শ্যামাঙ্গণা-৮

0
400

শ্যামাঙ্গণা-৮
———–

দুরুদুরু বুকে সিড়ি দিয়ে উঠছে ঝুমুর। হাতে তার ইংলিশ টেস্ট পেপার এবং খাতাসহ আরও কিছু জরুরী জিনিস। সিঁড়ি দিয়ে উঠে ফাহমানদের দরজার সামনে দাঁড়াতেই তার চঞ্চল পা জোড়া থেমে গেলো। ভিতরে ঢোকার সাহস হচ্ছে না তার। কাল মনোয়ারা বেগমের কাছ থেকে ফাহমান তাকে পড়াবে শোনার পর থেকে সাহস করে ফাহমানের সামনে দাঁড়াতেই পারছে না। যেই মানুষটার সামনে এক মুহূর্ত থাকলেই তার দিক থেকে আর চোখ ফেরাতে পারে না তার কাছে নাকি ইংলিশ পড়বে। তাহলে আর ঝুমুরকে দেখতে হবে না। পড়া বাদ দিয়ে ফাহমানকেই দেখবে।

হাত ঘড়িতে সময় দেখে নিল ঝুমুর। আটটা বেজে অলরেডি দুই মিনিট হয়ে গেছে। ঝুমুর সময়মতো এসেছে ঠিকই কিন্তু এখন আর সাহস করে ঢুকতে পারছে না। অথচ ফাহমানের অনুপস্থিতিতে কতবার এসেছে এই ফ্ল্যাটে তার ইয়াত্তা নেই। ঝুমুর কয়েকবার সাহস করেও ব্যর্থ হলো। তাই সে বই খাতা নিয়ে যেভাবে এসেছিল সেভাবেই ফিরে যাচ্ছিল।

‘ পড়তে এসে না পড়ে কোথায় যাওয়া হচ্ছে ? ‘

ঝুমুর নেমে যাওয়ার উদ্দেশ্যে সিড়ির দিকে পা বাড়াতেই পিছন থেকে ফাহমানের গলা পেলো। আচমকা ফাহমানের গলা পেয়ে পিছন ফিরতে গিয়ে সঙ্গে সঙ্গে পা হরকে পড়ে যাচ্ছিল তবে সময়মতো ফাহমান ওর হাতটা ধরে ফেললো। ঝুমুর বুকের সাথে বই খাতা চেপে আতঙ্কিত চোখে ফাহমানের হাত আকড়ে ধরে দাড়িয়ে আছে। তার খোলা চুলগুলো এলোমেলো হয়ে আছে। ফাহমান ওর দিকে তাকিয়ে আছে। ঝুমুরের হাতটা সে আকড়ে না ধরলে ঝুলন্ত ঝুমুর এখনই পড়ে তার হাত পা ভাঙতো।

‘ এভাবেই তাকিয়েই থাকবে নাকি পড়াশোনা করার ইচ্ছাটা আছে ? ‘

ফাহমানের খোঁচা মারা কথায় ঝুমুরের সম্বিত ফিরল। ও ফাহমানকে ছেড়ে সোজা হয়ে দাঁড়ালো। আর একটু উনিশ বিশ হলেই যে সিড়ি থেকে পড়ে হাত পা ভাঙতো টের পেতেই ঝুমুরের শরীর কাটা দিয়ে উঠলো। কিন্তু ও নিজেকে সামলে নিলো। ধীর গলায় বললো ‘ পড়তেই আসছিলাম ‘

ঝুমুরের ধীর গলা শুনে ফাহমান বললো ‘ তাই সিড়ি দিয়ে নেমে যাচ্ছিলে ? আই গেস আমাদের বাসা আন্ডারগ্রাউন্ডে। আমি তো এতদিন আপারগ্রাউন্ডে জানতাম। মনে হয় আমারই জানার ভুল ছিল। ‘
ফাহমানের মজা ধরতে পারলো ঝুমুর তবে কোনো কথা বাড়ালো না। বই খাতা চেপে মৌন হয়ে দাড়িয়ে রইলো। ফাহমান এবার বললো ‘ আটটা তো বেজে গেছে। তুমি বড্ড ইরেগুলার। কাল থেকে কারেক্ট আটটায় আসবে আর এখন চলো। ‘

ফাহমানের কথা শুনে ঝুমুর মাথা নাড়লো। তারপর ওরা দুজনেই ফ্ল্যাটের দরজা খুলে ভিতরে ঢুকলো। ফ্ল্যাটে ঢুকে ঝুমুর মিস মারিয়াম এবং হৈমন্তীর গলার আওয়াজ পেল। ওদের গলার আওয়াজ ভিতরের ঘর থেকে আসছে। ঝুমুরকে ভিতরের ঘরের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে ফাহমান বললো ‘ আগে পড়া শেষ করো তারপর মায়ের কাছে যেও। ‘

ফাহমানের কথার দ্বিরুক্তি করলো না ঝুমুর। বই খাতা সাজিয়ে টেবিলে বসলো। ওরা বর্তমানে ফাহমানদের খাবার ঘরে আছে। খোলা মেলা জায়গায় পড়তে সুবিধা হবে বলেই এই ঘরে বসা। ফাহমান ঝুমুরের থেকে খানিকটা দূরে থাকা চেয়ার টেনে বসলো। ঝুমুরের গ্রামার বইটা বের করে চ্যাপ্টার মেলে ধরলো।

—-

ফাহমান স্ট্রাকচার বুঝিয়ে দিতে দিতে লক্ষ্য করলো ঝুমুর মাথা নিচু করে বসে আছে। ঘুণাক্ষরেও সে ফাহমানের দিকে তাকাচ্ছে না। তাতে ফাহমান বেশ অবাক হলো। ও বললো ‘ কি হয়েছে কি অঙ্গণা ? মাথা নিচু করে রাখলে পড়া কি আদৌ বুঝবে ? ‘

ঝুমুর বইয়ের পাতায় চোখ বুলাতে বুলাতে ধীর গলায় বললো ‘ পড়া বোঝার জন্য চেহারার দিকে তাকিয়ে থাকার প্রয়োজন নেই। টিচারের দিকে না তাকিয়েও পড়া বোঝা যায়। ‘ শেষের কথাটা ফাহমানের দিকে তাকিয়ে ঠোঁটের কোণে হাসি টেনে বললো ঝুমুর।

ঝুমুরের কথার উত্তরে আর কিছুই বললো না ফাহমান। তবে কথাটা যে তার বেশ ভালো লাগেনি সেটা ভালভাবেই বোঝা যাচ্ছে তার চেহারা দেখে। সে নিজের বিরক্তি প্রকাশ না করে আবারও কাজে মন দিল। ঝুমুরকে গ্রামাটিক্যাল রুলস বোঝানোর কাজে মন দিলো। নির্দিষ্ট সময় শেষে ঝুমুর পড়া গোছাতে গোছাতে ফাহমান ভ্রু কুঁচকে বললো ‘ আজ বাগানে এলে না কেন ? ‘

ঝুমুর বই গোছাতে গোছাতে বললো ‘ কেন রোজ বাগানে যেতে হবে এমন কোনো নিয়ম আছে কি ? ‘
ফাহমান বাঁকা হেসে বললো ‘ মিস অঙ্গণা ঝুমুর তো তাই করেন রোজ তাইনা ? বিগত পাঁচ বছর ধরে তো এমনটাই হচ্ছে। ‘

‘ রোজকার নিয়মেরও বদল ঘটে ডাক্তার সাহেব। ‘ আলতো হেসে কথাটা বলে বইখাতাগুলো টেবিলের একপাশে সরিয়ে রেখে ঝুমুর ভিতরের ঘরের দিকে ছুটলো।
ঝুমুরকে ছুটে আসতে দেখে হৈমন্তী হাস্যোজ্জ্বল মুখে বললো ‘ পড়া শেষ তোর ? ‘
‘ হু ‘ ঝুমুর মিস মারিয়ামের কাছে বসে বললো ।

মিস মারিয়াম মেশিনের সুইয়ে সুতা গাঁথার চেষ্টা করছেন কিন্তু চোখে ভালোভাবে দেখতে না পারার কারণে ঢুকাতে পারছেন না। মিস মারিয়ামের ব্যর্থ চেষ্টা দেখে ঝুমুর বললো ‘ আমি করে দেবো মণি ? ‘
‘ দিবি নাকি করে ? তাহলে বড়ই ভালো হয়। সুইয়ের ছিদ্রটাই দেখছি না। ‘ মিস মারিয়াম মোড়ার উপর থেকে সরে ঝুমুরকে বসার জায়গা করে দিলেন যাতে ঝুমুরের সুই গাঁথতে সুবিধা হয়।

ঝুমুর সুই গাঁথতে ব্যস্ত। যদিও সুই সে কখনো গাঁথে নি তবে মনোয়ারা বেগমকে দেখেছে করতে। ঝুমুর আবার ফাস্ট লার্নার। কোনোকিছু মন দিয়ে দেখলে সে সেটা সহজেই শিখে যায়। কাজেই সুইয়ে সুতোটা ঢোকাতে তার বেশি বেগ পেতে হলো না।
ঝুমূরকে এত দ্রুত সুতা ঢুকিয়ে ফেলতে দেখে হৈমন্তী বললো ‘ কত তাড়াতাড়ি করে ফেললি দেখ। আর আমি আধা ঘণ্টা চেষ্টা করেও পারলাম না। ‘

‘ কোনো কাজ ঠিক মতো করতে হলে ধৈর্য্য ধরে শেষ পর্যন্ত চেষ্টা করে যেতে হয়। তুই চঞ্চল, ধৈর্য্য ধরতে পারিস না তাই সুতা ঢুকাতে পারিস নী। ঝুমুর শান্ত, যা করে ধৈর্য্য ধরে করে। তাই ওর কোনো কাজ করতে এত কষ্ট করতে হয় না। ‘ মেশিনে হাত ঘুরাতে ঘুরাতে বললেন মিস মারিয়াম।

মায়ের কথায় হাসলো হৈমন্তী। বললো ‘ তোর বিয়ে হলে তো তোর জামাইয়ের কপাল খুলে যাবে। এমন সবজান্তা বউ পেলে তো কপাল সোনায় সোহাগা। আমার ভাবতেই কেমন লাগছে ‘

হৈমন্তীর কথায় প্রতিক্রিয়া জানানোর সুযোগ পেলো না ঝুমুর। তার আগেই মিস মারিয়াম বললেন ‘ ওর বিয়ে হলে কি হবে তার কথা পরে দেখা যাবে। আগে তোর বিয়ের ব্যাপারটা দেখি। কাল পাত্রপক্ষ আসবে। ‘

মিস মারিয়ামের কথায় হৈমন্তীর মুখটা ফাটা বেলুনের মতো চুপসে গেল। আবারও পাত্রপক্ষ নামক বিড়ম্বনার মাঝে পড়ে হাজারভাবে অপমানিত হতে হবে ? এত অপমানিত হওয়ার থাকলে কি প্রয়োজন এখনই বিয়ে দেওয়ার ? জীবন তো পেরিয়ে যাচ্ছে না। পড়াশোনা শেষ হোক, চাকরি করা হোক তারপর নাহয় বিয়ে দিবে। কিন্তু না সেই কথা শুনলে তো। এমনিতেই হৈমন্তীর গায়ের রংটা শ্যামলা গোছের।

গায়ের রং শ্যামলা হওয়ার কারণে আজ পর্যন্ত সব পাত্রের কাছেই সে রিজেক্ট হয়েছে বিনা বাক্যব্যয়ে। তার রিজেক্ট হওয়ার আত্ম কথন সংখ্যায় হয়তো কুড়ি কবেই ছাড়িয়েছে। তার জন্য বিয়ের প্রস্তাব তো ক্লাস নাইনে থাকাকালীন সময়ে থেকেই আসছে কিন্তু পাত্রপক্ষ তার গায়ের রং দেখার পর আর এগিয়ে আসেনা। এমনিতে ভালো ব্যবহার আর উপকারী মনোভাবের জন্য এলাকায় সে বেশ প্রশংসিত। কিন্তু গায়ের রংয়ের কারণেই বিয়েটা আর ঠিক হয়না।

‘ আবারও পাত্রপক্ষ আসবে তারপর আমার গায়ের রং ময়লা বলে চলে যাবে। আর কত সহ্য করবো মা ? আর এসব ভালো লাগে না। ‘ বিরক্ত ভরা কণ্ঠে বললো হৈমন্তী।

‘ এবার ভদ্রঘর থেকে আসবে ছেলে। সরকারি কলেজে চাকরি করে, বাড়ি গাড়িও আছে। ভদ্র ঘরের ছেলে। ছেলের মায়ের সঙ্গে কথা হয়েছে। তোর গায়ের রংয়ের কথাও জানে ওরা। উনারা সব শুনেই বলেছেন যে কোনো আপত্তি নেই। ‘ সেলাই করতে করতে বললেন মিস মারিয়াম।

মায়ের কথায় হৈমন্তী দমে গেল। ভাবলো ওর গায়ের রঙের কথা শুনেও পাত্র রাজি!! কিন্তু পাত্র রাজি হলে কি হবে ? সে তো আর রাজি নয়। যেভাবেই হোক বিয়েটা হওয়া থেকে আটকাতে হবে। প্রয়োজনে পাত্রকে সুন্দর করে বুঝাবে আর যদি কাজে না দেয় তো আঙ্গুল বাঁকা করবে। তবুও এখনই বিয়ে সে কিছুতেই করবে না।

হৈমন্তী মনে মনে এক কঠিন অপ্রতিরোধ্য পরিকল্পনা সেটে নিলো। এখন এই পরিকল্পনা অনুযায়ী এগোবে যাতে পাত্র তাকে কিছুতেই বিয়ে করতে রাজি নাহয়। এই বিয়ে আটকাতে তাকে যা করতে হবে সে তাই করবে। হৈমন্তী মনে মনে সব ঘটনা সাজিয়ে মুখে মেকি হাসি ফুটিয়ে তুলে মাথা নেড়ে সায় দিল।

—-

রান্নাঘরে দাড়িয়ে চিকেন পিস মিক্সারে ব্ল্যান্ড করছে ঝুমুর। প্রায় এক কেজির মতো মাংস ব্ল্যাণ্ড করতে হবে। এগুলো দিয়ে সে সসেজ বানাবে। মাংস ব্ল্যান্ড করে তার সাথে প্রয়োজনীয় উপাদান মিশিয়ে ঝুমুর যখন খাবার টেবিলে বসে সসেজ তৈরি করছে তখন ফারুক নিজের ঘর ছেড়ে বেরিয়ে এসে ঝুমুরের সামনের চেয়ারে বসলো। জিজ্ঞেস করলো ‘ ফাহমানের পড়া কেমন লাগলো ? কিছু বুঝেছিস ? ‘

ঝুমুর কাজ করতে করতেই বললো ‘ বুঝেছি। তোমার তো পাত্তাই পাওয়া যায় না। সকাল দশটায় বের হয়ে রাতের নয়টা দশটায় আসো। ততক্ষণে আমি আবার ঘুমিয়ে পড়ি। ‘

‘ হেক্টিক ডে যাচ্ছে আমার। তোর কি অবস্থা ? সামনে তো মডেল টেস্ট। প্রিপারেশন কেমন ? ‘

‘ মোটামুটি ভালোই প্রিপারেশন। এখন শুধু পরীক্ষার হলে প্রশ্ন দেখে ঘাবড়ে না গেলেই হলো। ‘

‘ অত ভয় পাওয়ার কিছু নেই। বোর্ড পরীক্ষা দিতে যা মজা। তুই তো জানিস। এবার তুই ফোর্থ টাইম দিচ্ছিস বোর্ড পরীক্ষা তাইনা ? পিএসসি, জেএসসি, এসএসসি আর এবার এইচএসসি। ‘

ফারুকের কথা শুনে ঝুমুর মাথা নেড়ে বললো ‘ হুম ‘। ঝুমুরকে সসেজ বানাতে দেখে বললো ‘ বাহ্ সসেজ বানাচ্ছিস ? ভালোই তো। কতক্ষন লাগবে হতে ? আজকে খাওয়া যাবে না ? ‘
ঝুমুর বললো ‘ আধা ঘণ্টায় হয়ে যাবে। তারপর বয়েল করে ঠান্ডা করতে যতক্ষণ লাগে আর কি। ‘

ফারুক আর ঝুমুরের কথার মাঝেই মনোয়ারা বেগম ফোন কানে নিয়ে খাবার ঘরে এসে দাড়ালেন। ফোনে মালিনী বেগমকে কিছু একটার ব্যাপারে আশ্বস্ত করে ফোন রাখলেন। ঝুমুরকে উদ্দেশ্য করে বললেন ‘ ঝুমুর শাওমি আসছে। ‘

শাওমির আসার খবরে ঝুমুরের চোখে মুখে আনন্দ উপচে পড়লো। ও বড় বড় চোখ করে হেসে বললো ‘ শাওমি ? মানে ছোট দাদাভাইয়ের মেয়ে শাওমি ? ‘
নাতনির কথার পৃষ্ঠে মনোয়ারা বেগম জবাব দিলেন ‘ হ্যাঁ হ্যাঁ, ওই শাওমি। ও ছাড়া আর কোন শাওমিকে চিনিস তুই ? ‘

মনোয়ারা বেগমের কথা শুনে ঝুমুর আগ্রহ নিয়ে জিজ্ঞেস করলো ‘ কবে আসছে ও ? ‘
মনোয়ারা বেগম বললেন ‘ পরশুই আসছে ও। আপা (মালিনী বেগম) বললেন ওকে এয়ারপোর্ট থেকে আনতে যেতে হবে। ফারুক তুই কি ফ্রি আছিস পরশু দুপুরের দিকে ? ‘

‘ পরশু দুপুরের দিকে তাইনা ? উম… পরশু আমার অফ ডে। কিন্তু পরশু অফ থাকায় কাল শুক্রবারে অফ নেই। পরশু আমি আর ঝুমুর তাহলে যাই। ‘ ফারুক ওর সিডিউল চেক করে বললো।

ছেলের কথায় আশ্বস্ত হয়ে মনোয়ারা বেগম ঝুমুরকে বললেন ‘ তাহলে তোর রুমটা গুছিয়ে নে ঝুমুর। শাওমিকে চিনিস তো। এখানে এলে তোর ঘরেই থাকে কাজেই ও তিন তলায় থাকবে এই আশা করা যায় না। ‘
মনোয়ারা বেগমের কথায় ঝুমুর মাথা নেড়ে বললো সে করে নিবে। ঝুমুরের উত্তর পেয়ে মনোয়ারা বেগম ফোন হাতে ধীর পেয়ে নিজের ঘরের দিকে গেলেন। ঝুমুর আজ অনেক খুশি। আজ অনেকদিন পর আবার শাওমিকে দেখবে। শেষ দেখেছিল দুই বছর আগে। বান্ধবী হিসেবে কাছের মানুষজনের মধ্যে শাওমি তার দারুন বান্ধবী। একটু পাগলাটে,উচ্ছল মেয়ে সে।

শাওমি হলো ঝুমুরের দাদা মান্নান সাহেবের ভাই মজিব সাহেবের ছেলের ঘরের নাতনী। শাওমির বাবা হাফ কোরিয়ান হলেও মা ইয়াং মী ফুল কোরিয়ান তাই শাওমির চেহারায় কোরিয়ান ভাব প্রকট। তাকে দেখতে পুরো দস্তর কোরিয়ান মনে হয়। তবে শ্যামলা দেহী ঝুমুরের সঙ্গে তার দারুন সখ্যতা কারণ ঝুমুর যখন কোরিয়ায় স্কুলে পড়তো তখন শাওমির সঙ্গেই পড়তো সে। তাদের মধ্যে এতটাই সুন্দর বন্ডিং ছিল যে আট বছর বয়সে বাংলাদেশে আসার পরও তাদের সেই যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়নি।

শাওমি বন্ধুত্বের খাতিরেই ঝুমুরকে দেখতে প্রতি দুই বছর পর পর বাংলাদেশে আসে। যদিও বাংলাদেশে এসে গরমে থাকতে তার কষ্ট হয় কিন্তু ঝুমুরের ঘরে সারাদিন থাকার দরুন এসির নিচেই থাকে সে। শাওমির সঙ্গে সঙ্গে তার বাড়ির লোকদের সঙ্গেও ঝুমুর এবং তার পরিবারের সুন্দর যোগাযোগ আছে।

শাওমির সঙ্গে ঝুমুরের বন্ধুত্বের শুরু থেকেই দুজনে একে অপর বলতে অন্ত প্রাণ। তাই এখানে এসে থেকে শাওমি বাংলাদেশে আসা ছাড়াও প্রতি সপ্তাহে উইকেন্ড ডেগুলোতে তাদের নিয়ম করে ভিডিও কলে কথা হয়। আগে অবশ্য এসব ছিল না কিন্তু বর্তমানে উন্নত প্রযুক্তির সাহায্যে তারাও এক সপ্তাহ পরপর একে অপরকে দেখতে পায়।

চলবে….
মিফতা তিমু

এডিট ছাড়া পর্ব…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here