সূর্যশিশির পর্ব ৮

0
368

সূর্যশিশির
৮.
রূপা দ্রুত জ্বলন্ত সিগারেট হাতের মুঠোয় চেপে ধরে, সঙ্গে সঙ্গে হাতে অসহ্য জ্বালাতন অনুভব হয়। তবুও সে মুঠো খুললো না। যে গোপন অভ্যাস কাকপক্ষীও জানলো না তা কোন পুরুষ জেনে গেল?
কণ্ঠটির মালিক এবার উঁকি দিলো। মুখটি চিনতে পেরে কিঞ্চিৎ হা হয়ে গেল রূপা। অপর মানুষটিও অবাক হলো। বিস্ময়ে প্রশ্ন করলো, ‘রূপা না?’

রূপা কিছু না ভেবেই বললো, ‘রূপা! রূপা কে? আমার নাম সুইটি।’

লোকটি চোখের চশমাটি ঠিক করে আরো গভীরভাবে রূপাকে পর্যবেক্ষণ করলো। রূপা পালানোর জন্য ঘুরে দাঁড়াতেই লোকটি হইহই করে ওঠলো, ‘এই…এই দাঁড়াও। তুমিই তো রূপা। মিথ্যে বলছো কেন? সিগারেট টানছিলে আবার মিথ্যা বলাও হচ্ছে! আমি কালই তোমার বাবার কাছে যাবো।’

রূপা বাম হাত দ্বারা কপাল চাপড়ে ফিরে তাকালো। ঢোক গিলে গলা ভিজিয়ে বললো, ‘বিশ্বাস করুন স্যার, আমি আজই প্রথম সিগারেট হাতে নিলাম। একটু টেস্ট করে… ‘

স্যারের তীক্ষ্ণ চাহনির সামনে দাঁড়িয়ে রূপা বাকিটুকু আর বলতে পারলো না। সে চোখ নত করে অপরাধী সুরে বললো, ‘মেয়ে মানুষ হয়ে সিগারেট টেস্ট করার কথা ভাবাও উচিত হয়নি। আমার ভুল হয়ে গেছে, স্যার। আব্বাকে বলবেন না প্লিজ।’

কথা শেষ করে রূপা আড়চোখে তাকায়। চশমার সুরক্ষায় থাকা বুদ্ধিদীপ্ত চোখ দুটির মালিকের নাম বখতিয়ার ফাইয়াজ। নবম-দশম শ্রেণিতে থাকাকালীন একটি স্বনামধন্য কোচিংয়ের ইংরেজি শিক্ষক হিসেবে ফাইয়াজের সাথে তার পরিচয় হয়েছিল। তখন ফাইয়াজ মাস্টার্স করছিল। পাশাপাশি কোচিং-এ পড়াতো। নিয়মিত কোচিং-এ না যাওয়ার জন্য, না পড়ার জন্য প্রায় প্রতিদিন রূপাকে শাস্তি দিয়েছে সে।

ফাইয়াজ রূপার মুঠো করা হাতের দিকে তাকিয়ে কাঠকাঠ গলায় বললো, ‘হাতের মুঠো খুলো।’

রূপা মুঠো খুলতেই মুচড়ে যাওয়া সিগারেটটি মেঝেতে পড়ে। সিগারেট দেখে ফাইয়াজ চোখমুখ বিকৃত করে বললো, ‘লজ্জাজনক, খুবই লজ্জাজনক! আর কখনো যেন হাতে সিগারেট না দেখি। যাও, রুমে যাও।’

রূপা এক ছুটে নিজের ঘরে প্রবেশ করে দরজা বন্ধ করে দিলো। জানালার ফাঁকফোকর দিয়ে উঁকি দিয়ে দেখলো, ফাইয়াজ একা একা কিছু বলছে কিন্তু ঠিক কী বলছে শোনা যাচ্ছে না! সে বিরক্ত হয়ে দেয়ালে কপাল ঠুকে বিড়বিড় করে, ‘এই উটকো ঝামেলা আবার কোথা থেকে উড়ে এলো, উফ!’

পরদিন রূপা জানতে পারলো, ফাইয়াজ এখন থেকে তাদের প্রতিবেশী। বাড়ির মালিক বহুদিন ধরে লন্ডনে আছে। এতগুলো বছর বাড়িটি বন্ধ থাকায় রূপা ধরে নিয়েছিল এখানে আর কেউ আসবে না। শান্তিতে বসে সিগারেট টানার দিন শেষ ভাবনাটা মনে হানা দিতেই আক্ষেপে তার মেজাজ চড়ে যায়। সে হনহনিয়ে বাজারের দিকে রওনা দেয়।
_
পা বাজারের মাটি স্পর্শ করতেই অরুনিকার বলা কথাগুলো মনে পড়ে গেল। রূপা হোটেলে না গিয়ে সোজা পশ্চিম দিকে এগিয়ে যায়। ক্যারাম খেলার ঘরটি টিনের। মালিকের নাম শফিক; ধূর্তবাজ লোক। সকালবেলা ক্যারামবোর্ড গুছিয়ে রেখে চা বিক্রি করে। খেলা শুরু হয় দুপুর বারোটায়। বেশিরভাগ সময় একটা পনেরো-ষোল বছর বয়সী ছেলে ঘরটির দায়িত্বে থাকে৷ যখন যারা খেলে তাদের নাম লিখে রাখে। শফিক ফিরলে হিসাব বুঝায়।
রূপা গিয়ে দেখে শফিক নেই। ছেলেটি বসে আছে। সে একটা চেয়ার টেনে বসে বললো, ‘ কি রে মাছুম কেমন আছস? দিনকাল কেমন যায়?’

‘আর কইও না রূপাবু। বাজারের কোন শয়তানগুলা জানি কয়দিন পর পর পুলিশরে খবর দেয়। পুলিশের ডরে থাকতে থাকতে কইলজাডা শুকায়া যাইতাছে।’

রূপা পায়ের উপর পা তুলে চেয়ারে হেলান দিয়ে বললো, ‘অন্যখানে কাজ নিলেই তো পারিস।’

‘এইডা কেমনে হইবো কও? শফিক কাকার মতো এতো টেকা আর কে দিব?’ মাছুমের মুখভর্তি পান। যখন কথা বলে চারদিকে থুথু ছিটকে পড়ে। রূপা একটু সরে বসলো।

‘তোর শফিক কাকা তো ঠিকই নিজেরটা বুঝে। দূরে থেকে নিজেকে রক্ষা করে আর তোরে দোকানে বসিয়ে নিজের ব্যবসা চালায়।’

মাছুম আপনমনে পান চিবুচ্ছে। সে জবাব না দেয়াতে রূপা প্রসঙ্গ পরিবর্তন করলো, ‘শুনলাম, দোকানে নাকি মদটদও রাখিস?’

মাছুম কৃত্রিম হাসলো। বললো, ‘এইডা ডাহা মিচা কথা৷ মদ রাখুম কেন? চোর, ডাহাইত, সন্ত্রাস -মন্ত্রাস সব আইয়া ক্যারাম খেলে এর লাইগগাই পুলিশ আয়।’

রূপা চারপাশে দৃষ্টি বুলিয়ে বললো, ‘ওহ আচ্ছা।’

মাছুম আগ্রহ নিয়ে প্রশ্ন করলো, ‘তুমি এই বেলা এইহানে কেন? কোন দরকার আছিলো?’

রূপা মাথার ক্যাপ ঠিক করতে করতে বললো, ‘তোর রূপাবুরে একটা হেল্প করতে পারবি?’

‘যদি পারার মতো কও তাইলে তো করমুই।’

রূপা রয়েসয়ে ধীরেসুস্থে বললো, ‘কয়দিন আগে একটা বদমাশ হোটেলে গিয়ে খাওয়াদাওয়া করছে। বিল দিতে যখন বললাম বলে, কাল বিল দেব। এরপর আর কোনো দেখা নাই। শুনছি, তোদের এখানে নাকি ক্যারাম খেলছে। তুইতো সবার নাম লিখে রাখিস৷ যদি নামটা জানতে পারতাম ভালো হতো। তুই যদি চিনিস আরো ভালো হয়।’

মাছুম স্বাভাবিক গলায় বললো, ‘আইচ্ছা আমি শফিক কাকা আইলে বলমুনে তোমার কথা।’

‘এখন দরকার রে ভাই। তুই আমারে হেল্প কর। বিনিময়ে তোর রূপাবু তোরে দুপুরে ফ্রি তে খাওয়াবে। তোর যা ইচ্ছে তুই তা নিয়ে খাবি।’

রূপা কথাটি বলে ঠোঁট টিপে হাসলো। মাছুমের খাবারের প্রতি প্রচণ্ড লোভ। টোপ নিশ্চয়ই গিলবে। তাই হলো! খাবারের কথা শুনে মাছুমের চোখ দুটি চকচক করে ওঠে। সে শীঘ্রই টেবিলের ড্রয়ার খুলে কাঙ্খিত খাতাটি বের করে বললো, ‘কুনদিন আর কুনসময় খেলছে এইডা আগে কও।’

‘পোলাপান খেলতে তো সবসময় দুপুরে আসে। কিন্তু গত রবিবার সকালেও নাকি এখানে মানুষজন ছিল? তখনই বদমাশটা খেলছে।’

‘হ, হ। ওইদিন সকালেও হইলো। এরা কাকার কাছের লোকজন। দাঁড়াও বাইর কইরা দিতাছি।’

মাছুম পৃষ্ঠা উল্টিয়ে রবিবারে লেখা নামগুলোতে পৌঁছায়। উপরের অংশে পাশাপাশি চারজনের নাম লেখা। রূপা নামগুলো এক নজর দেখে বললো, ‘জিতছে কোন দুজন?’

মাছুম অঙ্গুলিনির্দেশে দুজনের নাম দেখালো। রূপা নাম দুটো পড়ে – হিরণ ও দুলাল। অরুনিকার যাকে ভালো লেগেছে সে হিরণ নাকি দুলাল?

রূপা বললো, ‘দুজনের মধ্যে কাউকে চিনিস?’

‘না গো রূপাবু। হেইদিনই দেখলাম খালি।’

‘আচ্ছা বলতো, দুজনের মধ্যে সুন্দর কে?’

মাছুম কিছুক্ষণ ভেবে বললো, ‘দুইজনই দেখতে ফরসা। তয় লম্বা বেশি এইযে হিরণ, এই বেডা।’

রূপা অনেকক্ষণ হিরণ নামটার দিকে চেয়ে রইলো। এরপর চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো। বললো, ‘এদের মধ্যে কেউ যদি আবার আসে আমাকে খবর দিস। আর দুপুরে খেতে চলে আসিস।’
_
চারিদিকে যেন অন্ধকার সমুদ্রের ঢেউ। অন্ধকার পেরিয়ে কিছুতেই আলোর রেখা ধরা দিচ্ছে না। ভাবতে ভাবতে মাথা ব্যথায় বিষিয়ে ওঠেছে৷ তবুও হিরণ নামের মানুষটিকে কীভাবে দ্রুত খুঁজে বের করা যায় সেই উপায় মাথায় আসছে না৷ যতক্ষণ না ছেলেটিকে খুঁজে বের করতে পারবে ততক্ষণ অবধি শান্তি মিলবে না রূপার। সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে সে অপরাহ্নের রান্না শেষ করে।
যোহরের নামায শেষ হতেই হোটেলে ভিড় লেগে যায়। বারেক, রূপা, সুজন ব্যস্ত হয়ে পড়ে নিজ নিজ দায়িত্বে। এই ফাঁকে খরিদ্দারদের সাথে মাছুমও এসে খেয়ে গেল। মাছুম যে বিনা পয়সায় খেয়েছে বারেক মিয়াকে টের পেতে দিল না রূপা।

তিনটা’র দিকে যখন ভিড় হ্রাস পেল তখন হীরা আর দুলাল এসে প্রবেশ করে হোটেলে। তারা এমনভাবে এসে বেঞ্চিতে বসে যেন এলাকার চেয়ারম্যান এসেছে। বারেক মিয়া রূপাকে ইশারা দিলেন, যা-ই হয়ে যাক এদের সাথে যেন সে তর্কে না যায়।

রূপা টেবিল পরিষ্কার করছিলো। বারেকের ইশারাকে সম্মান করে অন্যদিকে সরে যায়। এরা দুজন গত তিনদিন ধরে প্রতিদিন দুই বেলা এসে খেয়ে যাচ্ছে। টাকা দেয়ার কথা বারেক মিয়া তো বলেনই না রূপাকেও বলতে মানা করেছেন।

হীরা আয়েশি ভঙ্গিতে বসে রূপাকে ডাকলো, ‘ও চাপিলা মাছ, আজ কী রান্না হলো?’

রূপা ফিরেও তাকালো না। সে জগে পানি ভরছে৷ সুজন বললো, ‘মাছ, গোস্ত, ভত্তা, ডাইল সব আছে। কী খাইবেন কন?’

হীরা সুজনকে কাছে টেনে এনে প্যান্টের চেইন খুলে দিয়ে বললো, ‘গরুর মাংস আছে?’

সুজন চোখমুখ বেজার করে দূরে গিয়ে দাঁড়ায়। প্যান্টের চেইন লাগিয়ে বললো, ‘হ আছে।’

হীরা ঘার ঘুরিয়ে দুলালকে জিজ্ঞাসা করলো, ‘তুই কী খাবি?’

দুলাল মাথা নাড়িয়ে বললো, ‘গরুই।’

বারেক সুজনকে নিয়ে খাবার বাড়তে হেঁশেলে গেলেন। বাটিতে গরুর মাংস পরিবেশন করে সুজনের হাতে দিয়ে বললেন, ‘সাবধানে নিয়ে যা।’

সুজন দরজার কাছে এসে সবার অগোচরে এক দলা থুথু ফেললো বাটিতে। এরপর আঙুল দিয়ে মিশিয়ে হীরা আর দুলালের সামনে নিয়ে রাখলো।

রূপা গিয়ে বসে ক্যাশ কাউন্টারে। হীরা এক লোকমা খেয়ে রূপার দিকে তাকায়। রূপা তাকে পুরোপুরি এড়িয়ে চলছে। সবসময়ই এমন করে। দুলাল খেতে খেতে বললো, ‘ভাই এইডা মাইয়া নাকি পাত্তর? ডেইলি কত কথা কন, কিছুতেই ভাঙে না, মচকায়ও না।’

হীরা এক ঢোক পানি খেয়ে বললো, ‘এরে দেখলেই মন চায় গলায় ঝুলিয়ে ঢোল বাজাই।’

দুলাল, হীরা একসঙ্গে হেসে ওঠলো। দুলাল বললো, ‘তয় ভাই, এর লগে এক রাইত থাকার অনেক শখ। এমন বাঘিনী মাইয়া আমি দুইটা দেখি নাই।’

‘হবে…হবে। সবুর কর, সুযোগ পেলেই শখ মিটে যাবে।’

হীরা খাওয়াদাওয়া শেষ করে বারেক মিয়াকে বললো, ‘কাকা, বড় মেয়ের বিয়ে দিবেন কবে?’

তার উদ্দেশ্য কথা দিয়ে রূপাকে উত্তেজিত করে দেয়া। সে দেখতে চায় কতক্ষণ…কতদিন এই মেয়ে চুপ থাকে।

বারেক বললেন, ‘আরো কয়টা বছর যাক।’

‘এখনই তো শরীরের কোনো ঠিক নাই। তক্তার মতো দেখতে। কয়েক বছর পর তো বুড়ি হয়ে যাবে। আপনার কাকা জলদি মেয়ের বিয়ে দেয়া উচিত। রিক্সাওয়ালা, ল্যাংড়া, কানা যা পান তুলে দেন।’

বারেক শূন্য চোখে রূপার দিকে তাকালেন। রূপা আড়চোখে নিজের পিতাকে দেখে। মানুষটার দৃষ্টিতে এই মুহূর্তে কী আছে? অসহায়ত্ব? নাকি অনুরোধ? লোকে তাকে যত যা-ই বলুক এই মানুষটা কখনো প্রতিবাদ করে না, হয়তো কখনো করবেও না। তার কাছে হোটেল রক্ষা করাটাই বড়।

বারেক জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে বললেন, ‘ভাগ্যে যখন আছে তখন এমনি হয়ে যাবে।’

‘হয়ে যাবে এটা কেমন কথা? দেখেন কাকা, আপনার মেয়ে তো দেখতে শুনতেও ভালো না। মেয়ের মতোও না, ছেলের মতোও না। মোটা একটা জিন্স, মোটা একটা শার্ট পরে ঘুরঘুর করে। এরকম মেয়ের বিয়ে দিতে দেরি করা মানে অনেক বড় বোকামি। আপনি আমাদের যত্ন করে খাওয়ান আমাদের একটা কৃতজ্ঞতা আছে না? আপনি বললে আমি আপনার মেয়ের জন্য উপযুক্ত ছেলে খুঁজে দেবো। কী বলেন?’

বারেক প্রত্যুত্তরে বলার মতো কথা খুঁজে পেলেন না। রূপাকে অভিমানে অন্যদিকে ফিরে থাকতে দেখে বুকের ভেতরটা কেমন ছটফট করছে৷

হীরা বাপ-মেয়ে দুজনকেই চুপ থাকতে দেখে অধৈর্য হয়ে পড়ে। সে এবার আরো গভীরে চলে আসে, ‘তাছাড়া রূপার শরীরে তো কিছুই নাই। সামনে-পেছনে সব সমান। খালি হাড্ডি। এমন মেয়েরে কি আপনি বিয়ে করতেন? মজা পাইতেন? আপনার মেয়ের তো কোনো সাইজই নাই। এখন তবুও বয়স কম বলে চালিয়ে দেয়া যাবে। বয়স বাড়লে কিন্তু আর চালানো যাবে না।’

রূপার শরীরে যেন বিদ্যুৎ ছড়িয়ে পড়ে। কান্নারা একযোগ হয়ে আটকে পড়ে গলায়। কেউ কীভাবে কোনো জন্মদাতাকে তার মেয়ে নিয়ে এমন কথা বলতে পারে? আর সেই জন্মদাতাকেও দেখো, কেমন স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে! তার এক চোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ে। সে দ্রুত সেই জল মুছে ঢকঢক করে পানি খেল।

এতো বড় কথা বলার পরও যখন বারেক মিয়া কোনো প্রতিক্রিয়া দিলো না দুলাল হীরাকে গুঁতো দিয়ে ইঙ্গিত করে সেই কথাটা বলতে। হীরা খ্যাঁক করে গলা পরিষ্কার করলো। সরু চোখে চারপাশ দেখে বললো, ‘কাকা মেয়েটারে একবার আমার বাসায় পাঠিয়ে দিয়েন। দুলালের যদি ভালো লাগে পরদিনই বিয়ের ব্যবস্থা করে…’

থাপ্পড়ের শব্দ শুনে চমকে ওঠে রূপা। বারেক মিয়া হীরাকে থাপ্পড় মেরেছেন! হীরা ডান গালে এক হাত রেখে রক্তবর্ণ চোখে তাকায়। বাইরে থেকে কয়েকজন মানুষ দৃশ্যটি দেখে দাঁড়িয়ে পড়ে।

আকস্মিক ঘটনায় দুলাল হতভম্ব হয়ে গেল। হীরা ক্রোধে – আক্রোশে ‘শু’য়োরের বাচ্চা’ বলে এক হাতে বারেক মিয়ার বুকের পাঞ্জাবি খামচে ধরে, অন্য হাত প্যান্টের পকেটে ঢুকিয়ে ছু’রি বের করলো। রূপা দ্রুত ক্যাশ কাউন্টারের উপর দিয়ে লাফিয়ে নেমে আসে। হীরা ছু’রি ব্যবহার করার পূর্বে রূপা তাকে ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে দেয়। হীরা ধাক্কা সামলাতে না পেরে দুটো বেঞ্চি নিয়ে মেঝেতে উল্টে পড়ে। বেঞ্চি পড়ার বিকট শব্দ শুনে হোটেলের সামনে মানুষের ভিড় জমে যায়।

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here