#সেই_তমসায়_৫
নুসরাত জাহান লিজা
১১.
“আপনাদের বো**কা*মীর জন্য সব হয়েছে। আপনারাই যে লু*কো*চু*রি খেলে এসেছেন তাতেই এসব হয়েছে।” উ**ত্তে*জি*ত গলায় বলল ময়ূখ।
“আপনি কী বলতে চান?”
“দেখুন, আপনাদের বাবা যদি আপনাদের কিছু নাই দিতে চাইতেন, তিনি সরাসরি সেটা অন্য কোথাও দিয়ে যেতেন। তিনি আপনাদের বুদ্ধির একটা পরীক্ষা নিয়েছেন নিজের সর্বস্ব দিয়ে যাবেন বলেই।”
“তাহলে এটা কী? আপনি তাকে চেনেন না বলেই এসব বলছেন।” মুনিরা নতুন পাওয়া চিঠিটা তুলে ধরে বলল কথাটা৷
“একটু মাথাটা খাটান।”
সাঈদের দিকে তাকিয়ে ময়ূখ আরেকবার মুখ খুলল, “আপনারা কি বুঝতে পারছেন এই চু**রি*র ঘটনাটা এহতেশাম সাহেবের মৃ** *ত্যু**র সাথে সম্পর্কযুক্ত হতে পারে? যদি তাই হয়, তাহলে একজন কোল্ড **ব্লা**ডে** *ড* মা** *র্ডা**রা**রের সাথে প্রতিনিয়ত আপনারা বসবাস করছেন?”
“দেখুন ময়ূখ, আপনি…”
সাঈদকে থামিয়ে দিয়ে ময়ূখ বলল, “এখন আপনার ভাই বোনকে সত্যিটা জানানো উচিত। আমি কে আর কেন এসেছি সব।”
“মানে, আপনি সাঈদের বন্ধু নন?” রায়হান বলে উঠল।
ময়ূখ একবার তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে সাঈদের দিকে তাকাল। মুখ খুলল সাঈদই, “উনি একজন প্রাইভেট ডি*টে*ক*টি*ভ। এটা অবশ্য সত্যি বলেছিলাম যে উ*ই*ল খুঁজতেই তার সাহায্য নিতে চেয়েছি। কিন্তু উনি…”
“দেখুন, আপনারা কিন্তু একটা বড়সড় ঝুঁ**কি*র মধ্যে রয়েছেন। আমাকে তথ্য দিয়ে সাহায্য করুন। নইলে এহতেশাম সাহেবের মতো কাল অন্য আরেকজনের সাথে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি যে ঘটবে না তা কেউ বলতে পারে না। তাছাড়া আপনাদের বাবার উপরে আপনারা না*খো*শ হতে পারেন, কিন্তু তার আ* ত* তা* *য়ী কে সনাক্ত করতে চান না? একজন ঘৃ** ণ্য লোককে খোলা পৃথিবীতে ঘোরার সুযোগ দেয়াও কিন্তু অ* *ন্যা**য়।”
“আপনি তাকে ধরতে পারবেন?”
“অনেক দিন কেটে গেছে। সব আ**লা**ম*ত ন* *ষ্ট হয়ে গেছে। তবুও আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে চাই। তবে এই কথা আমাদের এই কয়েকজনের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে হবে। আমি চাই না আমার আসল পরিচয় অন্যরা জানুক এখনই। তবে সহযোগিতা লাগবে শতভাগ।”
প্রত্যেকেই সম্মত হলো। তবে এরা নিজেরা কতটুকু বি*শ্ব*স্ত এটা সে নিশ্চিত নয়।
“রাতে আপনাদের তিনজনের সাথে আমার আলাদা আলাদা বসতে হবে। এহতেশাম সাহেব কেমন লোক ছিলেন, তার প্রতি আপনাদের এমন মনোভাবের কারণই বা কী, তাও জানতে চাই। আশা করব এবার আর কিছু লু*কা*বে*ন না। তবে আমি একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে পু**লি**শ*কে জানাতে বাধ্য হব। এমন ঘটনা ধা* মা* *চা *পা দেবার চেষ্টাও কিন্তু অ*প* *রা*ধ। তখন কিন্তু সব ঘটনা বাইরে চলে যাবে। ভেবে দেখুন।”
প্রচ্ছন্ন *হু* ম* * কী তে কাজ হলো। এহতেশাম সাহেব সম্পর্কে যা শুনেছে বা নিজে বুঝেছে তাতে লোকটাকে অত্যন্ত বুদ্ধিমান এবং ধূ** *র্ত বলেই মনে হয়েছে৷ তার ছেলেমেয়েরা সে তুলনায় নিতান্তই শিশু। এটা ভা**ণ*ও হতে পারে। সব দিক নিয়েই ভাবতে হবে। সুবিধাজনক নয় কেউই।
১২.
সাঈদের ঘরে প্রথমে ওর সাথেই বসল ময়ূখ। যেহেতু আড়াল নেই আর, তাই আপনি সম্বোধনে ফিরে গেছে দুজনেই।
“আপনার চোখে আপনার বাবা কেমন ছিলেন?”
“তিনি চৌকস মানুষ ছিলেন। দূরদর্শী ছিলেন। কোনো প*রি*ক*ল্প*না করলে সবসময় ‘প্ল্যা**ন বি’ রেডি থাকত। ব্য*র্থ*তা নামক কোনো শব্দ তার ডিকশনারিতে ছিল না। গুরুগম্ভীর স্বভাবের ছিলেন। তেমন একটা কথা বলতেন না। বললেও আমাদের তা* *চ্ছি*ল্য করে বলতেন। তাই আমরাও তাকে এড়িয়েই চলতাম বলা যায়।”
“আপনার সাথে তার সম্পর্কে দূরত্ব ছিল বেশ!”
“হ্যাঁ। শুধু আমার সাথে না, অন্যদের সাথেও। শুধু মুনিমের সাথে আর তার দেখাশোনা করার জন্য একজন নার্স ছিল শিরিন নামের, এই দুইজনের সাথে ভালো সম্পর্ক ছিল তার।”
“শিরিন? উনি এখন কোথায়?”
“উনি তো চলে গেছেন। যে জন্য এসেছিলেন তার তো আর প্রয়োজন ছিল না।”
“তার ব্যাপারেও ইনফরমেশন লাগবে আমার। এই বাড়ির প্রত্যেকেই কি পুরোনো লোক?”
“তা বলতে পারেন। আসলে বাবা বিশ্বস্ত লোক ছাড়া কাউকে এ্যালাউ করতেন না।”
“আচ্ছা, বুঝলাম। উনার এই বাড়তি স*ত*র্ক*তা*র কারণটা কী হতে পারে জানেন?”
“সেভাবে জানি না। বললাম না, তেমন সখ্যতা ছিল না। তবে তার প্রচুর স্বর্ণ, অল্প হী*রাও ছিল। আরও অনেককিছু ছিল। যা তিনি সারাজীবন ঘুরেঘুরে সংগ্রহ করেছেন। কিছু এন্টিকস্ সামগ্রী ছিল। ঐতিহাসিক কিছু নিদর্শনও থাকার কথা ছিল যতদূর জানি। যেগুলো বহুমূল্যের। তাই হয়তো এই স*ত*র্ক*তা ছিল।”
“এসব কীভাবে সংগ্রহ করেছিলেন তিনি?”
“তা বলতে পারব না। তার হয়তো কিছু গো** *প* *ন সো* র্স ছিল। নানারকম লোকের সাথে তার ওঠাবসা ছিল এককালে।”
“চো* *রা*ই হতে পারে?”
“না, তবে তাদের কাছ থেকে কেনা হতে পারে। আমি ঠিক জানি না। এসব ব্যাপার মুনিম হ্যান্ডেল করত।”
“মুনিম লোকটা কেমন?”
“বাবার সাথে ওর স্বভাবের মিল ছিল। এজন্যই হয়তো এত খাতির ছিল।”
“কবে থেকে এখানে থাকেন উনি?”
“কৈশোর থেকেই বলা যায়। ওর প্রতি বাবার মনোভাব কখনো লুকাননি।” একটা চাপা ঈ** *র্ষা যেন খেলে গেল সাঈদের গলায়। যা ময়ূখের নজর এড়ায় না।
“তার এমন মনোভাবের কারণ কী?”
“সেটা জানি না। তবে আমাদের চাইতে ওই মুনিম তার কাছের লোক ছিল।”
“এখন সব হিসেব-নিকেশ কার কাছে থাকে? মুনিম তো কাজ ছেড়েছেন।”
“সাজিদ আর বাবার উ**কি*লই আপাতত এসব দেখছেন।”
ময়ূখ বেরিয়ে এলো। রায়হান আর মুনিরার সাথে কথা বলে যেটুকু বুঝল তা হলো, মুনিরা বাকি দুই ভাইয়ের মতো নয়। যথেষ্ট বুদ্ধিমতী, স্থিতধী। ঠান্ডা মাথায় সিদ্ধান্ত নিতে জানে। তিনজনের প্রত্যেকেই প্রায় অভিন্ন সুরে ওর প্রশ্নের উত্তর দিয়েছে। তবুও কোথায় যেন একটা অ*সা*ম*ঞ্জ*স্য*তা আছে।
তিন ভাইবোনের কথায় মুনিমকে বরং আরও বেশি জানার দাবি রাখা যায়। ময়ূখ সাজিদকে ডেকে পাঠিয়ে প্রশ্ন করল,
“সাজিদ সাহেব, এহতেশাম সাহেবের শেষ ছয় মাসের লেনদেনের হিসেবটা পাওয়া যাবে?”
আগে হলে হয়তো আপত্তি করত, কিন্তু যেখানে মনিবেরা মেনে নিয়েছে সে আর কী করবে। এই ভেবে কাগজপত্র নিয়ে ময়ূখের ঘরে এলো।
“একটা অস্বাভাবিক ব্যাপার আছে। স্যারের একাউন্ট থেকে একটা একাউন্টে তার মা** *রা যাবার মাসখানেক আগে বড় অঙ্কের টাকা দেয়া হয়েছে।”
“কার একাউন্ট জানেন?”
“হ্যাঁ, সেজন্যই আশ্চর্য হয়েছি। স্যারের দেখাশোনা করত শিরিন।”
“তার সাথে হয়তো চুক্তি ছিল।”
“চুক্তির টাকা স্যার ক্যাশেই দিতেন। এখানে প্রায় লাখ পঞ্চাশেক টাকার ব্যাপার।”
ময়ূখ ভ্রু কুঁচকে ফেলল। একজন নার্সকে এত বড় অঙ্কের টাকা দেবার প্রয়োজনীয়তা কী ছিল? তাছাড়া…
“এটা তার সন্তানরা জানে?”
“না, এখনো বলা হয়নি। আমি আজই জেনেছি। পরশুদিনই মুনিম আমার কাছে এসব হস্তান্তর করেছে। আজ উকিল সাহেবকে নিয়ে বসেছিলাম। টাকার গড়বড় দেখি। আজ সব খোঁজখবর নিয়ে কিছুক্ষণ আগে বিষয়টা নিশ্চিত হলাম।”
সাজিদ চলে যাবার পরে কতক্ষণ মৌনতায় কেটে গেল ময়ূখের। আরেকজন যুক্ত হলো ওর তালিকায়। ঘরের মানুষদের দিকে পরে নজর দেয়া যাক, আগে ঘরে থাকা পরের মানুষগুলো সম্পর্কে খোঁজ নেয়া যাক। তাতে প্রথমেই যে দুটো নাম আসে, তা হলো মুনিম আর শিরিন।
১৩.
সকালটা ভীষণ ফুরফুরে, শীতল। শৈত্যপ্রবাহ নাকি শুরু হবে পত্রিকায় পড়েছে ময়ূখ। সকালের খাবার খেয়েই বাড়ি থেকে বের হলো সে। একটা কালো রঙের ওভারকোটে পুরো গা ঢাকা ওর। তীব্র শীত থেকে বাঁচতেই এই ব্যবস্থা। বেলা নয়টা পেরিয়েছে, তবুও এখনো কুয়াশা জড়ানো প্রকৃতিতে।
হেঁটে বাজারের দিকে যাচ্ছে সে। কিন্তু একটা চাপা অ*স্ব*স্তি হচ্ছে। মনে হচ্ছে কেউ পি*ছু* নিয়েছে। নাহ্! আরও স*ত*র্ক হবার প্রয়োজন আছে। সে এলোমেলো অনেকক্ষণ ঘুরেফিরে এরপর ঢুকে গেল একটা দোকানে।
যেখানে লেখা, ‘এখানে টেলিফোন করা যায়’। এই এলাকায় কোনো ফোনবুথ নেই।
কে পিছু নিয়েছিল আজ তা দেখা সম্ভব হয়নি। কারণ তাতে প্রতিপক্ষ স*ত*র্ক হয়ে যাবে। সে দুটো জায়গায় কল করে কথা বলে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিল। আগে রসদ লাগবে, ত* থ্য একটা বড় উপাদান এক্ষেত্রে। সেসব ঝালাই করে তবেই মো* *ক্ষ* *ম *চা*ল দিতে হবে।
ফেরার সময় প্রথম থেকে না হলেও, খানিক এগুতেই বুঝতে পারল আবারও ফে**উ লেগেছে পেছনে।
………
(ক্রমশ)