সে আদরের অন্য নাম পর্ব-২

0
879

? #সে_আদরের_অন্য_নাম ?

২য় পর্ব

আজ অবন্তীদের ফাস্টইয়ারের রেজাল্ট বেড়িয়েছে আর অবন্তীর তিনটে বিষয়ে A+ মিস গিয়েছে আর এই নিয়ে উজান অবন্তীকে ইচ্ছে মতো ঝারি দিচ্ছে তার কথা সব কিছু তে সে অবন্তী কে ছাড় দেবে কিন্তু পড়াশুনার ক্ষেত্রে নো কম্প্রোমাইজ__এদিকে হিয়া অবন্তীকে টিউশনে নিয়ে যাবে বলে সেই কখন থেকে বাহিরে অপেক্ষা করছিলো কিন্তু অবন্তী নামছে না দেখে শেষে বাধ্য হয়ে উপরে উঠে আসে,আর এসেই বাসবিকে বলে অবন্তীর রুমে ঢুকতে যাবে তার আগেই উজানের মোটা গলায় অবন্তী কে বলা ঝারি গুলো শুনেই ওখানেই হিয়া থামকে যায়

উজানঃ মানে সিরিয়াসলি অবন্তী আমার আর অনিকের বোন হয়ে তুই তিনটে বিষয়ে প্লাস মিস করিস__কীভাবে কেনো__আমি পরীক্ষার আগে এতো করে তোকে নিয়ে পড়তে বসলাম আর বিনিময়ে তুই আমাকে এই রেজাল্ট হাতে ধরিয়ে দিলি__ছিঃ প্রিন্সেস ছিঃ__আমি তো জাস্ট ভাবতে পারছি না__অর্ধেক স্কীমে পরীক্ষা দিয়ে যদি এরকম রেজাল্ট হয় তাহলে গোটা বই পরীক্ষা দেবার সময় কি করবি

হিয়াঃ কি বলে রে এই লোকটা এটা খারাপ রেজাল্ট!!আল্লাহ একটু বোঝাও এনাকে আমরা যেই প্রশ্নে পরীক্ষা দিছি না সেই প্রশ্নে উনি পরীক্ষা দিলে আমার মতো পয়েন্ট তো দূরে থাক তার ধারের কাছেও আসতে পারতো না__কি জানি হয়তো পারতো শুনেছিতো খুব নাকি ভালো স্টুডেন্ট তাতে আমার কি__আমি বরং কেটে পড়ি এখান থেকে নাহলে খুন্তির উপর আসা এই ঘূর্ণিঝড় টা না আমার উপর এসে আঘাত হানে উফফ কি জ্বালা

হিয়া পা টিপে টিপে আবার ব্যাক করতে থাকলে উজান সামনের আয়নায় হিয়াকে দেখতে পেয়ে চিৎকার করে হিয়াকে থামিয়ে দেয়

উজানঃ হে ইউ__একদম পালানোর ট্রাই করবে না__জাস্ট স্টপ আন্ড কাম হেয়ার__I said come here

হিয়াঃ হি-হি পালাতে যাবো কেনো এই যে দে-খুন আম আম আমি আপনার সা-মনে দাঁড়িয়ে

উজানঃ রেজাল্ট কি তোমার

হিয়াঃ আমার রেজাল্ট!!আমা-র আমা-র রেজাল্ট তো খুব ভালো খুব

উজানঃ হ্যা তা সেটা কি ভালো,পয়েন্ট নেই

হিয়াঃ আছে আছে তো পয়েন্ট__ইয়ে মানে গোল্ডেন_গোল্ডে__ন জিপি__এ

অবন্তীঃ ঔ হারামি মিথ্যা কেনো বলছিস তোর না আমার মতো তিনটেতে প্লাস মিস গেছে তাহলে

হিয়াঃ চুপপপপ কর না__তোর ভাইয়া কি আমার রেজাল্ট চেক করতে যাচ্ছে নাকি__আজবববব

উজানঃ ছিঃ অবন্তী হিয়া গোল্ডেন আর তুই কি না তিনটে বিষয়ে__আজ বাবা আসুক আমিও দেখবো তুই কি করে এই রেজাল্ট এ সাইন করিয়ে নিস__আজ থেকে তোর সব বন্ধ সব

অবন্তীঃ ভাইয়া শোন না আমার কথা টা__ভাইয়া__ভাই__যা__হিয়ার বাচ্চা হিয়া তোকে তো আজ আমি ছিড়েই খাবো

হিয়াঃ হি-হি সত্যি বেস্টিকে এরকম করে কেলানি খেতে দেখলে মনের মধ্যে পৈশাচিক আনন্দ হয় রে বন্ধু পৈশাচিক আনন্দ হয়

অবন্তীঃ তবে রে পাওয়াচ্ছি তোকে আনন্দ দাঁড়া
_____________

আজ রবীন্দ্র জয়ন্তী অবন্তীদের কলেজে বিশাল আয়োজন করা হয়েছে।সেই উপলক্ষে অবন্তী আর হিয়া দুজনে শাড়ি পড়েছে।অবন্তী এমনিতে যা সুন্দর শাড়ি পড়লে তাকে আরো অন্যরকম লাগে কোনো মেক-আপ বা আর্টিফিসিয়াল কিছু লাগানোর প্রয়োজন হয় না তবু অবন্তী একগাদা মেক-আপ ডলবেই সাথে গাড়ো কড়া লিপস্টিক তারমতে এটা না হলে নাকি কোনো মেয়ের সাজাই পূর্ন হয় না কখনো__এদিকে আমাদের হিয়া অবন্তীর মতো তার গায়ের রঙ টা সাদা ফেট ফেটে না হলেও রঙ টা বেশ উজ্জ্বল ফর্সাই বলা চলে আর সাথে তো আছে কোমড় অবধি ঘন চুল স্ট্রেট আবার ফোলানো যেটা হওয়া উচিৎ আরকি,হিয়া আজ একটা লাল পাড় দেওয়া হলুদ শাড়ি পড়েছে মুখে মেক-আপ এর ম তো দূরে থাক চোখের কোণে কাজল নামক বস্তু টাও সে দেয়নি,শুধু দিয়েছে একটা ছোট কালো টিপ আর চুল গুলো খোপা করে লাগিয়েছে একটা গাদা ফুলের মালা আর তাতেই অবন্তীর মতো সৌন্দর্যের ভান্ডার কে চূর্ণ করে দিতে সে সক্ষম

অবন্তীঃ যাই বলিস না কেনো সালাদ টা কিন্তু সেই খেতে ছিলো

হিয়াঃ দাম টাও সে রকমি ছিলো সোনা

নবনীঃ আরে ভালো জিনিসের দাম তো একটু বেশি হবেই__তোর না সবসময় শুধু টাকার হিসাব

হিয়াঃ বাহ রে আমি কি তোদের মতো কোটিপতির মেয়ে নাকি যে টাকা পয়সা এরকম বিনা কারণে অকাজে উড়িয়ে দেবো__আমার সিচুয়েশনে থাকলে বুঝতি আমার মতো উচ্চ মধ্যবিও মেয়েদের কতো মেপেঝুকে চলতে হয়

নাবিলাঃ সে আর বলতে আমি বুঝি রে হিয়া তোর সিচুয়েশন টা,After-all আমি আর তুই তো এক কাতারেই পরি কি বলিস___মাঝেমাঝে তো আমি এটাও ভাবি আমার আর হিয়ার মতো মেয়ের,তোর আর খুন্তির মতো বন্ধু কি রকম করে জুটলো কপালে

অবন্তীঃ একদম বাজে কথা বলবি না নাবিলা__সবসময় এই কথা বলে আমাদের বন্ধুত্ব টাকে কিন্তু তোরা দুজন ছোট করে দিস, যেটা আমার মোটেও ভালো লাগে না

হিয়াঃ আচ্ছা বাবা সরি আর কখনো আমি বা নাবিলা এসব কথা বলবো না হ্যাপি___এবার তো উঠবি আমার আর এখানে এভাবে বসে থাকতে ভালো লাগছে না আমি হোস্টেল ফিরবো

অবন্তীঃ ফেরাচ্ছি তোকে হোস্টেল?

অবন্তীরা সবাই রেস্টুরেন্টে থেকে বেড়িয়েই দেখতে পায় উজান আর নীলিমা রেস্টুরেন্টটার বাহিরে একটু দূরে দাঁড়িয়ে

অবন্তীঃ সর্বনাশ ভাইয়া কি করছে এখানে___শোন না কোনো ঝামেলা হলে আমি বলে দেবো আজ নাবিলার জন্মদিন তাই সে আমাদের ট্রিট দিচ্ছে ওক্কে

নাবিলাঃ মিথ্যাবাদী মাইয়া__আমি তোর মতো মিথ্যুক এ জীবনে দুটো দেখিনি__আমি গেলাম বাবা বাড়ি তুই বরং বলে দে আজ হিয়ার জন্মদিন ঠিক আছে

এই বলে নাবিলা নবনীকে নিয়ে টুক করে একটা রিক্সায় উঠে দৌড়__এদিকে অবন্তীর তো মেজাজ তখন তুঙ্গে শালি তোর জন্য আমি এতো রিস্ক নিয়ে রেস্টুরেন্টে খেতে আসলাম আর তুই কি না আমাকে বাঘের সামনে এনে ফেলে রেখে চলি গেলি,অবন্তী মুখ ফুলিয়ে কি করবে বুঝতে পারে না কারণ কলেজে উঠার পর থেকে উজান আর অনিক তো ওকে এমন শাসনে রাখে যে ভয়ে ওর অন্তরাত্মা সবসময় ধুকপুক করে__যেমন ভাইদের তার প্রিন্সেসের প্রতি আদর তেমনি সাথে কড়া ডোজের শাসন, দুই মিলে অবন্তী বর্তমানে মাঝনদীতে ভাসমান__হিয়া অবন্তীর কাধে হাত রেখে বলে ভাইয়াকে বলে দিস যে আজ আমার জন্মদিন আমি তোদের ট্রিট দেবো বলে কলেজ ফাংশন শেষে এখানে নিয়ে এসেছিলাম__অবন্তী তো মহাখুশি হয়ে সপাটে হিয়ার গাল দুটো টেনে বলে উঠলো রুপম ভাইয়া তোকে এমনি এমনি ম্যাজিক কুইন বলে ডাকে না সত্যি তুই একটা ম্যাজিক কুইন হিয়া__এই বলে দুজনে হাটতে হাটতে উজানের কাছে যেতে থাকে

___________

উজানঃ প্রিন্সেস না ওটা__এখানে কি করছে ওদের তো কলেজে ফাংশন হবার কথা__হিয়া না সাথে ওটা

নীলিমাঃ কি ওদিকে ড্যাপড্যাপ করে দেখছো__বলো না আমাকে শাড়িতে কি রকম লাগছে__উজানননন

উজানঃ(হিয়ার দিকে দুচোখ ভরে তাকিয়ে)সুন্দর!!

নীলিমাঃ শুধু সুন্দর লাগছে

উজানঃ নাহ___অনেক সুন্দর!!

নীলিমাঃ এই তুমি কার দিকে তাকিয়ে বলছো বলো তো__উজানন__আরে আমি তো এদিকে

নীলিমা পেছনে ফিরে অবন্তীদের দেখতে পায় আর ভাবে হয়তো উজান ওর বোনকে দেখে বলছে সুন্দর

নীলিমাঃ ওহ অবন্তী__ও এখানে কি করছে

অবন্তীঃ ভাইয়াআআআআ তুমি এখানে

উজানঃ তোরা দুজন এখানে কি করছিস

অবন্তীঃ ইয়ে মানে আজ হিয়ার জন্মদিন তো তাই হিয়া আমাদের ট্রিট দিতে__প্লিজ ভাইয়া তুমি রাগ করো না এমনিতেও আমাদের কলেজের ফাংশন শেষ আমরা দুজনেই এখন বাড়ি ফিরতাম

উজানঃ ঠিক আছে__আচ্ছা ওঠ আমি বাড়ি পৌঁছে দিয়ে আসছি

অবন্তীঃ তুমি পৌঁছে দিবে ঠিক আছে চলো

হিয়াঃ তাহলে যা তুই আমি রিক্সা নেই বরং__আসি হ্যা

অবন্তীঃ আসি মানে তুই এখন একাই হোস্টেল ফিরবি নাকি।আমার পেছনে বস আমাকে নামিয়ে দিয়ে এখন ভাইয়া তোকে হোস্টেল এ ড্রপ করে দিয়ে আসবে

হিয়াঃ আরে না না তার দরকার হবে না__আমি একটা রিক্সা নিয়েই যেতে পারবো

অবন্তীঃ একদম বেশি কথা বলবি না__আমি উঠতে বলছি তুই উঠ নাহলে কিন্তু

হিয়াঃ অবন্তী না প্লিজ

অবন্তী রাগিরাগি চোখে হিয়ার দিকে তাকিয়ে রইলে হিয়া নিরুপায় হয়ে অবন্তীর পেছনে উঠে পড়ে__এদিকে নীলিমা তো প্রচন্ড ক্ষেপে যায় কোথায় সে ভাবলো একটু উজানের সাথে সুন্দর সময় কাটাবে কিন্তু এই অবন্তী এসে সব ভেস্তে দিলো__উজান নীলিমাকে একটা রিক্সায় তুলে দিয়ে বলে সামনে তো ভার্সিটি তুই ভার্সিটি গিয়ে বস আমি ওদের ড্রপ করে দিয়ে আসছি এসে তোদেরকে টাইম দিচ্ছি__বেচারি নীলিমা বাধ্য মেয়ের মতো রাজি হয়ে ভার্সিটি চলে গেলো__এদিকে উজান অবন্তী কে বাড়িতে নামিয়ে দিয়ে হিয়াকে নিয়ে ওর হোস্টেলের দিকে যাএা শুরু করে কারন অবন্তীদের বাড়ি পেরিয়েই হিয়ার কলেজের হোস্টেলে যেতে হয়, হেটে গেলে বড় জোড় দশমিনিটের মতো লাগে কিন্তু বাইক তো পাঁচ মিনিটো লাগবে না

হিয়াঃ আমরা এ রাস্তা দিয়ে কেনো যাচ্ছি এদিক দিয়ে তো অনেক ঘোরা হয়ে যাবে

উজানঃ সামনে রাস্তা ব্লক করা তাই

হিয়াঃ কেনো আমরা তো একটু আগে ওদিক দিয়েই আসলাম তখন তো ব্লক ছিলো না

উজানঃ তোমরা আসার পর ওখানে একটা এক্সিডেন্ট হয়েছে তাই ট্রাফিক পুলিশ জায়গা টা আপাতত ব্লক করে রেখেছে

হিয়াঃ ওহ!কিসের এক্সিডেন্ট না মানে বাইক না কার

উজানঃ প্রাইভেট কারের সাথে মেবি কেনো মালবাহী ট্রাকের

হিয়াঃ মালবাহী ট্রাক তো দিনের বেলা এলাও না তাহলে আপনি কি করে বলছেন যে মালবাহী ট্রাকের সাথে

উজানঃ আমি আন্দাজ করে বললাম__আমি নিজেও সিউর জানি না

হিয়াঃ ওহ__আচ্ছা তেমন সিরিয়াস কোনো এক্সিডেন্ট নয় তো মানে কেউ গভীরভাবে আহত হয়নি তো

উজানঃ আমি কি করে জানবো হিয়া কেউ আহত হয়েছে না নিহত আমি কি সেসময় ওখানে ছিলাম যে তুৃমি আমাকে আস্ক করছো

হিয়াঃ হ্যা তাও ঠিক__কিন্তু আমি যে দেখলাম আমাদের পেছনের গাড়ি গুলো ঔ রোডে ঢুকলো

উজানঃ ওরা হয়তো জানে না তাই

হিয়াঃ ওহ হতে পারে__আপনি আমাদের কলেজের ওদিকে কেনো গিয়েছিলেন আজকে তো আপনাদের ভার্সিটিতেও ফাংশন তাহলে

হিয়ার এতো এতো প্রশ্নে এবার উজান বিরক্ত হয়ে হিয়ার উপর ঝারি দিয়ে উঠে

উজানঃ তুমি একটু মুখ টা বন্ধ করবে প্লিজ__তখন থেকে একটার পর একটা একটার পর একটা প্রশ্ন করেই যাচ্ছ___তোমার কি মনে হয় আমি ইচ্ছে করে মিথ্যে বলে তোমাকে অন্য রাস্তা দিয়ে নিয়ে আসছি__আমার না হাতে এতো সময় নেই ঠিক আছে

হিয়াঃ না না আমি তো তা বলি নি__আমি তো জাস্ট

উজানঃ চুপপ একদম চুপপ আর একটা কথা না

উজানের ঝারি খেয়ে হিয়া ভ্র কুঁচকে মুখ বাকিয়ে নেয়

হিয়াঃ একটু তো প্রশ্নোই করছিলাম তার জন্য এরকম করে ঝারি দিতে হয় নাকি__বাজে লোক একটা সেবার কামড় বসিয়ে দিয়ে শান্তি মিললো না যে এখন এরকম করে ঝারি দিচ্ছে অসভ্য লোক

বাইক চলতে থাকে,এই প্রথম হিয়া কোনো ছেলের বাইকে উঠে এভাবে ঘুরছে,সময় বাড়ার সাথে সাথে হিয়ার কেমন জানি নিজেকে নিজের কাছে লাগতে শুরু করে,একবার হিয়া ওর বড় ভাইয়ের সাথে বাইকে উঠেছিলো কিন্তু এই প্রথম নিজের ভাই বাদে অন্য ছেলের বাইকে তাও আবার শাড়ি পড়ে

হিয়াঃ আচ্ছা আমি কি লজ্জা পাচ্ছি__কিন্তু কেনো___আচ্ছা আমি কি ব্লাশ করছি এমা তাই তো__ইসস একটা আয়না হলে নিজেকে একবার দেখে নিতাম,গাল গুলো লাল হয়ে যাইনি তো লজ্জায়__কিন্তু আমার এরকম লজ্জা লজ্জা ফিলি বা কেনো আসছে__উজান ভাইয়ার বাইকে বসেছি বলে!!

উজানঃ এতো লজ্জা পাচ্ছ কিসের জন্য?

হিয়াঃ আমাকে বললেন

উজানঃ বাইকে নিশ্চয় তুমি ছাড়া অন্য কেউ বসে নি

হিয়াঃ হ্যা তাই তো__আপনি কি করে বুঝলেন আমি লজ্জা পাচ্ছি

উজানঃ তোমার মুখের আবভাব দেখে

হিয়াঃ হ্যাএএ__আপনি তো পেছনে ফিরে আছেন তাহলে কি করে আমাকে দেখলেন

উজানঃ আয়নায়

হিয়াঃ আয়না?কোথায়?

উজানঃ বাইকের

হিয়া চোখ বড় বড় করে সামনে তাকিয়ে দেখে উজান আয়নায় ওর দিকেই তাকিয়ে আছে__হিয়া ফটাফট ওর চোখ নামিয়ে নেয়

হিয়াঃ সামনে দেখুন নাহলে আপনিও এক্সিডেন্ট করে বসবেন

উজানঃ হুমম

হিয়াঃ লোকটা খুব বাজে সবসময় কথায় না হলেও কাজে আমাকে লজ্জা পাইয়ে দেয় উফফ__ যাগ তবে লোকটাকে যতোটা অসভ্য ভেবেছিলাম লোকটা তোতোটা অসভ্য না__এখন অবধি ব্রেক নামক কাঙ্ক্ষিত বস্তু টা একবারো কষেনি বরং রাস্তার উঁচু উঁচু বিট গুলো খুব সাবধানতার সহিত এড়িয়ে চলছে__পৃথিবীর সব পুরুষেরা তাহলে এক না কেউ কেউ নারী দেহের তুচ্ছ তম স্পর্শও এড়িয়ে চলতে জানে!!

হিয়া নিজমনে কথাটা বলে একটা মুচকি হাসি দেয় কিন্তু ঔ যে অঘটন__উজান না চাইতেও এবার একটা গর্তের কাছে এসে দুম করে ব্রেক কষে ফেলে আর আচমকা এরকম ব্রেক কষাতে হিয়া পুরো উজানের পিঠে ঝুকে পড়ে সেই সাথে হিয়ার হাত গিয়ে পড়ে উজানের নাভি বরবার তলপেটের কাছে___নিজেকে হালকা সামলে নিলে হিয়া খেয়াল করে হিয়া ওর পুরো সামনের অংশ নিয়ে উজানের পিঠে লেপ্টে আছে আর হিয়ার হাত খামচে ধরে আছে উজানের পেট

উজানঃ সরি আমি ইচ্ছে করে

হিয়াঃ (টপাটপ নিজেকে সারিয়ে নিয়ে)ইটস ওকে

গর্ত টা পাশ কাটিয়ে উজান আবার বাইক স্টার্ট করলে হিয়া এবার নিজ মনে ক্ষেপে উঠে

হিয়াঃ ছিঃ কি বিশ্রী একটা ব্যাপার হলো__ধুর কেনো যে খুন্তি টার কথা শুনতে গেলাম

উজানঃ নামো____এসে গেছি

হিয়াঃ হুমমম___থ্যাংকস

হিয়া থ্যাংকস বলে যেই পেছন ফিরে ওর পা বাড়াতে যাবে ওমনি উজান হিয়াকে থামিয়ে দেয়

উজানঃ হিয়া (অস্ফুটে)

উজানের এরকম কলিজা কাঁপানো ডাক শুনে হিয়ার বুক টা ধক করে উঠে,হিয়া চোখ বড় করে একটা দম ফেলে পেছন ফিরে

হিয়াঃ হ্যা বলুন

উজানঃ Happy Birthday

হিয়াঃ ইয়ে মানে হ্যা মানে ধন্যবাদ

হিয়া ধন্যবাদ দিয়ে আবার পেছন ফিরে যেতে ধরলে

উজানঃ হিয়া শোনো

হিয়াঃ (টপাটপ ঘুরে এসে)হ্যা বলুন

উজানঃ এখান থেকে সোজা হোস্টেল এ নিজের রুমে যাবা,একদম এপাশ ওপাশ তাকাবা না কেউ ডাকলেও শুনবা না

হিয়াঃ কেনো কেনো কেনো শুনবো না কেনো

উজানঃ আমি বলছি তাই

হিয়াঃ আপনি বললেই হবে আমার আর কাজ নেই বুঝি

উজানঃ কি কাজ তোমার এতো

হিয়াঃ কতো কাজ আমার আপনি জানেন,এখান থেকে আগে গিয়ে মামার দোকানে ঢুকবো সকালে খরচ নিয়ে ওখানেই রেখে দিয়েছি আগে ওগুলো তুলতে হবে,তারপর খালা কে খুঁজতে হবে বলতে হবে দুপুরে আর আমার ভাত না দিতে,ও হ্যা আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম আঙ্কেলের দোকানে আমার কলেজ ড্রেস আয়রন করতে দিয়ে ছিলাম ওটা তুলতে হবে,ধ্যাত কতো কাজ আমার আর আপনি বলছেন এপাশ ওপাশ না তাকিয়ে সোজা রুমে চলে যেতে

উজানঃ আমি বলছি নিশ্চয় তার কারণ আছে

হিয়াঃ কি কারণ শুনি

উজানঃ (একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে) তোমার ব্লাউজের হুক খোলা__তুমি কি চাও তোমাকে ওভাবে কেউ দেখে নিক

হিয়াঃ হ্যাএএ!!কি সব বলছেন আপনি আমার পেছনে

উজানঃ হুম__

হিয়া লজ্জায় কি করবে বুঝে উঠতে পারে না উজানই বা কি করে দেখলো হিয়ার হুক খোলা__

হিয়াঃ এই লোক টা না কথায় কথায় আমাকে লজ্জায় ফেলে দেয় উফফ__মুখের উপর কি করে বলে দিলো আমার হুক খোলা__ছিঃ ছিঃ ইসস___আপনি মজা করছেন আমার সাথে??আম আম আমার হুক কেনো খোলা থাকতে যাবে কি প্রমাণ আছে যে যে যে আপনি ঠিক বলছেন

উজানঃ প্রমাণ লাগবে তোমার

হিয়াঃ ইয়ে মানে হ্যা মানে লাগবে

উজানঃ (আবার একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে)ভেতরে কালো রঙের কি পড়েছো ওটা

উজানের কথায় হিয়া এবার পুরো থ,চোখ বড় বড় করে শুধু ঢোক গিলছে আর উজানের দিকে করুন দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে

উজানঃ দেখি এদিকে আসো___আসো বলছি(ঝারি দিয়ে)

হিয়াঃ কে কে কেনো,না আমি আসবো না

উজানঃ আমি আসতে বলছি কিন্তু

হিয়াঃ না আমি আসবো না

উজান রাগে বাইক থেকে নেমে পড়লে হিয়া ফটাফট দু পা পিছিয়ে যায়,এতে উজান আরো রেগে উঠে,হিয়ার এক বাহু ধরে টেনে নিজের কাছে এনে হিয়ার মাথার পুরো খোঁপা টা খুলে দিয়ে উজান হিয়ার চুল গিলো পুরো পেছনে মেলে দেয়

উজানঃ এতো টা কেয়ারলেস একটা মানুষ কি করে হতে পারে

হিয়া তখনো বোকার মতো থ হয়ে আছে আর ড্যাপ ড্যাপ চোখে উজানের কার্যকলাপ দেখছে,উজান হিয়ার গাদা ফুলের মালা টা হাতে নিয়েই বাইকে উঠে বাইক স্টার্ট দেয়,যাওয়ার আগে হিয়ার দিকে ভ্রু কুঁচকে একবার তাকিয়েও নেয়,হিয়া হুশে ফিরলে টপাটপ নিজেকে ওখান থেকে সারিয়ে সামনে হাটা ধরে,ভাগ্যিস এই ভর দুপুরে হোস্টেলের রাস্তা টায় কেউ নেই নাহলে তো হয়েই যেতো আজ___

____________
হিয়াঃ হ্যা বাবা বলো,আজ হঠাৎ এই সময়ে ফোন দিলে

ইকবাল আহমেদ(হিয়ার বাবা)ঃ এমনি কি করছিস

হিয়াঃ এই তো কালকের টিউশনের পড়াগুলো চোখ বুলিয়ে নিচ্ছিলাম আরকি__তুমি কি করো খেয়েছো দুপুরে

ইকবাল আহমেদঃ হুম খেয়েছি__একটা কথা জিঙ্গেস করবো তোকে সত্যি করে বলবি

হিয়াঃ কি কথা বাবা

ইকবাল আহমেদঃ তোর রুস্তম আঙ্কেল আমাকে একটু আগে ফোন দিয়ে বললো তোকে নাকি একটা ছেলের সাথে বাইকে করে উনি ঘুরতে দেখেছে

হিয়াঃ সর্বনাশ এবার আমি বাবাকে কি বলবো__আমি তো শুধু ধ্যাত কেনো যে খুন্তি টার কথা শুনতে গেলাম___শেষে কি না রুস্তম বুড়োটাকে দেখতে হলো___আল্লাহ প্লিজ এবার আমাকে বাচিয়ে নেও আমি আর কোনোদিন কোনোদিন বাইক তো দূরে থাক কোনো ছেলের সাথে ঘোড়ার গাড়িতেও উঠবো না___

ইকবাল আহমেদঃ কি রে মা চুপ হয়ে আছিস যে

হিয়াঃ বাবা বিশ্বাস করো আমি কোনো ছেলের সাথে বাইকে উঠে ঘুরিনি__রুস্তম আঙ্কেল কাকে দেখতে কাকে দেখেছে__বিশ্বাস করো আজ তো আমাদের কলেজে রবীন্দ্র জয়ন্তী ছিলো আমি তো সারাদিন কলেজেই ছিলাম

ইকবাল আহমেদঃ তোর বড় আপু পালিয়ে গিয়ে যে ভুল টা করেছে আশা করবো তুই সেই ভুল টা__অনেক কষ্টে বাকি সম্মান টা বাচিয়ে রেখেছি তুই সেটা কে এভাবে__

হিয়াঃ বাবা প্লিজজজ__আমি বড় আপুর মতো কোনো ভুল করবো না__আমার উপর তুমি ভরসা রাখতে পারো

ইকবাল আহমেদঃ ঠিক আছে__তোর সামনের মাসের টাকা টা আমি বেতন পেলেই পাঠিয়ে দেবো এ কটা দিন একটু কষ্ট করে ম্যানেজ করে নে

হিয়াঃ ম্যানেজ করতে আমার সমস্যা নেই কিন্তু তোমার এই সন্দেহমার্কা কথা শুনে আমার খিদে পেয়ে গেলো,রাখো এখন আমি খাবো

ইকবাল আহমেদঃ হুমম রাখছি

হিয়াঃ (আমাকে ক্ষমা করে দিও বাবা আমি ইচ্ছে করে তোমাকে মিথ্যে বলিনি আমি জাস্ট বাধ্য হয়ে__আমার সাথে উজান ভাইয়ার কোনো সম্পর্ক নেই আমি শুধু ওনার সাথে করে কলেজ অবধি__আমি তোমাকে কথা দিচ্ছি আমি কখনো আর কোনো ছেলের সাথে এভাবে বাইকে ঘুরবো না কখনো না)

__________________?_________________
#Next_Part

(সুন্দর কমেন্ট পেলে রাতে দেবো বড় করে)

অবন্তীঃ বাহ হিয়ার বলে রুপম ভাইয়া চার মারলেও আমার ভাইয়া তো দেখছি সেই বলে পুরো ছক্কা হাঁকিয়ে দিলো,তারমানে আমার বেস্টি হবে আমার বড় ভাবী আমি হবো ওর ছোট ননদ?__ইসস খুশিতে তো মনে হচ্ছে আমি হার্টঅ্যাটাক ই করে বসবো উফফ__হিয়া ডার্লিং এতোদিন আমাকে যতো জ্বালাইয়াছ না তুমি এর পর বুঝবা ননদ নামক টর্চার টা কি জিনিস হা হা হা হা
______
উজানঃ আর কখনো হিয়ার দিকে চোখ তুলে তাকিয়েছিস তো আমি তোর চোখ তুলে নেবো সৈকত,ভুলে যাস না তোর ঘরেও একটা বোন আছে আর আমি তার সাথে ঠিক কি কি করতে পারি তার কোনো ধারণা তোর নেই,নেহাত আমি তোর মতো জানোয়ার না আমার চরিত্র টা এখনো সুস্থই আছে
________________★___________________

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here