সেই তমসায় পর্ব ১৬

0
320

#সেই_তমসায় (শেষ পর্ব- ১)
নুসরাত জাহান লিজা

ময়ূখের থমথমে চেহারাতেও খানিকটা হাসি ফুটল, তবে ভীষণ শীতল। ঘরের যেটুকুও ফিসফিস ছিল তা মুহূর্তেই শান্ত হয়ে গেল।

এবার সে বলল, “এরপর আপনি অত্যন্ত গোবেচারা সেজে এই বাড়িতে প্রবেশ করলেন, এবং ছক কষছিলেন প্রতিনিয়ত। কিন্তু সফল হতে পারছিলেন না। এহতেশাম সাহেবের মতো ধূ/ /র্ত লোক কাউকেই বিশ্বাস করেন না। একদিন সুযোগটা পেয়ে গেলেন। এরপর তার সেই জানালা বেয়ে ঘরে গিয়ে প্র/তি/শো/ধ চ/রি/তা/র্থ করে বেরিয়ে এলেন।”

“পারিনি। যদি পারতাম। ওই লোকটাকে নিজের হাতে /শে/ষ করতে পারলে শান্তিতে ঘুমাতে পারতাম। কিন্তু, আমি ভেতরে এসে দেখলাম আমার কাজটা আগে থেকেই কোন কু* বা* করে রেখেছে। আমার শি/কা/র কেড়ে নিয়েছে।” সাজিদের মুখটায় অপার /হিং /স্র/তা। আ/হ/ত সিংহ যেন এই ঘরে চলে এসেছে পথ ভুলে। ফুঁ/স/তে ফুঁ/স/তে কথাগুলো বলল সে।

“বুঝলাম, এখন বলুন তো সেদিন ভেতরে গিয়ে কী দেখেছিলেন?” এক গ্লাস পানি সাজিদের দিকে এগিয়ে দিয়ে প্রশ্ন করল ময়ূখ।

পানিটা নিয়ে খুব ধীরে সুস্থে তাতে চুমুক দিল সাজিদ, ওর স্নায়ুবিক ;উ/ত্তে/জ/না খানিকটা প্রশমিত হয়েছে বোঝা গেল। বড় করে শ্বাস টেনে বলতে শুরু করল, “অনেকদিন ধরেই একটা সুযোগ খুঁজছিলাম। প্রথমদিকে কিছু পেয়েওছিলাম। হাত নিশপিশ করত। কিন্তু তখন কিছু করলে ধ/রা পড়ে যেতাম৷ কারণ তখনো আমাকে কেউই বিশ্বাস করে উঠতে পারিনি৷ আমি যেহেতু কিছুটা হলেও তার কাছাকাছি থাকতে পারতাম তাই স/ন্দে/হ/টা আমার উপরেই বর্তাতো। মুনিমও সবসময় তার কাছাকাছি থাকত। এরপর আর সেভাবে সুযোগ পাইনি। দু’দিন খুব বৃষ্টি হলো। অনেকের মনেই তার জন্য একটা চাপা ক্ষো/ভ ছিল, উ/ই/ল করার পর তা ম/হা/মা/রী/র মতো সং/ক্র/মি/ত হলো। প্রথম বৃষ্টির রাতে আমি প্ল্যান করে ফেললাম। প্রকৃতিও আমাকে সহযোগিতা করল। দ্বিতীয় রাতে অমাবস্যা ছিল। গাঢ় অন্ধকার। দিনের অনবরত বৃষ্টির পরে ভীষণ ভ্যাপসা গরম আর গোমট একটা আবহাওয়া ছিল। এমন রাতগুলোতে ওই জানালা খোলা থাকবে সেটা জানতাম। তবে অমাবস্যার জন্য খুলবে কিনা দ্বিধায় ছিলাম। চাঁদের প্রতি তার ভালোবাসা ছিল খুব। একমাত্র এটাকেই বোধহয় তিনি কোনো হিসেব নিকেশ ছাড়াই ভালোবাসতেন।” মুখে হাসি থাকলেও তাতে প্রচ্ছন্ন বিদ্রুপ মাখা।

ঘরে এখন পিনপতন নীরবতা। ময়ূখের অন্তর্ভেদী দৃষ্টি উপেক্ষা করে সাজিদ বলে চলল, “ঘুঁটঘুঁটে অন্ধকার রাতে, আমি জানালায় হাত দিতেই কাঠের ভারি পাল্লাটা সরে গেল। আমি খুশি হয়ে উঠলাম। সেটা বেয়ে ভেতরে ঢুকলাম। কিন্তু প্রথমে তাকে কোথাও দেখলাম না। এবার অবাক হলাম, তিনি ঘরে নেই অথচ জানালা খোলা এমন কোনোদিন হয়নি। সা/ব/ধা/ন হয়ে গেলাম। দুদিনের বৃষ্টিতে ইলেকট্রিসিটির দ/ফা/র/ফা। একটা হ্যারিকেনের টিমটিমে আলো ছাড়া ঘরে আর কোনো আলো নেই। আরেকটু সামনে এগুতেই পায়ে কিছু একটার সাথে ধা//ক্কা খেলাম। স্বয়ং এহতেশাম আহমেদ মেঝেতে লুটিয়ে আছে৷ সমস্ত অ/হং/কা/র আর দ/ম্ভ নিয়ে লোকটা ভূপাত ধরণীতল।” ঘর কাঁপিয়ে হেসে উঠল সাজিদ। তবে মুহূর্তেই তার চেহারার বিষাদ ফুটে উঠল। গলার স্বর অত্যন্ত নিচু করে স্থিতি বজায় রেখে বলল,

“কিন্তু আমি তার এই অহমিকা ভাঙতে পারিনি। আমি বাবা-মায়ের কাছে জবাব দিতে পারব না, যে তাদের সাথে যে অ/ /ন্যা/ /য় করেছে তার শা/ /স্তি আমি নিজে দিয়েছি। পারিনি।” ছেলেটার মানসিক স্থিতি নিয়ে সন্দিহান হতে পারে যে কেউ। কিন্তু ময়ূখ জানে তেমন কিছু হয়নি।

“অস্বাভাবিক কিছু দেখেছিলেন ঘরে?”

“না তো। আমি আর কিছু বলতে পারব না এখন।” এতক্ষণ সত্যি বললেও এবারের কথাটা যে সত্যি নয় তা ময়ূখ বুঝতে পারল। বলার আগে একটু সময় নিয়েছে, চোখের পাতার কুঞ্চনটুকুও নজর এড়ায়নি।

তবে আপাতত আর সেটা নিয়ে প্রশ্ন করল না। সাজিদ যাকে বাঁচাতে চাইছে তার সাথেও কথা বলবে সে। আগে প্রথম থেকে সে বাড়ির সকলের সাথে হওয়া কথোপকথন আর তাদের কার্যকলাপ আরেকবার বিশ্লেষণ করবে সে৷ ময়ূখ একটা জিনিস খেয়াল করেছে প্রথমদিকে কেউই মুখ খোলেনি, এমনকি এবাড়ির কর্মীরাও না। তবে সাঈদরা বলতে শুরু করার পরে তারাও মুখ খুলেছে। যা কিছু স্বাভাবিকতা বিবর্জিত বলে মনে হয়েছে, তাও অকপটে বলেছে তারা।

“রায়হান সাহেব ব্যবসায় লস খেয়ে ঋণে জর্জরিত ছিলেন, ওদিকে আবার সাঈদ সাহেব নমিনেশন পেপার কিনতে চাইছিলেন। আপনার বাবা ভর্ৎসনা করে বলেছেন, ‘আগে নিজেকে সামলাতে শেখ। মানুষের দায়িত্ব পরে নে।’ মুনিরা ম্যাডামের হাজব্যান্ডেরও টাকা প্রয়োজন, বোনের সংসার গুছিয়ে দেবার জন্য। এত অবজ্ঞার পরেও আপনারা সকলেই তাকিয়ে ছিলেন সেই উ/ই/লে/র দিকেই। টাকাটা যত দ্রুত হাতে আসবে ততই আপনাদের জীবনে নিশ্চিন্ত নিশ্চয়তা। কিন্তু লোকটা বেঁচে থাকলে তো সেটা হাতে আসবে না। যে মে/ /রে/ ছে, সে আপনাদের উপকারই করেছে, তাই না?”

“কী বলতে চান আমরা করেছি এটা?” রায়হান ক্র/দ্ধ গলায় বলল।

“দেখুন, আমরা যেমনই হই, সুযোগ-সন্ধানী বা যা ইচ্ছে বলতেই পারেন৷ কিন্তু তাই বলে তিনি খু/ /ন? তিনি যেমনই হউন আমাদের বাবা তো!” মুনিরার গলায় তীব্র অসন্তোষ।

সাঈদ কিছু বলার জন্য মুখ খুলতে যাচ্ছিল কিন্তু ময়ূখ থামিয়ে দিল।

“সেটা আমি জানি, আপনারা এটা করেননি। তবে এই বাড়িতে একজন আছেন, যিনি এহতেশাম সাহেবের দ্বিতীয় বিয়ের কথা জানতেন, মুনিম আর শিরিনের পরিচয় সম্পর্কেও অবগত ছিলেন।”

“কে?” বেশ কয়েকটা মুখ থেকে একযোগে প্রশ্নটা এলো।

ময়ূখ সেই ছবিটা হাতে পেতেই বুঝতে পেরেছিল যে এই কে/ /সে/ র সাথে ব্ল্যা/ক/মে/ই/লে/র একটা গভীর যোগসূত্র রয়েছে।

“বলছি।”

একটু সময় নিয়ে ময়ূখ স্থির দৃষ্টিতে মৃদুলার দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করল, “কীভাবে জেনেছিলেন বিষয়টা, ম্যাডাম?”
……..
(ক্রমশ)
)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here