#হলদে_প্রজাপতি
(প্রাপ্তমনস্কদের জন্য )
— অমৃতা শংকর ব্যানার্জি ©®
ত্রিশ
( আগের অধ্যায়গুলোর লিংক অধ্যায়ের শেষে দেওয়া হল)
— Let me not to the marriage of true minds
Admit impediments. Love is not love
Which alters when it alteration finds,
Or bends with-
কিছুটা আবৃত্তি করার ভঙ্গিতে বলে হঠাৎ করেই মাঝপথে থেমে গিয়ে সোনুদা আমাকে বলেছিল, কি বলেছে জানো? ডু ইউ হ্যাভ এনি আইডিয়া এবাউট দা সনেট আ্যন্ড হু ইজ দ্য অথার অর পোয়েট, হোয়াট এভার ?
চুপ করে ছিলাম । আমার হাতের তেলো চিনচিনে অনুভূতিতে ঘেমে উঠছিলো । অনেকদিন অনেক ভাবে ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে প্রশ্ন করার পর সেদিন সরাসরি জানতে চেয়েছিলাম ওর কাছে, ও কবে বাড়িতে বলবে আমার কথা আর কবেই বা আমাকে বিয়ে করতে চায় । তার উত্তরে ও কিছুক্ষণ আমার মুখের দিকে তাকিয়েছিল । চোখের মধ্যে কি ছিল ঠিক জানি না, তবে মনে হয়েছিল হয়তো কিছুটা বিরক্তি মিশে আছে । এই প্রশ্ন ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে আমি নানাভাবে ওকে করি বলে ও কি বিরক্ত হয় ? কিন্তু আমারই বা কি করার আছে ? এ প্রশ্ন যে আমাকে করতেই হবে । আমার দেহে-মনে , শিরায়-শিরায় তখন বাড়ির গুরুজনদের, মায়ের শিখিয়ে দেওয়া সংস্কার – সতীত্বের সংস্কার। আমার যে সামাজিক বিয়ে হয়নি, তবুও যে আমি মস্ত বড় সতী; সেই কথাটা আমি নিজে নিজেকে বোঝাতাম। সত্যিই তো , মনে-প্রানে সমস্তটুকু দিয়ে একজনকে ভালোবাসা , তার প্রতি নিজেকে নিংড়ে দেওয়া , সমস্ত অনুভূতি দিয়ে তাকেই ভালোবাসা, বিয়ে করতে চাওয়া এবং ভবিষ্যতের যে সমস্ত ছবি আমার কল্পনায়, তাতেও যে আমি তারই ঘরনী । সমস্তটুকু উজার করে দিয়ে একজনের, শুধুমাত্র একজনের হয়ে থাকা- এই তো সতীত্বের কনসেপ্ট ।
আমার শরীরের উর্ধাঙ্গের আনাচে-কানাচে ওর আঙ্গুলের ছোঁয়া , বীণার তার ছোঁয়ার মতো ওর আঙুলগুলো ছুঁয়ে দিলেই উঠবে জেগে। তবুও সযত্নে নিম্নাংশটুকু রক্ষা করে চলেছিলাম ওর ছোঁয়া থেকে । রক্ষা করে চলেছিলাম আমার কুমারীত্ব । অন্ধ সংস্কারের বশেই । সামাজিকভাবে মালাবদল করে, আমার সিঁথিতে সিঁদুর দিয়ে যবে আমাকে বউ করে নিয়ে যাবে, তারপরেই সেটুকু ওর প্রাপ্য হবে। এইরকম একটা জলছবি দৃঢ়ভাবে আঁকা হয়ে গেছিল আমার মধ্যে। ও চাইতো খুব। আমি জানতাম । ওকে অদেয় আমার কিছুই নেই। আমি তো ওকে সবটুকুই দিয়েছি । শরীরের কৌমার্য আর মনের কৌমার্য কি একই নয়? মন থেকে কুমারীত্ব বিসর্জন দিলে কি শরীর তখনও কুমারী থাকে ? জানিনা। সঠিক উত্তর জানা নেই । তবে বোধহয় থাকেনা । শরীর তো শুধুমাত্র একটা মনকে ধারণ করে থাকে । আমি বোধহয় শরীর-মন ছাড়িয়েও আমার আত্মার সঙ্গে জড়িয়ে ফেলেছিলাম ওর অস্তিত্বের সীলমোহর। তবুও আমার সংস্কার বজায় রেখেই কবে আমার শরীরের কুমারীত্বটুকু ওর হাতে বিসর্জন দেবো , তার অপেক্ষাতেই বারবার এই প্রশ্ন আমি করে ফেলতাম ।
উত্তরে ও উদাসভাবে এই কটা লাইন বলতে বলতে হঠাৎই চুপ করে গেল ।
আমার দিকে তাকিয়ে বলল , ডু ইউ হ্যাভ এনি আইডিয়া…
আমি চুপ করে ছিলাম । চিনচিনে ব্যথা নিয়ে চুপ করে ছিলাম । ওর প্রশ্নের মধ্যে একটা নিবিড় খোঁচা ছিল । ভালোবাসার অন্ধত্বও আমাকে সেটা দেখা থেকে বিরত রাখতে পারেনি।
ও বলল , ঠোঁটের কোণে তাচ্ছিল্যের একটা হাসি মাখিয়ে বলল ,
— জানো না? সেটাই স্বাভাবিক-
চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করছিল , হ্যাঁ আমি জানি না । অজ পাড়াগাঁয়ের মেয়ে , ভেতো গ্রাম্য বাংলা মিডিয়াম ইস্কুলে পড়া মেয়ে আমি । জানিনা । আমি এমন অনেক কিছুই জানিনা । কতটুকুই বা জানি । সেই ‘না’ জানা-টুকু নিয়ে খোঁচা দেওয়ার কি আছে ?
চুপ করে রইলাম । কিন্তু সেদিন অজানা কোনো কারণে চোখ ভরে আসতে চাইছিল জলে । বহু কষ্টে ধরে রেখেছিলাম ।
ও বলল, এটা শেক্সপিয়ারের একটা ফেমাস সনেট । মানেটা বুঝতে পারছ ?
চোখের কোণে আমার দিকে তাকিয়ে নিয়ে বলল , আচ্ছা বলছি । আই আ্যম ট্রায়িং টু ট্রান্সলেট ইট ইন বেঙ্গলি ।
থেমে থেমে , ভেবে ভেবে বলল , সত্যিকারের ভালোবাসায়.. দুটো মনের বিয়ে হয়েই যায় .. কোন বাধা থাকেনা.. থাকতে পারে না.. বুঝলে ? কতবার বলবো তোমায় , ওই বেঙ্গলি রিচুয়াল মেনে মালাবদল , সিঁদুর পরা , ওতেই বিয়ে হয় না । যত্তসব থার্ডক্লাস বেঙ্গলি ইমোশনস্ –
বেঙ্গলি ইমোশন থার্ড ক্লাস ! আমার স্বজাতির আবেগ তুচ্ছ ! তার কোন মূল্য নেই ? কিন্তু আমার কাছে তো এইসবই অমূল্য । সত্যিকারের ভালবাসলে মনের বিয়ে হয়ে যায় ? এ কেমন কথা ? সকলের মন তো আর ‘শেষের কবিতা’র মিতা আর বন্যার মত উদার হয় না । আমি যদি এই উদারতা দেখাতে না পারি ? রবিঠাকুরের কলমের ডগায় যা সম্ভব, সহজ সাধারণ মধ্যবিত্ত মানসিকতায় সমস্ত মন-প্রাণ , শরীর দিয়ে ভালোবেসে তা কিভাবে সম্ভব ? ইচ্ছে হল বলি , ঠোঁটের ডগায় চলে এলো কথাগুলো ,
— শেষের কবিতার মতো ভেবোনা জীবনটাকে –
বলতে পারছি না ।
আমি কিছুতেই বলতে পারছিনা ।
কোন কথাই উচিত সময়ে বলে উঠতে পারিনা । সবই মনের গভীরে বুজবুরি কাটে । তবে সেদিন বেঙ্গলি ইমোশনকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করায় একটা কথা বলেই ফেলেছিলাম ,
— রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও বাঙালি ছিলেন। বেঙ্গলি ইমোশন থার্ডক্লাস হয় কি করে ?
এবারে বেশ জোরে হেসে উঠেছিল ও।
— তোমরা বাঙালিরা রবীন্দ্রনাথের বাইরে বেরিয়ে ওয়ার্ল্ডটাকে আর দেখতে পেলেই না । কী করে পাবে ? চেষ্টা করলে তো পাবে ।
আমরা নিজেরাই অনেক সময় বাঙালি বলে হীনমন্যতায় ভুগি । ভারতীয় বলে হীনমন্যতায় ভুগি । এমনটা মোটেও নয় , আমরা জাতি হিসেবে বা দেশবাসী হিসেবে সবসময় গর্ব করার সুযোগ পাই। কিন্তু যেগুলো নিয়ে পাই, সেগুলো নিয়েও আমরা গর্বিত হতে পারি না । এই হচ্ছে আমাদের মানসিক দৈন্যতা। ও নিজেও বাঙালি । অথচ আমাকে অপমান করার সময় হয়ে গেল- ‘তোমরা বাঙালিরা ‘ । নিজের মধ্যে কেমন একটা অসহায়ত্ব অনুভব করছিলাম । বুঝতে পারছিলাম , আমার এই প্রশ্নের উত্তরের আশায় সাঁতার কাটা বোধহয় অনন্ত । এর কোন উত্তর নেই । তার ওপর ছোট্ট একটা কথাই আমাকে বেশ আহত করেছিল । চোখ থেকে বড় বড় দু’ ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়েছিল । হাতের উল্টো পিঠে চোখের জল মুছে আমি উঠে দাঁড়িয়েছিলাম।
সেই একবারই আমি ওর কথার প্রতিবাদ করেছিলাম । সেই প্রথম, সেই শেষ।
বিকৃত গলায় চোখে জল নিয়ে বলেছিলাম,
— যে কবি লেখেন , ‘তাই তোমার আনন্দ আমার পর / তুমি তাই এসেছ নিচে’, যিনি লেখেন , ‘আমার এ ধূপ না পোড়ালে , গন্ধ কিছুই নাহি ঢালে ‘, লেখেন , ‘আমায় নিয়ে মেলেছ এই মেলা / আমার হিয়ায় চলছে রসের খেলা ‘, যিনি লিখতে পারেন , ‘সুখ যারে কয় সকল জনে / বাজাই তারে ক্ষণে ক্ষণে’, তাঁকে নিয়ে গর্ব করবো না ? বাঙালি হয়ে তাঁকে নিয়ে গর্ব করবো না? তিনি বিশ্বকবি –
বলে এক ছুটে পালিয়েছিলাম !
তারপর বেশ কিছুদিন অবরুদ্ধ অভিমান থেকে আর যাইনি তার কাছে। কিছুদিন পর কলেজে ছুটি পড়েছিল । একেবারে ইউনিভার্সিটি বোর্ড এক্সাম হয়ে তারপর পার্ট টু এর ক্লাস আরম্ভ হবে । বড় ছুটি । আমি এক বুক অভিমান নিয়েই বাড়ী ফিরে এসেছিলাম , পুরুলিয়ায় । আবার গেছিলাম পার্ট টু এর ক্লাস আরম্ভ হওয়ার পর । মাঝে অবশ্য পরীক্ষার কটা দিন ছিলাম সেখানে। মন উথালপাথাল হলেও পরীক্ষার উত্তেজনা আর প্রস্তুতির মাঝে ওর সাথে দেখা করিনি । কথাও হয়নি। অভিমান জমে জমে বুকের মধ্যে পাহাড় হয়ে এক সময়ে তা গলে গিয়ে অঝোর ধারায় ঝরে পড়ছিল । তবুও কথা বলা হয়নি । না বলা কথার পাহাড় নিয়ে প্রতিদিন নিজেই কল্পনায় ওর সাথে কথোপকথন সারতাম । তবু কথা বলা হয়নি।
মাঝের প্রায় তিন-চার মাসের বিরতির পর যখন কলেজে আবার পুরোদমে ক্লাস স্টার্ট হল , আমি আবার অজিত কাকুর বাংলোয় থেকে কলেজ করতে শুরু করলাম, তখন সেই অভিমানের পাহাড় এতটাই গলে গেছে যে আমার মনের উঠোন-দালান-রাস্তা-ঘাট সমস্ত জলে থৈ থৈ করছে । আমার মধ্যে কখনো কখনো এই ভ্রান্ত ধারণা সৃষ্টি হত যে , আমি বুঝি রবিঠাকুরকে নিয়েই অভিমান করেছিলাম, বাঙালির আবেগ নিয়েই অভিমান করেছিলাম । কিন্তু , আদৌ তা ঠিক অভিমান ছিল না, আমার অসহায়ত্ব ছিল । অসহায় মনের এক অনন্ত প্রশ্নের উত্তর না পাওয়ার যন্ত্রণা ছিল । যাইবা থাকুক, আর যাই হোক, রবিঠাকুরকে কেন্দ্র করে অভিমান ছিল না । প্রেমের আবেগ, অনুরাগ, উত্তেজনা , ভালোবাসা , সবকিছু মিলেমিশে মানুষের অনেক সহজ দৃষ্টি আবছা করে দেয় । আমি সেই ক্ষীণ আবছা দৃষ্টি থেকেও বুঝেছিলাম , কোথায় যেন একটা অনন্ত প্রশ্ন চিহ্ন রয়েছে । সেই প্রশ্নচিহ্নের কোন উত্তর নেই । সেই অনন্ত প্রশ্ন সাথে নিয়েই আমায় চলতে হবে, আমি যদি এই সম্পর্কের মধ্যে থাকি । কিন্তু এই সম্পর্ক থেকে বেরোনোর ক্ষমতা আমার নেই । হবে না । দূরে , অনেক দূরে চলে গেলেও হবে না।
এই সমস্ত উপলব্ধিই ছিল আমার মনের গহীনে কোথাও সুপ্ত । মনের ওপর তলায় যা বসবাস করত তা হলো, ও আমার সাথে কথা বলেনা, আমিও বলি না । ও আমাকে ভালোবেসে কাছে টেনে নেয় না । ওর সাথে কথা বলিনি কতদিন । ওর আঙ্গুলের ছোঁয়ায় আমার শরীর কতদিন বেজে ওঠে নি । কবে আবার সব আগের মত হবে ?
কিছুদিন অসম্ভব মানসিক দ্বিধা-দ্বন্দ্বে কাটলো। তারপর আমি ক্রমশ মরিয়া হয়ে উঠতে লাগলাম। শরীর-মন অস্থির হয়ে উঠল প্রিয় মিলনের জন্য। মনকে অনেক শাসন করার পরেও মন যখন দস্যি হয়, তখন আর কিছু করার থাকে না। একদিন অসহায় হয়ে গেলাম ওর বাংলোয় । গেলাম ওর কাছে ক্ষমা চাইতে । ওর সাথে সমস্ত কিছু ঠিক করে নিতে। আগের মতো করে নিতে। ক্ষমা কেন চাইবো, কি আমার অপরাধ জানি না । তবু ক্ষমা চাইতে হবে । চেয়েও ছিলাম । ও ক্ষমা করেছিল কিনা জানিনা, তবে কথা বলেছিল আমার সাথে । ওইটুকুই । শুধু কথাই বলেছিল । কথা বলতো, তবে আমাকে কাছে টেনে নিত না । আদর করত না । ছুঁয়ে দিত না আমায় ।
একদিন লজ্জার মাথা খেয়ে বললাম , আগের মত আর কিছু নেই কেন ?
ভুরু কুঁচকে ও বললো , আগের মতো বলতে ?
এ প্রশ্নের উত্তর নেই । আমি নতমুখে রইলাম ।
অনেকক্ষণ , বেশ অনেকক্ষণ চুপ করে থেকে ও বলেছিল , তুমি তো চাও না কিছু আগের মতো থাক । তোমার মাথায় তো শুধুই বিয়ের পোকা ।
আমি আরও, আরও বেশিক্ষণ চুপ করে ছিলাম ।
তারপর বলেছিলাম , তুমি যা বলবে আমি শুনবো । কোন প্রশ্ন করবো না । আমায় কি করতে হবে বলে দাও ।
ও বেশ রেগে রেগে কঠিন গলায় বলেছিল , তোমার দ্বারা হবে না । তুমি তো ছেলে নও । ছেলে হলে বুঝতে, দ্যাট ইজ বিয়ন্ড কন্ট্রোল , পেইনফুল অলসো-
নিজের শমনপত্র নিজেই দিলাম ।
বললাম , আমি বলেছি তো তুমি যখন বলবে , যেভাবে বলবে আমি যাবো তোমার কাছে ।
— অলরাইট । শুনলাম তোমার কথা । লেট মি সি –
দশ-পনের মিনিট , আধঘন্টা একসঙ্গে থাকলে, আড়াল পেলে ; চুমু , আলিঙ্গন বা আর যেটুকু আমরা এগোতে পেরেছিলাম , সেটুকু করাই যায় । সেটুকু কাছে আসাই যায় । তবে , সম্পূর্ণ শারীরিক মিলনের জন্য অনেকটা নিভৃত সময় চাই । সেই সময় কিভাবে আমাদের সম্পর্কটাকে দেওয়া যায় আমি জানতাম না । শুধু বিকেলের কিছুটা সময় । তাও বান্টি থাকে । ও আমাদের আলাদা যেটুকু সময় দেয়, তা ওর মর্জির ওপর নির্ভর করছে । তারপর সন্ধ্যের আগে থেকেই তো আমি আবারও অজিত কাকুর বাংলোয় বন্দী । সোনুদা আমাকে বোঝালো, কিভাবে , কখন, সেই সময় বার করা সম্ভব । শুনে আমার গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠলো ।
এমনটা কিভাবে সম্ভব ?
এমনটাও কি সম্ভব হতে পারে ?
শ্রীরাধার মতো অভিসারে যাব আমি ! অদ্ভুত রোমাঞ্চ অনুভব করলাম মনে মনে । নিজেকে কল্পনায় শ্রীরাধিকার সমগোত্রীয় মনে হল । এক পাহাড় বাধা , জাহাজের দড়ি বাঁধা পা’য় সমাজ-সংসারের চোখে ব্যভিচারিণী শ্রীরাধিকা শ্রীকৃষ্ণের বাঁশি শুনে পাগলের মত বনের পথ ধরে ছুটে চলেছেন –
অবশেষে এলো সেই দিন । সেই রাত । আমার শোওয়ার ঘরটা ছিল দোতলার পূর্ব দিকের কোণের ঘর । আমার ঘর থেকে ওর বাংলোর ঘরটা দেখা যেত । সব কথা হয়েই ছিল । আমি কোথা দিয়ে কিভাবে যাব । শুধু ওর সিগন্যালের অপেক্ষা ছিল । আমি দুরুদুরু বুকে প্রহর গুনছিলাম। সেদিনই হঠাৎ করে রাত্রিবেলা কি মনে হতে বান্টি বালিশ নিয়ে চলে এলো আমার ঘরে শু’তে ।
আমার বিছানার ওপরে ধপ্ করে ওর বালিশটা ফেলে বলল , আজ তোর সাথে শোবো তরুদিদি ।
কথায় বলে , যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই সন্ধ্যা হয় । আজকেই বান্টিকে আমার ঘরে শুতে আসতে হল ? বিভিন্নভাবে ওকে সরাসরি না বলে বোঝানোর চেষ্টা করলাম, ও যেন নিজের ঘরে গিয়ে শোয়। কিন্তু কোন লাভ হল না । ও আমার কথার সঠিক অর্থ বুঝতেও পারল না । শুয়ে পড়ল আমার বিছানায় । ও সেদিন সম্পূর্ণ ভাবে গল্প করার মুডে ছিল । সেই কারণেই এসেছিল । কিন্তু আমার একেবারেই কোন রকম গল্প করার মুড নেই । তাছাড়া গল্প করলেই ও জেগে থাকবে । জেগে থাকলেই ওদিক থেকে সিগনাল আসবে , অথচ – ! প্রমাদ গুনলাম । দু’ তিনটে হাই তোলার অভিনয় করে পাশ ফিরে শুয়ে পড়লাম।
বান্টিকে বললাম, আজকে আমার খুব ঘুম পেয়েছে রে। আমি ঘুমোলাম । গুড নাইট ।
সঙ্গে সঙ্গে ঘুমিয়ে কাদা হয়ে গেলাম! এদিকে ইন্দ্রিয় সজাগ। খেয়াল করছি ও ঘুমোলো কিনা । আধ ঘণ্টা মতো উসখুস এপাশ-ওপাশ করল, তারপর শান্ত হয়ে গেল। আরো পনেরো-কুড়ি মিনিট মটকা মেরে মরার মত পড়ে রইলাম বিছানায়। তারপর একেবারে নিঃশব্দে বিড়াল পদক্ষেপে নেমে এলাম বিছানা থেকে। ওইদিকের জানলায় গিয়ে দাঁড়ালাম । বারকয়েক পিছন ফিরে দেখে নিলাম বান্টির শান্ত, ঘুমন্ত শরীরটাকে। জানলা দিয়ে সামনের দিকে তাকালাম। এই দিকটা আমাদের বাংলোর সামনের দিক নয় , ডানদিক । এদিকে কোন আলো নেই । বাংলোর সামনের দিকের প্রতিফলিত আলো একটা সময় অন্ধকারে হারিয়ে গেছে। তারপর কিছুটা অংশ শুধুই অন্ধকার। বাংলোয় ওর ঘরটা ঠাওর করা গেলেও অন্ধকারে বোঝা যায় না ।
দাঁড়িয়ে আছি ।
দাঁড়িয়ে আছি ।
হঠাৎ করে সেখানে আলো জ্বলে উঠলো । ওটা ওর বেডরুম। কয়েক সেকেন্ড আলোটা জ্বলে থাকলো , তারপর নিভলো । আবার জ্বলল । আবার নিভলো।
শ্রীকৃষ্ণের বাঁশি বাজছে। অদ্ভুত রোমাঞ্চ অনুভব করলাম দেহে-মনে । মনে পড়ল শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘ঝিন্দের বন্দী’ – টর্চের আলো.. নদীর ওপার থেকে জ্বলছে, নিভছে, জ্বলছে, নিভছে .. নায়ক মাঝের নদীর বাধা অতিক্রম করে সাঁতরে পার হয়েছিল ..
আর আমি ? আমিতো নায়ক নই। তবে আমি নায়িকা। আমি শ্রীরাধিকা । গোপন অভিসারে শ্রীরাধা বনের পথ ধরে হাওয়ায় ভেসে ছুটে চলছেন.. সমাজ-সংসারের শৃংখল কোনো বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি.. আমারও হবে না।
আমি ঠিক যাব ।
যাবোই যাবো –
ক্রমশ..
©®copyright protected
এক-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/978775899579141/
দুই-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/980083989448332/
তিন-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/981378992652165/
চার-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/983543179102413/
পাঁচ-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/986002805523117/
ছয়-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/987404668716264/
সাত-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/989485091841555/
আট-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/991102821679782/
নয়-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/993099491480115/
দশ-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/994279738028757/
এগারো-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/995634347893296/
বারো-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/998832147573516/
তেরো-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/1000733104050087/
চোদ্দো-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/1002718000518264/
পনেরো-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/1004549847001746/
ষোল-
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=1007202950069769&id=248680819255323
সতেরো-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/1009015169888547/
আঠারো-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/1011129543010443/
উনিশ-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/1013312572792140/
কুড়ি-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/1015118655944865/
একুশ-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/1017814589008605/
বাইশ-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/1019125995544131/
তেইশ-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/1021798458610218/
চব্বিশ-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/1024967944959936/
পঁচিশ-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/1031476470975750/
ছাব্বিশ-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/1034632350660162/
সাতাশ-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/1038754843581246/
আঠাশ-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/1046967802759950/
উনত্রিশ-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/1048831039240293/
ছবি : সংগৃহীত