সরোবরে প্রেম পর্ব ২

0
998

সরোবরে প্রেম
লেখনীতেঃশ্যামকন্যা
পর্ব:০২

প্রিয়তার ফুপাতো বোন অবনী ওরই বয়সী। দুদিন আগে প্রিয়তা রেস্টুরেন্টে অর্ণবের সাথে অবনীকে বসে কথা বলতে দেখেছিলো। অর্ণবকে সাথে সাথেই কল করে জিজ্ঞেস করে সে কোথায়। অর্ণব জবাব দেয় সে হাসপাতালে পেশেন্ট দেখছে। সেখান থেকেই প্রিয়তার রাগের সূচনা। তবে সে বুঝতে পারেনি অর্ণব ওকে সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছে অবনীর সাথে মিলে। কথাটা এই মুহূর্তে মাথায় ঢুকলো। পুরো ছাদটা প্রিয়তার পছন্দের গন্ধরাজ ফুল দিয়ে ডেকোরেশন করা হয়েছে। যার তীব্র গন্ধে যেকেউ মূর্ছা যাবে। প্রিয়তা ভেবে পাচ্ছে না সে কি উত্তর দিবে। সে কাঁপা হাতে অর্ণবের হাত থেকে গোলাপগুলো নিল। বলল,

“চলুন একসাথে কেক কাটি।”

প্রিয়তার মা, কাব্য, অবনী, বড় ফুপ্পি, ফুপা সবাই মিলে কেক কাটে। অর্ণব হাতে একটু কেক নিয়ে প্রিয়তাকে খাইয়ে দেয়। প্রিয়তা বাঁধা দেয় না। অনুতাপে তার হৃদয় দগ্ধ হচ্ছে। এর থেকে পরিত্রাণের উপায় কী?

রাতে খাওয়া শেষে অর্ণব চলে যেতে চায়। সেলিনা বেগম তাকে থেকে যেতে বলেন। অর্ণব রাজি হয় না। প্রিয়তা এই পর্যন্ত তার সাথে কথা বলেনি। সে কিসের জন্য এখানে থাকবে। প্রিয়তা কি তাকে টেকেন ফর গ্রান্টেড ধরে নিল নাকি?

অর্ণব নিচে নামার সময় প্রিয়তাও সিড়ি দিয়ে নিচে নামে। বাইকের চাবি ঘোরানোর আগেই প্রিয়তা বাইকে চেপে বসে। হুট করে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলে, “আমায় রাতের শহরটা ঘোরাবেন, ডাক্তার?”

অর্ণবের রাগ কমে না। সে প্রিয়তার হাত ছাড়িয়ে বলে,

“কম কষ্ট দাও নি আমায়। তখন সবার সামনে কতোটা ছোট হয়েছিলাম বোঝো?”

প্রিয়তা নত চোখে তাকায়। কাঠকাঠ গলায় বলে,

“আপনি তাহলে বিয়েটা ভেঙে দিন।”

অর্ণব প্রিয়তার কাঁধ ঝাকিয়ে বলে,

“মানুষের ইমোশন তুমি বোঝই না। এই নিয়ে দুবার বিয়ে ভাঙার কথা বললে। বিয়ে খেলা মনে হয় তোমার কাছে?”

প্রিয়তা বোঝার ভাণ করে বলে,

“রাগ ভাঙতে এসেছিলাম। আপনি আমায় কথা শুনিয়ে দিলেন। আমি আর আপনার সামনেই আসব না।”

“আমিও তোমার সামনে আসব না।”

খুব সাবধানে পেছন থেকে ওদের কথা কেউ রেকর্ড করে। এগুলো আসমা চৌধুরীর কাছে পৌছানো তার একমাত্র কাজ। মুখ বাকিয়ে হাসতে থাকে সে।

প্রিয়তা মুখ ঘুরিয়ে বাসায় চলে আসে। সেলিনা বেগম শুধায়,

“জামাইকে ভালোমতো বিদায় দিয়েছিস?”

প্রিয়তা রেগে উঠে বলে,

“বিয়ের আগেই এতো জামাই জামাই করো কেন, মা?”

সেলিনা বেগম হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইলেন। মেয়ের সাথে জামাইয়ের ঝগড়া চলছে নাকি? এমন ছেলের সাথে কেউ ঝগড়া করে? সাত কথায় যার একটা উত্তর। তিনি উপদেশের সুরে বলেন,

“মাগো, পুরুষ মানুষের রাগ হলো মেঘ। রোদের দেখা মিললেই কেটে যায়। সম্পর্কে দুজনের রাগ হওয়া ঠিক না। একজন আগুন হলে আরেকজন হবে পানি।”

প্রিয়তা সামান্য অনুতপ্ত হলো। ভুলটা তো তারই ছিল। তবুও সে অর্ণবের সাথে ঝগড়া করলো। হয়তো উচিত হয়নি এমনটা করা। কালকে সে অবশ্যই ডাক্তারের রাগ ভাঙাবে। মায়ের কথাও শুনবে।
প্রিয়তা মায়ের গালে আলতো চুমু খেয়ে বলে,

“থ্যাংক ইউ,মা।”

সেলিনা বেগমও পরম আদরে মেয়ের থুতনিতে চুমু খান। পেছন থেকে কাব্য এসে বলে,

“মা-মেয়ের আদর পর্ব শেষ হলে আমায় কেউ খাবার দাও।”

প্রিয়তা হেসে ভাইকে খেতে দেয়।

আসমা চৌধুরী আর আমিন চৌধুরী চা নিয়ে বসেছেন। আসমা স্বামীর নিকট অর্ণবের কথা তোলেন। কাল রাতের ঘটনা বিস্তারিত বর্ণনা করেন। আমিন সাহেব ব্যাপারটা হালকাভাবে নেয়। বলেন,

“ওদের ব্যাপারে তুমি নাগ গলানো বন্ধ করো, আসমা।”

“আমার ছেলের কথা আমি ভাববো না?”

“সবার মধ্যেই মান-অভিমান হয়। ওদেরও হয়েছে। দেখবে ঠিক হয়ে যাবে।”

আসমা চৌধুরী কিছুটা শান্ত হয়। তখনই ওনার ফোনে একটা রেকর্ডিং আসে আননোন নাম্বার থেকে। রেকর্ডিংটা শোনার পর ওনার আত্মা কেঁপে উঠে। তিনি স্বামীকেও শোনান। আমিন সাহেব বলেন,

“ওদের অজান্তে কাজটা হয়েছে। কখনো একপাক্ষিক চিন্তা করো না, আসমা।”

আসমা চৌধুরীর কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়ে।

অর্ণব বাইকের স্পিড বাড়িয়ে দেয়। প্রিয়তার বলা কথাগুলো তাকে ভীষণ কষ্ট দিয়েছে। ক্ষতবিক্ষত করেছে বুকটা। তবে কি সে ব্যর্থ হলো? নিজের ভালোবাসা প্রিয়তাকে বোঝাতে। হুট করে সামনে একটা মালবাহী ট্রাক চলে আসে। অর্ণব চোখে অন্ধকার দেখে।

প্রিয়তার ফোনে অর্ণবের অনেকগুলো গান রেকর্ড করা আছে। এর মধ্যে “কেন রোদের মতো হাসলে না” গানটা প্রিয়তার বেশি পছন্দের। মনে হচ্ছে সবটা আবেগ ঢেলে প্রিয়তার জন্যই গানটা গাওয়া হয়েছে। প্রিয়তা তোয়ালে আর জামা নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে। মোবাইলে ফুল ভলিউমে অর্ণবের গানের রেকর্ডিং বাজতে থাকে।

“কেন রোদের মতো হাসলে না
আমায় ভালো বাসলে না
আমার কাছে দিন ফুরালেও আসলে না
মন কেমনের জন্মদিন
চুপ করে থাকা কঠিন
তোমার কাছে খরস্রোতা ও গতিহীন
নতুন সকালগুলো কপাল ছুঁলো তোমারই
দূরে গেলেও এটাই সত্যি তুমি আমারই
শুধু আমারই”

গানের প্রতিটা শব্দ প্রিয়তার বুকে মৃদু কাঁপন সৃষ্টি করে। অনুতাপের বোঝা আরও ভারী হয়। বুকটা ভার হয়ে আসে অর্ণবের জন্য। সে কোনোমতে গোসল সেরে বের হয়। ভেজা চুলগুলো মেলে দেয় সন্তপর্ণে। হাতে পায়ে সামান্য লোশন মেখে নেয়। তখনই সেলিনা বেগম হন্তদন্ত হয়ে প্রিয়তার রুমে ঢুকেন। বলেন,

“তোর নামে কল এসেছে।”

কেউ একজন অপর পাশ থেকে বলে উঠে,

“এটা যার মোবাইল তার ভয়াবহ এক্সিডেন্ট হয়েছে। ইমারজেন্সি নাম্বারে আপনার নাম্বার দেয়া ছিল তাই আপনাকে জানালাম।”

প্রিয়তা ধপ করে পড়ে গিয়ে জ্ঞান হারালো।

চলবে?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here