হঠাৎ এক বৃষ্টির দিনে,পর্ব:৫

0
634

#গল্পের_নাম #হটাৎ_এক_বৃষ্টির_দিনে
#পর্বঃ৫ #এটা_কি_আমার_জন্যে?
#নবনী_নীলা
আমি আগে রেডি হয়ে গাড়ীতে এসে বসে আছি। কিছুক্ষণ পর অভি নিজের সীটে এসে বসে আমার দিকে ঝুঁকে আসলো। আমি একটা ঢোক গিলে চোখ বন্ধ করে ওড়নাটা শক্ত করে ধরলাম। সকালে যা হয়েছে তারপর আবার উনি আমার দিকে এগিয়ে আসছে কেনো এমনেই ওনার দিকে তাকালে নিজেকে হার্টের রোগী মনে হয় বুক ধুকপুনি শুরু হয় আমার। আমি অনেক্ষন হলো চোখ বন্ধ করে আছি কিন্তু কিছু হচ্ছে না কেনো?

আমি চোখ খুলে দেখি অভি প্রশ্ন সূচক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি এদিক সেদিক তাকাতে লাগলাম। অভি আমার সিট বেল্ট লাগিয়ে দিতে একদম কাছে চলে এলো। অভির চেহারা একদম আমার মুখের সামনে।আমি জোরে জোড়ে নিশ্বাস নিতে লাগলাম। অভি সিটবেল্ট লাগিয়ে নিজের সীটে চলে গেছে। আমার কেনো এমন অবস্থা হয় এর আসে পাশে থাকলে। অভি কি সুন্দর স্বাভাবিক থাকে আমি এমন তৃষ্ণার্ত চাতক পাখির মতন হয়ে যাই। আমি গাড়ির ড্রয়ার খুলে পানির বোতলটা বের করে পানি খেলাম। অভি মনযোগ দিয়ে গাড়ী চালাচ্ছে, যেনো গাড়ী চালানোটাই তার আসল কাজ।

রচনা বাসার সামনে আমি নেমে পরি। আমি আর কিছু বলতে গিয়েও বললাম না।

” নওরীন দাড়াও।”, অভির আওয়াজ শুনে পিছে ফিরলাম।

অভি গাড়ি থেকে নেমে পিছনের সিট থেকে রাপিং পেপার এ মুড়ানো কিছু বক্স এনে আমার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললো,” এতে রচনার জন্য কিছু গিফট আছে ওকে দিয়ে দিও।”

আমার বেস্টফ্রেন্ড রচনা ওর সাথে অভির গলায় গলায় খাতিল। অনেকটা মামা ভাগ্নির মতন। রচনাকে গিফট দিচ্ছে এতে আমার খুশি হবার কথা কিন্তু কেনো জানি মনটা খারাপ হয়ে গেলো। কই আমাকে একবার চকলেট ছাড়া তো আজ পর্যন্ত কিছু দেয়নি। আমাদের বিয়ের দুমাস হতে চললো।

আমি আচ্ছা বলে বাড়ির দিকে ঢুকতেই অভি আবার আমাকে ডাকলো। অনিচ্ছা নিয়ে ওনার দিকে ফিরলাম।
আমার দিকে আরেকটা প্যাকেট এগিয়ে দিয়ে বললেন,” এটা নেও।”
বাহ্ আরেকটা গিফট।আমি ওনার দিকে তাকিয়ে বললাম,” এটাও রচনার জন্য?”
অভি না সূচক মাথা নেড়ে বললো,” এটা মা তোমাকে দিতে বলেছে।”

বলেই আর দারালোনা না সাই করে গাড়ি চালিয়ে চলে গেলো।
রাগ এবার আমার মাথায় উঠেছে। আমার শাশুড়িই ভালো এনার মতো নাকি। চিরতার রসের মতন জামাই পেয়েছি। এর নাকি এককালে প্রেম ছিলো।
অবশ্য আমার জন্যে কেনো কিছু কিনবেন আছে না অথৈ ওনার। ফিরে আসবে ওনার অথৈ ওনার কাছে যত্তসব। অসহ্য লাগে, ব্লক মেরে রেখেছি ওই ডাইনির নাম্বার আমি। আমাকে হুমকি দেয় এদের দুই জনের নামে আমি মামলা করবো, অসহ্য।

রাগে গজগজ করে উপরে উঠতেই একটা ধাক্কা খেলাম। হাতে আবার এতো কিছু অনেক কষ্টে পরে যাওয়া থেকে নিজেকে সামলে নিলাম। যার সাথে ধাক্কা খেলাম তার চেহারা দেখে আমার রাগ আরো বেড়ে গেল। রাহাত ভাইয়ের সাথে ধাক্কা খেয়েছি। রাহাত ভাই রচনার কাজিন এই ব্যাটা আমাকে বহুত জ্বালিয়েছে। ফুল নিয়ে আমার বাসার সামনে দাঁড়িয়ে থাকতো। একবার বারান্দা দিয়ে ময়লা পানি মাথায় ঢেলে দিয়েছিলাম কিন্তু তাও শিক্ষা হয়নি।

আমাকে দেখে হাসলেন,” কি ব্যাপার নওরীন কেমন আছো? ”

আমি জ্বি ভালো আছি বলে হাসার চেষ্টা করলাম কিন্তু হাসি আসলো না।

” আমাকে মনে আছে তোমার?”, এমন ভাবে বলছে দেখো মনে হচ্ছে এনার সাথে কতো জনমের পরিচয়। কম সমস্যায় ফেলেছে যে একে ভুলে যাবো।

” ভাইয়া আপনার সাথে পরে কথা বলবো রচনা রেগে আছে ওর সাথে দেখা করে আসি।”, বলেই কেটে পরলাম।
কোনো কথা বলার সুযোগ দিলাম না। রাহাত ভাই দেখতে ভালো কিন্তু ওনার সেন্টি মার্কা অভ্যাস। অ্যাটিটিউড কম, ছেলেদের অ্যাটিটিউড না থাকলে কেমন পানসে পানসে লাগে।

রচনার রুমে এসে দেখি সে শান্তিতে ঘুমাচ্ছে। আণ্টি বলেছে আজ সারারাত জাগবে তাই নাকি ঘুমিয়ে পড়ে আছে। ওকে অনেক কষ্টে জাগিয়ে তুলে ওকে গিফট গুলা দিলাম।

রচনা চোখ ডলতে ডলতে বললো,” এইগুলো তুই এনেছিস?”

আমি ওর পাশে বসে বললাম,” নাহ, আমার জামাই দিয়েছে। আমার গিফট বিকালে আসবে ”

” তা আমার জামাইবাবু আসেনি?”

আমি বললাম,” না।”

” কখন আসবে কিছু বলেছে?”

আবার বললাম,” না।”

রচনা আমাকে একটা ধাক্কা মারলো ,” কি শুরু করেছিস তখন থেকে। না ছাড়া কিছু বলতে পারিস না।”

“রাহাত ভাই এখানে কেনো বলবি একটু আমাকে।”, আমি রেগে বললাম।

” আরে ওনাকে না বলে পারি? তারউপর বিয়ে বলে কথা ওনাকে আমারও পছন্দ না।গায়ে পড়ে কথা বলতে আসে।”রচনা আমার হাতের প্যাকেটা টান মেরে নিয়ে বললো,” এইটা কি?” বলে খুলে দেখলো মেরুন রঙের একটা শাড়ি। শাড়ীটা ভীষণ সুন্দর। আমারও খুব পছন্দ হয়েছে।

” বাহ্ তোর জামাইতো দেখি খুব রোমান্টিক।”, রচনা দুষ্টামি করে বললো।

” ফালতু কথা বলিস না, এটা আমার শাশুড়ি দিয়েছে।”বলে আমি শাড়িটা দেখতে লাগলাম।

“তোর শাশুড়ি তোকে দিয়েছে আর তুই এটা না দেখে এখানে নিয়ে এলি।”,প্রশ্ন করলো রচনা।

” আরে না, আসার সময় আমাকে এটা দিয়েছে উনি, আমি খোলার সময় পাই কি করে।”, মন খারাপ করে বললাম।

রচনা হাসতে লাগলো। যেনো আমি ওকে কোনো ফানি জোকস বলেছি।

” তুই হাসি থামবি রচনা।”, ওর হাসি দেখে আরো রাগ হচ্ছে আমার।

রচনা কিছুক্ষনের জন্য হাসি থামিয়ে বললো,” তোর মাথায় যে ঘিলু নেই সেটা আমার জানা ছিলো না। এটা যদি তোর শাশুড়ি দিয়ে থাকে তাহলে অভি তোকে আমার বাসার সামনে এসে দিবে কেনো? বাসায় থাকতেই দিতে পারতো না।”

রচনা কি বলতে চাচ্ছে বুঝতে না পেরে বললাম,” ভুলে গেছিলো হয়তো।”

” জ্বি না ম্যাডাম, আপনার জামাই আপনার জন্যই কিনেছে। কি বলে দিবে বুঝতে না পেরে তোর শাশুড়ির কথা বলেছে। তুই আস্ত একটা গাধা।”, বলে ঠোঁট টিপে হাসছে রচনা।

আসলেই তো আম্মু যদি এটা এনে থাকে তাহলে সেটা নিজেই দিবে আমাকে অভিকে দিয়ে কেনো পাঠাবে। একটা ভালোলাগা কাজ করছে কেনো জানি। নিজের অজান্তেই মুখে হাসি এসে গেলো। রচনা এই নিয়ে আমাকে আরো লজ্জা দিচ্ছে।

রচনার ফোন বেজে উঠতেই আমি ফোনটা রিসিভ করলাম। শাকিল ফোন করেছে, রচনার সাথে যার বিয়ে হতে যাচ্ছে। রচনা শান্ত চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।

আমি ফোন কানে দিয়ে বললাম,” হেলো ”
ওপাশ থেকে আওয়াজ এলো,” রচনাকে দেওয়া যাবে?”। আমি ফোনটা loudspeakers এ দিলাম, রচনাও শুনছে।

” আমি রচনা, বলুন কি বলবেন।”,বলেই আমি মুখে হাত দিয়ে হাসতে লাগলাম। রচনা বসে আমার কান্ড দেখছে।

” ভয়েসটা অপরিচিত মনে হচ্ছে আমার।”, ওপাশ থেকে বললো শাকিল।

” আমার ঠান্ডা লেগেছে তাই হয়তো আপনার এমন মনে হচ্ছে।” এটা বলার সাথে সাথে ওপাশ থেকে হাসির আওয়াজ পেলাম। আমি আর রচনা কিছু না বুঝে একে অপরের দিকে তাকিয়ে আছি।

“কি হলো হাসছেন কেনো?”, আমি আবার বলতেই শাকিল বললো,” প্রথমত আমি ফোন দিলে রচনা সবসময় বলে কি চাই তোমার? আর সে আমাকে আপনি করে বলে না। তাই তুমি যেই হও না কেনো, অভিনয়টা ভুল করেছো সেটা ভেবেই হাসি পাচ্ছে।”

ফোনটা রচনার হাতে দিয়ে আমি চুপ করে বসে পড়লাম। এভাবে ধরা খাবো বুঝতে পারিনি। রচনা ফোন কানে নিয়ে বলে,” তোমার কোনো কাজ নেই সারাদিন ফোন দেও কেনো?”

আমি ওদের কোথায় মনযোগ না দিয়ে শাড়ীটা হাতে নিলাম। সত্যিই কি অভি এটা আমার জন্য কিনেছে? যদি আমাকেই দিবে তাহলে সোজাসুজি বললো না কেনো। কি লেভেল এর আনরোমান্টিক হলে নিজ শাড়ি কিনে মা দিয়েছে বলে কেউ। আমার এবার কেনো রাগ লাগছে না? উল্টো হাসি পাচ্ছে।
শাড়ির প্যাকেটটা হাতে নিয়ে দেখি ভিতরে একজোড়া ঝুমকাও রয়েছে। বাহ্ ভালোই উন্নতি হয়েছে উনার কিন্তু আমি এগুলো আজ পড়বো না। অন্য একদিন এইগুলো পড়ে অবাক করে দিবো। সে নিশ্চয়ই ভাবছে আজ ওনার দেওয়া শাড়ি গয়না পড়বো কিন্তু তা হচ্ছে না।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here