হিংস্রপ্রেম পর্ব ২৮

0
432

#Story: হিংস্রপ্রেম
পর্বঃ ২৮
লেখাঃ Israt Jahan
.

.
ফালাক মেহেরের কথা শুনো হতচকিত হয়ে তাকিয়ে রইল।কি বলবে ওকে কিছুই বুঝে উঠতে পারছেনা।ওকে ছেড়ে দিয়ে বলল-“তুমি….?তোমাকে আর কিছু করতে হবেনা।যাও গিয়ে শুয়ে পড়ো।”
মেহেরঃ শুয়ে পড়ব? কেনো? এখনো ব্যাথা পেয়েছেন?
ফালাকঃ না।তুমি যাও।তোমাকে আর সেবা করতে হবেনা।
মেহেরঃ আপনার ব্যাথা কমেছে?
ফালাকঃ তোমাকে এত প্রশ্ন করতে বলেছি আমি? এত কথা বলো কেনো?যেতে বলেছি যাও।
মেহের অতিরীক্ত কথা না বলে নিজের শয্যাতে চলে গেল।শুয়ে গায়ে কাঁথা টেনে তুলছে আর মিটিমিটি হাসছে।জানালা দিয়ে বাগানে থাকা আলো কক্ষে প্রবেশ করে।আর মেহের যেখানে বিছানা করে ঘুমায় সেইখানটাতেই আলো এসে পড়ে।মেহের ফালাকের কাছ থেকে উঠে আসলেও ফালাকের নজরবন্দি হয়ে আছে মেহের।ও শুয়ে থেকেই মেহেরের দিকে তাকিয়ে আছে।তাই ফালাকের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি আর এড়ালনা মেহেরের মিটিমিটি হাসিটা।একদম মুহূর্তের মধ্যে মেহেরের দিকে প্রশ্ন ছুড়ে বসল ফালাক।” এই তুমি হাসছো কেনো?” মেহের চমকে উঠে উত্তর দিল-” কই হাসছি?”
ফালাকঃ আমি স্পষ্ট দেখতে পেয়েছি তুমি মুখ চিপে হেসেছো।
মেহেরঃ আচ্ছা? আপনি কি সবসময় আমার দিকেই তাকিয়ে থাকেন?
ফালাকঃ তোমার দিকে সবসময় তাকিয়ে থাকলাম কোথায়?
মেহেরঃ না হলে আপনি দেখতে পেলেন কি করে তাও আবার এই অন্ধকারে?
ফালাকঃ অন্ধকার কোথায়?কক্ষে যথেষ্ট আলো আসছে বাহির থেকে।তার জন্যই তো দেখতে পেলাম।
মেহেরঃ হুম।আমাকে লক্ষ্য করছিলেন বলেই তো দেখতে পেয়েছেন।আর হাসি-কান্না তো এক একজন মানুষের নিজস্ব ব্যাপার।সেটাও যদি সম্রাটের থেকে অনুমতি গ্রহণ করে করতে হয় তাহলে আর মানুষের জীবনে স্বাধীনতা বলে কি থাকল?যদিও আমি একজন অপরাধী।তবুও এই স্বাধীনতাটুকু তো আমাকে দেওয়াই যায় নাকি?
ফালাকঃ উফ বড্ড বাড়তি কথা বলো তুমি আজ কাল।ঘুমাও….
ফালাক গায়ে কাঁথা টেনে নিয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলল।কিছুসময়ের মাঝে দুজনেরই ঘুমের দেশে আগমন ঘটল।সকালটা দুজনের দুরকম কাজে কেটে গেল।প্রাসাদের সামনে দাঁড়িয়ে মন্ত্রীর সঙ্গে প্রাসাদের কিছু দেয়ালের মেরামত কাজ নিয়ে কথা বলছিল।দেয়ালের রং চটে গেছে।বাগানের মাঝে আরো কয়েকটি কৃত্তিম ঝর্নাধারা তৈরি করতে হবে। এই ব্যাপারেই কথা বলছিল।হঠাৎ প্রাসাদের ছাদের দিকে চোখ গেল ফালাকের।ইরানি ছাদের কিনারা দিয়ে হেঁটে বেড়াচ্ছে।প্রাসাদের কোনো অতিথিকে এভাবে বিনা অনুমতিতে ছাদে উঠতে দেখেনি। ইরানিকে দেখে ফালাক প্রতিদিনই একটু একটু করে অবাক হচ্ছে।ঠিক ইরানিকে দেখে নয়।ইরানির সাহসকে দেখে।যতই দস্যু সর্দারের বোন হোক। সে তো আর দস্যু ছিল না।তাহলে তার এত সাহস হয় কি করে?তারউপর এই রাজ্যের প্রায় সবাই নিজের পর্দা মেনে চলে।কিন্তু এই নারী এভাবে পর্দাহীনভাবে ঘুরে সকলের সামনে।লজ্জাবোধ হয়না নাকি?ফালাক মন্ত্রীর সাথে কথা বলে ছাদে উঠে গেল।
ইরানিঃ সম্রাট সালাম। আপনি এখন ছাদে?
ফালাকঃ প্রশ্নটা আমি তোমাকে করতে এসেছি।
ইরানিঃ আপনি কিন্তু আমার সালামের উত্তর দেন নি।
ফালাকঃ ওয়াআলাইকুম আসসালাম।
ইরানিঃ আপনিসহ আপনার প্রাসাদ, আপনার রাজ্য কতোটা সুন্দর যা একবার দেখেও আমার সাধ মিটেনা।তাই বারবার দেখি।আর ছাদের উপর দাঁড়িয়ে আপনার এই এত সুন্দর রাজ্যটাকে দেখে মনে হচ্ছে, কোনো বিখ্যাত চিত্রশিল্পির হাতে আঁকা একটি অপরূপ গ্রামের দৃশ্য।সেটাই দেখছিলাম।
ফালাকঃ আমি নিশ্চই কোনো চিত্রশিল্পির হাতে আঁকা মানুষ নই?
ইরানি হো হো করে একগাল হেসে বলল-” আপনি কেনো সাধারণ মানুষের হাতের সৃষ্টি হবেন? আপনি তো সৃষ্টির সেরা জীব।আর যার সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহ্ পাক।তার সৃষ্টির সঙ্গে কোনো চিত্রশিল্পির তুলনা হয়?”
ফালাকঃ আমি তুলনা করিনি।তুমি আমার রাজ্য নয় আমাকে তাকিয়ে দেখছিলে।
ইরানিঃ কারণ আপনি এই রাজ্যের থেকেও সুন্দর তাই।
ফালাকঃ তোমার সঙ্গে কথায় পেরে উঠিনা।
ইরানিঃ হা হা হা। সম্রাট আপনি কি বাহিরে যাচ্ছিলেন?
ফালাকঃ বাহির থেকে এসেছি।কেনো কি হয়েছে?
ইরানিঃ না আসলে বাহিরে যাওয়ার সময় তো আপনার কাছে তড়োয়ার দেখি।তাই জিজ্ঞাসা করলাম।শুনেছি আপনি নাকি সব রাজ্যের রাজাদের থেকে অস্ত্রচালনায় বেশি পারদর্শী।আমার খুব ইচ্ছা আপনার অস্ত্রচালনা দেখা।
ফালাকঃ আমি যখন তখন যে কোনো জায়গায় আমার পারদর্শিতা দেখানো পছন্দ করিনা।
ইরানিঃ আমি নিজেও কিন্তু অস্ত্র চালাতে জানি। আর খুব দক্ষতার সহিত।
ফালাকঃ তাই?
ইরানিঃ হুম।আমার সঙ্গে লড়াইয়ে আসলে দেখাতে পারি।
ফালাক অবজ্ঞার হাসি দিয়ে চলে আসতে গেল ওখান থেকে।ইরানি পিছু থেকে বলল-” নারী বলে এভাবে অবজ্ঞা করবেন না সম্রাট।অনেকক্ষেত্রে নারীরা ও অসীম ক্ষমতার অধিকারী হতে পারে।” ফালাক সামনে ফিরে জবাব দিল-” নারী যে অসীম ক্ষমতার অধিকারী তা আমার থেকে ভালো করে আর কে জানে।তবে সবাই নয়।বিশেষ কিছু নারীদের মাঝে এই ক্ষমতা থাকে।যা আমি শুধু একজনের মাঝেই দেখেছি।”
ইরানিঃ আচ্ছা? কে সে?
ফালাকঃ বলতে ইচ্ছা প্রকাশ করছিনা।
ইরানিঃ আমার মাঝেও এমন কিছু ক্ষমতা দেখতে পারেন।মনের চোখ দিয়ে খু্ঁজলে।
ফালাকঃ মানে?
ইরানিঃ তেমন কিছু নয়।একবার আমার সঙ্গে লড়াইয়ে আসার আহবান জানাচ্ছি।
ফালাকঃ হুম?
ফালাক ছাদে প্রবেশের দরজার সামনে দাঁড়ানো প্রহরীর হাত থেকে তড়োয়ার ইরানির হাতে তুলে দিয়ে বলল-” একবার তোমরা অস্ত্রচালানোর কৌশল দেখি।তারপর না হয় আমার সঙ্গে লড়াইয়ে আসার পরিকল্পনা করবে।”
ইরানি ফালাকের কথায় সম্মতি জানিয়ে অস্ত্রচালানোর কৌশল দেখিয়ে চলেছে।এর মাঝেই ফালাক ওর তড়োয়ারকে আঘাত করে দু টুকরো করে দিয়ে বলল-” অস্ত্র এমনভাবে পরিচালনা করতে হয় যার মাঝে অন্য কোনো অস্ত্র সেই অস্ত্রকে ঘায়েল করতে না পারে।কিন্তু তুমি তো সেখানেই পরাজিত।বললাম না, এমন কিছু ক্ষমতা সব নারীর মাঝেই থাকেনা।”
ইরানিঃ আপনি কখনো কোনো নারীর কাছে পরাজিত হয়েছেন?
ফালাকঃ হ্যা।বহুবার হয়েছি।আজ ও হচ্ছি।
ইরানিঃ কি বলছেন? কে তিনি?আমি তাকে একবার দেখতে চাই যে আপনাকে বার বার পরাজিত করে চলেছে।
ফালাকঃ সে আমার প্রাসাদেই আছে।আমার খুব নিকটে।
কথা গুলো চলে যেতে গিয়ে আবার ইরানির দিকে পিছু ফিরে তাকিয়ে বলল-” তোমাকে কিছু বলতে এসেছিলাম।”
ইরানিঃ জ্বী বলুন সম্রাট।
ফালাকঃ পর্দাবিহীন কখনো কক্ষের বাহিরে বের হবেনা।আর আমার প্রাসাদের ছাদে তো নয়-ই।
ফালাক ছাদ থেকে নেমে প্রাসাদের ভেতর ঢুকে নিজের কক্ষে যাওয়ার সময় দাসীদের কক্ষের সামনে কিছু দাসীকে মেহেরের সঙ্গে কথা বলতে দেখল।যেখানে মেহের ওদের কথা শুনে প্রাণখোলা হাসি দিচ্ছে।ওর এমন হাসি দেখতে দেখতে ফালাক কক্ষের দিকে এগুচ্ছে।এতগুলো দিনের ভেতর ফালাক এই প্রথম মেহেরের প্রাণখোলা হাসি দেখছে।যা নিজের কাছে থাকতে কখনো দেখেনি। মেহেরের হাসির মাঝে দাসী পদ্মা মেহেরের কানেকানে বলছে-” রানীসাহেবা সামনে একবার সম্রাটের দিকে তাকিয়ে দেখুন।আপনাকে কিভাবে দেখছেন?”
মেহের পদ্মার কথা শুনে মুখে হালকা হাসি জড়িয়েই তাকাল।ফালাকের চোখে মেহেরের চোখ পড়তেই ফালাক নজর সরিয়ে কক্ষে ঢুকে গেল।
ফালাকঃ হাসিটা তো দিলটা ঘায়েল করার মতো। আমার কাছে থাকতে তো কখনো এমন করে হাসতে দেখিনি।তাহলে আমার কাছে আপনি কখনোই সুখী হন নি।আজ আমার থেকে দূরে সরে গিয়ে খুব খুশি।এই হাসিটা তো আজ শুধু আমার দেখার অধিকার ছিল।আজ সেই হাসি দাসীদের মাঝে থেকে দেখলাম।বাহ্…..
হাতে পানপাত্র নিয়ে পানি পান করছে আর এই কথাগুলো মনেমনে ভাবছে।কিছুসময় বাদে ফালাক মেহেরকে কক্ষে ডেকে পাঠাল।ফালাকের ডাক পেয়ে মেহের জলদি করে কক্ষে চলে এল।
মেহেরঃ জ্বী সম্রাট বলুন।কি প্রয়োজন?
ফালাক বিছানা থেকে উঠে ওর সামনে দাঁড়িয়ে মুখের উপর থেকে পর্দা করার কাপড়টি টেনে সরিয়ে দিলো।
ফালাকঃ বাহিরে যখন দাসীদের সঙ্গে দাঁড়িয়ে কথা বলছিলে হাসাহাসি করছিলে তখন মুখে পর্দা ছিল না।আর এখন আমার কক্ষে আমার সামনে এসে পর্দা করতে হচ্ছে?
মেহেরঃ দাসীদের কক্ষের সামনে কোনো রক্ষী থাকেনা।আর আপনার কক্ষে আসার সময় তিনটি কক্ষ অতিক্রম করে তবে আপনার কক্ষে আসতে হয়।আর প্রতিটা কক্ষের সামনেই রক্ষী দাঁড়িয়ে থাকে।তার জন্যই মুখ ঢেকে আসতে বাধ্য হই।
ফালাক মেহেরের ডানপাশের গালের কাছে নাকটা এগিয়ে নিয়ে শুকছে।কিছু একটা ঘ্রাণ ওর নাকে আসছে।তাই সেটা গভীর ভাবে অনুভব করার জন্য এত কাছে গিয়ে শুকতে চেষ্টা করছে।মেহের সোজা দাঁড়িয়ে ওর কান্ড দেখছে।
ফালাকঃ তোমার মুখ, গলা এগুলো থেকে মধুর গন্ধ আসছে কেনো?আর কিছুটা কাঁচা হলুদের গন্ধ ও পাচ্ছি।
মেহের মনেমনে বলছে-” ইশ পদ্মা,নূরি আর জ্যোতি ওরা সবাই মিলে আজ গোসলের সময় মুখে শরীরে এগুলো মেখে দিয়েছিল।যাতে করে আমার সেই আগের রূপ ফিরে আসে।রূপ ফেরাতে গিয়ে এখন ওনার সামনে না লজ্জায় পড়তে হয় রূপের পরিচর্যা করেছি বলে।”
ফালাকঃ রূপ পরিচর্যা করা হচ্ছে?
মেহেরঃ কোথায় রূপ পরিচর্যা করেছি?আপনি বোধহয় এগুলো দিয়ে গোসল করেছেন। তাই আপনার শরীর থেকে এমন গন্ধ আসছে।
ফালাকঃ তাই?
ফালাক নিজের শরীর থেকে জামা খুলে ফেলে ওকে বলল-” শুকে দেখো। আমার শরীর থেকে গন্ধ পাচ্ছো কি না।”
মেহের ওর চোখের দিকে তাকিয়ে ঠাঁই দাঁড়িয়ে আছে কিছুটা ভয় নিয়ে।ফালাক আবার বলল-” কি হলো দেখো।”
মেহেরঃ হ্যা দেখছি।
মেহের দূরে দাঁড়িয়ে শুধু মুখটা এগিয়ে ওর গলার কাছে নাক নিয়ে শুকছে।ফালাক ওর বাহু ধরে টেনে আরো কাছে নিয়ে বলল-” অতো দূরে দাঁড়িয়ে শোকা যায়?এখন শুকো।”
মেহের বিরক্ত হয়ে বলল-” কি শুকব?”
ফালাকঃ গন্ধ।মধু আর কাঁচা হলুদের গন্ধ।
মেহেরঃ নেই তো।
ফালাকঃ তুমি তো ভালো করে শুকে-ই দেখো নি।
এখন ভালো করে নাক বড় করে শুকো।
মেহেরঃ নাক বড় করে?নাক আবার বড় করে কি করে?
ফালাকঃ উহ্ নাকের ছিদ্র বড় করে।
মেহের বিরক্তিকর ভঙ্গীতে বিড়বিড় করে বলছে-” আচ্ছা মুশকিল তো।গন্ধ কি জোর করেই শুকাবে নাকি?”
ফালাকঃ কি বলছো?
মেহেরঃ বলছি যে আপনার শরীরে শুধু ঘামের গন্ধ। তাছাড়া আর কোনো গন্ধ নেই।বারবার ঘামের গন্ধ শোকা যায়?
ফালাক চোখদুটো বড় করে ওর দিকে তাকিয়ে আছে।তারপর বলল-” এখন শীত পড়ছে।শীতে আমার শরীর কখনোই ঘামেনা।মিথ্যা বলছো কেনো?”
মেহেরঃ আমি মিথ্যা বলছি না।আপনি বাহিরে রোদ্দুর থেকে এসেছেন।তখন ঘেমেছিলেন হয়তো। আর এখন তো ঘাম শুকিয়ে গেছে।তাই গন্ধ হয়ে গেছে ঘাম শুকিয়ে।
ফালাকঃ তাহলে বললে যে আমার শরীর থেকে মধু আর কাঁচা হলুদের গন্ধ আসছে?
মেহেরঃ বলেছি বলতে ভেবেছিলাম।
ফালাকঃ হুম।তবে ঘ্রাণটা কোথা থেকে আসছে?
মেহের রেগে গিয়ে উচ্চস্বরে বলল-” কি যন্ত্রণা! আপনি কি এখন এই ঘ্রাণ কোথা থেকে আসছে তার উৎস খোঁজার দায়িত্ব নিয়েছেন নাকি?”
কথাগুলো শেষ করেই জিহ্বা কামড়ে মাথা নিচু করে বলছে-” ক্ষমা করুন সম্রাট।ক্ষমা করুন।আর কখনো এমন হবেনা।”
ফালাকঃ আমাকে গরম দিয়ে কথা বলা?
মেহেরঃ না না না।আমার ভুল হয়ে গেছে, অন্যায় হয়ে গেছে।ক্ষমা করে দিন আমাকে।
ফালাকঃ প্রথমত, আমাকে মিথ্যা বলেছো।ঘ্রাণ তোমার শরীর থেকে আসছে অথচ বলেছো যে ঘ্রাণ আমার শরীর থেকে আসছে।আর দ্বিতীয়ত, আমার সামনে উচ্চকন্ঠে কথা বলেছো তাও আমাকে-ই গরম দিয়ে কথা বলেছো।
মেহেরঃ অন্যায় হয়ে গেছে সম্রাট।বলুন কি শাস্তি প্রযোয্য আমার জন্য?
ফালাকঃ দাসীদের বলো কুসুম গরম পানি করে আমার গোসালাগারে দিয়ে যেতে।তার সঙ্গে কাঁচা হলুদ বাঁটা, মধু আর দুধ এগুলো ও দিয়ে যেতে। তারপর তোমাকে দেখছি।
দাসীদের কাছে যাওয়ার উদ্দেশ্যে মেহের কক্ষ থেকে বেরিয়ে গেল।ও ভাবছে-” উনি এগুলো দিয়ে কি করবেন?উনিও কি শরীরে মাখবেন নাকি আবার আমার শরীরে…..ছিঃ ছিঃ ছিঃ।আমার শরীরে কেনো মাখতে যাবেন?নিজের শরীরেই মাখবেন হয়তো।নাকি সত্যি আমাকে মাখাবে?ধুর বুঝতে পারছিনা।”
মেহের ফালাকের সঙ্গে ফালাকের গোসলাগারে। ফালাক বসে আছে আর মেহের ফালাকের সারা শরীরে,হাতে-পায়ে কাঁচা হলুদ বাঁটা মেখে দিচ্ছে।
মেহেরের মুখটা লজ্জাতে একদম টমেটোর মতো লাল হয়ে আছে।ওর একদম কাছে এসে ওর বুকে যখন হলুদ মাখছিল তখন মেহেরের বুকের ধুকপুকুনি ফালাক স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছে।ফালাক ওর মুখের দিকে চেয়ে থাকলেও মেহের ভুল করেও ওর চোখের দিকে তাকাচ্ছেনা।ফালাক ওর লজ্জার পরিমাণটা আরো বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য মেহেরের কোমড় চেঁপে ধরে আরো কাছে টেনে আনল।মেহের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফালাকের বুকের মাঝে এসে পড়লে ফালাক ওকে ধরে ফেলে।
ফালাকঃ এভাবে দূরে দাঁড়িয়ে আছো কেনো?কাছে এসে মাখতে কি লজ্জা লাগছে?
ফালাকের শরীর থেকে মেহেরের মুখে আর গলায় হলুদ জড়িয়ে গেছে।মেহের খুব লজ্জাবোধ করছে এভাবে ওর শরীরে সারা পায়ে হলুদ মাখতে। আর সেই তখন থেকে মেখেই চলেছে।এত মাখলে এগুলো শুকাবে কখন?মেহের আস্তে করে বলল-” মুখে ও কি মাখতে হবে?”
ফালাকঃ বোকা নাকি?মুখে মাখতে যাব কেনো?
মেহেরঃ পুরো শরীরেই তো মেখে দিয়েছি। আর কোথায় মাখব?
ফালাকঃ নিজের শরীর ফাঁকা নেই?
মেহেরঃ কিইই?
ফালাকঃ নিজের শরীরে মাখো।
মেহেরঃ আমি তো সেই সকালেই গোসল করে নিয়েছি।
ফালাকঃ তাতে কি?
মেহেরঃ তাহলে তো এখন আবার গোসল করতে হবে?
ফালাকঃ করতে হলে করবে?
মেহেরের তো ইচ্ছা করছে দৌড়ে পালিয়ে যেতে এখান থেকে।এখন কি ওর সামনে সারা শরীরে হলুদ মাখবে নাকি?মেহের খুব দুশ্চিন্তার মাঝে পড়ে গেছে।তারপর ফালাককে বলল-” আচ্ছা আমি দাসীদের গোসলাগারে গিয়ে মেখে গোসল করব।”
ফালাকঃ আবার আমার কথার অমান্য করছো?
মেহের হলুদের বাটি থেকে কিছু অংশ হলুদ বাঁচা আঙ্গুলে জড়িয়ে একটু একটু করে গলার মাঝে মাখছে।আর ফালাক বসে থেকে দেখছে সেটা। উঠে ওর কাছে গিয়ে ওকে টেনে নিজের কাছে এনে ওড়নাট শরীরের উপর থেকে ফেলে দিয়ে অনেক খানি হলুদ ওর সারা গলাতে ভালো করে মেখে দিচ্ছে।আর মেহের ওর চোখের দিকে তাকিয়ে আছে অবাক হয়ে।জামার পেছনে ফিতার অংশ খুলে ফেলতেই মেহের লজ্জাতে চোখ দুটো বন্ধ করে ফেলল।পিঠের অর্ধভাগ জুড়ে হলুদ বাঁটা মেখে দিলো।মেহেরের অর্ধ উন্মক্ত পিঠে ফালাকের হাতের স্পর্শ যতবারই পড়ছে মেহের ততোবারই ভেতরে ভেতরে শিউড়ে উঠছে।আর ফালাক ও পরম যত্নে ওর পিঠে হলুদ মেখে চলেছে।দুজনে এতটায় কাছে চলে এসেছে যতোটা কাছে এলে দুজন দুজনের ভারী নিঃশ্বাসের শব্দ শুনতে পায়।ফালাক পেছন থেকে মেহেরের কোমড় জড়িয়ে ধরে ওর কানের নিচ দিয়ে হলুদ মেখে দিচ্ছে।হলুদ মাখা শেষ হলে দুজনে দুজনের স্থানে দাঁড়িয়ে আছে।ফালাকের বুকের সাথে মেহেরের পিঠ লেগে আছে।ওর একহাত মেহেরের পেটের উপর।আর অন্য হাত দিয়ে মেহেরের কানের ঝুমকো খুলছে।ধুকপুকুনি টা আরো তিনগুণ বেড়ে গেছে মেহেরের।কিছুক্ষণ পর ফালাক নরম স্বরে বলল-” আমাকে গোসল করিয়ে দাও।”
ফালাক ওকে ছেড়ে দিয়ে গোসল করার স্থানে চলে গেল।এবার মেহের দীর্ঘ একটা নিঃশ্বাস নিলো। কিন্তু গোসলের স্থানে গিয়ে মেহেরের অবস্থা আরো করুণ হলো।


চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here