#সাইকো_নীড়
part : 19
writer : Mohona
.
মেরিন কোন কথা না বলে শুয়ে পরলো । চোখ বন্ধ করে রাখলো। শুয়ে শুয়ে ভাবতে লাগলো । কি থেকে কি হয়ে গেলো । যদি শুরুতেই নাবিলের সাথে বিয়েতে রাজী না হতো… আর যখন রাজী হয়েছিলো তখন না কেন করলো? নীড়কে বিয়ে করার কথা কিভাবে বলল? যদি নীড়কে ভালোবাসার কথা না বলতো তবে তো আর চৌধুরী বাড়িতে যেতে হতো না ওদের। আর accident ও হতো না। সবথেকে বড় কথা… নীড়ের মতো হিংস্র ব্যাক্তিকে কিভাবে ও ভালোবাসতে পারে? ছিঃ… কবির-কনিকার সাথে কাটানো মুহুর্তগুলো চোখে চোখে ভাসছে। চোখ দিয়ে পানি গরিয়ে পরছে । ও জানেনা যে আম্মু-বাবা ছারা ও কি করবে? কিভাবে থাকবে ? মায়ের আদর, বাবার স্নেহ…. কিছুই আর পাবেনা। বাবাকে বাবা ডাকতে পারবেনা… আম্মুকে আম্মু ডাকতে পারবেনা। নীড় মেরিনের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো।
নীড় : কান্না করে না মেরিন…. প্লিজ…
অনেকরাতে কান্না করতে মেরিন ঘুমিয়ে পরলো ।
.
পরদিন…
নিহাল : মামনি…. কবির ভাই চলে গিয়েছে তো কি হয়েছে? আমি তো আছি। আমিও তো তোমার বাবা। আমাকে বাবা বলে ডাকবে… মা-বাবার মতো তো কেউ হয়না… কিন্তু মামনি কথা দিলাম… নিজের মেয়ের মতো স্নেহ করবো তোমায়…. নিজেকে শক্ত করো। এক বাবা চলে গিয়েছে… আরেক বাবা তো আছি… আমি আছিতো…
জাফর : আপনার থাকা না থাকায় কি আসে যায়? আমরা কি মরে গিয়েছি? আমি আছি… ওর মামা আছে। আপনাকে ভাবতে হবে না…
নিহাল : ও আমার হবু বউমা…
জাফর : হবু বউমা.. হয়নিতো…. বউমা… তো না বউমার সম্পত্তির কদর… বুঝিনা কিছু ভেবেছেন…
কথাটা শুনে নিহাল অনেক অবাক হলো। কবিরের যা আছে ড্যানিরও তার থেকে ২গুন আছে। তবুও নিহাল react করলোনা।
জাফর : বিয়ে হলে পরে দেথা যাবে… তখন মাতব্বরি করতে আসবেন… actually বিয়ে হলেও তো আপনারা কিছু বলতে পারেন না.. মেয়ে আমাদের…. আমার ভাইয়া… আমরা বুঝে নিবো…
নীড় ক্ষেপে গেলো। নিহাল ইশারা দিয়ে থামিয়ে দিলো…
জাফর : মেরিন… তোমার চিন্তার কোনো কারন নেই। কাজটাজ , হসপিটাল এসব নিয়ে তোমাকে ভাবতে হবেনা… আমি তো আছি। সব সামলে নিবো। আর তোমার ভয় নেই । তোমার সাথে আমরা থাকবো। আমি , তোমার কাকীমা , তোমার ভাইয়া… সবাই একসাথে থাকবো।
অর্নব : ১মিনিট… আপনার কথা শুনে স্পষ্ট বুঝতে পারছি আপনার উদ্দেশ্যটা কি?
জাফর : what do you mean?
অর্নব : খুব সহজ। আপনার চিন্তা মেরিনকে নিয়ে না ওর সম্পত্তি নিয়ে…
জাফর : এত্তোবড় কথা …
বড় ধরনের ঝগড়া শুরু হয়ে গেলো।
নীড় : ড্যাড… এখনো চুপ থাকতে বলবা?
নিহাল : প্লিজ নীড়… try to understand …
তুমুল ঝগড়া শুরু হয়ে গেলো।
মেরিন : enough … কালকে আমার আম্মু-বাবা মারা গিয়েছে … আর আজকেই আপনারা টাকা পয়সা নিয়ে ঝামেলা শুরু করেছেন …. আমার কাউকেই লাগবেনা… আমি একা থাকতে পারবো। চলে যান… সবাই চলে যান…. আমি একা থাকবো। i don’t need anyone …
বলেই মেরিন রুমে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দিলো…
মেরিন : পৃথিবী এতো স্বার্থপর কেন আল্লাহ….
.
রাতে…
দোলা : মেরিন… মেরিন… দরজা খোল… কিছু খেয়ে নিবি… দরজা খোল।
মেরিন : আমি খাবোনা । প্লিজ একটু একা থাকতে দে। ভালো লাগছেনা।
দোলা : খোল না… আমার জন্যেও খুলবি না? আমার কথাটা শুনবি না….
দোলা অনেক চেষ্টা করার মেরিন দরজা খুলল । দোলা ভেতরে ঢুকলো। মেরিনকে খাইয়ে দিতে লাগলো।
দোলা : লোকের মুখ তো আর বন্ধ করা যায় না। বলছে বলতে দে। ২দিন পর চলেই যাবে….
.
২দিনপর …
মামা : মামনি… আমাদের বাসায় চলো…
জাফর : কেন? আপনাদের বাসায় যাবে কেন? এই বাসা কি করেছে? আর যেতে হলে আমার বাসায় যাবে ।
আবার ঝগড়া ঝগড়া ভাব ।
মেরিন : আমি কোথাও যাবোনা… আমি এখানেই থাকবো ।
জাফর : এই না হলে খান বাড়ির মেয়ে… চিন্তা করিস না মা আমি তো আ…
মেরিন : কাউকে লাগবেনা । আমি একা থাকতে পারবো…
জাফর : একা এতো বড় ফ্ল্যা…
মেরিন : পারবো….। ধন্যবাদ আমার জন্য এতো ভেবেছো তাই…
একে একে সবাই চলে গেলো। রয়ে গেলো কেবল নীড়…
নীড় : মে…
মেরিন : আপনাকে কি আলাদাভাবে যেতে বলতে হবে? নাকি আজকেও …
নীড় মেরিনের ঠোটে আঙ্গুল রাখলো।
নীড় : চলে যাচ্ছি এখান থেকে…. but এ বাড়ি থেকে না…. নিচেই আছি… আমার গাড়িতে…
নীড় নিজের গাড়িতে গিয়ে বসলো। মেরিন দরজা লাগিয়ে কবির-কনিকার রুমে গেলো…. কান্না করতে লাগলো।
.
সকালে…
মেরিন নামাজ পরে আবার কবির-কনিকার রুমে গেলো। তার একটুপরই রান্নাঘর থেকে টুংটাং আওয়াজ আসতে লাগলো।
মেরিন : রান্নাঘর থেকে কিসের শব্দ আসছে?
মেরিন রান্নাঘরে গিয়ে দেখে নীড় কাজ করছে । আজকে নীড়কে সেই প্রথম দিনের মতো লাগছে। সাদা পাঞ্জাবি আর চুরিদার …
নীড় : good morning my snow white …
মেরিন কিছু না বলে রুমে চলে গেলো। ওর পিছে পিছে নীড়ও গেলো।
নীড় : snow white … শশুড়ড্যাড আর শাশুড়িমমের কবরের সামনে যাবে? দোয়া করতে…
মেরিন : …
নীড় : চলো যাই….
নীড় মেরিনকে নিয়ে গেলো। মেরিন কান্না করলো। নীড় মেরিনকে সামলে নিলো….
.
৫দিনপর…
এই ৫দিন ধরে নীড় গাড়িতেই ঘুমিয়েছে । একটুও রাগারাগি করেনি। মেরিনের হাতও কেবল খাওয়ানোর সময় ধরেছে। তবুও মেরিনের এতে কিছুই যায় আসেনা ।
নীড় : মেরিন… শশুড়ড্যাডের যা আছে সবই তোমার। সবকিছুর দায়িত্বই তোমার। আজকে যদি তুমি বাবার মেয়ে না হয়ে ছেলে হতে তবে তো তুমিই সব handle করতে… তাইনা? নতুন দমে কাজ শুরু করো। ধীরে ধীরে move on করো।
মেরিন : …
নীড় : আমি কি বলেছি তুম…
মেরিন : চলে যান… আমার বাবা আপনাকে অপছন্দ করতো। তাই প্লিজ আমার বাবার সীমানা থেকে চলে যান….
নীড় : আমি তো নি…
মেরিন : না… নিচটাও আমার বাবার সীমানা… তাই প্লিজ চলে যান.
নীড় : সেদিন রাতে যা করেছি অপরাধ করেছি। ক্ষমা করে দিন…
মেরিন : আপনি আপনার আসল রূপ দেখিয়েছেন…. এখন প্লিজ চলে যান…
নীড় : আমার ক…
মেরিন : যান… আমার চোখের সামনে আসবেন না।
নীড় : ok…
নীড় কিছু না বলে চলে গেলো।
⛈️⛈️⛈️
]
.
বর্তমান…
মেরিন : বাবা…
নিহাল মেরিনের কপালে স্নেহের পরশ দিলো।
নিহাল : তুই আমার বউমা নারে… তুই আমার মা …
মেরিন মনে মনে : বউ মা? বউমা? মমমানে কি? আমাকে বউমা বলছে কেন? oh god …. মাথাটা আবার ব্যাথা করছে।
নিহাল : বর্ষনের বন্যা চলে এসেছে … এখন আমার ছেলে একদম সুস্থ হয়ে যাবে…
মেরিন : সুস্থ হয়ে যাবে? কি হয়েছে নীড়ের ? কোথায় উনি…?
নিহাল : আলো mental asylum এ…
মেরিন : mental asylum এ?
নিহাল : হামম।
মেরিন : কিন্তু কেন?
নিহাল : কারন তোমাকে নিজের হাতে shoot করার পর ও জ্ঞান হারায়। আর জ্ঞান ফেরার পর নিজেকেও shoot করেছিলো…. অতিরিক্ত ভালোবাসে যে তোমায়….
” অতিরিক্ত ” ভালোবাসে যে তোমায়.. কথাটা শুনে মেরিনের মাথা চক্কর দিলো। পরে যেতে নিলো। নিরব এসে ধরে ফেলল।
নিরব : ভাবী… দেখি দেখি বসে পরো… আসো…
নিপা : এই এক কাজ তোর ভাবীকে ওর রুমে দিয়ে আয়।
নিরব : হামম মামনি…
নিরব মেরিনকে হাটিয়ে নিয়ে যেতে নিলো।
ইশিতা ( নিরবের বউ ) : এই নিরব ভাবি হেটে যেতে পারবে না… পাগল নাকি তুমি?
নিরব : ও হ্যা…. আমিও না বোকা…
নিরব মেরিনকে নীড়-মেরিনের রুমে নিয়ে গেলো। রুমে গিয়ে নীড় আরো অবাক। চারদিকে চোখ বুলাতে লাগলো। সবাই ব্যাস্ত হয়ে পরলো মেরিনকে নিয়ে।
.
একটুপর …
মেরিন বসে বসে ভাবছে। কিন্তু কিছুই বুঝতে পারছেনা।
নিহাল : আসবো মামনি?
মেরিন : হামমম।
নিহাল এসে মেরিনের পাশে বসলো।
নিহাল : এখন ভালো লাগছে মামনি?
মেরিন : হ্যা বাবা…
নিহাল : তুমি ফিরে এসেছো…. চৌধুরী পরিবারের আলো ফিরে এসেছে। এই চৌধুরী বাড়িটা তো অন্ধকার ছিলো। তোমার আলোতেই তো আলোকিতো হয়েছে। পুরো পরিবার একসাথে থাকে …. সবই তোমার জন্য ।
মেরিন : …
নিহাল : আমার ছেলের ওপর এতো অভিমান থাকা সত্তেও যে তুমি ওর খোজ নিতে এসেছো …. সত্যি তোমার মতো কেউ হয়না।
মেরিন মনে মনে : আমি তো নীড়কে শেষ করতে এসেছি…
নিহাল : মামনি… আমার ছেলেটার ওপর রাগ করে আর কি করবে? আগে ছিলো সাইকো… আর এখন… কিন্তু আমি এটাও জানি যে ওকে কেবল আর কেবল তুমিই আর তোমার ভালোবাসাই স্বাভাবিক করতে পারবে…
মেরিন : …
নিহাল : তবে আগে যে তোমাকে নিজেকে সুস্থ করতে হবে… তুমিও যে অসুস্থ । তুমি সুস্থ হও এরপর…
মেরিন : আমি পুরো সুস্থ আছি বাবা…
নিহাল : না মাম…
মেরিন : বাবা…. its about নীড়…
নিহাল : হামম। কালই তবে তোমাকে নীড়ের কাছে নিয়ে যাবো।
মেরিন : …
নীড় : ও হ্যা… দারাও…
বলেই নীড় বেরিয়ে গেলো ।
মেরিন : এ আবার কোথায় গেলো?
নিহাল আবার ফিরে এলো। হাতে ১টা ডাইরী নিয়ে।
নিহাল : এই নাও… এটা নীড়ের ডাইরী…. আমি জানিনা… এরমধ্যে কি লেখা আছে?
মেরিন : খুলে দেখোনি?
নিহাল : না…
মেরিন : কেন?
নিহাল : কারন এটা লকড। জানিনা এটার password কি? অনেকচেষ্টা করেছি তবুও পারিনি। আমি জানি তুমি হয়তো এটার password জানো।
মেরিন : ???
নিহাল : এটাও জানি যে নীড় তোমাকে এটার password দেয়নি…
মেরিন : …
নিহাল : আমি নীড়কে খুব ভালো ভাবেই জানি। আমিই যে ওর বাবা আর আমিই যে ওর মা…
মেরিন আবারও অবাক হলো…
নিহাল : আমি জানি এই ডাইরীর password কোনো না কোনোভাবে নীড় তোমাকে বলেছে। hint দিয়েছে… হয়তো গভীর ভাবে ভাবলে আর আমার ছেলের ভালোবাসার গভীরতা বুঝতে পারলে সেই hint ও তুমি বুঝবে…. password টা ধরতে পারবে। ডাইরি টা খুলতে পারবে… ভেতরে কি আছে জানতে পারবে…
মেরিন : …
নিহাল : আসছি…
বলেই নিহাল চলে গেলো।
মেরিন : নীড় আমার স্বামী কি করে হতে পারে? আমার স্মৃতির পাতা থেকে কি কিছু মুছে গিয়েছে? নাকি এরা মিথ্যা বলছে? নাটক করছে? আর কি আছে এই ডাইরী তে…. oh god…
.
অতীত…
[
⛈️⛈️⛈
দোলা : নীড়ের সাথে এমন করে কি ঠিক করছিস?
মেরিন : …
দোলা : তাকে যে সামনে আসতে না করেছিস… সে আসছেনা । কিন্তু সে কি এটা সবসময় মেনে চলবে? নীড় আহমেদ চৌধুরী বর্ষন সে…
মেরিন : …
দোলা : কখন কি করে তার ঠিক নেই। তার মধ্যে তুই বাসায় একা থাকিস। uncle auntyও নেই… তু…
মেরিন : আম্মু-বাবা নেই বলেই তো কোনো ভয় নেই..
দোলা : মানে?
মেরিন : মানে খুব সহজ…. এখন আমার কাছে হারানোর মতো কিছু নেই।
দোলা : কি বলছিস কি তুই?
মেরিন : ১টা মেয়ের কাছে হারানো জন্য কি থাকে? নিজের জীবন? নাহ… ১টা মেয়ের কাছে হারানোর জন্য থাকে মা-বাবার জীবন, তাদের সম্মান… নিজের সম্মান… কিন্তু আজকে আমার কাছে হারানোর জন্য কিছুই নেই রে… আমি সব হারিয়েছি। আম্মু-বাবাকে, ওদের সম্মানকে, নিজের… এখন আমি আর নীড়কে ভয় পাইনা…. কারন কেরে নেয়ার মতো আমার কাছে আর কিছুই নেই….
দোলা : কিসব বলছিস বুঝতে পারছিনা।
মেরিন : বুঝতে হবেনা। আসছিরে…
মেরিন চলে গেলো। পরদিন থেকে মেরিন হসপিটালে join করলো।
.
২দিনপর…
হসপিটালে…
অর্নব : মেরিন…
মেরিন : অর্নব ভাইয়া… আসো….
অর্নব : ভালো আছিস?
মেরিন : হ্যা ভাইয়া। মামা-মামি ভালো আছে?
অর্নব : হ্যা। তোকে এখনই আমার সাথে বাসায় যেতে বলেছে। একসাথে lunch করবে বলে… চল…
মেরিন : …
অর্নব : কি হলো? কি ভাবছিস? চল…
মেরিন : …
অর্নব : সন্দেহ করছিস আমাকে…
.
চলবে…