সুতোয় বাঁধা সংসার পর্ব-২

0
936

#সুতোয় বাঁধা সংসার
Writer::প্রিয়া

বাবার বাসরঘর সাজাতে লোক এসেছে।কতোটা নির্লজ্জ হলে মানুষ এমন করতে পারে ভাবছে তরী।

চিৎকার চেঁচামেচি করে ঘরে আসলেন তরীর ফুফু সুমিতা।স্বপ্না, এই স্বপ্না তুই বাইরে আয়।
স্বপ্না বেগম অনিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও বাইরে আসলেন।পান চিবুতে চিবুতে সুমিতা বলে উঠলেন,তুই এখুনি আমার সাথে থানায় যাবি।ওই সালমান কি করে এমন নষ্টা মেয়ে নিয়ে ঘর করে আমি দেখবো।
– আপা আমি কারো ঘর ভাঙ্গতে চাই না।উনি আমাকে নিয়ে খুশি ছিলেন না, তাই উনার বিয়ের দরকার ছিলো হয়তো।
-তোর ন্যাকামি আমার ভালো লাগে না।দে আমি শফিককে ফোন দিবো।
স্বপ্না বেগম শফিকের নাম্বারে কল দিয়ে সুমিতার হাতে ফোন দিলেন।
-শফিক আমি সুমিতা বলছি।
-বলেন?
-তুই মামলা করবি না? তোর নষ্টা বউয়ের নামে।
-নাহ আপদ বিদায় হয়ছে মামলা করে টাকা নষ্ট করবো কোন দুঃখে।
-আশ্চর্য!!
-আপা রাখি আপনাদের সাথে আমার আর কোনো সম্পর্ক নেই।আমার জীবন আমি গুছিয়ে নিবো।

সুমিতা চেয়েছিলো স্বপ্নাকে বুঝিয়ে মামলা করাতে এই অবৈধ বিয়ে না মানতে।
কিন্তু স্বপ্না মামলা করে স্বামী ফিরে পেতে চায় না।

দুপুর থেকে সবাই না খেয়ে আছে।রিহান ঘুম থেকে উঠে খাওয়ার জন্য কান্না করছে।
তরী ভাইকে খাইয়ে দিলো। রিহান দরজা খোলা দেখে ছুটে বাইরে চলে যায়।
একটু এগিয়ে যেতেই সালমান ছেলেকে দেখে কোলে তুলে নেয়।
-বাবা তুমি সারাদিন কোথায় ছিলে?
-বাবা জরুরি কাজে ছিলাম সোনা।
-বাবা আমার চকলেট কোথায়?
-চলো, দিচ্ছি।
রুমা বেশ সুন্দর পরিপাটি করে শাড়ি পরেছে।রিহানকে সালমানের কোল থেকে নিজের কোলে নিলো।
-আনতি তুমি এসেছো।
-আমাকে আনতি না বলে ছোট মা বলবে ঠিক আছে।
-ছোত মা?
-হ্যা সোনা।
-ছোত মা আমার চকলেট।

রুমা অনেকগুলো চকলেট বের করে দিলো। রিহান, রুমাকে পাপ্পি দিয়ে কোল থেকে নেমে ছুটে চলে আসলো।
-রিদ্ধ তোকে চকলেট দেবো না।
রিহান, রিদ্ধকে নাম ধরে ডাকে।রিদ্ধ লেখছে রিহানের কথায় চোখ তুলে তাকালো।
-এতো চকলেট কে দিয়েছে?
-ছোত মা।
ছোট মা শোনা মাত্রই রিদ্ধের মাথায় আগুন জ্বলে উঠলো।চকলেট নিয়ে সবগুলো ডাস্টবিনে ফেলে দিলো।রিহান হাত -পা ছড়িয়ে কান্না করছে। কান্না শুনে তরী ছুটে আসলো।
-ভাই কি হয়েছে?
-আমার চকলেট।
-আমি দিচ্ছি ভাই কান্না করিস না।
-রিদ্ধ আমার চকলেট ফেলে দিয়েছে।
-তুই ওর চকলেট ফেলে দিলি কেনো?
-ওই মহিলা নাকি ওর ছোট মা।
-রিদ্ধ…রিহান ছোট ওকে ওরা যা বুঝাবে তাই বুঝবে।তুই মাথা গরম করে ওর চকলেট ফেলে দিলি।
-বেশ করেছি ওই লোকটার দেয়া কিছু খেতে হবে না ওর।
-আমরা কি খেয়ে থাকবো রিদ্ধ।আমি, তুই কিংবা মা কেউ তো চাকরি করিনা।বাবার ইনকামে তো আমরা খেতে পাই,লেখাপড়া করি।
-আমি কিচ্ছু জানিনা বুঝিনা আমার মাথা গরম করিস না আপু।

তরী শান্ত আর ভদ্র মেয়ে, রিদ্ধ এর বিপরীত প্রচন্ড রাগী একগুঁয়ে।
রিদ্ধ রুমে যেতে নিলেই দেখলো সালমান সাহেব ভিতরে আসছেন হাতে অনেকগুলো বিরিয়ানির প্যাকেট।
তরীর কাছে নিয়ে আসলেন।
-আজ রাতে এগুলো খেয়ে নিস তোরা।
-বাবা আপনি কি আর কোনোদিন আমাদের সাথে খাবেন না থাকবেন না?
-আমি তো তোদের সাথেই আছি মা।তোরা ভুল বুঝছিস আমায়।তুই ছোট মানুষ এতোকিছু বুঝবি না।
-বাবা আমার মা খুব কষ্ট পাচ্ছেন।
-চিন্তা করিস না আমি সামলে নিবো।আমি কাল এসে তোর মায়ের সাথে কথা বলবো।

সালমান বেড়িয়ে যেতেই রিদ্ধ শব্দ করে দরজা আটকে দিলো।তরীর দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে রুমে চলে গেলো।এরমাঝে স্বপ্না বেগম আসলেন চোখ মুখ ধুয়ে।

বৃষ্টি থামার পর যেমন জলের চিহ্ন থেকে যায়।তেমনি উনার চোখেমুখে কান্নার চিহ্ন রয়ে গেছে।
– আজ খাওয়া লাগবে না?
-হ্যা মা আমি প্লেট আনছি।
-রিদ্ধ কোথায় রে?
-রুমে চলে গেছে।
বিরিয়ানির প্যাকেট খুলে প্লেটে বাড়তে গিয়ে কখনো যে গাল বেয়ে জল গড়িয়ে পরছে তরীর খেয়াল নেই।
স্বপ্না ছেলেকে অনেক বুঝিয়ে খাবার টেবিলে নিয়ে আসলেন।তিন প্লেট বিরিয়ানি অন্যদিন হলে রিদ্ধ দু প্লেট খাওয়ার বায়না ধরতো।কিন্তু আজ মুখে দিতে ইচ্ছে করছেনা।
কেউ খাচ্ছেনা দেখে স্বপ্না বেগম প্লেট হাতে তুলে নিলেন।এক লোকমা ভাত ছেলের মুখের সামনে ধরতেই রিদ্ধ মাকে জড়িয়ে কান্না শুরু করে দিলো। রিদ্ধ অনেক শক্ত মনের ছেলে তবুও নিজেকে আটকাতে পারলো না।
তরী তো আগে থেকেই কাঁদছে এখন আরেকটু বাড়িয়ে দিলো কান্নার গতি।
-আচ্ছা তরী, রিদ্ধ তোরা কি আমাকে শান্তি দিবি না?তোদের কি হয়েছে বল কান্না করার কি? মায়ের জন্য কাঁদছিস তো একদম কান্না করবিনা।
তোদের মা কি দূর্বল না রে বাপ তোদের মা খুব স্ট্রং। কত মেয়েদের এক বছর, দু বছর সংসার করার পর স্বামী মরে যায়।আবার কত মেয়েদের ১০বছরের সংসার জীবনে ডিভোর্স হয়ে যায় ওরা কি বাঁচে না?
বাঁচে ওদের বাঁচতে হয় তেমনি আমিও ভাববো তোদের বাবা আমার কাছ থেকে হারিয়ে গেছে।তোরা শুধু আমার পাশে থাকিস।
-আমরা এখান থেকে চলে যাই মা।
-না রে বাবা এখান থেকে চলে গেলে তোর মায়ের চরিত্রে দাগ লাগবে।তোরা বাবার স্নেহ থেকে বঞ্চিত হবে।আর সবচেয়ে বড় তোদের থাকার জন্য একটা আশ্রয় আমি দিতে পারবো না।
-আমরা নানুদের কাছে যাবো আমি চায়ের দোকানে কাজ করবো।
-নাহ!!এমন কথা তুই কখনো বলবি না।আমার অনেক স্বপ্ন তুই একদিন অনেক বড় চাকরি করবি।আমার তরীর ভালো জায়গায় বিয়ে হবে।
-নরক মনে হচ্ছে আমার।
-বাবা রে মেনে নে সবকিছু তোর মায়ের জন্য।

রিদ্ধ কিছুই বললো না।চুপচাপ মায়ের হাতে খেয়ে নিলো।তরী অল্প খেয়ে চলে গেলো রুমে। স্বপ্না বেগম সব গুছিয়ে ঘুমাতে গেলেন।আজ এই বিছানায় তিনি একা। ১৮টা বছর ধরে একটা মানুষের বাহুতে ঘুমানোর অভ্যেস হয়ে গেছিলো।আজ সেই মানুষটার বুকে অন্য একজন নারী।হয়তো আজ ওরা পুরো রাত জেগে থাকবে।নতুন মানুষ নিয়ে নতুন করে ওরা স্বপ্ন দেখবে।
স্বপ্না বেগম আর ভাবতে পারছেন না।এই ঘরে আর কিছুক্ষণ থাকলে দম বন্ধ হয়ে মারা যাবেন। পালিয়ে আসলেন অভিশপ্ত ঘর থেকে।তরীর রুমে গিয়ে দেখলেন রিদ্ধ এক খাটে ঘুমিয়ে আছে অন্য খাটে তরী, রিহানকে জড়িয়ে ঘুমাচ্ছে।
রিদ্ধের পাশে স্বপ্না বেগম গিয়ে শুইয়ে পরলেন।

সালমান আর রুমা নববিবাহিত দম্পতি। ফুলের ঘ্রাণে মাতোয়ারা দুজন।একদিকে কারো চোখে ঘর ভেঙ্গে যাওয়ার কষ্ট। অন্যদিকে দু’জন নতুন দিনের সূচনায় ব্যস্ত।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here