#হলদে_প্রজাপতি
(প্রাপ্তমনস্কদের জন্য )
— অমৃতা শংকর ব্যানার্জি ©®
চল্লিশ
( আগের অধ্যায়গুলোর লিংক অধ্যায়ের শেষে দেওয়া হল)
সেরোটোনিন । আমি তখন আনহ্যাপি হরমোনের চূড়ান্ত পর্যায়ের সিক্রেশনের ভুক্তভোগী । যে ক’টা মাস পুরুলিয়ায় ছিলাম, কোন দিন ভালো করে খেতে পারিনি, ঘুমোতে পারিনি । কত রাত্রি যে বিনিদ্র কাটিয়েছি, তেমনি আবার অবেলায়, রাস্তার ধারে কুণ্ডলী পাকিয়ে শুয়ে থাকা, খেতে না পাওয়া কুকুরগুলোর মত ঘুমিয়ে পড়েছি, বলতে পারিনা । সে যেন এক অন্য আমি । আয়নায় নিজের চেহারাটা দেখে চমকে উঠতাম । রাজ্যের সমস্ত কালি কে যেন আমার মুখে লেপে দিয়েছে । অন্ধকার ঠেলে চোখের সাদা অংশটা বেরিয়ে রয়েছে । চুলে জট পাকিয়ে ফেলেছিলাম । খাওয়া-ঘুম যেখানে লাটে উঠেছে, সেখানে আর নিজের শরীরের যত্ন কে নেয় । নেবোই বা কেন ? কিছুই বুঝতে পারতাম না । আমি এখন কোথায় আছি , কেন আছি , কোন প্রশ্নেরই কোন উত্তর ছিল না আমার কাছে। বাবা সেই যে বহু দূরে চলে গেল, তা যেন চলেই গেল । আমার চোখের দিকে তাকালেই আমি সেটা টের পাই । কয়েক আলোকবর্ষ দূরে বসে আছে বাবা মানুষটা । যে আমার সবচেয়ে কাছের মানুষ ছিল । সারাটা মন জুড়ে শুধুই সোনু দা । আমি যে ওর কাছে নেই । ও এখন কোথায় ? কেমন আছে , কি করছে? আমি চলে আসায় ওর মন খারাপ কিনা, এ প্রশ্ন আমি বাবা বা মাকে তো করতে পারতাম না, তবে আকাশকে, বাড়ির পেছনের কল্কে ফুলগুলোকে, মাঠের ওপর দিয়ে উদ্দেশ্যহীন ভাবে হাঁটতে হাঁটতে ঝোপঝাড়ের ধুতরো গাছগুলোকে এ প্রশ্ন আমি করতাম । শুনেছি নাকি ধুতরা গাছের গোল গোল কাঁটাওয়ালা যে ফলগুলো ধরে , সেগুলো থেঁতো করে খেলে মৃত্যু অবধারিত । করে দেখবো একবার ? মৃত্যু কেমন ? সে কি খুব শীতল ? কষ্ট হয় খুব ? এই মুহূর্তে আমি মরে গেলে , মা বাবার কি হবে ? আমি যে ওদের একটাই মাত্র সন্তান । ওরা খুব কাঁদবে নিশ্চয়ই । বাবা যতই আমার দিকে ওই ভাবে তাকাক্, আমি না থাকলে নিশ্চয়ই কষ্ট পাবে । আর সোনু দা? আমি নেই , মরে গেছি , শুনলে সোনু দা ঠিক কতটা কষ্ট পাবে? কতটা কাঁদবে আমার জন্য ? মরে গিয়ে দেখতে হয়। মরে গেলে , প্রেতাত্মায় ভর করে সেসব কি চোখ মেলে দেখা যায়? কি হয় মৃত্যুর পারে? ডিপ্রেশনের চূড়ান্ত লেভেলে গিয়ে তখন আমি প্রায় প্রেতাত্মার মতই দেখতে হয়ে গেছিলাম । কতদিন যে খাবারের কোন স্বাদ পাইনা, গাঢ় ঘুম ঘুমোইনি, হাসিনি, গল্প করিনি .. পাহাড়ের কোন চূড়ো থেকে সেই সব যেন বহু যুগ আগের ফেলে আসা স্মৃতি আমায় হাতছানি দেয় । আমি শুধু পাহাড়ের এক অলৌকিক খাঁজে দাঁড়িয়ে সেই হাতছানি দেখতে পাই । ইহজীবনে কখনো ছুঁতে পারব বলে আর মনে হয় না ।
যখন ফিরে গেলাম অজিত কাকুদের বাড়িতে , তখন নিতান্ত বাধ্য হয়েই বাবা-মা আমাকে গিয়ে দিয়ে এসেছিল । টেস্ট পরীক্ষা হবে । তারপরে ভ্যাকেশন পড়বে কিছুদিনের জন্য। তারপর ইউনিভারসিটির থার্ড ইয়ারের ফাইনাল এক্সাম শুরু হবে। আমি যখন গিয়ে পৌঁছলাম, তখন সোনু দা সেখানে আর থাকে না । এইযে ‘সোনু দা বিহীন আমি’ — এর সাথে পরিচিত হওয়া আমার পরীক্ষার ভয় , একেবারে বিনা প্রিপারেশনে যে পরীক্ষায় আমায় বসতে হবে তার ভীতি, খুব উঁচু কোন পাহাড় চূড়ো থেকে পড়ে যাওয়ার ভয় , নির্জন ধূ ধূ মরুভূমিতে একা একা হারিয়ে যাওয়ার ভয় , সর্বোপরি মৃত্যু-ভয় — সব ধরনের আতঙ্ককে ছাপিয়ে গেল, আমি কিভাবে এই বাংলোয় রয়েছি বা থাকবো, সেই ভয় ! এতদিন পুরুলিয়ায় ছিলাম। বেঁচেছিলাম শুধুমাত্র এই আশায় , ফিরে গিয়ে সোনু দা’কে আবার দেখতে পাবো । কি হলো , কেন হল , কেমন করে হলো , আমার সেই অসমাপ্ত ডায়েরি লিখন হঠাৎ কেন থমকে গেল, তার পরবর্তীতে কি লিখব আমি ! সেখানে এই প্রশ্নই আমি শত সহস্রবার ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে কল্পনার সোনু দার সামনে করে গেছি। মাত্র একটা ভুল-বোঝাবুঝি হয়েছিল আমাদের মধ্যে । হয়তো খুবই ঘনিষ্ঠ মুহূর্তে । তবুও ভুল-বোঝাবুঝি বই তো কিছু নয় । কিরকম যেন গোলমাল হয়ে গেছিল মাথার মধ্যে। হঠাৎ করে উঠে চলে এসেছিলাম । তারপরেই এত কাণ্ড ! কিন্তু আমার তার কাছে করা ভুল বা দোষ যাই হোক , সেটা তো ওইটুকুই । আমার ঐভাবে চলে আসার জন্য রাগ করা যায়, অভিমান করা যায় , তবে গল্পটা অসম্পূর্ণ থেকে যায় না । আমাদের গল্প পূর্ব নির্ধারিত । আমি লাল বেনারসি, চন্দনের ফোঁটা, রজনীগন্ধার মালা, এক মাথার সিঁদুর পরে যাব ওদের বাড়ি । সেই কবে থেকেই নির্দিষ্ট হয়ে রয়েছে সে কথা। যেন আমার জন্মের আগে থেকে । যেন আগের কতগুলো জন্ম ধরে । তাই এই জন্মে নতুন মনে হয় না । কিন্তু সেই সব গল্পের পসরা সাজিয়ে সেখানে গিয়ে দেখি, সে নেই !
কয়েকটা দিন শুধু চোখ , মন , পঞ্চ ইন্দ্রিয় সবই পড়ে থাকত ম্যানেজারের বাংলোর দিকে । যদি সে থাকে সেখানে। অসীম ভয় তখন বাসা বেধেছে আমার মধ্যে । তার সাথে সংকোচ। কাউকে জিজ্ঞাসা করতে পারিনি কিছু। প্রত্যেকে, এমনকি বান্টিও আমার সামনে সোনুদার কোন প্রসঙ্গ উত্থাপন করত না । এইরকম করে সপ্তাহ খানেক প্রায় কেটে গেল । আমিও নিশ্চিত ভাবে বুঝলাম , সোনুদা নেই ।
তারপর একদিন লজ্জা-শরম, সংকোচ , সবকিছুর মাথা খেয়ে বান্টিকে জিজ্ঞাসা করে বসলাম,
— সোনুদা কি চলে গেছে রে?
বান্টি কয়েক সেকেন্ড আমার চোখের দিকে তাকিয়ে রইল ।
তারপর বলল, মা যদি জানতে পারে তুই আবার সোনুদার কথা জানতে চাইছিস, সাংঘাতিক কান্ড হবে কিন্তু। ওর কথা বলিস না , থাক্ ।
চোখের ভেতরে তখন আমার বাষ্পের নদী ফেটে বেরিয়ে আসতে চাইছে । কোনরকমে একটা ঢোঁক গিলে কান্নাটাকে ঠেলে-গুঁজে ফেরত পাঠিয়ে, ওর হাতটা চেপে ধরলাম দুই হাতে।
— প্লিজ ! আর কখনো জিজ্ঞাসা করবো না । তুই শুধু একবার বলে দে আমায়, সোনুদা কি নেই এখানে ? ও কি আর আসবে না?
যেন ঘরগুলোর দেওয়ালেরও কান আছে, এমন করে চারিদিকে ঘাড় ঘুরিয়ে দেখে নিয়ে মুখ নামিয়ে প্রায় ফিসফিসিয়ে বান্টি বলল, সোনুদার প্রজেক্ট এর কাজ শেষ হয়ে গেছে । ও ফিরে গেছে । তবে আসবে আর একবার। দু’দিন পরেই আসবে।
তারপর হরর স্টোরির ট্রেলার শোনানোর মত করে বলল, খবরদার কিন্তু তরুদিদি! ওর কি যেন একটা ইম্পর্টেন্ট রিসার্চের ডেটা এখান থেকে কালেক্ট করার আছে , তাই জন্য আসছে । বোধহয় ওয়ান উইক থাকবে, তারপর একেবারে চলে যাবে। এখানে ওর কিছু জিনিসপত্র রয়েছে, সেগুলোও নিয়ে যাবে । তুই কিন্তু ভুলেও এক বারও ওর সঙ্গে দেখা করিস না। কথা বলিস না। ওই দিকে যাস না। তাহলে কিন্তু রক্ষে থাকবে না। আর মা যে তোকে কি করবে, জানি না ।
আমি আর কিছু বললাম না । বান্টির হাতটা ছেড়ে দিয়ে ওকে বললাম, তুই যা!
ও আমার দিকে বারকয়েক সন্দেহজনক ভাবে তাকিয়ে বেরিয়ে গেল ঘর থেকে ।
আমার গাল দুটো নোনা জলের খামখেয়ালী নদী, উপনদী-শাখানদীতে ভরে গেছে । এলোমেলো, বাঁধভাঙ্গা , প্লাবিত ! আমি আস্তে আস্তে বসে পড়লাম খাটের ওপর । মাথায় রন্ধ্রে রন্ধ্রে একটাই কথা প্রতিধ্বনিত হতে থাকলো — ‘ ও ফিরে গেছে, তবে আসবে আর দুদিন পরে-‘
দুদিন পরে এল ও । আমি চোখে না দেখেও কিভাবে যেন দেখতে পেতাম, জানতে পারতাম । ও এলো এ বাড়িতে । অজিত কাকুর সঙ্গে দেখা করে গেল । কাকিমার সাথে কথা বলল। বান্টির সঙ্গেও । শুধু আমি বাদ পড়লাম। চোখের দেখাও দেখা হলো না । আমার ওপর যা বিধিনিষেধ রয়েছে , ওর ওপর কিন্তু নেই। ও স্বচ্ছন্দ, সচল । আর আমি যেন হাত-পা বাঁধা অবস্থায় পড়ে রয়েছি ।
একদিন কাটলো । দুদিন কাটলো । ও নাকি মাত্র সাত দিন থাকবে। তিনদিনের দিন কলেজ থেকে পরীক্ষা দিয়ে ফিরছি, ও তখন কিছু একটা ফিল্ডওয়ার্ক করছিল। এক সেকেন্ডকে হাজার ভগ্নাংশে ভেঙে ফেললে যে মুহূর্তটা দাঁড়ায়, সেই এক মুহুর্ত আমার সঙ্গে ওর চোখাচোখি হলো ! আমার দেহের সমস্ত রক্ত হৃদপিণ্ডে গিয়ে ভিড় করলো। আমি ঘরে ফিরে এসে জড় পদার্থের মত শুয়ে পড়লাম বিছানায় । এমনি করেই কি সাতটা দিন পেরিয়ে যাবে আমার জীবন থেকে? সোনুদা আর আমি এক জায়গাতেই রয়েছি। আমার কাছে যে প্রতিটা মুহূর্ত মহার্ঘ । সেখানে তিনটে দিন এইভাবে কেটে গেল ? আরো চারটে দিনও কেটে যাবে ! সোনুদার সঙ্গে আমি একটাও কথা বলতে পারব না ! একবারও কাছে যেতে পারবো না ! ও আমায় আর একবারও ছুঁয়ে দেবে না ! তারপর বিরাট এই পৃথিবীতে কোথায় খুজবো আমি ওকে ? কি করে খুঁজবো? আমার যে সোনুদার ব্যাপারে মনের মধ্যে কয়েক কোটি প্রশ্ন থাকা সত্ত্বেও একটাও আমি মুখ ফুটে কাউকে করতে পারিনা। তাহলে এই কোটি কোটি মানুষের ভিড়ে যেদিন ও হারিয়ে যাবে, তারপরে আমি ওকে কি করে খুঁজে পাবো ?
ঈশ্বর বোধহয় আমার কথা শুনলেন । তখন তাই মনে হয়েছিল । ঈশ্বর আছেন । তিনি আমার মত একটা তুচ্ছ মেয়ের মনের খবর রাখেন । না হলে এমন আশ্চর্য হয় কি করে? পরের দিন বেলার দিকে ভামিনী কাকিমা আর অজিত কাকু দুজনেই বেরিয়ে গেলেন। ভামিনী কাকিমার ভাইয়ের মেজর একটা অ্যাক্সিডেন্ট হয়ে গেছে। মাথায় চোট । লাইফ রিস্ক । কাকিমা পাগলের মতো কাঁদতে কাঁদতে বেরোলেন ঘর থেকে । এমনকি বেরোনোর সময় আমাকে শাসিয়ে যাওয়ার কথাও মনে থাকল না । মানুষের যে কত রকম বিচিত্র সময় আসে এই জীবনে ! একসময়ের ভীষণ প্রয়োজনীয় একটা কাজ, আরেক সময়ে গিয়ে প্রহসন ছাড়া আর কিছুই মনে হয়না। আর আমি ? একজন মানুষের এত বড় একটা অ্যাক্সিডেন্টে খুশি হলাম। কারণ, কাকু আর কাকিমা বাড়ি থেকে চলে গেলেন। মানুষ ভালবাসলে বড় স্বার্থপর হয়ে যায় । বান্টির সামনেই টেন্থ স্ট্যান্ডার্ড এর বোর্ড এক্সাম ছিল । ও কাকু কাকিমার সাথে যায়নি। রয়েই গেল । আর দুজন মেয়ের টেম্পোরারি গার্জেন হয়ে কয়েকটা দিনের জন্য এলেন অজিত কাকুর ছোটভাই , বান্টির ছোটকা ।
প্রথমে মনে হল যেন , বহুযুগ ধরে আমি এমন একটা গুহায় আটকা পড়ে গেছিলাম যেখান থেকে বেরোনোর পথ খুঁজে পাওয়া তো দূর, সামান্য আলোর রশ্মিটুকুও দেখতে পাওয়ার কোন আশা ছিল না । সেখান থেকে হঠাৎ করে রাজপথে এসে পড়লাম । কাকু নেই , কাকিমা নেই , সোনু দা আছে ! তারপরে বুঝতে পারলাম , রাজপথে এসে পড়লেও আমার পক্ষে এক পা’ও চলা সম্ভব নয়। কারণ আমার পা তখন পিছন থেকে শিকল দিয়ে বাঁধা । সেই শিকল জড়ানো রয়েছে লজ্জা , সংকোচ আর গ্লানিবোধের পাহাড়ে । সেই পাহাড় টেনে নিয়ে যাওয়া আমার পক্ষে অসম্ভব !
তারপর একটা সময় বুঝলাম, আসলে জগতে অসম্ভব বলে কিছু নেই । তেমন পরিস্থিতিতে পড়লে অতি বড় সাধুও চোর হয় , অতি বড় ভীরুও ঘুরে দাঁড়ায় , অতি বড় নিরীহ মানুষও খুন করে ফেলে ! আমিও দুপায়ে পাহাড় টানতে টানতে ম্যানেজারের বাংলোয় গিয়ে হাজির হয়েছিলাম । সোনুদার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়েছিলাম। ও দরজা খুলে আমাকে দেখেই দড়াম্ করে দরজাটা বন্ধ করে দিয়েছিল। আমার মুখের ওপর। আবার গিয়েছিলাম । আবারও তাই করেছিল । কেন এরকম করছে , আমাকে কি বলার আছে, সেটা সোজাসোজি বলুক । প্রচন্ড মরুভূমিতে পথ হারানো পথিক ঠান্ডা পানীয় জল যেভাবে চাইতে পারে , আমি ঠিক সেইভাবে নিজের ঘরের জানলায় ঠায় বসে থাকতাম ওকে একটিবার দেখার আশায়। ছ’দিনের দিন দেখলাম ও কিছু ফিল্ড ওয়ার্ক করবে বলে বোধহয় বেরিয়েছে । আমি একেবারে বাঘের তাড়া খাওয়া হরিণের মত ছুটে গেলাম ওর কাছে ।
বললাম , আমার সাথে কথা বলছো না কেন ? একটিবার কথা বলো আমার সঙ্গে ! আমি যে কিছুই বুঝতে পারছিনা ।
ও কোন উত্তর না দিয়ে পিছন ফিরে হাঁটতে আরম্ভ করল । আমিও যাচ্ছি ওর পেছন পেছন। ও গতি বাড়ালো । আমিও বাড়ালাম ।
এক সময় বাংলোর ভেতর ঢুকে সদর দরজাটা বন্ধ করে দিতে যাচ্ছে , আমি কপাটটা দু’হাতে ধরে বললাম ,
–প্লিজ আমায় বলো, কথা বলছো না কেন আমার সঙ্গে ?
না বলেনি । কিছুতেই কথা বলেনি আমার সঙ্গে সোনু দা ।
সাতটা দিন কেটে গেল। সেদিন ওর সমস্ত লাগেজ , বইপত্র, ফাইনালি গোছগাছ করে গাড়িতে তোলা হচ্ছে। এবার বেরিয়ে যাবে । আমি নিজের মাথায় পৃথিবীর সব গ্লানি আর অপরাধবোধ তুলে নিয়ে চোরের মত গুটিগুটি পায়ে গিয়ে দাঁড়িয়েছিলাম রাস্তার ধারের সেই সোনাঝুরি গাছটার নিচে । আমার চোখে তখন উন্মাদের দৃষ্টি ! মনে তখন মোজেইক প্যাটার্নের ছবির ওপর আলকাতরা ল্যাপা ! বুকে তখন একশ জালিয়ানওয়ালাবাগ ! আর আমি নিজে তখন একজন ভিখারি !
সোনুদার সাদা গাড়িটা যখন রাস্তায় একরাশ ধুলোর মেঘ বুনে চলে গেল আমার চোখের সামনে দিয়ে , তখন আমি সেই ধুলোর কুয়াশার ওপারে দাঁড়িয়ে ভিক্ষা চেয়েছিলাম – একটা কথা , একটা শব্দ , একটা চিহ্ন , একটা কিছু.. ! কি ভিক্ষা চেয়েছিলাম জানিনা । হয়তো সবটাই । হয়তো কিছুই না । শুধু ভিখারিনী হয়ে শতচ্ছিন্ন আঁচলটা মেলে দাঁড়িয়েছিলাম । ফিরে এসেছিলাম শাড়ির খাঁজে খাঁজে লেপ্টে থাকা ধুলোর আঁকিবুকি কথা নিয়ে ।
সেই শেষ দেখা ! বহুযুগের বাঁধানো ফ্রেমের মত গাড়ির উইন্ডো সিটে সোনুদার সাইড ফেসটা । খোঁচা খোঁচা দাড়ি, চোখে স্মোকি সানগ্লাস । সাইড ফেসটাই বাঁধানো আছে । ও আমার দিকে তাকায়নি তো একবারও । আমি ওখানে দাঁড়িয়ে আছি বুঝেই আরো তাকায়নি । আমি জানতাম সে কথা । সেই অন্তিম বাঁধানো ছবিই রয়ে গেছে আমার কাছে আজও । ছবির পিছনে লিখে রেখেছি অজস্র প্রশ্ন । হিমোগ্লোবিনের গুঁড়ো দিয়ে !
ক্রমশ..
©®copyright protected
এক-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/978775899579141/
দুই-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/980083989448332/
তিন-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/981378992652165/
চার-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/983543179102413/
পাঁচ-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/986002805523117/
ছয়-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/987404668716264/
সাত-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/989485091841555/
আট-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/991102821679782/
নয়-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/993099491480115/
দশ-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/994279738028757/
এগারো-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/995634347893296/
বারো-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/998832147573516/
তেরো-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/1000733104050087/
চোদ্দো-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/1002718000518264/
পনেরো-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/1004549847001746/
ষোল-
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=1007202950069769&id=248680819255323
সতেরো-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/1009015169888547/
আঠারো-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/1011129543010443/
উনিশ-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/1013312572792140/
কুড়ি-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/1015118655944865/
একুশ-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/1017814589008605/
বাইশ-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/1019125995544131/
তেইশ-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/1021798458610218/
চব্বিশ-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/1024967944959936/
পঁচিশ-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/1031476470975750/
ছাব্বিশ-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/1034632350660162/
সাতাশ-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/1038754843581246/
আঠাশ-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/1046967802759950/
উনত্রিশ-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/1048831039240293/
ত্রিশ-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/1051696202287110/
একত্রিশ-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/1053606998762697/
বত্রিশ-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/1060747584715305/
তেত্রিশ-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/1064517157671681/
চৌত্রিশ-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/1073169890139741/
পঁয়ত্রিশ-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/1075303099926420/
ছত্রিশ-
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=1077175089739221&id=248680819255323
সাঁইত্রিশ-
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=426810745740602&id=100052350402509
আটত্রিশ-
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=431076141980729&id=100052350402509
উনচল্লিশ-
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=435617384859938&id=100052350402509
ছবি : সংগৃহীত