সুতোয় বাঁধা সংসার
writer::প্রিয়া
১
ল্যান্ডফোনে কল আসতেই ছুটে গিয়ে কল রিসিভ করে তরী।
-তোর বাবা আমার বউ নিয়ে পালিয়ে গেছে।তোর বাপ জানোয়ার,অমানুষ, ওর জন্মের ঠিক নেই বেজন্মা।
কথাগুলো একনাগাড়ে বলে কল কেটে দেয় শফিক। তরী ফোন কানে লাগিয়ে বসে আছে। কি শুনলো শরীর নিস্তেজ হয়ে গেছে।
স্বপ্না বেগম রান্নাঘর থেকে ড্রইংরুমে আসেন।
-কি রে তরী কে ফোন করছে, তোর বাবা আজ অফিসে গিয়ে ফোন দেননি উনি কি ফোন দিয়েছিলেন।
গলা থেকে কোনো আওয়াজ বের হচ্ছে না তরীর।
-কানে ফোন লাগিয়ে মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে আছিস কেনো।এই তরী।
-মা শফিক চাচা ফোন দিয়েছিলেন।
-নিশ্চয় আবার রুমা ভাবির সাথে ঝগড়া হয়ছে।ফোন আমাকে দিলি না কেনো।
-মা আসলে।
-রান্না পুড়ে যাচ্ছে আমি দেখে আসি।তুই তাড়াতাড়ি হাত মুখ ধুইয়ে আয়।
স্বপ্না বেগম আর তরীর কথা শুনলেন না। তাড়াহুড়ো করে রান্নাঘরে চলে গেলেন।
১৬বছর বয়সী তরী সবকিছু বুঝবার ক্ষমতা আছে ওর।শফিক সাহেব রেগেমেগে কথা বলছেন তারমানে এটা মজা ছিলো না।আর বন্ধুর মেয়ের সাথে মজা করার কথাও না।
শফিক সাহেব আর রুমা সারাক্ষণ ঝগড়া করে।স্বপ্না আর ওর বর সালমান গিয়ে ওদের ঝগড়া মিটমাট করে।
শফিক আর সালমান খুব ভালো বন্ধু।
সালমান সাহেব দু দিন থেকেই উনাদের পাশের ফ্ল্যাট পরিস্কার করাচ্ছেন।ওরা ভেবেছিলো হয়তো নতুন ভাড়াটিয়া জায়গা দিবে।
চারতলা বাসায় ৮টা ফ্ল্যাট অনেক ভাড়াটিয়া আছে।বাসাটা তরীদের নিজস্ব। ৬টা ফ্ল্যাট ভাড়া দিলেও নিচের দুইটা ফ্ল্যাট ওদের থাকার জন্য।
তরী ভাবছে তাহলে কি বাবা ওই মহিলাকে নিয়ে এখানে থাকবেন। তাই কি বাসা পরিস্কার করে নতুন ফার্নিচার এনেছিলেন।
মাথা ঘুরছে তরীর আবার ও ফোন বেজে উঠলো।তরীর সাহস হচ্ছে না ফোন রিসিভ করার।
স্বপ্না রান্নাঘর থেকে আসলেন।
-কি রে বসে আছিস ফোন ধরছিস না কেনো।
তরী কেঁপে উঠে উনি রাগী চোখে তাকিয়ে ফোন রিসিভ করলেন।
-আপু তুই কিছু জানিস না।
স্বপ্না বেগমের চাচাতো ভাই ফোন দিয়েছে।
-না রে কি হয়েছে আমার মা-বাবা ঠিক আছেন।
-চাচা চাচি ঠিক আছেন।তুই ঠিক আছিস তো।
-আমি তো একদম ঠিক।
-আপু একটা সত্যি কথা বলবি।
-কি?
-তোর কি ডিভোর্স হয়ে গেছে।
-কি বাজে কথা বলছিস নিজাম।
-দুলাভাই কে দেখলাম কাজী অফিস থেকে বের হচ্ছেন নতুন বউ নিয়ে।
-তুই চোখের মাথা খেয়েছিস বেয়াদব। কাকে না কাকে দেখেছিস আর বাজে বকছিস।রাখ তো ফোন আমার কাজ আছে।
উনি রেগে ফোন রেখে দিলেন।
কত বড় বেয়াদব বলে কি না তোর বাবা নাকি বিয়ে করেছেন।এই বয়সে উনি বিয়ে করবেন ঘরে বিয়ের উপযুক্ত মেয়ে রেখে।
তরী এবার আরো নিশ্চিত হলো শফিক চাচা মিথ্যা বলেন নি।
ইশ এই মেয়েটার আবার হলো কি, যা রে বাবা গোসল করে আয় খেতে হবে না।রিদ্ধ স্কুল থেকে চলে আসবে এদিকে রিহান ও ঘুম থেকে উঠে যাবে।ওদের নিয়ে আবার আমার ঝামেলার শেষ নেই।
রিদ্ধ তরীর ছোট ভাই ক্লাস এইটে পড়ে আর রিহান সবার ছোট ৬বছর বয়স।
তরী কোনমতে উঠে রুমে গিয়ে দরজা আটকে দিলো।ফোন বের করে তিন্নিকে ফোন দিলো।তিন্নি শফিক চাচার ভাতিজি তরীর ক্লাসমেইট।
-তিন্নি।
-তরী তোর বাবা এতো খারাপ ছিঃ ছিঃ।
-তিন্নি সবাই যা বলছে তা কি সত্যি।
-সত্যি মানে তোর বাবা রুমা চাচি কে নিয়ে পালিয়ে গেছেন আমি নিজে দেখেছি।
তোর বাবা গাড়িতে ছিলেন চাচি চুপিচুপি বাড়ি থেকে বেড়িয়ে তোর বাবার গাড়িতে উঠে গেছেন।
পরে চাচা রুমে গিয়ে দেখেন ডিভোর্স পেপার চাচি সই করে দিয়েছেন।
তরী ফোন কেটে দিলো আর শুনতে ইচ্ছে করছে না।বাবা এই বয়সে এমন করবেন।
স্বপ্না বেগম এসে দরজা ধাক্কাধাক্কি করছেন তরী তাড়াতাড়ি আয় রিদ্ধ মারামারি করে মাথা ফাটিয়ে ফেলছে।
রক্তারক্তি অবস্থা রিদ্ধের। স্কুলের দারোয়ান বাসায় এনে দিয়েছেন।
-রিদ্ধ তুই কার সাথে মারামারি করেছিস।
-তমালের সাথে।
-কেনো তমাল এতো বড় ছেলে ওর সাথে মারামারি করে কেউ।
-মা স্কুল ছুটির পর তমাল ভাইয়া আমাকে রাস্তায় পেয়ে বলেন আমার বাবা নাকি খারাপ উনি নাকি শফিক চাচার বউকে নিয়ে পালিয়ে গেছেন।
তাই আমি তমাল ভাইয়াকে ঘুষি মেরেছি উনি আমাকে ধাক্কা মেরে ফেলে দিয়েছেন।
তরী ছুটে এসে ভাইকে ধরে।
-তোর কি খুব ব্যথা করতেছে ভাই।
এদিকে স্বপ্না বেগম ছেলের কথা শুনে ধপাস করে সোফায় বসে পরেন।আজ কি হচ্ছে নিজাম ফোন করে কিসব বললো।আর এখন রিদ্ধ কি বলছে।
-তরী তোর বাবাকে ফোন দে।
-মা শান্ত হও।
-আরে বাবা শান্ত হওয়ার কি আছে।আজ কি হচ্ছে কে জানে নিজাম আবুলতাবুল কি বললো এখন রিদ্ধ কিসব বলছে।
-মা আমি তোমাকে কিছু বলতে গিয়ে বলতে পারিনি।
-কি?
-মা সকালে শফিক চাচা ফোন করে একথা বলেছিলেন। আর বাবাকে খুব গালাগালি করছিলেন।
-কিইই।
-তুই এখুনি শফিক ভাইকে ফোন দে।দাঁড়া আমি দিচ্ছি। উনি রান্নাঘর থেকে নিয়ে এসে শফিক কে ফোন দিলেন।
-ভাবি আমি আগেই বুঝেছিলাম সালমানের নজর লাগছে আমার বউয়ের উপর।রুমা সারাদিন ঝগড়া করতো সালমান যা বুঝাতো তাই মানতো।ভাবি সত্যি খারাপ লাগছে আপনার জন্য আমার বউ গেছে কষ্ট নেই একটা খারাপ মহিলা ছিলো।কিন্তু আপনি তো ভালো মানুষ আপনার কপাল পুড়লো।
স্বপ্না ফোন হাত থেকে ফেলে দিলো।মাথাটা ঘুরছে ১৮বছরের সংসার জীবন এভাবে তছনছ হয়ে যেতে পারে।কি করে কালই সব ঠিক ছিলো।সালমান কাল তো বললো মেয়ের বিয়ের ব্যবস্থা করতে হবে।আমিই বাঁধা দিলাম ১৮বছরের পর বিয়ে দিবো।
কলিংবেলটা বেজে উঠলো কেউ দরজা খুলতে যাচ্ছে না।রিদ্ধ স্কুলের ইউনিফর্ম পরে দাঁড়িয়ে আছে।স্বপ্না মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে তরী চোখের জল মুছছে বারবার।
অনবরত বেজে যাচ্ছে বেল। তরী ধীরপায়ে এগিয়ে যায়।দরজা খুলে দেখে ওর বাবা দাঁড়িয়ে। বাবাকে দেখে স্বাভাবিক মনে হলো সবকিছু তাহলে কি সব মিথ্যে ভাবতে তরীর মন আনন্দে নেচে উঠে।
কিন্তু মূহুর্তে কালো মেঘের মতো গাড়ি থেকে নেমে আসে রুমা।
-তোর মাকে ডাক দে।
-রুমা চাচি আপনার সাথে কেনো বাবা।
-তোর মা কে বল আসতে।
তখনি রিদ্ধ চলে আসে।
-আপু কি বললো শুনেন নি ওই মহিলা আপনার সাথে কেনো।
-রিদ্ধ অভদ্রের মতো কথা বলো না।
স্বপ্না এদিকে আসো।স্বপ্না বেগম উঠে দাঁড়ান এক পা এক পা করে এগিয়ে যান।
-স্বপ্না আমি একটা কাজ করে ফেলছি আমাদের তো খাওয়া দাওয়া কিংবা বিলাসিতার অভাব নেই।আজ থেকে আরেকজন সদস্য আমাদের পরিবারে সামিল হলো।তুমি রুমাকে বোনের মতো ভালোবেসো।আজ থেকে ও আমার জীবনের একটা অংশ।
স্বপ্না বেগম কিছুতেই শান্ত থাকতে পারলেন না।ছুটে গিয়ে সালমানের কলার টেনে ধরলেন।
-আমার এতো বছরের সাজানো সংসার তুমি এভাবে শেষ করে দিলে।কিসের অভাব ছিলো তোমার আমি তোমাকে কম ভালোবেসেছি তোমাকে কষ্ট দিয়েছি কখনো।কেনো সালমান এই বয়সে এসে এভাবে আমাদের সবাইকে হাসির পাত্র বানালে।
-স্বপ্না ছেলেমেয়ের সামনে আমার কলার ছেপে ধরেছো।দেখো আমার জীবনে রুমা খুব স্পেশাল। তুমি ওকে মানতে না পারলে ঠিক আছে আমরা আলাদা থাকবো।আর ছেলেমেয়েদের খরচাপাতি আমি দিবো। আমরা পাশের ফ্ল্যাটে যাচ্ছি।আর হ্যা এখন আমার বাবা-মাকে ফোন করে কিছু বলে না।আমি উনাদের বুঝিয়ে বলবো।
রিদ্ধ-আপনি মহৎ কোনো কাজ করেননি যে আমরা গর্ব করে ফোন করে সবাইকে জানাবো।
আমাদের লজ্জা হচ্ছে মিঃ সালমান।
-রিদ্ধ বেয়াদবির চরম পর্যায়ে চলে যাচ্ছো।স্বপ্না তোমার ছেলেমেয়েদের বলে দিও আমার ব্যক্তিগত জীবনে নাক না গলাতে।ওদের খাওয়া দাওয়া, লেখাপড়ার খরচ কিছুরই কম হবে না।
-সালমান সাহেব আজ থেকে আপনার জীবনে যেমন আমার প্রয়োজন নেই তেমনি আপনি ও আজ থেকে আমার মুখ কখনোই দেখবেন না।
চলবে
(সব বাবা খারাপ না আবার সব বাবা ভালো না।গল্পটা হয়তো কারো কারো ভালো না লাগতে পারে।কিন্তু এইটা একটা তরী নামের মেয়ের সাথে বাস্তবে হয়ছে।ওর বাবা বন্ধুর বউকে নিয়ে পালিয়ে বিয়ে করেছেন।ওর কাছ থেকে কিছু শুনে লেখা বাকিটা আমার কাল্পনিক।
তাই আমাকে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।)