#হলদে_প্রজাপতি
(প্রাপ্তমনস্কদের জন্য )
— অমৃতা শংকর ব্যানার্জি ©®
ছাব্বিশ
( আগের অধ্যায়গুলোর লিংক অধ্যায়ের শেষে দেওয়া হল)
পুজো আসছে । মায়ের মুখ, নতুন শাড়ির গন্ধ, বাবা-মা, পাড়ার প্যান্ডেলে ঢাকের বাদ্যি, অষ্টমীতে মায়ের হাতের ফুলকো লুচি- সবকিছু আমার মনকে প্রবলবেগে কলকাতার দিকে টানতে লাগলো । খুবই স্বাভাবিক । আজ পর্যন্ত তো কোন পুজোয় বাবা-মায়ের থেকে দূরে কাটাইনি। মালিকপক্ষ মাত্র পুজোর চারটে দিনের জন্য ছুটি দিতে চাইছে। আমি আরো এক্সট্রা কয়েকটা দিনের জন্য আ্যপ্লাই করলাম । একবারে ষষ্ঠীর দিন সন্ধ্যার ট্রেনে চেপে বসবো। সপ্তমী থেকে লক্ষ্মীপুজো বাবা-মা’য়ের কাছে । অন্য কোন প্রশ্নই ওঠে না । বাবার কাছে কত দিন বসে শান্ত মনে কথা বলা হয়নি। পুজো এমন একটা আবেগ, যখন বাবা-মা’য়ের কথা তো ছেড়েই দিলাম, এমনকি পাড়ার বিমালা কাকিমাকে পর্যন্ত মিস করতে থাকি। বিমালা কাকিমার পাড়ার প্যান্ডেলে এসে মায়ের পাশের চেয়ারটাতে বসে পাড়ার যত রাজ্যের পরনিন্দা পরচর্চা – এও যেন মনে হয় বড় একটা উপভোগের ব্যাপার । সবকিছু মিলিয়ে পুজোর সঙ্গে জড়িত যেকোনো কিছুই প্রতিটা বাঙালি নিজের বাড়ি থেকে দূরে থাকলে মিস করতে থাকে ।
দেখতে দেখতে ষষ্ঠী চলে এলো । টগর আবার বায়না ধরেছে আমার সাথে ও এবার কলকাতায় পূজো দেখতে যাবে । তা আমার প্রস্তাবটা বেশ ভালোই লেগেছে। ও ঘুরলো, পুজো দেখল, খানিকটা আনন্দ পেল । আবার , পুজোর দিনে বিশেষ রান্নাবান্না প্রতিদিনই দু-একটা পদ কম করে হয়ই, তারপর সাধারন রান্নাবান্না তো আছেই। সব মিলিয়ে রান্নার একটা ধুম পড়ে যায় প্রতিটা বাড়িতে । মা’কে সে ব্যাপারে ও হেল্প করে দিতে পারবে । রান্নাবান্না সম্পূর্ণ করেও দিতে পারে । রান্নার হাতটা খুব ভালো তো। কাজেরও মেয়ে । কাজেই সব মিলিয়ে আমার ভারি মনঃপূত হয়েছে ব্যাপারটা ।
ঠিক সপ্তমীর দিন সকালে পৌঁছলাম বাড়িতে । চারিদিকে পুরোদমে পুজোর মরসুম চলছে । ঢাকের বাদ্যি , পুজোর গান.. ভরা মন নিয়ে ফ্ল্যাটে পৌঁছলাম। পুজোর সময় নিজের বাড়িতে ফেরা যেকোনো বাঙালির কাছে ঠিক যেন শুধু বাড়িতে ফেরা নয় , শেকড়ের টানে মাটিতে এসে পৌঁছোনো । যেমন বাড়িই হোক , পছন্দের অপছন্দের যাই বা হোক, তখন তা স্বর্গ বলে মনে হয় । আর বাবার ওই সাদা পাঞ্জাবি পরা চেহারা, হাসিতে উজ্জ্বল মুখটা দেখলে বুক জুড়িয়ে যায় , প্রাণ ভরে ওঠে । বাবার সাথে প্রাণভরে গল্প করে , মায়ের হাতের রান্না পেট ভরে খেয়ে আর টগরের সঙ্গে আরো একজন-দুজন বান্ধবী জুটিয়ে নিয়ে প্যান্ডেল হপিং করে জব্বর পুজো কাটলো। পুজোর ছুটির মধ্যে আরও একটা বড় পাওনা হল- লক্ষ্মী পুজো উপলক্ষে পুরুলিয়ায় আমাদের দেশের বাড়িতে গেলাম । সেই রাঙ্গামাটির রাস্তা, দূরে দূরে ছবির মত টিলা পাহাড় – টগর তো ভীষণ খুশি ! সে বেচারি বেড়াতে কোথাও যেতেই পায়না । একসঙ্গে কলকাতা, পুরুলিয়া দুটো জায়গায় ঘুরতে পেয়ে খুশিতে একদম ডগমগ করছে।
সবই তো হলো । কিন্তু ছুটি তো আর অনন্ত নয় । ভাগ্যে লক্ষ্মী পূজার পরের দিনটা রবিবার পড়েছিল । সেদিনই রাতে ট্রেনে উঠলাম। পরের দিন সকালে আবার জগন্নাথের সঙ্গে গাড়িতে করে আমার সেই টি এস্টেট ! সত্যি কথা বলতে কি, কিছুক্ষণের জন্য মনে নিম্নচাপ তৈরি হয় বৈকি । সেই ট্রেনের বেগে কাশের বনে ঢেউ তুলে দুর্গাপুজোর ভরা আনন্দ বুকে নিয়ে নিজের বাড়িতে ফিরে যাওয়া । তারপর আবার ফিরে আসা নিজস্ব এই কর্মক্ষেত্রে। কিছুক্ষণের জন্য কিছুই ভালো লাগেনা । পুজো শেষ- এই অনুভূতিটাই বাঙালির মনে নিম্নচাপ ঘনিয়ে তোলার জন্য যথেষ্ট । তবে আমার এই দিগন্ত বিস্তৃত সবুজ কর্মক্ষেত্রের মধ্যে এমন একটা সজীবতার ছোঁয়া রয়েছে যে, সেই নিম্নচাপ দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার সুযোগ পায় না। আবার মেতে উঠলাম প্রতিদিনের রুটিনে । আমার চা’ গাছগুলোর সঙ্গে কথা বলা , তাদের যারা দেখাশোনা করে, তাদের সঙ্গে কথা বলা – সবই চলতে লাগলো ।
সাত মাস কেটে গেছে আমি জয়েন করেছি । এখন নভেম্বর মাস । প্রাথমিক বড়োসড়ো বেশকিছু বাধা কাটিয়ে উঠে এখন আমার সঙ্গে চা বাগানের শ্রমিকদের সম্পর্ক অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। অবশ্য এর জন্য বড় একটা কৃতিত্ব ইন্দ্রাশিষ বাবুকে দিতেই হয় । বিশাল বড় যে ধাক্কাটা এসেছিল, সেটা তিনি সামলে না দিলে আমার পক্ষে সম্ভব ছিল না । ইন্দ্রাশিষ বাবুদের বাড়ির সাথে আমার ঘনিষ্ঠতা আরো কিছুটা বেড়েছে । পাতার সাথে বন্ধুত্বও। পাতা এখন পারলে সারাদিনই আমার কাছে থাকতে চায়। নিজের বাড়িতে যেতেই চায়না একবার এলে । এক-আধদিন বাদে মোটামুটি প্রতিদিনই চলে আসে। দিনের ম্যাক্সিমাম টাইমটাই এখন আমার বাংলোয় কাটিয়ে যায়। ইন্দ্রাশিষ বাবু অবশ্য এর জন্য অনুতপ্ত । ওনার ধারনা, উনি ওনার মেয়েকে সময় দিতে পারেন না বলেই পাতা আমার কাছে থাকতে এত ভালবাসে। কিন্তু আমি জানি , উনি ওনার মেয়েকে সময় দিলেও পাতা আমার কাছে থাকতেই বেশী ভালোবাসতো । মেয়েরা একটা নির্দিষ্ট বয়স পার হয়ে আসার পর বয়সন্ধি আসার আগে থেকে মায়ের সাথেই স্বচ্ছন্দ থাকে বেশি । বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে । তার কারণ আর কিছুই নয় , নিজেদের অজান্তেই তারা যেকোনো স্ত্রীলোকের কাছে বেশি সেফ আ্যন্ড সিকিওর ফিল করে । সেটা হয়তো না জেনেই , সেক্সুয়ালিটি , লিঙ্গভেদ এগুলো সম্পর্কে ধারণা গড়ে ওঠার আগেই তারা মানসিকভাবে পুরুষদের থেকে কিছুটা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে । আবার যৌবন এলে তখন সমবয়সী বা নিজেদের থেকে কিছুটা বয়সে বড় যুবকদের প্রতি একটা আকর্ষণ অনুভব করে। এগুলো সমস্তই প্রকৃতিগত ব্যাপার । কিছু বলে দিতে হয় না। কিছু শিখিয়েও দিতে হয় না । সমস্তই নিজে থেকে ঘটে চলে । হয়তো সেরকম কোনো কারণেই পাতা যত দিন যাচ্ছিল, আমার ন্যাওটা হয়ে পড়ছিল ।
তখন নভেম্বরের শেষের দিক । শীতের সূচনাপর্ব ডুয়ার্সের কোল ঘেঁষা এই সমস্ত চা-বাগানে, উত্তরবঙ্গে, আগে থেকেই শুরু হয়ে যায়। দক্ষিণবঙ্গে তো নিদেনপক্ষে ডিসেম্বরের মাঝামাঝি না হলে শীতের আমেজ বোঝাই যায়না। কিন্তু উত্তরবঙ্গের এই সমস্ত জায়গায় নভেম্বর থেকেই শীত তার আমেজ বুঝিয়ে দিতে শুরু করে । আর শীতের আমেজ শুরু হয়ে যাওয়া মানেই, মনটা করে পালাই পালাই । বেড়ানো, পিকনিক, পাহাড় , জঙ্গলের কোণে কোণে ঘুরে বেড়ায় । তখন আর বাড়িতে মোটেই মন টেকে না। মনের মধ্যে নানা রকম মানস ভ্রমণের আলপনা বুনে চলেছি , কিন্তু তখনও পর্যন্ত বেড়াতে যাওয়ার কোনো নির্দিষ্ট প্রোগ্রাম ঠিক করে উঠতে পারিনি ।
একটা ছুটির দুপুরে ইন্দ্রাশিষ বাবুর মায়ের কাছ থেকে লাঞ্চের আমন্ত্রণ পাওয়া গেল । আলাপ পরিচয় থাকলেও সে ভাবে আলাপ জমানোর সুযোগ হয়ে ওঠেনি ভদ্রমহিলার সাথে । বয়স প্রায় সত্তর ছুঁইছুঁই হলেও তিনি যথেষ্ট কর্মঠ । যদিও বাতের ব্যথার কারণে বাড়ি থেকে বেরিয়ে খুব একটা হাঁটাচলা ঘোরাফেরা করার ক্ষমতা নেই। তবে বাড়ির মধ্যে সমস্ত কাজ আর দেখতে হবে না , একা হাতেই সমস্তটা সামলে নেন । আমরা, আমি আর টগর , গিয়ে পৌঁছলাম প্রায় বেলা বারোটা নাগাদ । একটু তাড়াতাড়িই গেছিলাম । দুপুরের খাওয়া দাওয়ার জন্য সময়টা তাড়াতাড়িই বটে । হাতে সময় নিয়ে যাওয়ার কারণ হলো, টগর কিছুটা সাহায্য করে দিতে পারবে। কিন্তু, গিয়ে দেখি , ওমা , কোথায় কি! ওনার সমস্ত কাজই তখন অলরেডি সারা হয়ে গেছে । ইন্দ্রাশিষ বাবুর মা ছোটখাটো চেহারার একজন বৃদ্ধা । বাত জনিত কারণে বয়সের চেয়ে একটু বেশিই বয়স্ক লাগে। মাথার প্রায় আশি শতাংশ চুলই পেকে সাদা হয়ে গেছে । তবে এখনো চুলের গোছ আছে । যে খোঁপাটা করে রাখেন , সেটার আকার আমার পক্ষে বেশ লোভনীয় । চোখ দুটোর মধ্যে একটা সদাসতর্ক, এদিকে উদ্ভ্রান্ত দৃষ্টি । যেন বুঝে উঠতে পারছেন না কোথায় কি করা উচিত। তবে যেটুকু উনি করেন সেটুকু যে যথেষ্ট গুছিয়ে করেন, তা ঘরদোর দেখেই বোঝা যায় । গলার স্বরে অবশ্য বয়সের ছাপ তেমন পড়েনি । বড়জোর বছর পঁয়ত্রিশ চল্লিশের মহিলার গলা মনে হবে কথা শুনে। ইন্দ্রাশিষ বাবুর ফিরে এসে আমাদের সঙ্গেই লাঞ্চ করার কথা সেদিন । তবে ফিরতে দুটো আড়াইটে তো হবেই । অগত্যা ওনার মায়ের সঙ্গেই জমিয়ে গল্প করতে লাগলাম । এদিকে সেদিন পাতার একজন বান্ধবী এসেছে- টুসি । সে এক চা শ্রমিকের মেয়ে । মাঝে মাঝে মায়ের সঙ্গে চা বাগানে চলে আসে, টুকটাক কাজ করে দেয় মায়ের হাতে হাতে । সেই থেকেই পাতার সঙ্গে তার বন্ধুত্ব । পাতা তার সমবয়সী বন্ধুকে পেয়ে আমার কাছে আজকে কম ভিড়ছে ।
টুসি পাতার থেকে মাথায় অল্প একটু লম্বা, রোগা ডিগডিগে।
সে ছুটতে ছুটতে এসে একবার আমাকে মাথার চুল থেকে পায়ের নখ পর্যন্ত জরিপ করে নিল । তারপর বলল, তোমার মাথায় সিঁদুর কই ?
আমি প্রথমটায় বেশ ঘাবড়ে গেলাম প্রশ্ন শুনে ।
তারপরে হেসে বললাম, সব মেয়ের মাথায় বুঝি সিঁদুর থাকে ?
— মেয়েদের কেনো থাকবে গো ? বউদের তবে থাকে –
হেসে ফেললাম ।
বললাম , আমি বউ নই ।
শুনে গালে হাত দিয়ে চোখ দুটোকে ছানাবড়া করে বলল, সেকি! তুমি বিয়ে করনি বুঝি ? তোমার বর নেই ?
— না নেই ।
— ওমা! তা আবার হয় নাকি ?
— কেন হয় না ? সকলের কি বর থাকে?
— সক্কলের বর থাকে । আমার মেজদির বর আছে, সেজদির বর আছে ..
আরো দু-চারটে লম্বা লিস্ট দিয়ে সে বলল, সবাই মাথায় আ্যই মোট্টা করে সিঁদুর পরে।
— খুব ভালো কথা । আজকে আমাকে দেখলে তো ? আমার বর নেই , কেমন ? সকলের বর থাকে না । যাও তুমি এখন। পাতার সঙ্গে খেলা করবে যাও।
সে আরো কয়েক সেকেন্ড আমার দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে চলে গেল । যেন আমার মত কিম্ভূত কিমাকার জীব জগতে সে আর দুটো দেখেনি ।
সে চলে যেতে কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে ইন্দ্রাশিষ বাবুর মা আমাকে একই প্রশ্ন করে বসলেন , তুমি বিয়ে করনি কেন এখনো?
ওনার প্রশ্নের ধরন শুনে বুঝলাম, উনি এই প্রশ্নটা অনেকক্ষণ ধরেই আমাকে হয়তো করতে চাইছিলেন , সুবিধা করে উঠতে পারছিলেন না । টুসি সেই সুবিধাটা করে দিয়ে গেল ।
আমি বললাম , করিনি কেন ? ওরকম ভাবে কোনো কারণ ঠিক নেই। করা হয়নি , এই আর কি-
শুনে বললেন , আশ্চর্যের বটে ! এত ভালো চাকরি করো, দেখতে-শুনতেও ভালো, অথচ বিয়ে করোনি ?
এই এক অস্বস্তিকর প্রশ্ন । অজানা , অচেনা, স্বল্প-পরিচিত সমস্ত মানুষ দুমদাম করে এই প্রশ্ন আমাকে করে বসেন । যেন বিয়ে করাটা জগতের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ । ওটা না করে আমি একটা বিশাল বড় অপরাধ করে বসে আছি ।
দুজনেই কিছুক্ষন চুপ করে রইলাম ।
এরপর হঠাৎ করেই বৃদ্ধা একটা ছোট দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন, আর ভালোই করেছো। বিয়ে করেই বা কি ? আমার ছেলেটার তো এত কান্ড করে বিয়ে দিলাম। কি যে হলো বিয়ে করে ?
আমি কিছু বললাম না । চুপ করে রইলাম ।
উনিও কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে এরপর সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিতভাবে আমাকে একটা প্রশ্ন করে বসলেন ।
বললেন , তোমার পদবী কি মা ?
প্রশ্ন শুনে কয়েক সেকেন্ড আমি ওনার মুখের দিকে তাকিয়ে চুপ করে রইলাম ।
তারপর হাসি মুখে বললাম , ঘোষ , আমার সারনেম ঘোষ ।
— ঘোষ!..
একবার বলে আমার দিকে তাকালেন তিনি। ওনার তাকানোর ভাষা ঠিক বুঝতে পারলাম না।
তারপর বললেন , তোমরা কি কাস্ট?
এইরে ! আমার কাস্ট নিয়ে আবার ওনার কী প্রয়োজন পড়ল ? সঠিক কারণ অনুমান করতে না পারলেও ভেতরটা অল্প একটু উত্তেজনায় দুলে উঠলো।
অল্প হেসে বললাম, কায়স্থ , আমরা কায়স্থ ।
শুনে তিনি চুপ করে গেলেন । বেশ কিছুক্ষণ মুখ নিচু করে চুপ করে রইলেন । আমার বেশ অস্বস্তি হতে লাগলো । কিছুক্ষণ পর ছোট একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে মুখ তুললেন । তারপর কয়েকটা কথা বললেন । মনে হল যেন নিজের ভাবনার জগতের অতীতের মাটি খুঁড়ে তিনি কথাগুলো তুলে এনেছেন ।
ছেঁড়া ছেঁড়া ভাবে কিছুটা স্বগতোক্তির মতো বললেন , কায়স্থ ! যখন আমার ইন্দ্র তখন কলেজে পড়ে । কলেজের শেষের দিকে আমাকে সে বলেছিল , ওর নাকি একটা মেয়েকে ভাললাগে । ওর সঙ্গেই কলেজে পড়ে সে। মেয়েটার নাম কি বলেছিল ভুলে গেছি। তবে পদবী ছিল দাস । কায়েতের মেয়ে । আমি পরিষ্কার কয়ে দিয়েছিলাম , এইসব কাস্টের মেয়ে জুটিয়ে ঘরে তুললে, হয় সেই মেয়ে থাকবে, নয় আমি থাকবো । বামুন ছাড়া অন্য কোন ঘরের মেয়েকে বউ করে ঘরে আনা যাবেনা।
অল্পক্ষণ চুপ করে কিছুটা বড় একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন, সেই একবারই কয়েছিল। আর না। তারপরে অনেকগুলো বছর বিয়ের কথা তুললেই এড়িয়ে যায়, এড়িয়ে যায় .. এরকম করে কাটলো । শেষে বত্রিশে গিয়ে ছেলের বিয়ে দিলাম । নিজে দেখে শুনে দিলাম । একেবারে খাঁটি বামুনের মেয়ে – মুখুজ্জে । দেখ না, তারপর কি হলো ! ছেলের আমার সংসার করাই হলো না। মনে হয় যেন নিজে হাতে সব ভাসিয়ে দিয়েছি। তারপরেও সমস্ত বাবা চুকেবুকে যাওয়ার পর , কাগজপত্রের সব সইসাবুদ হয়ে গেল, মিটে গেল, তারপর কতবার কয়েছি , আর একটা বিয়ে কর্। সে যেন আমার কোন কথা কানেই তোলে না।
এইরকম অস্বস্তিকর একটা প্রসঙ্গ যে উত্থাপন হতে পারে আদৌ, ভাবতে পারিনি । চুপ করে বসে রইলাম । উনিও চুপ করে বসে রইলেন ।
কিছুক্ষণ পর গা ঝাড়া দিয়ে উঠে বললেন, দেখি একটু –
বলে দরজার দিকে এগিয়ে গেলেন । কী দেখবেন বলে যে গেলেন ঠিক বোঝা গেল না । উনি বেরিয়ে যাওয়ার সময় দরজা দিয়ে ঝড়ের বেগে ঢুকলো পাতা। ঢুকে আমি যে চেয়ারের ওপর বসে ছিলাম, সেখানে এক ছুটে এসে আমার কোলের কাছে ঘেঁষে দাঁড়িয়ে উত্তেজিতভাবে বলতে লাগল, ও নাকি একটা অদ্ভুত সুন্দর রঙের ফড়িং দেখতে পেয়েছে । আমার হাত ধরে টানতে লাগলো। আমাকে তখনই উঠে সেটা দেখতে যেতে হবে ।
আমি বললাম, ফড়িং কি এক জায়গায় বসে থাকবে রে? সেটা কখন উড়ে পালিয়েছে ।
— তুমি দেখবে চলনা মণি?
হাত ধরে ঝাঁকাতে লাগলো । অগত্যা আর কি করা যায়? উঠতে হলো । উনি দরজার চৌকাঠ পেরিয়ে বারান্দায় দাঁড়িয়ে পিছন ফিরে তাকিয়ে রইলেন আমাদের দিকে । আমি ঘর থেকে বেরিয়ে বারান্দা পেরিয়ে পাতার সঙ্গে যেতে যাচ্ছি , উনি পেছন থেকে বললেন,
— তুয়া তোমাকে বড্ড ভালোবাসে। সব সময় তোমার কথা বলে । তোমার সাথে থাকতে চায় ।
আমি পেছনে ঘুরে তাকালাম একবার ভদ্রমহিলার মুখের দিকে। উনি কি কিছু বলতে চাইলেন আমায় ? বেরিয়ে এলাম পাতার সঙ্গে ।
ঘন্টাখানেক পরে ইন্দ্রাশিষ বাবু ফিরলেন । জমিয়ে দুপুরের খাওয়া হল, সাথে আড্ডা। ইন্দ্রাশিষ বাবুর মায়ের রান্নার হাত ভালো । মুড়িঘন্ট আর খাসির মাংসের ঝোলটা তো জাস্ট অনবদ্য হয়েছিল । মুখে লেগে রইলো । খেতে খেতেই বসে ঠিক হলো আমরা খুব শীগ্রই একটা পিকনিক করবো । ডুয়ার্সের কোন একটা বাফার জোনে হবে বলে ঠিক হলো । জায়গা যদিও ঠিক হলো না , তবে টুরিস্ট রাশ কম থাকবে এরকম একটা নিরিবিলি জায়গা খুঁজে বার করা হবে বলে ঠিক হলো।
ক্রমশ..
©®copyright protected
এক-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/978775899579141/
দুই-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/980083989448332/
তিন-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/981378992652165/
চার-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/983543179102413/
পাঁচ-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/986002805523117/
ছয়-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/987404668716264/
সাত-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/989485091841555/
আট-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/991102821679782/
নয়-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/993099491480115/
দশ-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/994279738028757/
এগারো-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/995634347893296/
বারো-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/998832147573516/
তেরো-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/1000733104050087/
চোদ্দো-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/1002718000518264/
পনেরো-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/1004549847001746/
ষোল-
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=1007202950069769&id=248680819255323
সতেরো-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/1009015169888547/
আঠারো-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/1011129543010443/
উনিশ-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/1013312572792140/
কুড়ি-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/1015118655944865/
একুশ-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/1017814589008605/
বাইশ-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/1019125995544131/
তেইশ-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/1021798458610218/
চব্বিশ-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/1024967944959936/
পঁচিশ-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/1031476470975750/
ছবি : সংগৃহীত