Story: হিংস্রপ্রেম
#শেষপর্ব
লেখাঃ Israt Jahan
.
ফালাক মেহেরের কোলের উপর মাথা রেখে ওর পূর্বের অভ্যাসের মতো মেহেরের পেটের মাঝে মুখ গুজে বুকে ভর করে শুয়ে আছে।আর মেহের বিছানার সঙ্গে হেলান দিয়ে ফালাকের চুলগুলো নেড়েচেড়ে দিচ্ছে।
মেহেরঃ ঘুমিয়ে পড়েছেন?
ফালাক ঘুম জড়ানো কন্ঠে উত্তর দিলো,
-” একটু।”
মেহের ফালাকের এই “একটু” কথা শুনে হেসে দিয়ে বলল,
-” একটা কথা জিজ্ঞাসা করব? ”
ফালাকঃ করুন।
মেহেরঃ তখন আমি কক্ষে ঢোকার পর আপনি এসে আচমকা আমার পেটের উপর হাত রাখলেন কেনো?
ফালাক মেহেরের প্রশ্নটি শুনে বুকের উপর ভর ছেড়ে চোখ বন্ধ থাকা অবস্থাতেই পিঠের ভর করে শুয়ে রইল।তারপর চোখদুটো আধখোলা করে মেহেরের দিকে তাকিয়ে আবার চোখদুটো বন্ধ করে নিয়ে বলল,
-” ওটা একটা চমক।এই মুহূর্তে এখন সেটা বলবোনা।তাকে পৃথিবীতে আসতে দিন ঠিক সেদিন বলবো।”
মেহেরঃ চমক? কী চমক? আমি তো নিজেই চমকে গিয়েছিলাম আপনার কান্ড দেখে।
ফালাকঃ চমকালেন কেনো?
মেহেরঃ কেনো আবার? আমি ছুটে আসলাম আপনাকে খবরটা জানাব বলে।অথচ তার পূর্বে আপনি কী করে বুঝতে পারলেন?আমি নিজেই তো আজ বুঝতে পারলাম।
ফালাকঃ আমিও আজ-ই বুঝতে পেরেছি।
মেহেরঃ জ্বী? তাকে ধারণ করলাম আমি আর বুঝতে পারলেন আপনি?
ফালাক এবার চোখদুটো খুলে ওর দিকে তাকিয়ে বলছে,
-” এমন কথা কোথাও পড়েছেন যে নারীরা অন্তঃসত্বা হলে শুধুই তারাই তা সর্বপ্রথম বুঝতে পারবে? আমরা পুরুষেরা অন্তঃসত্বা হতে পারিনা বলে কী আমরা বুঝতে পারবোনা?আপনাদের এটা বোঝা উচিত যে আপনারা অন্তঃসত্বা হলেও তার পেছনে এই মহান পুরুষদের-ই মূল অবদান থাকে।কারণ এটার ব্যবস্থা তো আমাদের-ই করতে হয়।”
মেহের ফালাকের কথাতে লজ্জা পাওয়ার বদলে মুখে হাত দিয়ে খিল খিল করে হেসে উঠল।ফালাক ওর মুখের কাছ থেকে হাতটা সরিয়ে দিলো।মেহের হাসি কিছুটা থামিয়ে প্রশ্ন করল,
-” কী হয়েছে?”
ফালাকঃ মুখে হাত দিয়ে হাসছো কেনো?
মেহের একটা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে উত্তর দিলো,
-” লজ্জা সামলাতে।”
ফালাকঃ লজ্জা? ওটা তো আজ কাল তোমার মাঝে ঘাটতি পড়েছে।লজ্জা পেলে কী আর হো হো করে হেসে উঠতে?
মেহের ফালাকের এমন একটা কথা শুনে একটু মন খারাপ হয়ে গেল।বলল,
-” আমার মাঝে লজ্জার ঘাটতি পড়েছে? এটা বলতে পারলেন?এমনটা কী দেখেছেন?”
ফালাকঃ না পারার কী আছে?যেটা লক্ষ্য করছি সেটাই তো বললাম।আগে আমার চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলতে পারতে না, ভাব বিনিময় করতে গেলে মাথাটা নিচের দিকে গেঁড়ে রাখতে।আর কাছে আসতে গেলে যা করতে তা তো আর বললাম-ই না।আর ইদানিং তো দেখি শুধু ঘুরঘুর করো আমার চারপাশে, কথা বলার বাহানা খুঁজো।আবার আজ ভবীষ্যত তাজের বর্তমান আদরটুকু নিজে পাওয়ার আবদার করছো।সেদিন দেখলাম দাসীগুলোর সঙ্গে ওদের কক্ষের সামনে দাঁড়িয়ে হা হা হি হি করে হাসছো।রাগ যা উঠেছিল না?
মেহেরঃ আমি সেদিন একটু ওদের সাথে হেসে কথা বলছিলাম বলে আপনার রাগ হচ্ছিল?
ফালাকঃ হবেনা? এই এত্তগুলো দিনে তুমি আমার সামনে হি হি করে হাসা তো দূরে থাক মুচকি হাসিটুকুও দাও নি।আর সেদিন তো ওদের হাসির জোয়ার বইয়ে দিচ্ছিলে।মনে হচ্ছিল আমার থেকে তফাত থেকে বেশ আমোদে-ই আছো।
মেহেরঃ ও আচ্ছা।এই ব্যাপার?তো তখন রেগে গিয়ে আমাকে কী করতে ইচ্ছা করছিল আপনার?
ফালাকঃ পিঠের উপর দশ ঘা বেতাঘাত করতে ইচ্ছা করছিল।
মেহেরঃ তাহলে ওইদিন আবার জ্ঞানহীন হতাম।
ফালাকঃ হলে হতে।জ্ঞান ফিরে দেখতে যে আমার এই লোম জড়ানো বুকের মাঝে আষ্টে-পৃষ্ঠে আছো।
মেহেরঃ যতবারই নিজেকে এভাবে আপনার বুকের মাঝে দেখেছি ততবারই মনে হয়েছে এমন সুযোগ পেলে আমি প্রতিনিয়ত উত্তম মধ্যম পেতে প্রস্তুত।
ফালাকঃ এখন আর সেই সুযোগ পাবে না। আমি আর কারো শরীরে-ই আঘাত করব না।আর তোমাকে তো নয়-ই।
মেহেরঃ আপনি কী সত্যি বিচার ব্যবস্থা ওনাদের হাতে সমর্পণ করেছেন?
ফালাকঃ হুম।কেনো তুমি এতে সমর্থ নও?
মেহেরঃ অবশ্যই সমর্থন জানাই আমি।আপনার মাঝে এখন এই গুণাবলীগুলো দেখে সত্যি নিজেকে খুব ভাগ্যবতী মনে হয় যে আপনার মতো একজন জীবনসঙ্গী পেয়েছি।গর্ববোধ করতে নেই কিন্তু তবুও খুব গর্ববোধ হয় আপনার জন্য।আর আজকাল আপনার গুণাবলীর সঙ্গে আপনার সুদর্শন মুখটার থেকেও চোখ ফেরাতে ইচ্ছা হয়না। বিশেষ করে আপনার দাড়িগুলোর জন্য।
ফালাকঃ হ্যা আমি জানি।আজ কাল আমার চেহারা বেড়েছে।তার কৃতিত্ব অবশ্য আমার এই দাড়িগুলোর ও কম নয়।
মেহের সেই আবার হো হো করে হেসে উঠল ফালাকের কথা শুনে।আর সেই হাসি ফালাক স্বাভাবিক নয়নে তাকিয়ে দেখলেও অন্তরের চোখ তা মুগ্ধ নয়নে দেখছে।
ফালাকঃ আমার সম্পর্কে অনেক কিছুই তো তোমার অজ্ঞাত।
মেহেরঃ প্রকাশ না করলে জ্ঞাত হবো কী করে? আর আমি তো জানার সুযোগ ও পাইনি।
ফালাকঃ হুম এখন থেকে আস্তে আস্তে সব জেনে নিও।আমি অনেক রসিকতাপূর্ণ।তবে তা সবসময় নয়।
মেহেরঃ এখন তা বুঝতে পারছি।আচ্ছা একটা কথা তখন প্রশ্ন করতে ভুলে গেছি।আপনি তখন ভবীষ্যৎ তাজের কথা কেনো বললেন?আপনার কী মনে হয় আমাদের পুত্র আসবে?
ফালাকঃ মনে হয় না।পুত্র-ই আসবে।
মেহেরঃ এত নিশ্চয়তা কীভাবে দিচ্ছেন?তার মানে আপনি পুত্র-ই চান তাইতো?আর যদি কন্যা হয় তাহলে নিশ্চই আপনি অন্য কাউকে আপনার নতুন রানী করবেন?
ফালাক মেহেরের প্রশ্নে হতচকিত হয়ে উঠে বসল। মেহের চিন্তাগ্রস্ত মুখে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। তারপর মেহেরের পাশে হেলান দিয়ে আধশোয়া হয়ে বসে ফালাক মনেমনে দুষ্টুমির ফন্দী আটল।বলল,
-” হ্যা এটা তুমি ঠিক-ই ধরেছো।আমার পুত্র চাই-ই চাই।আর যতদিন পর্যন্ত আমাকে কেউ পুত্র সন্তান দিতে না পারবে ততদিন পর্যন্ত এক একজন রানী হতেই থাকবে আমার।”
মেহের চেহারায় ভীরুতা প্রকাশ করে প্রশ্ন করল,
-” আমাকে কী আর একবার সুযোগ দেওয়া যাবেনা? যদি প্রথম অবস্থাতে কন্যা সন্তান-ই হয় তাহলে পরবর্তীতে তো পুত্র সন্তান ও হতে পারে।”
ফালাক ঠোঁটের কোণে মৃদু হাসি রেখে কিছুসময় ওর দিকে নিশ্চুপ হয়ে তাকিয়ে থাকল।তারপর মেহেরের নাকের মাথাটা তর্জনী আর মধ্যমা আঙুলের মাঝে ধরে টেনে বলল,
-” আমাকে আল্লাহ্ পাক কন্যা সন্তান দান করলে আমার থেকে মহা আন্দদিত তুমিও হবেনা।”
মেহের ওর আঙুলদুটো সরিয়ে বলল,
-” তবে যে বললেন আপনার পুত্র সন্তান-ই চাই?”
ফালাকঃ মজার ছলে বলেছি।কিন্তু তুমি নিশ্চিত থাকতে পারো আমাদের ছোট তাজ আসছে।”
মেহের কিছু বলার আগে ফালাক আবার বলল,
-” আমার মন বলছে।”
মেহেরঃ আপনি কী খুব খুশি?
ফালাকঃ এটাও কী প্রশ্ন করে জানতে হবে?বুঝতে পারছোনা?
মেহেরঃ শেষবারের মতো আপনাকে খুশি দেখেছি যেদিন রাতে আমি আপনার সঙ্গ চেয়েছিলাম। আর আজ সেই খুশি পুনর্বার দেখছি।
ফালাকঃ তোমার ও খুশির দিন আসছে।
মেহেরঃ এসেই তো গেছে।
ফালাকঃ আগামীকাল তোমার জন্য একটি চমক অপেক্ষা করছে।যে চমকটা তোমার জন্য খুশির বন্যাও হতে পারে আবার দুঃখের বন্যাও হতে পারে।তা তোমার উপর নির্ভর করবে।আচ্ছা এবার তুমি এটা বলো তো, তুমি ওই কক্ষে কী করতে?
মেহেরঃ আল্লাহ্ কে স্মরণ করতাম।তার কাছে মহামূল্যবান জিনিস চাইতাম।
ফালাক আবার ওর কোলের ওপর মাথা রাখতে রাখতে বলল,
-” এটা বললেই তো হয় যে তুমি সতীনহীন থাকার দোয়া চাইতে।”
মেহেরঃ এমন আমি দোয়া আমি চাইনি।
ফালাকঃ হ্যা বুঝেছি বুঝেছি আমাকে চাইতে।এখন ঘুম ডেকে আনার ব্যবস্থা করো জলদি।
মেহেরঃ আজ ও কী এভাবেই ঘুমাবেন?
ফালাকঃ কষ্ট হবে?
মেহেরঃ অসম্ভব সুখ হবে।
ফালাক মেহেরের চোখের দিকে কিছুক্ষণ চেয়ে থেকে তারপর ওর পেটের মাঝে মুখ গুজে ঘুমিয়ে পড়ল।ওর এই অভ্যাসটা যেন একদম বাচ্চাদের মতোই মনে হয় মেহেরের কাছে।
ফালাকঃ তোমরা ওনাদের সম্মানের সহিত আমার অতিথি কক্ষে নিয়ে এসো।আমি কিছুসময় পর আসছি।
ইলিয়াসঃ ঠিক আছে সম্রাট।
ফালাক জাভেদ খান আর তার স্ত্রীকে বলল,
-” আপনারা ওদের সাথে ওখানে গিয়ে বিশ্রাম গ্রহণ করুন।আমি বেগমকে নিয়ে আসছি।”
ফালাক কক্ষ থেকে বেরিয়ে আসলে মেহেরের মাতা আফিয়া বেগম হেসে হেসে জাভেদ খান কে বলছে,
-” মহারাজ লক্ষ্য করেছিলেন ফালাক তাজ যখন মেহেরুন কে বেগম বলছিল তখন কেমন মাথা নিচু করে লজ্জাবোধ করছিল?”
জাভেদঃ হ্যা।যতই সম্রাট হোক।আমাদের কাছে তো সে ছোটই।তাই লজ্জাবোধ করছিল।আমরা কত অন্যায় ওর সঙ্গে।ও নিজেকে পরিবর্তন না করলে আজ আমাদের এত আরামের মাঝে বন্দী রাখত না।হত্যা করে ফেলত।আর আমার কন্যাকে ও।
আফিয়াঃ সে সত্যিই এখন এক অপরূপ চরিত্রের অধিকারী।
ফালাক কক্ষে ঢুকতেই তাজা গোলাপের সুবাস পেল।মেহের নিশ্চই বাগান থেকে সকাল সকাল তাজা গোলাপ ছিড়ে নিয়েসেছে।প্রতিটা আসবাবের ওপর ফুলদানীতে লাল গোলাপের গুচ্ছ।মেহের কক্ষে ঢুকে পেছন থেকে বলে উঠল,
-” ঘুম থেকে জেগে আর আপনাকে দেখতে পেলাম না।নামাজ আদায় করে বাগান গেলাম সেখানেও নেই।প্রাসাদের অন্যান্য জায়গাতেও নেই।এই এত সকালবেলাতেই কী গ্রামে ছুটে গিয়েছিলেন?”
ফালাকঃ গ্রামে গেলে কী আর এখনই ফিরতাম। ছিলাম প্রাসাদে-ই।এত খোঁজ কেনো শুনি?
মেহেরঃ প্রকৃতির সৌন্দর্য দেখে শয্যা ছাড়তে চেয়েছিলাম।
ফালাকঃ প্রকৃতির সৌন্দর্য।আমার কথা আমাকে-ই শোনানো হচ্ছে।
মেহেরঃ আপনার কথা যদি আপনাকেই চিহ্নিত করে তাহলে তো……
ফালাকঃ হুম।সৌন্দর্য অনেক দেখেছেন এবার কিছু ভোজের ব্যবস্থা করুন।
মেহেরঃ কষ্ট করে একটুখানি অপেক্ষা করুন বাদশাহ।এক্ষণি ব্যবস্থা করছি।
সকালের খাবার শেষে ফালাক মেহেরকে অতিথিকক্ষে নিয়ে গেল।মেহের ওর পিতামাতাকে সামনে দেখে খুশিমাখা মুখে ফালাকের দিকে তাকাল।
ফালাকঃ মেহের? তুমি কী তোমার আশানুরূপ চমক পেয়েছো?
মেহেরঃ তার থেকেও সর্বাধিক কিছু।
ফালাকঃ না।এখনো কিছু বাকি।সম্রাট জাভেদ খান আমার কৃতকর্মের জন্য সত্যি আমি লজ্জিত, আমি ক্ষমাপ্রার্থি।আপনারা কী আমাকে কোনো শাস্তি প্রদান করতে চান?
জাভেদঃ এমন করে কেনো বলছো তুমি? অপরাধ তো আমরা করেছি তোমার সঙ্গে।আর এই ক্ষমা চাওয়ার প্রসঙ্গ তো সকালেই আলোচনা হয়ে গেছে। এখন আর এই কথাগুলো বলে আমাদের আর ছোট করোনা।
ফালাকঃ আপনার রাজ্য আপনার সিংহাসন এবং আপনার কন্যা সবকিছু আমি স্ব-সম্মানে ফিরিয়ে দিলাম।আপনাদের খুব নিরাপদে এবং অত্যাধিক সম্মানের সহিত ফিরে যাওয়ার বন্দোবস্ত করেছি আমি।আপনারা চাইলে এই ক্ষণেই ফিরে যেতে পারেন।
ফালাকের কথা শুনে কিছুসময়ের জন্য তিনজোড়া চোখ অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল ওর দিকে।
প্রত্যেকেই নিশ্চুপ।জাভেদ খান-ই প্রথম বলা শুরু করল,
-” তুমি বুঝি আমার কন্যার সঙ্গে ঘর করতে ইচ্ছুক নও? সত্যিই কী তুমি এই রাজ্য এই সিংহাসন ছেড়ে….”
জাভেদের পুরো বাক্য শেষ না হতেই ফালাক বলল,
-” আমার এই সিদ্ধান্তের সঙ্গে আপনার কন্যার সম্পর্ক আছে ঠিক-ই।তবে তার পূর্বে আমি যাদের কাছ থেকে তাদের সন্তানকে ছিনিয়ে নিয়েসেছিলাম তাকে আজ ফিরিয়ে দিচ্ছি তাদের নিক।আর সে যদি তার পিতামাতার আদেশ পায় আমার সঙ্গে ঘর করার তবেই আমি আমার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করার কথা ভাবতে পারি।”
ফালাকের প্রথম কথা শুনে যতটা ভয় পেয়েছিল মেহের ওর দ্বিতীয় কথাটা শুনে মেহেরের ততোটায় খুশি লাগছে।কারণ মেহেরের পিতামাতা এখন বুঝতে পারছে যে মেহের যাকে স্বামীরূপে ভালোবাসে সে কতটা মহৎ গুণে গুনান্বিত এখন। মেহেরের মন যে ভুল চিনেছিল না ফালাক কে তা নিশ্চই ওর পিতামাতা বুঝতে পেরেছে।
জাভেদঃ আজ এখানে দাঁড়িয়ে এই মুহূর্তে আমার কন্যার সম্পূর্ণ দায়িত্ব তোমার হাতে তুলে দিচ্ছি।
জাভেদ মেহেরের হাত ফালাকের হাতের সাথে মিলিয়ে দিলো।মেহের খুশিতে ওর মাতাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করছে।প্রত্যেকের চোখেই খুশির কান্না শুধু ফালাকের আঁখি ব্যতিত।ফালাক চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে।জাভেদ বলল,
-” যে বুকে লাথি মেরেছিল আমার পশুরূপ ভাই সে বুকখানা আমি একবার জড়িয়ে ধরতে চাই।
অনুমতি পাবো আমি?”
ফালাক কোনো উত্তরের অপেক্ষাতে রাখলোনা জাভেদ কে।জাভেদকে গিয়ে জড়িয়ে ধরল ফালাক।
জড়িয়ে ধরে মেহেরের দিকে তাকিয়ে আছে ও। মেহের সে কী খুশি।খুশিতেই মরে যেতে ইচ্ছে করছে ওর।সবশেষে আবার জাভেদ বলল,
-” আমার অবর্তমানে আমার রাজ্য আর সিংহাসনের দায়িত্ব আমি মেহেরকে-ই দিতে চেয়েছিলাম।কারণ ওকে আমি পুত্রসমতুল্য মনে করেছি।ওকে-ই আমি যোগ্য মনে করেছি আমার সাম্রাজ্যের।কিন্তু আজ আমি ওর থেকেও আমার যোগ্য পুত্রকে পেয়েছি।আমি চাইছি আমার অবর্তমানে আমার সাম্রাজ্যের অধিপতি তুমি হবে।”
জাভেদ ফালাকর দিকে চেয়েই বলল,
-” মেহেরুন তোমার কী কোনো আপত্তি আছে?”
মেহেরঃ এমন প্রশ্ন করে আমাকে ছোট করবেন না পিতা।আমি যে খুব লজ্জিত হচ্ছি।তিনি আমার স্বামী।তিনি যদি আমার পিতার সাম্রাজ্যের দ্বায়ভার বহন করেন তাতে আমার আপত্তি কেনো বরংচ খুশিতে আত্মহারা হবো আমি।এ দায়িত্ব আমার কাঁধে আসলেও যে আমি তাকেই প্রদান করতাম।আপনি তার কাছে প্রশ্ন করুন যে তার কোনো আপত্তি আছে কিনা এতে?”
জাভেদঃ ফালাক তাজ?
ফালাকঃ আমি বরাবরই ধীর মস্তিষ্কে কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি।কখনো রাগের বশে বা আবেগের বশে কোনো সিদ্ধান্তে আসি না।আপনাদের ক্ষেত্রেও এমনকিছু আশা করছি।যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার ধীর সুস্থে, ঠান্ডা মস্তিষ্কে গ্রহুণ করুন।
জাভেদঃ এখন আমি যতটা স্থির আছি, যতটা নিশ্চিন্ত আছি এতটা নিশ্চিন্ত আমি এতগুলো বছরেও হইনি।তুমি আমার সিদ্ধান্তকে সুস্থ মস্তিষ্কের সিদ্ধান্তই ভাবতে পারো।বেগমজি তোমার কোনো আপত্তি নেই তো?
আফিয়াঃ কী যে বলছেন মহারাজ? আমি যে ফালাক তাজ কে শুধু জামাইরাজা নয় নিজের পুত্রতুল্য-ই ভেবে নিয়েছি।পুত্রের হাতে দায়িত্ব গেলে আমার আপত্তি হবে কেনো?
আনন্দের আর সীমা নেই মেহের আর মেহেরের পরিবারের।ফালাক ও প্রচন্ড খুশি।তবে বাকিদের মতো হেসে হেসে অনেক অনেক কথা বলে এতো সজহভাবে প্রকাশ করতে পারছে না।তাই স্বাভাবিক ভাবেই নিজেকে উপস্থাপন করে চলেছে ওদের সামনে।জাভেদ খান আর আফিয়া বেগম মেহেরের অন্তঃসত্বা হওয়ার খবর পেয়ে মেহেরকে বলছে,
-” এ সময়ে তো তোমার আমাদের কাছে থাকা প্রয়োজন ছিল মেহেরুন?”
ফালাক এসে বলল,
-” আপনাদের কন্যার যেভাবে সুস্থতার ব্যবস্থার করা যায় আপনারা সেভাবেই করতে পারেন।প্রয়োজনে আপনাদের রাজ্যে ওকে নিয়ে দেখভালের ব্যবস্থা করুন। আমার এতে কোনো আপত্তি নেই।”
জাভেদঃ কিন্তু আমার মেহেরুনের আপত্তি আছে। বেগমজি তুমি কী তোমার কন্যার মন বুঝতে পারছোনা তার চোখের ভাষা দেখেও?সে তো ফালাক তাজের কাছেই থাকতে চাইছে।তাই নয় কী মেহেরুন?
ফালাক ও চেয়ে আছে মেহেরের দিকে ওর উত্তরের আশায়।মেহের কেবল চুপ হয়ে মাথা নিচু করে রইল।লজ্জা নাকি তার মাঝে ঘাটতি পড়েছিল?
কিন্তু পিতার কথাগুলোতে সে যে কী পরিমাণ লজ্জা পেয়েছে তা দেখেই ফালাকের হাসি পাচ্ছে।
ফালাকঃ আমি আপনাদের পিতা আম্মাজান বলে সম্বোধন করতে পারি?
আফিয়াঃ এমন প্রশ্ন ও করতে আছে? এ তো তোমার অধিকার।
ফালাকঃ আম্মাজান আপনার কন্যা আপনাদের কাছে হয়তো অনেক স্বাচ্ছন্দ্যে অনেক সেবাযত্নে থাকবে।কিন্তু আমি আশ্বাস দিচ্ছি আমি তার থেকে বেশি সেবাযত্নে না রাখতে পারলেও খুব কম যত্নেও রাখব না।
জাভেদঃ আমাদের অপেক্ষা তুমি ওকে যত্নে রাখতে পারবে।তা আমরা বিশ্বাস করি।
শেষ কথা বলে কিছুসময় পর জাভেদ খান তার স্ত্রীকে নিয়ে নিজের রাজ্যের উদ্দেশ্যে রওনা দিলেন।
মেহেরঃ আপনি এভাবে বারবার কেনো বলছিলেন যে আমাকে তাদের কাছে রেখে আসলে আপনার আপত্তি নেই?আপনার কী খুব অসুবিধা হবে আমি এখানে থাকলে?
ফালাকঃ তোমাকে কাছে পেয়েও ভুল বুঝে তোমার থেকে দূরে সরে থাকতে হয়েছে।সেটা কতটা কষ্টকর ছিল তা তুমি বুঝতে পারো?আর তাদের থেকে তাদের শত স্নেহের কন্যাকে কতগুলো দিন দূরে সরিয়ে রেখেছি।তাদের তো ইচ্ছা করেই তোমাকে কাছে পাওয়ার।আমি তো আজ না হলেও কাল পাবোই।কারণ এখন আসল ভাগিদার তো আমি।
মেহেরঃ আমার যে আরো বেশি কষ্ট হতো।একবার কাছে টেনে আবার যখন দূরে সরিয়ে দিতেন তখন সত্যিই এই পৃথিবীতে আমার আর নিঃশ্বাস নিতে ইচ্ছা করতো না।আবার মরে যাওয়ার সাহসও ছিল না।
অবশেষে শুরু হলো ফালাক আর মেহেরের মিষ্টি মধুর সংসার।যে সংসারে কানাচে কানাচে শুধুই প্রেম আর প্রেম।লজ্জাবতী মেহের ও এখন ফালাকের থেকে ভালোবাসা আদায় করে নিতে শুরু করেছে। মাঝেমাঝে ফালাকের এমন এমন কথা শুনতে হয় মেহেরের। যা শুনলে ওর মনে হয় লজ্জাতে একশো হাত মাটির নিচে চলে যেতে পারলে বাঁচে।এইতো সেদিন মেহেরের আটমাসে পড়েছে।পেটের উপরের অংশ দেখে ফালাক বলছে,
-” এমন একজন সম্মানি ব্যক্তি ওখানে আছে।আর তুমি সেই জায়গাটাকে এত বেঢক করে রেখেছো?”
মেহেরঃ বেঢকের কি হলো?
ফালাকঃ তুমিই তাকিয়ে দেখো ভালো করে।
মেহের আড়াল হয়ে নিজের পেট আলগা করে দেখছে।শিশুটা বড় হচ্ছে।পেট তো উঁচু দেখাবেই। এতে বেঢকের কী হলো বুঝতে পারছে না মেহের।
ফালাকঃ আমার কাছে এলে দেখিয়ে দিতে পারি।
মেহেরঃ কোনো প্রয়োজন নেই।
ফালাকঃ পেটের সৌন্দর্য নষ্ট হলে ওখানে কিন্তু আর আমি মুখ গুজে ঘুমাবনা।
মেহের ওর সামনে এসে দাঁড়াল।বলল,
-” দেখুন কোথায় বেঢক।”
ফালাকঃ এইতো যে যে জায়গায় তোমার স্বামীর অধর স্পর্শ হয়নি সেই সেই জায়গাটা-ই তো কেমন কেমন দেখাচ্ছে।
মেহেরঃ তো এখন কী করতে হবে আমার এই জায়গার সৌন্দর্য রক্ষার জন্য?
ফালাকঃ চারবেলা গরম ঠান্ডা তেল মালিশ না করে, এত ফল শবজি না খেয়ে আমার মালিশ আর চুমু নিলেই তো হয়।
মেহেরঃ ইশ…..
মেহের লজ্জাতে কক্ষ থেকে চলে যেতে গেলে ফালাক বলল,
-” ছোট তাজ দেখতে আমার মতো সুদর্শন না হলে কপালে ভোগ আছে কিন্তু।”
মেহেরঃ এটা কোনো বিচার হলো? এতে কী আমার দোষ?
ফালাকঃ অবশ্যই, তুমি আমার কথা শুনছো না যে।আল্লাহ্ পাক নারাজ হয়ে যদি ওকে সুদর্শন না করেন?
মেহের ওর কাছে এগিয়ে এসে বলল,
-” ঠিক আছে আমি আপনার কথা শুনছি তো। আমি তো বারণ করিনি।”
ফালাকঃ এখন আমি কিছুই করতে পারবোনা। আমি সেধে এসে করবো কেনো?তুমি সেধে আসবে। আর যখন আসবে তখন কিন্তু পেট ঢেকে…..
মেহেরঃ আপনি থামবেন?
এতো আবেগ, প্রেম-ভালোবাসা, খুনশুটি, মেহেরের প্রতি ফালাকের খেয়াল,দায়িত্ব সব মিলিয়ে মেহের যতটা সুখে আছে তার থেকে দ্বিগুণ প্রশান্তিতে আছে ফালাক।মাঝে মাঝে ও নিজেই অবাক হয়ে ভাবে যে কোনোদিন সম্পর্ক ভালোবাসাকে সম্মান দেয়নি সে আজ নিজে এগুলোর প্রতি আসক্ত। মেহের আর ওর ভালোবাসা কোনোভাবে হারালে ফালাক হয়তো পাগল হয়েই পড়বে।বড্ড দুর্বল আর নির্ভর হয়ে পড়েছে এগুলোর প্রতি।এত সুস্থ স্বাভাবিক জীবন যে জীবনে নিজের একটি পরিবার তৈরি হয়েছে ওর, আল্লাহ্ তায়ালার সঙ্গে একটা নিবিড় সম্পর্কে জড়াতে পেরেছে।এসবকিছু মিলিয়ে পৃথিবীর সুখী ব্যক্তিদের মাঝে ও নিজেকে একজন মনে করে।সুখী ব্যক্তিদের মধ্যে প্রতিযোগিতার সৃষ্টি হলে ও প্রথম স্থান দখল করবে।এমন আত্মবিশ্বাস ও নিজের মাঝে রাখে।ছোট তাজের আগমন ঘটেছে পৃথিবীতে।মায়ের গর্ভ থেকে বেরিয়ে এসে চোখ খুলে সর্বপ্রথম দেখেছে বড় তাজ অর্থ্যাৎ তার পিতা ফালাক তাজকে।
মেহেরঃ আপনি ওকে কী শেখাচ্ছেন বলুন তো?
ফালাকঃ কই কী শিখাচ্ছি?ও আমার আঙুল ওর হাতের মুঠোর মাঝে ধরে রাখার চেষ্টা করছে।আর আমি তা বারবার ছুটিয়ে আনছি।ও তা ধরার জন্য আরো বেশি ব্যাকুল হয়ে পড়ছে।সেটাই দেখছি।
মেহেরঃ আপনি কিছু ভুলে গেছেন হয়তো।
ফালাক ওর পুত্রের সাথে খেলছে।মেহেরকে বলল,
-” তাহলে মনে করিয়ে দাও।”
মেহেরঃ থাক প্রয়োজন নেই।আপনি এখন আপনার পুত্রের সাথে খেলতে ব্যাস্ত।আমার দিকে খেয়াল করার এতটুকু সময় আপনার নেই।
ফালাক ওর পুত্রকে কোলে তুলে বলল,
-” জানো মেহের।যে রাতে আমি তোমাকে নতুন করে ফিরে পেয়েছিলাম সেই রাতে আমার আম্মিজান আমাে স্বপ্নে এসেছিল।তিনি আমাকে আমার হৃদয়ে আঁকা স্বপ্নের রাজ্যে নিয়ে গিয়েছিলেন।একটি বাগানে তার সঙ্গে আমার দেখা হয়।তিনি আমাকে বললেন একটি উপহার দেওয়ার জন্য তিনি আমাকে ডেকেছেন।কী সেটা জিজ্ঞেস করতেই ওকে আমার হাতে তুলে দেয়।”
মেহেরঃ কাকে?
ফালাকঃ আমার কোলে এখন যে।তুমি বিশ্বাস করবে কিনা জানিনা।আমি কিন্তু ওকেই দেখেছিলাম স্বপ্নে।আর সেই স্বপ্নের পর এক এক করে আমার হারানো সব সম্পদ এক রাতের মাঝে ফিরে পেলাম।
মেহেরঃ এর জন্যই আপনি বলেছিলেন যে আমাদের পুত্র সন্তান-ই আসবে।
ফালাকঃ হ্যা।আর দেখেছো? আমার কথা মিলে গেল।
মেহেরঃ উৎসবের আয়োজন শুরু হয়ে গেল তো। আপনি ওর নাম তো এখনো বলেন নি।
ফালাকঃ বলবো নয়।আমি ওকে ডাকব সেই নামে।
চারবছর সময় অতিক্রান্ত হয়ে গেছে।অনেক কিছুর পরিবর্তন ও ঘটেছে।রাজ্যের পাশে ইংরেজদের আগমন ঘটেছে।ফালাক এখন আরো শক্তপক্ত ভাবে রাজ্যের হাল ধরেছে।রাজসভাতে বড় তাজ আর তার পুত্র ছোট তাজ প্রবেশ করছে।
মন্ত্রীঃ সালাম সম্রাট?
ফালাকঃ ওয়াআলাইকুম আসসালাম।
ফালাক গিয়ে তার সিংহাসনে বসল।পাশে তাকাতে দেখল তার চার বছরের পুত্র মুখ গোমড়া করে দাঁড়িয়ে আছে।
ফালাকঃ মেহ্ফীল(হ্)? কী হয়েছে আব্বুজি? তুমি তোমার আসনে বসবে না?
মেহ্ফীলঃ আব্বুজি উনি(মন্ত্রী) শুধু তোমাকে সালাম জানালো কেনো? আমি কী ছোট তাজ নই?
ছোট তাজের কথা শুনে রাজসভার প্রত্যেকে হো হো করে হেসে উঠল।মন্ত্রী বলল,
-” বড় ভুল হয়ে গেছে ছোট তাজ।সালাম ছোট তাজ।অনুগ্রহপূর্বক আপনি আপনার আসন গ্রহণ করুন।”
মেহ্ফীলঃ হুম।ঠিক আছে।ক্ষমা পেলেন আপনি।
ফালাকঃ মেহ্ফীল?
মেহ্ফীলঃ জ্বী আব্বুজি।
ফালাকঃ সালামের উত্তরে তুমি সালাম দাওনি।
মেহ্ফীল দ্রুত মাথা নিচু করে দু কান ধরে ফেলল।
ফালাক হেসে দিয়ে বলল,
-” উত্তর দাও সালামের।”
মেহ্ফীলঃ ওয়াআলাইকুম আসসালাম মন্ত্রী সাহেব।
মন্ত্রীঃ হা হা হা।
রাজসভাতে পিতাপুত্র বসে রাজ্য সম্পর্কিত কথা বলছে।আর মেহ্ফীল ওর আব্বুজির বলা কথাগুলো হা করে তাকিয়ে শুধুই শুনেই চলেছে।তাকে যে পরে তার সাথীদের সামনে এভাবে অভিনয় করে সাজিয়ে বলতে হবে।ও যখন রাজা সাজে তখন ওর পিতার স্বভাব লক্ষ্য করে তা অনুকরণ করে ওর সাথীদের সামনে।ফালাক কক্ষে এসে মেহেরের কোমড় জড়িয়ে ধরে ঘাড়ের কাছ থেকে গোলাপের সুগন্ধি টেনে নিচ্ছে নাকে।
মেহেরঃ আর কতসময় ঘ্রাণ নিবেন?
ফালাকঃ যতসময় তোমার শরীরে এই ঘ্রাণ থাকবে।এত মাতাল লাগে কেনো বলো তো? নাকি তুমি নিজেই নেশা ধরানো?
মেহেরঃ নেশা লেগে গেছে আপনার?
ফালাকঃ খুব।দরজাটা আটকে আসি?
মেহ্ফীলঃ দরজা আটকাবেন কেনো আব্বুজি?
ফালাক দ্রুত মেহের কোমড় ছেড়ে দূরে সরে গেল।
মেহ্ফীলঃ আমি আপনাদের কেউ নই যে আমাকে ছাড়াই কক্ষ আটকে রাখবেন?
মেহেরঃ মেহ্ফীল?কক্ষে ঢোকার সময় তুমি সাড়া দিয়েছো?
মেহ্ফীলঃ যাহ্ ভুলে গিয়েছি আম্মিজি।
ও দৌড়ে গিয়ে দরজার ওপাশে দাঁড়িয়ে বলল,
-” কক্ষে প্রবেশের অনুমতি দিন আম্মিজি?”
ফালাক উচ্চকন্ঠে হেসে ওর কাছে ওকে কোলে তুলে নিয়ে কক্ষে এল।
ফালাকঃ এতক্ষণ কোথায় ছিলেন ছোট তাজ?
মেহ্ফীলঃ নূরের সঙ্গে খেলছিলাম।
মেহেরঃ নূর কে?
মেহ্ফীলঃ নুরানি।ওকে আমি নূর বলে ডাকি।
দুপাশে হাত বাড়িয়ে পরিমাপ করে দেখিয়ে বলল,
-” অনেক বড় নাম তো।তাই ছোট করে ডাকি।”
ফালাকঃ নিজের নামখানা বুঝি বেশ ছোট?
মেহ্ফীলঃ ছোটই তো।
ফালাকঃ তো কী খেলা হচ্ছিল?
মেহ্ফীলঃ শাহজাদা আর শাহজাদী?
ফালাক মেহের দুজনেই অবাক হয়ে গেল।
ফালাকঃ এটা কেমন খেলা আব্বুজি?
মেহ্ফীলঃ আপনি আম্মিজি কে যেভাবে শাহজাদী বলে ডাকেন আর আম্মিজি আপনাকে যেভাবে শাহজাদা বলে ডাকে ঠিক সেভাবেই আমরাও ডাকি।
ফালাকঃ এটা তো আমরা মজা করে ডাকি।
মেহেরঃ বুঝেছেন সম্রাট আপনার পুত্র খুব শিঘ্রই তার রানী নিয়ে আসবে।
মেহ্ফীলঃ জ্বী আম্মিজি।নূরকে আমার খুব পছন্দ। ও আমার সঙ্গে কখনো ঝগড়া করেনা।ওকেই আমি আমার রানী করব।
মেহেরঃ কীইই?
ফালাকঃ আচ্ছা ঠিক আছে করবে।কিন্তু এখন নয় আব্বুজি।আরো বড় হও তারপর।
মেহ্ফীলঃ আপনার মতো বড় হলে?
ফালাকঃ হুম।
মেহ্ফীলঃ ঠিক আছে তাহলে আমি আনিশা আর সুরমা কে ও আমার কক্ষে আনব?
ফালাকঃ ওদেরকে কেনো?তুমি তো নুরানি কে পছন্দ করো।
মেহ্ফীলঃ ওরা যখন আমাদের প্রাসাদে ঘুরতে আসে তখন ওরাও আমার সঙ্গে অনেক খেলে।তাই ওদেরকে ও আমি রানী করব।তাহলে আমার সঙ্গে সবসময় খেলতে পারবে।
মেহেরঃ কী বলে আপনার পুত্র?
ফালাকঃ সাবাস আব্বুজি। এই না হলে ফালাক তাজের বংশপ্রদীপ মেহ্ফীল তাজ?এখন তোমার কক্ষে যাও আব্বুজি। আম্মিজি আর আব্বুজি কথা বলবে এখন।
মেহ্ফীলঃ আচ্ছা আব্বুজি সালাম।
ফালাকঃ বলেছিলাম না? ও আমার থেকেও চতুর হবে?
মেহেরঃ হুমম।
ফালাকঃ হুম কী?দরজা আটকে এসো।
মেহেরঃ আপনার পুত্র বন্ধ করে দিয়ে গেছে।
ফালাকঃ আর কোনো কথা বলোনা।নেশাতে ঝিম ধরে গেছে।
মেহেরঃ নেশা কিসের?
ফালাক নিজের ঠোঁটের উপর আঙুল রেখে বলল,
-” শশশশ, কিছু বলবে না।জড়িয়ে ধরো আমাকে। আর শুধু ভালোবাসা নাও।”
মেহের ওকে জড়িয়ে ধরে রইল।আর ফালাক ওর কাঁধ আর ঘাড়ের কাছ থেকে ওর শরীরের মাতাল করা গোলাপের সুগন্ধি নাকে টেনে নিতে থাকল।
ফালাক আর মেহেরের নামের সাথে মিল রেখে নাম দিলাম ওদের পুত্রের #মেহফীল(হ্)।অনেকের বুঝতে অসুবিধা হতে পারে তাই লিখে দিলাম।ইন্ডিং হ্যাপি চেয়েছেন তাই হ্যাপি দিয়েছি।
নতুন করে ইন্ডিং ভাবতে হয়েছে তাই সুন্দর করতে পারিনি।আমার মতো করে দিলে ইন্ডিংটা খুব মর্মান্তিক হতো আর হৃদয়কাতর হতো।