সেই আদুরে দিন পর্বঃ০৮

0
1216

#সেই_আদুরে_দিন
#পর্বঃ০৮
#Arshi_Ayat

শুদ্ধতার চোখ রাঙানোটা শিউলীরও চোখে পড়লো তাই আর কিছু না বলে চলে গেলো।শিউলী যাওয়ার পর শুদ্ধতা সন্দিহান চোখে রৌদ্রুপের দিকে চেয়ে রইলো।ওর এমন চাহনী লক্ষ করে রৌদ্রুপ ভ্রু কুঁচকে বলল,’কি হয়েছে?’

‘কাহিনী কি?’শুদ্ধতার কন্ঠে তীক্ষ্ণতা।

‘কিসের কাহিনী?’

‘এই মেয়েটা আপনাকে শার্ট খুলতে বলল কেনো?’

‘আরে আমার শার্ট ঘামে ভিজে গেছে তাই বলেছে।অন্য কিছু না।’রৌদ্রুপ কৈফিয়ত দেওয়ার ভঙ্গিতে বলল।

শুদ্ধতা কিছু না বলে রৌদ্রুপের মুখের দিকে একবার তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে উঠে গিয়ে কাঠের দরজাটা বন্ধ করে দিলো।তারপর রৌদ্রুপের সামনে এসে দাড়িয়ে ওর শার্টের বোতাম খুলতে লাগলো।এদিকে শুদ্ধতার এহেন কান্ডে রৌদ্রুপ থ বনে গেলো।সন্দেহ হচ্ছে এটা আসলেই শুদ্ধতা তো!

শুদ্ধতা রৌদ্রুপের গা থেকে শার্ট’টা খুলে দেয়ালের সেই চাপানো কাঠের আলনার ওপর মেলে দিয়ে বলল,’শুকিয়ে যাবে।আর এটা শুকানোর পরই বাইরে যাবেন।’

রৌদ্রুপ শুধু বলদের মতো চেয়েই রইলো কিছু বলতে পারলো না হঠাৎ শুদ্ধতার কথায়,আচরণে অধিকার বোধ লক্ষ হচ্ছে।অজন্তেই কি ভালোবাসা ধরা দিচ্ছে?রৌদ্রুপের ওষ্ঠে প্রভাতের সূর্যের ন্যায় স্নিগ্ধ এক হাসি ধরা দিলো।পাশে বসে থাকা শুদ্ধতাকে চকিতে বিছানার ওপর ফেলে দিয়ে ওর ওপর ঝুঁকে পড়লো।শুদ্ধতা ভ্রু কুঁচকে বলল,’কি হয়েছে?এমন করছেন কেনো?’

‘শুনলাম তুমি নাকি ভালোবাসো?’রৌদ্রুপ দুষ্ট হাসি দিয়ে বলল।

শুদ্ধতা বুঝতে না পেরে বলল,’কাকে?’

‘আমাকে।’

‘একটুও না।’এটা বলেই ভেঙচি কাটলো শুদ্ধতা।

‘সত্যি?’

‘হ্যাঁ।’

‘প্রমাণ করো।’

‘কি প্রমাণ করবো?’

‘এই যে তুমি আমাকে ভালোবাসো না এটা প্রমাণ করো।’

‘পারবো না।’

‘তাহলে বলে দাও ভালোবাসো।’

‘আচ্ছা ঠিকাছে প্রমাণ করবো তবে প্রমাণ করতে কি করতে হবে আমায়?’

‘তুমি যদি এখন এমুহূর্তে আমার ঠোঁটে কড়া একটা চুমু খেতে পারো তাহলেই বুঝবো তুমি আমাকে ভালোবাসো না।আর হ্যাঁ কমপক্ষে দুইমিনিট ধরে চুমু খেতে হবে।’

শুদ্ধতা চোখ গরম করে বলল,’হোয়াট!কি বলেন এসব?চুমুর সাথে ভালো না বাসার কি সম্পর্ক?’

‘আছে সম্পর্ক কিন্তু তুমি বুঝবা না।এখন বলো তুমি চুমু দিবে নাকি আমি বুঝে নেবো তুমি আমায় ভালোবাসো।’

শুদ্ধতা রাগে রৌদ্রুপ ধাক্কা মেরে উঠে বসে বলল,’পারবো না চুমু দিতে আপনাকে।’

‘হ্যাঁ আমি জানতাম তুমি আমাকে ভালোবাসো।এইজন্যই তো চুমু দিবে না।’রৌদ্রুপ পেছন থেকে উল্লাসিত কন্ঠে বলল।

‘আচ্ছা আমি চুমু দিয়ে প্রমাণ করে দিবো যে আমি আপনাকে ভালোবাসি না তবে সেটা রাতে।’

‘রাতে হলে দুইমিনিটে চলবে না চার মিনিট লাগবে।’

শুদ্ধতা চিবিয়ে চিবিয়ে বলল,’আচ্ছা।’
আর মনে মনে রৌদ্রুপকে গালি দিতে দিতে বলল,’দাড়াও চান্দু এমন কামড় দিবে যে চুমু কি সেটাই ভুলে যাবা।’
এদিকে রৌদ্রুপ হাসছে শুদ্ধতাকে জব্দ করতে পারবে বলে ওইদিকে শুদ্ধতা হাসছে রৌদ্রুপকে শিক্ষা দিতে পারবে বলে।

একটু পরেই কে যেনো দরজায় নক করলো।শুদ্ধতা চোখ দিয়ে ইশারা করলো যেনো শার্ট’টা পরে নেয়।রৌদ্রুপও তাই করলো।দরজা খুলতেই শুদ্ধতা দেখলো রৌদ্রুপের খালা হাসিমুখে বললেন,’তুঁয়ারা আত মুখ ধুই লও আঁই হানা দি যাইর।(তোমরা হাত মুখ ধুয়ে নাও আমি খাবার দিয়ে যাচ্ছি।)

শুদ্ধতা বুঝতে পারলো না।পেছন থেকে রৌদ্রুপ বলল,’আচ্ছা খালা।’

হাতমুখ ধুতে কলপাড়ে যেতে হলো ওদের।শুদ্ধতাকে কল চেপে দিলো রৌদ্রুপ।এখন রৌদ্রুপকে কল চেপে দিবে কে?শুদ্ধতা তো আগে কখনো চাপে নি!এরই মধ্যে শিউলি এসে বলল,’আঁই ফেইক ডাবাই দির রৌদ্রুপ ভাইয়া তুঁয়াই আত মুখ ধুই ল।'(আমি কল চেপে দিচ্ছি রৌদ্রুপ ভাইয়া তুমি হাত মুখ ধুয়ে নাও।)

শুদ্ধতা শিউলির কথা বুঝতে না পারলেও ওর কলের হাতল ধরা দেখে অনুমান করে ফেললো।তারপর তীক্ষ্ণ কন্ঠে বলল,’না শিউলি তুমি যাও আমিই চেপে দিবো।’

‘না অনরতুন দিয়া ন পরিবু আঁই ই ডাবাই দির।'(আপনার দেওয়া লাগবে না আমিই চেপে দিচ্ছি।)

‘বললাম না আমি দিবো।’শুদ্ধতা কিছুটা রেগে বলল।

অবস্থা বেগতিক দেখে রৌদ্রুপ বলল,’আচ্ছা শিউলি তুমি যাও তোমার ভাবিই দিবে।’

শিউলি একবার শুদ্ধতার দিকে ক্রুর চোখে চেয়ে নিঃশব্দে চলে গেলো।ও চলে যেতেই রৌদ্রুপ বলল,’রেগে যাচ্ছিলে কেনো?’

এমনিতেই মেয়েটার আদিখ্যেতা সহ্য হচ্ছিলো না তারওপর রৌদ্রুপে এই ঢং এর কথা শুনে শুদ্ধতা আরো তেলে বেগুনে তেতে উঠে বলল,’চুপ,একদম একটা কথা বলবেন না।’

রৌদ্রুপ ধমক খেয়ে চুপ হয়ে গেলো।শুদ্ধতা এই প্রথম বারের মতো নলকূপ চাপলো তাও হিংসার বশবর্তী হয়ে কিন্তু সেটা নিজেও টের পাচ্ছে না।

দুপুরে খেয়ে রৌদ্রুপ বের হলো কি একটা কাজ আছে নাকি!রৌদ্রুপ যাওয়ার পর ওর খালা এসে শুদ্ধতার পাশে বসলো।তারপর বলল,’বিয়ে অইয়ে দে হদিন অইয়ে?'(বিয়ের কতোদিন হলো?)

শুদ্ধতা একটু একটু বুঝতে পেরে বলল,’চারদিন হয়েছে।’

উনি হেসে বললেন,’রৌদ্রুপ পোয়াওয়া বেশি ভালা।(রৌদ্রুপ ছেলেটা খুব ভালো।)

শুদ্ধতা না বুঝেও বুঝদারের মতো হাসি দিলো।তাতে যেনো মহিলাটা আরো খুশী হলো।সে শুদ্ধতাকে পরামর্শ দেওয়ার ভঙ্গিতে বললেন,’উনো মেয়েপোয়া জামাই রে আঁচল দি বাঁধি রাহিবা ছারি দিলেই সমস্যা।(শোনো মেয়ে স্বামীকে আঁচল দিয়ে বেঁধে রাখবে ছাড়া দিলেই সমস্যা।)

এই কথাটা শুদ্ধতা অনেকটাই বুঝলো।তাই মনে মনে বলল,’হ্যাঁ বাঁধতে তো হবেই নাহলো আপনার মেয়ে কখন নিজের আঁচলে বেধে ফেলে তার ঠিল নেই।’ তবে এটা মনে মনে বললেও শুদ্ধতা মাথা নেড়ে মহিলার কথায় সায় দিলো।

রৌদ্রুপ বাসায় ফিরলো রাত নয়টায়।এতক্ষণ শুদ্ধতা শুয়ে বসে বোরিং ফিল করছিলো।রৌদ্রুপকে দেখে খুশিই হলো তবে সেটা প্রকাশ না করে বলল,’এতো দেরি হলো যে?’

‘একটা কাজ ছিলো।তুমি খেয়েছো?’

‘না এখনো খাই নি।’

‘আচ্ছা তাহলে খেয়ে নেই আসো।’

রৌদ্রুপ ফ্রেশ হয়ে আসতে আসতেই খালা খাবার দিয়ে গেলো।খাওয়া দাওয়া শেষ করে রৌদ্রুপ বলল,’যাবে?’

‘কোথায়?’

‘জোড়াদীঘি।কাছেই বেশিক্ষণ লাগবে না।’

‘এখন যাবো?’

‘সবাই ঘুমাক তারপর।’

‘আচ্ছা।’
সবাই ঘুমাতে বেশিক্ষণ লাগলো না।সাড়ে দশটার মধ্যেই সবাই ঘুমিয়ে পড়লো।সবাই ঘুমিয়ে পড়ার পর রৌদ্রুপ শুদ্ধতাকে নিয়ে আস্তে আস্তে বেরিয়ে পড়লো।

এখনো পুরোপুরি দোকানপাট বন্ধ হয় নি তবে কিছুক্ষণের মধ্যেই বন্ধ হয়ে গেলো।হাঁটতে হাঁটতেই রৌদ্রুপ শুদ্ধতাকে বলল,’একটা কথা বলি?’

‘বলুন।’

‘শাহিনুর খালাকে দেখলে না?বাবা মা মারা যাওয়ার পর আমি ওনার কাছেই বড় হয়েছি।উনি আমাদের বাড়িতে কাজ করতেন।আমার বিশ বছর পর্যন্ত উনি আমাদের বাড়িতে ছিলেন।এরপর ওনার স্বামী মারা যাওয়ায় উনি এখানে চলে আসেন।ওনার একটা ছেলে আছে সে সৌদি থাকে আর একটা মেয়ে নিয়ে উনি এখন এখানেই থাকেন স্বামীর বাড়িতে।আমার যখন বিশ বছর ছিলো তখন ওর বয়স ছিলো আট।এখন অনেক বড় হয়ে গেছে।খালা চলে যাওয়ার পর আমি একাই থাকতাম।মাঝেমধ্যে সময় পেলে খালার কাছে চলে আসতাম।সবার থেকে আমার ওনাকেই বেশি আপন মনে হয়।’

‘হ্যাঁ অনেক ভালো উনি।আপনাকে ভালোবাসে অনেক।’

ওরা কথা বলতে বলতেই দীঘির পাড়ে চলে এলো।এখন জায়গাটা জনমানবশূন্য!দীঘির নির্মল পানি ছুয়ে মৃদু হাওয়া বইছে।দীঘির পাড়ে একটা জায়গা নির্বাচন করে ওরা বসে পড়লো।
‘এখানে বাতাসটা অনেক সুন্দর।’

‘হ্যাঁ।ভালোই লাগে জায়গাটা।’রৌদ্রুপ বলল।হঠাৎ কিছু মনে পড়ে যাওয়ায় আবারও বলল,’দুপুরে কি বলেছিলে মনে আছে?’

শুদ্ধতা এই ভয়টাই পাচ্ছিলো।মনে মনে বলছিলো রৌদ্রুপ যেনো ভুলে যায় কিন্তু নাহ!ভুলে নি!এখন কি করবে!শুদ্ধতা ঢোক গিলে বলল,’চুমু কি দিতেই হবে?’

‘তুমি বলেছিলে প্রমাণ করবে।’

‘আচ্ছা চোখ বন্ধ করুন আপনি।’

‘এখন তো অন্ধকার।তবুও চোখ বন্ধ করতে হবে?’

‘হ্যাঁ।’

‘আচ্ছা ঠিকাছে করলাম।’

রৌদ্রুপ চোখ বন্ধ না করেই বলল করেছি।শুদ্ধতা অন্ধকারেই ওর চুল পেছনটা মুট করে ধরে এই প্রথমবার নিজের ওষ্ঠ অন্যকারো ওষ্ঠে মিলিয়ে দিলো।
——————-
আরমান সাহরীফ ঘুমাচ্ছিলেন।হঠাৎ ঘুমের মধ্যেই বুঝতে পারলেন কেউ হয়তো তার ঘরে এসেছে।চোখ খুলে দেখলেন তার ঘরে দুইজন আপাদমস্তক ঢাকা আগুন্তক।

চলবে…
(ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here