#সন্ধ্যায়_সন্ধি
#মম_সাহা
পর্বঃ৩
টানা সাতটা কল দেওযার পরও যখন অপরপাশে থেকে মহিলা কর্কশ কন্ঠে বলে উঠছে *আপনার ডায়াল কৃত নাম্বারটি ব্যস্ত আছে*।তখন জেনো কেউ তেজের শরীরে আগুন লাগিয়ে দিচ্ছে মনে হয়।এত রাতে এতক্ষণ যাবত চাঁদ কার সাথে এত কথা বলছে।এই দুশ্চিন্তা নিয়ে রাত কেটেছে তেজের।
অন্য দিকে প্রহেলিকার ঘুম ভেঙ্গে যায় কারো ফুফিয়ে কাঁদার আওয়াজে। পাশ ফিরে দেখে তার আদরের ছোট বোন চাঁদ কান্না করছে। প্রথমে প্রহেলিকা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায় তারপর ভাবে চাঁদ হয়তো খারাপ স্বপ্ন দেখেছে। তাই হয়তো ঘুমের ঘোরে কাঁদছে।কিন্তু চাঁদের মুখে হালকা আলো দেখা যাচ্ছে। সেটা মোবাইলের আলো।প্রহেলিকা চাঁদের হাতের মোবাইলটা ছিনিয়ে নিয়ে যে দৃশ্য দেখে তাতো তার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ে।
চাঁদ একধারে কেঁদেই যাচ্ছে। প্রহেলিকা বলেছে চাঁদকে যে তেজ ভাইয়াকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা উচিত। চাঁদও ভাবলো হ্যাঁ কিন্তু পরক্ষণেই মনে পরলো বারান্দায় বলা তেজের কথাটা। যদি জিজ্ঞেস করার পর তেজ আবারো বলে *তোকে কৈফিয়ত দিতে হবে নাকি?” তখন চাঁদ কি করবে।এটা যে তার সহ্য হবে না। এর চেয়ে বরং সে এই ভয়ংকর দৃশ্যটা মনে রেখে সরে যাবে তেজের জীবন থেকে।
সারাটা রাত দুজন মানব মানবীর কেটে গেলো একে অপরের প্রতি অভিযোগ করে।তার সাক্ষী ছিলো প্রহেলিকা।
______________________________
সকালে,
চাঁদের মা অনবরত ডেকেই যাচ্ছে চাঁদকে ঘুম থেকে উঠার জন্য কিন্তু চাঁদের উঠার নাম গন্ধই নেই।চাঁদের মা চাঁদের মুখটা কাঁথার নিচ থেকে বের করে আতকে উঠলো।জ্বরে গাঁ পুরে যাচ্ছে,চোখ মুখ কেমন ফোলা, সারা মুখ লাল হয়ে যাচ্ছে।এমন সময় প্রহেলিকাও গোসল সেরে বের হয়ে বোনের করুন দশা দেখে থমকে গেলো।
চাঁদের মা জোড়ে জোড়ে চাঁদের ভাই আহানকে ডাকতে লাগলো আর প্রহেলিকাকে বললো তাড়াতাড়ি তেজকে ডেকে নিয়ে আসতে।
মায়ের এমন ডাক শুনে আহানও ঘাবড়ে গেলো। সে অফিসের জন্য তৈরি হচ্ছিলো।মায়েে ডাকের আওয়াজ শুনে দৌড়ে চাঁদের রুমে গেলো।দেখে তার মা তার বোনের মাথাটা বুকে নিয়ে সমানে কেঁদে যাচ্ছে।আতকে উঠলো আহান। তেজও হাজির হলো তখনই।সাথে তাদের বাসার সবাই।
চাঁদকে এমন অবস্থায় দেখে কারো মস্তিষ্ক কাজ করছে না।সবাই স্তব্ধ হয়ে যায়।তেজ তাড়াতাড়ি রুমে ডুকে চাঁদকে পাঁজা কোলে নিয়ে ওয়াশরুমে পানির ট্যাব ছেড়ে মাথাটা পেতে দেয় আর আহানকে বলে ডাক্তারকে কল দেওয়ার জন্য।
____________________________
ডাক্তার চাঁদকে দেখে গেছে আধাঘন্টা হলো।অতিরিক্ত টেনশনের জন্য প্রেশার ফল করেছে। আর এর জন্য জ্বরটা এসেছে। সবাই তো ভীষণ অবাক হয়েছে যে চাঁদেে কী এমন টেনশন।তেজ তো আরো অবাক। হঠাৎ করে মেয়েটার হলো টা কি।কাল রাতে তেজের কথাটার জন্যই কি এ অবস্থা। কিছুই মাথায় আসছে না তেজের।
একটু আগে চাঁদ উঠেছে।তাঁকে সবাই দেখে গেছে।আহান তো বোনের পাশেই বসে ছিলো এতক্ষণ। ইনিয়েবিনিয়ে অনেক বার বোনকে জিজ্ঞেস করেছে টেনশনের কথা কিন্তু চাঁদের মুখ থেকে একটা কথা ও বের করতে পারে নি।সবাই ভেবেছে চাঁদকে একটু সময় দেওয়া হোক।
দূরে সোফায় বসে সবটাই পর্যবেক্ষণ করছে তেজ।চাঁদের আচারণ তার স্বাভাবিক লাগছে না। মেয়েটা জ্বরের জন্য এতটা চুপ এটা সে মানতেই পারছে না।সে অপেক্ষা করছে রুম ফাঁকা হওয়ার। সে খেয়াল করছে মেয়েটা নিঁখুত ভাবে তাকে ইগ্নোর করছে।
এখন রুম ফাঁকা। শুধু চাঁদ, প্রহেলিকা আর তেজ আছে রুমে।প্রহেলিকাকে জোড় করে ধরে রেখেছে চাঁদ। কারণ সে জানে তেজ একা পেলেই তাকে প্রশ্ন করবে।আর প্রহেলিকা ও বোনের মনের অবস্থা বুঝতে পেরে থেকে গেছে।বাহিরে সবাই কথা বলছে।চাঁদের মা বিকালের নাস্তা তৈরি করছে।চাঁদের বাবাকে কিছুই জানানো হয় নি।কারণ সে কয়দিনের জন্য শহরের বাহিরে গেছে।.শুধু টেনশন করবে।
এতক্ষণে চাঁদকে একা পেয়ে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে প্রশ্ন ছুড়লো তেজ।
– চাঁদ কি এমন হয়েছে যে এমন মরা কান্না করেছিস?
চাঁদ আতকে উঠে তবুও নিজেকে শক্ত রেখে উত্তর দেয়ঃ
– আমার কিছুই হয়নি তেজ ভাইয়া আপনি ভুলভাল বলছেন।
– আমি ভুল বলছি না ঠিক বলছি তুই ভালো করেই জানিস এবার উত্তর দে আর হ্যাঁ সত্যি টা বলবি।
চাঁদ এবার রেগে যায়।রেগে গিয়েই বলে- আমার যা ইচ্ছা তা হয়েছে আপনাকে বলবো কেনো?কে আপনি?আপনাকে কেনো কৈফিয়ত দেবো?
তেজ এবার সত্যিই অবাক হলো। চাঁদ তার সাথে কখনোই এমন করে কথা বলে না।মেয়েটা তার কাছে আসলে হ্যাঁ তে হ্যাঁ মিলায় আর না তে না মিলায়।তেজের কষ্ট হয়েছে ঠিকই কিন্তু রাগ হয়েঠে দ্বিগুণ। রাগটা এই কারণে না যে চাঁদ তার উপর চিল্লিয়েছে রাগটা একারণে মেয়েটা সমস্যা শেয়ার না করে কষ্ট পাচ্ছে।
রাগে তেজের শরীর কাঁপছে।কিন্তু চাঁদের সামনে সে রাগ কখনোই প্রকাশ করে না।হনহনিয়ে রুম থেকে বের হয়ে চলে যায় নিজের ফ্লাটে।
তারপরই রুমে গিয়ে হাজির হয় হৃদি আর তুহা আপু। তারা গিয়েছিলো তাদের ফুপুর বাড়িতে বেড়াতে কিন্তু চাঁদের অসুস্থতার কথা শুনে চলে এসেছে।তারা যাওয়ার সময় চাঁদ আর প্রহেলিকাকে বলেছিলো তাদের সাথে যেতে কিন্তু প্রহেলিকা যায় নি চাঁদের মন খারাপ দেখে।আর চাঁদ এমনেতেও ওদের ফুপুর বাড়িতে যেতে পছন্দ করে না।ওদের ফুপাতো বোন রাহা খুবই হিংসুটে মেয়ে আর ওদের ফুপুও কেমন কড়া কথার মানুষ।তাই চাঁদ যথাসম্ভব দূরত্ব বজায় রাখে তাদের থেকে।
একটু পর চাঁদের খালামনি হন্তদন্ত হয়ে চাঁদের কাছে আসে।চাঁদ তখন শুয়ে ছিলো।খালামনিকে দেখে চাঁদ উঠে বসে। খালামনি তখনই গড়গড় করে বলে উঠলো- চাঁদ মা তেজের সাথে কি হয়েছে তোর?রাগারাগি করেছিস আমার ছেলেটার সাথে? ঘরটাকে তো ভেঙ্গে ফেলছে মনে হয়। কি হয়েছে তোদের মাঝে?
চাঁদ জানতো তেজ এমন কিছুই করবে।তাই চাঁদ তার খালামনিকে কথা শিখিয়ে দিলো। আর সে জানে এতেই কাজ হবে।চাঁদের সাথে প্রহেলিকা,তুহা আর হৃদি বসে ছিলো।তারা চাঁদের বুদ্ধি দেখে লুটোপুটি খাচ্ছে হেসে।
অন্যদিকে তেজের মা ঘরে ঢুকেই তেজকে বললঃ তেজ বাবা দরজা খোল,আর জিনিসপত্র ভাঙ্গিস না।চাঁদ বলেছে আরেকটা কিছু ভাঙ্গার আওয়াজ পেলে সে কিছু খাবে না রাতে।ব্যাস এতেই কাজ হলো থেমে গেলো আওয়াজ।
তেজ ভাবছে এটুকু পাঁকা মেয়ে কীভাবে হুমকি দিচ্ছে তাকে।তবে তেজের মনটা এখনো খচখচ করছে চাঁদের কি হয়েছে জানার জন্য।
চলবে,,,