হারিয়ে খুঁজবে আমায় পর্ব ১১

0
669

গল্প – হারিয়ে খুঁজবে আমায়
পর্ব – ১১
লেখিকা – সানজিদা ইসলাম

ডাক্তারের কেবিল থেকে বের হয়ে কোনরকম একটা সিএনজি নিয়ে বাসায় যায় শাফিন ।তারপর খুশিতে চিৎকার করে কতক্ষণ।শাফিন বাবা হতে যাচ্ছে। আচ্ছা বাবা হওয়ার অনুভূতি গুলো কি সত্যিই এমন অসাধারণ হয় যেন পৃথিবীটাই হাতের মুঠোয় পেয়ে গেছি। বেঁচে থাকার জন্য এর থেকে বড় সুখ আর কিছু চাইনা কিন্তু কিছু একটা ভেবে মুখের হাসি নিমিষেই শেষ হয়ে যায় তার।

অনুকি ফিরবে তার কাছে ?নাকি তার বাচ্চাকে তার কাছ থেকে ছিনিয়ে নেবে। তার প্রথম সন্তান প্রথম বাবা হওয়ার অনুভূতি সব কি কেড়ে নেবে অনু? পরক্ষণেই ভাবল না কিভাবে কেড়ে নেবে বাচ্চাটা কি তার একার নাকি তারও তো অধিকার আছে বাচ্চার উপর। শাফিনের জন্য না হলেও বাচ্চাটার জন্য হলেও অনু তার কাছে থাকতে বাধ্য। সে বাধ্য করবে অনুকে তার সাথে থাকতে। সে এই অনুভূতি টাকে হাতছাড়া করতে চায়না।আর অনু যদি থাকতে না চায় তাহলে বাচ্চাটা শাফিনকে দিয়ে দিতে হবে।

এরপর শাফিন সিদ্ধান্ত নেয় সে অনুকে ডিভোর্স দিবে না আর ইরা কেও বোঝাবে যে বাচ্চাটা শাফিনের জন্য কতটুকু গুরুত্বপূর্ণ আর বাঁচ্চার জন্য হলেও অনুকে প্রয়োজন। আর ইরা যদি না অনুকে রাখতে না চায় তবে অন্য ব্যবস্থা আছে সে কোর্টে বাচ্চার কাস্টাডি জন্য আবেদন করবে তারপর সে আর ইরা মিলে বাচ্চাটা বড় করবে। আগে ভালোয় ভালোয় আজকের এনগেজমেন্টটা হয়ে যাক তারপর সব দেখা যাবে। ভেবেই একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়লো শাফিন।

তার অনেক কাজ করতে হবে এঙ্গেজমেন্ট সকল দায়িত্ব শাফিনের একার কোন আত্মীয় স্বজন বা কাছে বন্ধুবান্ধব শাফিনকে সাপোর্ট করেনি তারা আসতে নারাজ‌। কিছু কলিগ ও কয়েকটা বন্ধুবান্ধব নিয়ে সে অনুষ্ঠানটা করছে। তাই সব দায়িত্ব শাফিনের একার। সে বেরিয়ে পড়লো হলরুমের উদ্দেশ্যে সবকিছু ঠিকঠাক আছে কিনা দেখে তারপর সে রেডি হয়ে আবার আসবে আর ইংগেজমেন্ট এর পরপরই ইরার সাথে কথা বলবে।

সন্ধ্যে সাতটা,
সকল গেস্ট রা এসে পড়েছে ইরার বাবা-মাও এসেছে তারা শাফিনের সাথে কথা বলছে। সকল আত্মীয়-স্বজনের সাথে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে ।সবাই যার যার মত পার্টি ইনজয় করছে কিন্তু এরমধ্যে একবারও ইরার দেখা মিলল না। বেশ কয়েকবার শাফিন ফোন দিয়েছে কিন্তু ফোন রিসিভ করছে না সে ভাবছে হয়ত ব্যস্ত তাই ফোন ধরছো না। রাত নটার দিকে সবাই এনগেজমেন্ট এর জন্য তাড়া দিতে থাকলো কিন্তু ইরার কোন খোঁজ খবর নেই তার বাবা-মাও তাকে ফোন দিচ্ছে কিন্তু ফোন বন্ধ তারপর হঠাৎ এই একটা মেয়ে এসে শাফিনের হাতে একটা কাগজ দিল সে আস্তে আস্তে কাগজটি খুললো।

এটা একটা চিঠি যা ইরা লিখেছে। চিঠিটা সম্পূর্ণ পড়ে শাফিনের চেহারার রং বদলে গেল। চিঠিটা ইরার মায়ের হাতে দিয়ে তারপর সে কাউকে কিছু না বলে হল রুম থেকে বেরিয়ে গেল।

তারপর তার মা চিঠিটা খুলল চিঠি লেখা ছিল,

প্রিয় শাফিন,
শুরুতেই প্রিয় লিখলাম কিন্তু তুমি আমার প্রিয় কিনা জানিনা কিন্তু আজ কাল তোমাকে আমার বিরক্ত লাগে। কথায় কথায় আবেগী হয়ে পড়া শাসন করা এখানে যেও না তার সাথে কথা বলো না এইসব শুনতে শুনতে আমি পাগল হয়ে যাচ্ছিলাম। আমি তোমাকে খুব স্মার্ট একজন ছেলে ভাবতাম কিন্তু তোমার জন্য ওই অনুই ঠিক আছে আমি নই। আমি কার সাথে চ্যাটিং করি চলাফেরা করি কথা বললি সবকিছুতেই তোমার হস্তক্ষেপ।

ভাগ্য ভালো সময়মতো আয়াজ আমাকে সব বুঝিয়ে দিয়েছে। যে ছেলে বউ রেখে অন্য মেয়ের সাথে সম্পর্ক করে এমন কি বিশ্বাস আছে যে তুমি আমাকে ছেড়ে আরো সুন্দর কেউ দেখলে তার কাছে চলে যাবে না? তোমাকে আমি বিশ্বাস করিনা। আর ভালোবাসি না তাই এঙ্গেজমেন্ট আর বিয়েটা করা আমার পক্ষে সম্ভব না।যেখানে বিশ্বাস নেই সেখানে বিয়ে তো অসম্ভব।

আমি আয়াজকে ভালবাসি আর ওকেই বিয়ে করব ও তোমার মত অত মেন্টালি সিক না আমাকে বোঝে। তোমাকে আজকের এই দিনে এতগুলো মানুষের সামনে অপমান করতে চাইনি কিন্তু আমার কোন উপায় ছিল না শেষ মুহূর্তে আর পারলাম না নিজের সাথে যুদ্ধ করতে। তাই ভালোবাসার মানুষটি হাত ধরে চলে যাচ্ছি।আমি আজকে বুঝতে পারছি আমি তোমার পার্সোনালিটি কে ভালোবেসেছিলাম তোমাকে না।

পারলে মাফ করে দিও আর অনু কি নিয়ে সুখে থাকো।আমি জানি তুমি এখনো অনুকে ভালোবাসো। আর সেও তোমাকে ভালোবাসে তাই তার কাছে মাফ চেয়ে আবার সবকিছু ঠিক করে নিও ভালো থেকো।

ইতি
ইরা

সম্পূর্ণ চিঠিটা পড়ে তার বাবা-মা স্তব্ধ হয়ে গেল। তার মেয়ে একটা বিবাহিত পুরুষকে বিয়ে করতে যাচ্ছিল এই ছেলের আগেও একটা স্ত্রী আছে জেনেও। এত অধঃপতন হয়েছে তার শেষ পর্যন্ত একটা পবিত্র সম্পর্ককে নষ্ট করল তাদের মেয়ে ভাবতেও অবাক লাগছে।

তারা ইরাকে কখনো কোন কিছুর জন্য বাধা দেয়নি সবসময় স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে দিয়েছে তাই বলে মেয়ে এত নিচে নামবে তারা ভাবতে পারিনি। আজ এতগুলো মানুষের সামনে শুধু শাফিনকে না তার বাবা-মাকেও অপমান করল সে।

বাসায় পৌঁছে শাফিন কোনরকম দরজা লাগিয়ে চিৎকার করে কান্না করতে শুরু করল।
কার জন্য সে কান্না করছে জানেনা শুধু এতোটুকুই জানে যার জন্য সে অনু কে ঠকালো অনুর গায়ে হাত তুলল এমনকি তাকে ডিভোর্স দিতে যাচ্ছিল তার বাবা হওয়ার সংবাদ থেকে বঞ্চিত হল আর সেই তাকে একা ফেলে চলে গেল তাকে বিশ্বাস করে না বলে? কি দোষ করেছিল সে ?সেতো ইরার সব কথাই মেনে নিয়েছে যখন যা বলেছে তাই করেছে কখনো তো স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করেনি। কোন কিছুর জন্য জবাবদিহিতা করেনি ।এমনকি এত বড় একটা ঘটনার পরেও ইরাকে মাফ করে দিয়েছিল।তাহলে কেন এমন করল। কি সুন্দর করে বলে দিল শাফিন কে ভালোবাসে না বিশ্বাস করে না অন্য কাউকে ভালোবাসি।

তাহলে কি তার অনুকে দেওয়া আঘাত প্রকৃতি তাকে ফিরিয়ে দিল। সেও তো অনুকে একই কথা বলেছিল আরো জঘন্য ভাবে। অনু কি এমন কষ্ট পেয়েছিল নাকি আরো বেশি?

তার ইরার জন্য কষ্ট লাগছে না কষ্ট লাগছে নিজের জন্য অনুর জন্য ।সে অনুর কাছে কোন মুখে যাবে তাকে ফিরিয়ে আনতে। কিভাবে ক্ষমা চাইবে ?আদৌ কি অনু ফিরবে তার কাছে। শাফিনের নিজেকে অসহায় লাগছে খুব একা একা মনে হচ্ছে। ঘরে থাকলে যেন তার দম বন্ধ হয়ে যাবে। এই ঘরে অনুর সাথে তার কত স্মৃতি রয়েছে ভাবতেই দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে তার ।তার এখন অনুকে প্রয়োজন খুব প্রয়োজন সে বুঝতে পারছে অনুকে ছাড়া তার চলবে না। কিন্তু অনু তো নেই দূরে চলে গেছে শাফিন নিজে তাকে দূর করে দিয়েছে কিন্তু এখন তার কাউকে প্রয়োজন যে তার কষ্ট বুঝবে।

তারপরই হঠাৎ তার মায়ের কথা মনে পড়লো সে উঠে দাঁড়ালো তার মায়ের কাছে যাওয়ার উদ্দেশ্যে। এখন তার কাউকে প্রয়োজন খুব করে প্রয়োজন কাউকে জড়িয়ে ধরে অশান্ত মনকে শান্ত করতে হবে। অনু থাকলে কাজটা বেশি ভালো হতো কিন্তু আপাতত তার মাকে চাই। একমাত্র মাই পারবে সবকিছু ঠিক করতে।

রাত পৌনে একটা দরজায় বারবার কে যেন কলিং বেল বাজাচ্ছে আর সমানে দরজা ধাক্কাচ্ছে। কিছুক্ষণ আগেই ঘুমিয়ে ছিল শাওন আর রিদি। কিন্তু দরজা ধাক্কা আর কলিং বেলের আওয়াজে তারা দুজনি হুড়মুড় করে উঠে পরলো। আর কলিংবেলের বাজে আওয়াজে মিসেস রাহেলা ঘুম থেকে জেগে গেল ।শাওন দরজা খুলে অবাক হয়ে গেল তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে তার ছোট ভাই চুলগুলো এলোমেলো হয়ে আছে চোখ মুখ ফুলে লাল হয়ে আছে যেন এইমাত্র কান্না করে এসেছে শাটের অর্ধেক ইন করা বাকি অর্ধেক ছাড়ানো।

এত রাতে সেখানে কি করছে আজ না তার এঙ্গেজমেন্ট ছিল ইরার সাথে তাহলে সে এখানে কেন আর চেহারার এই হাল কেন?বেশ কয়েকটা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে শাওনের মাথায়।

বড় ভাইকে দেখে নিজেকে ঠিক রাখতে পারল না শাফিন ক্লান্ত পায়ে সামনে এগিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরেই চিৎকার করে কান্না করতে শুরু করল সে আর বলতে লাগল আমার পাপের ফল আমি পেয়েছি ভাই তোদের কথা সত্যি হয়েছে।আল্লাহ আমাকে উচিত শিক্ষা দিয়েছে। আমি আর সহ্য করতে পারছি না ভাই আমার অনুকে চাই।ও আমার সব কষ্ট দূর করে দেবে ওর কাছে জাদু আছে ভাই। আমাকে আমার অনু এনে দে।

ছেলের এমন অবস্থা দেখে রাহিলা কান্না করে দিল তার ধারণা সঠিক হয়েছে ছেলে তার ভুল বুঝতে পেরেছে ।সে এগিয়ে যায় ছেলের দিকে মাকে দেখে সে ভাইকে ছেড়ে মায়ের পায়ের কাছে বসে পরলো। তারপর পা জড়িয়ে ধরে বলল ,

আমার অনুকে চাই মা আমার অনুকে চাই। আমি আমার বাচ্চাকে চাই। আমি ওদের ছাড়া বাঁচবো না মা। আম..আমি আমার অনুকে চাই। তোমার ছেলেকে অনু এনে দাও মা। আর কক্ষনো সে অনুর অমর্যাদা করবেনা ।গায়ে হাত তুলবে না। বাজে কথা বলবে না। আমরা বাচ্চাকে নিয়ে খুব সুখে থাকবো। অনুর কথা মতো আমাদের একটা ছেলে বাবু হবে আমার মেয়ে বাবু চাইনা আর চাই না। অনু যা চাইবে তাই হবে।আমাদের মধ্যে আর কেউ কখনো আসবে না।

আমার খুব কষ্ট হচ্ছে মা। অনেক চেষ্টা করেছি অনুকে ভুলে যাবার কিন্তু পারেনি মা তুমি ঠিক বলেছিলে আমি অনুকেই ভালোবাসি ইরাকে না দেখো ইরা চলে গেছে কিন্তু আমার একটুও আফসোস হচ্ছে না আরো ভালো লাগছে যে আমার আর অনুর মধ্যে আর কেউই নেই ।হ্যা আমি অনুকে ভালবাসি। তাইতো একদিন জন্যও আমি তাকে মনের আড়াল করতে পারিনি প্রতিদিন রাতে তার বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে থেকেছি তাকে এক নজর দেখার জন্য। প্রতিটা রাত নির্ঘুম কাটে অনুর স্মৃতিতে। আমি ওকে ভালোবাসি মা আমার অনুকে এনে দাও। আমার কিছু চাইনা মা। কিচ্ছু চাইনা।

মিসেস রাহেলা ঠায় দাঁড়িয়ে আছে ছেলের কষ্ট তার সহ্য হচ্ছে না সে জানেনা আগে কি হতে চলেছে। তার ভুলের মাশুল তো তাকে দিতেই হবে। অনু যে তাকে মাফ করবে না সেটা সিওর। আর মাফ করলেও কখনোই শাফিনে কাছে ফিরবে না সেটা তার কথা দ্বারাই বুঝতে পেরেছে। কিন্তু অনুকে না পেলে তো তার ছেলেটা পাগল হয়ে যাবে। কি করবে সে এখন সেতো অনুকে কথা দিয়েছে অনু যা সিদ্ধান্ত নিবে তিনি সব সময় তার পাশে থাকবে। আর ভাবতে পারল না সে আগে শাফিনকে শান্ত করতে হবে।

অন্যদিকে রীধি শাফিনের আচরণে বিরক্ত হয়ে গেল। এতকিছু করার পর তার অনুকে চাই, হুহ। বাইরে ফষ্টিনষ্টি করার সময় এসব কথা মনে ছিল না সে অনুকে ছাড়া বাঁচবে না। এখন ইরা ডাইনীটা ছেড়ে গিয়েছে বলে তার অনু চাই। অনুতো মুড়ির মোয়া চাইলেই পাওয়া যাবে। যেন তার কোন আত্মসম্মান নেই। যত সব নাটক। সাইকো একটা মনে মনে আরও অসংখ্য গালি দিয়ে রুমে চলে গেল সে।

এতদিন কঠোর থাকলেও। তার ভাইকে কান্না করতে দেখে কঠোর হতে পারল না শাওন। শাফিন কখনোই এমন ছিলনা কেন যে এসব হয়ে গেল বুঝতে পারছে না সে। কিন্তু ভুল যেহেতু করেছে মাসুল তো তাকে দিতেই হবে। আর শাওনের মনে হয় না অনু শাফিনের কাছে ফিরবে। একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে শাফিনের কাছে যায় শাওন ।ছোট ভাইয়ের কষ্ট দেখতে পারবেনা সে। প্রথমে তাকে শান্ত করার প্রয়োজন।

সকালে সাদাত ভাই এসেছিল।অনুর ভিসা কাগজ এসে পড়েছে জানাতে। প্রায় সপ্তাহখানেক পরের টিকিট কেটেছে। প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র আর শপিং করতেই এক সপ্তা লেগে যাবে।তাই তাকে এই মাসে চেকআপ করতে নিয়ে যায় সাদাত। প্রায় ঘন্টাখানিক পর তারা বাসায় ফিরে আসে। আর অনুর ভিসা আসার খুশিতে বাসায় একটা ছোটখাটো পার্টি দেয় অনুর মা মিসেস রাবেয়া সাথে সাদও আছে।

সাদাত অনুর সাথে তার পড়াশোনার ব্যাপারে ডিসকাস করছে। অনু তা মনোযোগ সহকারে শুনছে। একগাদা উপদেশ দিচ্ছে, ঠিকমতো খাবি ঠিকমতো ঘুমাবি প্রপার রেস্ট নিবি, প্রতিদিন ফোন করবি সবার সাথে কথা বলবি, টাইম মতো ওষুধ খাবি বেশি রাত জেগে থাকবি না কান্না করতে পারবি না আরো গাদা গাদা উপদেশ। অনু সেগুলো খুব মনোযোগ সহকারে শুনছে মাথা দোলাচ্ছে আর তার করা শাসন দেখে মিটমিট হাসছে।

সাদাত এর সাথে প্রয়োজনীয় কথা শেষ করার পর সে সাদের কাছে গেল। অনুকে দেখেই একগাদা প্রশ্ন ছুড়ে দিল সাদ। বাপ বেটা দুটোই এক‌ একটা প্রশ্ন করতে করতে মারে আরেকজন উপদেশ দিতে দিতে
মারে। অনু পড়েছে বিশাল ঝামেলায়।

সাদ: পি মনি আমাদের প্রিন্সেস কবে দুনিয়াতে আসবে আমি তার সাথে খেলা করব।

অনু: তোমাকে কে বলেছে আমাদের প্রিন্সেস হবে? প্রিন্সও তো হতে পারে নাকি।

সাদ: বাবাই তো বলল আমাদের একটা প্রিন্সেস হবে তারপর আমি বড় হলে প্রিন্সেস কে বিয়ে করবো আর এখন সারাদিন প্রিন্সেস এর সাথে খেলবো। ও শুধু আমার প্রিন্সেস হবে আর কারো না।

অনু: ও বাবা প্রিন্সেস হবে নাকি প্রিন্স হবে তারই খবর নেই আর সে বড় হয়ে বিয়ে অব্দি চলে গেছে।

সাদ: আরে বাবা তুমি দেখো আমাদের প্রিন্সেস ই হবে আর আমি তার সাথে খুব খেলা করব। তারপর বিয়ে করে পুতুলের মত করে সাজিয়ে রাখবো বাবা বলেছে তো আর বাবা যাই বলে তাই সত্য হয়।

অনু হেসে দিল তার পাকা পাকা কথা শুনে। তারপর সে সাদাতের কাছে গেলে। সে কিছু কাগজপত্র ঘাটাঘাটি করছে।

অনু: কি করছেন সাদাত ভাই কোন সমস্যা আপনাকে বেশ চিন্তিত লাগছে।

সাদাত: আর বলিস না মাথা থেকে একটা আপদ বিদায় করব বলে ভেবেছি ।তাই আপদটা যেন তাড়াতাড়ি বিদায় হয় সেই কাজই করছি।

অনু বুঝতে পারল সাদাত ভাই তাকে নিয়ে মজা করছে তাই সে তাকে পাত্তা না দিয়ে সাদাতকে জিজ্ঞেস করল

অনু: তুমি কি আমার সাথে যাবে?

সাদাত: হে তোকে পৌঁছে দেওয়ার জন্য।পৌঁছে দিয়ে সবকিছু ঠিকঠাক করে চাচ্চু আর চাচির সাথে কথা বলে পরেই আসবো নাহলে দেখা যাবে তুই বেশি আদরে আদরে বাঁদর হয়ে গেছিস আর খাওয়া-দাওয়া, নিজের খেয়াল রাখা সব গোল্লায় গেছে। দায়িত্ব যখন নিয়েছি পূরণ করে তবেই ছাড়বো। শুনিস নি ডাক্তার কি বলল তোর শরীরে প্রচুর ভিটামিনের অভাব আর রক্তশূন্যতা আছে। তোর তো নিজের প্রতি কোন ধ্যানই নেই তাই আমাকেই সব করতে হবে নাকি।

সাদাতের কথা গুলো অনু মুগ্ধ হয়ে শুনছে লোকটা কি সুন্দর করে কথা বলে সবকিছু মজা ছলে উড়িয়ে দিলেও বেশ প্রয়োজনীয় কথা তারমধ্যে বলে ফেলো এই যে দায়িত্বে র কথাটা।

সে শাফিনের দায়িত্ব ছিল জেনেও শাফিন সৌজন্যতার খাতিরেও খোঁজ নেই নি। আর এই যে সাদাত ভাই সামান্য কথা দিয়েই সবকিছু নিঃস্বার্থভাবে করে যাচ্ছে। অনুকে মেন্টালি সাপোর্ট দিচ্ছে আবার নিজ দায়িত্বে দূর দেশে চেনা মানুষের কাছে রেখে আসছে আজকালকার আপন ভাইয়েরাও এরকম করে না যতটুকু না সাদাত তার মামাতো ভাই হয়ে করছে সে এই লোকটার কাছে চির কৃতজ্ঞ থাকবে।

বেশ হাসি তামাশা মধ্য দিয়ে রাতটা কেটে গেল তাদের। সাদাত আর সাদ রাতে বাসায় চলে গেল। কিন্তু কে জানত কালো অতীত গুলো অনুর জীবনে আবার হানা দিবে সবকিছু এলোমেলো করে দিতে।
………….
……………….
[বাকিটা পরবর্তী পর্বে…….]

#হারিয়ে_খুঁজবে_আমায় #সানজিদা_ইসলাম #গল্পের_ডায়েরি #Sanjida_Islam #GolperDiaryOfficial

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here