শ্রাবণের এক সন্ধ্যায় পর্ব ৫

0
250

#শ্রাবণের_এক_সন্ধ্যায়
#লেখনীতে_জেনিফা_চৌধুরী
#পর্ব_পাঁচ

–আমি তোমার ভালোবাসা নাকি প্রতিশোধ….

তাজওয়ারের শান্ত প্রশ্ন শুনে তারিন হাসলো। তা দেখেও তাজওয়ার শান্ত রইলো। একটা কাঠের চেয়ারের সাথে তারিনের হাত দুটো শক্ত করে ওড়না দিয়ে বাধা। আর তার ঠিক সামনে তাজওয়ার অন্য একটা চেয়ারে খুব আয়েস ভঙ্গী’তে পায়ের উপর পা তুলে বসে আছে। ওর হাতে রিভলবার । দরজার ওপাশ থেকে ওমরের চিৎকার ভেসে আসচ্ছে। কিন্তু সেদিকে তাজওয়ারের নজর নেই।

“ফ্লাসব্যাক”
পেছন ফিরে তাজওয়ার’কে দেখে তারিন হকচকিয়ে গেলো। ভড়কে যাওয়া চোখে ওর দিকে চেয়ে রইলো। ওমর ভয় পেয়ে সোজা তারিনের পেছনে লুকিয়ে পড়লো। তারিনের দুই কাঁধে হাত রেখে ফিসফিসিয়ে বললো…..

—আজ আমাদের কেউ বাঁচাতে পারবে না রে তারু। কেউ বাঁচাতে পারবে না। আমি দেখেছি তাজ সিনেমায় কিভাবে ফাইটিং করে। ও একটা ঘু’ষি মা’রলে আমি উড়ে গিয়ে কই পড়ব কেউ বলতে পারবে না? আমি এত তাড়াতাড়ি ম’রতে চাইনা রে তারু। আমার এখনো বিয়ে হয়’নি। আমার কিছু হয়ে গেলে আমার ফিউচার বউয়ের কি হবে? আমার ফিউচার বউ তো বিধবা হয়ে যা…..

আর বলতে পারলো না। তার আগেই তারিন কনুই দ্বারা ওমরের পেটে আঘাত করায় ওমর পেট চেপে চুপ হয়ে রইলো। ওমরের বকবকানিতে বিরক্ত হয়ে তারিন বলে উঠলো…….

–আর একটা শব্দ তোর মুখ থেকে বের হলে আমিই তোকে উড়িয়ে দিব।

ওরা কথা বলতে বলতে ততক্ষনে তাজওয়ার তারিনের মুখোমুখি এসে দাড়িয়ে পড়লো। তারিন ভেতরে ভেতরে ভড়কে গেলেও মুখে গম্ভীর্য ধরে রাখলো। তাজওয়ার ভ্রু যুগল কুচকে বলে উঠলো…..

–হেই মিস বিউটিফুল লেডিস ভুলে গেলে নাকি পৃথিবী’টা খুব ছোট গোলাকার। এখানে কাউকে খুঁজে বের করা একদিকে কঠিন হলেও অন্য দিকে খুব সহজ। আ’ম রাইট…….

তাজওয়ারের কথা শুনে তারিন সশব্দে হেসে উওর দিলো…..

–তুবা কোনোদিন যুদ্ধের ময়দান থেকে পালিয়ে যেতে শিখে’নি আন্ডারস্ট্যান্ড মিস্টার তাহমিদ তাজওয়ার…..

তাজওয়ার এইবার ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসলো। বৃদ্ধা আঙ্গুলী দ্বারা কপালে স্লাইড করতে করতে বললো…..

—উহু শুধু তুবা নয়। ফিউচার ডাঃ রুবাইতা তারিন তুবা ফুল নেইম’টা বলতে বোধহয় ভুলে গেলে তাইনা….

বলে এক টানে তারিনের মুখ থেকে মাস্ক’টা খুলে নিলো। হঠাৎ কান্ডে তারিন ভড়কে উঠলো। তারিন ডাগর ডাগর চোখ দিয়ে তাঁকিয়ে রইলো তাজওয়ারের দিকে। তাজওয়ার’কে যত’টা সরল ভেবেছিলো তাজওয়ার ততটাও সরল নয়। তাজওয়ার তারিনের মুখ’টা দেখে মুচকি হেসে বলে উঠলো…..

–তাহলে আমি ঢিল’টা ঠিক জায়গায় মে’রেছি কি বলো?

তাজওয়ারের কথা শুনে তারিন আমতা আমতা করতে লাগলো। এই প্রথম এমন একটা অস্বস্তিকর পরিবেশে পড়তে হলো তারিনের। এমন পরিস্থিতি থেকে বের হওয়ার রাস্তা খুঁজে পাচ্ছে না তারিন।তারিন’কে শান্ত থাকতে দেখে তাজওয়ার কিছু না বললো না। শব্দ করে হাসতে থাকলো। তাজওয়ার’কে এমন করে হাসতে দেখে তারিন আর ওমর দুজনেই অবাকের শেষ সীমানায়। তাজওয়ার’কে চোখের সামনে হাসতে দেখে তারিনের বিষাক্ত স্মৃতি গুলো মাথা নাড়া দিয়ে উঠছে। শরীরের সমস্ত অঙ্গ-প্রতঙ্গ জুড়ে প্রতিশোধের নেশা জেগে উঠছে। মনে চাচ্ছে এক্ষুনি তাজওয়ারের ওই ফর্সা মুখ’টা রক্তে লাল হয়ে দিতে। তারিন তাজওয়ারের দিকে অগ্নী ঝড়া দৃষ্টি’তে চেয়ে আছে। তাজওয়ার হাসি থামিয়ে সেকেন্ডের ব্যবধানে ঠা’স করে একটা থা’প্প’ড় বসিয়ে দিলো তারিনের গায়ে। হঠাৎ থা’প্প’ড়ে তারিন কয়েক মুহূর্তের জন্য থমকে গেলো। নিশ্চুপ হয়ে তাঁকালো তাজওয়ারের দিকে। ওমর যেনো আকাশ থেকে পড়লো তাজওয়ারের ব্যবহার দেখে। তারিনের দিকে একবার তাঁকিয়ে ওমর তাজওয়ারের দিকে রেগে এগিয়ে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতে’ই তারিন ও’কে থামিয়ে দিলো। তারিন একবার নিজের ব্যাথাতুর গালে হাত বুলালো। তারপর ঠোঁট চে’পে হাসলো। তারিন’কে এত শান্ত দেখে তাজওয়ার খানিক’টা ভ্যাবাচেকা খেলো। তারিন হাসোজ্জল মুখে তাজওয়ারের চোখের দিকে তাঁকিয়ে বলে উঠলো…….

—আই লাভ ইউ হিরো…..

তারিনের কথায় তাজওয়ার ভড়কালো না। কারন, তারিন যে একটা থা’প্প’ড়ে দমবার পাত্রী নয় তা ও ঠিক বুঝে গেছে এতক্ষনে। কিন্তু তাজওয়ারের দেওয়া থা’প্প’ড়’টা যে এত সহজে দ্বিগুন হয়ে তাজওয়ারের গালে’ই ফিরে আসবে তা তাজওয়ার স্বপ্নেও ভাবে’নি। তারিন পর পর তাজওয়ারের গালে দুই’টা থা’প্প’ড় মে*রে বলে উঠলো……

–তারিন কোনোদিন ঋন রাখেনা। সুদে আসলে ফিরিয়ে দেয়। মাইন্ড ইট…..

বলে রুমের দিকে পা বাড়াতে’ই তাজওয়ার ওর হাত’টা শক্ত করে চে’পে ধরলো। দুই হাত তারিনের পিঠে চে’পে ধরে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো। তারিন রাগে বার বার হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে। কিন্তু, মেয়েরা যতই শক্তিশালী হোক না কেনো? পুরুষের শক্তির কাছে অবশ্যই সে দূর্বল। তারিনের ক্ষেত্রেও তার ব্যাতিক্রম নয়। তারিনের সামনের চুল গুলো এসে কপালে লেপ্টে আছে। তাজওয়ার ফুঁ দিয়ে তারিনের চুল গুলো সরিয়ে দিলো। হুট করে তারিনের কপালে ঠোঁট ছোঁয়ালো। ঘটনার আকস্মিকতায় হতভম্ব হয়ে রইলো তারিন। ওমর চোখে হাত দিয়ে লজ্জা লজ্জা মুখ করে দাড়িয়ে আছে। তাজওয়ার এমন একটা কাজ করবে কখনো ভাবে’নি তারিন। ওর শরীরের সমস্ত শক্তি যেনো নিমিশেই লোপ পেলো। তাজওয়ার কোনো কথা না বলে তারিনের হাত ধরে টেনে নিয়ে ভেতরে নিয়ে আসলো। সিড়ি দিয়ে উপরে উঠে গেলো। সিড়ি সোজা রুম’টায় মধ্যে এনে দরজা লাগিয়ে দিলো। ওমর কিছু বুঝতে না পেরে পেছন পেছন এসে দেখে দরজা আটকানো। তারিন এখনো শান্ত হয়ে তাজওয়ারের দিকে তাঁকিয়ে আছে। তাজওয়ার দুইটা চেয়ার টেনে তারিন’কে বসার ইশারা করলো। তারিন কোনো শব্দ না করে বসে পড়লো। তাজওয়ার ও সামনের চেয়ার’টায় বসে সোজা প্রশ্ন করলো….

–ভালোবাসি বলো আবার সেদিন আমার কপালেই রিভলবার ঠেঁকিয়েছিলে? হোয়াই মেরিজান….

তাজওয়ারের কথা শুনে তারিন মুচকি হাসলো। শান্ত কন্ঠে উওর দিলো…..

–তুমি আমার রিভেঞ্জ ওয়ালা লাভ হিরো….

তারিনের কথা শুনে তাজওয়ার খানিক হাসলো। এই মেয়ে’টাকে ঠিক বুঝে উঠতে পারছেনা তাজওয়ার। কি আছে মেয়েটার মনে? কেনো এত লুকোচুরি? মেয়েটার চোখে তাজওয়ার স্পষ্ট রাগ দেখতে পাচ্ছে। কেনো এত রাগ আমার উপর? এইসব প্রশ্ন গুলো তাজওয়ারের মাথায় ঘুরঘুর করছিলো। তারিনের দিকে এক নজরে তাঁকিয়ে আছে। এর মধ্যে’ই আচমকা তাজওয়ারের দিকে রিভলবার তাঁক করলো তারিন। তাজওয়ার ভড়কে না গিয়ে তাঁকিয়ে রইলো তারিনের দিকে। দেখতে চাইছে তারিন আসলে কি চায়? যদি মা’রতেই চায় তাহলে বার বার কেনো ভালোবাসি বলে? তারিন মুখে হাসি টেনে ঘাড় কাঁত করে ছোট ছোট চোখ করে তাজওয়ারের দিকে তাঁকিয়ে বলে উঠলো…..

–তুমি আমার এক অপ্রিয় ইচ্ছা তাজ। যাকে নিজের করে পাওয়ার সামর্থ আছে কিন্তু সুযোগ নেই…….

তারিনের চোখে স্পষ্ট জলের রাশি দেখতে পাচ্ছে তাজওয়ার। তারিনের কথার মানে বুঝতে পারলো না ও। ঠিক কি বলবে প্রতিউওরে তাও খুঁজে পাচ্ছে না। তারিনের হঠাৎ কি হলো জানা নেই? রিভলবার দিয়েই ছুটে গিয়ে আঘাত করলো তাজওয়ারের মাথায়। তাজওয়ার ব্যাথায় বদ্ধ চিৎকার করে উঠলো। তা দেখেও তারিন শান্ত হলো না। আরেক বার আঘাত করার জন্য প্রস্তুত হতে’ই তাজওয়ার ধরে নিলো। তারিনের গায়ে থাকা ওড়না’টা দিয়েই ওর হাত দুটো বেঁধে দিলো।

বর্তমান
সেই থেকে তারিন ছোটার জন্য ছটফট করছে। ওর চোখ দিয়ে আগুনের ফুলকি বের হচ্ছে। রাগে মুখ’টা লাল হয়ে আছে। তাজওয়ার বুঝতে পারছে না হঠাৎ কি হলো ওর? মাথায় যন্ত্রনা করলেও ঠোঁট চেপে সহ্য করলো তাজওয়ার। আগের ক্ষত’টার পাশেই আঘাত করেছে তারিন। তাই ব্যাথার পরিমান’টাও বেশি হচ্ছে তাজওয়ারের। মাথা দুই হাত দিয়ে চেপে ধরে বসে রইলো কিছুক্ষন। তারিন ঘৃনাভরা চোখে তাঁকিয়ে আছে ওর দিকে তাও কিছু বলছে না। ব্যাথা কিছু’টা কমলে তাজওয়ার বলতে শুরু করলো….

–আমি সোজা সাপ্টা কথা বলতে পছন্দ করি মেরিজান। তাই সোজা সাপ্টাই বলছি…

তারিন প্রশ্নত্তুর চোখে তাঁকালো তাজওয়ারের দিকে। তাজওয়ার সেকেন্ড কয়েক চুপ থেকে হুট করে মধুর স্বরে বলে উঠলো…..

–ভালোবাসি মাই বিউটিফুল লেডিস….

তাজওয়ারের এমন সরল স্বীকারোক্তি দেখে তারিন হাসলো। ওর চেহারা’টা এই মুহূতে বদ্ধ উন্মাদ লাগছে। তাজওয়ার পূর্নরায় সোজা প্রশ্ন ছুড়ে দিলো….

–ভালোবাসো নাকি প্রতিশোধ নিতে চাও….

তারিন উওর দিতে সময় নিলো না। সোজা উওর দিলো…..

–যদি বলি দুইটাই…

তাজওয়ার কথা’টা শুনে হাতে থাকা রিভলবার’টা কপালে ঘষতে ঘষতে বলে উঠলো….

–ভালোবাসা আর প্রতিশোধ কোনোদিন একসাথে হয় না। যে ভালোবাসে সে প্রতিশোধ নিতে পারে না। আর যে প্রতিশোধ নেয় সে ভালোবাসতে পারে না।

তাজওয়ারের কথা শুনে তারিন হাসতে লাগলো পাগলের মতো। হাসতে হাসতে বলে উঠলো….

–সবাই যেটা করতে না পারে তারিন সেই অসাধ্য কাজ’টাই করে। তারিনের পাওয়ার সম্পর্কে তোমার কোনো ধারনা নেই হিরো…..

তারিনের কথা শুনে তাজওয়ার ও হাসলো। এগিয়ে আসলো তারিনের দিকে। এক হাতে তারিনের চুল গুলো কানের পাশে গুঁজে দিলো। থুতনি’ ধরে মুখ’টা উঁচু করে ধরলো। কিছুক্ষন চেয়ে রইলো দুইজন দুজনের দিকে। তারিনের দিকে তাঁকিয়ে তাজওয়ার শান্ত ভাবে বলতে লাগলো….

–ভালোবাসার সংঙ্গা আমার জানা নেই। ভালোবাসা কাকে বলে তাও আমার জানা নেই। কিন্তু বিশ্বাস করো সেদিন তোমার নেশাময় কন্ঠস্বর আমার হৃদয়ে বসন্ত আগমন ঘটেছে।#শ্রাবণের_এক_সন্ধ্যায় এসেছিলে তুমি আমার রাজ্যে শ্রাবনের রানী হয়ে।

#চলবে

[আসসালামু আলাইকুম। ভুল ত্রুটি ক্ষমা করুন। ইন শা আল্লাহ নিয়মিত হওয়ার চেষ্টা করব। আমি কোনো গল্প এত’টা অনিয়মিত হয়’নি। এইটার জন্য ক্ষমা করুন]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here