হঠাৎ এক বৃষ্টির দিনে,পর্ব:৪

0
627

#গল্পের_নাম #হটাৎ_এক_বৃষ্টির_দিনে
#পর্বঃ৪ #কাছে_আসার_মুহূর্ত
#নবনী_নীলা
অভি আমার দুপাশে হাত রেখে আমার দিকে এগিয়ে আসছে। আমি পিছাতে পিছাতে সোফার হ্যান্ডেল এর সাথে ঘেঁষে আছি। অভি আমার দিকে ঝুঁকে আসছে এইটা দেখে আমি চোখ বন্ধ করে ফেলি। ভয়ে মনে হচ্ছে ভিতরের আত্তা বেরিয়ে আসবে, বুকটা ধুক ধুক করছে।আমি চোখ খুলে দেখি অভি একদম আমার মুখের কাছে নিজের মুখ রেখে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আমি এর আগে এত কাছ থেকে অভিকে কখনো দেখিনি। আমার জামাইটা এত সুন্দর কেনো? দেখলেই আদর করতে ইচ্ছা করে। নিজে নিজে ভেবে হাসছি।

অভি ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইলো,” হাসছো কেনো তুমি?”

অভির গলা শুনে থতমত খেয়ে গেলাম। আমি এতো বলদ এভাবে কেনো হাসছিলাম। উফফ ভালো লাগে না।
” কিছু না আপনি সরুন।” বলে আমি উঠে যেতেই অভি আমার কাধ ধরে আমাকে শুইয়ে দিলো সোফায়।

অভি শোচারচর এমন করে না। আমার কাছে চলে এলে নিজেকে সামলে নেয়। হটাৎ এমন করছে কেনো? আমার হাত পা ঠাণ্ডা হয়ে গেছে। অভি আমার খুব কাছে এসে বললো,” তুমি যা করেছো এরপর তোমাকে আমি তোমাকে এমনেই ছেড়ে দিবো ভাবছো।”

অভির কোথায় আমি ঢোক গিললাম। হায় হায় বলে কি এমনেই ছাড়বে না মানে? আমি কি বলবো কি করবো কিছুই বুঝতে পারছি না। এনার সাথে আবার জ্বীন নেই তো এইটা তো স্বাভাবিক আচরণ না। আমি চোখ বন্ধ করে নিজেকে সামলে নিলাম।
চোখ খুলে দুইহাত দিয়ে অভির গাল স্পর্শ করলাম। অভি অবাক হয়ে আমার হাতের দিকে তাকালো আমার হাত রীতিমতন কাপছে।

” শুনুন বন্ধু আছেন বন্ধুর মতন থাকেন, হাসব্যান্ড হবার কোনো প্রয়োজন নেই।” বলেই অভির গাল থেকে হাত নামিয়ে এদিক সেদিক তাকাতে লাগলাম। অভি ভ্রু কুঁচকে আমাকে জিজ্ঞেস করলো,” মানে?”

আমি মাথা নিচু করে বললাম,” আপনিই তো বলেছিলেন আপনি বন্ধুর চেয়ে বেশী কিছু হতে পারবেন না ভুলে গেলেন।”

অভি চুপ করে আমার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল। তারপর উঠে স্বাভাবিক ভাবেই নিজের রুমে চলে গেল। কি হলো ব্যাপারটা? হুট করে কি হয় এই লোকটার। যাক যা হয়েছে ভালো হয়েছে কিন্তু রাগ করেছে নাকি। ধুরো রাগ করুক, আমাকে যে সারাদিন রাগায় এইবার বুঝুক কেমন লাগে।
খাবার সময়ে অভি তেমন কথা বললো না নিজের ফোন দেখতে দেখতে খাওয়া শেষ করলো। আমার ওষুধ এনে পানিসহ আমার সামনে রেখে গেলো।
নিজেকে এলিয়েন মনে হচ্ছে।

আমি আমার ফোনটা হাতে নিয়ে রুমের বাহিরে এলাম অভি নিজের রুমে বসে ল্যাপটপ এ কাজ করছে।ফোন ধরে দেখি মা, রচনা কল করেছে অনেকবার। ফোন সাইলেন্ট করা ছিলো তাই বুঝিনি। রচনা ২১বার ফোন করেছে আর এত্তগুলো ম্যাসেজ। আমি ওকে কল ব্যাক করতেই একগাদা কথা শুনতে হলো আমাকে কারন আগামীকাল রচনার গায়ে হলুদ। আমি তো একেবারে ভুলেই গিয়েছিলাম। যা কথা শুনিয়েছে সেটা আমার প্রাপ্য ছিল।

অনেক কষ্ট করে রচনাকে বুঝলাম মাফ চাইলাম। আমার কাজে রচনা যে কষ্ট পেয়েছে সেটা বুঝাই যাচ্ছে। কিন্তু এবার আরেক সমস্যা অভিকে কিভাবে বলি। আমার সাথে তো সে কথা বলছে না। আমি নিজে থেকে নিলজ্জের মতন গিয়ে কথা বলতে পারবো না তাই রচনার সাথে কথা বলাতে আমি আমার ফোনটা নিয়ে অভির সামনে ধরলাম।

অভি আমার দিকে একপলক তাকিয়ে প্রশ্ন করলো,” কি হয়েছে?” তারপর ফোন নিয়ে কানে ধরলো। তারপর তারা কি বলেছে বুঝিনি। অভি শেষে হেসে দিয়ে বললো,” আচ্ছা নওরীনকে আমি ড্রপ করে দিবো। আর আমি চেষ্টা করবো নিজেও যাওয়ার।”

কথা শেষ করে অভি ফোনটা পাশের টেবিলে রাখলো। আমি বললাম,” আপনি যাবেন না রচনার গায়ে হলুদে?”

অভি কাজ করতে করতে বলল,” I’m not sure but I’ll try.”

” কিন্তু আপনি না আমার জন্যে দুইদিন ছুটি নিয়েছেন।”, প্রশ্ন করে ফেললাম।

অভি আমার দিকে তাকালো না তার সব মনোযোগ এখন লেপটপে,” যার জন্যে নিয়েছিলাম আমারতো মনে হচ্ছে না তার কোনো প্রয়োজন আছে।”

আমি আর কথা বললাম না আমার দিকে একবার তাকাচ্ছেও না, আমাকে রাগ দেখাচ্ছে। আমি চুপ করে বিছানায় শুয়ে পড়লাম রাত ১২ বেজে ৩৯ মিনিট। আমি অভির দিকে পিঠ দিয়ে শুয়ে পড়লাম।

অভি সাথে সাথে রুমের বাতি নিভিয়ে লেপটপে নিজের কাজ করতে মনোযোগ দিলেন। আমার অসুবিধা হয় লাইট জ্বালিয়ে রাখলে তাই লাইট বন্ধ করেছেন। ওনাকে কে বলেছে আমার সুবিধা অসুবিধা নিয়ে ভাবতে। আমি জামাও বদলালাম না শাড়ি পরেই শুয়ে আছি অস্বস্থি বোধ হচ্ছে। এসি চলছে তাও আমার গরম লাগছে তাও আমি ঘাওড়ামি করে শুয়ে আছি।

খুব সকালে ঘুম ভাঙলো আমার শীত লাগছিলো তাই গায়ে জড়ানোর জন্য শাড়ির আঁচল খুঁজছিলাম।চোখ খুলে দেখি আমার গায়ে উপর আঁচলটা নেই। লজ্জায় আমি লাল হয়ে গেলাম। যদিও অভি উল্টো দিকে মুখ করে ঘুমাচ্ছে। আমাকে এ অবস্থায় দেখেনিতো।

আমি খেয়াল করলাম আমার শাড়ীর আঁচলটা অভির পিঠের নিচে। নিশ্চয় আমি রাতে এটা ছুড়ে ফেলে দিয়েছি। আমি শাড়ীর আঁচলটা দিয়ে কোনমতে নিজেকে ঢেকে নেওয়ার চেষ্টা করলাম। এক হাতে আঁচলটা গায়ে ধরে অন্য হাতে অভির পিঠের নিচ থেকে আঁচলটা টেনে আনার চেস্টা করছি আর আল্লাহকে ডাকছি যাতে অভির ঘুম না ভাঙ্গে। আমাকে এ অবস্থায় দেখলে কি ভাববে কে জানে।

আঁচলটা অনেকখানি নিয়ে এসেছি কিন্তু পুরোটা বের করার আগে অভি আমার দিকে ফিরতেই আমার কাছের আঁচলটুকুও চলে গেলো। আমি হেচকাটান সামলাতে না পেরে অভির গায়ে পড়ে গেলাম। অভির ঘুম ভেঙে গেলো। অভি আমার দিকে তাকাতেই আমি চোখ বন্ধ করে অভির বুকে মুখ লুকিয়ে ফেললাম। অভি প্রথমে কিছু বুঝেনি আমি ভয় পেয়েছি ভেবে আমাকে জড়িয়ে ধরতে গিয়ে আমার কোমরে স্পর্শ করায় আমি কেপে উঠি। অভি সঙ্গে সঙ্গে হাত সরিয়ে হাত দুটো সারেন্ডার করে রাখে।

অভি বড়ো রকমের একটা শক খেয়েছে। কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বিষয়টা বুঝতে পেরে আঁচলটা ছাড়িয়ে সেটা দিয়ে আমাকে মুড়িয়ে দিলো। আমি আঁচলে নিজেকে গুটিয়ে নিয়ে উঠে বসলাম। অভি কিছু না বলে ফ্রেশ হতে গেলো।

অভিও ভীষণ লজ্জা পেয়েছে কিন্তু সে প্রকাশ করেনি। আমারতো ইচ্ছে করছে মুখটা একটা কিছুর মাঝে ঢুকিয়ে বসে থাকি। আমি মনে হয়না কোনোদিন আর অভির চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলতে পারবো। লজ্জায় আমার কান লাল হয়ে গেছে। এ জীবনে আর কোনোদিন শাড়ি পড়ে ঘুমাবো না। আমার শিক্ষা হয়েছে।

[ চলবে ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here