সুতোয় বাঁধা সংসার পর্ব-২০

0
502

#সুতোয় বাঁধা সংসার
writer:: প্রিয়া
২০
রুমা তো টাকা পেয়ে মহাখুশি এদিকে রুমার মা রুমার কানের কাছে ঘ্যানঘ্যান করছেন।
-এখান থেকে দুই লক্ষ টাকা আমায় দিয়ে দে।
-কেনো?
-আমার কতদিনের শখ নিজের একটা গাড়ি হবে।কম দামের মধ্যে একটা কিনে নিবো।
-দেখো মা এখন তোমাকে কোনো টাকা দিতে পারবো না।
-তোর জন্য এতোকিছু করলাম, টাকা পেয়ে তুই রূপ বদলে দিলি।
-মা রাগারাগি করো না,তোমার সব শখ আমি পূরণ করবো।আগে আমাকে সব সামলাতে দাও।
-থাক লাগবে না,আমি যাচ্ছি।

রুমার মা মেয়ের সাথে রাগ করে বেড়িয়ে গেলেন।তাতে রুমার কি সালমান বেড়িয়ে গেলে রুমা বের হবে।এতোক্ষণ ধরে অপেক্ষা করছে।
সালমান অফিসের জন্য বের হতে যাচ্ছিলো তখনি ওর ফোনে কল আসলো।
অফিস থেকেই কল এসেছে তাড়াতাড়ি যেতে বলছে তাড়াহুড়ো করে যেতে গিয়ে দু পায়ে দুইটা আলাদা জুতো পরে বেড়িয়ে গেলো।
সালমান বেড়িয়ে যেতেই রুমা তিয়াসকে খাইয়ে দিলো।তিয়াসের বয়স ৫মাস চলছে ছেলেটা এখন বেশিরভাগ সময় মায়ের কাছে থাকতে চায়।
তাই রুমা বের হতে গেলেই তিয়াস কান্না শুরু করে।তবুও তিয়াসকে রেখে রুমা বেড়িয়ে গেলো।প্রথমে ব্যাংকে গেলো সালমানের ব্যাংক থেকে টাকা তুলতে।
ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী টাকা দেয়ার আগে ওরা সালমান কে ফোন করলো।
-স্যার আপনার ওয়াইফ এসেছেন ১২লক্ষ টাকার চেক নিয়ে।আমরা কি টাকা দিয়ে দিবো।

সালমান হ্যা বলে ফোন রেখে দিলো।রুমা একটা দিন ও অপেক্ষা করলো না ওর টাকা তুলতেই হলো।
গাড়ি থেকে নামতেই খেয়াল হলো দু পায়ে দুই কালারের জুতো।অফিসে তো যেতেই হবে কি আর করার।
সালমান দ্রুত নিজের কেবিনে চলে গেলো। এরমধ্যে কেউ কেউ সালমান কে খেয়াল করে মুচকি হাসলো।
অফিসে সালমানের কাছের মানুষ কাদের চাচা।উনি পিয়নের কাজ করেন। সালমান কে শাসন করেন অনেক।
চায়ের কাপ হাতে নিয়ে কাদের মিয়া কেবিনে আসলেন।

-তোমারে একটা কথা বলবো বাবা?
-বলেন চাচা।
-বউমা কি তোমার খেয়াল রাখে না?
-রাখে তো চাচা।
-বাপজান আগে তুমি কত সুন্দর পরিপাটি হয়ে অফিসে আসতে।প্রতিদিন সময়ের আগে এসে উপস্থিত হতে। এখন তুমি এমন বেখেয়ালি হয়ে গেলে কি করে?
-তেমন কিছু না চাচা।
-ছোটো মুখে এখান বড় কথা কই বাবা।স্বপ্না মা ছিলো লক্ষি মেয়েটার পবিত্র হাতে তোমার ব্যবসার কত উন্নতি হতো।এখন দেখো কেমন কুফা লাগছে।
-এসব কুফা বলতে কিছু নেই চাচা।ব্যবসা আজ লাভ কাল লস হবে।
-বৈধ আর অবৈধ জিনিস আলাদা।স্বপ্না মা ছিলেন তোমার বৈধ স্ত্রী আর এখন যে মেয়েটাকে পালিয়ে নিয়ে বিয়ে করছো সেটা অবৈধ।
-চাচা আমরা বিয়ে করেছি এখানে অবৈধ কিছু নেই।
-তাইলে বলি বাবা ইসলাম কি বলে শুনো।মেয়েটি যদি স্বামীকে তালাক দেয় কিংবা
মেয়েটির স্বামী যদি তাকে তালাক দিয়ে থাকে, তাহলে মেয়েটির ইদ্দত তথা তিন হায়েজ অতিক্রান্ত হবার পর আপনি তাকে বিয়ে করতে পারবেন। আর সরকারি আইনে প্রথম স্ত্রীর অনুমতি না নিয়ে দ্বিতীয় বিয়ে অবৈধ।
ইসলামে এমন কাজকে ব্যাভিচার হিসাবে গণ্য করা হয়।ব্যাভিচারের শাস্তি তো তুমি নিশ্চয়ই জানো।

সালমান কিছু না বলে চুপ করেই রইলো।
-বাবা সবাই হয়তো তোমার টাকা দেখে তোমাকে সরাসরি কিছু বলার সাহস পায় না।তবে তোমার আড়ালে সবাই কানাঘুষা করে।

সালমান চা না খেয়ে বেড়িয়ে গেলো মুরব্বি মানুষকে কিছু বলতে পারবে না।তিনি ভুল কিছু বলেননি তবুও এমন জ্ঞান শুনতে ভালো লাগে না।
সালমান অফিসের কাজ শেষ করেই বাসায় ফিরে আসলো।
রুমা তো বাসায় নেই তাই ছাদে তিয়াসকে নিয়ে গেলো।স্বপ্না তখন ছাদের বাগান পরিস্কার করছিলো।টমেটো, শসা অনেক ধরেছে স্বপ্নার গাছে।মেয়েটা প্রচুর গাছ ভালোবাসে।
সালমান দেখছিলো স্বপ্নাকে পিছন থেকে।মায়াটা আজ ও কাটেনি প্রথম ভালোবাসা নাকি ভুলা যায় না।
স্বপ্না যাতে ওকে দেখতে না পায় তাই আড়ালে চলে গেলো।স্বপ্না ডালপালা পরিস্কার করে উঠে চলে গেলো।দুপুরের ছাদে প্রচন্ড রোদের তাপ তাই সালমান ও দাঁড়িয়ে থাকেনি।

টাকা নিয়ে সকাল থেকে বসে আছে রুমা কিন্তু রাসেলের আসার খবর নেই।
ছুটে ছুটে আসলো রাসেল আগের চাইতে পোশাক,জুতা এমনকি পারফিউমে অনেক পরিবর্তন।
দেখতে অনেক বেশি স্মার্ট লাগছে। রুমা তাকিয়ে আছে।
-কি হলো ম্যাডাম কি দেখছেন?
-আপনাকে জনাব, ইদানীং বেশিই সুন্দর লাগছে।
-তাই বুঝি?
-হুম।
-তোমাকে খুব কাছে পেতে ইচ্ছে করছে।চলো না যাই।
-না না এমনিতেই অনেক দেরি হয়ে গেছে।
-চলো না প্লিজ।
-আজ না অন্যদিন।
-ওকেই।
-রাগ করো না।সালমান বাসায় চলে আসবে আমি যাবো।
-বুইড়া সালমান।আচ্ছা টাকা আনছো।
-১লাখ।
-সামনের মাসে কিন্তু ১২দিতে হবে।
-আমি ১১দিবো তুমি দেখো ১লাখ ম্যানেজ করতে পারো কি না।
-আচ্ছা দেখবো।
-ওহ আমার পাসপোর্ট দিলে না।
-জমা দিয়া দিছি ম্যাডাম বিদেশে যেতে হবে তো।
-তাড়াতাড়ি হয়ে গেলেই ভালো। একটা কথা আমার তিয়াসকে কি করবো।
-ওকে তো এখন সাথে নিতে পারবো না।ও কিছু বড় হলে তখন নেয়া যাবে।
-ছেলেটা বেশি মায়ের পাগল।আমাকে ছাড়া বুঝেই না।
-মায়া কাটাতে হবে। ভালোবাসার মানুষের সাথে থাকতে গেলে আরেকটা ভালোবাসা যে বিসর্জন দিতে হয়।

রুমা, রাসেলকে টাকা দিয়ে চলে গেলো।বাসায় ফিরে দেখে সালমান আর তিয়াস ঘুমাচ্ছে।
রুমার আসার শব্দ পেয়ে সালমান জেগে উঠলো।
-আজই টাকা নিজের একাউন্টে নিয়ে গেলে?
-এতে তুমি কি রাগ করেছো?
-নাহ তবে এতো তাড়াতাড়ি টাকা তুলতে যাবে আশা করিনি।
-আমি কাজ ফেলে রাখিনা।
-ছেলে কি কাজের মধ্যে পরে।দেখো অনেক জিম হয়েছে এবার ছেলের দিকে খেয়াল রেখো।আর বাইরে যাওয়ার দরকার নেই।
-আমার স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করছো তুমি।
-হোয়াট ননসেন্স। বউদের কাজ ঘর সামলানো।অফিস থেকে ফিরে আমি নিজে খাবার বেড়ে খাচ্ছি।তুমি বউ হয়ে সেটা খেয়াল রাখবে না।
-তুমি খাবার বেড়ে খাচ্ছো তাতে হয়েছে কি।হাত পা কি জন্য কাজে লাগানোর জন্য তো।আমাদের সমাজে নারী পুরুষের এমন ভেদাভেদ আমার ভালো লাগে না।
– উফ রুমা তোমাকে কিছু বললে এতো রাগ দেখাও কেনো।স্বপ্না এমনটা জীবনে করেনি।
-আগেই বুঝেছিলাম স্বপ্নার প্রতি দরদ উতলায় উঠছে।

সালমান কিছু না বলে বাসা থেকে বেড়িয়ে গেলো।

রাসেল ১সপ্তাহ পরেই ফোন দিয়ে জানালো ভিসা হয়ে গেছে।টাকাগুলো দিতে হবে।
পরেরদিন রুমা একাউন্ট থেকে ১০লক্ষ টাকা রাসেলের হাতে তুলে দিলো।বাকি ১লাখ রেখে দিলো এতে রাসেল অনেক রাগারাগি করলো।
টাকা হাতে পাওয়ার পর রাসেল ভিসা ঠিকঠাক করার কথা বলে ভারতে চলে গেলো দুই সপ্তাহের জন্য।
নিয়মিত যোগাযোগ রাখছে রুমার সাথে।

সালমান অফিস থেকে ফিরলো বেশ খুশি মেজাজে।
-জানো রুমা এবার আল্লাহ হয়তো মুখ তুলে তাকিয়েছেন।
-কি হয়েছে?
-গত দু বছর আগে একটা ব্যবসায় কিছু টাকা ইনভেস্ট করেছিলাম।আমার দুই বন্ধু মিলে ব্যবসা শুরু করেছিলো আমার অর্ধেক টাকা আর ওদের অর্ধেক টাকা দিয়ে।এই দুই বছরে আমি ওদের সাথে কন্ট্রাক্ট করতে পারিনি। কিন্তু ওরা আজ আমাকে ফোন দিয়ে বললো ওদের ব্যবসা এখন অনেক উঁচুতে। তাই ওরা ব্যবসার লাভের শেয়ার করতে চাইছে আমার সাথে।
-কত টাকা পাবে।
-আনুমানিক ১৫লাখ হবে।
-সত্যি।
-হ্যাঁ। ওরা একটা পার্টির আয়োজন করেছে সামনের সপ্তাহে। আমরা যাচ্ছি।

রুমা হ্যা বলে মনে মনে ভাবছে সামনের সপ্তাহে আমি উড়াল দিচ্ছি।
এদিকে প্রায় তিনদিন হয়ে গেলো রাসেলের খবর পাচ্ছে না।চিন্তায় রুমা অস্থির হয়ে যাচ্ছে।কার কাছ থেকে খোঁজ নিবে কাউকে তো চিনে না।
পার্টির দিন চলে আসলো। ভাবছে রাসেলের বাড়িতে যাবে পার্টির পরেরদিন।
-রুমা খুব সুন্দর করে সাজবে কিন্তু।
-আচ্ছা।
-উফফ এতো মনমরা হয়ে থেকো না।হয়েছে কি তোমার?
-কিছু না ঠিক আছি আমি।
-রেডি হয়ে আসো।

অনিচ্ছা সত্ত্বেও রুমা সুন্দর করে শাড়ি পরে সেজেগুজে পার্টিতে গেলো।
অনেক লোকজন সবাই টপ বিজনেসম্যান।সালমান ও কম যায় না অনেকেই এসে ছবি নিচ্ছে। রুমার মন খারাপ ভালো হয়ে গেলো।
পার্টিতে সালমানের বন্ধুরা সালমানকে ধন্যবাদ জানালো পাশে দাঁড়িয়ে ছিলো বলে।পুরস্কৃত করা হলো সাথে শেয়ারের ১৬লাখ টাকার চেক প্রদান করা হলো।

আজকের আকর্ষণীয় আরেকটা বিষয় হচ্ছে অনেকেই বলাবলি করছে ব্যবসায় নতুন মুখ, একজন ইয়াং বিজনেসম্যান ভারতে গিয়ে নতুন ব্যবসা শুরু করেছে।আজ তার সাথে সবাই পরিচিত হবে।
সে এখনো এসে পৌঁছায়নি। কিছুক্ষণের মধ্যে এসে উপস্থিত হলো রাসেল তার হাত ধরে এগিয়ে আসছে একটা মেয়ে। আনুমানিক বয়স ১৯হবে হালকা গড়নের ফর্সা অপরূপ সুন্দরী যাকে বলে।
সালমান অনেকটা অবাক হলো রাসেল কে দেখে।কিছুদিন আগে ও রাসেল ওর অফিসের ম্যানেজার ছিলো।আজ নিজেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে দেখে ভালো লাগছে।কিন্তু রুমার একি হাল চোখ মুখে অন্ধকার দেখছে।
মাইকে স্পষ্ট শুনা যাচ্ছে আমাদের মাঝে উপস্থিত হয়েছেন রাসেল সাহেব এবং উনার ওয়াইফ অহনা।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here