সুপ্ত বাসনা পর্ব ১০+১১

0
1512

#সুপ্ত_বাসনা
লেখিকা সুরিয়া মিম
পর্ব- ১০+১১

– “কে জানে ছেলেটা কি ভেবেছে আমাকে?” সকালে ইমান’কে হাঁচি দিতে দেখে মিম বলল,
– “দেখলেন স্যার! আপনার ঠাণ্ডা লেগে গেছে,কথা শুনবেননা কিছু না এমদম ঠিক আছে।” ইমান ফাইল ঘাঁটতে ঘাঁটতে মিম’কে বলে,
– “ওহ! প্লিজ,মিহ! এতো বকবক না করে,আমাকে এক মগ কফি করে দেবে?” মিম মৃদু হেসে ইমান’কে বলে,
– “আপনার জন্য আমি আমার হাতের স্পেশাল লেবু চা করে রেখেছি,স্যার! খেয়ে দেখেন, ঠান্ডায় বেশ উপকার দেবে; কথা বললে শুনবেন না,সেই অসুখ বাঁধিয়ে এবার শান্তি হয়েছে আপনার মনের মাঝে?”
– “তুমি কি আমার বউ? মিহ? এতো বকছ কেন আমাকে?”
– “আচ্ছা আর বকবো না স্যার! তবে আমার আপনার বউ হওয়ার ইচ্ছে নেই।”
– “সে কেন হবে?”
– “মানে কি? আমি ‘গে’ নাকি? কখনো তাকিয়ে দেখেছেন নিজের দিতে? ইলহান স্যার,ঠিক বলেন আপনার মাথায় সমস্যা; আপনা’কে নিউরোসার্জনের কাছে নিয়ে যেতে হবে।” ইমান কিঞ্চিৎ ভ্রু কুঁচকে মিম’কে বলে,
– “ভদ্রভাবে কথা বলো মিহ! নয়তো মার খাবে আমার হাতে।”
– “মারুন নাঃ! স্যার,আমি কি ভয় পাই নাকি আপনা’কে? আপনি মার্সাল আট’স টুকু জানেন না, আপনার তালিম নেওয়া উচিৎ আমার কাছ থেকে।” ইলহান সাহেব বসে বসে মজা নিচ্ছেন ছেলের চেহারা দেখে,মিমের তালে তাল দিচ্ছেন সকাল সকাল ভালোই বিনোদন পেয়েছেন হলঘরে এসে।ইমান মিমের সাথে কথায় পেরে না উঠে ইলহান সাহেব’কে বলে,
– “ড্যাড! তুমি কেন কিছু বলছ না ওকে?”
– “ওকে বলে লাভ কি বাবা? ছেলের কথা ঠিক আছে; তুমি কখনো ভেবে দেখেছ তোমার কত রাইভেল’স আছে? তারা যে-কোনো ভাবে তোমার ক্ষতি করে দিতে পারে,তুমি মার্সাল আট’স শিখে নাও।আই মিন, থিংক আবাউট ইট ওঁকে?” ইমান লেবু চা খেতে খেতে তখন পা বাড়ায় নিজের ঘরের দিকে।

দুপুরে অফিস থেকে ফেরার পর,
দোতলার সিঁড়ি বেয়ে উপরে ওঠার সময় ইমান খেয়াল করে দেখে,ইমা মিম’কে জড়িয়ে ধরে দাঁড়িয়ে আছে।মিম কিছু বলতে যাবে,তখুনি সে থেমে যায় ইমান’কে সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে; ইমা মিম’কে জড়িয়ে ধরে বলে,
– “আরেহ! বলনা,ওই….বল? এখন কি হবে?” মিমের কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে ইমা রেগে গিয়ে ওকে বলে,
– “একা ঘরে পাই! তখন তোর খবর আছে।” মিম ইমার মাথায় হাত বুলতে বুলতে বলে,
– “চিন্তা করো না বোন,তোমার পরীক্ষা অনেক অনেক ভালো হবে।”
– “আশ্চর্য! তুই পরীক্ষা? পরীক্ষা পেলি কোথা থেকে?” মিম দাঁতে দাঁত চেপে ইমা’কে বললো,
– “আরে থাম,ভাই! তোর মহামান্য ভাই! সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে আছে।” ইমা এবার বোকাবোকা হাসি দিয়ে মিম’কে বলে,
– “ধন্যবাদ,মিহান ভাইয়া! অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।” মিম এইবার… মিটিমিটি হেসে বলে,
– “হ্যাঁ,আপু! এখন যাও তুমি,আমাকে কাজে যেতে হবে।নইলে তো স্যার’কে চেনোই! আমার চাকরি চলে যাবে।” ইমান মনেমনে বলে,
– “ইমা! তুই প্রেম করার জন্য ছেলে আর পেলিনা এ দেশে? শেষমেশ এই….হাফ লেডিজ টার সাথে? যে নিজেই লজ্জা পায় ছেলে হয়ে আরেকটা ছেলে’কে দেখে,
ছেলে হিসেবে অন্তত ভালো,মিহ! তবে বাসর রাতে তোকে দেখে সে নির্ঘাত অক্কা পাবে।” রাতে ইমান’কে ঘরের বাহিরে ঘুরঘুর করতে দেখে,ইমা বেশ চিন্তিত হয়ে ইমান’কে জিজ্ঞেস করে,
– “ভাইয়া তোমার কি কোনো কাজ আছে,আমার সাথে? না মানে, কিছু কি বলতে চাও আমাকে?” ইমান ইমা’কে ধরে পাশে বসিয়ে বলে,
– “প্রেম যখন করবি,তখন আমাকে বলতে পারতি? তাই বলে ওই….হাফ লেডিজ টার সাথে?” ইমা সঙ্গে সঙ্গে রেগে গিয়ে ইমান’কে ঝাড়ি মেরে বলে,
– “কি আবোল-তাবোল বকছ ভাইয়া? তোমার মাথা ঠিক আছে?
– ” তুই অস্বীকার করতে চাইছিস বোন? তোর কোনো সম্পর্ক নেই মিহানের সাথে?”
– “আরে ধুরর,আমি কি ‘গে’ নাকি ভাইয়া? যে মেয়ে হয়ে প্রেম করবো আরেকটা মেয়ের সাথে?” ইমান বেশ অবাক! দু’জনেই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে একে অপরের দিকে,পরক্ষণেই ইমা হাসতে হাসতে ইমান’কে জড়িয়ে ধরে বলে,
– “জাস্ট কিডিং,ভাইয়া! আমার কোনো সম্পর্কে নেই মিহান ভাইয়ার সাথে,আমি স্পর্শ’কে পাওয়ার চেষ্টা করছি; কিন্তু সে পাত্তা’ই দিচ্ছে না আমাকে।আমি ওদের বাসায় গিয়েছিলাম আজ,
জানো? মিম কতোটা বদলে গেছে? ও এখন আর আগের মতো অবুঝ নেই ভাইয়া, বড্ড বেশি বাস্তববাদী হয়ে গেছে।” ইমান উত্তেজিত হয়ে ইমা’কে জিজ্ঞেস করে,
– “মিম আমার কথা জিজ্ঞেস করেনি তোর কাছে?” ইমা বললো,
– “নাঃ! ভাইয়া; তার বোধহয়, প্রেম ঘটিত কোনো ব্যাপার-স্যাপার আছে অস্ট্রেলিয়াতে! দেখলাম, সারাক্ষণ ভিডিও কলে ব্যস্ত ছিলো সে।” ইমান তখন এস্ত পায়ে বেড়িয়ে যায় ইমার ঘর থেকে,সাথে সাথেই রাইমা এসে মেয়ে’কে বললেন,
– “তুই তো এখুনি ফাঁসিয়ে দিচ্ছিলি মেয়ে টা কে?” ইমা হাসতে হাসতে মা’কে জড়িয়ে ধরে বলে,
– “ডোন্ট ওয়ারি,মা! সব কিছু ঠিক আছে,শুধু আমি ভাই’কে পরীক্ষা করার জন্য মিথ্যে টা বললাম আর তার চোখ দু’টো লাল হয়ে গেছে,আরেহ! তুই যখন এতোই ভালোবাসবি,তখন কষ্ট কেন দিয়েছিলি মেয়ে টা কে?” মিম ইমান’কে রাতের খাবার খাওয়ার জন্য ডাকতে এসে দেখে,
ছেলেটা নেশা করে বিছানায় পরে আছে,তার হাতে একটা ইঞ্জেকশন,বুঝতে বাকি নেই সে ড্রাগস নিয়েছে কিছুক্ষণ আগে।মিম ইমান’কে ধরে অনেক কষ্টে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে বলে,
– “পাগল নাকি আপনি? পাগলামো করছেন কেন নিজের সাথে?” ইমান ঢলতে ঢলতে মিম’কে বলে,
– “আমাকে একটা সিগারেট ধরিয়ে দেবে,মিহ? বলো না,দেবে আমাকে?”
– “আপনার এই….মুহূর্তে সুস্থ হয়ে ওঠা খুব প্রয়োজন স্যার! আমি আপনা’কে নিয়ে যাবো একজন ভালো কাউন্সিলরের কাছে,আপনার কাউন্সিলিং এর খুব প্রয়োজন,আপনি এগুলো কি করে বেড়াচ্ছেন নিজের সাথে?” ইমান মিমের বলা কথা গুলো শুনতে পেলো না,ধুপ করে শুয়ে পরলো ওর পাশে।মিম তার চুলে বিলি কেটে দিতে দিতে বলে,
– “ডক্টর আহসানউল্লাহ্’কে ফোন করতে হবে,আপনার হাবভাব আমার কিছুতেই সুবিধার ঠেকছে নাঃ! মিঃ, এতো কেয়ারলেস হলে কি করে হবে?” ডক্টর আহসানউল্লাহ্ মিমের ফোন পেয়ে বাড়িতে এসে ইমানের চেকআপ করে বলেন,
– “মা! আমি যদি ভুল না হই ইমান ‘ক্রিস্টাল মেথ’ নামক একটি মাদক দ্রব্য গ্রহণ করেছে,আর এই…ক্রিস্টাল মেথ বা আইস হ’ল স্ফটিক মেথামফেটামিনের সংক্ষেপণ।এটি ড্রাগের মেথামফেটামিনের একমাত্র রূপ।

মেথামফেটামিন একটি সাদা স্ফটিক জাতীয় ড্রাগ যা মানুষ শুঁকিয়ে (নাক দিয়ে শ্বাস ফেলা), ধূমপান করে বা সুই দিয়ে ইনজেকশনের মাধ্যমে গ্রহণ করে বা কেউ কেউ এটিকে সরাসরি মুখের মাধ্যমে গ্রহণ করে,তবে সকলেই এটি গ্রহণের দৃঢ় ইচ্ছা বৃদ্ধি করে, কারণ ড্রাগ, ড্রাগের সুখ এবং কল্যাণের একটি ভ্রান্ত ধারণা তৈরি করে – আত্মবিশ্বাস, হাইপার্যাকটিভিটি এবং শক্তি।লোকেরা ক্ষুধাও কমে যায়।এই….ওষুধের প্রভাবগুলি সাধারণত ছয় থেকে আট ঘন্টা অবধি স্থায়ী হয় তবে চব্বিশ ঘন্টা পর্যন্ত চলতে পারে।

প্রথম অভিজ্ঞতা কিছু পরিতোষ জড়িত হতে পারে, কিন্তু শুরু থেকে methamphetamine ব্যবহারকারীর জীবন ধ্বংস শুরু হয়। এটি একটি খুব ঘাতক মাদক দ্রব্য ড্রাগ।তাই এটি ইয়াবার চেয়ে অনেকগুণ বেশি ক্ষতিকর মাদক।ইয়াবার চেয়ে অনেক গুন বেশি প্রতিক্রিয়া তৈরি করে মানবদেহে।তাই মাদকাসক্তি বিষয়ক গবেষণা ও ঢাকার নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এমদাদুল হক বলেছেন,
– “ইয়াবা বা হিরোইন হল ওপিয়ামের বাইপ্রোডাক্ট আর এগুলো থেকেই প্রসেস করে এখন নতুন নতুন মাদক তৈরি হচ্ছে।মিম মামণি! আমাদের সবাই’কে ইমান’কে এই….ক্ষতিকর মাদকদ্রব্যের করালগ্রাস থেকে বের করে আনতে হবে,নাহলে ওর ভবিষ্যৎ শেষ; মনে হচ্ছে ও অনেক আগে থেকেই এ….ধরনের মাদকদ্রব্য গ্রহণ করে আসছে এবং এতদিনে তার প্রতিক্রিয়া ওর শরীরে প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে।ইমা হঠাৎ কাঁদতে কাঁদতে এসে মিম’কে জড়িয়ে ধরে বলে,
– ” জানিস? মা এর আগেও ভাই’কে একবার ড্রাগস নিতে হাতেনাতে ধরেছে,বাবা খুব রাগ করেছিল আর মে’রেও ছিল ওকে।” মিম ইরানে মুখ টা তুলে ধরে বলে,
– “ওর মা’র খাওয়াই উচিত,ছেলে টা বড্ড বেশি বার বেড়েছে; মন চায় ধরে থাপ্পড়াই,আমার মাথা টাই গরম হয়ে গেছে।”

চলবে,,,,,,

সুপ্ত_বাসনা
লেখিকা সুরিয়া মিম
পর্ব- ১১

– “ওর মা’র খাওয়াই উচিত,ছেলেটা বড্ড বেশি বার বেড়েছে; মন চায় ধরে থাপ্পড়াই,আমার মাথা টাই গরম হয়ে গেছে।” প্রায় ছয় ঘন্টা পর,ইমান ঘুম থেকে উঠে নিজের ঘরে সবাই’কে দেখে চিন্তিত হয়ে জিজ্ঞেস করে,
– “কি হয়েছে? তোমরা সবাই কেন বসে আছো আমার মাথার কাছে?” মিম ইমানের ঘর থেকে খুঁজে পাওয়া ক্রিস্টাল মেথ গুলো ওর চোখের সামনে রেখে জিজ্ঞেস করে,
– “স্যার! এই….মাদকদ্রব্য গুলো এ বাসায় কোথা থেকে এসেছে? আমি তো আপনা’কে এই….সব এনে দেইনি,তাহলে কে আপনা’কে এ সব এনে দিয়েছে? ইমান কিছুক্ষণ চুপ থেকে ধীরস্থির ভাবে মিম’কে বললো,
– ” দেখ,মিহ! আমি এতো কৈফিয়ত দিতে বাধ্য নই তোমাকে।” তখন ইলহান সাহেব পাশ থেকে বলে ওঠেন,
– “আলবাত বাধ্য তুমি, কারণ কৈফিয়ত আমি চেয়েছি তোমার কাছে।নিজেকে কি মনে করো ইমান তুমি? তোমার কি মনে হয়? বাবা হয়ে ছেলের অধঃপতন দেখতে খুব ভালো লাগে? আসলে আমাদের দোষ বাবা! যে, আমরা মানুষের মতো মানুষ তৈরি করতে পারিনি তোমাকে।কি চাও কি তুমি? আমরা সবাই মুখ লুকিয়ে চলি এ সমাজে? আগে তোমাকে নিয়ে আমাদের গর্ব হতো আর এখন লজ্জায় মাথা ‘হেঁট’ হয়ে গেছে সবার কাছে,আত্মীয়-স্বজন এখন আর সালাম ঠুকে কথা বলেনা,তারা তোমার শিক্ষা-দীক্ষা নিয়ে প্রশ্ন করে আমাদের কাছে।” ইমান এতে কিছুটা অনুতপ্ত হয়ে মাথা নত করে ইলহান সাহেব’কে বলে,
– “ক্ষমা করে দাও,ড্যাড! আমার ভুল হয়ে গেছে।আসলে আমি নিজেকে সামলে রাখতে পারিনি,তাই এই…..ড্রাগস নিয়েছিলাম গতকাল রাতে।” রাইমা ধরা গলায় ছেলে’কে বললেন,
– “আমরা সবাই ক্ষমা করতে করতে ক্লান্ত হয়ে গেছি বাবা! প্লিজ এই….বার,এই….যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দাও আমাকে এবং তোমার বাবা’কে…..,তুমি কখনো ভেবে দেখেছ তোমার ছোটো বোন’কে কি করে পাত্রস্থ করবো ভালো পাত্রের কাছে? তারা এক পা আগালে দু’পা পিছিয়ে যাবে তোমার কাণ্ডকারখানা দেখে……।” ইমা কাঁদতে কাঁদতে ইমান’কে বলল,
– “তুমি অনেক নোংরা ভাইয়া,আমার লজ্জা করে তোমাকে নিজের ভাই বলে পরিচয় দিতে….,তুমি একটা স্বার্থপর,নিজের খুশিই থাকা টাই সব তোমার কাছে,তুমি কখনো হয়তো ঠাণ্ডা মাথায় ভেবে দেখনি যে এই….. বাড়িতে তোমার মা,বাবা,ভাই,বোন আছে।” মিম ইমানের গায়ে হাত বুলতে বুলতে বলে,
– “স্যার! আপনি কি বুঝতে পারছেননা,সবাই আপনার জন্য কষ্ট পাচ্ছে? আপনা’কে এই…. অবস্থায় দেখে….,
গতকাল রাত থেকে কেউ কিছু খায়নি,সবাই দুশ্চিন্তায় আপনার মাথার কাছে বসে আছে।” ইমান মিমের হাত চেপে ধরল, বলল,
– “মিহ! একটু বাথরুমে নিয়ে যাবে আমাকে?”
– “জ্বি,চলুন স্যার! আপনি শরীর কি ঠিক আছে? খারাপ লাগছে না তো? ফোন করবো ডক্টরের কাছে?” ইমান বলল,
– “নাঃ! তার কোনো প্রয়োজন নেই,শরীর ঠিক আছে।তুমি কি ফোন করতে পারবে মুবিনের কাছে?” মিম হাসতে হাসতে বললো,
– “স্যার! সে আপনার ভয়তে নেটওয়ার্কের বাহিরে চলে গেছে,তবে আমি আপনা’কে একটা খবর দিতে পারি; কারণ আমি শুনেছি দু-তিনের মধ্যে আপনার কাজিন ‘মিম’ হয়তো এই….বাড়িতে আর নয়তো আপনাদের অফিসে ব্রাইডাল ফটোশুটের জন্য যাবে।” ইমান উল্লাসিত হয়ে ওকে জিজ্ঞেস করে,
– “সত্যি বলছ মিহ তুমি? এই…খবর কে দিয়েছে তোমাকে?
– “কেন আপনার বাবা! শুধু বলতে মানা করেছিল আপনা’কে।” ইমান হাসিমুখে বাথরুম থেকে বেড়িয়ে এসে একটা টাকার বান্ডিল গুঁজে দেয় মিমের হাতে….তারপর বললো,
– “থ্যাংক’স ব্রো,বলো তোমার আর কি লাগবে? তুমি নির্ভয়ে চাইতে পারো আমার কাছে।” মিম মৃদু হেসে বলল,
– “আপনি ভালো হয়ে জান স্যার! তাতেই হবে,না মানে,কোন মেয়ে এই…রকম মদখোর মাতাল ছেলে বিয়ে করতে চাইবে? আপনি বলতে পারেন আমাকে?”
– “না চাক,অন্তত প্রেম করতে চাইবে আমার সাথে।” মিম মনেমনে বলে,
– “শালার ব্যাটা! তোর কি এতো’ই সস্তা বলে মনে হয় আমাকে? আমি একবার নিজের ফর্মে আসি,চোখের জলে নাকের জলে করে ছাড়বো তোকে।” ইমান শার্টের বোতাম লাগাতে লাগাতে মিম’কে বলল,
– “কি ব্যাপার ব্রো? এভাবে খিঁচ মে’রে কেন তাকিয়ে আছো আমার দিকে?” মিম ব্লেজার টা ইমানের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে,
– “স্যার! আমি দেখতে পাচ্ছি লাল বাতি জ্বলছে আপনার ভবিষ্যতে,আপনার ভবিষ্যৎ আমাবস্যার রাতের মতো অন্ধকার,কে জানে? কি হবে আপনার সাথে?” ইমান বাঁকা ঠোঁটের হাসি দিয়ে মিমের দু’গাল চেপে ধরে বলে,
– “আমি বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে চাই মিমের সাথে।” মিম মনেমনে বলে,
– “আমার রুচি এতো টাও খারাপ না ব্রো! কি করে বোঝাই আপনা’কে?” মিম হালকা কেশে ইমান’কে বললো,
– “স্যার! তাই বুঝি? না মানে,আপনার মাথা ঠিক আছে?”
– “তুমি কি আমাকে ইনসাল্টি করছ,মিহ?”
– “নাঃ,জাস্ট বললাম আপনা’কে,আপনি গুগল করে দেখতে পারেন হয়তো মিমের কিছু ছবি গুগলে আছে?”
– “বুদ্ধি টা খারাপ নয় ব্রো! ম্যাম দেখছি চেলিবেটি থুক্কু সেলিব্রেটি হয়ে গেছে?” মিম দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
– “এমন আপনি তার সামনে বসে করুণ,দাঁত ভেঙে আপনার অন্য হাতে ধরিয়ে দেবে।” ইমান হাসতে হাসতে বললো,
– “মিহ! তুমি কি কোনো কারণে রাগ করেছ আমার সাথে?” মিম চমকে ইমান’কে বলল,
– “জ্বি,না স্যার কে বললো আপনা’কে?” ইমান বললো,
– “কেউ নাঃ! নিজেই বললাম,অফিসে চলো প্রচুর কাজ পরে আছে।” মিম মাথা চুলকোতে চুলকোতে ইমান’কে বলল,
– “হুমম,স্যার! সালমান খান এবং মুকেশ আম্বানির’র সাথে আপনার কনফিডেনসিয়াল মিটিং ফিক্স করা হয়ে আছে।” ইমান হাসতে হাসতে মিমের মাথায় হাত বুলোতে বুলোতে বললো,
– “বুঝেছি ভাই,তোমার মাথা টাই হ্যাঁং হয়ে গেছে,তবে কিছু করার নাই,মিহ! কারণ তোমাকে আমার সাথে অফিসে যেতে হবে।” মিম আমতা আমতা করে ইমান’কে বলে,
– “স্যার! আপনি আর আগের মতো ভালোবাসেননা আমাকে।” ইমান হঠাৎ একটা ফাইল মিমের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে,
– “তুমি কি জাস্ট এক রাত কাটাতে পারবে এই…মেয়েটির সাথে?” মিম মুখ ফসকে বলে ফেলে,
– “মানে কি স্যার? আপনার কি ‘গে’ বলে মনে হয় আমাকে?” তখন ইমান জরুরী ফোন কল কেটে দিয়ে মিম’কে বলে,
– “তুমি কি কিছু বললে আমাকে?” মিম ইশারা করে ইমান’কে বলে,
– “দেখুন,স্যার! উর্মি ম্যাম বাহিরে দাঁড়িয়ে আছে।” ইমান তখন ধূর্তের মতোই হাসলো,মিম’কে বললো,
– “তুমি বাহিরে যাও,মিহ! আমার কিছু জরুরী কাজ আছে।” মিম বিড়বিড় করে বলল,
– “তুই জীবনে ভালো হবি না,ইমান! সে আমার বোঝা হ’য়ে গেছে।” উর্মি দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকে ইমান’কে বলে,
– “তোমার শার্ট,প্যান্ট এগুলো খুলে ফেলে আগে,তারপর আমি ভেবে দেখবো প্রোজেক্ট আমি কাজ করবো কি করবো না তোমার সাথে….তুমি ভুলে যেও না ইমান! তোমার টাকার জোর থাকলে আমার রূপের আগুন আছে।” ইমান পায়ের ওপরে পা তুলে উর্মি’কে বললো,
– “তোমার রূপের আগুন নিভে গেছে,তুমি এখন লস প্রোজেক্ট উর্মি! আমার প্রোজেক্টের জন্য ইন্টারন্যাশনাল মডেল অলরেডি বুকড হয়ে গেছে,সি ইজ মাচ প্রিটি মোর দ্যান ইউ,সো গেট আউট ফরম হেয়ার, ওঁকে?” উর্মি অবাক হয়ে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে ইমানের মুখের দিকে।ওদিকে,মিম জানতে পারেনি দু’জনের মাঝে কি কথা হয়েছিল কেবিনে বসে? না চাইতেও, তার দু-চোখ ভিজে গেছে ইমান এবং উর্মির কথা ভেবে।

চলবে,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here