শ্যামাঙ্গণা-৯
———–
ভোরের স্নিগ্ধ সকাল। ফাহমান দ্রুত পায়ে সিড়ি দিয়ে উঠলো। ভোর এখন পাঁচটা। আজ ঠিক করলো একটু আগে আগেই যাবে। কিন্তু ছাদের কাছে আসতেই কারোর রিনরিনে কণ্ঠ কানে এলো। কেউ ছাদে দাড়িয়ে গান গাইছে। ফাহমান নিঃশব্দে ছাদে উঠলো। ছাদে ঢুকে দেখল ঝুমুর দাড়িয়ে ছাদের রেলিং ঘেঁষে। পাতলা চুলগুলো ছাড়া। পড়নে মেরুন রঙের থ্রী পিস। সে তার রিনরিনে কণ্ঠে গাইছে,
Jaane Woh Kaise Log The Jinke Pyaar Ko Pyaar Mila
Humne To Jab Kaliyan Mangin To Kaanton Ka Haar Mila
Khushion Ki Manzil Dhundi To Gham Ki Gard Mili
Chahat Ke Naghme Chahe To Sard Aanheen Mili
Dil Ke Bojh Ko Dhundlaa Kar Gya Jo Ghumkhawar Mila
Hum Ne To Jab Kaliyan Mangi Kaanton Ka Haar Mila
ঝুমুরের গানের গলা শুনে অবাক ফাহমান। এতদিন মেডিক্যাল কলেজের জন্য হোস্টেলে থাকলেও মাঝেসাঝে যখন ছুটিতে বাড়ি এসেছে তখনও দেখেছে ঝুমুর কেবলই বাগানে খালি পায়ে বই হাতে হাঁটছে। ঝুমুরের একটা অভ্যাস হলো ভোরে সে বাগানে খালি পায়ে হাটে। এটা তার পুরনো অভ্যাস।
ঝুমুরকে ভোরবেলা কখনও ছাদে দেখেনি ফাহমান। ঝুমুর বিকেলে ছাদে আসে এটা সে জানতো কিন্তু আজ কি মনে করে ভোরেই ছাদে এলো কে জানে। তাছাড়া ঝুমুরের রিনরিনে কণ্ঠে আগে কখনো গান শোনারও সৌভাগ্য হয়নি।
ফাহমানের ইচ্ছা করলো ঝুমুরের ওই মিষ্টি গলায় আরও গান শুনতে কিন্তু ও ঝুমুরকে এই কয়দিনে যতটা চিনেছে তাতে ঝুমুর একদম অন্তর্মুখী ধরনের মেয়ে। গান গাইতে বললে গাইবে তো নাই উল্টো অসস্তিতে পড়বে। তাই ফাহমান আর প্রেয়সীর অসস্তির কারণ হলো না। পিছিয়ে গিয়ে কয়েক সিড়ি নেমে হাতে থাকা চাবির রিং দিয়ে সিড়ির রেলিংয়ে টুং টাং করে আওয়াজ করলো যাতে ঝুমুর ভাবে সে সবেমাত্র ছাদে আসছে।
আওয়াজ করে ধীর পায়ে ছাদে উঠে দাড়িয়ে ঝুমুরের দিকে এগিয়ে যেতে যেতে অবাক হওয়ার ভাব ধরে বললো ‘ মিস অঙ্গণা ঝুমুর হঠাৎ এই গরীবের জীর্ণ শিবিরে যে ? ‘
ফাহমানের কথা শুনে ঝুমুর ঠোঁটের কোণে দুষ্টু হাসি ফুটিয়ে বললো ‘ কেন ছাদে বুঝি শুধু ডাক্তার সাহেবের আসার অধিকার আছে ? তার শ্যামাঙ্গণার কি অধিকার নেই ? ‘
ঝুমুরের কথা শুনে ফাহমান হাসলো। এগিয়ে গিয়ে ঝুমুরের থেকে খানিকটা দূরে দাঁড়িয়ে রেলিংয়ের গায়ে হেলান দিয়ে বললো ‘ আছে বৈকি। দিনশেষে বাড়িটা তো আপনারই। তবে আমি কিন্তু চমকে গেছি। হুট করে বাগানের রাজকুমারীকে তার রাজ্য ছেড়ে ছাদে দেখবো আশা করিনি ‘
‘ কখনও কখনও রাজকুমারের দেখা পেতে হলে রাজকুমারীকেও তার রাজ্য ছেড়ে আসতে হয় ডাক্তার সাহেব। ‘ ঝুমুর সামনের দিকে তাকিয়ে বললো।
ঝুমুরের কথায় ফাহমান আবারও হাসলো। অপূর্ব ডাটিয়াল সেই হাসি। ঝুমুর মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে রইলো সেই দিকে। মনে হলো এই সুন্দর হাসির কারণ একমাত্র সে ভাবলেও বুকটা প্রশান্তিতে ভরে যায়। ফাহমান ওকে তাকিয়ে থাকতে দেখে বলল ‘ কি দেখছো ? ‘
ঝুমুর এক কথায় বললো ‘ আপনাকে ‘
‘ আমাকে দেখার আলাদা কোনো কারণ ? রোজই তো দেখো ‘ ফাহমান সামনের দিকে তাকিয়ে কথাটা বললো।
‘ কিছু কিছু মানুষ আছে যাদের দিকে তাকিয়ে থাকার জন্য কোনো কারণের প্রয়োজন পড়ে না। মন চায় তাদের শুধু দেখেই যেতে। তাদের এক মনে দেখার সময়টা কারণ খুঁজে বের করে নষ্ট করার প্রয়োজন কি ? ‘ ঝুমুর ফাহমানের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলো।
ঝুমুরের প্রশ্ন শুনে ফাহমান জবাব দিলো না। মৌন রইলো সে।
কিছুক্ষণ নিরবতা পালন করে ঝুমুরকে আড়চোখে দেখলো ফাহমান। ঝুমুর ঠোঁটের কোণে হাসি মেখে প্রকৃতি উপভোগ করছে। ঝুমুরকে হাসতে দেখে ফাহমান বললো ‘ মনে হচ্ছে আপনার মন মেজাজ ফুরফুরে। এত ভালো মেজাজের কারণ কি ডাক্তার সাহেবা ? ‘
ফাহমানের কথা শুনে ঝুমুর চট জলদি ওর দিকে ফিরল। অবাক হয়ে বললো ‘ ডাক্তার সাহেবা ? ‘
‘ আপনি তো ডাক্তার সাহেবাই। আমি ডাক্তার সাহেব হলে আপনি তো এই ডাক্তার সাহেবের মনের ডাক্তার। কাজেই আপনিও ডাক্তার সাহেবা। ‘
ফাহমানের যুক্তি শুনে হাসলো ঝুমুর। ফুরফুরে মেজাজে ভোরের ঠান্ডা বাতাসে চুল উড়িয়ে বললো ‘ আজ শাওমি আসছে। অনেকদিন পর দেখা হবে ওর সাথে। প্রায় দুই বছর পর। ‘
‘ শাওমি ? ‘ জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে জিজ্ঞেস করলো ফাহমান।
ঝুমুর ওর কথা শুনে কপালে হাত রেখে বললো ‘ ওই দেখুন আপনাকে তো বলিই নি শাওমি কে। আসলে শাওমি হলো আমার দাদাভাইয়ের ছোট ভাইয়ের ছেলের ঘরের নাতনী। ও আমারই সমবয়সী। আমরা আট বছর পর্যন্ত একসঙ্গে ছিলাম তারপর তো এখানেই চলে এলাম। ‘
ঝুমুরের কথা শুনে ফাহমান বললো ‘ ওহ… তুমি তাহলে আট বছর বয়স পর্যন্ত কোরিয়া ছিলে তাইতো ?আমি দেখেছি আঙ্কেল পুরো দস্তুর কোরিয়ান দেখতে কিন্তু তোমার মধ্যে অনেকটাই বাঙালিয়ানা ভাব আছে। অথচ তোমার ছোট বোনকে দেখলে পুরোই কোরিয়ান মনে হয়। ‘
‘ আমি মায়ের চেহারা পেয়েছি। মা আমার মতই অনেকটা দেখতেছিলো তবে সে ছিল ফর্সা। নিঝুম আবার বাবার চেহারা আর মায়ের গায়ের রং পেয়েছে। ফেয়ার এন্ড এভারগ্রীন। ‘ ঝুমুর প্রতি উত্তরে বললো।
কথা বলতে বলতে ছয়টা বেজে গেলে ঝুমুর ফাহমানের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে ছাদ থেকে নেমে পড়লো। আজ সাপ্তাহিক ছুটির দিন তাই এই দিনে মনোয়ারা বেগম ঝুমুরকে সঙ্গে করে ভোরবেলা হাঁটতে বের হন। বাসার দরজা খুলে ঝুমুর ঢুকে দেখল মনোয়ারা বেগম খাবার ঘরে চেয়ারে বসে পানি খাচ্ছেন। তার মুখটা ফোলা। হয়তো সবে ঘুম থেকে উঠেছেন বলেই।
মনোয়ারা বেগমকে দেখে ঝুমুর তৈরি হতে গেলো। রেডি হয়ে সে বসার ঘরে বসে অপেক্ষা করতে লাগলো। কিছুক্ষণ পর মনোয়ারা বেগমও বোরখা পড়ে এলেন। তারপর দুই নানি নাতনী বেরিয়ে পড়লো ভোরের স্নিগ্ধ সকাল উপভোগ করতে। মনোয়ারা বেগম এবং ঝুমুর মসজিদের পিছন দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে অনেকটাই এগিয়ে গেলেন। কিছুটা এগিয়ে যাওয়ার পর ঝুমুর দেখলো নতুন একটা নার্সারি খোলা হয়েছে এইদিকটায়।
নতুন নার্সারি দেখে মনোয়ারা বেগম ঝুমুরকে নিয়ে নার্সারিতে ঢুকলেন। ঝুমুর ঘুরে ফিরে পুরো নার্সারি দেখছে। তার চোখের সামনে সাজানো অনেক ধরনের নয়নাভিরাম ফুলের চারাগাছ। জবা, শিউলি, কৃষ্ণচূড়া, কাঠগোলাপ, বেলিসহ আরও অনেকগুলো ফুলের গাছ। হঠাৎ একটা চারায় ঝুমুরের চোখ পড়ে গেলো। সেই চারার ফুলগুলো কতকটা হলুদ রংয়ের। হলুদ রং ঝুমুরের পছন্দ নয় তবুও ফুলটার গায়ে এই রং যেন অন্যরকম সুন্দর।
ঝুমুর নার্সারির লোককে জিজ্ঞেস করে জানতে পারলো ওই ফুলের চারা হলো অলকানন্দা ফুলের। ঝুমুর ঠিক করলো এই ফুল সে কিনবে। মনোয়ারা বেগমের সঙ্গে কথা বলে সে ঠিক করলো তাফিমকে পাঠিয়ে গাছের চারা নেওয়ার ব্যবস্থা করবে।
ধানের আইলের উপর দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে ঝুমুর আর মনোয়ারা বেগম। বাড়ি ফিরতে সময় এই পথ দিয়েই যেতে হয়। ধানের আইল পার করে উনারা বড় রাস্তায় উঠে এলেন। মনোয়ারা বেগমের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলতে বলতে হাটছে ঝুমুর। হঠাৎ মনোয়ারা বেগমের চোখে মুখে হাসি খেলে গেলো। উনি বললেন ‘ আরে ফাহমান যে ‘
মনোয়ারা বেগমের কথায় ঝুমুর চমকে উঠে সামনে তাকালো। এতক্ষণ কথা বলতে ব্যস্ত থাকায় খেয়াল করেনি ফাহমান কখন তার সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। ফাহমান ওকে দেখে বললো ‘ আসসালামু আলাইকুম আন্টি, ঝুমুর। ‘
ফাহমানকে দেখে মুখ নামিয়ে নিলো ঝুমুর। মুখ নামিয়েই সে বললো ‘ ওয়ালাইকুম আসসালাম ‘।
মনোয়ারা বেগম ফাহমানকে বললেন ‘ ওয়ালাইকুম আসসালাম। তুমিও কি ছুটি পেয়ে হাঁটতে বেরিয়েছিলে ? ‘
মনোয়ারা বেগমের কথা শুনে ফাহমান মাথা নেড়ে সায় দেওয়ার ভঙ্গিতে বলল ‘ ধরে নিন তাই। আসলে মনে হলো ভোর সকালে ঘর ছেড়ে বের নাহলে পুষ্পকে দেখা হবে না। ‘ শেষের কথাগুলো ঝুমুরের দিকে আড়চোখে তাকিয়ে বলল ফাহমান।
ফাহমানের কথা শুনে ঝুমুর তার নত মস্তক আরও নত করলো। তবে ওর মাথা নামিয়ে নেওয়ার ব্যাপারটা মনোয়ারা বেগম লক্ষ্য করলেন না। উনি বললেন ‘ ফুলের কথা বলছো ?আমাদের ঝুমুর তো ফুলের পাগল। ওর বাগান দেখেছো নাকি ? ও শখ করে বাগান করেছে। বাগানে অনেক ধরনের ফুলের গাছ আর ফলের গাছ লাগিয়েছে। তুমি চাইলে দেখতে পারো। ‘
মনোয়ারা বেগমের কথায় ফাহমান মাথা নেড়ে সায় দিল। হাঁটতে হাঁটতে ওরা তখন ঝুমুরদের বাড়ির কাছে চলে এসেছে। ফাহমানের সায় পেয়ে মনোয়ারা বেগম আর বিল্ডিংয়ে ঢুকলেন না। ফাহমানকে দেখানোর জন্য সোজা ঝুমুরের বাগানের দিকে গেলেন। বাগানের চারপাশে সুন্দর করে টিন দিয়ে বেড়া দেওয়া সঙ্গে দরজা লাগানো যাতে কোনো মানুষ কিংবা কুকুর বিড়াল ঢুকতে না পারে।
বাগানে ঢুকতেই ফাহমানের শরীর দিয়ে যেন শীতল হাওয়া বয়ে গেলো। বাগানের দিকটা ফুলে ফুলে সুরভিত। বাগানে জুড়ে লেবু ফলের গন্ধ। বাগানের একদিকে শিউলি গাছ আছে যার সমস্ত সত্তা জুড়ে ঝলমলে রোদ্দুর। হয়তো বসন্তকাল বলেই গাছে এখনও কুড়ি জন্মায়নি। শিউলি তো শরতের ফুল।
বাগানের আরেক দিকে মাঝারি আকারের আম গাছ এবং তার কোনাকুনি আরেক দিকে ঝুমুরদের বাড়ির সমান উচ্চতার কাঠাল গাছ। কাঠাল গাছের পাশেই একটু দূরে লেবু গাছ। ফাহমান এবার বুঝল কেন সমস্ত বাড়ি জুড়ে লেবু ফলের গন্ধ আর কেনই বা ঝুমুরের কাছে গেলে সে লেবুর গন্ধ পায়। বাগানের রাজকুমারী তবে তার বাগানের লেবুর ঘ্রাণ রোজ গায়ে মাখে।
বাগানের আরেক কোণায় কৃষ্ণচূড়া গাছ তার মাথা সসম্মানে আকাশের দিকে তুলে দাড়িয়ে আছে। ফুলে ফুলে ভরে গেছে তার ডাল। সেই ডাল থেকেই অনেক ফুল ঝড়ে পড়েছে মাটিতে। ঝুমুর এগিয়ে গেলো সেই দিকে। সে কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচ থেকে ফুল তুলছে।
ঝুমুরের খোলা চুলে সকালের রোদ্দুর আছড়ে পড়ছে। ঝুমুরের চুলে আছড়ে পড়ে রোদ যেন তার সোনালী আভা ধারণ করেছে, কেমন ঝলমলে লাগছে। মোহময়ী ঝুমুরের দিক থেকে চোখ সরিয়ে ফাহমান অন্যদিকে চোখ রাখলো।
কৃষ্ণচূড়া গাছের পাশে সামান্য দূরত্ব বজায় রেখেই আরেকটা গাছ সসম্মানে দাড়িয়ে আছে। কিন্তু এই গাছের নাম জানেনা ফাহমান। আগে দেখেছে দেখেছে মনে হচ্ছে কিন্তু কোন গাছ সেটা মনে পড়ছে না। ও গাছটার দিকে আঙুল তাক করে জিজ্ঞেস করলো ‘ এটা কোন গাছ ? ‘
ফাহমানের প্রশ্ন শুনে ঝুমুর আর মনোয়ারা বেগম দুজনেই গাছটার দিকে নজর দিলেন। ঝুমুর ফুল তুলতে তুলতেই বললো ‘ কদম গাছ। বর্ষায় ফোটে বলে এখনও কুড়ি জন্মায়নি। দুই তিন মাস পড়েই কুড়ি উঠবে। ‘
কৃষ্ণচূড়া ফুলগুলো মনোয়ারা বেগমের হাতে ধরিয়ে দিয়ে ঝুমুর গেলো বেলী ফুল গাছের কাছে। গাছটা ঝুমুর থেকে একটু লম্বা। তবে পা উঠিয়ে ঝুমুর হাতের নাগালে পায়। ঝুমুর উচুঁ হয়ে বেলী ফুলের সদ্য জন্মানো কুড়িগুলো তুললো। এগুলো দিয়ে সে আজ মালা গাঁথবে তারপর সেই মালা হৈমন্তীকে দিবে। প্রিয় সখির জন্য নিজের বাগান থেকে ফুল নিয়ে মালা তো গাঁথাই যায়।
‘ আচ্ছা বাগানে এত ফুল আছে অথচ গোলাপ ফুল নেই কেন ? ‘
ফাহমানের কথার জবাবে ঝুমুর উত্তর দিলো না তবে মনোয়ারা বেগম বললেন ‘ উচিত প্রশ্ন করেছো তবে উত্তর আমার জানা নেই। কথাটা আগে এভাবে ভেবে দেখিনি। ‘
ঝুমুর আপনমনে ফুল তুলছে। জগতের আর কোনদিকে তার নজর নেই। অথচ ফাহমান এক দৃষ্টে তাকেই দেখে যাচ্ছে। মনোয়ারা বেগম ঘুরে ফিরে বাগান পর্যবেক্ষণ করছেন। আজ অনেকদিন পর বাগানে এসেছেন। সময়ের স্বল্পতা এবং ব্যস্ততায় আসা হয়না। এছাড়াও বাগানের চাবি ঝুমুরের কাছে থাকে যেটা ঝুমুর কাউকে দেয় না। সে ব্যতীত এই বাগানে আসা সম্ভব না। আসতে হলে তাকে সঙ্গে করেই আসতে হবে।
ফুল তুলে বাগানের দরজা লাগিয়ে ঝুমুর,মনোয়ারা বেগম আর ফাহমান বিল্ডিংয়ে ঢুকলো। ফাহমান আগে আগে তিন তলায় উঠে গেলো। ঝুমুর এবং মনোয়ারা বেগম ঢুকলেন দোতলায়। বাসায় ঢুকেই আঞ্জুম আরার গলা পেলো তারা। ঝুমুর এগিয়ে গেলো কাহিনী কি দেখার জন্য। আঞ্জুম আরার কথা আর তাফিমের চেঁচামেচি শুনে যা বুঝলো খায়রুল স্যার এসেছিলেন নিঝুম আর তাফিমকে পড়াতে। নিঝুম কয়েকবার দরজায় নক করেছে কিন্তু কেউ শুনেনি বলে সে নিজেই তিন তলায় খায়রুল স্যারের কাছে পড়ে ফেলেছে এবং খায়রুল স্যার তাফিমকে না পড়িয়ে চলেও গেছে।
‘ ছোট আপি তো হোয়াটস অ্যাপে আম্মুকে ফোনও দিতে পারতো। ‘
তাফিম চেঁচিয়ে কথাটা বলতে বলতে পিছন ফিরে ঝুমুরকে দেখে চুপ করে গেলো। ঘটনা বুঝতে পেরে ঝুমুর শান্ত চোখে তাকিয়ে রইলো। ওর শান্ত দৃষ্টি দেখে আঞ্জুম আরাও কিছু বললেন না। বস্তুত উনি ঝুমুরকে নিজের মেয়ের মতো ভালোবাসলেও ঝুমুরের ঠান্ডা, শীতল চাহনী দেখলে আর কিছু বলতে পারেন না।
‘ নিঝুম যে দরজায় নক করে তোমাকে ডাকার চেষ্টা করেছে এটাই বেশি। ও উপস্থিত বুদ্ধি সহজে কাজে লাগাতে পারে না এটা সবার জানা। পড়া যেহেতু তোমার তাই তোমার সচেতন থাকা উচিত ছিল। নেক্সট টাইম ভেবেচিন্তে কথা বলবে। ‘
কথাগুলো বলে ঝুমুর ঘরে ঢুকে ঘরের দরজা লাগিয়ে দিল। খায়রুল স্যার তাকেসহ নিঝুম এবং তাফিমকেও পড়ান। তাফিম এবার ক্লাস সেভেনে এবং নিঝুম এইটে। ঝুমুরের ব্যস্ততা অনুযায়ী ওকে পড়ালেও নিঝুম এবং তাফিমকে তিনি একদিন পরপর পড়ান।
চলবে….
মিফতা তিমু