শ্রাবণের এক সন্ধ্যায় পর্ব ৪

0
230

#শ্রাবণের_এক_সন্ধ্যায়
#লেখনীতে_জেনিফা_চৌধুরী
#পর্ব_চার

তারিন বাসায় ঢুকে’ই সিংহের মতো হামলে পড়লো রায়হান দেওয়ানের উপর। দুই হাতে গলা চেপে ঠেসে ধরলো দেয়ালের সাথে। রাগে ও বেধরক কাঁপছে। রায়হান দেওয়ান ভয়ে চুপসে গেছে। সে তারিনের রাগ সম্পর্কে খুব ভালো করে জানে। তারিন রাগে চিৎকার করে বলতে লাগলো…..

—ওর গায়ে হাত তোলার সাহস আপনি পেলেন কোথায়?

রায়হান দেওয়ান ভয়ে কথা বলার সাহস পাচ্ছেনা। এত জোরে তারিন রায়হান দেওয়ানের গলা চে’পে ধরে আছে যে দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। তারিনের গলার স্বর পেয়ে শাহানাজ বেগম দৌড়ে রুম থেকে বেড়িয়ে এসে তারিনের রাগান্বিত রুপ দেখে থমকে গেলো। তারিনের চোখের চাহনী দেখেই বুঝতে পারছে যে আজ তারিন কত’ট রেগে আছে। রায়হান দেওয়ানের চোখ দুটো লাল হয়ে আছে। দৌড়ে গিয়ে তারিন’কে ছাড়ানোর চেষ্টা করতে করতে বললো…..

–তুবা ছাড়ো। ম’রে যাবে ও। ছাড়ো বলছি…..

শাহানাজ বেগম কোনোরকম টেনে হিছড়ে তারিন’কে ছাড়াতে’ই তারিন রাগে তাকে ধাক্কা মে’রে ফেলে দিয়ে চেঁচিয়ে বললো….

–আপনাকে আমি বলেছিলাম আমার কোনো ম্যাটারে ইন্টারফেয়ার করবেন না। তাও কোন সাহসে আপনারা আমার শিকারের দিকে হাত বাড়িয়েছেন…….

বলে সামনে থাকা টেবিল’টাকে লা’থি মে’রে ফেলে দিলো। রাগে ও থরথর করে কাঁপছে। অনেক’টা সাইকো রুপ ধারন করেছে। দেখতে খুব ভয়ংকর লাগছে। তারিন নিজেও নিজেকে কন্টোল করতে পারছেনা। শাহানাজ বেগম ভয়ার্ত চোখে তাঁকিয়ে আছে ওর দিকে। তারিন কে এত’টা রেগে যেতে দেখেনি উনি কোনোদিন। রায়হান ছাড়া পেয়ে কাশতে কাশতে সোফায় বসে পড়েছে। শাহানাজ বেগম উঠে তারিনের সামনে দাড়িয়ে শান্ত কন্ঠে বললো….

–তুবা তুমি তোমার প্রতিশোধ ভুলে গিয়ে ওই ছেলের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে গিয়েছো। তুমি ভুলে গিয়েছো যে ওই ছেলে তোমার…..

কথা’টা পুরো শেষ না হতেই তারিন চিৎকার করে বলে উঠলো…..

–স্টপ। আমি কি করব না করব তার কৈফিয়ত আপনাকে দিতে বাধ্য নই আমি। আর হেই ইউ…..

বলে পেছনে ঘুরে রায়হানের কলার শক্ত করে ধরে চোখ গরম করে বলে উঠলো…..

–আজকের জন্য তোকে আমি ছেড়ে দিলাম। কিন্তু, একটা কথা মনে রাখিস, তোর মৃত্যু আমার হাতেই লিখা আছে….

এইটুকু বলে রায়হান দেওয়ানের দিকে খানিক’টা ঝুঁকে ফিসফিসিয়ে বলে উঠলো…..

–আমি পাঁচ বছর আগের ভীতু, শান্ত শিষ্ট তারিন নই। মনে করিয়ে দিলাম তোর করা পাপের কথা। মনে রাখিস…..

বলে দরজার দিকে পা বাড়িয়ে শাহানাজ বেগমের দিকে ঘৃনাভরা চোখে একবার তাঁকিয়ে বলে উঠলো…..

–বাঘের শিকারে অন্য কেউ ভাগ বসাতে আসলে কিন্তু সে নিজেই বাঘের শিকার হয়ে যায়। কথা’টা মনে রাখবেন।

বলে হনহন করে চলে গেলো। শাহানাজ বেগম তারিনের যাওয়ার পানে ভয়ার্ত চোখে তাঁকিয়ে আছে। সে তার মেয়ে’কে খুব ভালো করে জানে? তার মেয়ে কিছুতে’ই রায়হান’কে বাঁচতে দিবেনা তা সে খুব ভালো করে বুঝতে পারছে। কিন্তু, কেনো এত রাগ? এত ঘৃনা রায়হান দেওয়ানের উপর। তা সে জানেনা। হাজার বার প্রশ্ন করেও উওর মেলে’নি। রায়হান দেওয়ান রাগে হাত মুষ্ঠিবদ্ধ করে বসে আছে। হাত গুলো কাঁপছে থরথর করে। নিজের উপরেই নিজের যত রাগ। পাঁচ বছর আগের করা ভুলের শাস্তি পাঁচ বছর পর এসে পেতে হচ্ছে। মনে মনে তারিন’কে বিশ্রি ভাষায় কয়েক’টা গা’লি দিয়ে নিজে নিজেই চাপা স্বরে মিনমিনিয়ে বলে উঠলো ……

–সেদিন এই জানো*য়ারের বাচ্চা’টাকে বাঁচিয়ে রাখা’ই আমার জীবনে সব থেকে বড় ভুল…..

বলে হনহন করে নিজের রুমে চলে গেলো। আর শাহানাজ বেগম নিরব দর্শক হয়ে দাড়িয়ে রইলো।
____________________________________________
তাজওয়ার এখন বেশ সুস্থ। গত সাতদিন বিছানায় সুয়ে বসে কাটিয়ে আজ গাড়ি নিয়ে বেড়িয়ে পড়েছে। তার বিউটিফুল লেডিস’কে খোঁজার উদ্দেশ্যে। এই সাতদিন ও হন্নে হয়ে খুঁজে বেড়িয়েছে ওই মেয়ে’টাকে কিন্তু মেয়েটার নাম অব্দি জানতে পারে’নি। জ্যামের মধ্যে বিরক্ত হয়ে বসে আছে তাজওয়ার। মুখে সার্জারীক্যাল মাস্ক। চোখে কালো সানগ্লাস। পড়নে ব্লু কালার শার্টের হাতা কনুই অব্দি ফোল্ড করা। অনেক ক্ষন যাবৎ জ্যামের মধ্যে বসে থেকে বিরক্তিতে তাজওয়ারে কপালে কয়েক’টা ভাঁজ পড়েছে। এখন নামতেও পারবেনা গাড়ি থেকে। কেউ যদি একবার চিনে ফেলে তাহলে আরেক’টা ভীড় জমবে তাজওয়ার’কে ঘিরে। যা ও এই মুহূর্তে চাইছেনা। এই মুহূর্তে সব থেকে বেশি জরুরী ওই মেয়ে’টাকে খুঁজে বের করা। হঠাৎ, ফোনের শব্দে তাজওয়ারের বিরক্তির ধাপ আরেকগুন বেড়ে যায়। ফোন’টা রিসিভ করে কানে ধরতে’ ওপাশ থেকে ডিরেক্টর সাহেব বলে জানালেন….

–তাহমিদ কাল থেকে শ্যুটিং শুরু হবে আবার। অনেক’টা গ্যাপ পরে গেছে মাঝে। তাই কাল থেকে শুরু না করলে সাতদিনের মধ্যে বাকি অংশ টুকু শেষ করা যাবেনা।

কথা’টা শুনে’ই তাজওয়ারের বেশ রাগ হলো নিজের প্রফেশনের উপর। আর না ও করতে পারবে না। কারন, মুভীর কাজ অর্ধেক হয়ে গেছে। তাই মুহূর্তে ওর না করা ও পসিবল না। তাই রাগ হলেও বেশ শান্ত ভাবেই তাজওয়ার জবাব দিলো…

–আমি টাইম’লি পৌঁছে যাব….

তাজওয়ারের জবাব পেয়ে ওপাশ থেকে ডিরেক্টর সাহেব বললো…..

–কাল কিন্তু বিয়ের শ্যুটিং আশা করি মনে আছে তোমার…..

তাজওয়ারের থেকে আশানুরূপ জবাব পেয়ে ডিরেক্টর ফোন কে’টে দিলো। তাজওয়ার ফোন’টাকে রেগে পেছনের সিটে ফেলে দিলো। গাড়ির স্ট্যায়ারিং এ হাত দ্বারা জোরে বাড়ি দিয়ে বলে উঠলো…..

–ড্যাম ইট। এখন আমি শ্যুটিং এ মনোযোগ দিব নাকি ও’কে খুঁজে বের করব।

বিরক্ত হয়ে বাইরে তাঁকিয়ে থমকে গেলো। কারন তাজওয়ারের গাড়ির জানালার পাশে একটা লেডি বাইকার বাইকের উপর বসে ফোনে কারোর সাথে ব্যস্ত ভঙ্গি’তে কথা বলছে। তাজওয়ার থমকে গেছে মেয়ে’টার প্রকাশ দেখে। সেদিনের মেয়ে’টার পড়নে সেই টপস, জিন্স আর মুখে সেই সাজার্রীক্যাল মাস্ক সাথে ব্লাক ক্যাপ আর ব্লাক সুজ। ব্লাক ক্যাপের উপরে সাদা আর লালের কম্বিনেশনে সুন্দর করে একটা নাম লেখা। কিন্তু, মেয়ে’টা অন্য দিকে ফিরে আছে বিধায় পুরো লেখা’টা দেখা যাচ্ছেনা। শুধু T লেখা’টা দেখা যাচ্ছে। তাজওয়ার উচ্ছুক চোখে তাঁকিয়ে প্রার্থনা করছে যেনো মেয়ে’টা এইদিকে একবার ফিরে। জ্যাম ছুটে যেতে’ই মেয়ে’টা বাইক স্ট্যাট করে পাশ ফিরতেই ওদের দুজনের চোখে চোখ পড়তেই মেয়ে’টা তাড়াতাড়ি বাইক চালিয়ে ভীড়ের মধ্যে ঢুকে যেতেই তাজওয়ার তাড়াতাড়ি গাড়ি থেকে নেমে পড়লো। ততক্ষনে মেয়ে’টা হাওয়ার বেগে কোথায় চলে গেলো তা তাজওয়ার বুঝতেই পারলো না। রাগে নিজের চুল নিজের এই ছিড়তে মন চাচ্ছে ওর। রাগে গাড়ির চাকায় লা’থি মে’রে গাড়ি’তে উঠে গেলো। গাড়ি স্ট্যাট দিতে দিতে বলে উঠলো…..

–শহর’টা খুব ছোট। অলিগলির যেকোনো প্রান্তে তুমি থাকো না কেনো? যেহেতু আমার এত কাছে তুমি আছো। সেহেতু খুব শিঘ্রই তুমি আমার রাজ্যের রানী হবে মাই বিউটিফুল লেডিস……

বলে মুচকি হেসে শিষ বাজাতে বাজাতে গাড়ি চালানো শুরু করলো। মনে মনে বলতে লাগলো….

–তোমার খোঁজ আমি পেয়ে গেছি মাই লেডি কুইন….

মেয়ে’টা ভীড়ের মাঝে হারিয়ে গেছে ঠিকি কিন্তু তার আগেই তাজওয়ার ওর বাইকের নাম্বার’টা দেখে নিয়েছে। এটা ভেবেই তাজওয়ার বাঁকা হাসলো।
____________________________________________
তারিন বাসায় এসে বাইক থেকে নেমে ক্যাপ’টাকে ছুড়ে বাইকের সামনে ফেলে ভেতরে ঢুকে গেলো। তারিন’কে ভেতরে ঢুকতে দেখে ওমর ওর দিকে এগিয়ে যেতে’ই তারিন সপা’টে একটা থা’প্প’ড় দিয়ে বসলো ওমরের গালে। আচমকা থাপ্পড় খেয়ে ওমর আহাম্মকের মতো তারিনের দিকে তাঁকিয়ে বলে উঠলো…..

–এটা কি হলো? মারলি কেনো?

তারিন দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকতে ঢুকতে বলে উঠলো…..

–আরেক’টা থাপ্পড় তোর প্রাপ্য। শালা হারামজাদা তোকে না বলেছিলাম হিরোর সব খবর আমাকে দিতে। আজ ও নিজে গাড়ি নিয়ে বেড়িয়েছে আমাকে জানাস নি কেনো?

এইবার ওমর তারিনের চুলে টান মেরে বলে উঠলো….

–তোর ফোন’টা একবার দেখ কতবার কল দিয়েছি। খালি ওয়েটিং বলছিলো তাহলে আমার দোষ কোথায়?

এইবার তারিন চিন্তিত স্বরে বলে উঠলো…..

–আজ ও আমাকে দেখে নিয়েছে। কোনো রকম পালিয়ে এ….

পুরো শেষ না করতে’ই পেছনে ভেসে আসলো……

–পৃথিবী’টা গোল পালিয়ে যাবে কোথায় বিউটিফুল লেডিস……..

#চলবে

[আসসালামু আলাইকুম। আমার বাসায় দুইটা অনুষ্ঠান ছিলো। তাই আমি সময় পাইনি বিশ্বাস করুন। আশা করি আমার সমস্যা’টা বুঝবেন। আজকে সব ঝামেলা শেষ আজ থেকে ইন শা আল্লাহ নিয়মিত হবো। অনিয়মিত হওয়ার জন্য ক্ষমাপ্রার্থী ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here