সুতোয় বাঁধা সংসার পর্ব-২১

0
496

#সুতোয় বাঁধা সংসার
writer::প্রিয়া
২১
রুমা তো নিজ চোখে, নিজ কানে শুনছে মিথ্যা হবার না।
রাসেল এতো বড় বেঈমানী কি করে করলো?
রুমা চোখমুখে অন্ধকার দেখছে রাসেল কি করে এতো বড় প্রতারণা করলো।
ধপ করে চেয়ারে বসে আছে শরীরে শক্তি বলতে কিছু নেই।তখনি খেয়াল করলো রাসেল ওদের দিকে এগিয়ে আসছে।
রুমার চেয়ারের পাশে এসে দাঁড়ালো রাসেল আর অহনা।রাসেল সালমানের দিকে হাত বাড়িয়ে দিলো হ্যান্ডশেক করার জন্য।
-স্যার মূলত আমি আপনাকে দেখে ইন্সপায়ার হয়েছি,আপনি আমার আইডল।
-শুভকামনা রাসেল অনেক বড় হও।
-অহনা আমার বস সালমান সাহেব। উনাকে দেখেই আমি স্বপ্ন দেখতাম একদিন অনেক বড় হবো।আর তিনি হচ্ছেন স্যারের ওয়াইফ মিসেস সালমান।

রুমা অবাক হয়ে দেখছে রাসেল কত সহজে ওর নাম ভুলে গেছে।অহনা এগিয়ে এসে রুমার সাথে হাগ করলো।
-আপনাদের সাথে পরিচিত হয়ে ভালো লাগছে খুব।
-আমার ও।

রুমা আর অহনার সাথে কথা বাড়ালো না।পুরো পার্টি জুড়ে দেখছে রাসেল আর অহনার ঢলাঢলি। রাসেল যখন অহনাকে বসিয়ে ওয়াশরুমের দিকে যাচ্ছিলো তখনি রুমা ওর পিছনে গেলো।
শার্টের কলার ধরে দুইটা থাপ্পড় বসিয়ে দিলো রাসেলের গালে।
-প্রতারক তুই আমার সাথে এতো বড় বেঈমানী করলি?

রাসেল এবার রুমার গালে আরো দুইটা থাপ্পড় বসিয়ে দিলো।
-তুই কি তুই নিজে ও বেঈমান প্রতারক।সালমানকে ঠকিয়ে ভেবেছিলে আমি তোকে বিয়ে করবো।ভাবলি কি করে তোর মতো দুই নাম্বার জিনিস আমি বিয়ে করবো।
-কুত্তার বাচ্চা আমার টাকা নেয়ার সময় মনে ছিলো না?
-এই টাকা আমি না নিলে অন্যকাউকে দিতি।
-তোকে আমি জেলের ভাত খাওয়াবো।
-ওহ তাই নাকি?তোর ওই কাজের ভিডিও গুলো আমার কাছে আছে, তুই যদি তেড়িবেড়ি করিস তাইলে সব ভাইরাল করে দিবো।
-শুয়োরের বাচ্চা আমার টাকা ফেরত দে।

রাসেল এক হাত দিয়ে চুলের মুঠি ধরে অন্য হাত দিয়ে গলা চেপে ধরলো রুমার।
-শোন বে…যদি বেশি বাড়াবাড়ি করিস তোর কি হাল করবো বুঝতেই পারবিনা।

রুমা কাশি দিতে দিতে বললো
-আমি তোকে ছাড়বো না।
-ছাড়তে হবে না ডার্লিং। লোকেশন জানিয়ে দিবো চলে আসিস আদর করবো।
-ছিঃ থু।

রাসেল চোখ টিপ মেরে, আঙ্গুল দিয়ে শাসিয়ে চলে গেলো।
রুমা ওয়াশরুমে গিয়ে চোখমুখ ধুইয়ে বাইরে আসতেই দেখলো অহনা।পাশ কাটিয়ে চলে যেতে গেলেই অহনা বলে উঠলো।
-আপনার সাথে রাসেলের কি সম্পর্ক ছিলো?
-ক ক কই না তো?
-ও কেনো বললো লোকেশন পাঠিয়ে দিলে চলে আসতে?
-এমনি।
-আপনি কি তাহলে prostitute আদর করার কথা আসছে কেনো?
-মুখ সামলে কথা বলো অহনা।
-সত্যিটা কি?
-সত্যিটা জানতে চাও।তোমার বর আমার সাথে প্রতারণা করে আমার টাকা নিয়েছে।আজ যে ও বিজনেসম্যান সেটা আমার টাকায়।আমার সাথে ওর প্রেমের সম্পর্ক ছিলো আমাকে ধোঁকা দিয়েছে।
-আপনার লজ্জা করলো না ছোট ভাইয়ের বয়সী ছেলের সাথে পরকীয়া করতে?যেটাকে আপনি প্রেম বলছেন সেটা মূলত পরকীয়া।
-অহনা নিজের বর সামলে রেখো আবার অন্য মেয়ের সাথে পরকীয়ায় জড়াবে।
-যদি সব সত্যি হয় আমি ওকে ছাড়বো না।

রুমা আর কথা বাড়ালো না।সালমানের কাছে গিয়ে বললো ওর শরীর ঠিক লাগছেনা চলে যাবে।
সালমান পার্টির সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বেড়িয়ে গেলো ওরা।
রুমা গাড়িতে চুপচাপ বসে আছে।
-তোমার কি বেশি খারাপ লাগছে ডাক্তারে নিয়ে যাবো?
-নাহ বাসায় যায় একটু টায়ার্ড লাগছে।

গাড়ি একটু নির্জন জায়গায় আসতেই দুইটা মোটরসাইকেল এসে গাড়ির সামনে দাঁড়ালো।
ড্রাইভার ভয় পেয়ে সালমানকে বলে পুলিশকে ফোন করতে।মূহুর্তের মধ্যে ছেলেগুলো গাড়ির গ্লাস ভেঙে ফোন ছিনিয়ে নিলো।
সালমান আর রুমাকে টেনেহিঁচড়ে গাড়ি থেকে বের করলো।
-যা আছে সব দিয়ে দাও।
সালমান দিতে চাইছেনা সম্বল বলতে এখন শুধু এক চেক।ছেলেগুলো রুমার দিকে এগুতেই সালমান ওদের হাতে ব্যাগ দিয়ে দিলো।
রুমার নাক,কান,গলার গহনা ওরা ছিনিয়ে নিলো।ওরা পালিয়ে যেতেই ভাঙ্গাচুরা গাড়ি নিয়ে সালমানরা বাসায় ফিরে।
সালমান বিছানায় গাঁ এলিয়ে দিয়েছে এতো খারাপ সময় কেনো আসছে।ফ্রেশ হতেও ইচ্ছে করছে না।
রুমা -তুমি ফ্রেশ হয়ে আসো আমি কফি দিচ্ছি।
সালমান হুট করেই চেঁচিয়ে উঠে।
-তোমার মনে হচ্ছে আমি কফি খাওয়ার মুডে আছি?
-রেগে যাচ্ছো কেনো?যা হবার হয়ে গেছে শান্ত হও।
-সব তোমার জন্য, তুমি আমার জন্য কুফা।তুমি আসার পর থেকেই আমার সাথে ভালো কিছু হচ্ছে না।
-তুমি আমাকে এই কথা বললে?
-আমার সামনে থেকে যাও।

রুমা চুপচাপ চলে গেলো,এখন সালমান শেষ ভরসা।ওকে হাতে রাখতে হবে যে করেই হোক।
রুমা রান্নাঘরে গিয়ে দু কাপ কফি বানিয়ে আনলো।সালমানের সামনে কফি মগ দিয়ে চলে গেলো।
রাগ কিছুটা কমে গেলে সালমান কফি খেয়ে নিলো।যেভাবেই ছিলো সেইভাবেই ঘুমিয়ে যায়।

**তরী একটু সেজেগুজে কোচিং ক্লাসে যাচ্ছে আজ ওর জন্মদিন।কোচিং-এর ফ্রেন্ডরা জন্মদিন উপলক্ষে ট্রিট চাইছে।ক্লাস শেষ করে দুপুরে বাইরে খেতে যাবে।
কোচিং-এ ঢুকতে গিয়ে অরুনা আন্টির সাথে দেখা।
আসসালামু আলাইকুম আন্টি, কেমন আছেন?
– ওয়ালাইকুম আসসালাম, ভালো আছি।তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে।

তরীর এক ফ্রেন্ড বলে উঠলো আন্টি আজ ওর জন্মদিন।
-হেপি বার্থডে তরী।
– থ্যাঙ্কিউ আন্টি।

তরী ক্লাসে যেতেই অরুনা চৌধুরী উনার ছোট ছেলে হিমেল চৌধুরীকে ফোন দিলেন।
-ইয়া মম বলো?
-তুই কি বিজি?
-একটু অফিসে কাজ করছি।
-তুই ১ঘন্টার ভিতর একটা জন্মদিনের কেক নিয়ে কোচিং-এ আয়।
-বাট হোয়াই?
-এখানকার একটা মেয়ের জন্মদিন।তাড়াতাড়ি আয়।
-উফফ মম!তুমি পারো ও।আমি দারোয়ানকে দিয়ে পাঠাচ্ছি।
-তোকে আসতে হবে তুই আয়।
-ওকে।

অরুনা চৌধুরী ফোন রেখে পিয়ন ছেলেটাকে দিয়ে ১কেজি মিষ্টি আনালেন।হিমেল আসছে ভেবে মুচকি হাসি দিলেন।
এদিকে রিদ্ধ আর রিহান মিলে পুরো বাড়ি সাজাচ্ছে।আজ আপুর বার্থডে পার্টি হবে।ওরা তরীকে সারপ্রাইজ দিবে তরী হয়তো ভাবছে গত দুই বছরের মতো এবার ও জন্মদিনের কোনো আয়োজন নেই।

**সালমান অফিসে যাবে না,কি হবে গিয়ে কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না।শুইয়ে ছিলো তখনি অফিস থেকে রহমান সাহেব ফোন দিলেন।
-স্যার শ্রমিকরা আন্দোলন করছে ওদের বেতন আজকেই দিতে হবে।
-আমি তো আজকে পারবো না।
-ওদের থামানো যাচ্ছে না, আপনি তাড়াতাড়ি আসুন।

সালমান ঝিম ধরে বসে আছে হুট করেই রুমা ডাকলো।
-রুমা প্লিজ তোমার একাউন্ট থেকে আমাকে ৬লক্ষ টাকা দাও।শ্রমিকদের বেতন আজকে দিতে হবে ওরা আন্দোলন করছে।
-আমার টাকা কেনো নিবে,তোমার তো আরো টাকা আছে?
-বিশ্বাস করো আমার কাছে আর টাকা নেই।সেদিন তোমাকে টাকাগুলো দেয়ার সময় তো বললাম।
-তুমি এতো বড় বিজনেসম্যান সামান্য ৬লক্ষ টাকা তোমার কাছে নেই সেটা কি মানা যায়।
-উফফ রুমা সত্যি নেই।
-আমি টাকা দিবো না তুমি মিথ্যা বাহানা করে টাকা নিতে চাইছো।আমাকে কুফা বলছো কাল রাতে এখন টাকা নিয়ে আমায় তাড়িয়ে দিবে।
সালমান রেগে গিয়ে রুমাকে আঘাত করতে চাইলো।মূহুর্তে হাত গুটিয়ে নিয়ে করুণ সূরে রুমাকে বললো।
-প্লিজ রুমা টাকাগুলো দিয়ে দাও।নয়তো আমাকে জেলে যেতে হবে।
-দেবো না।
বলেই রুমা গিয়ে রুমের দরজা বন্ধ করে দিলো।তিয়াসকে বুকে জড়িয়ে হাউমাউ করে কান্না করছে।
বিশ্বাস করো সালমান টাকা আমার কাছে থাকলে ঠিক দিয়ে দিতাম।আমি যে বিশ্বাস করে ঠকেছি, যেভাবে তুমি আমাকে বিশ্বাস করে ঠকেছো।
রুমার কান্না চার দেয়ালের মধ্যেই আবদ্ধ রইলো।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here