,

– হমম মম এই নিন আপনাদের কফি,,,

– হমম ওখানে রাখো,,,সোহিনী কফি নাও,,,( আবির)

– খা না খা,,,একবার খেয়ে দেখ বেলজ্জে মেয়ে,,,( মনে মনে বলে পাখি) নিন কফিটা,,, আর আপনিও নিন ,,নাহলে ঠান্ডা হয়ে যাবে,,,( পেখম)

– প্লিজ ম‍্যাম আমাকে আপনি করে বলবেন না,,, এম্বারাসিং লাগে খুব,,,বলেই কফি মগটা হাতে নেয় চুমুক দেওয়ার জন্যে,,,(সোহিনী)

– এম্বারাসিং ফিল হওয়া বেরিয়ে যাবে একবার শুধু কফিটা খা,,,( মনে মনে বলে পেখম)

– ওয়াক ওয়াক,,,থু থু,,,ইসস কি বিশ্রী ম‍্যাম,,,, এটা কি,,,(সোহিনী)

– হোয়াট রঙ সোহিনী??( আবির)

– আমার মনে হয় মিস সোহিনী ভুল করে আপনার কফিটা খেয়েছে,,, কিন্তু এতটা বাজে তো হয়না মিস সোহিনী,,, বরং আপনার স‍্যার বলেন আমি যতই ব্ল‍্যাক কফি করি না কেন তাতে মিষ্টতার স্বাদ থাকবেই,,,(পেখম)

– আবির সবে এক চুমুক কফিতে দিয়েছিল কিন্তু পেখমের কথা শুনে আবির চোখ মোটা মোটা করে ফেলে ,,আর সাথে সাথে বিষম খাও,,,মনে মনে বলে ওঠে” এই মেয়েটা কি একটু বোঝে না কোথায় কি বলতে হয়”??

– পেখমের কথা গুলো শুনে সোহিনী একবার আবিরের দিকে তাকায়,,, তারপর মিটিমিটি হেসে বলে,,, ok no problem,,,( সোহিনী)

– ঠিক আছে আমি নতুন করে কফি পাঠিয়ে দিচ্ছি ,,,মিস সোহিনী একটু অপেক্ষা করো,,( পেখম)

– ম‍্যাম কফি আর পাঠানোর দরকার নেই,,, একেবারে ডিনার করে নেবো,,,( সোহিনী)
___________________________________________

– রাতে ডিনারের পরে সোহীনীকে আবির নিজে ওর ফ্লাটে পৌঁছে দেয়,,,তারপর ফিরে আসে বাড়িতে,,, রাস্তায় জ‍্যাম থাকায় একটু দেরি হয়,,, আর এদিকে সারা ঘরময় পাইচারি করে বেরাচ্ছে পেখম,, আর মনে আবির আর সোহিনীকে বকা দেয়,,,

– রাত প্রায় সাড়ে বারোটা তখন আবির রুমের দরজা খুলে দেখে যে পেখম নিজের মনে বকবক করছে আর সারা ঘরময় হেঁটে বেরাচ্ছে,,,

– পাখি কি হয়েছে?? শরীর ঠিক আছে তো??

– এতক্ষণে আমার কথা মনে পড়লো,,,যান না যান আপনার ওই সোহিনীর কাছে,,,বাড়ি ফেরার কি দরকার ছিল,,, কথা গুলো মনে মনে বললেও সেটা প্রকাশ করলো না পাখি,,,,আবিরের কথার উত্তর না দিয়ে নাইট ড্রেস টা নিয়ে সোজা ওয়াশরুমে চলে যায়,,আর দরজা শব্দ করে লক করে,,, পেখমের এইরূপ ব‍্যবহার দেখে আবির বলে ওঠে,,,

– ” সে কি বোঝে না তার এইরূপ ব‍্যবহারে আমার কষ্ট হয়?? কবে বুঝবে সে আমায়?? বলবে কবে সে আমাকে ,ভালোবাসি আমি আপনাকে”??

চলবে,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here