শ্রেয়সী পর্ব ২১

0
189

#শ্রেয়সী
#পর্ব_২১
#লেখনীতে_নাদিয়া_সিনহা

রোদ্দু আর ভাইয়ার বিয়ের একদিন পূর্ন হয়েছে। দাম্পত্য জীবনের একটা দিন প্রতিটা মানুষের বেশ সুখেই কা’টে। কিন্তু আমার ভাই আর রোদ্দুর জন্য তা একদমই সুখময় ছিলো না। কারণটা রোদ্দুর অতিরিক্ত বকবক করা। যা ভাইয়া সহ্য করতে পারে না তাই কথায় কথায় ধমকে উঠে। এই তো কাল সকাল বেলায় রোদ্দু আমার ঘরে এসে বলে,
-“শ্রেয়ু আমি তোর ভাইয়ের সাথে সংসার করব না।”

রোদ্দুর কথায় আমি বেশ বড়সড় ঝাঁটকা খাই। কেননা বিয়ের রাত পেরোতে না পেরোতেই নতুন বউ এই কথা বলে? বিছানা থেকে ধড়ফড়িয়ে উঠে বসি রোদ্দু কে কিছু বলতে যাব তখনই দেখি ঘরে তনুফ ভাইয়ার আগমন। তনুফ ভাইয়া এসেই রোদ্দুর হাত টেনে শক্ত করে ধরে কঠোর কন্ঠে বলে,
-“ঘরে চলো।”

রোদ্দু সঙ্গে সঙ্গে উত্তর দেয়,
-“না যাব না আমি। আপনার সাথে তো কোত্থাও যাব না।”

-“আমাকে রাগিয়েও না রৌদ্রসী। চলো আমার সাথে।”

আমি ভাইয়া কে থামিয়ে জিজ্ঞেস করি,
-“কি হয়েছে। বিয়ের একদিন পূর্ণ হতে না হতেই ঝগড়া বাঁধিয়ে দিয়েছো কেনো?”

-“তোর গুণধর বান্ধবী কে জিজ্ঞেস কর।”

-“আমাকে কেনো বলছেন? একটা কথাই তো জিজ্ঞেস করেছিলাম শুধু তারও উত্তর দিলেন না।”

এক নিশ্বাসে কথাটা শেষ করে রোদ্দু নিজের হাতটা মুচড়াতে শুরু করে৷ বহু চেষ্টা করছে ভাইয়ার হাত থেকে নিজের হাত ছাড়াতে কিন্তু ব্যর্থ হলো। আমি রোদ্দুকে জিজ্ঞেস করি,
-“কি হয়েছে? আর ভাইয়াকে কি জিজ্ঞেস করেছিস?”

-“তোর ভাই কে শুধু জিজ্ঞেস করেছিলাম যে এত তাড়াতাড়ি বিয়েটা কেনো করলো? আমার জীবন থেকে সব স্বাধীনতা কেঁড়ে নিয়েছে।”

ন্যাকা কান্না জুড়ে দিয়েছে রোদ্দু। আমি অসহায় হরিণের মতো দাড়িয়ে শান্তনা দিচ্ছি রোদ্দু কে। ভাইয়া বিরক্ত হয়ে বলে,
-“শ্রেয়ুর সাথে ঢাকায় পাঠিয়ে দিয়েছিলাম কারণ এখানে থাকলে তুমি প্রতিদিন কারো না কারো সাথে ঝগড়া করতে। তা নিয়ে মানুষ খারাপ চোখে দেখতো। তোমার বাবা-মায়ের কাছে রোজ বিয়ের ঘর আসতো। আর তোমার বাবাও তোমার প্রতি অতিষ্ঠ হয়ে বিয়ে দিয়ে দিত। আবার শ্রেয়ু থাকবে না একা একা কলেজে যাবে ক্লাস করবে বড্ড বার বেড়ে যাবে তাই ভেবে চিন্তে পাঠিয়েছিলাম ঢাকায়। কিন্তু না এই মহারাণী আমার ভাবনার চেয়ে বড় কাজ করিয়ে দেখিয়েছেন। পুরো কলেজ সহ পুরো শহরের মানুষের সামনে সার্কাস করে দেখিয়েছেন। এখন তুই-ই বল শ্রেয়ু একে কি আর দড়ি ছাড়া গরুর মতো রাখা যায়? তাই যত দ্রুত সম্ভব গোয়ালে পুরে দিলাম।”

তনুফ ভাইয়ার কথায় রোদ্দু রাগে ফেটে পরছে। আমি ওষ্ঠদ্বয় চেপে হাসি সংযত করার তীব্র প্রয়াস চালাচ্ছি। রোদ্দু আর সহ্য করতে না পেরে বলে,
-“আমি আপনার সাথে সংসার করব না।”

-“সংসার তো তোমাকে করতেই হবে। সে তুমি চাও বা না চাও।”

-“না না করব না৷ আমি এমন সংসার করব না যে সংসার আমার পড়াশোনা আমার স্বাধীনতা কেঁ’ড়ে নিয়েছে।”

-“৭১’এর যুদ্ধ চলছে নাকি? যেমন আমি অ’ত্যা’চা’র’কা’রি পাকিস্তানি আর তুমি অ’ত্যা’চা’রি’ত বাঙ্গালী অসহায় নারী?”

-“হ্যাঁ হ্যাঁ! তেমনই। কারণ ৭১ সালে দেশ স্বাধীন হলেও আমরা নারী জাতি স্বাধীনতা পাইনি।”

-“অকৃতজ্ঞ! বেগম রোকেয়া যে নারী অধিকারের জন্য এত লড়েছেন তাকে কি অধিকার দেওয়া হয়নি? যদি নারী জাতিকে স্বাধীনতাই না দেওয়া হতো তাহলে শ্রেয়ু আর তোমাকে আমরা ঢাকায় পড়াশোনা করতে পাঠিয়েছি কিভাবে?”

-“পাঠিয়ে ছিলেন। এখন তো আমি বিবাহিত মহিলা। এখন তো আমাকে পড়াবেন না।”

-“কে বললো পড়াব না?”

-“জানি জানি। মেয়েদের বিয়ে হয়ে গেলে আর পড়তে দেওয়া হয় না।”

-“চ’ড় দিয়ে দাঁত ফেলে দিব। রোদ্দু কাল চলে যাবে আর তুমি নতুন বউ তাই চারদিন পর ঢাকা যাবে। আর ভেবো না নতুন বিয়ে হয়েছে বলে পড়াশোনায় ছাড় দিব। রাতে তোমাকে আমি পড়াব।”

দুজনের ঝগড়ার মাঝে আমি এক নীরব দর্শন। নিজেরা নিজেরা ঝগড়া করলো আবার নিজেরা নিজেরাই সব মিটিয়ে নিচ্ছে। মাঝখান থেকে আমার সাধের ঘুমটা নষ্ট করলো দুজন। এদের দুজনকে আমি আর সহ্য করতে পারছি না। তাই চিৎকার করে বললাম,
-“থামো! আমার ঘর থেকে বেরিয়ে যাও।”

দুজনই অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি কোনো কথা না বলে ওদের ধাক্কা দিয়ে রুমের বাইরে বের করে দরজা বন্ধ করে দেই। ঝগড়াই যখন করবে নিজের ঘরে করুক না আমার ঘরে ঝগড়া করার কি আছে? নিজেদের তো সংসার ভাঙ্গলো না উল্টো আমার সাধের ঘুম নষ্ট হলো। সেদিন আমি আর দরজা খুলিনি। সারা দিন ঘুমিয়ে সন্ধ্যায় সবার সাথে আড্ডা দিয়ে আবার ঘুমিয়েছি। সেই ঘুম থেকে মায়ের ডাকে সকাল বেলায় উঠি। কারণটা ঢাকায় ফিরতে হবে।

বাড়িতে বিয়ে আমেজে এখনও গমগমে ভাব। চারিদিকে আত্মীয়-সজনের ভীর। অথচ আমাকে আজ ঢাকায় ফিরতে হবে। মনটা বড্ড খারাপ লাগছে রোদ্দুর জন্য। বেচারির জীবনে এত আনন্দের মুহূর্তে আমাকে মাঝ পথেই চলে যেতে হচ্ছে৷
রেডি হয়ে নিচে বসে আছি। অথচ আমার ভাইয়েদের কারো খবর নেই আমাকে ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার। সকালেই শুনেছি শান ভাইয়ার বন্ধু এ্যাক্সিডেন্ট করেছে সেখানে চলে গেছে। দাদাভাই বিয়ের সব কাজ কর্ম দেখছে। বাবা বাড়ি নেই। আর তনুফ ভাইয়া কে নিয়ে যাওয়ার প্রশ্নই উঠে না। কেননা ভাইয়া আমাকে নিয়ে এখন ঢাকায় গেলে অনেকটা সময় ব্যয় হবে। নতুন বিয়ে রোদ্দু বাড়িতে একা একা অনুভব করবে আর ভাইয়ার জন্য চিন্তা করবে তাই আমি নিজেই বলেছি তনুফ ভাইয়ার সাথে ঢাকায় যাব না।

অসুবিধা থেকে আমাকে বিপদে ফেলতে মা এসে বলে,
-“শ্রেয়ু তোকে ওয়ালিদ ঢাকায় নিয়ে যাবে। তুই আজ ওর সাথে চলে যা মা।”

আমি আশ্চর্য হয়ে মা কে বলি,
-“ওনার সাথে যাব মানে? একটা অচেনা লোকের সাথে আমি সিলেট থেকে ঢাকায় যাব? পথটা কিন্তু অতটা ছোট নয় মা যা তা হতে পারে।”

মা আমার দিকে তাকিয়ে রাগি কন্ঠে বলে,
-“ওয়ালিদের মতো ছেলে হয় না। ও নিজের জীবন দিয়ে দিবে তবুও তোকে আগলে রাখবে। আমি এমনি এমনি তোকে ওর সাথে যেতে বলছি না। ওয়ালিদ ছাড়া আমার আর ভরসা করার মতো কেউ নেই।”

-“দরকার পরলে আমি আজ যাবই না তবুও ওই ওয়ালিদের সাথে যাব না।”

-“সমস্যা কোথায় ওর সাথে যেতে?”

-“জানি না৷ যাব না মানে যাব না ব্যাস। তুমি বলে দেও আমার শরীর খারাপ।”

-“শ্রেয়ু ছেলেটা বাইরে তোর জন্য গাড়ি নিয়ে অপেক্ষা করছে। এখনই চল।”

-“মা আমি………..”

-“ব্যাস আর একটা কথা নয়। চল আমার সাথে।”

অনিচ্ছা সত্ত্বেও মায়ের সাথে গিয়ে গাড়িতে বসে পরি। জানি একবার যেটা মা বলেছে না শোনা অব্দি আমার নিস্তার নেই। তাই মায়ের কথায় ওয়ালিদের সাথেই ঢাকা উদ্দেশ্যে রওয়ানা করতে হয়। পুরো রাস্তা আমি চুপ করে ছিলাম। ওয়ালিদ নানা কথা বলে আমার সাথে কথা বলতে চেয়েছে। কিন্তু আমার চুপ থাকা বিধায় সেও সুযোগ পায়নি। তবে যা বলেছি তাও কম নয়। “শ্রেয়সী আপনি খুব সুন্দর। একদম স্নিগ্ধ। যাকে দেখে মুগ্ধ না হয়ে থাকা যায় না।” এমন হাজার খানেক প্রশংসা করে করে আমার মাথা খেয়েছে। তবুও আমি চুপ করেই ছিলাম। আসার পথে আরাবী কে মেসেজ করে জানিয়ে দেই আমি ফিরছি। মেসেজ সিন হলেও রিপ্লাই আসেনি। ঠিক বুঝে উঠতে পারি না আরাবী মেসেজের উত্তর দেয় না কেনো?

ফিসফিস করে কথা বলার মতো শব্দ কর্ণপাত হতেই আমার ঘুম ভেঙে যায়। চোখ খুলতেই দেখি আমি গাড়িতে বসে আছি৷ আসার পথে কখন যে ঘুমিয়ে পরেছিলাম তা ঠিক মনে পরছে না। ওয়ালিদ কে দেখলাম গাড়িতে বসে দরজার কাঁচ নামিয়ে কারো সাথে ফিসফিস করে কথা বলছে। একটু ভালো করে লক্ষ করতেই দেখলাম ওয়ালিদের সাথে কথা বলা লোকটি আরাবী। আরাবী বলছে,
-“এখানে গাড়ি দাঁড় করা যাবে না।”

ওয়ালিদ ধীম কন্ঠে বলে,
-“স্যরি ম্যান! আসলে ও হোস্টেলে এসেছে। ঘুমচ্ছে তাই আমি আর ডাকিনি। ইউ নো দ্যাট ঘুমন্ত মেয়েদের অপ্সরী লাগে। চোখ ফিরানো কঠিন।”

আরাবী কটমট করে আমার দিকে তাকায়। আমি ঢোক গিলে ওড়না টেনেটুনে ঠিক করে বসি। আরাবী আমার দিক থেকে দৃষ্টি সরিয়ে ওয়ালিদ কে জিজ্ঞেস করে,
-“মেয়েটি আপনার কি হয়?”

ওয়ালিদ শব্দ করে হেসে বলে,
-“এখনও তেমন কোনো সম্পর্ক তৈরি করতে পারিনি স্যাডলি। তবে খুব শীগগির নিজের নামে করে নিব। দোয়া করবেন।”

-“অবশ্যই! গুড লাক।”

আরাবী আর এক মুহূর্ত দাঁড়ায় না। আমার দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে চলে যায়। আরাবী যেতেই ওয়ালিদ আমার দিকে ঘুড়ে বসে অদ্ভুত হেসে বলে,
-“ঘুম ভেঙে গেলো কেনো? আবার ঘুমিয়ে পরো।”

আমি তোতলাতে তোতলাতে বলি,
-“না না! ঠিক আছে আমি হলে গিয়েই ঘুমাব।”

-“ওকে! বাট এভ্রিথিং ইজ ওকে? হঠাৎ এত ঘামছো কেনো? এসি তো অন আছে।”

-“এমনি আমি হলে যাব।”

কোনো মতে নিজের ব্যাগটা নিয়ে বেরিয়ে আসি গাড়ি থেকে। গাড়ি থেকে নেমেই দৌড়ে হলে চলে যাই। রুমি গিয়ে ফোন চেক করে দেখি আরাবীর সত্তুর প্লাস মিস কল। দেখেই আমার আত্মা কেপে উঠে। আরাবী নম্বরে ডায়েল করি কিন্তু ফোন বন্ধ। ফোন বন্ধ থাকার কারণটা ঠিক ধরতে পারলাম না। নুসুও আজ হলে নেই বাড়ি গেছে। আমি একা কি করব। কাউকে বলতে পারছি না আরাবীও রেগে আছে। সাজ্জাদ ভাই, শাহীর ভাই করে নম্বরও তো নেই। আরাবী খবর নিব কি করে? সারা রাত দুচোখের পাতা এক করতে পারিনি। সারাক্ষণ মস্তিষ্কে আরাবীর ভাবনায় অস্থির হয়ে উঠছে। করার মতো কিছুই নেই শুধু কাল সকালটার অপেক্ষা। সকালে ভার্সিটি গিয়ে আরাবী কে খুঁজতে হবে। অতঃপর অন্তরালের সকল ভয়, অনুভূতি সম্পর্কে তাকে জানাতে হবে। এভাবে আর চেপে রেখে সহ্য করার মতো ক্ষমতা আমার নেই। কালই আরাবী কে সব বলে দিব।
____________________________

ক্লাস শুরু হওয়ার প্রায় দের ঘন্টা আগে আমি কলেজে চলে যাই। পুরু কলেজ তন্নতন্ন করে খুঁজচ্ছি কোথাও আরাবীর দেখা নেই। তার বন্ধুরা কেউ জানে না সে কোথায়। সকাল গড়িয়ে দুপুর হয়ে গেলো তবুও আরাবীর কোনো খবর নেই। এদিকে আমার প্রাণ যায় যায় অবস্থা। ছেলেটা কে আর কোথায় কোথায় খুঁজব? তেমন কিছুও তো চিনি না। নুসু, রোদ্দু কেউ নেই। সাজ্জাদ ভাই থাকলেও হেল্প করতেন কিন্তুও সেও নেই। মনের অজান্তে চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পরতে লাগলো। বড্ড অসহায় লাগে যখন আমরা কাউকে খুঁজি কিন্তু তাকে খুঁজেও পাই না৷ তখন নিজেকে এই পৃথিবীর সবচেয়ে বড় অসহায় মনে হয়৷ মাঠের এক কোনে দুপা মুড়িয়ে বসে কান্না করে দেই। কি আনন্দ পাচ্ছে সে আমাকে কাঁদিয়ে। এমনটা না করলেও তো পারতো।
আমার হাজারও ভাবনার মাঝে আচমকা কেউ আমার হাত ধরে হেঁচকা টান দিয়ে দাঁড় করায়। অচমকা এমন কান্ডে আমি বেশ ভয় পেয়ে যাই। সম্মুখে থাকা ব্যক্তির পানে তাকাতেই সকল ভয় অভিমানে পরিপূর্ণ হয়ে গেলো৷ আরাবী আমার দিকে তাকিয়ে আমার হাত ধরে টেনে কোথাও নিয়ে যাচ্ছে। বেশ দ্রুত হাঁটছে। আরাবীর হাঁটার সাথে তাল মেলাতে বেশ বেগ পোহাতে হচ্ছে। বার বার হোঁচট খেয়ে পরে যেতে যেতে সামলে নিচ্ছি। আরাবী আমাকে টানতে টানতে কলেজের পিছন দিকটায় নিয়ে আসে। এখানে সচরাচর মানুষ কম আসে। অনেকটাই সুনসান নীরব। আরাবী আমার হাত ছেড়ে শক্ত করে চুল মুষ্ঠি করে ধরে গম্ভীর করে বলে,
-“ওই ছেলেটা কে?”

আরাবীর এই শান্ত স্বরেই আমি কেঁপে উঠি। অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আমার পানে। চোখ দিয়েই যেনো সব ধ্বংস করে দিবে। আমার নীরবতায় আরাবী যেনো আরও হিংস্র হয়ে উঠার উপক্রম। সে আমার সম্মুখে এসে বাহু শক্ত করে ধরে চিৎকার একই প্রশ্ন জিজ্ঞেস করে। আমি ভয়ে ভয়ে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলি,
-“ওয়ালিদ তাজওয়ার।”

-“তোমার সাথে সম্পর্ক কী?”

-“কোনো সম্পর্ক নেই। ভাইয়ার বিয়েতে এসেছিলো।”

-“বিয়েতে আসা গেস্ট তোমাকে হল অব্দি কেনো নিয়ে আসলো?”

-“আসলে ভাইয়া, বাবা কেউ বাড়ি নেই। তাই মা জোর করে ওনার সাথে পাঠিয়েছে।”

আরাবী এবার চিৎকার করে উঠে,
-“আর তুমি চলে এলো এর সাথে। হাউ কু’ড ইউ ডু দ্যাট?”

-“আমি ইচ্ছে করে করিনি।”

-“তোমার অনিচ্ছায়ও হয়নি। যখন বেঘোরে ঘুমচ্ছিলে ছেলেটা তোমার দিকে হাত বাড়াতে যাচ্ছিলো। আমার সেটা একদমই সহ্য হচ্ছিলো না।”

আমার চোখ দুটো ছলছল করে উঠলো। আরাবী এগিয়ে এসে আমার কাঁধ চেপে ধরে বলে,
-“তুমি কি এতটাই অবুঝ? বোঝো না তোমাকে অন্য কারো সাথে দেখলে আমার সহ্য হয় না। মনে হয় সব ধ্বংস করে দেই। নিজেকে উন্মাদ বোধ হয়। কন্ট্রোল করতে পারি না।”

-“স্যরি! আর এমনটা হবে না।”

আরাবী আমার দিকে ঘুরে তাকায়। দৃষ্টি তার টলমল করছে। শ্বাস টেনে ধীর কন্ঠে বলে,
-“এমনটা হবে না কিন্তু এমনটা হয়েছে। আর যা আমি সহ্য করতে পারছি না।”

আরাবী চলে যাচ্ছে আমি পিছু ডেকে জিজ্ঞেস করি,
-“কোথায় যাচ্ছেন?”

-“যেখানেই যাই আমার অনুপস্থিতিতে আর কেউ ভালল থাকুক বা না থাকুক তুমি ভালো থাকবে।”

আরাবী অনেকটা সামনে চলে গেছে। আমি দৌড়ে আরাবী সামনে গিয়ে পথ আঁটকে দাঁড়িয়ে বলি,
-“আপনার অনুপস্থিতি আমাকেও পোড়ায় তা কি সত্যি বোঝেন না? আমি না হয় অবুঝ আপনি তো বোঝেন তাহলে এতদিনে এইটুকু বোঝেননি আমি আপনাকে ছাড়া থাকার কথাও ভাবি না।”

-“থাকতে পারবে না কেনো?”

-“জানি না।”

-“ভালোবাসো?”

আমি মাথা নিচে করে মাটিতে দৃষ্টি আবদ্ধ করি। অতঃপর শত দ্বিধা, সংকোচ এক পাশে ঠেলে মাথা উপর-নিচ করে হ্যাঁ বোধক সম্মতি দেই। লজ্জায় আরাবী পানে তাকাতেও পাছি না আরাবী এবার শান্ত কন্ঠে বলে,
-“নিজের মুখে বলো।”

-“ভয় হয়।”

-“কেনো?”

-“যদি হারিয়ে যায়?”

~চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here