গল্প – হারিয়ে খুঁজবে আমায়
পর্ব – ১২
লেখিকা – সানজিদা ইসলাম
প্রতিদিনের মতোই সকালে নামাজ পড়ে বারান্দায় গেলো অনু ।এখনো পূর্বের আকাশে সূর্য উঁকি দেয়নি চারোদিকে হালকা আলো ছড়িয়ে আছে।সে আকাশের দিকে তাকিয়ে শাফিনের চিন্তায় মগ্ন হঠাৎ তার চোখ গেল সামনের রাস্তার দিকে। কেউ একজন তার দিকে তাকিয়ে আছে একধ্যানে। তাকে চিনতে বেশি বেগ পেতে হলো না অনুর। রাস্তায় শাফিন দাঁড়িয়ে আছে হঠাৎ অনুর কলিজার পানি শুকিয়ে গেল শাফিন এখানে কি করছে। সবেমাত্র সবকিছু গুছিয়ে এগিয়ে ছিল সে তাহলে এখন সেখানে কেন এসেছে সবকিছু এলোমেলো করতে আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারল না সে দৌড়ে ঘরের মধ্যে ঢুকে গেল বারান্দার দরজা লাগিয়ে দিল। চিৎকার করে কাঁদতে শুরু করল।
অন্যদিকে অনুর ঘরে যাওয়া দেখে শাফিন তাকে ডাকতে শুরু করলো। কিন্তু অনেক ফিরেও তাকালো না।
হঠাৎ অনুর কান্নার আওয়াজ শুনে অনুর মা ঘরে দরজা ধাক্কাতে লাগলো মাত্র নামাজ পড়ে উঠেছিল সে আচমকা অনুর কান্নার আওয়াজ শোনে সে তারাতারি অনুর রুমে গেল।
রাবেয়া:অনু মা কি হয়েছে তোর? কান্না করছিস কেন দরজা খোল কি হয়েছে আমাকে বল ।অনু দরজা খোল মা।
কিন্তু অন্য দরজা খুললো না। এবার রাবেয়া খাতুন গেল ঘাবড়ে গেল। সে তাড়াতাড়ি গিয়ে ঘর থেকে অনুর রুমের চাবিটা নিয়ে এলো। অনুর বাবা নামাজে গেছেন তাই যা করার তাকে করতে হবে।
দরজার লকটা খুলে কোনরকম অনুর কাছে গেল গেল। অনুর কাঁধে হাত রাখতে অনু ঘুরে মাকে জড়িয়ে ধরে ধরল। অনুর মাও কান্না করে দিল।
রাবেয়া:কি হয়েছে মা কান্না করছিস কেন বাজে স্বপ্ন দেখেছিহ? এমন করে কান্না করলে তো বাচ্চা সমস্যা হবে আর কান্না করে না আমাকে বল কি দুঃস্বপ্ন দেখেছিস। অনুর সারা শরীর কাঁপছে সে শুধু মুখ দিয়ে উচ্চারণ করলো শা..শাফফ…ফিন। সে ফিরে এসেছে আমাকে ডাকছে ও বারান্দায় মা। ও কেন এসেছো মা। ভালোই তো ছিলাম আমি মা ওকে আমার চোখের সামনে থেকে চলে যেতে বল।
হঠাৎ নিচ থেকে অনুর বাবার আওয়াজ শোনা গেল সে কাউকে ধমকাচ্ছে। সে অনুকে নিয়ে উঠে দাঁড়াল তারপর বাইরে বেরোলো দেখার জন্য কি জন্য সাত সকাল বেলা অনুর বাবা চেঁচাচ্ছেন।
কিন্তু নিচে নেমে যা দেখলও তার জন্য তারা মোটেও প্রস্তুত ছিলোনা শাফিন হ্যাঁ শাফিন বাবার পায়ে ধরে আকুতি-মিনতি করছে।
শাফিন: প্লিজ বাবা শুধু একবার একবার আমি অনুর সাথে কথা বলব। ওর সাথে একবার দেখা করব বাবা । নইলে আমি মরে যাব বাবা। আমি আপনার কাছে ভিক্ষা চাইছি অনুকে আমার কাছে ফিরিয়ে দিন।
আলম(অনুর বাবা): কোন সাহসে তুমি আমার বাড়ি এসে আমার মেয়েকে হ্যনাস্তা করছো।আর কি মনে করো তুমি নিজেকে এত কিছুর পরেও আমি তোমাকে অনুর সাথে দেখা করতে দিব। সবেমাত্র সবকিছু থেকে বের করতে পেরেছি মেয়েটাকে। তুমি এসেছ সাথে কথা বলতে ওর সাথে দেখা করতে কোন অধিকারে। এক্ষুনি চোখের সামনে থেকে চলে যাও আর কখনো যেন তোমাকে বাড়ি আশেপাশে না দেখি।
শাফিন: প্লিজ বাবা এমন করবেন না। আমাকে একটা সুযোগ দিন। আমি আর অভিযোগের সুযোগ দেব না। আমাকে অনু ফিরিয়ে দিন আমার বাচ্চাকে আমার কাছে ফিরিয়ে দিন। বাবার কাছ থেকে তার সন্তানকে কেড়ে নেবেন না।
আলম: কিসের বাবা তোমার বাবা হওয়ার কোনো যোগ্যতাই নেই। তোমার মত চরিত্রহীন লোকের কাছে আমি আমার মেয়েকে দেব না আর না দেব তার অনাগত বাচ্চাকে। তোমাকে ভালো মানুষ ভেবেছিলাম তাই মেয়েকে তোমার কাছে রেখে ছিলাম। কিন্তু তুমি কি করলে পরকীয়া করে আমার মেয়েকে মেরে ঘর থেকে বের করে দিলে। তুমি আর এমন করবে না তার কি ভরসা আছে। তোমাকে আমি বিশ্বাস করিনা। ভালই ভালই এখান থেকে চলে যাও নইলে আমি হাত তুলতে বাধ্য হব। তোমার গায়ে হাত তুলতে আমার ঘৃণা হচ্ছে।
শাফিন: আমি সবকিছু জন্য মাফ চাচ্ছি বাবা। আপনার যত ইচ্ছা আমাকে মারুন আমার কোন সমস্যা নেই কিন্তু আমাকে একটা সুযোগ দিন। আমি অনুর অমর্যাদা করবোনা আমি আমার পরিবার ফেরত চাই বাবা।
এসবের মধ্যে অনুর মা রাবেয়া আর অনু একদম নীরব দর্শক। তার মেয়ের জীবনে কেন এমন হচ্ছে। শাফিন তাকে ছেড়ে দিয়েছিল তাহলে কেন আবার ফিরে এসেছে।যখন দেখল শাফিনকে কোনোভাবেই থামানো যাচ্ছে না সে অনুর শাশুড়ির নাম্বারে ডায়াল করলো।
ছেলেকে শান্ত করে রুমে রেখে এসে ছেলের চিন্তা করতে করতে কখন যে চোখ লেগেছিল বুঝতেই পারিনি সে হঠাৎ করে ফোনের রিংটোনে আওয়াজ শুনে ঘুম ভেঙে গেল। ঘড়ির দিকে চোখ পড়তেই দেখল ছটা বাজে এত সকালে কে ফোন দিল।ফোনের নম্বর দেখেই বুঝতে পারল কোন কোন সমস্যা হয়েছে সে তাড়াতাড়ি রিসিভ করতে শোনা গেল।
রাবেয়া:হ্যালো আপা সাত সকালে আপনার ছেলে বাড়ির সামনে এসে পাগলামি করছে কোন ভাবেই তাকে থামানো যাচ্ছে না এদিকে অনু কান্না করতে করতে অস্থির হয়ে যাচ্ছে। দয়া করে আপনার ছেলেকে এখান থেকে নিয়ে যান নইলে একটা না একটা কেলেঙ্কারি হয়ে যাবে। আমরা পুলিশ ডাকতে বাধ্য হব।
রাহেলা: আমার ছেলে মানে শাফিন শাফিন তো এতক্ষণ ঘরে ছিল । তাহলে কখন গেল সেখানে?
রাবেয়া: আমি কিচ্ছু জানি না আপা আপনার ছেলে পাগলামো শুরু করে দিয়েছে।প্রচুর চেঁচামেচি করছে অনু কে নিয়ে যাবার জন্য তাড়াতাড়ি কিছু করুন আপনার ছেলে কে নিয়ে যান রাখি।
রাহেলা হতভম্ব হয়ে বড় ছেলের রুমের সামনে দরজা নক করলো কয়েকবার নক করার পর শাওন জেগে গেল।
শাওন: কি হয়েছে মা এত সাত সকালে ডাকাডাকি মণকরছো কেন কিছুক্ষণ আগেই তো ঘুমালাম।
রাহেলা: শাওন বাবা শাফিন অনুদের বাড়ির সামনে গিয়ে ঝামেলা করছে তুই তাড়াতাড়ি যা। ওকে বুঝিয়ে শুনিয়ে বাসায় নিয়ে আয় আল্লাহই জানেন আমার ছেলেটার কি হবে বলেই মনে করে কেঁদে উঠলো সে।
এদিকে অনুর মা সাতসকালেই এসব ঝামেলা দেখে সাদাতকে ফোন করলে ফোন পেয়ে সে 10 মিনিটের মধ্যে বাসায় চলে আসলো। এসে দেখলো শাফিন এক প্রকার ঝামেলা বাধিয়ে দিয়েছে অনুর বাবার সাথে অনুকের নিয়ে যাবার জন্য জড়াজড়ি করছে। অনুর মা আপাতত অনুর সাথেই আছে। অনুর কান্না থেমে গেছে।
সাদাত প্রায় ধাক্কা দিয়ে শাফিনকে সরিয়ে দিতে যাচ্ছে কিন্তু শাফিন যেন বদ্ধ উন্মাদ হয়ে গেছে কোন কিছুই তার গায়ে লাগছে না। সদাতের সাথে এক প্রকার গন্ডগোল বেধে গেল।
এই মধ্যে শাফিনের ভাই শাওন ও তার মা পৌঁছে গেল আমাদের বাসায়।
“চুপ সবাই চুপ”হঠাৎ অনুর আওয়াজে শাফিন শান্ত হয়ে গেল। সে অনুকে দেখে একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে এগিয়ে যেতে লাগল সাদাত বাধা দেওয়ায় অনু ইশারায় নিষেধ করে দিল। শাফিন অনুর ঠিক সামনে গিয়ে ওর হাত ধরতে চাইলে অনু হাত সরিয়ে নিল। শাফিন কিছু মনে করল না সে তার তৃষ্ণা মেটাচ্ছে কতদিন পর সে অনুকে এত কাছ থেকে দেখতে পারছে এটাই কম কিসে। এবার অনু কথা বলল
অনু: কি চাই কেন এসেছ এখানে?
অনু শাফিনকে তুমি বলে সম্বোধন করাতে কিছুটা অবাকই হল। কারণ এ দু বছরে অনুকে হাজার বলেও তুমি করে বলতে পারিনি তুমি করে বলতে বললেই সে একটা কথাই বলতো।
অনু: তুমি কথাটা কেমন যেন পরপর লাগে। আপনি আমার কাছে ভালো লাগে যেদিন আপনি আমার পর হয়ে যাবেন সেদিন থেকে আপনাকে আমি তুমি করে বলবো। তাই শাফিন আর কথা বাড়ায়নি শাফিন কাছেও অনুর মুখে আপনি ডাকটা সবথেকে মধুর ডাক মনে হতো।
কিন্তু আজকে অনু তাকে তুমি করে বলছে তাহলে কি অনু তাকে পর করে দিয়েছে।হ্যা পরইতো সে।সে নিজেই অনুকে পর করে দিয়েছিল। তাই অভিমান তো হবেই । কিন্তু এইবার অভিমান ভাঙতে তার বেশ কাঠঘর পোড়াতে হবে ।এবার সে খুব বেশি আঘাত দিয়েছে অনুকে।ভাবতেই মুচকি হাসলো সে।
অনু: কি হলো কথা বলছো না কেনো। কেন এসেছ এখানে কি চাই?
শাফিন: শাফিন অকপটে বলে দিল তোমাকে। তোমাকে চাই আমার।
অনু: কেন আমাকে কেন চাই আমার মত সেকেলে আনস্মার্ট পরনির্ভরশীল একটা মেয়েকে কেন চাই তোমার। আমারতো যোগ্যতাই নেই তোমার সাথে থাকার।তুমি নিজে আমাকে তোমার লাইফ থেকে দূর করে দিয়েছে তাহলে এখন কেন ফিরে এসেছ। আর তোমার ইরা কই?
শাফিন হতাশ কণ্ঠে বলল ইরা নেই চলে গেছে সে অন্য কাউকে ভালোবাসে।
অনু:ওওওও ইরা চলে গেছে। তাই এখন আমার প্রয়োজন আবার যখন আমার থেকে ভালো অন্য কাউকে পাবে তখন আবার এভাবে ছেড়ে দেবে? আর তুমি ভাবলে কি করে এত কিছুর পর আমি তোমার কাছে ফিরবো। আমাকে কি তোমার মানুষ মনে হয় না।খেলার পুতুল ভাবো আমাকে যখন চাইবে ছুঁড়ে ফেলবে আবার যখন চাইবে কাছে টেনে নেবে।
এতদিন অনুর ভালোবাসা দেখেছো এবার ঘৃণা দেখবে।
শাফিন:অনু শোন আমি ইরাকে কোনদিন ভালোবেসে নেই আমি শুধু ওর মুহূর্তে আটকে ছিলাম বিশ্বাস করো আমি সব সময় তোমাকে ভালবেসেছি।
অনু: ব্যাস অনেক হয়েছে আর না আপনার মুখ থেকে একটা কথাও শুনতে চাচ্ছি না। ভালোবাসা কথা বলছেন ভালোবাসার কথা আপনার মুখে মানায় না আপনি এক্ষুনি আমার বাড়ি থেকে বের হয়ে যাবেন।বলে আর এক মুহূর্ত দাড়ায় না সে সে সে আরো কিছু ভয়ানক কথা বলতে চেয়েছিল কিন্তু বড়রা সামনে আছে বলে কিছু বলতে পারলো না।
শআনুর যাওয়া দেখে শাফিন তাকে ধরতে গেল তার আগেই সাদাকে সাদা তাকে টেনে ধরল আর মাথার ইশারা করে না করলো কিন্তু শাফিন থামল না সে চিৎকার করে বলতে লাগল
শাফিন:অনু প্লিজ যেওনা আমাকে আরেকটা সুযোগ দাও আমি সব আগের মত ঠিক করে ফেলব। অনু প্লিজ ফিরে চলো তুমি যা চাইবে যেভাবে চাইবে সব তেমনই হবে। আমার জন্য না হয় অন্তত আমাদের বাচ্চার জন্য হলেও ফিরে চলো। তাকে কেন বাবার ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত করছো। ওর কি দোষ। প্লিজ অনু।
শাফিনকে কোনভাবে আটকানো যাচ্ছিল না তাই সাগর সামনে এগিয়ে আসলো। আর মিসেস রাহেলা থেকে ছেলের পাগলামি গুলো দেখে যাচ্ছে। নাহ এর একটা বিহিত করতেই হবে।
সেভ শাফিনকে শান্ত করার জন্য বলল।
শাহেলা: শাফিন শান্ত হ বাবা আমি কথা বলছি ওনার সাথে। আমরা বোঝাব অনুকে।
মায়ের কথা শুনে আশ্বস্ত হলো শাফিন ।সে চুপ হয়ে গেল। এবার সে অনুর বাবা মায়ের দিকে ফিরল,
আমার কিছু কথা আছে আপনাদের সাথে। দয়া করে আগে আমার সম্পূর্ণ কথাটা শুনবেন।
আলম:আমার মনে হয় না এ ব্যাপার নিয়ে আমাদের আর কোনো কথা থাকতে পারে। দয়া করে আপনারা আপনাদের রাস্তা দেখুন। আর খেয়াল রাখবেন আপনার ছেলেকে যেন আর আমাদের বাড়ির আশেপাশে না দেখি। তাহলে আমাদের পুলিশ ডাকা ছাড়া আর কোন রাস্তা থাকবে না। আপনারা আসতে পারেন বলে আলম সাহেব উপরে চলে গেল তার মেয়ের কাছে। তার মেয়ের এখন তাকে প্রয়োজন খুব বড় একটা আঘাত পেয়েছে সে। তাকে শান্ত করতে হবে।
শাহেলা: আপা আপনি অন্তত আমার কথাটা তো শুনুন। আমাকে একবার অনু সাথে কথা বলতে দিন।তারপরও যে সিদ্ধান্ত নিবে আমরা মেনে নেবো আমি নিজের চোখের সামনে আমার সন্তানের এ অবস্থা সহ্য করতে পারছি না আর অনুও শাফিনকে ছাড়া ভালো নেই আমি জানি।তাছাড়া বাচ্চাটার কথা তো অন্তত ভাবুন সে কেন কষ্ট পাবে। আর সমাজে সিঙ্গেল মাদারের অনেক সমস্যা ফেস করতে হয়। দোষ যতই ছেলেদের হোক না কেন মেয়েদেরকেই দোষারোপ করে আমি জানি ।আমি চাইনা অনুর উপরে কেউ আংগুল তুলুক। আপনি দয়া করে একবার আমাকে অনুর সাথে কথা বলার অনুমতি দিন। ওর সাথে কথা বলি আমরা চলে যাব।
অনুর মা ভাবলো অনু যদি শাফিনের কাছে ফিরে যেতে চায় তাহলে আর সমস্যা কোথায়। তাছাড়া বাচ্চাটার কথা তো চিন্তা করতে হবে।বাবা ছাড়া বাচ্চা মানুষ করতে তার মেয়ের কষ্ট হয়ে যাবে সমাজের লোক নানান কথা বলবে। অনুপ এই সবাই দোষারোপ করবে। তাই অনু কাছ থেকে জানা উচিত সে কি চায়। তাই সে রেহালা কে অনুর সাথে কথা বলার অনুমতি দিল।
সে ঘরের সামনে গিয়ে দেখলো বাবা মেয়ে বসে আছে তাই দরজা নক করল। অনুর বাবা বলে উঠলো
আলম:আপনি এখানে কেন আপনাকে তো বলা হয়েছে যে আমরা কোন কথা শুনতে চাই না। আমাদের মেয়ে এতো ফেলনা হয়ে যায়নি যে আপনার চরিত্রহীন ছেলের কাছে তাকে ফেরত পাঠাতে হবে।
অনু বাবাকে থামিয়ে দিল,
অনু: আসতে দাও ওনাকে বাবা তুমি চিন্তা করো না উনি হয়তো আমার সাথে কথা বলতে চান।
মেয়ের কথা শুনে আলম সাহেব আর কথা বাড়ালেন না অনুর ঘর ত্যাগ করলেন। আর মিসেস রাহেলা গিয়ে অনুর পাশে বসে আমায় হাত নিজের মুঠোয় নিয়ে নিল
রাহেলা: অনু মা আমার, আমি জানি আমি এখন যে কথা গুলো বলবো তুই আমাকে স্বার্থপর ভাববি। হ্যাঁ আমি স্বার্থপর নিজের সন্তানের জন্য। হয়তো প্রত্যেক মা-ই তার সন্তানের জন্য স্বার্থপর হয়। দেখ অনু জীবনে কেউই একা চলতে পারে না সবারই একটা না একটা সঙ্গীর প্রয়োজন।তার সুখ-দুখ হাসি-কান্না সবকিছু ভাগাভাগি করার জন্য। আমার ছেলেটার তোকে প্রয়োজন। সে তোকে অসম্ভব ভালোবাসে। আর পুরুষ মানুষ একটু আকটু এসব করেই। ওকে এবারের মত মাফ করে দে অনু। তোরা আবার আগের মত হয়ে যা। আর তাছাড়া একবার বাচ্চাটার কথাতো ভাব। সে কেন বাবা থাকতে এতিমের মতো বড় হবে। তারও তো বাবার প্রয়োজন। আমার ছেলে টাকে মেনে নে অনু।
শাশুড়ির কথাগুলো শুনে অনু একটা তাচ্ছিল্যের হাসি হাসল,
অনু: আপনি প্রমান করে দিলেন মা শাশুড়ি কখনোই মা হয় না। যদি আজকে আমার জায়গায় আপনার মেয়ে থাকতো তাকে কি শাহিনের মত ছেলের হাতে তুলে দিতেন।আর জীবন একা চলার কথা বলছেন তো কে বলেছে আমি একা আমার পাশে আমার বাবা মা আছে আমার সন্তান আছে আর কি চাই বেঁচে থাকার জন্য।আর একটা কথা কি জানেন মা। ভালোবাসা মূল ভিত্তি হচ্ছে বিশ্বাস। আর একবার বিশ্বাস ভেঙ্গে গেলে সেখানে আর ভালোবাসা তৈরি হয় না। বিশ্বাস হচ্ছে কাচের মত। ভেঙ্গে গেলে খুব কষ্টে হয়তো জোড়া লাগানো যায় কিন্তু দাগ সারাজীবন থেকে যায়। এই দাগ নিয়ে আর যাই হোক সংসার করা যায়না। আমাকে মাফ করবেন আমি আপনার কথাটা রাখতে পারলাম না। কথাটা বলেই অনু উঠে যাচ্ছিল কিন্তু আগে শাহিনের মাঅনুকে আটকে দিল।
রাহেলা:অনু আজ এই মা তোর কাছে হাত পাতচ্ছে আমার ছেলেকে ফিরিয়ে দিস না ও মরে যাবে তোকে ছাড়া বাঁচবে না ।ওকে একটা সুযোগ দে অন্তত বাচ্চাটার জন্য একটা সুযোগ দে।
অনু হাত ছাড়িয়ে নিল আমার পক্ষে সম্ভব না বলে আর দাঁড়ালো না সে ওয়াশ রুমে গিয়ে দরজা আটকে দিল তাঁর প্রচুর কান্না পাচ্ছে কিন্তু তাকে তো ভেঙে পড়লে চলবে না শক্ত হয়ে দাঁড়াতে হবে। তাকে তো শাফিনের অপমানের কড়া জবাব দিতে হবে। সবাইকে জানিয়ে দিতে হবে যে ভালো থাকার জন্য কোন সঙ্গীর প্রয়োজন নেই।সে একবার বিশ্বাস করে ঠেকেছে আর না। এইবার তো সামলে নিয়েছে পরের বার হয়ত মরেই যাবে।
………….
……………….
[বাকিটা পরবর্তী পর্বে…….]
#হারিয়ে_খুঁজবে_আমায় #সানজিদা_ইসলাম #গল্পের_ডায়েরি #Sanjida_Islam #GolperDiaryOfficial