শ্রাবন সন্ধ্যা পর্ব:-১৬
#আমিনা আফরোজ
দুপুর তখন দুটো বাজে। সূর্যের তেজ কিছুটা বেড়েছে।তবে তা মাত্রাতিরিক্ত নয়।অফিসে তখন লান্স টাইম চলছে। কিন্তু শ্রাবণ বাহিরে লান্স করেই বেরিয়ে পড়বে ওর কলেজের উদ্দেশ্যে।কলেজে কিছু জরুরী কাজ থাকায় আজকের কাজগুলো দ্রুত সেরে ফেলছে ও। শ্রাবণ যখন সব ফাইল গুছিয়ে রেখে কেবিন থেকে বের হবে ঠিক তখনই নেহা এসে হাজির হলো ওর কেবিনে। শ্রাবণ নেহাকে দেখে বলল,
–“কি ব্যপার নেহা তুমি হঠাৎ আমার অফিসে?”
–“কেন আসতে পারি না নাকি?”
–“তা নয় আসলে খুব একটা আসো না তো তাই বললাম।”
–“ভাবছি এখন থেকে রোজ আসব।”
–“কেন?”
–“মন বলেছে তাই।”
–” তা তুমি চাইলে আমার বাবার কাছে আসতেই পারো।”
শ্রাবণের কথা শুনে নেহা ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞাসা করল,
–“তুমি আর আসবে না অফিসে?”
–“না ,আমি আপাতত মাসখানেক আর অফিসে আসবে না।”
–“কেন?”
–“আমার ফাইনাল পরীক্ষা শুরু হয়ে যাচ্ছে তাই।”
–“ওওও। তো এখন এতো তাড়াহুড়ো করে কোথায় যাচ্ছ?”
–“আপাতত লান্স করতে যাব । তারপর কলেজে যাব।”
–“চলো তাহলে দুজনে একসাথে লান্স করি।”
নেহার কথা শুনে শ্রাবণ চুপ করে রইল।নেহার সঙ্গ একদম ওর পছন্দ নয় কিন্তু সে কথা নেহাকে বলতেও পারছে না ও। শ্রাবণকে চুপ করে থাকতে দেখে নেহা নিজেই বলে উঠলো,
–“কি ব্যপার আরু কি ভাবছো এতো?”
–“না তেমন কিছু নয়।”
–“তাহলে চলো যাওয়া যাক।”
–“চলো তবে।”
নেহা ও শ্রাবন চলে গেল ওদের গন্তব্যের উদ্দেশ্যে।
অন্যদিকে নেহাল ওর কেবিনে বসে এখনো রোদের বলা কথা গুলো ভাবছিল।রোদই যে একাজ করেছে এ নিয়ে শতভাগ নিশ্চিত ও। কিন্তু রোদকে প্রমান দেখাবে কিভাবে। গতকাল পার্কিং এ রোদ ছাড়া দ্বিতীয় কোন ব্যাক্তিকে দেখে নি ও। হঠাৎ নেহালের মনে পড়ল কলেজের প্রতিটি ক্লাসেই সি সি টিভি ক্যামেরার ব্যবস্থা রয়েছে।নিশ্চয় পার্কিং এরিয়াতেও সিসি টিভি ক্যামেরার ব্যবস্থা রয়েছে।আজ ছুটি শেষে এ বিষয়ে নিশ্চিত হতে হবে ওকে।
দুপুরের খাবার খেয়ে রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে এলো শ্রাবণ ও নেহা। শ্রাবণ নেসাকে বলল,
–“তো কোথায় যাবে এখন তুমি?”
–“বাসায় যাব।”
–“ঠিক আছে চলো তোমাকে ড্রপ করে আমাকে আবার কলেজে যেতে হবে।”
–“আজ কলেজ না গেলে হয় না আরু?”
–“কেন বলতো?”
–“তোমার তো আজকাল দেখাই পাওয়া যায় না।তাই ভাবছিলাম আজ না হয় তোমার সাথে কিছু সময় কাটালাম।”
–“কিন্তু নেহা আজ তো এইটা সম্ভব না।আজকে আমাকে কলেজ যেতেই হবে।”
–“তাহলে কথা দাও আমাকে অন্য কোন দিন ঘুরতে নিয়ে তাড়া?”
–“কথা দিতে পারছি না তবে চেষ্টা করব।”
–“চলো এবার তবে যাওয়া যাক।”
–“চলো ।”
নির্জন রাস্তার একপাশ দিয়ে হেঁটে চলেছে রোদ।প্রতিদিন অবশ্য প্রিয়ন্তি থাকে ওর সাথে কিন্তু আজ ও কলেজে না আসায় একাই হাঁটতে হচ্ছে ও কে।হাঁটতে খুব একটা খারাপ লাগে না ওর। বরং আশেপাশের তাকিয়ে হাঁটতে হাঁটতে বেশ দারুন লাগে রোদের। বাড়িতে যেতে প্রায় বিশ মিনিট লাগে ওর।আনমনে হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ পিছন থেকে ওর নাম শুনে সে দিকে ঘুরে তাকালো ও।দেখল স্কুল ড্রেস পড়া একটা ছেলে দৌড়ে আসছে ওর দিকে। ছেলেটার নাম মিহির।একই ক্লাসে পড়ে।ছেলেটা হাঁপাতে হাঁপাতে রোদের সামনে এসে দাড়ালো।প্রায় বেশ খানিকটা পথ দৌড়ে এসেছে ও। মিহিরকে দেখে রোদ বলল,
–“কি ব্যপার তুমি এমন দৌড়াচ্ছো কেন?”
মিহির হাঁপাতে হাঁপাতে বলল,
–তোমার জন্য।”
মিহিরের কথা শুনে ভ্যবাচেকা খেয়ে গেল রোদ।বলল,
–“মানে ?”
–“আরে বাবা তোমার থেকে কিছু ইম্পর্ট্যান্ট নোট নিতাম।এজন্যই ডাকছিলাম তোমায়। কিন্তু তুমি তো শুনছিলেন না তাই এক প্রকার দৌড়ে আসতে হলো আমাকে।”
–“নোট তো সব প্রিয়ন্তি নিয়ে গেছে।তুমি বরং ওর কাছ থেকেই নিও।”
–“ও।ঠিক আছে।”
–“আমি তাহলে আসি এবার।”
মিহিরের থেকে বিদায় নিয়ে রোদ চলে গেল ওর বাড়ির দিকে। প্রতিদিনের মত আজও সন্ধ্যাকে জানালার পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখল রোদ।সন্ধ্যার দিকে এগিয়ে গিয়ে বলল,
–“এখানে দাঁড়িয়ে থেকে কি করো আপু?”
–“তেমন কিছু না। তুমি কখন এলে?”
–“এই তো সবে এলাম?”
–“তোমার কি কোন কারণে মন খারাপ আপু?”
–” না তো।কেন বলো তো?”
–“এমনিতেই মনে হইলো।”
–“থাক তোমাকে আর এ নিয়ে ভাবতে হবে না।যাও ফ্রেশ হয়ে এসো।”
সন্ধ্যার কথামতো রোদ ফ্রেশ হতে চলে গেল।রোদ চলে যাবার পর সন্ধ্যা আবারো বাহিরের খোলা আকাশের দিকে তাকাল।সকাল থেকে অকারণেই সন্ধ্যার মনটা ভাল হয়ে রয়েছে। কেবলই মনে হচ্ছে অনেক কিছু জানে না ও।এই অজানা প্রশ্নগুলোর উত্তর হয়তো শ্রাবণের কাছে পাওয়া যাবে।তাই ও ঠিক করেছে আজ শ্রাবণের সাথে এ ব্যপারে কথা বলবে ও। তাছাড়া শ্রাবনের নিজস্ব পছন্দ আছে কি না এ ব্যপারেও জানতে হবে ওর।তাই শ্রাবণের জন্য অপেক্ষা করছে সন্ধ্যা কিন্তু অপেক্ষার প্রহর যেন কাঁটছে না।আজ যেন ঘড়ির কাঁটা বড্ড ধীর গতিতে এগোচ্ছে।
শ্রাবণ বাসায় আসলো দশটার ও অনেক পরে।কলেজের কাজ শেষ সব বন্ধুরা মিলে আড্ডা দিতে গিয়েই এতোটা দেরি হয়ে গেল ওর। শ্রাবণ ওর রুমে এসে দেখল পুরো ঘর অন্ধকার হয়ে রয়েছে।দরজা ঠেলে ভেতরে প্রবেশ করল ও।আলো আধারিতে পূর্ণ হয়ে আছে পুরো রুম।সেই আলো -আধারের মাঝেই একজন নারীর অবয়ব দেখতে পেল ও। শ্রাবণ ধীর গতিতে সেই দিকেই এগিয়ে গেল।
সেই অচেনা নারী অবয়ব আর শ্রাবন পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছে।আজ আকাশে পূর্ণিমার গোল চাঁদ উঠেছে। সাথে বইছে মৃদু মন্দ বাতাস। বাতাসের সাথে ভেসে আসছে হাসনাহেনা ফুলের কড়া মিষ্টি গন্ধ।চাঁদের আলোয় অচেনা ব্যক্তিটিকে চিনতে বিন্দু মাত্র ভূল হয় নি শ্রাবণের। অচেনা নারীটি আর কেউ নয়।সন্ধ্যা শ্রাবণের গাড়ি গেট দিয়ে ঢোকার সময় দেখতে পেয়েই শ্রাবনের ঘরে চলে আসে।সন্ধ্যাকে এসময় নিজের ঘরে দেখতে পেয়ে বেশ অবাক হয় শ্রাবণ।
শ্রাবণের ঘরে তখন পিন পতন নিরবতা চলছে।নিরবতার রেশ কাটিয়ে শ্রাবণ নিজেই বলে উঠলো,
–” সন্ধ্যা তুমি আমার রুমে এসেছো কেন?”
–“কিছু প্রশ্নের উত্তর জানতে।”
–“কি প্রশ্ন?”
–“আপনি কি জানেন আপনার আর আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে?”
শ্রাবণ ভাবলেশহীন ভাবে উত্তর দিল,
–“হুম জানি।”
–“কবে জানতে পেরেছেন?”
–“খুব বেশি দিন হবে না ।কেন বলোতো?”
–“এমনিতেই।আচ্ছা আপনার কি এ বিয়েতে সম্মতি আছে?”
শ্রাবণ ভ্রু-কুচকে জিজ্ঞেস করল,
–“সম্মতি থাকবে না কেন?”
–“অনেকের যে নিজস্ব পছন্দ থাকে। আপনার কি এমন কেউ আছে?”
–“এমন কেউ থাকলে কি আর তোমাকে বিয়ে করতে রাজি হতাম নাকি? আমার কথা বাদ দাও। তোমার কাউকে পছন্দ করা আছে নাকি?”
–“না তেমন কেউ নেই।”
–“যাক তাহলে তো আর কোন সমস্যা নেই।”
–“আছে।আপনি আমার সম্পর্কে কতটুকু জানেন?”
–” নিজের বউ সম্পর্কে যতটুকু জানা দরকার ততটুকুই জানি।”
–“এখনো বিয়ে হয় নি আমাদের ?”
–“ভূল জানো তুমি।”
–“মানে?”
–“বাকিটা না হয় বিয়ের রাতেই জেনো।”
–“কেন?এখন বললে কি হবে?”
–“এখন আমার মুড নেই বলার।”
–“তো কিসে মুড আছে আপনার শুনি?”
শ্রাবণ দীর্ঘশ্বাস ফেলে মুচকি হেসে বলল,
–“একে তো চাঁদনী রাত।তার ওপর এমন রোমান্টিক ওয়েদার।এসময় কিসে মুড থাকে জানোই তো।”
শ্রাবণের এমন কথা শুনে সন্ধ্যা রেগে বলল,
–“ছি কি অসভ্য লোক আপনি ।”
–“আমাকে আর অসভ্য না বানাতে চাইলে নিজের ঘরে চলে যাও।আর হ্যা কাউকে যদি ভালো লেগে থাকে তো তা তোমার ঐ ছোট্ট মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে দাও। এমনিতেও তোমার মাথা গোবর দিয়ে পূর্ণ সেখানে দয়া করে কাউকে রেখো না।”
শ্রাবণের কথা শুনে সন্ধ্যা মনে মনে বলল,
–“এই বজ্জাতটা কোন দিনও ওকে অপমান করা ছাড়বে না।ব্যাটা ফাজিল লোক। একবার শুধু বিয়েটা হোক এ ব্যাটাকে বুঝিয়ে দিবে সন্ধ্যা কি জিনিস।”
সন্ধ্যাকে এভাবে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে শ্রাবন বলল,
–” তোমার ও কি আমার মতো রোমান্টিক মুড আসছে নাকি?এতে অবশ্য আমার কোন আপত্তি নেই।”
সন্ধ্যা এবার রেগে বলল,
–“আপনি সত্যিই একটা অসভ্য আর বিরক্তির লোক।”
–“সে যাই হই । আপাতত তুমি আর রোদ স্টাডি রুমে গিয়ে বসো।আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।”
–“কিন্তু রোদ তো ঘুমিয়ে পড়েছে।”
–“এত তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়েছে কেন?”
–“আমি কিভাবে জানবো?”
–“বুজতে পেরেছি।তাহলে তুমি একা স্টাডি রুমে গিয়ে বসো আমি আসছি।”
–“আজ না পড়লে হয় না।”
–“না হয় না। বিয়ে ঠিক হয়েছে বলে পড়াশোনা বাদ দিবা এইটা হবে না।”
সন্ধ্যা আর কোন কথা না বলে নিজের ঘরের দিকে চলে গেল।এই বজ্জাত লোকের সাথে কথা বাড়িয়ে লাভ নেই। সন্ধ্যার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে শ্রাবণ মুচকি হাসি দিল।
চলবে
(কেমন হয়েছে জানাবেন আর ভুলত্রুটি গুলো ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।যারা নিরব পাঠক আছেন তারা দয়া করে সাড়া দিবেন। আপনাদের সাড়া পেলে লেখার আগ্রহ বেড়ে যায়। ভালো থাকবেন সবাই।হ্যাপি রিডিং ???)