শ্যামাঙ্গণা-২৪

0
448

শ্যামাঙ্গণা-২৪
————-

ঘণ্টা কয়েক যাবত বিভিন্ন ধরনের শাড়ির দোকানে ঘুরে ঘুরেই সময় কাটছে খায়রুল ইসলামের। জীবনে এই প্রথম কারোর জন্য শাড়ি কিনছেন। যার কারণে কোনো শাড়িই মন মতো হচ্ছে না। বেশ কয়েকটা শাড়ি দেখে অবশেষে একটা শাড়িতে মন স্থির করলেন। ক্রিম কালারের শাড়িটাই নিবেন। আজ শাড়ি এক বিশেষ কারোর জন্য নিচ্ছেন। বিশেষ কেউ হচ্ছে ঝুমুর।

খায়রুল ইসলাম হলেন আটত্রিশ বছর বয়সী এক পূর্ণ যুবক যার বর্তমান পেশা হলো স্টুডেন্ট পড়ানো। খায়রুল ইসলাম চাকরি সূত্রে বেকার হলেও বিগত আট বছর যাবত এক টানা স্টুডেন্ট পড়ানোর কারণে টিউশন টিচার হিসেবে এলাকা জুড়ে উনার এক ধরনের খ্যাতিই আছে বলা যায়। ঝুমুর নিজেই তো উনার ছয় বছর পুরোনো ছাত্রী।

পড়াশোনার দিক থেকে খায়রুল ইসলাম অনেক তুখোড় ছাত্র। স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইলেকট্রিকাল ইন্জিনিয়ারিং পাশ করার পর তিন বছর ধরেই সরকারি চাকরির সন্ধানে আছেন। সরকারি চাকরির যতগুলো পরীক্ষা দিয়েছেন তার বেশিরভাগই উনার হয়ে আছে কিন্তু ঘুষ দিয়ে জয়েন করতে হবে বলে উনি আর এগিয়ে যাননি। বর্তমানে উনি বিসিএসের মৌখিক পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। পূর্বের দুটি পরীক্ষায় উনি অসামান্য কৃতিত্বের সঙ্গে পাস করে গেছেন।

খায়রুল ইসলাম যখন শাড়ি কিনে মার্কেট থেকে বেরিয়ে ঝুমুরদের বাড়ির উদ্দেশ্যে রিকশায় চেপে বসলেন তখনই ক্রিং ক্রিং শব্দে ফোন বেজে উঠলো। খায়রুল ইসলাম জিন্সের পকেট থেকে ফোন বের করে দেখলেন অপরিচিত এক নাম্বার থেকে ফোন এসেছেন। ধরবেন কি ধরবেন না এই দ্বন্দ্বে ভুগতে ভুগতে ফোন একবার কেটে গিয়ে আবারও বেজে উঠলো।

খায়রুল ইসলাম ঠিক করলেন ফোনটা ধরবেন। উনি ফোন রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে ব্যস্ত কণ্ঠে কেউ বলে উঠলো ‘ আসসালামু আলাইকুম স্যার। ‘
কণ্ঠের মালিককে চিনতে পারলেন না খায়রুল ইসলাম। দ্বিধান্বিত গলায় বললেন ‘ জী,ওয়ালাইকুম আসসালাম। কে বলছেন ? ‘

ফোনের ওপাশ থেকে ফাহমান বললো ‘ জি আমি ফাহমান,ঝুমুরের স্বামী। ‘
‘ ঝুমুরের স্বামী ‘ কথাটা শুনে খানিকটা ধাক্কাই খেলেন খায়রুল ইসলাম। হ্যাঁ এটা ঠিক যে ঝুমুরের নানু মনোয়ারা বেগম অনেকদিন ধরেই পাত্রপক্ষের সন্ধান করছিলেন আর সেই কারণেই খায়রুল ইসলাম ভেবেছিলেন ঝুমুরের শ্যামলা গায়ের রঙের জন্য যখন কেউই রাজি হচ্ছে না তখন উনার হাতে সময় আছে। একবার চাকরি হয়ে গেলেই মনোয়ারা বেগমের কাছে ঝুমুরকে ঘরে তোলার প্রস্তাব দিবেন।

কিন্তু খায়রুল ইসলামের স্বপ্ন অধরাই রয়ে গেলো। ব্যাপারটা কি অদ্ভুত তাইনা ? মেয়ে মানুষের বৈবাহিক অবস্থা বদলাতে সময় লাগে না। যেই ঝুমুরকে কাল সকালেও পরীক্ষার পূর্বে পড়িয়ে এসেছেন সেই ঝুমুরই আজ নাকি বিবাহিত শুনলেন। খায়রুল ইসলাম মলিন হাসলেন। বললেন ‘ ওহ, আপনি ঝুমুরের স্বামী। কিছু বলতে চাচ্ছেন মনে হয়। ‘

ফাহমান বললো ‘ জী আসলে ঝুমুর কিছুদিন পড়তে পারবে না। সে খানিকটা অসুস্থ। সুস্থ হতেই আবারও পড়া শুরু করবে আপনার কাছে। ‘
ঝুমুরের অসুস্থতার কথা শুনে খায়রুল ইসলাম না চাইতেও জিজ্ঞেস করেই ফেললেন ‘ কেন অসুস্থ ও ? কি হয়েছে ? ‘
‘ জী আসলে ঝুমুরের এলার্জি হয়েছে। অবস্থা মাঝামাঝি, খারাপও না ভালোও না। তাই কিছুদিন আপাতত পড়াশোনা বন্ধ করে বিশ্রাম নিবে। ‘

ফাহমানের সঙ্গে কথাবার্তা শেষ করে রিকশা ওয়ালাকে খায়রুল ইসলাম বললেন ‘ মামা আজ সারাদিন যেই যেই জায়গায় ইচ্ছা রিকশা ঘোরান। সারাদিনের টাকা আমি দিবো আপনাকে। ‘
রিকশা ওয়ালা খায়রুল ইসলামের কথা শুনে অবাক হয়ে বললেন ‘ কি বলেন মামা ? সারাদিন তো মেলা টাকা খসবো আপনার। ‘

‘ খসলে খসবে। টাকা জমিয়ে কি লাভ। যার জন্য জমিয়েছিলাম সেই আমার হলো না। এখন টাকাগুলো জমিয়ে রাখলে দুঃখ কমবে না বরং দীর্ঘশ্বাস বাড়বে। ‘ খায়রুল ইসলাম মলিন হেসে বললেন।

—-

ঝুমুর বিছানায় শুয়ে বায়োলজি সেকেন্ড পেপার ঘাটছিল। ফাহমানও স্টাডি টেবিলে বসে তার কোনো এক ইম্পর্ট্যান্ট কেস হিস্ট্রি পড়ছে। একটু আগেই সে ঝুমুরকে ইম্পর্ট্যান্ট কিছু লাইন মার্ক করে দিয়েছে বইয়ে। ঝুমুর এখন সেগুলোই পড়ছে। দুজনেই যখন নিজেদের পড়ায় ব্যস্ত তখন বাসার কলিং বেল বেজে উঠলো। মিস মারিয়াম রান্নাঘরেই ছিলেন তাই এগিয়ে গিয়ে দরজা খুলে দিলেন।

দরজার বাহিরে মোতালেব সাহেব দাড়িয়েছিলেন। মিস মারিয়ামকে দরজা খুলতে দেখে সালাম দিয়ে বললেন ‘ আসসালামু আলাইকুম আপা। ‘
মোতালেব সাহেবকে দেখে মিস মারিয়ামও ভদ্রতা সূচক হাসি দিয়ে বললেন ‘ ওয়ালাইকুম আসসালাম ভাইজান। বাহিরে কেন ? ভিতরে আসুন না। ‘

ঝুমুরের চোখ বইয়ের দিকে থাকলেও কলিং বেল বাজা মাত্র তার মনযোগ চলে গেছে বাহিরের ঘরের দিকে। মোতালেব সাহেবের গলা পাওয়া মাত্র সে উঠে দাড়িয়ে গায়ে ঠিক মতো ওড়না জড়িয়ে ঊর্ধ্বশ্বাসে দৌড় দিল বাহিরের ঘরের দিকে। ঝুমুরকে দৌড়ে বেরিয়ে যেতে দেখে ওকে ডাকতে ডাকতে ফাহমানও ওর পিছন পিছন বেরিয়ে এলো।

বসার ঘরে ঢোকা মাত্র ঝুমুর আর ফাহমান দেখলো মোতালেব সাহেব সোফায় বসে আছেন। মিস মারিয়াম রান্নাঘরে গেছেন চা নাস্তার ব্যবস্থা করতে। এই প্রথম বেয়াই বাড়িতে এসেছেন। খালি মুখে তো আর যেতে দেওয়া যায় না। ঝুমুর ওর বাবাকে দেখা মাত্র সঙ্গে সঙ্গে বাবার পাশে গিয়ে বসলো। হাস্যোজ্জ্বল গলায় জিজ্ঞেস করলো ‘ কখন এলে বাবা ? ‘

শশুরকে দেখে ফাহমান সালাম দিয়ে মুখোমুখি সোফাতেই বসলো। ঝুমুর তার বাবার সঙ্গে কিছু কুশলাদি বিনিময় করে রান্নাঘরে তার শাশুড়ি মা মিস মারিয়ামের কাছে চলে গেলো। খানিক সাহায্য করলে সুবিধা হবে। মোতালেব সাহেব ফাহমানকে জিজ্ঞেস করলেন ‘ ঝুমুরের শরীরের কি অবস্থা এখন ? কোনো ইমপ্রুভমেন্ট ? ‘

‘ আসলে বাবা সবে ওষুধ খেয়েছে তো তাই বোঝা যাচ্ছে না। ওষুধ কাজ করছে কিনা বোঝার জন্য কাল সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। কাল সকাল হলেই বোঝা যাবে কি অবস্থা। ‘ ফাহমান না বোধক মাথা নেড়ে বললো।

মোতালেব সাহেব ফাহমানের কথায় হ্যাঁ বোধক মাথা নেড়ে বললেন ‘ কথা ঠিক। ওষুধ হলেও কাজ করতে সময় তো লাগবে। ‘
‘ বাবা একটা কথা বলার ছিল। আপনি যদি কিছু মনে না করেন তাহলে বলতে পারি। ‘ ফাহমান একটু ভয়ে ভয়ে বললো।

‘ নির্দ্বিধায় নিঃসংকোচে বলো। এত হেসিটেট ফিল করার কিছু নেই। ‘

‘ আপনি কি আমাদের বিয়েতে রাজি ছিলেন ? না মানে আমি দেখেছি আমাদের বিয়ের কোনো কথাবার্তায় আপনার কোনো ভূমিকা ছিল না। একবারে বিয়ের দিন আপনি হাজির হয়েছিলেন। তাছাড়া ঝুমুরের বিয়েতে আপনাকে হাসিখুশি মনে হয়নি। ‘

ফাহমানের কথায় মোতালেব সাহেব এতক্ষনে খানিকটা হাসলেন। বললেন ‘ সত্যি বলবো না মিথ্যা ? ‘
মোতালেব সাহেবের কথায় ফাহমান বোকার মতো হাসলো। মাথা চুলকে বলল ‘ সত্যিটাই বলুন। ‘

‘ সত্যি বলতে তোমাদের বিয়েতে আমার আপত্তি ছিল। সব বাবাই চায় তার মেয়ে একটা ওয়েল ইস্টাবলিশড, নামী দামী ফ্যামিলিতে বিয়ে করুক। সেই ক্ষেত্রে তোমাদের পূর্বে বিষয় সম্পত্তি থাকলেও এখন আর নেই। এই জন্যই আমার আপত্তি ছিল। কিন্তু আমি নিজের খুশির কথা ভাবিনি, নিজের মেয়ের খুশি চেয়েছি। ঝুমুরকে হয়তো আমি অর্থ বিত্ত,সহায় সম্পত্তি সব দিয়েছি কিন্তু ভালোবাসা দিতে পারিনি। ও অল্প বয়সে মা হারিয়েছে। তারপর এক প্রকার বাধ্য হয়েই নিজের মামীর অত্যাচার সহ্য করে নানার বাড়িতেও পড়েছিল।

তুমি মনে করেছ তোমাদের সম্পর্কের কথা আমি জানিনা। কিন্তু তোমার ধারণা ভুল। তোমাদের সম্পর্কের ব্যাপারটা সবার আগে আমিই টের পেয়েছি। প্রথম দিনই তোমাদের একসঙ্গে রাস্তায় দেখেছিলাম। কিন্তু কিছু বলিনি কেন জানো ? আমি জানি আমার মেয়ে কখনও আমার সম্মান নষ্ট হবে এমন কিছু করবে না। যেই মানুষটা তার যোগ্য না তাকেও বেছে নিবে না। এই কারণেই আমি কখনো তোমাদের সম্পর্কে প্রশ্ন তুলিনি। আমার মেয়ে তোমার সঙ্গে সুখে আছে তাই আমি সব মেনে নিয়েছি।

সবকিছুর পরও তোমার কিছু না থাকার জন্য আমার বিয়েতে আপত্তি ছিল। কিন্তু তানিয়া আমাকে বুঝেছে এবং বুঝিয়েছে যে সংসার করতে হলে আগে ভালোবাসা থাকাটা জরুরি। ভালোবাসা থাকলে অর্থ বিত্ত তৈরি হতে সময় লাগবে না। ভালোবাসা থাকলে বিপদে আপদে একে অপরের পাশে থেকে, অপরজনকে সাহস যুগিয়ে ঠিকই অর্থ বিত্তের দিকে এগিয়ে যাওয়া যায়। এর জন্যই আগে আমার আপত্তি থাকলেও এখন নেই। ‘

ফাহমান যেন এতক্ষণে হাসলো। কোনো বাবা নিজের মেয়ের জন্য নিজের মতামতকে এত তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করতে পারে তার জানা ছিল না। অথচ সে কোনোদিনই ঝুমুর ও মোতালেব সাহেবকে এক সঙ্গে বসে দু দন্ড কথাও বলতে দেখেনি। আসলে ভালোবাসতে হলে সবসময় তা জাহির করার প্রয়োজন পড়ে না। কিছু কিছু সময় ভালোবাসা বুঝে নিতে হয়।

ঝুমুর ও মিস মারিয়াম সঙ্গে করে চা, নুডুলস নিয়ে এসেছেন। কথাবার্তার মাঝেই মোতালেব সাহেব চা খেয়ে একটু আধটু নুডুলস খেলেন এবং বাকিটা রেখে দিলেন। উনি জানেন উনার রাখা এই নুডুলস ঝুমুর খাবে। ঝুমুর কোনওদিন আর পাঁচটা মেয়ের মতো বলেনি ‘ আমি তোমাকে ভালোবাসি বাবা ‘। অথচ সে মুখে না বলেও সর্বদা নিজের ভালোবাসা লুকিয়ে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করেও নিজের ভালোবাসা লুকাতে ব্যর্থ হয়।

খাওয়া দাওয়া শেষে মোতালেব সাহেব উঠে দাড়ালেন। সবাইকে বিদায় জানিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছিলেন কিন্তু কি মনে করে ফিরে এলেন। ঝুমুরের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন ‘ তুই আজ পর্যন্ত কোনোকিছু চাস নি আমার কাছে। আমি নিজেও কখনও যেচে কোনোকিছু দেইনি। কিন্তু এক কথা মনে রাখিস মা এই বাবা তোকে বিয়ে দিয়ে পর করে দেইনি। তোর বিয়ে হয়েছে বলেই যে তুই আর আমার কাছে কিছু চাইতে পারবি না সেটা না।

আমি আজও এবং ভবিষ্যতেও সবসময় তোর সব ইচ্ছা পূরন করার চেষ্টা করবো। শুধু আমাকে বলবি তোর কি লাগবে। আমি সাথে সাথে এনে তোর সামনে হাজির করবো। তোকে বিয়ে দিয়ে শশুর বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছি কিন্তু তুই এখনও আমার মেয়ে। হয়তো রোজ দেখা হবে না কিন্তু আমি চাই তোর মনে হোক তোর বাবা যতদিন বেঁচে ছিল কোনওদিন তোর কোনো ইচ্ছা অপূর্ণ রাখেনি। ‘

ঝুমুর উত্তর দিলো না মোতালেব সাহেবের কথার। শুধু ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইল। মোতালেব সাহেব মেয়ের ললাটে চুমু খেয়ে অশ্রু লুকাতে দ্রুত বেরিয়ে গেলেন। ঝুমুরের চোখেও তখন অশ্রুর বাস। ঝুমুর ছলছল চোখে হাসি মাখা বদনে তার বাবার রেখে যাওয়া নুডুলসের বাটি থেকে নুডুলস নিয়ে খেতে শুরু করলো। মেয়েটার এমন হাল দেখে খারাপ লাগলো মিস মারিয়ামের। উনি এগিয়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরলেন ঝুমুরকে।

‘ আর কাদিস না। বিয়ে হয়েছে তো কি হয়েছে ? তোর ইচ্ছা করলেই তুই ভাইজানকে দেখতে পারবি। কেউ আটকাবে না তোকে। ‘ ঝুমুরকে জড়িয়ে ধরে মিস মারিয়াম কথাটা বললেন।

ঝুমুরকে কাদতে দেখে ফাহমান আর বসার ঘরে দাড়ালো না। ও গিয়ে নিজের ঘরে ঢুকলো। ভালোবাসলে এত কেন কষ্ট ? ঝুমুরকে যেন রোজ দেখতে পায় তার জন্য বিয়ে করে নিয়ে এলো অথচ ঝুমুর এখন আর ওর বাবাকে দেখতে পারবে না বলে কান্নাকাটি করাতে সেটা দেখেও ওর কষ্ট হচ্ছে। এখন যদি আবেগের বশে এটা বলেও বসে যে সমস্যা নেই তুমি আংকেলের কাছে থাকো তাহলে ঝুমুরকে ছাড়া থাকতেও তার কষ্ট হবে।

—-

খাওয়া দাওয়া শেষে ঝুমুর ঘরে ঢুকলো। মিস মারিয়াম এবং হৈমন্তী যে যার যার মতো শুয়ে পড়েছে। ঝুমুর ঘরে ঢুকে বাথরুম থেকে জামা কাপড় বদলে এলো। হাফ হাতা জামা কাপড়ে এলার্জি আরও বেশি লাগে। তাই সে এখন ট্রাউজার আর টি শার্ট পড়েছে। বাথরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে ঝুমুর আয়নার সামনে বসে চুলে জট ছাড়াতে শুরু করলো। ফাহমান তখন বারান্দায় দাড়িয়ে কোনো এক কলিগের সঙ্গে কথা বলছে একটা জটিল কেস নিয়ে।

ফাহমান কথা শেষে ঘরে ঢুকে দেখল ঝুমুর ড্রেসিং টেবিলে বসে চুল আঁচড়াচ্ছে। ফাহমান এগিয়ে গিয়ে বেড সাইড টেবিলের উপর থেকে ওষুধের পাতাটা হাতে নিল। ওষুধ হাতে নিয়ে ঝুমুরের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো এক গ্লাস পানি হাতে। ঝুমুর ততক্ষণে বেণী করা চুলে ব্যান্ড বাঁধছে। ফাহমানকে পানির গ্লাস হাতে দাড়িয়ে থাকতে দেখে হাসলো। হাত বাড়িয়ে ওষুধটা মুখে নিয়ে পানি খেলো।

‘ আচ্ছা আমার এলার্জি হওয়ার পর থেকে যে আপনি এত গায়ে ঘেঁষে ঘেঁষে থাকেন আমার সঙ্গে তাতে আপনার এলার্জি হবে না ? ‘

ফাহমানের হাতের উপর মাথা রেখে শুয়েছিল ঝুমুর। ফাহমান তার দিকেই ফিরে আছে। ঝুমুরের প্রশ্ন শুনে সে বললো ‘ উহু, এলার্জি ছোঁয়াচে না। তোমার সঙ্গে কমিউনিকেট করলেও আমার এলার্জি হবে না। ‘
‘ ওহ আচ্ছা। আচ্ছা একটা কথা জিজ্ঞেস করি ? ‘

‘ বলুন মহারাণী। আমার কান সারাদিন আপনার কথা শোনার জন্যই অপেক্ষা করে। ‘

‘ বলছিলাম যে আপনার কোনো মেয়ে কলিগ আছে নাকি ? ধরেন ওইসব কলিগ যারা সুদর্শন কলিগ চোখে পড়লেই পাগল হয়ে যায়। ‘ ঝুমুর ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করলো।

ঝুমুরের কুঞ্চিত ভ্রু দেখে নিঃশব্দে হাসলো ফাহমান। সে টের পাচ্ছে ঝুমুর কৌশলে জানতে চাইছে ফাহমানের কোনো কলিগ তাকে পছন্দ করে কিনা। ফাহমান ভাবলো একটু জেলাস ফিল করানো উচিৎ ঝুমুরকে। তাই সে বললো ‘ হ্যাঁ আছে তো। শালীন নামের একটা মেয়ে আছে। আমার সাথেই সেম ডিপার্টমেন্টে আর আমরা একসাথে ইন্টার্নশিপও করছি। ‘

ফাহমান ভেবেছিল ঝুমুর তার কথা শুনে রেগে যাবে, চেঁচামেচি করে বাড়ি মাথায় তুলবে কিন্তু সে ভুলে গিয়েছিল চেঁচামেচি করা ঝুমুরের ধাঁচে নেই। ঝুমুর একদমই অন্য ধরনের মেয়ে। তাই ঝুমুরের রাগ তো হলো কিন্তু প্রতি উত্তর করলো না। জায়গা থেকে নড়লো না পর্যন্ত। চোখ বন্ধ করে ঘুমানোর চেষ্টা করলো যাতে তার রাগ কমে যায়।

ঝুমুরের কোনো প্রতিক্রিয়া না পেয়ে চমকে গেলো ফাহমান। ঝুমুর ঠান্ডা মাথার মানুষ সেও জানে কিন্তু এতটা ঠান্ডা তার স্বভাব জানা ছিল না। তবে ফাহমান ঝুমুরের রাগ ভাঙ্গানোর প্রয়োজন মনে করলো না। ঠিক করলো কাল ঝুমুরকে চমকে দিবে। তারপর আর ঝুমুর তার সঙ্গে রাগ করে থাকতেই পারবে না।

চলবে…
মিফতা তিমু

( দয়া করে যারা শুধু গল্প পড়ে চলে যান তারা মন্তব্য করবেন কারণ আপনার পড়তে পাঁচ মিনিট লাগলেও আমার লিখতে সারাদিন লাগে কাজেই আপনার দুই লাইনের মন্তব্য আমাকে আরও লিখার ইচ্ছা শক্তি দিবে। যদিও বলেছিলাম রেসপন্স ভালো হলে দিবো কিন্তু আগেই দিয়ে দিলাম। )

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here