#হলদে_প্রজাপতি
(প্রাপ্তমনস্কদের জন্য )
— অমৃতা শংকর ব্যানার্জি ©®
সাঁইত্রিশ
( আগের অধ্যায়গুলোর লিংক অধ্যায়ের শেষে দেওয়া হল)
আজ শনিবার । পাক্কা এক সপ্তাহ হয়ে গেল ইন্দ্রাশিষ বাবুর কোন খবর নেই । দেখা তো করতে আসেনই নি । একটা ফোন করারও সময় পাননি । বুঝলাম না হয় কোন কারনে প্রপোজালটা তিনি একসেপ্ট করতে পারলেন না । মিনিমাম ভদ্রতা বলতে কিছু একটা থাকে তো । ফোন করে জানানোটা আবশ্যক ছিল । সম্পূর্ণ অপরিচিত দুটি পরিবারের মধ্যে যখন ম্যারিটাল ইস্যু নিয়ে কোনো কথাবার্তা হয় , তখনো নেগেটিভ কিছু হলেও সেটা জানিয়ে দেওয়াই ভদ্রতা । আর সেখানে , ওনার সঙ্গে , পাতার সঙ্গে , আমার প্রায় নিজের পরিবারের মতোই সম্পর্ক হয়ে গেছিল । তাই হয়তো একটু অন্যরকম ভাবতে শুরু করেছিলাম আমি । রঙিন প্রজাপতিগুলো আবার ডানা মেলে মনের ইতিউতি ঘুরে বেড়াচ্ছিল । বুড়ো বয়সে এসে ভীমরতি ধরলে এমনই হয় । শখ হলো তো হল , চল্লিশ পার করে হলো ! ছি ছি ! রাগে গা রি-রি করছে আমার । উনি না হয় ফোন করেননি । আমি একটা ফোন করব । অবশ্যই করবো । চোখা চোখা অনেকগুলো বাক্য সাজিয়ে গুছিয়ে রেখেছি । মুখের ওপরে যতক্ষণ না সবগুলো শোনাতে পারছি, ততক্ষণ আমার সারারাত এপাশ-ওপাশ করেই কাটবে । মাথার মধ্যে একগাদা গুবরে পোকা কিলবিল করছে। যতক্ষণ না সেগুলোকে সব বার করে ফেলে মাথাটাকে পরিষ্কার করতে পারছি , ততক্ষণ আমার শান্তি নেই । তবে পাতার জন্য মন কেমন করে । সত্যি করে মেয়েটার ওপর বড় মায়া পড়েছিল । ও কি আর আমার কাছে আসতে চায় না ? তা নিশ্চয়ই সম্ভব নয় । নিশ্চয়ই চায় । ওকে বারণ করা হয়েছে । বাড়ি থেকে আসতে দেওয়া হয়নি । বেচারা আবার হয়তো আগেকার মতো সৃষ্টিছাড়া জীবন পাবে । যাক গে , আমার এসব ভেবে কাজ কি ? যার জীবন, সে বুঝে নেবে । তার বাবা বুঝবে । আমার কি ? আমি কে ?
আজকে যে বান্টিদের বাড়িতে যাওয়ার কথা , রাতে ফিরতে নাও পারি , বান্টিরা এখানেই আছে , ওদের সঙ্গেই দেখা করতে যাচ্ছি, বাবা-মাকে সবটা জানিয়েই একটু সকাল করে বেরিয়ে এসেছিলাম অফিসে । তাড়াতাড়ি করে কাজ গুছিয়ে ফেলেছি । যেতেই যখন হবে , তখন আর ফালতু দেরি করে লাভ কি ? এখন বেলা আড়াইটে বাজে । আমি অলরেডি বান্টিকে ফোন করে গাড়ি পাঠিয়ে দিতে বলেছি।
যখন ‘রায় ভিলা’য় পৌঁছলাম, তখন বেলা সাড়ে তিনটে। মানুষের ভাগ্য যে কোন চোরাইপথে কোথা দিয়ে কাকে কখন কোথায় নিয়ে গিয়ে ফেলবে , তা কেউ জানে না । আমি আবার আজ প্রায় ‘বিশ সাল বাদ’ রায় ভিলায় পা রাখলাম। বান্টিটা খবর পেয়েই কোত্থেকে ছুটে এসে সটান আমায় জড়িয়ে ধরল। ধরেই রইলো প্রায় এক মিনিট । তারপর ছেড়ে দিয়ে ভালো করে তাকিয়ে দেখল আমায় পায়ের চুল থেকে মাথার নখ পর্যন্ত । যেন স্ক্যান করছে ।
বলল, চুল কমে গেছে , মোটা হয়েছিস , চেহারার মধ্যে বেশ একটা ম্যানেজার-ম্যানেজার ভাব এসেছে । আর বাকি কোথায় কি হয়েছে এখনই বলতে পারব না। কিছুক্ষন কথা বলি । হাল-হকিকত দেখি। তারপর বলছি।
হেসে বললাম, আর বুড়ো হয়েছি যে, সেটা বললি নাতো ?
— ওমা ! তুই জানিস না? বুড়ো হয় সব সময় মিসেস’রা । মিস’রা কখনো বুড়ো হয় না । এভারগ্রীন থাকে । তুইই বল, তোর কি এখনি একটা চটপট প্রেম করে ফেলতে ইচ্ছে হয় না ? বল তুই-
— চটপট করতে ইচ্ছে করলেই প্রেমিক পাওয়া যায় না । তার জন্য কাঁচা বয়স দরকার হয় । আর আমাদের মত ঝড়তি পড়তি, যাদের বিয়ে হয়নি, তাদের জন্য রেডিমেড লাভার পাওয়া যায় না ।
— বিয়ে হয়নি , না করিস নি ?
— এই তুইই যা বললি আমি নাকি বিয়ে করিনি । রাজ্য সুদ্ধু সবাই জানে, আমার বিয়ে হয়নি । মেয়েদের বিয়ে হয় না। করা না করার ব্যাপারটা সমাজ মোট্টে তোয়াক্কা করে না ।
— এসব নিয়ে তোর সঙ্গে আমি খুব ঝগড়া করবো । দাঁড়া না । এখন চল, মায়ের সঙ্গে দেখা করবি আয়। মা খুব আনন্দ করছিল শুনে যে তুই আসবি।
কথাটা শুনে আশ্চর্য হলাম । আমি আসবো একথা শুনে ভামিনী কাকিমা আনন্দ পেয়েছেন ? হতে পারে । হতেই পারে । না হওয়ার কি আছে ? পৃথিবীর সবকিছুই পরিবর্তনশীল । সেখানে, একজন খুঁতখুঁতে মানুষ, যে তার কিছু ম্যানিয়ার কারণে একটা গ্রামের মেয়েকে ঠিক পছন্দ করত না, আজকে এত বছর পর তার মানসিকতার বা দৃষ্টিভঙ্গির কি কোন পরিবর্তন হয়ে থাকতে পারে না ? আমিও তো পরিবর্তিত ভার্শন। আর কি সেই গ্রামের মেয়েটা আছি ? আমার গা শুঁকে কেউ কি আর সেই হারিয়ে যাওয়া সোঁদা সোঁদা মেঠো গন্ধটা পাবে ? সেই গন্ধের সঙ্গে হারিয়ে গেছে আমার শৈশবও । অনেক শৈশবই এইরকম মাজা-ঘষা পালিশের আড়ালে হারিয়ে যায় ।
— আয় তরু দি-
বলে ও সামনে হেঁটে চলল। আমি ওর পেছন পেছন। বাড়ির ভেতরটা চোখ বুলিয়ে নিচ্ছিলাম । বাইরের যতটা জরাজীর্ণ অবস্থা, ভেতরটা ততটা নয়। এই বাড়ির প্রতিটা কোণ আমার ভীষণ পরিচিত। বাড়ি যদি পুরনো হয়ে থাকে, আমিই বা কি কম পুরনো হয়েছি? পুরনো বাড়িতে পুরনো মানুষগুলো, সাথে অবশ্য কিছু নতুন। দেখা যাক নতুন পুরনো মিলিয়ে কার সঙ্গে কতখানি সমঝোতায় আসা যায়।
বান্টির চেহারার মধ্যে আজও বেশ একটা ছেলেমানুষীর ভাব রয়েছে । সেই ছিপছিপে গড়ন, সেই কল কলে উপস্থিতি । দিব্যি কলেজ ইউনিভার্সিটি’তে পড়া মেয়ে বলে চালিয়ে দেওয়া যায়। চুলগুলো বব’কাট, ওয়াইন রেড কালার করা । পরনে একটা অলিভ কালারের লং স্কার্ট। সাথে ধবধবে সাদা সফট কটনের স্লিভলেস টপ। দুই ছেলে-মেয়ের মা যে , চেহারায় তার কোনো প্রতিফলন নেই । গাম্ভীর্য নেই। দেখে বোঝা যায়, সে আনন্দে রয়েছে, সুখে রয়েছে । তা ভালো । অবশ্য লোকের ভালোয় আমার ভালো কি মন্দ বুঝিনা । কেউ সুখে আছে দেখলে আমার নিজের অ’সুখ’টা প্রকট হয়ে পড়ে নিজের কাছেই। আচ্ছা, আমার এই অ’সুখ’ কি আমার জীবনে নিজের ইনভাইট করে নিয়ে আসা ? আমি সঠিক সময়ে বিয়ে করে সংসারী হলে কি আজকে সুখী বান্টিকে দেখে সূক্ষ্ম যে মানসিক অশান্তি আমার হচ্ছে, তা হতো না ? তবে কি বিয়ে করার মধ্যেই কোন মোক্ষলাভ ছিল? নিশ্চয়ই নয় । সমাজ যে মেয়েদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখায় বিয়ে করার মধ্যেই তাদের মোক্ষলাভ , এ সমাজের দৃষ্টিভঙ্গির ভুল । একটা ভুল বিয়ে করে শুধু নিজের ম্যারিটাল স্ট্যাটাস চেঞ্জ করার কোন মানেই হয় না । এই যে আমি এখন নিজের পছন্দমত একটা জায়গায় পছন্দমত চাকরি করতে পারছি , সেটা কি একটা ভুল বিয়ে করে ফেললে সম্ভব হতো? নিশ্চয়ই নয় ।
সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতেই দোতলায় উঠলাম । যে ঘরটায় আগে বান্টি থাকতো , সেখানেই ও ঢুকলো। আমিও ওর পেছনে পেছনে। ভামিনী কাকিমা খাটের ওপর আধশোয়া হয়ে বসে ছিলেন। পরনে একটা সুতির ঘরে পড়ার হাউসকোট । মানুষটার শরীরে পরতে পরতে বয়সের ছাপ । বোধ হয়, যা বয়স তার চেয়ে একটু বেশিই। শরীর মেদাল, থলথলে হয়ে উঠেছে । দেখে যা বুঝলাম, বিশেষ কিছু অ্যাক্টিভিটি আজকাল হয়ত আর ওনার দ্বারা সম্ভব হয় না। আমাকে দেখে মুখে একটা খুশির হাসি ফুটে উঠল ।
বিছানা থেকে নেমে দাঁড়ালেন। সহজ সুন্দর হেসে বললেন , ওমা ! এসেছিস তরু ? কখন থেকে ভাবছি আমি, তুই কখন আসবি।
আমি বেশ অবাক হলাম । তিনটে বছর যখন কাছে থেকেছি , তখন কোনদিন উনি এইরকম সহজ-স্বাভাবিক সুরে সম্বোধন করেন নি । কথাবার্তা কাঠখোট্টা ছিল । ‘তুই’ ‘তরু’ বলে আপন করে নেওয়ার কোন প্রশ্নই নেই । বুঝলাম সময় নিজের নিয়মে অনেক কিছু পরিবর্তন করে নেয় । আমি এগিয়ে গিয়ে পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করলাম।
— থাক থাক । কত বছর পর দেখছি তোকে । কি ভাল লাগছে ।
ভালো লাগলো ? আজ আমাকে দেখে ভামিনী কাকিমার ভালো লাগলো? যার জন্য একসময় তিতিবিরক্ত হয়ে উঠেছিলেন , একটা একটা করে দিন গুনেছেন কবে আমার কলেজের সেশন শেষ হবে, আপদ বিদায় হবে, আজকে তাকে দেখে ভালো লাগছে ? বিরক্ত হওয়ার মতো সঙ্গত কারণ ছিল বটে । তবে আজ কেন যে ভালো লাগছে, সেটা বুঝতে পারলাম না । হয়তো নিজের ভরা সংসার, নিজের আধিপত্য, নিজের রুপ-যৌবন-প্রতিপত্তি ভরা সময়টার প্রতিভূ হয়ে সামনে দাঁড়িয়ে ছিলাম আমি। মানুষ তার ফেলে আসা ‘আমি’কে দেখতে খুব পছন্দ করে, একটা নির্দিষ্ট বয়স পেরিয়ে আসার পর । হয়তো তাই, হয়তো তা নয় । অন্য কিছুও হতে পারে। কাকিমা অনেকক্ষণ গল্প করলেন আমার সঙ্গে । খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে বাবা-মায়ের খবর নিলেন । আমি কি করছি এখন , ডিটেইলস সব জানলেন। আমার নিজের পায়ে দাঁড়ানোর পেছনে যে ওনাদের অবদান রয়েছে , সেটাও বার দুই তিন নক করলেন ইন্ডিরেক্টলি । তবে আমার কাজকে এপ্রিশিয়েট করলেন খুব । আমি যে এখানে সাহস করে চাকরি নিয়ে চলে আসতে পেরেছি, বাবা-মাকেও নিয়ে এসে রেখেছি, সবটাই ।
বান্টি কিছুক্ষণ পরে ওর ছেলে-মেয়ে দুটোকে নিয়ে এলো । ফরসা টুকটুকে তুলোর পুতুলের মতো দুই ভাইবোন। মেয়ে বড়, ছেলে ছোট । কিছুক্ষণ তারা আমার সঙ্গে বিশেষ কোনো কথা বলল না । তারপর যখন ঘন্টা খানেক সময় কাটলো , তখন আস্তে আস্তে সহজ হয়ে এলো । ছোট ছেলেদের নিয়ম তাই । নতুন মানুষের সঙ্গে চট করে মিশে যেতে পারে না , তবে একবার মিশে গেলে তখন আর কাছ ছাড়া করতে চায় না । ওর মেয়েটা মাঝে মাঝেই আমার কোলের কাছে ঘেঁষে আসছিল । একটা দীর্ঘশ্বাস পড়লো আমার । হঠাৎই বুঝতে পারলাম, এই দীর্ঘশ্বাসের কারণ কি । পাতার কথা মনে পড়ছে । মেয়েটা কেমন যেন কাছে আসতে আসতে এক ঝটকায় দূরে সরে গেল ।
সন্ধ্যাবেলা সারাক্ষণ ধরে বসে বসে আমরা অনেক গল্প করলাম । এখনকার গল্প , পুরোনো দিনের গল্প । ওর ছানাপোনা দুটো কাছেই ঘুরঘুর করছিল। ওদের বক্তব্য , মিমি যেও না । স্টে হিয়ার উইথ আস ।
ওদের দুজনেরই ইন্ডিয়াতে এসে খুব ভালো লেগেছে । মন খারাপ এই জন্য যে , কিছুদিন পরেই আবার ফিরে যেতে হবে। বান্টির হাজবেন্ড সুপর্ণ, কিছু পার্সোনাল কাজে নিজের বাড়িতে গেছে। ওরা এখানে এই মাসটা রয়েছে । সামনের পুজোর মাসে বান্টি ওর শ্বশুরবাড়ি চলে যাবে । কলকাতায় , লেকটাউন ।
তবে কি না শুধু গল্প করলে তো আর পেট ভরে না । পেট ভরানোর জন্য অবশ্য প্রচুর আয়োজন ছিল। সন্ধ্যেবেলাতেই তিন-চার রকমের স্নাক্স, পকোড়া , স্যান্ডউইচ । অত আবার কেউ খেতে পারে ! আর রাতে ডিনারে তো একদম এলাহি কান্ড । প্রণ কাটলেট , লাচ্ছা পরোটা, মাটন কষা, কাশ্মীরি পোলাও, চিকেন রেজালা , চিংড়ির মালাইকারি, ভেজ আইটেম আরো গোটা দুই তিন , স্পেশাল মিষ্টি তিন-চার রকমের । বিয়েবাড়ির আয়োজন। খাবার টেবিলে বসে কোথা থেকে আরম্ভ করব , কতটুকু খেতে পারবো, কিছুই বুঝতে পারছিলাম না । মোদ্দাকথা টোটালি কনফিউজড।
আমার অবস্থা দেখে বান্টি হেসে বলল, টেনশন করিস না তরুদি । বুফে সিস্টেম । তুলে তুলে নিয়ে যতটুকু পারবি খা । কেউ তোকে জবরদস্তি করবে না বেশি খাওয়ার জন্য ।
প্রথমে প্রন কাটলেট একটা তুললাম প্লেটে । প্লেটের পাশে যথারীতি টিস্যু পেপারের ওপর স্পুন, ফর্ক , নাইফ সবকিছুই রাখা রয়েছে। খাওয়া-দাওয়ার সরঞ্জামপাতি ।
সেগুলোর দিকে আড়চোখে তাকাচ্ছি দেখে বলল, তুই হাতে করে খা । যাতে কমফর্টেবল সেভাবে খাবি। তুই স্টার্ট কর। তোর ওনারে আমরা সবাই আজ হাতে করে খাব ।
তা ভালো । যতটুকু যা পারলাম খেলাম । অবশ্যই হাতে করে, তৃপ্তি করে খেয়েছি । রাতে শোয়ার ব্যবস্থা হয়েছে দেখলাম, নিচে যে ঘরটায় ভামিনী কাকিমা আর কাকু শুতেন , সেই ঘরে । তিন বছর এখানে থাকতে এই ঘরে তিনবারও ঢুকেছি কিনা সন্দেহ । আজকে একেবারে একটা গোটা রাত ঘুমাবো, ভাবা যায় ! আমাকে শুতে বলে ও বেরিয়ে গেল । কিছুক্ষণ পরে , বোধহয় ছেলেমেয়ের শোয়ার ব্যবস্থা তদারকি করে, আরো কিছু টুকটাক কাজ সেরে ফিরে এলো পনেরো-কুড়ি মিনিটের মধ্যে। প্রায় সাড়ে এগারোটা বাজে এখন । ঘরের মধ্যে ঢুকে এসিটা অন করে টেম্পারেচার একেবারে এইটটিন করে দিল ।
— এত কমালি কেন রে ? আমার তো এসি দরকারই হয় না । ইনফ্যাক্ট এখানে টেম্পারেচার এমনিতেই খুব শুদিং ।
— প্লিজ দি, ডোন্ট সে দ্যাট, এসিটা এখন আমায় অফ করে দিতে হবে । আমি পারবো না । এইখানে অ্যাডজাস্ট করতে পারি না একদম ।
— কিন্তু , শীত করবে তো রে !
— ওয়েট !
বলে খাটের বক্স থেকে দুটো ব্ল্যাঙ্কেট বার করে বিছানার ওপর রাখল ।
বলল, জাস্ট এই কটা দিন এখানে স্টে করার জন্য এসিটা লাগাতে হয়েছে । আমি একদম পারিনা এসি অন না করে শুতে । না হলে, তোর অসুবিধা হচ্ছে, আমি চালাতাম না । তাহলে আমাকে সারা রাতই এপাশ ওপাশ করতে হবে।
ঢাকা নিয়ে শুয়ে দেখলাম, কোনো অসুবিধা হচ্ছে না ।
বললাম , ঠিক আছে, তুই এসে শো ।
ও ওর ব্ল্যাঙ্কেটটা খুলে নিয়ে সুরুৎ করে আহ্লাদী মুখে বিড়ালের গায়ের মতো মোলায়েম আদুরে ব্ল্যাঙ্কেটের নিচে সেঁদিয়ে গেল । সী গ্রীন কালারের কম্ফর্টেবল কটনের হাফ কাফতানের গলার ওপর দিয়ে ওর সাদা রাজহংসীর ডানার ভাঁজের মতো ক্লিভেজ উঁকি দিচ্ছিল । কি সুন্দর লাগছে ওকে দেখতে । ছিমছাম, সুন্দরী, মড, সেক্সি । ওর বর নিশ্চয়ই যখন ওর শরীরটাকে নিয়ে খেলা করে, মাখনের মত গলে যায় সেটা । নিশ্চয়ই ওদের দুজনের মধ্যে ভীষণ রকমের রোমান্টিক একটা যৌন সম্পর্ক রয়েছে ।
ও বলল , তরু দি দ্যাখ্ , তোর লেফট সাইডে তাকা। হ্যাঁ । ওইটাই বেডসাইড সুইচ । অফ করে দে । নাইট ল্যাম্পটা আমি অন করে এসেছি ।
সুইচটা অফ করে দিলাম । টিউবের ফ্যাটফ্যাটে সাদা আলোটা বন্ধ হয়ে, দক্ষিণের কোণে রাখা সুদৃশ্য টেবিল ল্যাম্পের মোলায়েম লালচে আলোয় ঘরটা ভরে গেল। বান্টি কনুইয়ের ওপর ভর দিয়ে আধশোয়া হয়ে উঠে বসলো।
বাঁ হাতের তালুর ওপর মাথাটা হেলিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বলল, ইসস্ ! এ লং জার্নি ইন বিটুইন। বল ? সেএএই তুই আর আমি একসাথে শুতাম, কত্ত গল্প করতাম। কি সুন্দর ছিল দিনগুলো ।
আমি ‘হ্যাঁ’ ‘না’ কিছুই বললাম না। দিনগুলো সত্যিই সুন্দর ছিল কিনা, তা আমি জানিনা। অনেক কথা বলছিল ও । আমি কখনো ‘হ্যাঁ’ , কখনো ‘না’এ কাজ সারছিলাম। দেখছিলাম, নরম আলোয় ওর চিবুক কোনো এক রূপকথার দেশের লালচে শামুকের খোলের মতো হেলেদুলে কথার তালে তালে উঠছে নামছে । ঈশ্বর এ পৃথিবীতে কাউকে কাউকে কত সুন্দর করে যত্ন ভরেই না তৈরী করেন , তাই না ? আমাদের মত হেঁজিপেঁজি মানুষজনের প্রতি জন্মের আগে থেকে ঈশ্বরই বিমুখ । মানুষের প্রতি তবে আর সে ভরসা রাখা কেন ?
এ কথা, সে কথা বলার পর হঠাৎ জিজ্ঞাসা করল , হ্যাঁ রে তরুদি, তুই বিয়ে করিস নি কেন বল্ তো-
— কেন আবার । ইচ্ছা করেনি ।
— আর ইউ সিরিয়াস? ইচ্ছা করেনি, নাকি শুধু একজনকেই বিয়ে করার ইচ্ছে ছিল ? তার সঙ্গে হয়নি বলে –
— ছাড়্ ওসব কথা ।
— না !
বলে ও উঠে বসলো । বলল , আই নো উ্য ওন্ট ফিল ভেরি ইজি ডিসকাসিং , স্টিল লেটস ডিসকাস আ বিট । একটা কথা তুই আমায় বল্ , তুই কি সোনুদার জন্যই আর বিয়ে করলি না ?
— আরে ছাড় না এসব কথা ।
— নো । লিসেন টু মি । আমি একচুয়ালি স্ট্রংলি অ্যাপ্রিসিয়েট করি একটা মেয়ের লাইফ লং আনম্যারেড থাকার ডিসিশনকে । অ্যাট দ্যাট পয়েন্ট, আই ডু এপ্রিসিয়েট উ্য টু । কিন্তু, যে কারণে তুই আনম্যারেড থাকলি, সেখানেই আমার আপত্তি। তুই কি না সোনুদার জন্য বিয়ে না করে বসে রইলি !
— এসব কথা কেন আজকে এত বছর পর-
— তুলছি । কারণ আমার তোর উপর খুব রাগ হচ্ছে । তখন সোনুদা তোর সঙ্গে যা করেছিল , তাতেই তোর বুঝে যাওয়া উচিত ছিল । তাও তুই বুঝিস নি। যাগ্গে ছাড়্ । শোন্ তাহলে আমার সঙ্গে সোনুদার , উমমমম্ ধর এই , বিফোর ফোর টু ফাইভ ইয়ার্স , একবার দেখা হয়েছিল । ও কি বলেছে জানিস্ ? অনেক কথা হয়েছে তোর ব্যাপারে । শোন্ তাহলে।
— আমি ওসব শুনতে চাই না।
— শুনতে তোকে হবে তরুদি। উ্য শ্যুড, উ্য মাস্ট এক্সপ্লোর দ্য ট্রুথ । কান্ট প্লে হাইড এন সিক উইথ দ্য হার্ডকোর ট্রুথ অফ লাইফ । উ্য হ্যাভ টু ফেস । কথাগুলো বলি শোন তোকে ।
ক্রমশ..
©®copyright protected
এক-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/978775899579141/
দুই-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/980083989448332/
তিন-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/981378992652165/
চার-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/983543179102413/
পাঁচ-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/986002805523117/
ছয়-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/987404668716264/
সাত-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/989485091841555/
আট-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/991102821679782/
নয়-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/993099491480115/
দশ-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/994279738028757/
এগারো-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/995634347893296/
বারো-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/998832147573516/
তেরো-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/1000733104050087/
চোদ্দো-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/1002718000518264/
পনেরো-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/1004549847001746/
ষোল-
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=1007202950069769&id=248680819255323
সতেরো-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/1009015169888547/
আঠারো-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/1011129543010443/
উনিশ-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/1013312572792140/
কুড়ি-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/1015118655944865/
একুশ-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/1017814589008605/
বাইশ-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/1019125995544131/
তেইশ-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/1021798458610218/
চব্বিশ-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/1024967944959936/
পঁচিশ-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/1031476470975750/
ছাব্বিশ-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/1034632350660162/
সাতাশ-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/1038754843581246/
আঠাশ-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/1046967802759950/
উনত্রিশ-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/1048831039240293/
ত্রিশ-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/1051696202287110/
একত্রিশ-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/1053606998762697/
বত্রিশ-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/1060747584715305/
তেত্রিশ-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/1064517157671681/
চৌত্রিশ-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/1073169890139741/
পঁয়ত্রিশ-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/1075303099926420/
ছত্রিশ-
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=1077175089739221&id=248680819255323
ছবি : সংগৃহীত